সাহু সিজদার সঠিক পদ্ধতি – ফরজ ও নফল সালাতে ভুল হলে

সাহু সিজদার সঠিক পদ্ধতি – ফরজ ও নফল সালাতে ভুল হলে

সাহু সিজদার সঠিক পদ্ধতি – ফরজ ও নফল সালাতে ভুল হলে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২২, সাহু, অধ্যায়ঃ (১-৯)=৯টি

২২/১. অধ্যায়ঃ ফর্‌জ সালাতে দুরাকআতের পর দাঁড়িয়ে গেলে সিজদা‌য়ে সাহউ প্রসঙ্গে।
২২/২. অধ্যায়ঃ ভুল বশতঃ সালাত পাঁচ রাকআত আদায় করলে।
২২/৩. অধ্যায়ঃ দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকআতে সালাম ফিরিয়ে নিলে সালাতের সিজদা‌র মত বা তার চেয়ে দীর্ঘ দুটি সিজদা করা।
২২/৪. অধ্যায়ঃ সিজদা সাহউর পর তাশাহহুদ না পড়লে।
২২/৫. অধ্যায়ঃ সিজদায়ে সাহউতে তাক্‌বীর বলা।
২২/৬. অধ্যায়ঃ সালাত তিন রাকআত আদায় করা হল নাকি চার রাকআত, তা মনে করিতে না পারলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করা।
২২/৭. অধ্যায়ঃ ফর্‌জ ও নফ্‌ল সালাতে ভুল হলে।
২২/৮. অধ্যায়ঃ সালাতে থাকা অবস্থায় কেউ তার সঙ্গে কথা বললে এবং তা শুনে যদি সে হাত দিয়ে ইশারা করে।
২২/৯. অধ্যায়ঃ সালাতের মধ্যে ইঙ্গিত করা।

২২/১. অধ্যায়ঃ ফর্‌জ সালাতে দুরাকআতের পর দাঁড়িয়ে গেলে সিজদা‌য়ে সাহু প্রসঙ্গে।

১২২৪. আবদুল্লাহ‌ ইবনু বুহায়নাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সালাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুরাকআত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তাহাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তাহাঁর সালাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তাহাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে তাক্‌বীর বলে বসে বসেই দুটি সিজদা‌ করিলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন।

১২২৫. আবদুল্লাহ‌ ইবনু বুহাইনাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুহরের দুরাকআত আদায় করে দাঁড়িয়ে গেলেন। দুরাকআতের পর তিনি বসলেন না। সালাত শেষ হয়ে গেলে তিনি দুটি সিজদা করিলেন এবং অতঃপর সালাম ফিরালেন।

২২/২. অধ্যায়ঃ ভুল বশতঃ সালাত পাঁচ রাকআত আদায় করলে।

১২২৬. আবদুল্লাহ‌ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুহরের সালাত পাঁচ রাকআত আদায় করিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বলিলেন, এ প্রশ্ন কেন? (প্রশ্নকারী) বলিলেন, আপনি তো পাঁচ রাকআত সালাত আদায় করিয়াছেন। অতএব তিনি সালাম ফিরানোর পর দুটি সিজদা‌ করিলেন।

২২/৩. অধ্যায়ঃ দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকআতে সালাম ফিরিয়ে নিলে সালাতের সিজদা‌র মত বা তার চেয়ে দীর্ঘ দুটি সিজদা করা।

১২২৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে যুহর বা আসরের সালাত আদায় করিলেন এবং সালাম ফিরালেন। তখন যুল-ইয়াদাইন (রাদি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, ইয়া আল্লাহর রাসুল! সালাত কি কম হয়ে গেল? নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করিলেন, সে যা বলছে, তা কি ঠিক? তাঁরা বলিলেন, হাঁ। তখন তিনি আরও দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। পরে দুটি সিজদা‌ করিলেন। সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে দেখেছি, তিনি মাগরিবের দুরাকআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন এবং কথা বলিলেন। পরে অবশিষ্ট সালাত আদায় করে দুটি সিজদা করিলেন এবং বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) এ রকম করিয়াছেন।

২২/৪. অধ্যায়ঃ সিজদা সাহুর পর তাশাহহুদ না পড়লে।

আনাস (রাদি.) ও হাসান (বাসরী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সালাম ফিরিয়েছেন। কিন্তু তাশাহ্হুদ পড়েননি। কাতাদা্ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, তাশাহহুদ পড়বে না।

১২২৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুরাকআত আদায় করে সালাত শেষ করিলেন। যুল-ইয়াদাইন (রাদি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সালাত কি কম করে দেয়া হয়েছে, না কি আপনি ভুলে গেছেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, যুল-ইয়াদাইন কি সত্য বলেছে? মুসল্লীগণ বলিলেন, হাঁ। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে আরও দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং তাক্‌বীর বলিলেন, পরে সিজদা করিলেন, স্বাভাবিক সিজদা মতো বা তার চেয়ে দীর্ঘ। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন।

(৪৮২) (আ.প্র. ১১৪৮, ই.ফা. ১১৫৫). ১২২৮/১. সালামা ইবনু আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ (ইবনু সীরীন) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, সিজদা সাহউর পর তাশাহুদ আছে কি? তিনি বলিলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.)-এর হাদীসে তা নেই।. (আ.প্র. ১১৪৯, ই.ফা. ১১৫৬)

২২/৫. অধ্যায়ঃ সিজদায়ে সাহুতে তাক্‌বীর বলা।

১২২৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বিকালের কোন এক সালাত দুরাকআত আদায় করে সালাম ফিরালেন। মুহাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার প্রবল ধারণা, তা ছিল আসরের সালাত। অতপর মসজিদের একটি কাষ্ঠ খণ্ডের নিকট গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তার উপর হাত রাখলেন। মুসল্লীগণের ভিতরে সামনের দিকে আবু বকর (রাদি.) ও উমর (রাদি.) ও ছিলেন। তাঁরা উভয়ে তাহাঁর সাথে কথা বলিতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাড়াহুড়াকারী মুসল্লীগণ বেরিয়ে পড়লেন। তাঁরা বলাবলি করেত লাগলেন, সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে? কিন্তু এক ব্যক্তি, যাঁকে নাবী (সাঃআঃ) যূল-ইয়াদাইন বলে ডাকতেন, জিজ্ঞেস করিল আপনি কি ভুলে গেছেন, না কি সালাত কমিয়ে দেয়া হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি ভুলিনি আর সালাতও কম করা হয়নি। তখন তাকে বলা হল যে, আপনি ভুলে গেছেন। তখন তিনি দুরাকআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। অতঃপর তাক্‌বীর বলে সিজদা করিলেন, স্বাভাবিক সিজদার ন্যায় বা তার চেয়ে দীর্ঘ। অতঃপর মাথা উঠিয়ে আবার তাক্‌বীর বলে মাথা রাখলেন অর্থাৎ তাক্‌বীর বলে সিজদায় গিয়ে স্বাভাবিক সিজদার মত অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সিজদা করিলেন। অতঃপর মাথা উঠিয়ে তাক্‌বীর বলিলেন।

১২৩০. আবদুল্লাহ‌ ইবনু বুহাইনাহ আসাদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যিনি বানূ আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তাহাঁর হইতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুহরের সালাতে (দুরাকআত আদায় করার পর) না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। সালাত পূর্ণ করার পর সালাম ফিরাবার পূর্বে তিনি বসা অবস্থায় ভুলে যাওয়া বৈঠকের স্থলে দুটি সিজদা সম্পূর্ণ করিলেন, প্রতি সিজদায় তাক্‌বীর বলিলেন। মুসল্লীগণও তাহাঁর সঙ্গে এ দুটি সিজদা করিল।

ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তাক্‌বীরের কথা বর্ণনায় ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।

২২/৬. অধ্যায়ঃ সালাত তিন রাকআত আদায় করা হল নাকি চার রাকআত, তা মনে করিতে না পারলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করা।

১২৩১আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে আযান শুনতে না পায় আর তার পশ্চাদ-বায়ু সশব্দে নির্গত হইতে থাকে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে। আবার সালাতের জন্য ইক্বামাত দেওয়া হলে সে পিঠ ফিরিয়ে পালায়। ইক্বামাত শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। এমনকি সে সালাত আদায়রত ব্যক্তির মনে ওয়াস্‌ওয়াসা সৃষ্টি করে এবং বলিতে থাকে, অমুক অমুক বিষয় স্মরন কর, যা তার স্মরণে ছিলনা। এভাবে সে ব্যক্তি কত রাকআত সালাত আদায় করেছে তা স্মরন করিতে পারে না। তাই তোমাদের কেউ তিন রাকআত বা চার রাকআত সালাত আদায় করেছে, তা মনে রাখতে না পারলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করিবে।

২২/৭. অধ্যায়ঃ ফর্‌জ ও নফ্‌ল সালাতে ভুল হলে।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বিতরের পর দুটি সিজদা (সাহউ) করিয়াছেন।

১২৩২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে শয়তান এসে তাকে সন্দেহে ফেলে, এমনকি সে বুঝতে পারে না যে, কত রাকআত সালাত আদায় করেছে। তোমাদের কারো এ অবস্থা হলে সে যেন বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করে।

২২/৮. অধ্যায়ঃ সালাতে থাকা অবস্থায় কেউ তার সঙ্গে কথা বললে এবং তা শুনে যদি সে হাত দিয়ে ইশারা করে।

১২৩৩. কুরায়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু আব্বাস, মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ এবং আবদুর রহমান ইবনু আযহার (রাদি.) তাঁকে আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট পাঠালেন এবং বলে দিলেন, তাঁকে আমাদের সকলের তরফ হইতে সালাম পৌঁছিয়ে আসরের পরের দুরাকআত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিবে। তাঁকে একথাও বলবে যে, আমরা খবর পেয়েছি যে, আপনি সে দুরাকআত আদায় করেন, অথচ আমাদের নিকট পৌঁছেছে যে, নাবী (সাঃআঃ) সে দুরাকআত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) সংবাদে আরও বলিলেন যে, আমি উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-এর সাথে এ সালাতের কারণে লোকদের মারধোর করতাম। কুরায়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে তাঁদের পয়গাম পৌঁছিয়ে দিলাম। তিনি বলিলেন, উম্মু সালামা্‌ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস কর। [কুরায়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি সেখান হইতে বের হয়ে তাঁদের নিকট গেলাম এবং তাঁদেরকে আয়েশা (রাদি.)-এর কথা জানালাম। তখন তাঁরা আমাকে আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট যে বিষয় নিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তা নিয়ে পুনরায় উম্মু সালামা (রাদি.)-এর নিকট পাঠালেন। উম্মু সালামা (রাদি.) বলিলেন, আমিও নাবী করিম (সাঃআঃ) -কে তা নিষেধ করিতে শুনিয়াছি। অথচ অতঃপর তাঁকে আসরের সালাতের পর তা আদায় করিতেও দেখেছি। একদা তিনি আসরের সালাতের পর আমার ঘরে আসলেন। তখন আমার নিকট বনূ হারাম গোত্রের আনসারী কয়েকজন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। আমি বাঁদীকে এ বলে তাহাঁর নিকট পাঠালাম যে, তাহাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলবে, উম্মে সালামা (রাদি.) আপনার নিকট জানতে চেয়েছেন, আপনাকে (আসরের পর সালাতের) দুরাকআত নিষেধ করিতে শুনিয়াছি; অথচ দেখছি, আপনি তা আদায় করছেন? যদি তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন, তাহলে পিছনে সরে থাকবে, বাঁদী তা-ই করিল। তিনি ইঙ্গিত করিলেন, সে পিছনে সরে থাকল। সালাত শেষ করে তিনি বলিলেন, হে আবু উমায়্যার কন্যা! আসরের পরের দুরাকআত সালাত সম্পর্কে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছ। আবদুল কায়স গোত্রের কিছু লোক আমার নিকট এসেছিল। তাদের কারণে যুহরের পরের দুরাকআত আদায় করিতে না পেরে (তাদেরকে নিয়ে) ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এ দুরাকআত সে দুরাকআত। [১]

[১] ঘটনাটি একবারের হলেও নাবী (সাঃআঃ) -এর বৈশিষ্ট্যের কারনে তা নিয়মিত সালাতে পরিণত হয়। কারণ, নাবী (সাঃআঃ) কোন আমাল একবার শুরু করলে তা নিয়মিত করিতেন।

২২/৯. অধ্যায়ঃ সালাতের মধ্যে ইঙ্গিত করা।

কুরাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উম্মু সালামা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ সম্পর্কে বর্ণনা করিয়াছেন।

১২৩৪. সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, বানূ আমর ইবনু আওফ-এ কিছু ঘটেছে। তাদের মধ্যে আপোষ করে দেয়ার উদ্দেশে তিনি কয়েকজন সাহাবীসহ বেরিয়ে গেলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সেখানে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে সালাতের সময় হয়ে গেল। বিলাল (রাদি.) আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট এসে বলিলেন, হে আবু বক্‌র! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেছে, আপনি কি সালাতে লোকদের ইমামাত করিতে প্রস্তুত আছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ, যদি তুমি চাও। তখন বিলাল (রাদি.) ইক্বামাত বলিলেন এবং আবু বকর (রাদি.) সামনে এগিয়ে গিয়ে লোকদের জন্য তাক্‌বীর বলিলেন। এদিকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আসলেন এবং কাতারের ভিতর দিয়ে হেঁটে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তখন হাততালি দিতে লাগলেন। আবু বকর (রাদি.)-এর অভ্যাস ছিল যে, সালাতে এদিক সেদিক তাকাতেন না। মুসল্লীগণ যখন অধিক পরিমানে হাতাতালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি সেদিকে তাকালেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে দেখিতে পেলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে ইঙ্গিত করে সালাত আদায় করিতে থাকার নির্দেশ দিলেন। আবু বকর (রাদি.) দুহাত তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করিলেন এবং পিছনের দিকে সরে গিয়ে কাতারে দাঁড়ালেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সামনে এগিয়ে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। সালাত শেষ করে মুসল্লীগণের প্রতি লক্ষ্য করে বলিলেন, হে লোক সকল! তোমাদের কি হয়েছে, সালাতে কোন ব্যাপার ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে থাক কেন? হাততালি তো মেয়েদের জন্য। কারো সালাতের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে সে যেন সুবহানাল্লাহ বলে। কারণ, কেউ অন্যকে সুবহানাল্লাহ বলিতে শুনলে অবশ্যই সেদিকে লক্ষ্য করিবে। অতঃপর তিনি বলিলেন, হে আবু বক্‌র! তোমাকে আমি ইঙ্গিত করা সত্ত্বেও কিসে তোমাকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিতে বাধা দিল? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, কুহাফার ছেলের জন্য এ সমীচীন নয় যে, সে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সম্মুখে দণ্ডায়মান হয়ে সালাত আদায় করিবে।

১২৩৫. আসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন, আর লোকেরাও সালাতে দাঁড়ানো ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের অবস্থা কী? তখন তিনি তাহাঁর মাথা দ্বারা আকাশের দিকে ইঙ্গিত করিলেন। আমি বললাম, এটা কি নিদর্শন? তিনি আবার তাহাঁর মাথার ইঙ্গিতে বলিলেন, হাঁ।

১২৩৬. নাবী (সাঃআঃ) -এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর অসুস্থ অবস্থায় তাহাঁর ঘরে বসে সালাত আদায় করছিলেন। একদল সাহাবী তাহাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিতে লাগলেন। তিনি তাঁদের প্রতি ইঙ্গিত করিলেন, বসে যাও। সালাত শেষ করে তিনি বলিলেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্য। কাজেই তিনি রুকূ করলে তোমরা রুকূ করিবে; আর তিনি মাথা উঠালে তোমরাও মাথা উঠাবে।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply