সাহু সাজদাহ দেয়া, তিলওয়াতের সেজদা ও সালাম
সাহু সাজদাহ দেয়া, তিলওয়াতের সেজদা ও সালাম >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১৯. অধ্যায়ঃ সলাতে ভুল-ত্রুটি হওয়া এবং এর জন্য সাহু সাজদাহ্ দেয়া
২০. অধ্যায়ঃ কুরআন তিলওয়াতের সাজদাহ্
২১. অধ্যায়ঃ সলাতে উপবিষ্ট হওয়া ও উরুদ্বয়ের উপর দুহাত স্থাপন করার নিয়ম পদ্ধতি
২২. অধ্যায়ঃ নামাজ সমাপনীর সালাম ও তার পদ্ধতি
১৯. অধ্যায়ঃ নামাজে ভুল-ত্রুটি হওয়া এবং এর জন্য সাহু সাজদাহ দেয়া
১১৫২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কেউ যখন নামাজে দাঁড়াও তখন শাইত্বন তার কাছে এসে তাকে সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দেয়। এমনকি সে কয় রাকাআত নামাজ আদায় করিল তাও স্মরণ করিতে পারে না। তোমরা কেউ এরুপ অবস্থা হইতে দেখলে যেন বসে বসেই দুটি [অতিরিক্ত] সাজদাহ্ করে নেয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ১১৫৪]
১১৫৩. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ১১৫৫]
১১৫৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজের আযান শুরু হলে শাইত্বন পিঠ ফিরে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে এবং এত দূরে চলে যায় যে, আর আযান শুনতে পায় না। অতঃপর আযান শেষ হলে সে আবার ফিরে আসে। কিন্তু যে সময় তাকবীর দেয়া হয় তখন পুনরায় পিঠ ফিরে পালায়। কিন্তু তাকবীর শেষ হলে আবার ফিরে আসে এবং মানুষের [মুসল্লীর] মনে সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে বলে অমুক কথা এবং অমুক কথা স্মরণ কর যেসব কথা কখনো তার স্মরণ করার নয়। অবশেষে সে [মুসল্লী] কত রাকাআত আদায় করিল তা স্মরণ করিতে পারে না। এরূপ অবস্থায় তোমরা যখন কেউ স্মরণ করিতে পারবে না কত রাকাআত আদায় করেছ তখন বসে বসেই সর্বশেষ দুটি সাজদাহ্ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১৫৬]
১১৫৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে সময় নামাজের তাকবীর বলা হয় সে সময় শাইত্বন বায়ু নিঃসরণ করিতে করিতে দৌড়ে পালায়। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন। তবে এতে এতটুকু কথা অধিক বর্ণনা করিলেন যে, সে [শাইত্বন] তাকে উৎসাহিত করে, আশান্বিত করে এবং যা সে কখনো স্মরণ করত না তা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ১১৫৭]
১১৫৬. আবদুল্লাহ ইবনি বুহায়নাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিয়ে দু রাকাআত নামাজ আদায় করিলেন। [দ্বিতীয় রাকাআতে] তিনি না বসে উঠে দাঁড়ালে লোকজন সবাই তার সাথে উঠে দাঁড়াল। তিনি নামাজ শেষ করলে {অর্থাৎ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ প্রায় শেষ করলে} আমরা তার সালাম ফিরানোর অপেক্ষায় ছিলাম। এ সময় তিনি তাকবীর বলিলেন এবং সালাম ফিরানোর পূর্বেই বসে দুটি সাজদাহ্ করিলেন। এরপর তিনি সালাম ফিরালেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ১১৫৮]
১১৫৭. আবদুল্লাহ ইবনি বুহায়নাহ্ আল আসদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের নামাজে [দু রাকাআতের পর] না বসেই দাঁড়িয়ে গেলেন নামাজ শেষ করে, অর্থাৎ- নামাজের শেষ পর্যায়ে তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে ভুলে যাওয়া বৈঠকের পরিবর্তে বসে বসেই দুটি সাজদাহ্ করিলেন এবং প্রতিটি সাজদাতেই তাকবীর বলিলেন। লোকজন সবাই তার সাথে সাথে সাজাদাহ্ দুটি করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫০, ইসলামিক সেন্টার- ১১৫৯]
১১৫৮. আবদুল্লাহ ইবনি মালিক ইবনি বুহায়নাহ্ আল আযদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন নামাজরত অবস্থায় যে দুরাকাআত আদায় করে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বসার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে পড়লেন। তিনি নামাজ আদায় করিতে লাগলেন। অবশেষে নামাজের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজদাহ্ করিলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫১, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬০]
