সুরা আন নাজম এর তাফসীর
সুরা আন নাজম এর তাফসীর
সুরা আন নাজম এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা নাজম আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
সুরা আন নাজম এর তাফসীর
৬৫/৫৩/১.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
(53) سُوْرَةُ وَالنَّجْمِ
সুরা (৫৩) : আন্-নাজম
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {ذُوْ مِرَّةٍ}ذُوْ قُوَّةٍ {قَابَ قَوْسَيْنِ} حَيْثُ الْوَتَرُ مِنَ الْقَوْسِ {ضِيْزَىْ} عَوْجَاءُ {وَأَكْدٰى} قَطَعَ عَطَاءَهُ {رَبُّالشِّعْرٰى} هُوَ مِرْزَمُ الْجَوْزَاءِ {الَّذِيْ وَفّٰى} وَفَّى مَا فُرِضَ عَلَيْهِ {أَزِفَتِ الْاٰزِفَةُ} اقْتَرَبَتْ السَّاعَةُ {سَامِدُوْنَ} الْبَرْطَمَةُ وَقَالَ عِكْرِمَةُ يَتَغَنَّوْنَ بِالْحِمْيَرِيَّةِ وَقَالَ إِبْرَاهِيْمُ {أَفَتُمَارُوْنَه”} أَفَتُجَادِلُوْنَهُ وَمَنْ قَرَأَ أَفَتَمْرُوْنَهُ يَعْنِيْ أَفَتَجْحَدُوْنَهُ وَقَالَ {مَا زَاغَ الْبَصَرُ} بَصَرُ مُحَمَّدٍ e{وَمَا طَغٰى} وَمَا جَاوَزَ مَا رَأَى {فَتَمَارَوْا} كَذَّبُوْا وَقَالَ الْحَسَنُ {إِذَا هَوٰى} غَابَ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {أَغْنٰى وَأَقْنٰى} أَعْطَى فَأَرْضَى.
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ذُوْ مِرَّةٍশক্তিশালী। قَابَ قَوْسَيْنِদুই ধনুকের ছিলার পরিমাণ। ضِيْزَىْবক্রতা وَأَكْدٰىসে তাহাঁর দান বন্ধ করে দেয়। رَبُّ الشِّعْرٰىজওযারামীর মিরজাম নক্ষত্র। الَّذِيْوَفّٰىসে তাহাঁর প্রতি ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছে। أَزِفَتْ الْاٰزِفَةُক্বিয়ামাত সন্নিকট। سَامِدُوْنَদ্বারা بَرْطَمَةُনামক খেলাধুলা বোঝানো হয়েছে। ইকরামাহ (রাদি.) বলেন, হামারিয়্যাহ ভাষায় গান গাওয়াকে سَامِدُوْنَবলা হয়। ইব্রাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, أَفَتَجْحَدُوْنَهচতোমরা কি তাহাঁর সঙ্গে বিতর্ক করিবে? যারা এ শব্দটিকে أَفَتَجْحَدُوْنَهচপড়ে, তাদের কিরাআত অনুসারে এর অর্থ হইবে أَفَتَجْحَدُوْنَهচতোমরা কি তার কথাকে অস্বীকার করিবে? مَا زَاغَ الْبَصَرُ(মুহাম্মদ সাঃআঃ-এর) দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি وَمَاطَغٰىএবং তাহাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যভ্রষ্টও হয়নি। فَتَمَارَوْا তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করিল। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, إِذَاهَوٰى যখন সে অদৃশ্য হয়ে গেল। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, أَغْنٰىوَأَقْنٰى তিনি দান করিলেন এবং খুশী করে দিলেন।
৪৮৫৫
মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়েশাহ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মা! মুহাম্মদ (সাঃআঃ) কি তাহাঁর রবকে দেখেছিলেন তিনি বলিলেন, তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাঁটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা সম্পর্কে তুমি কি জান না যে তোমাকে এ তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। যদি কেউ তোমাকে বলে যে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) তাহাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন, তাহলে সে মিথ্যাচারী। তারপর তিনি পাঠ করিলেন, তিনি দৃষ্টিশক্তির অধিগম্য নহেন কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাহাঁর অধিগত; এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত” “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তাহাঁর সঙ্গে কথা বলবেন, ওয়াহীর মাধ্যম ব্যতীত অথবা পর্দার আড়াল ছাড়া”। আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে যে, আগামীকাল কী হইবে সে তা জানে, তাহলে সে মিথ্যাচারী। তারপর তিনি তিলাওয়াত করিলেন, “কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করিবে।” এবং তোমাকে যে বলবে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) কোন কথা গোপন রেখেছেন, তাহলেও সে মিথ্যাচারী। এরপর তিনি পাঠ করিলেন, “হে রাসুল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার কর। হ্যাঁ, তবে রাসুল জিব্রীল (আ.)-কে তাহাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দুবার দেখেছেন। [৩২৩৪] (আ.প্র. ৪৪৮৮, ই.ফা. ৪৪৯১)
৬৫/৫৩/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অবশেষে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের দূরত্ব রইল অথবা আরও কম। (সুরা আন্-নাজম ৫৩/৯)
৪৮৫৬
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى আয়াত দুটোর ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইবনু মাসউদ (রাদি.) বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) জিব্রীল (আ.)-কে দেখেছেন। তাহাঁর ছয়শ ডানা ছিল। [৩২৩২] (আ.প্র. ৪৪৮৯, ই.ফা. ৪৪৯২)
৬৫/৫৩/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তখন আল্লাহ স্বীয় বান্দার প্রতি যা ওয়াহী করার ছিল, তা ওয়াহী করিলেন। (সুরা আন্-নাজম ৫৩/১০)
৪৮৫৭
শাইবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি র্যির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে আল্লাহর বাণী ঃ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى فَأَوْحَى এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, আমাকে আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেছেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) জিব্রীল (আ.)-কে দেখেছেন। এ সময় তাহাঁর ডানা ছিল ছশ। [৩২৩২] (আ.প্র. ৪৪৯০, ই.ফা. ৪৪৯৩)
৬৫/৫৩/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তিনি তো স্বীয় রবের মহান নিদর্শনসমূহ দর্শন করিয়াছেন। (সুরা আন্-নাজম ৫৩/১৮)
৪৮৫৮
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) সবুজ একটি রফরফ দেখেছিলেন যা পুরো আকাশ জুড়ে রেখেছিল। [৩২৩৩] (আ.প্র. ৪৪৯১, ই.ফা. ৪৪৯৪)
৬৫/৫৩/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উয্যা সম্বন্ধে। (সুরা আন্-নাজম ৫৩/১৯)
৪৮৫৯
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর বাণী اللاَّتَ وَالْعُزَّى এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে লাত বলে এ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যে হাজীদের জন্য ছাতু গুলত। (আ.প্র. ৪৪৯২, ই.ফা. ৪৪৯৫)
৪৮৬০
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কসম করে বলে যে, লাত ও উয্যার কসম, সে যেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। আর যে ব্যক্তি তার সাথীকে বলে, এসো আমি তোমার সঙ্গে জুয়া খেলব, তার সদাকাহ দেয়া কর্তব্য। [৬১০৭, ৬৩০১, ৬৬৫০; মুসলিম ২৭/২, হাদীস ১৬৪৭, আহমাদ ৮০৯৩] (আ.প্র. ৪৪৯৩, ই.ফা. ৪৪৯৬)
৬৫/৫৩/৬.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্বন্ধে? (সুরা আন্-নাজম ৫৩/২০)
৪৮৬১
উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়েশাহ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, মুশাল্লাল নামক স্থানে অবস্থিত মানাত দেবীর নামে যারা ইহরাম বাঁধতো, তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করতো না। তারপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন, “সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।” এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও মুসলিমগণ তাওয়াফ করিলেন। সুফ্য়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মানাত কুদায়দ-এর মুশাল্লাল-এ অবস্থিত ছিল। অপর এক বর্ণনায় আবদুর রহমান ইবনু খালিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ আয়াতটি আনসারদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। ইসলাম গ্রহণের আগে আনসার ও গাস্সান গোত্রের লোকেরা মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো। হাদীসের বাকী অংশ সুফ্য়ানের বর্ণনার মতই। অপর এক সূত্রে মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারদের কতক লোক মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো, মানাত মাক্কাহ ও মাদীনাহ্র মাঝে রাখা একটি দেবমূর্তি। তারা বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! মানাতের সম্মানার্থে আমরা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করতাম না। এ হাদীসটি আগের হাদীসেরই মত। [১৬৪৩] (আ.প্র. ৪৪৯৪, ই.ফা. ৪৪৯৭)
৬৫/৫৩/৭.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অতএব আল্লাহ্কে সাজদাহ কর এবং তাহাঁরই ইবাদাত কর। (সুরা আন্-নাজম ৫৩/৬২)
৪৮৬২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সুরা নাজমের মধ্যে সাজদাহ করিলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সবাই সাজদাহ করিল। আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সূত্রে ইব্রাহীম ইবনু তাহ্মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করিয়াছেন; তবে ইবনু উলাইয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আইয়ূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর কথা উল্লেখ করেননি। [১০৭১] (আ.প্র. ৪৪৯৫, ই.ফা. ৪৪৯৮)
৪৮৬৩
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাজদাহর আয়াত সম্বলিত অবতীর্ণ হওয়া সর্বপ্রথম সুরা হলো আন-নাজম। এ সুরার মধ্যে রাসুল (সাঃআঃ) সাজদাহ করিলেন এবং সাজদাহ করিল তাহাঁর পেছনের সকল লোক। তবে এক ব্যক্তিকে আমি দেখলাম, এক মুঠ মাটি হাতে তুলে তাতে সাজদাহ করছে। এরপর আমি তাকে কাফের অবস্থায় নিহত হইতে দেখেছি। সে হল উমাইয়াহ ইবনু খাল্ফ। [১০৬৭] (আ.প্র. ৪৪৯৬, ই.ফা. ৪৪৯৯)
Leave a Reply