সুরা আল মুদদাসসির এর তাফসীর
সুরা আল মুদদাসসির এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা মুদ্দাসসির আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
সুরা আল মুদদাসসির এর তাফসীর
সুরা (৭৪) : আল-মুদদাসসির
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {عَسِيْرٌ} شَدِيْدٌ {قَسْوَرَةٌ} رِكْزُ النَّاسِ وَأَصْوَاتُهُمْ وَكُلُّ شَدِيْدٍ قَسْوَرَةٌ وَقَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ الْقَسْوَرَةُ قَسْوَرٌ الْأَسَدُ الرِّكْزُ الصَّوْتُ {مُسْتَنْفِرَةٌ} نَافِرَةٌ مَذْعُوْرَةٌ.
ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, عَسِيْرٌ কঠিন। قَسْوَرَةٌ মানুষের কোলাহল, আওয়াজ। আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বলেন, قَسْوَرَةٌবাঘ। প্রত্যেক কঠিন বস্তুকে الْقَسْوَرَةُ বলা হয়। مُسْتَنْفِرَةٌ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পলায়নপর।
৪৯২২
ইয়াহইয়াহ ইবনু কাসীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু সালামাহ ইবনু আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে কুরআন মাজীদের কোন্ আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, লোকেরা তো বলে اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। তখন আবু সালামাহ বলিলেন, আমি এ বিষয়ে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং তুমি যা বললে আমিও তাকে হুবহু তাই বলেছিলাম। জবাবে জাবির (রাদি.) বলেছিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে যা বলেছিলেন, আমিও হুবহু তাই বলব। তিনি বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ করিতে লাগলাম। আমার ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে নামলাম। তখন আমাকে আওয়াজ দেয়া হল। আমি ডানে তাকালাম; কিন্তু কিছু দেখিতে পেলাম না, বামে তাকালাম, কিন্তু এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর সামনে তাকালাম, এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর পেছনে তাকালাম, কিন্তু এদিওক আমি কিছু দেখলাম না। শেষে আমি উপরের দিকে তাকালাম, এবার একটা বস্তু দেখিতে পেলাম। এরপর আমি খাদীজা (রাদি.)-এর কাছে এলাম এবং তাকে বললাম, আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত কর এবং আমার শরীরে ঠাণ্ডা পানি ঢাল। তিনি বলেন, তারপর তারা আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করে এবং ঠাণ্ডা পানি ঢালে। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, এরপর অবতীর্ণ হল ঃ হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠ, সতর্কবাণী প্রচার কর এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। [৪] (আ.প্র. ৪৫৫৩, ই.ফা. ৪৫৫৭)
৬৫/৭৪/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ উঠুন, সতর্ক করুন। (সুরা আল-মুদ্দাস্সির ৭৪/২)
৪৯২৩
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ করেছিলাম। উসমান ইবনু উমার আলী ইবনু মুবারক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে যে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন তিনিও একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [৪] (আ.প্র. ৪৫৫৪, ই.ফা. ৪৫৫৮)
৬৫/৭৪/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। (সুরা আল-মুদ্দাস্সির ৭৪/৩)
৪৯২৪
ইয়াহইয়াহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনের কোন্ আয়াতটি প্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল? তিনি বলিলেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ প্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল। আমি বললাম, আমাকে বলা হয়েছে اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ প্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল। এ কথা শুনে আবু সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, কুরআনের কোন্ আয়াতটি প্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল, এ সম্পর্কে আমি জাবির (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বলেছেন يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ প্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল। তখন আমি বললাম, আমাকে বলা হয়েছে যে اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ প্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল। তখন তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যা বলেছেন, আমি তোমাকে তাই বলছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ করেছিলাম। ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে নেমে উপত্যকার মাঝে পৌঁছলে আমাকে আওয়াজ দেয়া হল। আমি তখন সামনে, পেছনে, ডানে ও বামে তাকালাম। দেখলাম, সে আসমান ও যমীনের মধ্যস্থলে রক্ষিত একটি আসনে উপবিষ্ট আছে। এরপর আমি খাদীজা (রাদি.)-এর কাছে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত কর এবং আমার শরীরে ঠাণ্ডা পানি ঢাল। তখন আমার প্রতি অবতীর্ণ করা হল ঃ “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! সতর্কবাণী প্রচার কর এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর।” [৪] (আ.প্র. ৪৫৫৫, ই.ফা. ৪৫৫৯)
৬৫/৭৪/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এবং স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র পবিত্র রাখুন। (সুরা আল-মুদ্দাস্সির ৭৪/৪)
৪৯২৫
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) থেকে শুনিয়াছি। তিনি ওয়াহী বন্ধ থাকার সময়কাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তিনি তাহাঁর আলোচনার মাঝে বলিলেন, একদা আমি চলছিলাম, এমন সময় আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উঠাতেই আমি দেখলাম, যে মালাক হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল সে আসমান-যমীনের মাঝে একটি কুসরীতে বসা আছে। আমি তাহাঁর ভয়ে ভীত হয়ে পড়লাম। এরপর আমি বাড়িতে ফিরে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর; আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তাঁরা আমাকে বস্ত্রাবৃত করিল। তখন আল্লাহ অবতীর্ণ করিলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! উঠ…..অপবিত্রতা হইতে দূরে থাক।” এ আয়াতগুলো সলাত ফরয হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল। الرِّجْزَ মূর্তিসমূহ। [৪] (আ.প্র. ৪৫৫৬, ই.ফা. ৪৫৬০)
৬৫/৭৪/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ وَالرِّجْزَ فَاهْجُرْ এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন- (সুরা আল-মুদ্দাস্সির ৭৪/৫)।
৪৯২৬
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রাসুল (সাঃআঃ)-কে ওয়াহী বন্ধ হওয়া সম্পর্কে আলোচনা করিতে শুনেছেন। তিনি বলেছেন, একদা আমি পথ চলছিলাম, এমন সময় আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর আমি আকাশের দিকে চোখ তুলে দেখলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে আসত, সে আসমান-যমীনের মাঝে একটি কুরসীতে উপবিষ্ট আছে। তাকে দেখে আমি ভীষণ ভয় পেলাম। এমনকি যমীনে পড়ে গেলাম। তারপর আমি আমার স্ত্রীর কাছে গেলাম এবং বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করিল। এরপর আল্লাহ অবতীর্ণ করিলেন ঃ “হে বস্ত্রাবৃত!…..অপবিত্রতা হইতে দূরে থাক।” আবু সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, الرِّجْزَ মূর্তিসমূহ। এরপর অধিক হারে ওয়াহী অবতীর্ণ হইতে লাগল এবং লাগাতার ওয়াহী আসতে থাকল। [৪] (আ.প্র. ৪৫৫৭, ই.ফা. ৪৫৬১)
Leave a Reply