নামাজ আদায়কারীর সামনে সুতরাহ [আড়াল] দেয়া
নামাজ আদায়কারীর সামনে সুতরাহ [আড়াল] দেয়া >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৪৭. অধ্যায়ঃ নামাজ আদায়কারীর সামনে সুতরাহ [আড়াল] দেয়া
৯৯৮
মূসা ইবনি তাল্হাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি নিজের সামনে হাওদার [উটের পিঠে আসনের পিছভাগে দাঁড় করা] কাঠের ন্যায় কিছু রেখে দিয়ে নিশ্চিন্তে নামাজ আদায় করিতে পারে। এ সুত্রার পিছন দিয়ে কেউ অতিক্রম করলে সেদিকে তাকে ভ্রুক্ষেপ করিতে হইবে না। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯৯২, ইসলামিক সেন্টার- ১০০৩]
৯৯৯
মূসা ইবনি তালহাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নামাজ আদায় করতাম আর এমন সময় আমাদের সামনে দিয়ে জীবজন্তু চলাফেরা করত। এ ব্যাপারটি আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সামনে উত্থাপন করলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কারো সামনে হাওদার পিছনের কাঠের ন্যায় কিছু দাঁড় করানো থাকলে, তার সামনে দিয়ে কোন কিছু যাতায়াত করলে তাতে কোন ক্ষতি নেই।
ইবনি নুমায়র-এর বর্ণনায় আছে : তার সামনে দিয়ে যে লোকই অতিক্রম করুক তাতে কোন ক্ষতি হইবে না। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ১০০৪]
১০০০
আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে নামাজ আদায়কারীর সামনে সুত্রাহ্ রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেনঃ হাওদার পিছনের খুঁটির মতো। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ১০০৫]
১০০১
আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তাবূকের যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে নামাজ আদায়কারীর সামনের সুত্রাহ্ [আড়াল] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেনঃ হাওদার পিছনের খুঁটির ন্যায়। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ১০০৬]
১০০২
ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন ঈদের নামাজ আদায় করিতে বের হইতেন, একটি বর্শা সাথে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিতেন। এটা তাহাঁর সামনে দাঁড় করে রাখা হত এবং তিনি এর দিকে ফিরে নামাজ আদায় করিতেন। উপস্থিত লোকেরা তাহাঁর পিছনে থাকত। তিনি সফরে থাকাকালীন সময়েও এমন করিতেন। তাহাঁর পরবর্তী সময়ের শাসকগণও এটাকে সুতরাহ হিসেবে ব্যবহার করিতেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ১০০৭]
১০০৩
ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] সামনের দিকে আনাযাহ [বর্শা] পুঁতে দিতেন। অধস্তন রাবী আবু বাক্র-এর বর্ণনায় আছে : তিনি বল্লম পুঁতে দিতেন এবং সেদিকে ফিরে নামাজ আদায় করিতেন।
আবু শাইবাহ্ বলেন, উবাইদুল্লাহ বলেছেন, এটা ছিল বর্শা। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ১০০৮]
১০০৪
ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর উট আড়াআড়ি করে বসাতেন। অতঃপর তা সামনে রেখে নামাজ আদায় করিতেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ১০০৯]
১০০৫
ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর বাহনকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করিতেন। ইবনি নুমায়র-এর বর্ণনায় রয়েছে : নবী [সাঃআঃ] [সফরে থাকাকালীন সময়ে] তাহাঁর উট সামনে রেখে নামাজ আদায় করিতেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ১০১০]
১০০৬
আওন ইবনি আবু জুহাইফাহ্ [রাদি.] থেকে তার পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [জুহাইফাহ্] বলেন, আমি মাক্কায় নবী [সাঃআঃ] -এর কাছে আসলাম। তিনি তখন আব্তাহ [মুহাসসাব] নামক স্থানে লাল চামড়ার তৈরি একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। রাবী বলেন, বিলাল [রাদি.] তাহাঁর উযূর পানি নিয়ে আসলেন। কেউ পানি পেল, কেউ পেল না- সে অন্যের কাছ থেকে সামান্য নিয়ে নিল।{১০৭} নবী [সাঃআঃ] বের হয়ে আসলেন। তাহাঁর গায়ে লাল রং এর চাদর শোভা পাচ্ছিল। আমি যেন তাহাঁর পায়ের গোছার শুভ্রতা এখনো দেখিতে পাচ্ছি। তিনি ওযূ করিলেন এবং বিলাল [রাদি.] আযান দিলেন। আমি তার [বিলালের] অনুসরণ করে এদিকে-ওদিক মুখ ঘুরাতে লাগলাম। সে ডানে বাঁয়ে মুখ ঘুরিয়ে “হাইয়্যা আলাস সলাহ” ও “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলিল। রাবী বলেন, অতঃপর একটি বর্শা দাঁড় করিয়ে পুঁতে দেয়া হলো। তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে যুহরের দুরাকআত [ফরয] নামাজ আদায় করিলেন। তাহাঁর [সুত্রার] সামনে দিয়ে গাধা, কুকুর ইত্যাদি যাচ্ছিল কিন্তু তিনি বাধা দিলেন না। অতঃপর তিনি আস্রের ফরয নামাজ ও দুরাকআত পড়লেন। মাদীনা য় ফিরে আসার সময় পর্যন্ত তিনি এভাবে দুরাকআত করে নামাজ আদায় করিয়াছেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০০, ইসলামিক সেন্টার- ১০১১]
{১০৭}নবী [সাঃআঃ] -এর ওযূর ব্যবহার করা পানি সহাবাগণ বারাকাত স্বরূপ ব্যবহার করিতেন। সেটারই প্রতিযোগিতা ছিল এটা।
১০০৭
আওন ইবনি আবু জুহাইফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাহাঁর পিতা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে লাল চামড়ার তৈরি তাঁবুর মধ্যে দেখিতে পেলেন। আমি [আবু জুহাইফাহ্] বিলালকে তাহাঁর ওযূর অবশিষ্ট পানি নিয়ে বের হয়ে আসতে দেখলাম। যারা তা পেল তারা নিজেদের শরীরে তা মাখল। আর যারা তা পায়নি তারা নিজেদের সাথীদের ভেজা হাতের স্পর্শ লাভ করিল। অতঃপর আমি দেখলাম, বিলাল একটি বর্শা বের করে এনে তা মাটিতে পুঁতে দিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লাল এক জোড়া চাদর পরিধান করে তা পায়ের গোছা পর্যন্ত উঁচু করে বের হলেন। অতঃপর তিনি বর্শাটি সামনে রেখে লোকদের নিয়ে দুরাকআত ফারয নামাজ আদায় করিলেন। আমি বর্শার বহিরাংশ দিয়ে মানুষ এবং চতুষ্পদ জন্তু অতিক্রম করিতে দেখলাম। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০১, ইসলামিক সেন্টার- ১০১২]
১০০৮
আওন ইবনি আবু জুহাইফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি তার পিতার সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। মালিক ইবনি মিগওয়াল-এর বর্ণনায় আছে : যখন দুপুর হলো, বিলাল [রাদি.] এসে নামাজের জন্য আযান দিল। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০২, ইসলামিক সেন্টার- ১০১৩]
১০০৯
আবু জুহাইফাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুপুর বেলা [তাঁবু থেকে বের হয়ে] মাঠের দিকে গেলেন, অতঃপর ওযূ করিলেন। অতঃপর তিনি যুহরের সময়ের দুরাকআত এবং আস্রের সময়েরও দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন। তাহাঁর সামনে একটি বর্শা ছিল।
শুবাহ্ বলেন, আওন তার পিতা আবু জুহাইফাহ্ [রাদি.] -এর সূত্রে আরো বর্ণনা করিয়াছেন যে, বর্শার অপরদিক দিয়ে মহিলা এবং গাধা অতিক্রম করছিল। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০৩, ইসলামিক সেন্টার- ১০১৪]
১০১০
শুবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি এ সূত্রে উপরোল্লিখিত সূত্রদ্বয়ের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাকাম-এর বর্ণনায় আরো আছে : লোকেরা তাহাঁর ওযূর অবশিষ্ট পানি [গায়ে মাখার জন্য বারাকাত স্বরূপ] নিতে লাগল। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০৪, ইসলামিক সেন্টার- ১০১৫]
১০১১
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একটি গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে [মিনায়] আসলাম। এ সময় আমি বয়ঃপ্রাপ্তির কাছাকাছি বয়সের ছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন মিনায় লোকেদের নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। আমি লাইনের সামনে দিয়ে চলে গেলাম। গাধার পিঠ থেকে নেমে এটাকে চরে বেড়ানোর জন্য ছেড়ে দিলাম এবং আমি লাইনের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।{১০৮} এ ব্যাপারে আমাকে কেউ বাধা দেয়নি। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০৫, ইসলামিক সেন্টার- ১০১৬]
{১০৮}জামাআত চলাকালীন সময়ে ইমামের পিছন দিকের কোন কাতারের সামনে দিয়ে প্রয়োজনে চলাচল করলে নামায কাটা হয় না।
১০১২
উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উত্বাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] তাকে অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি একটি গাধায় সওয়ার হয়ে [মিনায়] আসলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ সময় মিনায় লোকেদের নিয়ে সলাতে দণ্ডায়মান ছিলেন। এটা বিদায় হাজ্জের সময়কার ঘটনা। গাধাটি কোন কোন লাইনের সামনে দিয়ে চলাফেরা করছিল। তিনি এর পিঠ থেকে নেমে লাইনে শামিল হয়ে গেলেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০৬, ইসলামিক সেন্টার- ১০১৭]
১০১৩
যুহ্রী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে উপরের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে বলা হয়েছে : নবী [সাঃআঃ] আরাফাতের ময়দানে সলাতে রত ছিলেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০৭, ইসলামিক সেন্টার- ১০১৮]
১০১৪
যুহ্রী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ সূত্রে মিনা বা আরাফাহ্ কোনটিরই নাম উল্লেখ নেই। এতে বলা হয়েছে এ ঘটনাটি বিদায় হাজ্জের সময়কার অথবা মক্কা বিজয়ের সময়কার। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০০৮, ইসলামিক সেন্টার- ১০১৯]
Leave a Reply