সাহু সিজদা করার নিয়ম
সাহু সিজদা করার নিয়ম >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ২০
- অধ্যায়ঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ২০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ
১০১৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তি সলাত আদায় করিতে দাঁড়ালে তার নিকটে শয়তান আসে। সে তাকে সন্দেহ-সংশয়ে ফেলে দেয়, এতে সে স্মরণ রাখতে পারে না কত রাক্আত সলাত সে আদায় করছে। তাই তোমাদের কোন ব্যক্তি এ অবস্থাপ্রাপ্ত হলে সে যেন [শেষ বৈঠকে] বসা অবস্থায় দুটি সাজদাহ্ করে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১২৩২, মুসলিম ৩৮৯।সাহু সিজদা করার নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০১৫. আত্বা বিন ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন সলাতের মধ্যে সন্দেহ করে যে, সে কতটুকু সলাত আদায় করছে? তিন রাক্আত না চার রাক্আত, তাহলে সে যেন সন্দেহ দূর করে। যে সংখ্যার উপর দৃঢ়তা সৃষ্টি হয় তার ওপর নির্ভর করিবে। তারপর সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটো সাজদাহ্ করিবে। যদি সে পাঁচ রাক্আত সলাত আদায় করে থাকে তাহলে এ সাজদাহ্ এ সলাতকে জোড় সংখ্যায় [ছয় রাক্আতে] পরিণত করিবে। যদি সে পুরো চার রাক্আত আদায় করে থাকে তাহলে এ দু সাজদাহ্ শায়ত্বনকে লাঞ্ছনাকারী গণ্য হবে।
[মুসলিম; ঈমাম মালিক এ হাদিসটিকে আত্বা হইতে মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। তার বর্ণনায় এ শব্দগুলো আছে যে, সলাত আদায়কারী এ দু সাজদাহ্ দিয়ে পাঁচ রাক্আতকে জোড় সংখ্যা বানাবে।] {১};{১} সহীহ : মুসলিম ৫৭১। সাহু সিজদা করার নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০১৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেন] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের সলাত পাঁচ রাক্আত আদায় করে নিলেন। তাঁকে বলা হলো, সলাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি [সাঃআঃ] প্রশ্ন করিলেন, কি হয়েছে? সহাবীরা বললেন, আপনি সলাত পাঁচ রাক্আত আদায় করিয়াছেন। তিনি [সাঃআঃ] সালাম ফিরানোর পরে দু সাজদাহ্ করে নিলেন। আর এক সূত্রে এ শব্দগুলোও আছে যে, তিনি [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন, আমিও একজন মানুষ। তোমাদের যেমন ভুল হয়, আমারও তেমন ভুল হয়। আমি ভুল করলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সলাতে সন্দেহ করলে সে যেন সঠিকটি চিন্তা-ভাবনা করে এবং সে সঠিক চিন্তার উপর সলাত পূর্ণ করে। তারপর সে যেন সালাম ফিরিয়ে দুটো সাজদাহ্ করে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪০১, মুসলিম ৫৭২। সাহু সিজদা করার নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০১৭. ইবনি সীরীন [রাহিমাহুল্লাহ] আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অপরাহ্ণের দু সলাতের [যুহর অথবা আস্রের] কোন এক সলাত আমাদেরকে নিয়ে আদায় করালেন, যার নাম আবু হুরায়রাহ্ আমাকে বলেছিলেন, কিন্তু আমি ভুলে গেছি। আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] বলেন, তিনি [সাঃআঃ] আমাদের সাথে নিয়ে দু রাক্আত সলাত আদায় করে তারপর সালাম ফিরালেন। পরপরই মাসজিদে আড়াআড়িভাবে রাখা একটি খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। মনে হচ্ছিল যে, তিনি খুব রাগতঃ অবস্থায় আছেন। তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। আঙ্গুলের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন এবং স্বীয় ডান মুখমণ্ডললকে বাম হাতের পিঠের উপর রাখলেন। যাদের তাড়া আছে তারা জলদি মাসজিদের বিভিন্ন দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। তারা বলিতে লাগলো, সলাতকে কমানো হয়েছে? যারা তখনো মাসজিদে ছিল তাদের মধ্যে আবু বাক্র ও উমারও ছিলেন। কিন্তু তারা রসূল [সাঃআঃ]-এর সাথে কথা বলিতে ভয় পাচ্ছিল। সহাবীদের মধ্যে এক ব্যক্তি লম্বা হাত বিশিষ্ট ছিল। আর সেজন্য তাকে যুল্ ইয়াদায়ন অর্থাৎ দু হাতওায়ালা বলা হত। তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন বা সলাতকে কমানো হয়েছে? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আমি ভুলিনি, সলাতও কমানো হয়নি। তারপর তিনি সহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমারাও কি তাই বলছো যা যুল্ ইয়াদায়ন বলছে? সহাবীরা আরয করিলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! এ কথা সঠিক। [এ কথা শুনে] তিনি [সাঃআঃ] সামনে অগ্রসর হয়ে যে দু রাক্আত সলাত ছুটে গিয়েছিল তা পড়ে নিলেন। তারপর সালাম ফিরালেন তারপর তাকবীর বললেন। অতঃপর পূর্বের সাজদার মতো সাজদাহ্ করিলেন বা তার চেয়েও বেশী লম্বা করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর দিলেন তারপর তাকবীর দিলেন এবং সাজদাহ্ করিলেন। তার অন্য সাজদার মতো বা তার চেয়ে বেশী লম্বা করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর দিলেন। ইতোমধ্যে লোকসকল ইবনি সীরীনকে জিজ্ঞেস করিল তারপর তিনি [সাঃআঃ] কি সালাম ফিরালেন? তিনি [সাঃআঃ] বলেন যে, আমাকে অবহিত করা হয়েছে। যে ইমরান ইবনি হুসাইন বলেছেন তারপর তিনি সালাম ফিরালেন। [বোখারী ও মুসলিম; মূল পাঠ বোখারীর। মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুল্ ইয়াদায়নের জবাবে বললেন, “না ভুলেছি আর না সলাত কমানো হয়েছে”। অন্য স্থানে বলেছেন, “যা তোমরা বলছো তার কোনটাই না। তিনি আবেদন করিলেন, “হে আল্লাহর রসূল! এর কিছু একটা তো অবশ্যই হয়েছে।”] {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৮২, মুসলিম ৫৭৩। সাহু সিজদা করার নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০১৮. আবদুল্লাহ ইবনি বুহায়নাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] সহাবীদেরকে যুহরের সলাত আদায় করালেন। তিনি প্রথম দু রাক্আত পড়ে [প্রথম বৈঠকে বসা ছাড়া তৃতীয় রাক্আতের জন্য] দাঁড়িয়ে গেলেন, বসলেন না। অন্যান্যরাও তাহাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন। এমনকি সলাত যখন শেষ করিলেন এবং লোকেরা সালাম ফিরাবার অপেক্ষা করিলেন, তিনি [সাঃআঃ] বসা অবস্থায় তাকবীর দিলেন এবং সালাম ফিরাবার পূর্বে দুটি সাজদাহ্ করিলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫৭০, বোখারী ৮২৯। সাহু সিজদা করার নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ২০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১০১৯. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] তাদের নিয়ে সলাত আদায় করিলেন। সলাতের মাঝে তাহাঁর ভুল হয়ে গেলো। তিনি দুটি সাজদাহ্ দিলেন। তারপর তিনি আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করিলেন এবং সালাম ফিরালেন। [ঈমাম তিরমিজি; তিনি বলেছেন, এ হাদিসটি হাসান গরীব] {১}
{১} শায : আত তিরমিজি ৩৯৫, ইরওয়া ৪০৩। কারণ সহীহ বর্ণনায় সাহু সাজদার পর তাশাহুদ-এর উল্লেখ নেই। এই হাদিসটির তাহকীকঃ শায
১০২০. মুগীরাহ্ বিন শুবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঈমাম দু রাক্আত সলাত আদায় করার পর [প্রথম বৈঠকে না বসে তৃতীয় রাক্আতের জন্যে] উঠে গেলে যদি সোজা দাঁড়িয়ে যাবার পূর্বে মনে হয় তাহলে সে যেন বসে যায়। আর যদি সোজা দাঁড়িয়ে যায় তবে সে বসবে না [এবং শেষ বৈঠকে] দুটি সাহ্উ সাজদাহ্ করিবে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ১০৩৬, ইবনি মাজাহ ১২০৮, ইরওয়া ৪০৮। সাহু সিজদা করার নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১০২১. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আস্রের সলাত আদায় করালেন। তিনি তিন রাক্আত পড়ে সালাম ফিরালেন তারপর ঘরে প্রবেশ করিলেন। খিরবাক্ব নামক এক লম্বা হাতওায়ালা লোক দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তাহাঁর নিকট ঘটনাটি আলোচনা করিলেন। তিনি [সাঃআঃ] রাগান্বিত অবস্থায় নিজ চাদর টানতে টানতে মানুষের কাছে পৌঁছলেন অতঃপর জিজ্ঞেস করিলেন, সে যা বলেছে তা-কি সত্য? সহাবীগন বললেন, হ্যাঁ। তিনি [সাঃআঃ] আর এক রাক্আত সলাত আদায় করিলেন তারপর সালাম ফিরালেন, তারপর দুটি সাহ্উ সাজদাহ্ দিলেন তারপর সালাম ফিরালেন। ] {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫৭৪। সাহু সিজদা করার নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০২২. আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, সলাত আদায় করিতে যে ব্যক্তি কম [রাক্আত] পড়ার সন্দেহ করে, সে যেন সলাত আদায় করে যতক্ষণ পর্যন্ত বেশী আদায়ের সন্দেহ না করে। {১}
{১} হাসান : আহমাদ ১৬৪৯, মুসনাদ আল বায্যার ৯৯৭। হাদিসের সানাদে ইসমাঈল বিন মুসলিম যদিও একজন দুর্বল রাবী কিন্তু এর শাহিদ বর্ণনা থাকায় তা হাসানের স্তরে উন্নীত হয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
Leave a Reply