সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও আল্লাহর বিধান মান্য করা

সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও আল্লাহর বিধান মান্য করা

সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও আল্লাহর বিধান মান্য করা  >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর ২ টি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও আল্লাহর বিধান মান্য করা

রিচ্ছেদ -১৬ঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব
পরিচ্ছেদ -১৭ঃ আল্লাহর বিধান মান্য করা অবশ্য কর্তব্য।

পরিচ্ছেদ -১৬ : সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ﴾ [الحشر: ٧] 

অর্থাৎ “আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।” [সূরা হাশ্‌র ৭ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ [النجم: ٣،  ٤] 

অর্থাৎ “সে মনগড়া কথাও বলে না। তা তো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।” [সূরা নাজ্‌ম ৩-৪ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ ﴾ [ال عمران: ٣١] 

অর্থাৎ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করিবেন।” [সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত]

তিনি অন্যত্র বলেছেন,

﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ ﴾ [الاحزاب: ٢١] 

অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাহাদের জন্য রাসূলুল্লাহর [চরিত্রের] মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” [সূরা আহযাব ২১ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥] 

অর্থাৎ “কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী [মু’মিন] হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাহাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাহাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।” [সূরা নিসা ৬৫ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ﴾ [النساء: ٥٩] 

قَالَ العلماء : معناه إِلَى الكتاب والسُنّة،

অর্থাৎ “আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।” [ঐ ৫৯ আয়াত]

আলেমগণ বলেন, এর অর্থ হল: কিতাব ও সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দাও।

তিনি আরো বলেন,

﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ ﴾ [النساء: ٨٠] 

অর্থাৎ “যে রসূলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল।” [ঐ ৮০ আয়াত]

তিনি অন্যত্রে বলেছেন,

﴿ وَإِنَّكَ لَتَهۡدِيٓ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٥٢ صِرَٰطِ ٱللَّهِ ﴾ [الشورا: ٥٢،  ٥٣] 

অর্থাৎ “আর নিশ্চয়ই তুমি সরল পথ প্রদর্শন কর—সেই আল্লাহর পথ—-।” [সূরা শুরা ৫২ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴾ [النور: ٦٣] 

অর্থাৎ “সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাহাদেরকে গ্রাস করিবে।” [সূরা নূর ৬৩ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿ وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ ﴾ [الاحزاب: ٣٤] 

অর্থাৎ “আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখ।” [সূরা আহযাব ৩৪ আয়াত]

১৬০. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে (বর্ণনা না দিয়ে) ছেড়ে দিয়েছি, সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ সে ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করো না)। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের অধিক প্রশ্ন করার এবং তাদের নবীদের সঙ্গে মতভেদ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোন জিনিস থেকে নিষেধ করব, তখন তোমরা তা হইতে দূরে থাক। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন কর।’’[১] (বুখারী ও মুসলিম)

[১] নাসাঈ ১৭১৯, ১৭২০, ১৭২১, ১৭২২, ১৭২৩, ১৭২৪, ১৭২৫, ১৭৮৯, ২১৭৭, ২১৭৮, ২১৭৯, ২৬১৯, আবু দাঊদ ২৪৩৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৬১. আবু নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।’’[১]

[১] আবু দাঊদ ৪৬০৭, দারেমী ৯৫, (আবু দাঊদ, তিরমিজী, হাসান সহীহ). হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

১৬২. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করিবে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করিবে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে আমার অনুসরণ করিবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করিবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করিবে।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৭২৮০, মুসলিম ১৮৩৫, নাসাঈ ৪১৯৩, ৫৫১০, ইবনু মাজাহ ৩, আহমাদ ৫৩১১.হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৬৩. আবু মুসলিম মতান্তরে আবু ইয়াস সালামাহ ইবনু ‘আমর ইবনু আকওয়া’ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকটে বাম হাতে খাবার খেল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার ডান হাতে খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারব না।’ তখন তিনি বললেন, ‘‘তুমি যেন না পারো।’’ একমাত্র অহংকার তাকে ডান হাতে খাওয়া থেকে বাধা দিয়েছিল। অতঃপর সে তার ডান হাত তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।[১]

[১] মুসলিম ২০২১, আহমাদ ১৬০৫৮, ১৬০৫৪, ১৬০৯৫, দারেমী ২০৩২.হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৬৪. নু‘মান ইবনু বাশীর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা তোমাদের (নামাযের) কাতার অবশ্যই সোজা কর, নতুবা আল্লাহ তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন। (অথবা তোমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।)’’ বুখারী-মুসলিম)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের কাতারসমূহ এমনভাবে সোজা করতেন, যেন তিনি তার দ্বারা তীর সোজা করছেন। যতক্ষণ না তিনি অনুভব করতেন যে, আমরা তাঁর নিকট থেকে এর গুরুত্ব বুঝে নিয়েছি। অতঃপর একদিন তিনি (নামায পড়ার জন্য) বের হয়ে তিনি (ইমামের জায়গায়) দাঁড়ালেন। এমনকি তিনি তকবীর বলে নামায শুরু করতে যাচ্ছেন, এমতাবস্থায় তিনি একটি লোককে দেখলেন যে, সে তার বুক কাতার থেকে বের করে রেখেছে। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করিবে, নচেৎ তিনি তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন। (অথবা তোমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।)’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৭১৭, মুসলিম ৪৩৬, তিরমিজী ২২৭, নাসাঈ ৮১০, আবু দাঊদ ৬৬২, ৬৬৩, ৬৬৫, ইবনু মাজাহ ৯৯৪, আহমাদ ১৭৯১৮, ১৭৯৫৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৬৫. আবু মূসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

যে, মদ্বীনায় রাতের বেলায় একটি ঘর তার বাসিন্দা সমেত পুড়ে গেল। অতঃপর যখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কে তাদের সংবাদ দেওয়া হল, তখন তিনি বললেন, ‘‘এই আগুন তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমোতে যাবে, তখন তা নিভিয়ে দাও।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২৯৪, মুসলিম ২০১৬, আহমাদ ১৯০৭৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৬৬. আবু মূসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা যমীনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে শোষণ করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সব্জি উৎপন্ন করে এবং তার এক অংশ চাষের অযোগ্য (খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন। সুতরাং তারা তা হইতে পান করে এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর এক অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না ঘাস উৎপন্ন করে। এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হিদায়াত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হিদায়াতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৯, মুসলিম ২২৮২, আহমাদ ২৭৬৮২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৬৭. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমার ও তোমাদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। অতঃপর তাতে উচ্চুঙ্গ ও পতঙ্গ পড়তে আরম্ভ করল, আর সে ব্যক্তি তা হইতে তাদেরকে বাধা দিতে লাগল। আমিও তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাচ্ছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে (জাহান্নামের আগুনে) পতিত হচ্ছ।’’[১]

[১] মুসলিম ২২৮৫, আহমাদ ১৪৪৭১, ১৪৭৯১.হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৬৮. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নিশ্চয় রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (খাবার পর) আঙ্গুলগুলি ও বাসন চেটে খাওয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘ওর কোনটিতে বরকত আছে তা তোমরা জান না।’’ (মুসলিম)

তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যখন তোমাদের কারো (হাত থেকে) গ্রাস পড়ে যাবে, তখন সে যেন তা তুলে নেয়। অতঃপর তাতে যে ময়লা থাকে তা পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেয় এবং তা শয়তানের জন্য ছেড়ে না দেয়। আর যতক্ষণ পর্যন্ত আঙ্গুল না চাটবে, ততক্ষণ যেন সে রুমালে হাত না মুছে। কেননা, সে জানে না যে, তার কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’

তাঁর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের কারো নিকট তার প্রত্যেক কাজে হাজির হয়; এমনকি সে তার খাবার সময়েও হাজির হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কারো গ্রাস পড়ে যাবে, তখন তাতে যে ময়লা থাকে তা পরিষ্কার করে খেয়ে নেয় এবং তা শয়তানের জন্য না ছাড়ে।’’[১]

[১] মুসলিম ২০৩৩, ইবনু মাজাহ ৩২৭০, আহমাদ ১৩৮০৯, ১৩৯৭৯, ১৪১৪২, ১৪২১৮, ১৪৫২১, ১৪৮০২, ১৪৮১৫.হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৬৯. ইবনু আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ সূরা আম্বিয়া ১০৪ আয়াত)

জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী।’ কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’ (এ কথা শুনে) আমি বলব–যেমন নেক বান্দা (ঈসা আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, ‘‘যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মায়েদা ১১৭ আয়াত) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে, ‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’[১]

[১] মুসলিম ২৮৬০, ৩৩৪৯, ৩৪৪৭, ৪৬২৫, ৪৬২৬, ৪৭৪০, ৬৫২৪, ৬৫২৫, ৬৫২৬, তিরমিজী ২৪২৩, ৩১৬৭, ৩৩৩২, নাসাঈ ২০৮১, ২০৮২, ২০৮৭, আহমাদ ১৯১৬, ১৯৫১, ২০২৮, ২০৯৭, ২২৮১, ২৩২৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭০. আবু সাঈদ আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা) কাঁকর ছুঁড়তে নিষেধ করিয়াছেন। কেননা, তা দিয়ে শিকার করা যায় না এবং শত্রুকে ঘায়েলও করা যায় না। বরং তাতে চোখ নষ্ট হয় ও দাঁত ভাঙ্গে। (বুখারী-মুসলিম)

অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ইবনু মুগাফফাল রাঃআঃ-এর এক আত্মীয় দুই আঙ্গুল দিয়ে কাঁকর ছুঁড়ছিল। তা দেখে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (ঐভাবে) কাঁকর ছুঁড়তে নিষেধ করিয়াছেন। কেননা, তা দিয়ে শিকার করা যায় না। কিন্তু সে আবার ঐ কাজ করতে লাগল। তখন তিনি বলে উঠলেন, ‘আমি তোমাকে বলছি, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এ কাজ করতে নিষেধ করিয়াছেন আবার তুমি ছুঁড়তে লাগলে? যাও! তোমার সাথে আর কথাই বলব না।’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২২০, ৪৮৪২, ৫৪৭৯, মুসলিম ১৯৫৪, নাসাঈ ৩৬, ৪৮১৫, আবু দাঊদ ২৭, ৫২৭০, ইবনু মাজাহ ৩২২৭, আহমাদ ১৬৩৫২, ২০০১৭, ২০০২৮, ২০০৩৮, ২০০৫০, দারেমী ৪৩৯, ৪৪০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭১. আবেস ইবনু রাবি‘আহ্ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উমার ইবনু খাত্তাব রাঃআঃ-কে ‘হাজারে আসওয়াদ’ চুমু দিতে দেখেছি, তিনি বলছিলেন, ‘আমি সুনিশ্চিত জানি যে, তুমি একটা পাথর; তুমি না উপকার করতে পার, আর না অপকার? আমি যদি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৫৯৭, ১৬০৫, ১৬১০, মুসলিম ১২৭০, তিরমিজী ৮৬০, নাসাঈ ২৯৩৭, ২৯৩৮, আবু দাঊদ ১৮৭৩, ২৯৪৩, আহমাদ ১০০, ১৩২, ১৭৭, ২২৭, ২৫৫, ২৭৬, ৩২৭, ৩৬৩, ৩৮৩, ৩৮২, মুওয়াত্তা মালেক -৮২৪, দারেমী ১৮৬৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ১৭ -আল্লাহর বিধান মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। আর যাকে এর দিকে আহ্বান করা হবে ও তাকে ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেওয়া হবে, সে কী উত্তর দেবে?

১৭২. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

যখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর উপর এই আয়াত অবতীর্ণ হল, অর্থাৎ ‘‘আকাশমণ্ডলী ও ভূমণ্ডলের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। যদি তোমরা তোমাদের মনের কথা প্রকাশ কর অথবা তা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের নিকট হইতে তার হিসাব গ্রহণ করিবেন।’’ (সূরা বাক্বারাহ ২৮৪ আয়াত) তখন এটি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাহাবীদের জন্য প্রচণ্ড ভারী মনে হল। ফলে তাঁরা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট এলেন এবং তাঁরা হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে গিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা (এমন) অনেক কাজের আদিষ্ট হয়েছি, যা (সম্পাদন) করা আমাদের ক্ষমতাধীন; (যেমন) নামায, জিহাদ, রোযা ও সাদকাহ। আর এই আয়াতটি যে আপনার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা আমাদের ক্ষমতার বাইরে।’

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘তোমরা কি তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও খৃষ্টান)দের মত বলতে চাও যে, ‘আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম?’ বরং তোমরা বল, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম। হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ সুতরাং যখন লোকেরা আয়াতটি পড়ল এবং তাদের জিভে সেটি পঠিত হইতে থাকল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তারপর এই আয়াতটি অবতীর্ণ করলেন, ‘‘রাসূল তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে সে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং বিশ্বাসিগণও। সকলে আল্লাহইতে, তাঁর ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। (তারা বলে,) ‘আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না।’ আর তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম! হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর তোমারই দিকে (আমাদের) প্রত্যাবর্তন হবে।’’ (সূরা বাক্বারা ২৮৫ আয়াত)

যখন তাঁরা এ কাজ করলেন, তখন পূর্ববর্তী আয়াতটিকে আল্লাহ মনসূখ (রহিত) করে দিলেন। অতঃপর (তার পরিবর্তে) অবতীর্ণ করলেন, ‘‘আল্লাহ কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন না। যে ভাল উপার্জন করিবে সে তার (প্রতিদান পাবে) এবং যে মন্দ উপার্জন করিবে সে তার (প্রতিফল পাবে)। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি, তাহলে তুমি আমাদেরকে অপরাধী করো না।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘হে আমাদের রব! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘আর তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের পাপ মোচন কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমি আমাদের অভিভাবক। অতএব সত্য প্রত্যাখ্যানকারী (কাফের) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে (সাহায্য ও) জয়যুক্ত কর।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ![১]

[১] মুসলিম ১২৫, আহমাদ ২৭৯০৪.হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু উদ্ভাবন করল—যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যাতে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, আবু দাঊদ ৪৬০৬, ইবনু মাজাহ ১৪, আহমাদ ২৩৯২৯, ২৪৬০৪, ২৪৯৪৪, ২৫৫০২, ২৫৬৫৯, ২৫৬৫৯, ২৫৭৯৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply