সুরা আলাক এর তাফসীর

সুরা আলাক এর তাফসীর

সুরা আলাক এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা আলাক আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

সুরা আলাক এর তাফসীর

৬৫/৯৬/১.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।

(96) سُوْرَةُ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ

সুরা (৯৬) : ইক্বরা বিসমি রবিবকাল লাযী খলাক্ব ( সুরা আলাক এর তাফসীর )

وقال قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ عَنْ يَحْيَى بْنِ عَتِيْقٍ عَنِ الْحَسَنِ قَالَ اكْتُبْ فِي الْمُصْحَفِ فِيْ أَوَّلِ الإِمَامِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ وَاجْعَلْ بَيْنَ السُّوْرَتَيْنِ خَطًّا

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {نَادِيَهُ} عَشِيْرَتَهُ {الزَّبَانِيَةَ} الْمَلَائِكَةَ وَقَالَ مَعْمَرٌ {الرُّجْعٰى} الْمَرْجِعُ {لَنَسْفَعَنْ} قَالَ لَنَأْخُذَنْ وَلَنَسْفَعَنْ بِالنُّوْنِ وَهِيَ الْخَفِيْفَةُ سَفَعْتُ بِيَدِهِ أَخَذْتُ.

কুতাইবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, কুরআন মাজীদের শুরুতে বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম লিখ এবং দু সুরার মধ্যে একটি রেখা টেনে দাও।

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, نَادِيَهُ গোত্র। الزَّبَانِيَةَ ফেরেশতা। মামার (রা বলেন, الرُّجْعٰى ফিরে আসার জায়গা। لَنَسْفَعَنْ আমি অবশ্যই পাকড়াও করব। لَنَسْفَعَنْ শব্দটি نون خفيفة এর সঙ্গে। سَفَعْتُبِيَدِهِ আমি তাকে হাত দ্বারা ধরলাম।

৪৯৫৩

নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ঘুমের অবস্থায় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রতি ওয়াহী শুরু করা হয়েছিল। ঐ সময় তিনি যে স্বপ্ন দেখিতেন, তা সকালের আলোর মতই সুস্পষ্ট হত। এরপর নির্জনতা তার কাছে প্রিয় হয়ে উঠল। তিনি হেরা গুহায় চলে যেতেন এবং পরিবার-পরিজনের কাছে আসার পূর্বে সেখানে লাগাতার কয়েকদিন পর্যন্ত তাহান্নুছ করিতেন। তাহান্নুছ মানে বিশেষ পদ্ধতিতে ইবাদাত করা। এ জন্য তিনি কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। এরপর তিনি খাদীজাহ (রাদি.)-এর কাছে ফিরে এসে আবার ওরকম কিছু কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। শেষে হেরা গুহায় থাকা অবস্থায় হঠাৎ তার কাছে সত্যবাণী এসে পৌঁছল। ফেরেশতা তাহাঁর কাছে এসে বলিলেন, পড়ুন। রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি পড়তে পারি না। রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, এরপর তিনি আমাকে ধরে খুব জোরে আলিঙ্গণ করিলেন। এতে আমি প্রাণান্তকর কষ্ট অনুভব করলাম। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলিলেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারি না। রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, এরপর তিনি আমাকে ধরে দ্বিতীয়বার খুব জোরে আলিঙ্গণ করিলেন। এতেও আমি ভীষণ কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলিলেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি পড়তে পারি না। এরপর তিনি আমাকে দরে তৃতীয়বার খুব জোরে আলিঙ্গণ করিলেন। এবারও আমি খুব কষ্ট অনুভব করলাম। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলিলেন, পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন। সৃষ্টি করিয়াছেন মানুষকে আলাক হইতে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন, মানুষকে যা সে জানত না। এরপর রাসুল (সাঃআঃ) এ আয়াতগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। এ সময় তাহাঁর কাঁধের গোশ্ত ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। খাদীজার কাছে পৌঁছেই তিনি বলিলেন, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তখন সকলেই তাঁকে বস্ত্রাবৃত করে দিল। অবশেষে তার ভীতিভাব দূর হলে তিনি খাদীজাকে বলিলেন, খাদীজা আমার কী হল? আমি আমার নিজের সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। এরপর তিনি তাঁকে সব কথা খুলে বলিলেন। এ কথা শুনে খাদীজাহ (রাদি.) বলিলেন, কখনো নয়। আপনি সুসংবাদ নিন। আল্লাহর শপথ, আল্লাহ কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়দের খোঁজ-খবর নেন, সত্য কথা বলেন, সহায়হীন লোকদের বোঝা লাঘব করে দেন, নিঃস্ব লোকদেরকে উপার্জন করে দেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং হকের পথে আসা বিপদাপদে পতিত লোকদেরকে সাহায্য করে থাকে। তারপর খাদীজাহ তাঁকে নিয়ে তাহাঁর চাচাত ভাই আরাকা ইবনু নাওফালের কাছে গেলেন। তিনি জাহিলী যুগে খৃস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবী ভাষায় কিতাব লিখতেন। আর তিনি আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক আরবী ভাষায় ইনজীল কিতাব অনুবাদ করে লিখতেন। তিনি খুব বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজাহ (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, হে আমার চাচাত ভাই। আপনার ভাতিজা কী বলেন একটু শুনুন। তখন ওয়ারাকা বলিলেন, ভাতিজা, কী হয়েছে তোমার? নাবী (সাঃআঃ) যা দেখেছিলেন, সব কিছুর ব্যাপারে তাকে জানালেন। সব কথা শুনে ওয়ারাকা বলিলেন, ইনিই সেই ফেরেশতা, যাকে মূসার কাছে পাঠানো হয়েছিল। আহ! সে সময় আমি যদি যুবক হতাম। আহ! সে সময় আমিযদি জীবিত থাকতাম। তারপর তিনি একটি গুরুতর বিষয় উল্লেখ করলে রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, সত্যিই তারা কি আমাকে বের করে দেবে? ওয়ারাকা বলিলেন, হ্যাঁ, তারা তোমাকে বের করে দেবে। তুমি যে দাওয়াত নিয়ে এসেছ, এ দাওয়াত যে-ই নিয়ে এসেছে তাকেই কষ্ট দেয়া হয়েছে। তোমার নবুয়তকালে আমি জীবিত থাকলে অবশ্যই আমি তোমাকে প্রবল ও সর্বতোভাবে সাহায্য করতাম। এরপর ওয়ারাকা অধিক দিন বাঁচেননি; বরং অল্পদিনের মধ্যেই তিনি মারা গেলেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য ওয়াহী বন্ধ হয়ে গেল। এতে রাসুল (সাঃআঃ) খুবই চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লেন। [৩] (আ.প্র. ৪৫৮৫, ই.ফা. ৪৫৯০)

৪৯৫৪

মুহাম্মাদ ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবু সালামাহ ইবনু আবদুর রহমান (রাদি.)-এর মাধ্যমে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। রাসুল (সাঃআঃ) ওয়াহী বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, এক সময় আমি পথ চলছিলাম। হঠাৎ আকাশ থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলাম। আমি মাথা তুলে তাকালাম। দেখলাম, যে ফেরেশতা আমার কাছে হেরা গুহায় আসতেন, তিনিই আসমান ও যমীনের মাঝে বিদ্যমান কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তাই বাড়িতে ফিরে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। সুতরাং সকলেই আমাকে বস্ত্রাবৃত করিল। তখন আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন, “হে বস্ত্রাবৃত রাসুল! উঠুন, সতর্ক করুন, আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, এবং স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র পবিত্র রাখুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন” (সুরা আল-মুদ্দাস্সির ৭৪/১-৫)। আবু সালামাহ (রাদি.) বলেন, আরবরা জাহিলী যুগে যে সব মূর্তির পূজা করত الرِّجْزَ বলে ঐ সব মূর্তিকেই বোঝানো হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে ওয়াহীর ধারা চলতে থাকে। [৪] (আ.প্র. ৪৫৮৫, ই.ফা. ৪৫৯০)

৬৫/৯৬/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিন্ড থেকে। (সুরা আলাক ৯৬/২)

৪৯৫৫

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, প্রথমত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর প্রতি ওয়াহী আরম্ভ হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। এরপর তাহাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বলিলেন, পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন। যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিণ্ড থেকে। পাঠ করুন, আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু” (সুরা আলাক ৯৬/১-৫)। [৩] (আ.প্র. ৪৫৮৬, ই.ফা. ৪৫৯১)

৬৫/৯৬/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ পাঠ করুন, আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু। (সুরা আলাক ৯৬/৫)

৪৯৫৬

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর প্রতি সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে ওয়াহীর শুরু হয়। এরপর তাহাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বলিলেন, “পাঠ কর, তোমার প্রতিপালকের নামে , যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন, সৃষ্টি করিয়াছেন মানুষকে আলাক হইতে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহা মহিমান্বিত” (সুরা আলাক ৯৬/১-৫)। [৩] (আ.প্র. ৪৫৮৭, ই.ফা. ৪৫৯২)

৬৫/৯৫/৪.অধ্যায়ঃ যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। (সুরা আলাক ৯৬/৪)

৪৯৫৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এরপর রাসুল (সাঃআঃ) খাদীজা (রাদি.)-এর কাছে ফিরে এসে বলিলেন, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। এরপর রাবী সম্পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করিলেন। [৩] (আ.প্র. ৪৫৮৮, ই.ফা. ৪৫৯৩)

৬৫/৯৬/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তার এরূপ করা কখনই উচিত নয়, যদি সে এরূপ করা থেকে ফিরিয়ে না আসে, তবে আমি অবশ্যই তাকে কপালের কেশগুচ্ছ ধরে হিঁচড়ে নিয়ে যাবো। যে কেশগুচ্ছ মিথ্যাচারী, পাপাচারীর। (সুরা আলাক ৯৬/১৫-১৬)

৪৯৫৮

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু জাহ্ল বলেছিল, আমি যদি মুহাম্মাদকে কাবার পাশে সলাত আদায় করিতে দেখি তাহলে অবশ্যই আমি তার ঘাড় পদদলিত করব। এ খবর নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে পৌঁছার পর তিনি বলিলেন, সে যদি তা করে তাহলে অবশ্যই ফেরেশতা তাকে পাকড়াও করিবে। উবাইদুল্লাহর মাধ্যমে আবদুল থেকে আমর ইবনু খালিদ এ হাদীস বর্ণনা করিতে গিয়ে উপরোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। (আ.প্র. ৪৫৮৯, ই.ফা. ৪৫৯৪)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply