সুরা আল মায়িদাহ তাফসির – আল্লাহ তায়ালার বাণী
সুরা আল মায়িদাহ তাফসির – আল্লাহ তায়ালার বাণী >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা মায়েদা আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
৬৫/৫/১. অধ্যায়ঃ তাফসীর
৬৫/৫/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করিবে। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৬)
৬৫/৫/৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অতএব আপনি ও আপনার রব যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা তো এখানেই বসলাম। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/২৪)
৬৫/৫/৫. অধ্যায়ঃ যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হল-তাদের হত্যা করা হইবে অথবা শূলে চড়ানো হইবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হইবে অথবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হইবে। এ হল তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩৩)
৬৫/৫/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এবং যখমের বদল অনুরূপ যখম। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৪৫)
৬৫/৫/৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ হে রাসুল! আপনি তা পৌঁছে দিন যা আপনার প্রতি আপনার রবের তরফ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৬৭)
৬৫/৫/৮.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৮৯)
৬৫/৫/৯.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা হারাম করো না সেসব উৎকৃষ্ট বস্তু যা আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করিয়াছেন এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৮৭)
৬৫/৫/১০.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ণায়ক শর-এসব নোংরা-অপবিত্র, শয়তানের কাজ ব্যতীত আর কিছু নয়। সুতরাং তোমরা এসব থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৯০)
৬৫/৫/১১.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের কোন গুনাহ নেই পূর্বে তারা যা খেয়েছে সেজন্য, যখন তারা সাবধান হয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে। তারপর সাবধান হয় ও ঈমান দৃঢ় থাকে। তারপর সাবধান হয় ও নেক কাজ করে। আর আল্লাহ নেককারদের ভালবাসেন। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৯৩)
৬৫/৫/১২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হলে তোমাদের খারাপ লাগবে। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/১০১)
৬৫/৫/১৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ বাহীরা, সাইবা, ওয়াসীলা এবং হামী-এর প্রচলন করেননি। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/১০৩)
৬৫/৫/১৪.অধ্যায়ঃ
৬৫/৫/১৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদের ক্ষমা করে দেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, হিকমাতওয়ালা। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/১১৮)
৬৫/৫/১. অধ্যায়ঃ তাফসীর
{حُرُمٌ} : وَاحِدُهَا حَرَامٌ {فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّيْثَقَهُمْ بِنَقْضِهِمُ الَّتِيْ كَتَبَ اللهُ}: جَعَلَ اللهُ {تَبُوْٓءُ}: تَحْمِلُ. {دَآئِرَةٌ} : دَوْلَةٌ. وَقَالَ غَيْرُهُ : الإِغْرَاءُ التَّسْلِيْطُ {أُجُوْرَهُنَّ} : مُهُوْرَهُنَّ. {الْمُهَيْمِنُ} : الْأمِيْنُ، القُرْآنُ أمِيْنُ عَلَى كُلِّ كِتابٍ قَبْلَهُ. قَالَ سُفْيَانُ : مَا فِي الْقُرْآنِ آيَةٌ أَشَدُّ عَلَيَّ مِنْ {لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيْلَ وَمَآ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مَّخْمَصَةٍ} مَجَاعَةٍ، {مَنْ أَحْيَاهَا} : يَعْنِيْ مَنْ حَرَّمَ قَتْلَهَا إِلَّا بِحَقٍّ حَيِيَ النَّاسُ مِنْهُ جَمِيْعًا. {شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا} سَبِيْلًا وَسُنَّةً. فَإنْ {عَشُرَ} : ظَهَرَ. ا{لأوْلَيانِ} وَاحِدُها : أوْلَى.
حُرُمٌ একবচনে حَرَامٌ নিষিদ্ধ অবস্থায় (আল-মায়িদাহ ৫/১), فَبِمَا نَقْضِهِمْ তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণ (আল-মায়িদাহ ৫/১৩), الَّتِيْ كَتَبَ اللهُ যা আল্লাহ নির্ধারণ করিয়াছেন, تَبُوْءُ বহন করিবে, অন্য একজন বলেছেন الإِغْرَاءُ শক্তিশালী করে দেয়া, دَائِرَةٌ ওলট-পালট, أُجُوْرَهُنَّ তাদের মাহর, مَخْمَصَةٍ ক্ষুধার তাড়নায় (আল-মায়িদাহ ৫/৩)।
আপনি বলে দিনঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা কোন কিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও, যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরোপুরি পালন করিবে তাওরাত, ইন্জীল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের তরফ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৬৮)
সুফ্ইয়ান সাওরী (রাদি.) বলেন, আমার দৃষ্টিতে কুরআন মাজীদে لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيْلَ وَمَآ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مَّخْمَصَةٍ আয়াতটির চেয়ে কঠোর অন্য কোন আয়াত নেই। مَنْ أَحْيَاهَا -আর যে কেউ কারো জীবন রক্ষা করিল, সে যেন সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করিল- (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৩২)। شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا -আইন ও স্পষ্ট পথ, নিয়ম- (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৪৮) مُهَيْمِنُ- আমানতদার, কুরআন তার পূর্বের কিতাবসমূহের আমানতদার। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৪৮)
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : {مَخْمَصَةٍ} مَجَاعَةٍ.
ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, مَخْمَصَةٍ ক্ষুধা/অভাব অনটন।
৪৬০৬
ত্বরিক ইবনু শিহাব হইতে বর্ণিতঃ
ইয়াহূদীগণ উমার ফারূক (রাদি.)-কে বলিল যে, আপনারা এমন একটি আয়াত পড়ে থাকেন তা যদি আমাদের মধ্যে নাযিল হত, তবে আমরা সেটাকে “ঈদ” হিসেবে গ্রহণ করতাম। উমার (রাদি.) বলিলেন, আমি জানি এটা কখন নাযিল হয়েছে, কোথায় নাযিল হয়েছে এবং নাযিলের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কোথায় ছিলেন, আয়াতটি আরাফাতের দিন নাযিল হয়েছিল। আল্লাহর শপথ আমরা সবাই আরাফাতে ছিলাম, সেই আয়াতটি হল الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। সুফ্ইয়ান সাওরী বলেন, এ ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে । [৪৫] (আ.প্র. ৪২৪৫, ই.ফা. ৪২৪৮)
৬৫/৫/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করিবে। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৬)
{تَيَمَّمُوْا} : تَعَمَّدُوْا. آمِّيْنَ : عَامِدِيْنَ أَمَّمْتُ وَتَيَمَّمْتُ وَاحِدٌ. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : لَمَسْتُمْ وَ تَمَسُّوْهُنَّ وَ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ، وَالإِفْضَاءُ : النِّكَاحُ.
تَيَمَّمُوْا তোমরা ইচ্ছে করিবে, آمِّيْنَ উদ্দেশ্য করে, أَمَّمْتُ আর تَيَمَّمْتُ একই, আমি ইচ্ছে করেছি, ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন- وَ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ، تَمَسُّوْهُنَّ، لَمَسْتُمْ এবং وَالإِفْضَاءُএই চারটিরই অর্থ সহবাস করা।
৪৬০৭
নাবী-পত্নী আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে এক সফরে বের হলাম, বাইদা কিংবা যাতুল জাইশ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার গলার হার হারিয়ে গেল। তা খোঁজার জন্যে রাসুল (সাঃআঃ) সেখানে অবস্থান করিলেন এবং লোকেরাও তাহাঁর সঙ্গে অবস্থান করিল। সেখানেও কোন পানি ছিল না এবং তাদের সঙ্গেও পানি ছিল না। এরপর লোকেরা আবু বাক্র (রাদি.)-এর কাছে আসল এবং বলিল, আয়েশাহ (রাদি.) যা করিয়াছেন আপনি তা দেখেছেন কি? রাসুল (সাঃআঃ) এবং সকল লোকটি আটকিয়ে রেখেছেন, অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সঙ্গেও পানি নেই। রাসুল (সাঃআঃ) আমার উরুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আবু বাক্র (রাদি.) এলেন এবং বলিলেন, তুমি রাসুল (সাঃআঃ) এবং সকল লোককে আটকে রেখেছো অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সঙ্গেও পানি নেই। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন যে, আবু বাক্র (রাদি.) আমাকে দোষারোপ করিলেন এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন তা বলেছেন এবং তাহাঁর অঙ্গুলি দিয়ে আমার কোমরে ধাক্কা দিতে লাগলেন, আমার কোলে রাসুল (সাঃআঃ)-এর অবস্থানই আমাকে নড়াচড়া করিতে বাধা দিল। পানিবিহীন অবস্থায় ভোরে রাসুল (সাঃআঃ) ঘুম থেকে উঠলেন। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করিলেন, তখন সবাই তায়াম্মুম করিল। তখন উসাইদ ইবনু হুযাইর বলিলেন, হে আবু বাক্র-এর বংশধর! এটাই আপনাদের কারণে পাওয়া প্রথম বারাকাত নয়।
আয়েশাহ (রাদি.) বলিলেন, যে উটের উপর আমি ছিলাম, তাকে আমরা উঠালাম তখন দেখি হারটি তার নিচে। [৩৩৪] (আ.প্র. ৪২৪৬, ই.ফা. ৪২৪৯)
৪৬০৮
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মদিনায় প্রবেশের পথে বাইদা নামক স্থানে আমার গলার হারটি পড়ে গেল। এরপর নাবী (সাঃআঃ) সেখানে উট বসিয়ে অবস্থান করিলেন। তিনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলেন। আবু বাক্র (রাদি.) এসে আমাকে জোরে থাপ্পড় লাগালেন এবং বলিলেন একটি হার হারিয়ে তুমি সকল লোককে আটকে রেখেছো। এদিকে তিনি আমাকে ব্যথা দিয়েছেন, অপরদিকে রাসুল (সাঃআঃ) এ অবস্থায় আছেন, এতে আমি মৃত্যু যাতনা ভোগ করছিলাম। তারপর রাসুল (সাঃআঃ) জাগ্রত হলেন, ফাজ্র সলাতের সময় হল এবং পানি খোঁজ করে পাওয়া গেল না, তখন অবতীর্ণ হল ঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَاغسْلُوْا وَجُوْهكُم ….. ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যখন সলাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন ধৌত করে নিবে নিজেদের মুখমণ্ডল এবং হাত কনুই পর্যন্ত। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৬)
এরপর উসায়দ ইবনু হুযায়র বলিলেন, হে আবু বাক্রের বংশধর! আল্লাহ তাআলা তোমাদের কারণে মানুষের জন্যে বারাকাত অবতীর্ণ করিয়াছেন। মানুষের জন্য তোমরা হলে কল্যাণ আর কল্যাণ। [৩৩৪] (আ.প্র. ৪২৪৭, ই.ফা. ৪২৫০)
৬৫/৫/৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অতএব আপনি ও আপনার রব যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা তো এখানেই বসলাম। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/২৪)
৪৬০৯
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ হইতে বর্ণিতঃ
বদর যুদ্ধের দিন মিক্দাদ (রাদি.) বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইসরাঈলীরা মূসা (আ.)-কে যেমন বলেছিল, “যাও তুমি ও তোমার প্রতিপালক যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসে থাকব” আমরা আপনাকে সে রকম বলব না বরং আপনি এগিয়ে যান, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি, তখন যেন রাসুল (সাঃআঃ) থেকে সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। এই হাদীসটি ওয়াকা-সুফ্ইয়ান থেকে, তিনি মুখারিক থেকে এবং তিনি (মুখারিক) তারিক থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, মিক্দাদ এটা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলেছিলেন। [৩৯৫২] (আ.প্র. ৪২৪৮, ই.ফা. ৪২৫১)
৬৫/৫/৫. অধ্যায়ঃ যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হল-তাদের হত্যা করা হইবে অথবা শূলে চড়ানো হইবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হইবে অথবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হইবে। এ হল তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৩৩)
الْمُحَارَبَةُ لِلهِ الْكُفْرُ بِهِ. -আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করা।
৪৬১০
আবু ক্বিলাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত। তিনি উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। তাঁরা কাসামাত দণ্ড সম্পর্কিত হাদীসটি আলোচনা করিলেন এবং এর অবস্থা সম্পর্কে আলাপ করিলেন, তাঁরা মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে বলিলেন এবং এও বলিলেন যে, খুলাফায়ে রাশিদীন এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করিয়াছেন। এরপর তিনি আবু কিলাবার প্রতি তাকালেন, আবু কিলাবাহ তাহাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ নামে কিংবা আবু কিলাবাহ নামে ডেকে বলিলেন, এই ব্যাপারে তোমার মতামত কী? আমি বললাম, বিয়ের পর ব্যভিচার, কিসাস ব্যতীত খুন এবং আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কোন একটি ব্যতীত অন্য কোন কারণে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ইসলামে বৈধ বলে আমার জানা নেই।
আনবাসা বলিলেন, আনাস (রাদি.) আমাদেরকে হাদীস এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন (অর্থাৎ হাদীসে আরনিন)। আমি (আবু ক্বিলাবাহ) বললাম, আমাকেও আনাস (রাদি.) এই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক নাবী (সাঃআঃ)-এর দরবারে এসে তাহাঁর সঙ্গে আলাপ করিল, তারা বলিল, আমরা এ দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদেরকে খাপ খাওয়াতে পারছি না। রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এগুলো আমার উট, ঘাস খাওয়ার জন্যে বের হচ্ছে, তোমরা এগুলোর সঙ্গে যাও এবং এদের দুধ ও পেশাব পান কর। তারা ওগুলোর সঙ্গে বেরিয়ে গেল এবং দুধ ও প্রস্রাব পান করে সুস্থ হয়ে উঠল, এরপর রাখালের উপর আক্রমণ করে তাকে হত্যা করে পশুগুলো লুট করে নিয়ে গেল। এখন তাদেরকে হত্যা না করার পক্ষে আর কোন যুক্তিই থাকল না। তারা নরহত্যা করেছে, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং রাসুল (সাঃআঃ)-কে ভয় দেখিয়েছে। আনবাসা আশ্চর্য হয়ে বলিল, সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, আমার এই হাদীস সম্পর্কে তুমি কি আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেবে? আনবাসা বলিল, আনাস (রাদি.) আমাদেরকে এই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, আবু কিলাবাহ বলিলেন, তখন আনবাসা বলিল, হে এই দেশবাসী (অর্থাৎ সিরিয়াবাসী) এ রকম ব্যক্তিবর্গ যতদিন তোমাদের মধ্যে থাকবে ততদিন তোমরা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। [২৩৩] (আ.প্র. ৪২৪৯, ই.ফা. ৪২৫২)
৬৫/৫/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এবং যখমের বদল অনুরূপ যখম। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৪৫)
৪৬১১
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, রুবাঈ যিনি আনাস (রাদি.)-এ ফুফু, এক আনসার মহিলার সামনের একটি বড় দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। এরপর আহত মহিলার গোত্র এর কিসাস দাবী করে। তারা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এলো, নাবী (সাঃআঃ) কিসাসের নির্দেশ দিলেন, আনাস ইবনু মালিকের চাচা আনাস ইবনু নযর বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর শপথ রুবাঈ-এর দাঁত ভাঙ্গা হইবে না। রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাব তো “বদলা”র বিধান দেয়। পরবর্তীতে বিরোধীপক্ষ রাযী হয়ে মুক্তিপণ বা দিয়ত গ্রহণ করিল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহর কতক বান্দা আছে যারা আল্লাহর নামে কসম করলে আল্লাহ তাআলা তাদের কসম সত্যে পরিণত করেন। [২৭০৩] (আ.প্র. ৪২৫০, ই.ফা. ৪২৫৩)
৬৫/৫/৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ হে রাসুল! আপনি তা পৌঁছে দিন যা আপনার প্রতি আপনার রবের তরফ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৬৭)
৪৬১২
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন যে, যদি কেউ তোমাকে বলে যে, তাহাঁর অবতীর্ণ বিষয়ের সামান্য কিছুও মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) গোপন করিয়াছেন তা হলে অবশ্যই, সে মিথ্যা বলেছে। আল্লাহ বলেছেন, “হে রাসুল! আপনি তা পৌঁছে দিন যা আপনার প্রতি আপনার রবের তরফ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে।” [৩২৩৪] (আ.প্র. ৪২৫১, ই.ফা. ৪২৫৪)
৬৫/৫/৮.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৮৯)
৪৬১৩
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
لاَ يُؤَاخِذُكُمْ اللهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে মানুষের উদ্দেশ্যবিহীন উক্তিلاَ وَاللهِ না আল্লাহর শপথ, بَلَى وَاللهِ হ্যাঁ আল্লাহর শপথ ইত্যাদি উপলক্ষে। [৬৬৬৩] (আ.প্র. ৪২৫২, ই.ফা. ৪২৫৫)
৪৬১৪
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা শপথই ভঙ্গ করিতেন না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা শপথ ভঙ্গের কাফ্ফারার বিধান অবতীর্ণ করিলেন। আবু বাক্র (রাদি.) বলেছেন, শপথকৃত কাজের উল্টোটি যদি আমি উত্তম ধারণা করি তবে আমি আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগটি গ্রহণ করি এবং উত্তম কাজটি সম্পাদন করি। [৬৬২১] (আ.প্র. ৪২৫৩, ই.ফা. ৪২৫৬)
৬৫/৫/৯.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা হারাম করো না সেসব উৎকৃষ্ট বস্তু যা আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করিয়াছেন এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৮৭)
৪৬১৫
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন যে, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যুদ্ধে বের হতাম, তখন আমাদের সঙ্গে স্ত্রীগণ থাকত না, তখন আমরা বলতাম আমরা কি খাসি হয়ে যাব না? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করিলেন এবং কাপড়ের বিনিময়ে হলেও মহিলাদেরকে বিয়ে করার অর্থাৎ নিকাহে মুতআর অনুমতি দিলেন এবং পাঠ করিলেন ঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللهُ لَكُمْ। [৫০৭১, ৫০৭৫; মুসলিম ১৬/২, হাদীস ১৪০৪, আহমাদ ৪১১৩] (আ.প্র. ৪২৫৪, ই.ফা. ৪২৫৭)
[১] প্রকাশ থাকে যে, মুতআ বিবাহ খায়বারের যুদ্ধে চিরতরে হারাম করা হয়েছে।
৬৫/৫/১০.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ণায়ক শর-এসব নোংরা-অপবিত্র, শয়তানের কাজ ব্যতীত আর কিছু নয়। সুতরাং তোমরা এসব থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৯০)
৪৬১৬
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, মদ নিষিদ্ধ হওয়ার বিধান যখন নাযিল হল, তখন মাদীনাতে পাঁচ প্রকারের মদের রেওয়াজ ছিল, আঙ্গুরের পানিগুলো এর মধ্যে গণ্য ছিল না। [৫৫৭৯] (আ.প্র. ৪২৫৫, ই.ফা. ৪২৫৮)
৪৬১৭
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, তোমরা যেটাকে ফাযীখ অর্থাৎ কাঁচা খুরমা ভিজানো পানি নাম রেখেছ সেই ফাযীখ ব্যতীত আমাদের অন্য কোন মদ ছিল না। একদিন আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবু ত্বলহা, অমুক এবং অমুককে তা পান করাচ্ছিলাম। তখনই এক ব্যক্তি এসে বলিল, আপনাদের কাছে এ সংবাদ এসেছে কি? তাঁরা বলিলেন, ঐ সংবাদ কী? সে বলিল, মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে, তাঁরা বলিলেন, হে আনাস! এই বড় বড় মটকাগুলো থেকে মদ ঢেলে ফেলে দাও। আনাস (রাদি.) বলিলেন যে, এই ব্যক্তির সংবাদের পর তাঁরা এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেসও করেননি এবং দ্বিতীয়বার পানও করেননি। [২৪৬৪] (আ.প্র. ৪২৫৬, ই.ফা. ৪২৫৯)
৪৬১৮
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উহূদের যুদ্ধের দিন ভোরে কিছু লোক মদ পান করেছিলেন এবং সেদিন তাঁরা সবাই শহীদ হয়েছেন। এই মদ্যপানের ঘটনা ছিল তা হারাম হওয়ার আগের ঘটনা। [২৮১৫] (আ.প্র. ৪২৫৭, ই.ফা. ৪২৬০)
৪৬১৯
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন যে, আমি উমার (রাদি.)-কে নাবী (সাঃআঃ)-এর মিম্বরে বসে বলিতে শুনিয়াছি যে, এরপর হে লোক সকল! মদপানের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ হয়েছে আর তা হচ্ছে পাঁচ প্রকার, খুরমা থেকে, আঙ্গুর থেকে, মধু থেকে, গম থেকে এবং যব থেকে আর মদ হচ্ছে যা সুস্থ বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। [৫৫৮১, ৫৫৮৮, ৫৫৮৯, ৭৩৩৭] (আ.প্র. ৪২৫৮, ই.ফা. ৪২৬১)
৬৫/৫/১১.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের কোন গুনাহ নেই পূর্বে তারা যা খেয়েছে সেজন্য, যখন তারা সাবধান হয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে। তারপর সাবধান হয় ও ঈমান দৃঢ় থাকে। তারপর সাবধান হয় ও নেক কাজ করে। আর আল্লাহ নেককারদের ভালবাসেন। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/৯৩)
৪৬২০
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ঢেলে দেয়া মদগুলো ছিল ফাযীখ। আবু নুমান থেকে মুহাম্মাদ ইবনু সাল্লাম আরও অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন, আনাস (রাদি.) বলেছেন, আমি আবু ত্বলহা (রাদি.)-এর ঘরে লোকেদেরকে মদ পান করাচ্ছিলাম, তখনই মদের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একজন ঘোষককে তা প্রচারের নির্র্দেশ দিলেন। এরপর সে ঘোষণা দিল। আবু ত্বল্হা বলিলেন, বেরিয়ে দেখ তো শব্দ কিসের? আনাস (রাদি.) বলেন, আমি বেরুলাম এবং বললাম যে, একজন ঘোষক ঘোষণা দিচ্ছে যে, জেনে রাখ মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি আমাকে বলিলেন যাও, এগুলো সব ঢেলে দাও। আনাস (রাদি.) বলেন, সেদিন মাদীনাহ মনোওয়ারার রাস্তায় রাস্তায় মদের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল। তিনি বলেন, সে যুগে তাদের মদ ছিল ফাযীখ, তখন একজন বলিলেন, যাঁরা পেটে মদ নিয়ে শহীদ হয়েছেন তাঁদের কী অবস্থা হইবে? তিনি বলেন, এরপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন لَيْسَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيمَا طَعِمُوا। [২৪৬৪] (আ.প্র. ৪২৫৯, ই.ফা. ৪২৬২)
৬৫/৫/১২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হলে তোমাদের খারাপ লাগবে। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/১০১)
৪৬২১
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এমন একটি খুতবা দিলেন যেমনটি আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেছেন, “আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তবে তোমরা হাসতে খুব কমই এবং অধিক অধিক করে কাঁদতে”। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রাদি.) নিজ নিজ চেহারা আবৃত করে গুনগুন করে কাঁদতে শুরু করিলেন, এরপর এক ব্যক্তি (আবদুল্লাহ ইবনু হুযাইফাহ বা অন্য কেউ) বলিল, আমার পিতা কে? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, “অমুক”। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হল لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ এই হাদীসটি শুবাহ থেকে নযর এবং রাওহ ইবনু উবাদাহ বর্ণনা করিয়াছেন। [৯৩; মুসলিম ৪৩/৩৭, হাদীস ২৩৫৯] (আ.প্র. ৪২৬০, ই.ফা. ৪২৬৩)
৪৬২২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কিছু লোক ছিল তারা ঠাট্টা করে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে প্রশ্ন করত, কেউ বলত আমার পিতা কে? আবার কেউ বলত আমার উষ্ট্রী হারিয়ে গেছে তা কোথায়? তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করিয়াছেন ….. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ। (আ.প্র. ৪২৬১, ই.ফা. ৪২৬৪)
৬৫/৫/১৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ বাহীরা, সাইবা, ওয়াসীলা এবং হামী-এর প্রচলন করেননি। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/১০৩)
৪৬২৩
সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
الْبَحِيرَةُবাহীরা জন্তুর স্তন প্রতিমার উদ্দেশে সংরক্ষিত থাকে কেউ তা দোহন করে না। السَّائِبَةُসাইবা, যে জন্তু তারা তাদের উপাস্যের নামে ছেড়ে দিত এবং তা দিয়ে বোঝা বহন করা হত না। তিনি বলেন, আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন যে, আমি আমর ইবনু আমির খুযায়ীকে জাহান্নামের মধ্যে দেখেছি সে তার নাড়িভুঁড়ি টানছে, সে-ই প্রথম ব্যক্তি যে সায়িবা প্রথা প্রথম চালু করে। وَالْوَصِيلَةُওয়াসীলাহ, যে উষ্ট্রী প্রথমবারে মাদী বাচ্চা প্রসব করে এবং দ্বিতীয়বারেও মাদী বাচ্চা প্রসব করে, ঐ উষ্ট্রীকে তারা তাদের তাগূতের উদ্দেশে ছেড়ে দিত। وَالْحَامِহাম, নর উট যা দ্বারা কয়েকবার প্রজনন কার্য নেয়া হয়, প্রজনন কার্য সমাপ্ত হলে সেটাকে তারা তাদের প্রতিমার জন্যে ছেড়ে দেয় এবং বোঝা বহন থেকে ওটাকে মুক্তি দেয়। সেটির উপর কিছু বহন করা হয় না। এটাকে তারা হাম নামে অভিহিত করত।
আমাকে আবুল ইয়ামান বলেছেন যে, শুআয়ব, ইমাম যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে আমাদেরকে অবহিত করিয়াছেন, যুহরী বলেন, আমি সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে শুনিয়াছি, তিনি তাকে এ ব্যাপারে অবহিত করিয়াছেন। সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব বলেছেন, আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বলেছেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) থেকে এই রকম শুনিয়াছি। ইবনু হাদ এটা বর্ণনা করিয়াছেন ইবনু শিহাব থেকে। আর তিনি সাঈদ থেকে, তিনি আবু হুরাইরাহ (রাদি.) থেকে যে, আমি নাবী (সাঃআঃ) থেকে শুনিয়াছি। [৩৫২১] (আ.প্র. ৪২৬২, ই.ফা. ৪২৬৫)
৪৬২৪
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি জাহান্নামকে দেখেছি যে, তার একাংশ অন্য অংশকে ভেঙ্গে ফেলছে বা আক্রমণ করছে, আমরকে দেখেছি সে তার নাড়িভুঁড়ি টেনে নিয়ে হাঁটছে, সে-ই প্রথম ব্যক্তি যে সায়ীবার রেওয়াজ চালু করেছিল। [১০৪৪] (আ.প্র. ৪২৬৩, ই.ফা. ৪২৬৬)
৬৫/৫/১৪.অধ্যায়ঃ
–
৪৬২৫
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক দিন খুতবা দিলেন, বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা নগ্ন পদ, উলঙ্গ এবং খতনাবিহীন অবস্থায় আল্লাহর নিকট একত্রিত হইবে, তারপর তিনি পড়লেন, كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব, প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই। আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (সুরা আম্বিয়া ২১/১০৪)
তারপর তিনি বলিলেন, ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম যাকে বস্ত্র পরিধান করানো হইবে তিনি হচ্ছেন ইবরাহীম (আ.)। তোমরা জেনে রাখ, আমার উম্মতের কতগুলো লোককে হাজির করা হইবে এবং তাদেরকে বামদিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে দেয়া হইবে। আমি তখন বলব, প্রভু হে! এগুলো তো আমার কতক সহাবী, তখন বলা হইবে যে, আপনার পর তারা কী নবোদ্ভাবিত কাজ করেছে তা আপনি জানেন না।
এরপর পুণ্যবান বান্দা যেমন বলেছিলেন আমি তেমন বলব ঃ كُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ “আমি যতদিন তাদের ছিলাম ততদিন তাদের খোঁজখবর নিয়েছি, অতঃপর আপনি যখন আমাকে উঠিয়ে নিয়েছেন তখন থেকে আপনিই তাদের রক্ষক”।
এরপর বলা হইবে আপনি তাদেরকে ছেড়ে আসার পর থেকে তারা পেছনে ফিরে গিয়ে ধর্মত্যাগী হয়েছে। [৩৩৪৯] (আ.প্র. ৪২৬৪, ই.ফা. ৪২৬৭)
৬৫/৫/১৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদের ক্ষমা করে দেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, হিকমাতওয়ালা। (সুরা আল মায়িদাহ ৫/১১৮)
৪৬২৬
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেছেন, তোমাদের উঠিয়ে একত্রিত করা হইবে এবং কিছু সংখ্যক লোককে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হইবে, তখন আমি নেককার বান্দার অর্থাৎ মূসা (আ.)-এর মতো বলব, وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيداً مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ – إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ “আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন তাদের খোঁজখবর নিয়েছি, তারপর যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিয়েছেন তখন থেকে আপনিই তাদের তত্ত্বাবধায়ক। আপনি সব কিছুর ওপরে ক্ষমতাবান। আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আপনার বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলে আপনি পরাক্রমশালী ও সুবিজ্ঞ।” [৩৩৪৯] (আ.প্র. ৪২৬৫, ই.ফা. ৪২৬৮)
Leave a Reply