১১৫৯. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন রাকাআত আদায় করা হলো না চার রাকাআত আদায় করা হলো –নামাজের মধ্যে তোমাদের কারো এরূপ সন্দেহ হলে সে যে কয় রাকাআত আদায় করেছে বলে নিশ্চিত হইবে [তিন রাকাআত] সে কয় রাকাআতকে ভিত্তি ধরে অবশিষ্ট করণীয় করিবে। এরপর সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজদাহ্ করিবে। [এখন] সে যদি পাঁচ রাকাআত আদায় করে থাকে তাহলে এ দু সাজদাহ্ দ্বারা তার নামাজের জোড়া পূর্ণ হয়ে যাবে। আর যদি তার নামাজ চার রাকাআত হয়ে থাকে তাহলে [এই] সাজদাহ্ দুটি শাইত্বনের মুখে মাটি নিক্ষেপের শামিল হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫২, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬১]
১১৬০. যায়দ ইবনি আসলাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে উপরোক্ত অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। অতঃপর সুলাইমান ইবনি বিলাল-এর মতই বর্ণনা করিয়াছেন যে, সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজদাহ্ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬২]
১১৬১. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিলেন। বর্ণনাকারী ইবরাহীমের বর্ণনা মতে, এ নামাজে তিনি কিছুই কম বা বেশি করে ফেললেন। সালাম ফিরানোর পর তাঁকে [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে] জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! নামাজের ব্যাপারে কি নতুন কোন হুকুম দেয়া হয়েছে? এ কথা শুনে তিনি [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, নতুন হুকুম আবার কেমন? তখন সবাই বললঃ আপনি নামাজে এরূপ করিয়াছেন। এ কথা শুনে তিনি পা দুখানা ভাঁজ করে ক্বিবলামুখী হয়ে বসলেন এবং দুটি সিজদা করে তারপর সালাম ফিরালেন। এরপর আমাদের দিকে ঘুরে বললেনঃ নামাজের ব্যাপারে কোন নতুন হুকুম আসলে আমি তোমাদেরকে জানাতাম। [এটা তেমনি কিছু নয়] বরং আমি তো মানুষ বৈ কিছুই না। তোমাদের যেমন ভুল হয় আমারও তেমন ভুল হয়। সুতরাং আমি যদি কোন কিছু ভুলে যাই তাহলে তোমরা আমাকে স্মরণ করে দিও। আর নামাজের মধ্যে তোমাদের কারো কোন সন্দেহ হলে চিন্তা-ভাবনার ভিত্তিতে যেটি সঠিক বলে মনে হইবে সেটিই করিবে এবং এর উপর ভিত্তি করে নামাজ শেষ করিবে। অতঃপর দুটি সাজদাহ্ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬৩]
১১৬২. মানসুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
তবে ইবনি বিশর-এর বর্ণনায় [আরবি] এবং ওয়াকী এর বর্ণনায় [আরবি] কথাটি উল্লেখিত আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৫, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬৪]
১১৬৩. মানসুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে মানসূর বলেছেন, সঠিক হওয়ার ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা সঠিক ধারণাটি গ্রহন করিতে হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬৫]
১১৬৪. মানসুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, চিন্তা-ভাবনা করে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করিতে হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬৬]
১১৬৫. মানসুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে বলেছেন, চিন্তা-ভাবনা করে যেটি সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করিবে সেটিই গ্রহন করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬৭]
১১৬৬. মানসুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, চিন্তা-ভাবনা করে যেটি সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করিবে সেটিই গ্রহন করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬৮]
১১৬৭. মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তাদের সবার বর্ণিত সানাদ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেনঃ চিন্তা-ভাবনা করে তার ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১৬৯]
১১৬৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন নবী [সাঃআঃ] যুহরের নামাজ পাঁচ রাকআত আদায় করিলেন। তিনি যখন সালাম ফিরালেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, নামাজের সংখ্যা কি বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ এ আবার কেমন কথা? তখন সবাই বলিল, আপনি তো নামাজ পাঁচ রাকআত আদায় করিলেন। এ কথা শুনে তিনি [সাঃআঃ] দুটি সাজদাহ্ করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭০]
১১৬৯. আলক্বামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [আলক্বামাহ্] একদিন তাদের সাথে [যুহরের] পাঁচ রাকআত নামাজ আদায় করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭১]
১১৭০. ইব্রাহীম ইবনি সুওয়াইদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সালাম ফিরানোর পর লোকজন তাকে বলিল, হে আবু শিব্ল [আলক্বামার উপনাম] ! আপনি নামাজ পাঁচ রাকআত আদায় করিয়াছেন। তিনি বললেনঃ আমি কখনো এরূপ করিনি। কিন্তু লোকজন সবাই আবারো বলিল, হ্যাঁ, আপনি এরূপ করিয়াছেন। ইব্রাহীম ইবনি সুওয়াইদ বলেছেন, আমি তখন বালক ছিলাম এবং সবার থেকে দূরে এক কোণে ছিলাম আমিও বললাম হ্যাঁ, আপনি নামাজ পাঁচ রাকআত আদায় করিয়াছেন। তিনি তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ ওরে কানা, তুমিও তাই বলছ! আমি বললামঃ হ্যাঁ। ইব্রাহীম ইবনি সুওয়াইদ বলেন, তখন তিনি ঘুরে দুটি সাজদাহ্ করিলেন এবং সালাম ফিরানোর পরে বলিলেন, আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ বর্ণনা করিয়াছেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক নামাজ আদায় করিতে পাঁচ রাকআত আদায় করিলেন। নামাজ শেষে তিনি ঘুরলে লোকজন পরস্পর কানাঘুষা করিতে থাকল। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, ব্যাপার কি? সবাই বলিল, হে আল্লাহর রসূল! নামাজের রাকআত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ না, তখন সবাই বলিল, আপনি তো নামাজ পাঁচ রাকআত আদায় করিয়াছেন। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুরলেন এবং দুটি সাজদাহ্ করে তারপর সালাম ফিরালেন। অতঃপর বললেনঃ আমি তোমাদের মতোই মানুষ। আমিও ভুল করি যেমন তোমরা ভুল করো।
ইবনি নুমায়র তার বর্ণিত হাদীসে এতটুকু কথা অধিক বলেছেন যে, [নামাজের মধ্যে] তোমাদের কারো ভুল হয়ে গেলে সে যেন দুটি সজদাহ্ করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭১]
১১৭১. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক নামাজ আদায় করিতে পাঁচ রাকআত আদায় করিলেন। আমরা তাঁকে বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! নামাজ [এর রাকআত সংখ্যা] কি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। [এ কথা শুনে] তিনি বললেনঃ এ আবার কি কথা? তখন সবাই বললঃ আপনি তো নামাজ পাঁচ রাকআত আদায় করিয়াছেন, এ কথা শুনে তিনি বলিলেন আমি তো তোমাদের মতই মানুষ। আমি স্মরণ রাখি যেমন তোমরা স্মরণ রাখো। আবার আমি ভুলে যাই যেমন তোমরা ভুলে যাও। এরপর তিনি দুটি সাহু সাজদাহ দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৬০, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭২]
১১৭২. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিলেন। কিন্তু তিনি নামাজে কিছু কম বা কিছু বেশী করে ফেললেন। হাদীসের বর্ণনাকারী ইব্রাহীম বলেছেনঃ [তিনি কম করিলেন না বেশী করিলেন] এ সন্দেহটা আমার নিজের। বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল! নামাজে কি কিছু বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে? এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মতো মানুষ বৈ আর কিছুই নই। আমারও তোমাদের মতো ভুল হয়। সুতরাং নামাজে তোমাদের কেউ কিছু ভুলে গেলে সে যেন বসেই দুটি সাজদাহ্ করে নেয়। এ কথার পর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুরলেন এবং দুটি সাজদাহ্ করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৬১, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭৩]
১১৭৩. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] নামাজের সাহু সাজদার দুটি সাজদাহ্ সালাম ফিরিয়ে কথা বলার পর করেছিলেন |{১}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৬২, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭৪]
{১} ঈমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ এ হাদীসে নামাজে কথা-বার্তা নিষিদ্ধ হওয়ায় পূর্বের, অতএব এ ব্যাপারে অধিক বিশুদ্ধ কথা হল, সালাম ফিরানোর পর কথা-বার্তা ঘটলে আর এদিকে ভুলক্রমে নামাজে কিছু অবশিষ্ট থেকে থাকলে পূর্ব সম্পাদিত নামাজটুকু বাতিল হয়ে যাবে এবং পুনরায় সম্পূর্ণ নামাজ আদায় করিতে হইবে। [শারহে মুসলিম- ১ম খন্ড ২১৩ পৃষ্ঠা]
১১৭৪. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর পিছনে নামাজ আদায় করলাম। [এ নামাজে] তিনি কিছু বেশী বা কম করিলেন। [হাদীসের বর্ণনাকারী] ইব্রাহীম বলেছেন, আল্লাহর শপথ, এ সন্দেহ [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজে বেশী করিলেন না, কম করিলেন] আমার নিজের। তিনি [ইব্রাহীম] বলেছেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] ! নামাজের ব্যাপারে কি নতুন কোন হুকুম অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেনঃ না। [নতুন কোন হুকুম অবতীর্ণ হয়নি]। তখন [নামাজে] তিনি যা করিয়াছেন আমরা তাঁকে তা বললাম। তিনি বললেনঃ কোন ব্যক্তি যদি নামাজে কোন কিছু বেশী বা কম করে ফেলে তাহলে [সাজদাহ্-ই সাহুর] দুটি সাজদাহ্ করিবে। বর্ণনাকারী ইব্রাহীম বলেনঃ এর [এ কথা বলার] পর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটি সাজদাহ্ করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭৫]
১১৭৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সাথে দিবাভাগের দু ওয়াক্ত নামাজের কোন এক ওয়াক্ত নামাজে অর্থাৎ- যুহর কিংবা আস্রের নামাজ আদায় করিলেন। কিন্তু দু রাকআত আদায় করার পরই সালাম ফিরালেন। এরপর তিনি রাগান্বিত মনে মাসজিদের ক্বিবলার দিকে স্থাপিত এক বৃক্ষ শাখার উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। এ সময় সবার মাঝে আবু বকর ও উমরও ছিলেন। কিন্তু তারা উভয়েই [এ পরিস্থিতিতে] কথা বলিতে সাহস পেল না। আর যাদের তাড়াতাড়ি করে যাওয়ার ছিল তারা এই বলে দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল যে, নামাজ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অতঃপর যুল ইয়াদায়ন উপনামে পরিচিত জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! নামাজ কি কম করে দেয়া হয়েছে- না আপনি ভুলে গিয়েছেন? এ কথা শুনে নবী [সাঃআঃ] ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করিলেন যুল ইয়াদায়ন যা বলছে তা কি ঠিক? সবাই জবাব দিলো, হ্যাঁ সে যা বলেছে সত্য বলেছে। আপনি তো নামাজ দু রাকআত মাত্র আদায় করিয়াছেন। তখন তিনি [সাঃআঃ] আরো দু রাকআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরালেন। এরপর তাকবীর বলে সাজদাহ্ করিলেন এবং তাকবীর বলে মাথা উঠালেন।
এতটুকু বর্ণনা করার পর মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন বলিলেন, ইমরান ইবনি হুসায়ন সম্পর্কে আমাকে বলা হয়েছে যে তিনি বলেছেন, এরপর নবী [সাঃআঃ] সালাম ফিরালেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭৬]
১১৭৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সাথে দিবাভাগের দু ওয়াক্ত নামাজের এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করিলেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি সুফ্ইয়ান বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু সম্বলিত হাদীস বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭৭]
১১৭৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে আস্রের নামাজ আদায় করালেন। কিন্তু দুরাকআত আদায় করার পর সালাম ফিরালেন। যুল ইয়াদায়ন দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] ! নামাজ কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে না আপনি ভুল করিয়াছেন? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এসব কিছুই হয়নি [নামাজ কমিয়ে দেয়া বা আমার ভূল করা] কিছুই হয়নি। এ কথা শুনে যুল ইয়াদায়ন বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকদের দিকে ঘুরে বললেনঃ যুল ইয়াদায়ন-এর কথা কি ঠিক? সবাই বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজের অবশিষ্ঠ অংশ পূর্ন করিলেন এবং সালাম ফিরানোর পর বসে বসেই দুটি সাজদাহ্ [সাহু সাজদাহ] করিলেন।
[ই.ফা.১১৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭৮]
১১৭৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের নামাজ দুরাকআত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তখন বানী সুলায়ম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তাহাঁর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! নামাজ সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে না আপনি ভূল করিলেন? এতটুকু বর্ণনা করার পর আবু সালামাহ্ হাদীসটি পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করিলেন।
[ই.ফা.১১৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১৭৯]
১১৭৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে যুহরের নামাজ আদায় করেছিলাম। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুরাকআত আদায় করেই সালাম ফিরালে বানী সুলায়ম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। এরপর তিনি [শায়বান] হাদীসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করিলেন।
[ই.ফা.১১৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮০]
১১৮০. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন আস্রের নামাজ আদায় করিতে তিন রাকআত আদায় করার পর সালাম ফিরালেন। এরপর তিনি তার বাড়ীর মধ্যে চলে গেলেন। তখন দীর্ঘ হাত বিশিষ্ট খিরবাক্ব নামক জনৈক ব্যক্তি তাহাঁর কাছে গিয়ে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! এরপর সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা করেছিলেন তা বর্ণনা করিল। এ কথা শুনে তিনি [সাঃআঃ] রাগান্বিত মনে চাদর হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে আসলেন এবং লোকদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ লোকটি কি ঠিক কথা বলছে? সবাই জবাব দিলো, হ্যাঁ সে ঠিক বলেছে। তখন তিনি আরো এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং সালাম ফিরালেন। এরপর দুটি সাহু সাজদাহ দিয়ে আবার সালাম ফিরালেন।
[ই.ফা.১১৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮১]
১১৮১. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন আস্রের নামাজ আদায় করিতে তিন রাকআত আদায় করে সালাম ফিরালেন এবং নিজ কামরার মধ্যে প্রবেশ করিলেন। তখন লম্বা দুটি হাত বিশিষ্ট এক লোক দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! নামাজ কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে? এ কথা শুনে তিনি [সাঃআঃ] রাগান্বিত হয়ে বেরিয়ে আসলেন, অতঃপর যে এক রাকআত নামাজ তিনি ছেড়েছিলেন তা আদায় করে সালাম ফিরালেন। এরপর সাহুর দুটি সাজদাহ্ করিলেন এবং আবার সালাম ফিরালেন।
[ই.ফা.১১৭০, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮২]
২০. অধ্যায়ঃ কুরআন তিলওয়াতের সেজদা
১১৮২. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] কুরআন তিলাওয়াত করিতেন। এ সময় তিনি এমন সূরাহ্ও তিলাওয়াত করিতেন যাতে সাজদার আয়াত আছে। তখন তিনি সেজদা করিতেন, আমরাও তার সাথে সেজদা করতাম। এমনকি [এ সময়] আমাদের মধ্যে তার কপাল স্থাপনের [সেজদা করার] জায়গাটুকু পর্যন্ত পেত না।
[ই.ফা.১১৭১, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮৩]
১১৮৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করলে যখন তিনি সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করিতেন তখন আমাদের সাথে নিয়ে সেজদা করিতেন। এ সময় খুব ভিড় বা জটলা হত। এমনকি আমাদের অনেকেই [কপাল স্থাপন করে] সেজদা করার মতো জায়গাটুকু পর্যন্ত পেত না। আর এ অবস্থার সৃষ্টি হত নামাজের বাইরে।
[ই.ফা.১১৭২, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮৪]
১১৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এক সময় সূরাহ ওয়ান নাজ্মি পাঠ করে সেজদা [তিলাওয়াতের সজদাহ্] করিলেন। তাহাঁর সঙ্গে অন্য সকলেও সেজদা করিল। শুধু এক বৃদ্ধ ব্যক্তি [সেজদা না করে] এক মুঠো কঙ্কর উঠিয়ে বললঃ আমার জন্য এটাই যথেষ্ট।
হাদীসটির বর্ণনাকারী সহাবী আবদুল্লাহ [ইবনি মাসঊদ] বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমি ঐ বৃদ্ধ লোকটিরে পরে কাফির অবস্থায় নিহত হইতে দেখেছি।
[ই.ফা.১১৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮৫]
১১৮৫. আত্বা ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি একবার যায়দ ইবনি সাবিতকে নামাজে ইমামের পিছনে কিরাআত তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন জবাবে যায়দ ইবনি সাবিত বলেছিলেনঃ নামাজে ইমামের পিছনে কিরাআতের প্রয়োজন নেই। তিনি এ কথাও বলেছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সামনে সূরাহ “ওয়ান্ নাজ্মী ইযা-হাওয়া-” তিলাওয়াত করিলেন। কিন্তু [সূরাটি শুনার পরও] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেজদা করিলেন না।
[ই.ফা.১১৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮৬]
১১৮৬. আবু সালামাহ্ ইবনি আবদূর রহ্মান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেছেন] আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] তাদের সামনে “ইযাস্ সামা-উন্ শাক্বক্বাত্” সূরাটি তিলাওয়াত করিলেন এবং সেজদা করিলেন। সেজদা শেষে তিনি তাদেরকে বলিলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ সূরাটি তিলাওয়াত করে সেজদা করেছিলেন।
[ই.ফা.১১৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮৭]
১১৮৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসটির অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা.১১৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮৭]
১১৮৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা “ইযাস্ সামা-উন্ শাক্বক্বাত্” এবং “ইক্বরা বিস্মি রাব্বিকা” এ দুটি সূরাতে নবী [সাঃআঃ] -এর সাথে সেজদা করেছি { অর্থাৎ- এ দুটি সূরাহ তিলাওয়াতকালে নবী [সাঃআঃ] সেজদা করিয়াছেন। আমারাও তাহাঁর সাথে সেজদা করেছি }।
[ই.ফা.১১৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১৮৯]
১১৮৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূরাহ্ “ইযাস্ সামা-উন্ শাক্কাত্” এবং “ইক্বরা বিস্মি রাব্বিকা” পাঠকালে সেজদা করিয়াছেন।
[ই.ফা.১১৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯০]
১১৯০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা.১১৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯১]
১১৯১. আবু রাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] -এর পিছনে ইশার নামাজ আদায় করলাম। [এ নামাজে] তিনি সুরা ইযাস্ সামা-উন্ শাক্ক্বাত” পাঠ করে সেজদা [তিলাওয়াতের সিজদাহ] করিলেন। [নামাজ শেষে] আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিসের জন্য এ সেজদা? তিনি বললেনঃ আবুল ক্বাসিম [সাঃআঃ] -এর পিছনে নামাজ আদায় করাকালে এ সূরায় আমি সেজদা করেছি। সুতরাং তাহাঁর সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত [আমৃত্যু] আমি এ সুরা তিলাওয়াত করে সেজদা করিতে থাকব। অবশ্য হাদীস বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল আলা তারতম্য সহকারে কিছুটা বর্ণনা করে বলেছেনঃ আমি এ সেজদা পরিত্যাগ করব না।
[ই.ফা.১১৮০, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯২]
১১৯২. ইবনি আখযার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এবং সকলে সুলায়মান আত্ তায়মী হইতে বর্ণীতঃ
তবে কেউই আবুল ক্বাসিম [সাঃআঃ] -এর পিছনে কথাটি উল্লেখ করেননি।
[ই.ফা.১১৮১, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯৩]
১১৯৩. আবু রাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] -কে সুরা “ইযাস্ সামা-উন শাক্বক্বাত” পড়ে সেজদা করিতে দেখেছি। তাই আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এ সুরা তিলাওয়াত করে সেজদা করেন? জবাবে তিনি বলিলেন, আমি আমার প্রিয়তম বন্ধু [সাঃআঃ] -কে এ সূরাহ্ তিলাওয়াত সেজদা করিতে দেখেছি। সুতরাং তাহাঁর [ [সাঃআঃ] -এর] সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত আমি এ সুরা তিলাওয়াত করে সেজদা করিতে থাকব।
হাদীসটি বর্ণনাকারী শুবাহ্ বলেনঃ আমি আত্বা ইবনি আবু মায়মূনাকে জিজ্ঞেস করলাম “আমার প্রিয়তম বন্ধু” বলিতে কি আবু হুরায়রাহ্ নবী [সাঃআঃ] -কে বুঝিয়েছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।
[ই.ফা.১১৮২, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯৪]
২১. অধ্যায়ঃ নামাজে উপবিষ্ট হওয়া ও উরুদ্বয়ের উপর দুহাত স্থাপন করার নিয়ম পদ্ধতি
১১৯৪. আবদুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নামাজ আদায়ের সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন বৈঠক করিতেন তখন বাঁ পাটি [ডান পায়ের] উরু ও নলার মধ্যে স্থাপন করিতেন, ডান পাটি বিছিয়ে দিতেন, আর বাঁ হাতটি বাঁ হাঁটুর উপর এবং ডান হাতটি ডান উরুর উপর স্থাপন করিতেন। আর আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করিতেন।
[ই.ফা.১১৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯৫]
১১৯৫. আবদুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন দুআ করার জন্য বসতেন তখন ডান হাতটি ডান উরুর উপর এবং বাঁ হাতটি বাঁ উরুর উপর রাখতেন। আর শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করিতেন এবং বাঁ হাতের তালু [বাঁ] হাঁটুর উপর রাখতেন।
[ই.ফা.১১৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯৬]
১১৯৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] নামাজ আদায়ের সময় যখন বসতেন [বৈঠক করিতেন] তখন দুহাত দু হাঁটুর উপর রাখতেন। আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববর্তী [শাহাদাত] আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করিতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন।
[ই.ফা.১১৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯৭]
১১৯৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজের মধ্যে তাশাহ্হুদ পড়তে যখন বসতেন তখন বাঁ হাতটি বাঁ হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। আর [হাতের তালু ও আঙ্গুলসমূহ গুটিয়ে আরবী] তিপ্পান্ন সংখ্যার মতো করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিতেন। {১}
[ই,ফা, ১১৮৬, ই,সে, ১১৯৮]
{১}হাদীসের তিপ্পান্ন সংখ্যার উদ্দেশ্য বর্ণনায় আবদুল হাক মুহাদ্দিস দেহলভী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তার পদ্ধতি হলোঃ ডান হাতের মধ্যমা, অনামিকা ও শেষের কনিষ্ঠাঙ্গুলি- এ তিনটি মুষ্টিবদ্ধ করা হইবে; অতঃপর শাহাদাত অঙ্গুলি [তর্জনী] – কে খুলে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা শাহাদাত অঙ্গুলির মাঝ বরাবর ধরা হইবে। এ চিত্রটা দেখিতে আরবী তিপ্পান্ন [৫৩] – এর মতো হয়। [শারহে মুসলিম- ২১৬ পৃষ্ঠা, পার্শ্বটীকা- ২]
১১৯৮. আলী ইবনি আবদুর রহ্মান আল্ মুআবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] আমাকে দেখলেন যে, আমি নামাজের অবস্থায় ছোট ছোট পাথর টুকরা নিয়ে অনর্থকভাবে নড়াচড়া করছি। নামাজ শেষ করে তিনি আমাকে এরূপ কাজ করিতে নিষেধ করে বললেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেরূপ করিতেন তুমিও তাই করিবে। আমি তখন জিজ্ঞেস করলামঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজরত অবস্থায় কী করিতেন? তিনি [আলী ইবনি আবদুর রহ্মান আল মুআবী] বললেনঃ তিনি [সাঃআঃ] নামাজে যখন বৈঠক করিতেন তখন ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর রেখে আঙ্গুলগুলো গুটিয়ে শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববর্তী [শাহাদাত] আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিতেন। আর বাঁ হাতের তালু বাঁ উরুর উপর স্থাপন করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১৯৯]
১১৯৯. আলী ইবনি আবদুর রহমান আল মুআবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমারের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছি। এরপর তিনি মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন। তবে তার বর্ণনায় এতটুকু কথা অতিরিক্ত আছে যে, ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ মুসলিমের নিকট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ১২০০]
২২. অধ্যায়ঃ নামাজ সমাপনীর সালাম ও তার পদ্ধতি
১২০০. আবু মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাতে একজন আমীর ছিলেন। তিনি নামাজে দুবার সালাম ফিরাতেন [একবার ডানে এবং একবার বামে]। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ বললেনঃ সে কথা থেকে এ সুন্নাত শিখেছে? হাকাম তার বর্ণিত হাদীসে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ১২০১]
১২০১. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক আমির অথবা কোন এক ব্যক্তি দুবার সালাম ফিরালেন। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনি উমর বলিলেন, তুমি কোথা থেকে এটা পেয়েছ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৯০, ইসলামিক সেন্টার- নম্বরহীন]
১২০২. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে ডানে এবং বামে সালাম ফিরাতে দেখতাম। এমনকি [তিনি এমনভাবে মুখ ঘুরাতেন যে,] আমি তার গালের শুভ্রতা দেখিতে পেতাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১৯১, ইসলামিক সেন্টার- ১২০২]
Leave a Reply