সুরা আল কামার এর তাফসীর

সুরা আল কামার এর তাফসীর

সুরা আল কামার এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন  >> সুরা ক্বামার আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

সুরা আল কামার এর তাফসীর

৬৫/৫৪/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে গেছে। তারা যদি কোন মুজিযা দেখে, তবে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সুরা আল-কামার ৫৪/১-২)

(54) سُوْرَةُ اقْتَرَبَتْ السَّاعَةُ

সুরা (৫৪) : ইক্বতারাবাতিস্ সা-আহ (আল-কামার)

قَالَ مُجَاهِدٌ {مُسْتَمِرٌّ} ذَاهِبٌ {مُزْدَجَرٌ} مُتَنَاهٍ {وَازْدُجِرَ} فَاسْتُطِيْرَ جُنُوْنًا {دُسُرٍ} أَضْلَاعُ السَّفِيْنَةِ {لِمَنْ كَانَ كُفِرَ} يَقُوْلُ كُفِرَ لَهُ جَزَاءً مِنْ اللهِ {مُحْتَضَرٌ} يَحْضُرُوْنَ الْمَاءَ وَقَالَ ابْنُ جُبَيْرٍ {مُهْطِعِيْنَ} النَّسَلَانُ الْخَبَبُ السِّرَاعُ وَقَالَ غَيْرُهُ {فَتَعَاطٰى} فَعَاطَهَا بِيَدِهِ فَعَقَرَهَا {الْمُحْتَظِرِ} كَحِظَارٍ مِنْ الشَّجَرِ مُحْتَرِقٍ {ازْدُجِرَ} افْتُعِلَ مِنْ زَجَرْتُ {كُفِرَ} فَعَلْنَا بِهِ وَبِهِمْ مَا فَعَلْنَا جَزَاءً لِمَا صُنِعَ بِنُوْحٍ وَأَصْحَابِهِ {مُسْتَقِرٌّ} عَذَابٌ حَقٌّ يُقَالُ {الأَشَرُ} الْمَرَحُ وَالتَّجَبُّرُ.

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, مُسْتَمِرٌّ বিলুূপ্ত। مُزْدَجَرٌ বাধা দানকারী। وَازْدُجِرَ তাকে পাগল করে দেয়ার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। دُسُرٍ নৌকার কীলক। لِمَنْ كَانَ كُفِرَ এর কারণে যে নূহ (আঃ)-কে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।جَزَآءً প্রতিদান আল্লাহর তরফ থেকে। مُحْتَضَرٌ তারা পানির জন্য উপস্থিত হইবে। ইবনু জুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, مُهْطِعِيْنَ তারা দ্রুত চলবে। ইবনু জুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ব্যতীত অন্যরা বলেছেন, فَتَعَاطٰى তারপর সে উষ্ট্রীটিকে ধরল এবং তাকে হত্যা করিল। الْمُحْتَظِرِ শুকনো গাছের বেড়া যা জ্বলে গেছে। ازْدُجِرَ – زَجَرْتُ ধাতু হইতে بابافْتُعِلَ এর زَجَرْتُ، صيحه থেকে এর নিষ্পন্ন। كُفِرَ আমি নূহ এবং তাহাঁর কওমের সঙ্গে যা করেছি তা প্রতিদান ছিল ঐ আমালের, যা তাহাঁর কওমের লোকেরা তাহাঁর ও তাহাঁর সাথীদের সঙ্গে করেছিল। مُسْتَقِرٌّআল্লাহর তরফ থেকে শাস্তি। الْأَشَرُ দাম্ভিকতা ও অহংকার।

৪৮৬৪

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময় চাঁদ খণ্ডিত হয়েছে। এর এক খণ্ড পর্বতের উপর এবং অপর খণ্ড পর্বতের নিচে পড়েছিল। তখন রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা সাক্ষী থাক। [৩৬৩৬] (আ.প্র. ৪৪৯৭, ই.ফা. ৪৫০০)

৪৮৬৫

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, চন্দ্র বিদীর্ণ হল। এ সময় আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তা দুটুকরো হয়ে গেল। তখন তিনি আমাদের বলিলেন, তোমরা সাক্ষী থাক, তোমরা সাক্ষী থাক। [৩৬৩৬] (আ.প্র. ৪৪৯৮, ই.ফা. ৪৫০১)

৪৮৬৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর কালে চাঁদ খণ্ডিত হয়েছিল। [৩৬৩৮] (আ.প্র. ৪৪৯৯, ই.ফা. ৪৫০২)

৪৮৬৭

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মক্কাহ্বাসীরা নাবী (সাঃআঃ)-কে একটি নিদর্শন দেখাতে বলিল। তখন তিনি তাদেরকে চাঁদ খণ্ডিত করে দেখালেন। [৩৬৩৭] (আ.প্র. ৪৫০০, ই.ফা. ৪৫০৩)

৪৮৬৮

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, চন্দ্র দু খণ্ডে খণ্ডিত হয়েছিল। [৩৬৩৭] (আ.প্র. ৪৫০১, ই.ফা. ৪৫০৪)

৬৫/৫৪/২. .অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যা চলত আমার চোখের সামনে। এটা ছিল তার জন্য পুরস্কার, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। আর আমি একে এক নিদর্শনরূপে রেখে দিয়েছি, অতএব কোন নাসীহাত গ্রহণকারী আছে কি? (সুরা আল-কামার ৫৪/১৪-১৫)

قَالَ قَتَادَةُ أَبْقَى اللهُ سَفِيْنَةَ نُوْحٍ حَتَّى أَدْرَكَهَا أَوَائِلُ هَذِهِ الْأُمَّةِ.

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আল্লাহ তাআলা নূহ (আঃ)-এর নৌকাটি রক্ষা করেছিলেন। ফলে এ উম্মাতের প্রাথমিক যুগের লোকেরাও তা পেয়েছে।

৪৮৬৯

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন। [৩৩৪১; মুসলিম ৫০/হাদীস ৮২৩, আহমাদ ৩৮৫৩] (আ.প্র. ৪৫০২, ই.ফা. ৪৫০৫)

৬৫/৫৪/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি নাসীহাত গ্রহণের জন্য; অতএব কোন নাসীহাত গ্রহণকারী আছে কি? (সুরা আল-কামার ৫৪/১৭)

قَالَ مُجَاهِدٌ يَسَّرْنَا هَوَّنَّا قِرَاءَتَهُ.

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, يَسَّرْنَا আমি এর পঠন পদ্ধতি সহজ করে দিয়েছি।

৪৮৭০

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৩, ই.ফা. ৪৫০৬)

৬৫/৫৪/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ উৎপাটিত খেজুর বৃক্ষের কান্ড। অতএব কেমন কঠোর ছিল আমার আযাব ও আমার ভীতিপ্রদর্শন! (সুরা আল-কামার ৫৪/২০-২১)

৪৮৭১

আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি এক ব্যক্তিকে আসওয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট জিজ্ঞেস করিতে শুনেছেন যে, আয়াতের মধ্যে فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ না مُدَّكِرٍ । তিনি বলিলেন, আমি আবদুল্লাহ্কে আয়াতখানা فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে আয়াতখানা দাল দিয়ে পড়তে শুনিয়াছি। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৪, ই.ফা. ৪৫০৭)

৬৫/৫৪/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ফলে তারা হয়ে গেল খোঁয়াড় নির্মাণকারীর দলিত শুষ্ক তৃণ ও বৃক্ষের প্রশাখার ন্যায়। আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি নাসীহাত গ্রহণের জন্য, অতএব কোন নাসীহাত গ্রহণকারী আছে কি? (সুরা আল-কামার ৫৪/৩১-৩২)

৪৮৭২

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়েছেন। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৫, ই.ফা. ৪৫০৮)

৬৫/৫৪/৬.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর অতি প্রত্যুষে তাদের উপর আঘাত হানল বিরামহীন শাস্তি। বলা হলঃ আস্বাদন কর আমার আযাব এবং আমার সতর্কবাণীর মজা। (সুরা আল-কামার ৫৪/৩৮-৩৯)

৪৮৭৩

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়েছেন। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৬, ই.ফা. ৪৫০৯)

৬৫/৫৪/৭.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আমি তো ধ্বংস করেছি তোমাদের সমপন্থী দলগুলোকে, অতএব এ থেকে নাসীহাত গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সুরা আল-কামার ৫৪/৫১)

৪৮৭৪

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সামনে فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়ার পর তিনি বলিলেন ঃ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৭, ই.ফা. ৪৫১০)

৬৫/৫৪/৮.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অচিরেই এ দল পরাভূত হইবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাবে। (সুরা আল-কামার ৫৪/৪৫)

৪৮৭৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুল (সাঃআঃ) বদর যুদ্ধের দিন একটি ছোট্ট তাঁবুতে অবস্থান করে এ দুআ করেছিলেন- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন কামনা করছি! হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও, আজকের দিনের পর তোমার ইবাদাত না কর হোক….ঠিক এ সময়ই আবু বাক্র সিদ্দীক (রাদি.) তাহাঁর হস্ত ধারণ পূর্বক বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট অনুনয়-বিনয়ের সঙ্গে বহু দুআ করিয়াছেন। এ সময় রাসুল (সাঃআঃ) বর্ম পরিহিত অবস্থায় উঠে দাঁড়ালেন। তাই তিনি আয়াত দুটো পড়তে পড়তে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেন, “এ দল তো শীঘ্রই পরাজিত হইবে এবং পৃষ্ঠ পৃদর্শন করিবে” (সুরা আল-কামার ৫৪/৫১)। [২৯১৫] (আ.প্র. ৪৫০৮, ই.ফা. ৪৫১১)

৬৫/৫৪/৯.অধ্যায়ঃ অধিকন্তু ক্বিয়ামাতে তাদের শাস্তির প্রতিশ্রুতিকাল এবং ক্বিয়ামাত বড়ই কঠোর ও তিক্ততর। (সুরা আল-কামার ৫৪/৪৬)

৪৮৭৬

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, بَلْ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ আয়াতটি মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর প্রতি মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তখন কিশোরী ছিলাম, খেলাধূলা করতাম। [৪৯৯৩] (আ.প্র. ৪৫০৯, ই.ফা. ৪৫১২)

৪৮৭৭

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নাবী (সাঃআঃ) ছোট্ট একটি তাঁবুতে অবস্থান করে এ দুআ করছিলেন, আয় আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার পূরণ কামনা করছি। হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও, আজকের পর আর কখনো তোমার ইবাদাত না করা হোক…..। ঠিক এ সময় আবু বাক্র (রাদি.) রাসুল (সাঃআঃ)-এর হাত ধরে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার প্রতিপালকের কাছে অনুনয়-বিনয়ের সঙ্গে বহু দুআ করিয়াছেন। এ সময় তিনি লৌহবর্ম পরে ছিলেন। এরপর তিনি এ আয়াত পড়তে পড়তে তাঁবু থেকে বের হয়ে এলেন ঃ একদল তো শীঘ্রই পরাজিত হইবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিবে। অধিকন্তু ক্বিয়ামাত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং ক্বিয়ামাত হইবে কঠিনতর ও তিক্ততর”। (সুরা আল-কামার ৫৪/৪৫-৪৬) [২৯১৫] (আ.প্র. ৪৫১০, ই.ফা. ৪৫১৩)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply