রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের মর্যাদা

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীদের মর্যাদা

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীদের মর্যাদা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৪৬, অনুচ্ছেদঃ (২২-৬৫)=৪৪টি

২২. অনুচ্ছেদঃ ত্বালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা
২৩. অনুচ্ছেদঃ আয্‌-যুবাইর ইবনিল আও্‌ওয়াম [রাদি.]-এর মর্যাদা
২৪. অনুচ্ছেদঃ আমার সাহায্যকারী আয্‌-যুবাইর ইবনিল আও্‌ওয়াম [রাদি.]
২৫. অনুচ্ছেদঃ অনুরুপ প্রসঙ্গ
২৬. অনুচ্ছেদঃ আবদুর রহমান ইবনি আওফ আয-যুহ্রী [রাদি.]-এর মর্যাদা
২৭. অনুচ্ছেদঃ সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.]-এর মর্যাদা
২৮. অনুচ্ছেদঃ সাঈদ ইবনি যাইদ ইবনি আম্‌র ইবনি নুফাইল ও আবু উবাইদাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা
২৯. অনুচ্ছেদঃ আল-আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩০. অনুচ্ছেদঃ জাফার ইবনি আবী ত্বালিব [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩১. অনুচ্ছেদঃ আল-হাসান ইবনি আলী এবং আল-হুসাইন ইবনি আলী ইবনি আবী ত্বালীব [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩২. অনুচ্ছেদঃ আহ্‌লে বাইত-এর মর্যাদা
৩৩. অনুচ্ছেদঃ মুআয ইবনি জাবাল, যাইদ ইবনি সাবিত, উবাই ইবনি কাব ও আবু উবাইদাহ ইবনিল জাররাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩৪. অনুচ্ছেদঃ সালমান ফারসী [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩৫. অনুচ্ছেদঃ আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩৬. অনুচ্ছেদঃ আবু যার আল-গিফারী [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩৭. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩৮. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.]-এর মর্যাদা
৩৯. অনুচ্ছেদঃ হুযাইফা ইবনিল ইয়ামান [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪০. অনুচ্ছেদঃ যাইদ ইবনি হারিসাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪১. অনুচ্ছেদঃ উসামাহ্ ইবনি যাইদ [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪২. অনুচ্ছেদঃ জারীর ইবনি আবদুল্লাহ আল-বাজালী [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪৩. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪৪. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪৫. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪৬. অনুচ্ছেদঃ আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪৭. অনুচ্ছেদেঃ আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা
৪৮. অনুচ্ছেদঃ মুআবিয়াহ্‌ ইবনি আবী সুফ্‌ইয়ান [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৯. অনুচ্ছেদঃ আমর ইবনিল আস [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৫০. অনুচ্ছেদঃ খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.]- এর মর্যাদা।
৫১. অনুচ্ছেদঃ সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৫২. অনুচ্ছেদঃ ক্বাইস ইবনি সাদ ইবনি উবাদাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৫৩. অনুচ্ছেদঃ জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৫৪. অনুচ্ছেদঃ মুসআব ইবনি উমাইর [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৫৫. অনুচ্ছেদঃ আল-বারাআ ইবনি মালিক [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৫৬. অনুচ্ছেদঃ আবু মুসা আল-আশআরী [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৫৭. অনুচ্ছেদঃ যে লোক রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে দেখেছেন এবং তাহাঁর সাহচর্য লাভ করিয়াছেন তার মর্যাদা
৫৮. অনুচ্ছেদঃ যারা গাছের নীচে বাইআত গ্রহণ করিয়াছেন তাহাদের মর্যাদা
৫৯. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাহাবীদের গালি দেয়
৬০. অনুচ্ছেদঃ যারা সাহাবীদের গালি দেয়
৬১. অনুচ্ছেদঃ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কন্যা ফাতিমাহ্ [রাদি.]-এর মর্যাদা
৬২. অনুচ্ছেদঃ খাদীজাহ্ [রাদি.]-এর মর্যাদা
৬৩. অনুচ্ছেদঃ আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা
৬৪. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর স্ত্রীগণের মর্যাদা
৬৫. অনুচ্ছেদঃ উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর মর্যাদা

২২. অনুচ্ছেদঃ ত্বালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৩৮. যুবাইর ইবনি আও্‌ওয়াম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উহূদের যুদ্ধের দিন দুটি লৌহবর্ম পরা ছিলেন। [যুদ্ধে আহত হওয়ার পর] তিনি একটি পাথরের উপরের ঊঠার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি [উঠতে] পারলেন না। তিনি ত্বালহা [রাদি.]-কে তাহাঁর নিচে বসিয়ে তার কাঁধে চড়ে পাথরের উপর উঠে অবস্থান করেন। বর্ণানাকারী বলেন, আমি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনেছিঃ ত্বালহা [তার জন্য জান্নাত] অনিবার্য করে নিয়েছে।

হাসানঃ ১৬৯২ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৭৩৯. জাবির ইবনি আব্‌দিল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ যদি কেউ পৃথিবীর বুকে চলাচলরত কোন শহীদ লোককে দেখে খুশি হইতে চায়, তবে সে যেন ত্বালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ্‌ [রাদি.]-এর প্রতি দৃষ্টি দেয়।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১২৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র আস-সাল্‌ত্ব ইবনি দীনানের সনদে অবগত হয়েছি। কিছু হাদীসবিদ আস-সাল্‌ত্ব ইবনি দীনার এবং সালিহ ইবনি মূসার সমালোচনা করিয়াছেন এবং উভয়ের স্মৃতিশক্তি দূর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৪০. মূসা ইবনি ত্বালহা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আমি মুআবিয়াহ্ [রাদি.]-এর কাছে প্রবেশ করলে তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে কি সুখবর দিব না? আমি রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনেছিঃ যারা নিজেদের ওয়াদা সম্পূর্ণ করেছে ত্বালহা তাহাদের অন্তর্ভূক্ত।

হাসানঃ এটা ৩২০২ নং হাদীসের পুনরুক্তি। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। কেননা এ হাদীস মুআবিয়াহ্ [রাদি.] হইতে আমরা শুধুমাত্র উপর্যুক্ত সূত্রেই অবগত হয়েছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৭৪১. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আমার কান রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর মুখে বলিতে শুনেছেঃ তালহা ও যুবাইর দুজনই জান্নাতে আমার প্রতিবেশী।

যঈফ, মিশকাত [৬১১৪], যঈফা [২৩১১], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৭৪২. ত্বালহা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাহাবীগণ এক মূর্খ বেদুঈনকে বলেন, তুমি আল্লাহ তাআলার নাবীকে প্রশ্ন কর, তিনি কে যে লোক নিজের ওয়াদা পূর্ণ করিয়াছেন? সাহাবীগণ তাঁকে কিছু প্রশ্ন করিতে দুঃসাহস করিতেন না। তারা তাঁকে শ্রদ্ধা করিতেন এবং তাহাঁর মর্যাদাবোধে তারা আকৃষ্ট ছিলেন। অতএব তাঁকে বেদুঈন প্রশ্ন করলে তিনি তার হইতে মুখ ফিরিয়ে নেন। সে পুনরায়ও প্রশ্ন করলে এবারও তিনি তার দিক হইতে মুখ ফিরিয়ে নেন। [ত্বালহা বলেন] তারপর আমি সবুজ পোশাক পরিধান করা অবস্হায় মাসজিদের দরজা দিয়ে উপস্হিত হলাম। রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে দেখেই বললেনঃ “কোন লোক তার ওয়াদা পূরণ করেছে” এই প্রশ্নকারী কোথায়? বেদুঈন বলিল, এই যে আমি, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমার দিকে ইশারা করে বললেনঃ যারা নিজেদের ওয়াদা পূর্ণ করেছে এই লোক তাহাদের অন্তর্ভূক্ত।

হাসান সহীহঃ এটা ৩২০৩ নং হাদীসের পুনরুক্তি। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র আবু কুরাইব হইতে, ইউনুস ইবনি বুকাইরের সনদেই অবগত হয়েছি। একাধিক শীর্ষস্থানীয় হাদীস বিশেষজ্ঞ এ হাদীস আবু কুরাইবের সনদে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। এ হাদীস আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল বুখারীকে আবু কুরাইবের সনদে রিওয়ায়াত করিতে শুনিয়াছি এবং তিনি তার কিতাবুল ফাওয়াইদ শীর্ষক গ্রন্থে এ হাদীসটি স্থান দিয়েছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৩. অনুচ্ছেদঃ আয্‌-যুবাইর ইবনিল আও্‌ওয়াম [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৪৩. আয-যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বনূ কুরাইযার যুদ্ধের দিন আমার লক্ষ্যে একত্রে তাহাঁর বাবা-মার উল্লেখ করে বলেনঃ আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য উৎসর্গ হোক।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪. অনুচ্ছেদঃ আমার সাহায্যকারী আয্‌-যুবাইর ইবনিল আও্‌ওয়াম [রাদি.]

৩৭৪৪. আলী ইবনি আবী ত্বালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীরাই হাওয়ারী [নিষ্ঠাবান সাহায্যকারী] ছিলেন। আর আমার হাওয়ারী হল আয-যুবাইর ইবনিল আও্‌ওয়াম।

হাসান সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১২২]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাওয়ারী শব্দের অর্থ সাহায্যকারী। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৫. অনুচ্ছেদঃ অনুরুপ প্রসঙ্গ

৩৭৪৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ প্রত্যেক নাবীরাই হাওয়ারী [একনিষ্ঠ সাহায্যকারী] ছিল। আর আমার হাওয়ারী হল আয-যুবাইর ইবনিল আও্‌ওয়াম। আবু নুআইমের রিওয়ায়াতে আরও আছেঃ [এ কথা তিনি] আহ্‌যাবের দিন [খন্দকের যুদ্ধের দিন] বলেন। তিনি বললেনঃ আমাকে কুরাইশদের [কাফিরদের] সংবাদ কে সংগ্রহ করে দিতে পার ? আয্‌-যুবাইর [রাদি.] বলিলেন, আমি। উক্ত কথা রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তিনবার বলিলেন এবং আয-যুবাইর [রাদি.]–ও [তিনবারই] বলিলেন, আমি।

সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৪৬. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আয-যুবাইর [রাদি.] উষ্ট্রীয় যুদ্ধের দিন সকালে নিজ পুত্র আব্দুল্লাহ [রাদি.]-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, বৎস! আমার শরীরে এমন কোন অঙ্গ নেই, যা রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে [জিহাদে] ক্ষত-বিক্ষত হয়নি, এমনকি আমার লজ্জাস্থানও [ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে]।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং হাম্মাদ ইবনি যাইদের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬. অনুচ্ছেদঃ আবদুর রহমান ইবনি আওফ আয-যুহ্রী [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৪৭. আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আবু বকর জান্নাতী, উমার জান্নাতী, উসমান জান্নাতী, আলী জান্নাতী, ত্বালহা জান্নাতী, যুবাইর জান্নাতী, আবদুর রহমান ইবনি আওফ জান্নাতী, সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস জান্নাতী, সাঈদ জান্নাতী এবং আবু উবাইদাহ্ ইবনিল জাররাহ জান্নাতী।

সহীহঃ মিশকাত [৬১১], তাখরীজ ত্বাহাভীয়াহ্ [৭২৮]। আবু মুসআব-আবদুল আযীয ইবনি মুহাম্মাদ হইতে, তিনি আবদুর রহমান ইবনি হুমাইদ হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে, এই সনদে পূর্বোক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। এই সনদে আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। এ হাদীস আবদুর রহমান ইবনি হুমাইদ-তার পিতা হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি যাঈদ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে পূর্বোক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণিত হয়েছে। এ সনদে বর্ণিত হাদীসটি প্রথমোক্ত হাদীসের চাইতে অনেক বেশি সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৪৮. সাঈদ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি একদল লোকদের মাঝে রিওয়ায়াত করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ দশজন লোক জান্নাতী। [তারা হলেন] আবু বকর জান্নাতী, উমার জান্নাতী এবং আলী, উসমান, যুবাইর, ত্বালহা, আবদুর রহমান, আবু উবাইদাহ্ এবং সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.]। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উক্ত নয়জনকে গণনা করেন এবং দশম লোক প্রসঙ্গে নীরব থাকেন। সে সময় লোকেরা বলিল, হে আবুল আও্ওয়ার! আপনাকে আমরা আল্লাহর নামে ক্বসম দিয়ে বলছি, দশম লোক কে? তিনি বলেন, তোমরা আমাকে আল্লাহ্‌র নামে ক্বসম দিয়ে প্রশ্ন করেছ। আবুল আওয়ার জান্নাতী।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৩৩]। আবু ঈসা বলেন, আবুল আওয়ার হলেন সাঈদ ইবনি যাইদ ইবনি আম্‌র ইবনি নুফাইল [রাদি.]। মুহাম্মাদ [ঈমাম বুখারী]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসের চাইতে বেশি বিশুদ্ধ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৪৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [তাহাঁর স্ত্রীদের] বলিতেনঃ আমার [মৃত্যুর] পরে তোমাদের পরিস্থিত [ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা] যে কি হইবে তা সম্পর্কে আমি চিন্তিত [কারণ তোমাদের জন্য কোন উত্তরাধিকার স্বত্ব রেখে যাইনি]। ধৈর্য ধারণকারী ও সহিষ্ণুতা অনুরাগী ব্যাক্তি ছাড়া তোমাদের অধিকারের প্রতি কেউ ভ্রুক্ষেপ করিবে না। আবু সালামাহ্ [রঃ] বলেন, পরবর্তী সময়ে আয়িশা [রাদি.] বলেন, আল্লাহ তাআলা যেন তোমার বাবাকে অর্থাৎ আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.]-কে জান্নাতের সালসাবীল নামক ঝর্ণার পানি পান করান। কেননা তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর স্ত্রীদের জন্য যে সম্পদ নিয়োগের মাধ্যমে তার সম্পত্তি তাহাদের সেবায় নিয়োজিত করেন পরবর্তীকালে তা চল্লিশ হাজার [দিনার মূল্যে] বিক্রয় করা হয়।

হাসানঃ মিশকাত [৬১২১,৬১২২]।. আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৭৫০. আবু সালামাহ্ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] তার একটি বাগিচা উম্মুহাতুল মুমিনীনদের জন্য উৎসর্গ করেন তা চার লক্ষ দিরহাম মূল্যে বিক্রয় করা হয়।

সনদ হাসানঃ পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৭. অনুচ্ছেদঃ সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৫১. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ

اللَّهُمَّ اسْتَجِبْ لِسَعْدٍ إِذَا دَعَاكَ

“হে আল্লাহ! আপনার নিকট সাদ দুআ করলে তা গ্রহণ করুন”।

সহীহঃ মিশকাত [৬১১৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীস ইসমাঈল-এর বরাতে কাইস [রঃ]-এর সনদেও বর্ণিত আছে। তাতে আছে যে, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনার নিকট সাদ দুআ করলে তা গ্রহণ করুন”। এ রিওয়ায়াতটি অনেক বেশি সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাদ [রাদি.] এসে হাযির হলে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেনঃ ইনি আমার মামা। কেউ আমাকে দেখাক তো তার মামাকে [যে আমার মামার সমপর্যায়ের হইতে পারে]!

সহীহঃ মিশকাত [৬১১৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র মুজালিদের হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে এটা অবগত হয়েছি। সাদ [রাদি.] ছিলেন বনূ যুহ্রার লোক এবং নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর আম্মাও ছিলেন বনূ যুহ্রার সদস্যা। এজন্যই নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন, ইনি আমার মামা। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫৩. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাদ [রাদি.] ছাড়া অন্য কারো জন্য নিজের পিতা-মাতাকে একত্র করেননি। তিনি উহুদের যুদ্ধের দিন তাকে বলেনঃ আমার আব্বা-আম্মা তোমার জন্য কোরবান হোক। হে নও জোয়ান! [শত্রুর প্রতি] তীর নিক্ষেপ করো।

হে নও জোয়ান এ শব্দটি মুনকার ২৮২০ নং হাদীসে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। বহু রাবী এ হাদীস ইয়াহইয়া ঈবনু সাঈদ হইতে, তিনি সাঈদ ইবনিল মুসাঈয়্যাব হইতে, তিনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৭৫৪. সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উহূদের যুদ্ধের দিন রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমার লক্ষ্যে তাহাঁর বাবা-মাকে একত্রে কুরবান করেন। সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, [২৮৩০] নং হাদীস পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবদুল্লাহ ইবনি শাদ্দাদ ইবনিল হাদ হইতে আলী[রাদি.]-এর বরাতেও এ হাদীস নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫৫. আলী ইবনি আবী ত্বালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.] ছাড়া আর কারো লক্ষ্যে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে তাহাঁর বাবা-মাকে একসাথে কুরবান করিতে শুনিনি। উহূদের যুদ্ধের দিন আমি তাঁকে বলিতে শুনেছিঃ হে সাদ! তীর নিক্ষেপ কর। তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হোক।

সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম, [২৮২৮] নং হাদীসে পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মাদীনায় আগমন করার পর কেন যেন রাতে নিদ্রা যাপন করিতে পারলেন না। তিনি [মনে মনে] বললেনঃ আহা! যদি কোন সৎকর্মপরায়ণ লোক আজকের রাতটুকু আমাকে পাহারা দিত। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমরা এই চিন্তায় ছিলাম, তখনই অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ কে? উত্তর এল, আমি সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে বললেনঃ তুমি কি কারণে এসেছ? সাদ [রাদি.] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আমার মনে শংকা জাগ্রত হওয়ায় আমি তাঁকে পাহারা দিতে এসেছি। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তার জন্য দুআ করেন, তারপর ঘুমিয়ে যান।

সহীহঃ সহীহুল আদাবুল মুফরাদ [৬২২], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮. অনুচ্ছেদঃ সাঈদ ইবনি যাইদ ইবনি আম্‌র ইবনি নুফাইল ও আবু উবাইদাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৫৭. সাঈদ ইবনি যাইদ ইবনি আম্‌র ইবনি নুফাইল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নয়জন লোক প্রসঙ্গে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তারা জান্নাতী। যদি আমি দশম ব্যাক্তি প্রসঙ্গেও সাক্ষ্য দেই তবে তাতেও আমি পাপী হব না। প্রশ্ন করা হল, তা কীভাবে? তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে আমরা হেরা পর্বতের উপর অবস্থানরত ছিলাম। [হেরা কেঁপে উঠলে] তিনি বললেনঃ হেরা! শান্ত হও। অবশ্যই তোমার উপরে একজন নাবী কিংবা একজন সিদ্দীক্ব [পরম সত্যবাদী] অথবা একজন শহীদ আছেন। বলা হল, তারা কারা? তিনি বললেনঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম], আবু বাক্র, উমার, উসমান, আলী, ত্বালহা, যুবাইর, সাদ ও আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.]। তাকে প্রশ্ন করা হল, দশম লোকটি কে? তিনি বলিলেন, আমি।

সহীহঃ [৩৭৪৮] নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি সাঈদ ইবনি যাইদ [রাদি.]-এর বরাতে, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আহমাদ ইবনি মানী-হাজ্জাজ ইবনি মুহাম্মাদ হইতে, তিনি শুবাহ্ হইতে, তিনি আল-হুর ইবনিস সাব্বাহ হইতে, তিনি আবদুর রহমান ইবনিল আখনাস হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে উক্ত মর্মে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। এ শেষের সনদের হাদীসটি হাসান। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫৮. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলাম, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাহাবীদের মাঝে কে তাহাঁর সবচাইতে বেশি প্রিয় ছিলেন? তিনি বলিলেন, আবু বকর [রাদি.]। আমি পুনরায় প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? তিনি বলিলেন, উমার [রাদি.]। আমি আবারও প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? তিনি বলিলেন, তারপর আবু উবাইদাহ্ ইবনিল জাররাহ্‌ [রাদি.]। আমি পুনরায় প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? এবার তিনি নিশ্চুপ রইলেন।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১০২]। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আবু বকর অতি ভালো লোক, উমার অতি উত্তম লোক এবং উবাইদাহ্ ইবনিল জার্রাহ্ও অতি চমৎকার লোক।

সহীহঃ সহীহাহ্ [২/৫৩৪], মিশকাত [হাঃ ৬২২৪], ৩৭৯৫ নং হাদীসে আরো পূর্ণাঙ্গরূপে বর্ণনা আসবে।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আমরা শুধুমাত্র সুহাইলের হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে এটি অবগত হয়েছি।সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৯. অনুচ্ছেদঃ আল-আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৬০. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আল-আব্বাস [রাদি.] প্রসঙ্গে উমার [রাদি.]-কে বলেনঃ কোন লোকের চাচা তার পিতৃ সমতুল্য। আল-আব্বাস [রাদি.]-এর যাকাত প্রদান প্রসঙ্গে উমার [রাদি.] কিছু বলেছিলেন।

সহীহঃ ইরওয়া [৩/৩৪৮-৩৫০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৬১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আল-আব্বাস হলেন রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর চাচা। আর চাচা হল পিতৃ সমতুল্য।

সহীহঃ সহীহাহ্ [৮০৬], সহীহ আবু দাঊদ [১৪৩৫], ইরওয়া [৩/৩৪৮-৩৫০]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। এ হাদীস আমরা শুধু আবুয্ যিনাদের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে উপর্যুক্তভাবে অবগত হয়েছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৬২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আল-আব্বাস [রাদি.]-কে বললেনঃ আগামী সোমবার প্রভাতে আপনি আমার কাছে আসবেন এবং আপনার সন্তানদেরকেও সাথে নিয়ে আসবেন। আপনার জন্য এবং আপনার সন্তানদের জন্য আমি একটি দুআ করব, যার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আপনাকেও উপকৃত করবেন এবং আপনার সন্তানদেরওে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, প্রভাতে তিনি গেলেন এবং তার সঙ্গে আমরাও গেলাম। তিনি আমাদের শরীরে একখানা চাদর জড়িয়ে দিলেন, তারপর বললেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْعَبَّاسِ وَوَلَدِهِ مَغْفِرَةً ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً لاَ تُغَادِرُ ذَنْبًا اللَّهُمَّ احْفَظْهُ فِي وَلَدِهِ

“হে আল্লাহ! আল-আব্বাস ও তার সন্তানদের বাহির ও ভিতর উভয় দিক এমনভাবে ক্ষমা করে দিন যার পর তাহাদের আর কোন অপরাধ বাকি না থাকে। হে আল্লাহ! তাকে তার সন্তানদের ব্যাপারে হিফাযাত করুন”।

হাসানঃ মিশকাত [৬১৪৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারিব। এ হাদীসটি আমরা শুধুমাত্র উপর্যুক্ত সনদে অবগত হয়েছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩০. অনুচ্ছেদঃ জাফার ইবনি আবী ত্বালিব [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৬৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমি [স্বপ্নে] জাফারকে জান্নাতের মধ্যে ফেরেশতাহাদের সঙ্গে উড়ে বেড়াতে দেখেছি।

সহীহঃ সহীহাহ্ [১২২৬], মিশকাত [৬১৫৩]। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র আবদুল্লাহ ইবনি জাফারের সনদে জানতে পেরেছি। ইয়াহ্ইয়া ইবনি মুঈন প্রমুখ তাকে যঈফ বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনি জাফার হলেন আলী ইবনিল মাদীনীর বাবা। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৬৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর পর জাফার [রাদি.]-এর চেয়ে উত্তম কোন লোক জুতা পরিধান করেনি, জন্তুযানে আরোহণ করেনি, উটের হাওদায় উঠেনি।

সনদ সহীহ, মাওকূফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আল-কাওর অর্থ- হাওদা। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ

৩৭৬৫. আল-বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] জাফার ইবনি আবী ত্বালিব [রাদি.]-কে বলেনঃ তুমি দৈহিক গঠনে ও স্বভাব-চরিত্রে আমার মতো। এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সুফ্ইয়ান ইবনি ওয়াকী উবাই হইতে, তিনি ইসরাঈল হইতে …… অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৬৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, অন্যের চেয়ে ভালোভাবে কুরআনের তাৎপর্য আমার জানা থাকা সত্ত্বেও আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যে কোনো সাহাবীর নিকট তার তাৎপর্য জানতে চাইতাম এ উদ্দেশে যাতে তিনি আমাকে [তার বাড়ীতে নিয়ে] কিছু খাওয়ান। আমি জাফর ইবনি আবু তালিব [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলেই তিনি আমাকে জবাব না দিয়ে তার বাড়ীতে নিয়ে যেতেন, তারপর তার স্ত্রীকে বলিতেন, হে আসমা! আমাদেরকে খানা খাওয়াও। তার স্ত্রী আমাদের খানা খাওয়ানোর পর তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন। জাফর [রাদি.] ছিলেন দরিদ্র্য বৎসল এবং তিনি তাহাদের সাথে উঠা-বসা করিতেন, তাহাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করিতেন এবং তারাও তাহাদের সাথে কথাবার্তা বলত। তাই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে আবুল মাসাকীন [গরীবদের পিতা] উপনামে আখ্যায়ীত করেন।

অত্যন্ত দুর্বল, মিশকাত তাহকীক ছাণী [৬১৫২] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আবু ইসহাক আল-মাখযূমী হলেন ইবরাহীম ইবণূল ফা্যল আল-মাদীণী। কোন কোন হাদীসবিশেষজ্ঞ তার স্মৃতিশক্তির সমালোচনা কড়েছেণ। তিনি অনেক গারিব হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৩৭৬৭. আবু হূরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা জাফর ইবনি আবী তালিবকে আবুল মাসাকীণ বলে সম্বোধন করতাম, আমরা যখন তার নিকট আগমন করতাম। উপস্থিত যা থাকতো তাই আমাদের সামনে নিয়ে আসত, একদিন আমরা তার নিকট আগমন করলে তিনি কিছুই পেলেন না, ফলে তিনি একটি মধুর মটকা নিয়ে এলেন এবং তা ভেঙ্গে ফেললেন, তারপর আমরা চেটে চেটে খেতে থাকলাম।

যঈফ, যঈফ ইবণূ মাজাহ[৯০১]। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরা হইতে সালামার সূত্রে বর্ণিত এ হাদীসটি হাসান গারীব।সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩১. অনুচ্ছেদঃ আল-হাসান ইবনি আলী এবং আল-হুসাইন ইবনি আলী ইবনি আবী ত্বালীব [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৬৮. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন [রাদি.] প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [৭৯৬] সুফ্‌ইয়ান ইবনি ওয়াকী-জারীর ও মুহাম্মাদ ইবনি ফুযাইল হইতে, তিনি ইয়াযীদ [রঃ] হইতে এই সনদে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনি আবী নুম হলেন আব্দুর রহমান ইবনি আবী নুম আল-বাজালী, কূফার অধিবাসী। তার উপনাম আবুল হাকাম। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৬৯. উসামাহ্‌ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক রাতে আমার কোন দরকারে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে গেলাম। অতএব নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে, একটা কিছু তাহাঁর পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উন্মুক্ত করলে দেখা গেলো তাহাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন [রাদি.]। তিনি বলিলেন, এরা দুজন আমার পুত্র এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ্‌! আমি এদের দুজনকে মুহাব্বাত করি। সুতরাং তুমি তাহাদেরকে মুহাব্বাত কর এবং যে ব্যক্তি এদেরকে মুহাব্বাত করিবে, তুমি তাহাদেরকেও মুহাব্বাত কর।

হাসানঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৬১৫৬] আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব।সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৭৭০. আবদুর রহমান ইবনি আবী নুম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

এক ইরাকবাসী মাছির রক্ত কাপড়ে লাগলে তার বিধান প্রসঙ্গে ইবনি উমার [রাদি.]–এর কাছে জানতে চায়। ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন, তোমরা তার প্রতি লক্ষ্য কর, সে মাছির রক্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছে। অথচ তারাই রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর পুত্রকে [নাতি হুসাইন] হত্যা করেছে। রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন দুজন এই পৃথিবীতে আমার দুটি সুগন্ধময় ফুল।

সহীহঃ মিশকাত [৬১৫৫], সহীহ [৫৬৪], বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। শুবাহ [রঃ] এ হাদীস মাহদী ইবনি মাইমূন হইতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনি আবী ইয়াকূবের সনদে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.]-এর বরাতেও নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৭১. সালমা [আল-বাকরিয়া] [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আমি উম্মূ সালমা [রাদি.]–এর নিকট গিয়েছিলাম, তখন তিনি কাঁদছিলেন। আমি বললাম, কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি বলিলেন, আমি স্বপ্নে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি যে, তাহাঁর মাথায় ও দাড়িতে ধূলা জড়িয়ে আছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুলুল্লাহ! আপনার কি হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি এইমাত্র হুসাইনের নিহত হওয়ার জায়গায় হাযির হয়েছি।

যঈফ, মিশকাত [৬১৫৭] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৭৭২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ[সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করা হল, আপনার আহলে বাইত–এর সদস্যগণের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন। তিনি ফাতেমা [রাদি.]-কে বলিতেনঃ আমার দুই সন্তানকে আমার কাছে ডাক। তিনি তাহাদের ঘ্রাণ নিতেন এবং নিজের বুকের সাথে লাগাতেন।

যঈফ, মিশকাত [৬১৫৮] আবু ঈসা বলেনঃ আনাস [রাদি.]-এর রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীসটি গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৭৭৩. আবু বাক্‌রাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [মাসজিদে নাববীর] মিম্বারে উঠে বললেনঃ আমার এ পুত্র [হাসান] নেতা হইবে এবং আল্লাহ্‌ তাআলা তার মাধ্যমে [মুসলমানদের] দুটি বিবাদমান দলের মাঝে সমঝোতা স্থাপন করাবেন।

সহীহঃ রাওযুন্‌ নাযীর [৯২৩], ইরওয়া [১৫৯৭], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। “এই পুত্র” দিয়ে আল-হাসান ইবনি আলি[রাদি.]-কে বুঝানো হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৭৪. আবদুল্লাহ ইবনি বুরাইদাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি আমার পিতা বুরাইদাহ্‌ [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ হাসান ও হুসাইন [রাদি.] লাল বর্ণের জামা পরিহিত অবস্থায় [শিশু হওয়ার কারণে] আছাড় খেতে খেতে হেঁটে আসেন। রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মিম্বার হইতে নেমে তাহাদের দুজনকে তুলে এনে নিজের সম্মুখে বসান, তারপর বলেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা সত্যই বলেছেন,

 إنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلاَدُكُمْ فِتْنَةٌ

“তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা বিশেষ”-[সুরা তাগাবুন ১৫]। আমি তাকিয়ে দেখলাম এই শিশু দুটি আছাড় খেতে খেতে হেঁটে আসছে। আমি আর সহ্য করিতে পারলাম না, এমনকি আমার বক্তৃতা বন্ধ করে তাহাদেরকে তুলে নিতে বাধ্য হলাম।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৬০০] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র আল-হুসাইন ইবনি ওয়াকিদ-এর বর্ণনার প্রেক্ষিতেই এটি অবগত হয়েছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৭৫. ইয়ালা ইবনি মুর্‌রাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ হুসাইন আমার হইতে এবং আমি হুসাইন হইতে। যে লোক হুসাইনকে মহাব্বত করে, আল্লাহ্‌ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন।

হাসানঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবদুল্লাহ ইবনি উসমান ইবনি খুসাইমের সূত্রেই জেনেছি। একাধিক বর্ণনাকারী এটি আবদুল্লাহ ইবনি উসমান ইবনি খুসাইম হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৭৭৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, লোকদের মাঝে দৈহিক কাঠামোয় রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে আল-হাসান ইবনি আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না।

সহীহঃ বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৭৭. আবু জুহাইফাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি দেখেছি। আল-হাসান ইবনি আলী ছিলেন [দৈহিক কাঠামোয়] তাহাঁর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। পূর্বে [২৬৭৬] নং হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ অনুচ্ছেদে আবু বাক্‌র আস-সিদ্দীক্ব, ইবনি আব্বাস ও ইবনিয যুবাইর [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৭৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি ইবনি যিয়াদের নিকট হাজির ছিলাম। সে সময় আল-হুসাইন [রাদি.]-এর শির [কারবালা হইতে] এনে হাজির করা হল। সে তাহাঁর নাকে ছড়ি মারতে মারতে [ব্যঙ্গোক্তি করে] বলিতে লাগলো, এর ন্যায় সুশ্রী আমি কাউকে তো দেখিনি! বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় আমি বললাম, সতর্ক হও! লোকদের মাঝে [দৈহিক কাঠামোয়] রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে আল-হুসাইন ইবনি আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না।

সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৬১৭০], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৭৯. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] বুক হইতে মাথা পর্যন্ত অংশের সাথে আল-হাসানের শরীরের সাদৃশ্য ছিল এবং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বুক হইতে পা পর্যন্ত নীচের অংশের সাথে আল-হুসাইনের শরীরের সাদৃশ্য ছিল।

যঈফ, মিশকাত [৬১৬১] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৭৮০. উমারাহ ইবনি উমাইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবনি যিয়াদ ও তার সাথীদের ছিন্ন মস্তক এনে কূফার আর-রাহ্‌বা নামক জায়গায় মাসজিদে স্তূপীকৃত করা হলে আমি সেখানে গেলাম। সে সময় লোকেরা এসে গেছে, এসে গেছে বলে চেঁচামিচি করিতে লাগলো। দেখা গেলো একটি সাপ এসে ঐসব মাথাসমূহের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছিল। এমনকি সাপটি উবায়দুল্লাহ ইবনি যিয়াদের নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করে কিচ্ছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করিল, তারপর বের হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। লোকেরা আবারও চিৎকার করে বলিতে লাগলো, এসে গেছে, এসে গেছে। এরুপে সাপটি দুবার অথবা তিনবার এসে তার নাকের ছিদ্রে ঢুকে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বের হয়ে যায়।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৮১. হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার মা আমাকে প্রশ্ন করেন, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট তুমি কখন যাবে? আমি বললাম, আমি এতদিন হইতে তাহাঁর নিকট উপস্থিত পরিত্যাগ করেছি। এতে তিনি আমার উপর নারাজ হন। আমি তাকে বললাম, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে আমাকে মাগরিবের নামাজ আদায় করিতে ছেড়ে দিন। তাহলে আমি তাহাঁর কাছে আমার ও আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করব। অতএব নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট আমি হাযির হয়ে তাহাঁর সাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। তারপর তিনি নফল নামাজ আদায় করিতে থাকলেন, অবশেষে তিনি এশার নামাজ আদায় করিলেন। তারপর তিনি বাড়ির দিকে যাত্রা করিলেন এবং আমি তাহাঁর পিছু পিছু গেলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং প্রশ্ন করিলেন, তুমি কে, হুযাইফাহ্‌? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমার কি দরকার, আল্লাহ্‌ তাআলা তোমাকে এবং তোমার মাকে ক্ষমা করুন। তিনি বললেনঃ একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে অনুমতি চেয়েছেনঃ ফাতিমাহ্‌ জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা।

সহীহঃ তালীকুর রাগীব [২০৫, ২০৬], মিশকাত [২১৬২], সহীহাহ্‌ [২৭৮৫]। আবু ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র ইসরাঈলের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতেই জানতে পেরেছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৮২. আল-বারাআ ইবনি আবিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হাসান ও হুসাইনকে দেখে বললেনঃ হে আল্লাহ্‌। আমি এ দুজনকে মুহাব্বাত করি, সুতরাং তুমিও তাহাদেরকে মুহাব্বাত কর।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [২৭৮৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৮৩. আদী ইবনি সাবিত [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আল-বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছিঃ নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আলীর পুত্র হাসানকে তাহাঁর কাঁধে তুলে নিয়ে আমি বলিতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ্‌! একে আমি মুহাব্বাত করি, অতএব তাকে তুমিও মুহাব্বাত কর।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [২৭৮৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এটা ফুযাইল ইবনি মারযূক [রঃ] বর্ণিত হাদীস অপেক্ষা বেশি সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৮৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদা আলীর ছেলে হাসানকে স্বীয় কাঁধে বহণ করছিলেন। এক লোক বলেন, হে বালক! কতই না উত্তম বাহনে তুমি আরোহন করেছ! [তার মন্তব্য শুনে] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সে কতই না উত্তম আরোহী। যঈফ, মিশকাত [৬১৬৩],

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু আলোচ্য সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। হাদীসের কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম যাম্‌আ ইবনি সালিহ্‌কে তার স্মৃতিশক্তির কারণে যঈফ বলেছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৭৮৫. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীকে সাতজন করে প্রতিনিধি দান করা হয়েছে এবং আমাকে দান করা হয়েছে চৌদ্দজন। আমরা বললাম, তারা কারা? তিনি বললেনঃ আমি [আলী], আমার দুই পুত্র [হাসান ও হুসাইন], জাফর, হামযা, আবু বাক্‌র, উমার, মুসআব ইবনি উমাইর, বিলাল, সালমান, আল-মিকদাদ, হুযাইফা, আম্মার ও আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]।

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৬২৪৬] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। এ হাদীস আলী [রাদি.] হইতে মাওকূফরুপেও বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩২. অনুচ্ছেদঃ আহ্‌লে বাইত-এর মর্যাদা

৩৭৮৬. জাবির ইবনি আবদিল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি তাহাঁর বিদায় হাজ্জে আরাফার দিন তাহাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রীতে আরোহিত অবস্থায় বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলিতে শুনেছিঃ হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিষ রেখে গেলাম, তোমরা তা ধারণ বা অনুসরণ করলে কখনও পথভ্রষ্ট হইবে নাঃ আল্লাহ্‌ তাআলার কিতাব [আল-কুরআন] এবং আমার ইতরাত অর্থাৎ আমার আহ্‌লে বাইত।

সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৬১৪৩]। আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে আবু যার, আবু সাঈদ, যাইদ ইবনি আরক্বাম ও হুযাইফাহ্‌ ইবনি উসাইদ [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান গারীব। যাইদ ইবনিল হাসান হইতে সাঈদ ইবনি সুলাইমান ও একাধিক বিশেষজ্ঞ আলিম হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৮৭. নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর পোষ্য উমার ইবনি আবী সালামাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.]-এর ঘরে এ আয়াত নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর উপর অবতীর্ণ হয়

 إنمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

[অনুবাদ]ঃ “হে নাবীর পরিবার! আল্লাহ্‌ তাআলা তো চান তোমাদের হইতে অপবিত্রতা দূর করিতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণভাবে পবিত্র করিতে”- [সূরা আহ্‌যাব ৩৩]। সে সময় নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ফাতিমাহ্‌, হাসান ও হুসাইন [রাদি.]-কে ডাকেন এবং তাহাদেরকে একখানা চাদরে আবৃত করেন। তাহাঁর পেছনে আলী [রাদি.] ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন, তারপর বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! এরা আমার আহলে বাইত। অতএব তুমি তাহাদের হইতে অপবিত্রতা অপসারণ করে দাও এবং তাহাদেরকে উত্তমভাবে পবিত্র কর”। সে সময় উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমিও তাহাদের অন্তর্ভুক্ত কি? তিনি বললেনঃ তুমি স্বস্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মাঝেই আছ।

সহীহঃ ৩২০৫ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ অনুছেদে উম্মু সালামাহ্‌, মাকিল ইবনি ইয়াসার, আবুল হামরা ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি উপর্যুক্ত সনদে হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৮৮. যাইদ ইবনি আরক্বাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা শক্তরুপে ধারণ [অনুসরণ] করলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হইবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ আল্লাহ্‌ তাআলার কিতাব যা আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং আমার পরিবার অর্থাৎ আমার আহ্‌লে বাইত। এ দুটি কখনও আলাদা হইবে না কাওসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর আমার পরে দুজনের সঙ্গে তোমরা কিভাবে আচরণ কর।

সহীহঃ মিশকাত [৬১৪৪], রাওযুন্‌ নাযীর [৯৭৭, ৯৭৮], সহীহাহ্‌ [৪/৩৫৬-৩৫৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৮৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌ তাআলাকে মহব্বত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তাহাঁর নিয়ামাতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ্‌ তাআলার মহব্বতে তোমরা আমাকেও মহব্বত এবং আমার মহব্বতে আমার আহ্‌লে বাইতকেও মহব্বত কর।

যঈফ, তাখরীজু ফিকহিস্‌ সারাহ্ [২৩],আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৩. অনুচ্ছেদঃ মুআয ইবনি জাবাল, যাইদ ইবনি সাবিত, উবাই ইবনি কাব ও আবু উবাইদাহ ইবনিল জাররাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৯০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মাঝে আবু বাক্‌র আমার উম্মাতের প্রতি সবচাইতে বেশী দয়ালু। আল্লাহ্‌ তাআলার বিধান প্রয়োগে উমার তাহাদের মাঝে সবচাইতে বেশী কঠোর। তাহাদের মাঝে উসমান ইবনি আফ্‌ফান সবচাইতে বেশী লাজুক। তাহাদের মাঝে হালাল ও হারাম প্রসঙ্গে মুআয ইবনি জাবাল সবচাইতে বেশী ওয়াকিফহাল। তাহাদের মাঝে ফারায়িয [উওরাধিকার সম্পর্কিত বিধান] সম্বন্ধে যাইদ ইবনি সাবিত সবচাইতে বেশী অভিজ্ঞ। তাহাদের মধ্যে অধিক উত্তমরুপে কুরআন মাজীদ পাঠকারী উবাই ইবনি কাব। আর প্রত্যেক উম্মাতের একজন সবচাইতে বেশী বিশ্বস্ত লোক থাকে। এ উম্মাতের সর্বাধিক বিশ্বস্ত লোক আবু উবাইদাহ ইবনিল জার্‌রাহ।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৫৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র উপর্যুক্ত সনদেই ক্বাতাদাহ্‌র বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে জেনেছি। এ হাদীস আবু ক্বিলাবাহ্‌ আনাস [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ক্বিলাবার হাদীসই বেশী প্রসিদ্ধ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৯১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মাঝে আবু বাক্‌র [রাদি.] হলেন আমার উম্মাতের প্রতি সর্বাধিক দয়ালু, তাহাদের মধ্যে আল্লাহ্‌র বিধান প্রয়োগে সর্বাধিক কঠোর হলেন উমার, তাহাদের মাঝে সর্বাধিক লজ্জাশীল হলেন উসমান, তাহাদের মাঝে সর্বাধিক উত্তম কুরআন পাঠকারী হলেন উবাই ইবনি কাব, তাহাদের মাঝে ফারাইয সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত হলেন যাইদ ইবনি সাবিত এবং তাহাদের মাঝে হালাল-হারাম সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত হলেন মুআয ইবনি জাবাল, সাবধান প্রত্যেক উম্মাতের মাঝে একজন সর্বাধিক বিশ্বস্ত লোক আছে। আমার উম্মাতের মাঝে সর্বাধিক বিশ্বস্ত লোক হলেন আবু উবাইদাহ্‌ ইবনিল জার্‌রাহ্‌।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[হাঃ ১৫৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৯২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-কে বললেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা আমাকে হুকুম দিয়েছেন আমি তোমাকে যেন لمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا “লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারু” সূরাটি পাঠ করে শুনাই। উবাই [রাদি.] প্রশ্ন করিলেন, তিনি কি আমার নামোল্লেখ করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। এতে উবাই [রাদি.] কেঁদে ফেলেন।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [২৯০৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে বললেনঃ …… অতপর অনুরুপ উল্লেখ করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৯৩. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে বলেছেন, আল্লাহ্‌ তাআলা আমাকে আপনার নিকট কুরআন পাঠ করিতে আদেশ করিয়াছেন, অতঃপর তিনি পাঠ করিলেন,

 لمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ 

“আহলে কিতাবদের মাঝে কাফির নয়”, আর তাতে পাঠ করিলেন, “আল্লাহ্‌র নিকট দ্বীনদার লোক হলেন একনিষ্ঠ মুসলিম ব্যক্তি। ইয়াহুদীরাও নয় নাস্‌রানীরাও নয়। যে ব্যক্তি ভাল আমাল করবেন তিনি তা অস্বীকার করবেন না। তিনি আরও পাঠ করিলেন, ইবনি আদামের নিকট যদি এক উপত্যকা সম্পদ থাকে তাহলে সে দ্বিতীয় উপত্যকা কামনা করিবে, আর যদি দ্বিতীয় উপত্যকা থাকে, তাহলে সে তৃতীয় উপত্যকা কামনা করে। মাটি ব্যতীত আর কিছুতেই ইবনি আদামের পেট ভরবে না। যে তাওবাহ্‌ করিবে আল্লাহ তার তাওবাহ্‌ ক্ববূল করবেন।

সহীহঃ বুখারী মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান। এটি অন্য সূত্রেও বর্ণিত আছে। এটি আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আব্‌যা তার পিতা হইতে, তিনি উবাই ইবনি কাব হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে আছে যে, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উবাই ইবনি কাবকে বলিলেন, আল্লাহ্‌ আমাকে আদেশ করিয়াছেন যেন আপনার নিকট কুরআন পাঠ করি। ক্বাতাদাহ্‌ আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উবাই [রাদি.]-কে বললেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা আমাকে আপনার নিকট কুরআন পাঠ করিতে আদেশ করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৯৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর যমানায় চারজন ব্যক্তি কুরআন সংকলন করেন, তাঁরা সকলেই আনসারদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেনঃ উবাই ইবনি কাব, মুআয ইবনি জাবাল, যাইদ ইবনি সাবিত ও আবু যাইদ [রাদি.]। আমি [ক্বাতাদাহ্‌] আনাস [রাদি.]-কে বললাম, আবু যাইদ কে? তিনি বলিলেন, আমার একজন চাচা।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৭৯৫. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আবু বাক্‌র কতই না ভাল, উমার কতই না ভাল, আবু উবাইদাহ ইবনিল জাররাহ্‌ কতই না ভাল, উসাইদ ইবনি হুযাইর কতই না ভাল, সাবিত ইবনি ক্বাইস ইবনি শাম্‌মাস কতই না ভাল, মুআয ইবনি জাবাল কতই না ভাল এবং মুআয ইবনি আম্‌র ইবনিল জামূহ কতই না ভাল।

সহীহঃ হাদীসের প্রথমাংশ [৩৫১২] নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান। আমরা শুধুমাত্র সুহাইলের হাদীস হিসেবে এটি অবগত হয়েছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৯৬. হুযাইফাহ্‌ ইবনিল ইয়ামান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাজরানবাসীদের নেতা ও তার নায়েব নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট এসে বলে, আমাদের সঙ্গে আপনার বিশ্বস্ত লোককে প্রেরণ করেন। তিনি বললেনঃ আমি শীঘ্রই তোমাদের সঙ্গে একজন বিশ্বস্ত লোককে প্রেরণ করব যিনি প্রকৃতই বিশ্বস্ত। লোকেরা এই সেবা আঞ্জাম দেয়ার আশা করিতে থাকে। তিনি আবু উবাইদাহ্‌ [রাদি.]-কে প্রেরণ করেন। অধঃস্তন বর্ণনাকারী আবু ইসহাক্ব যখনই সিলাহ্‌ হইতে উক্ত হাদীস রিওয়ায়াত করিতেন সে সময় বলিতেন, আমি এ হাদীস সিলাহ্‌ হইতে প্রায় ষাট বছর আগে শুনিয়াছি।

সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৬১২৩], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, দেখুন সহীহাহ্‌ [১৯৬৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীস উমার ও আনাস [রাদি.] হইতে, তারা নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদেও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেনঃ “প্রত্যেক উম্মাতেরই একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি থাকে। এ উম্মাতের বিশ্বস্ত লোক হল উবাইদাহ্‌ ইবনিল জাররাহ”। মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্‌শার সাল্‌ম ইবনি কুতাইবাইহ্‌ ও আবু দাঊদ হইতে, তারা শুবাহ্‌ হইতে, তিনি আবু ইসহাক্ব হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] বলেছেন, সিলাহ্‌ ইবনি যুফারের হ্নদয় স্বর্ণের মত। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪. অনুচ্ছেদঃ সালমান ফারসী [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৯৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাত তিনজন লোকের জন্য খুবই আগ্রহীঃ আলী, আম্মার ও সালমান [রাদি.]।

যঈফ, যঈফা [২৩২৯] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীস শুধু হাসান ইবনি সালিহ্‌-এর সূত্রেই জেনেছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫. অনুচ্ছেদঃ আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৭৯৮. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.] এসে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে দেখার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি বলেনঃ তোমরা তাকে আসার অনুমতি দাও। স্বাগতম পবিত্র সত্তা ও পবিত্র স্বভাবের ব্যক্তিকে।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৯৯. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ যখনই আম্মারকে দুটি বিষয়ের মাঝে একটি গ্রহণের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে সে সময় সে প্রত্যেকটির মাঝে সর্বোত্তমটিকে [অপেক্ষাকৃত মজবুতটিকে] এখতিয়ার করেছে।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। কেননা আবদুল আযীয ইবনি সিয়াহ্‌-এর রিওয়ায়াত ছাড়া আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে অবহিত নই। তিনি হলেন কুফার শাইখ। লোকেরা তার নিকট হইতে হাদীস রিওয়ায়াত করেছে। তার এক পুত্র ছিল, যিনি ইয়াযীদ ইবনি আবদুল আযীয নামে পরিচিত এবং যিনি সিক্বাহ্‌ বর্ণনাকারী ছিলেন। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি আদাম তার সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। হুযাইফাহ্‌ ইবনিল ইয়ামান [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট আমরা বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ আমার জানা নেই, আর কত দিন আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকব। সুতরাং তোমরা আমার পরের দুজন লোকের অনুসরণ কর এবং তিনি আবু বাক্‌র ও উমার [রাদি.]-এর দিকে ইশারা করেন। আর তোমরা আম্মারের অনুসৃত পন্থা অনুসরণ কর এবং যে হাদীস ইবনি মাসঊদ তোমাদের কাছে রিওয়ায়াত করে তা বিশ্বাস কর।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীস ইবরাহীম ইবনি সাদ সুফ্‌ইয়ান সাওরী হইতে, তিনি আবদুল মালিক ইবনি উমাইর হইতে, তিনি রিবঈর মুক্তদাস হিলাল হইতে, তিনি রিবঈ হইতে, তিনি হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে একই রকম রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সালিম আল-মুরাদী আল-কূফী এ হাদীস আম্‌র ইবনি হারিম হইতে, তিনি রিবঈ ইবনি হিরাশ হইতে, তিনি হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে একই রকম রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮০০. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ হে আম্মার! সুখবর গ্রহণ কর বিদ্রোহী দলটি তোমাকে হত্যা করিবে।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [৭১০]। আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে উম্মু সালামাহ্‌, আব্দুল্লাহ ইবনি আম্‌র, আবুল ইয়াসার ও হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান, সহীহ এবং আলা ইবনি আব্দুর রহমানের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬. অনুচ্ছেদঃ আবু যার আল-গিফারী [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮০১. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ আবু যার হইতে বেশি সত্যবাদী কাউকে আকাশ ছায়া দান করেনি এবং মাটি ও তার বুকে বহন করেনি।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৫৬]। আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে আবুদ্‌ দারদা ও আবু যার [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮০২. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ বাচনিক সত্যবাদিতায় ও সত্য প্রকাশে আবু যারের তুলনায় উত্তম কাউকে আকাশ ছায়াদান করেনি এবং দুনিয়া তার বুকে আরোহন করেনি। সে ঈসা ইবনি মারইয়াম আলাইহিস সালাম অনুরুপ। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হিংসুটে লোকের মত বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা কি এটা তাকে জানাবোনা? [তাকে জানানো হইবে?] তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তোমরা তাকে জানিয়ে দাও।

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৬২৩০] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। কিছু রাবী এ হাদীস এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “বৈরাগ্য সাধনায় পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী আবু যার হলেন ঈসা ইবনি মারইয়াম আলাইহিস সালাম অনুরুপ”। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৭. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮০৩. আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]-এর ভাতিজা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ উসমান [রাদি.]-কে যখন মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হয় তখন আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] তাহাঁর নিকট তার নিরাপত্তার জন্য আসেন। উসমান [রাদি.] তাকে বলেন, আপনি কেন এসেছেন? তিনি বলিলেন, আমি আপনাকে সাহায্য করিতে এসেছি। উসমান [রাদি.] বলিলেন, তাহলে আপনি বাইরে বিদ্রোহীদের নিকট যান এবং তাহাদেরকে আমার নিকট হইতে সরিয়ে দিন। আপনার বাড়ির ভেতরে থাকার চাইতে বাইরে থাকাই আমার জন্য উপকারী। অতএব আবদুল্লাহ [রাদি.] বাইরে লোকদের নিকট গিয়ে তাহাদের উদ্দেশ্যে বলিলেন, হে লোকেরা! জাহিলী যুগে আমার অমুক নাম ছিল। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নাম রাখেন আবদুল্লাহ। আমার সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তাআলার কিতাবে কয়েকটি আয়াতও অবতীর্ণ হয়। আমার সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়ঃ

‏ وشهد شَاهِدٌ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى مِثْلِهِ فَآمَنَ وَاسْتَكْبَرْتُمْ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

“এবং বানী ইসরাঈলের একজন এর মতই কিতাব প্রসঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং এতে ঈমান এনেছে, অথচ তোমরা অহংকার করছ। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না” [সূরাদি. আল-আহ্‌কাফ-১০]। আরও অবতীর্ণ হয়ঃ

قلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ

“আপনি বলুন, আমার ও তোমাদের মাঝে আল্লাহ্‌ তাআলার সাক্ষ্য এবং যার নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে তার সাক্ষ্যই যথেষ্ট” [সূরাদি. রাদ-৪৩]। তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌ তাআলার একখানা কোষবদ্ধ তলোয়ার আছে। আর তোমাদের এই যে শহরে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [হিজরাত করে] আসেন, এখানের ফেরেশতারা তোমাদের প্রতিবেশী। অতএব তোমরা এই ব্যক্তিকে হত্যা করার ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তাআলাকে ভয় কর। আল্লাহ্‌র কসম! যদি তোমরা তাকে মেরে ফেল, তাহলে অবশ্যই তোমাদের প্রতিবেশী ফেরেশতারা তোমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে এবং আল্লাহ্‌ তাআলার যে তলোয়ার তোমাদের হইতে কোষবদ্ধ আছে তা কোষমুক্ত হলে কিয়ামাত পর্যন্ত আর কোষবদ্ধ হইবে না। বিদ্রোহীরা বলিল, তোমরা এই ইয়াহূদীকেও হত্যা কর এবং উসমানকেও হত্যা কর।

সনদ দুর্বল। ৩০৯৮ নং হাদীসে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। কেননা আমরা শুধু আবদুল মালিক ইবনি উমাইরের রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। শুআইব ইবনি সাফওয়ান এ হাদীস আবদুল মালিক ইবনি উমাইর হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছনঃ উমার ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি সালাম-তার দাদা আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] হইতে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮০৪. ইয়াযীদ ইবনি উমাইরাহ্‌ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.]-এর মৃত্যু উপস্থিত হলে তাকে বলা হল, হে আব্দুর রহমানের বাবা! আমাদেরকে উপদেশ দিন। তিনি বলিলেন, তোমরা আমাকে বসাও। তিনি বলিলেন, ইল্‌ম ও ঈমান নিজস্ব জায়গায়ই বিদ্যামান আছে, যে তা অন্বেষণ করিবে সে তা লাভ করিবে। তিনি তিনবার এ কথা বলিলেন। তোমরা চার লোকের নিকট ইল্‌ম অনুসন্ধান করঃ উয়াইমির আবুদ্‌ দারদা [রাদি.]-এর নিকট, সালমান ফারসী [রাদি.]-এর নিকট, আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.]-এর নিকট আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]-এর নিকট। শেষোক্তজন প্রথমে ইয়াহূদী ধর্মাবলম্বী ছিলেন, পরে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছেন। তার প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই আবদুল্লাহ ইবনি সালাম জান্নাতের দশজনের মাঝে দশম লোক।

সহীহঃ মিশকাত [৬২৩১]। এ অনুচ্ছেদে সাদ [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮০৫. ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা আমার সাহাবীদের মাঝে আবু বাক্‌র ও উমারের অনুসরণ কর এবং আম্মারের অনুসৃত পথ অবলম্বন কর আর ইবনি মাসঊদের ওয়াসীয়াত শক্তভাবে ধারণ কর।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯৭]। আবু ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সনদে ইবনি মাসঊদের হাদীস হিসাবে এটি হাসান গারীব। কেননা এ হাদীস আমার শুধু ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সালামাহ্‌ ইবনি কুহাইলের রিওয়ায়াত হিসেবে জানতে পেরেছি। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সালামাহ্‌ হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল। আবুয্‌ যারা নামে দুই লোক রয়েছেন। তাহাদের একজনের নাম আবদুল্লাহ ইবনি হানী এবং অন্যজন যার হইতে শুবাহ্‌ ও সাওরী হাদীস রিওয়াত করেন। ইবনি উয়াইনাহ্‌র নাম আম্‌র ইবনি আম্‌র। তিনি ইবনি মাসঊদ [রাদি.]-এর শীষ্য আবুল আহওয়াসের ভাইয়ের ছেলে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮০৬. আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি ও আমার সহোদর ইয়ামান হইতে [মাদীনায়] আসা মাত্র আমরা ধারনা করতাম যে, আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর পরিবারের একজন সদস্য। কেননা আমরা তাকে ও তার মাতাকে প্রায়ই নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে আসা-যাওয়া করিতে দেখতাম।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি এই সনদ সূত্রে হাসান সহীহ গারীব। সুফ্‌ইয়ান সাওরীও হাদীসটি আবু ইসহাক্বের সনদে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮০৭. আব্দুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা হুযাইফা [রাদি.] এর কাছে এসে বললাম, আপনি আমাদেরকে এরুপ এক ব্যাক্তির সন্ধান দিন, যিনি আচার-আচরনে অপরদের চাইতে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর বেশি কাছের, যাতে আমরা তাহাঁর নিকট দ্বীন শিখতে পারি ও হাদীস শুনতে পারি। হুযাইফা [রাদি.] বলেন, আচার-আচরন ও চাল-চলনে ব্যাক্তিদের মাঝে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর অনেক নিকটবর্তী হলেন ইবনি মাসঊদ [রাদি.]। তিনি আমাদের মাঝ হইতে অন্তরাল হয়ে তাহাঁর ঘরে অবস্থান করিতেন। রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর বিশ্বস্ত সাহাবীগন ভালভাবে অবগত আছেন যে, ইবনি উম্মু আব্‌দ [আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ] তাহাদের প্রত্যেকের তুলনায় আল্লাহ্‌ তাআলার বেশি নৈকট্যলাভকারী।

সহীহঃ তালীকাত আল-হাস্‌সান [৭০২৩], বুখারী সংক্ষিপ্তাকারে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮০৮. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি যদি তাহাদের কাউকে পরামর্শ ছাড়া দলনেতা নিযুক্ত করতাম, তাহলে ইবনি উম্মি আব্‌দকে দলনেতা নিযুক্ত করতাম।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৩৭], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু হারিস হইতে আলী [রাদি.] সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮০৯. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি পরামর্শ ছাড়া কাউকে নেতার পদ দিলে ইবনি উম্মি আব্‌দকেই নেতার পদ দিতাম।

যঈফ, দেখুন পূর্বের হাদীস। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮১০. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ তোমরা চার লোকের কাছ থেকে কুরআন শিক্ষা করঃ ইবনি মাসঊদ, উবাই ইবনি কাব, মুআয ইবনি জাবাল ও হুযাইফাহ্‌র মুক্ত দাস সালিম হইতে।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [১৮২৭], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮১১. খাইসামাহ্‌ ইবনি আবু সাবরাহ্‌ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মাদীনায় এসে আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট প্রার্থনা করলাম যে, তিনি যেন আমাকে একজন সৎকর্মপরায়ণ সঙ্গী জুটিয়ে দেন। অতএব তিনি আবু হুরাইয়াহ্‌ [রাদি.]-কে আমার ভাগ্যে জুটিয়ে দিলেন। তার পাশে বসে আমি তাকে বললাম, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমাকে একজন সৎকর্মপরায়ন সঙ্গী মিলিয়ে দেন। অতএব আপনি আমার জন্য সহজলভ্য হয়েছেন। তিনি [আমাকে] প্রশ্ন করেন, তুমি এসেছ কোথা হইতে? আমি বললাম, আমি কূফার অধিবাসী। আমি মঙ্গলের সন্ধানে এসেছি এবং তাই খোঁজ করছি। তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কি সাদ ইবনি মালিক [রাদি.], যার দুআ ক্ববুল হয়, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর উযুর পানি ও জুতা বহনকারী ইবনি মাসঊদ [রাদি.], রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর গোপন তথ্যের খাজাঞ্চী হূ্যাইফাহ্‌ [রাদি.], আম্মার [রাদি.] যাকে আল্লাহ তাহাঁর নাবীর ভাষায় শাইতানের আক্রমণ হইতে নিরাপত্তা দান করিয়াছেন এবং দুই কিতাবধারী সালমান [রাদি.] প্রমুখ সাহাবীগন বিদ্যমান নেই? ক্বাতদাহ [রাদি.] বলেন, দুই কিতাব হল ইনজীল ও কুরআন।

সহীহঃ বুখারী [৩৭৪২,৩৭৪৩] হুযাইফাহ্‌ হইতে, এ হাদীসদ্বয়ে সালমানের উল্লেখ নেই। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। খাইসামাহ্‌ হলেন আব্দুর রহমান ইবনি আবী সাবরার পুত্র। তাকে তার দাদার সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯. অনুচ্ছেদঃ হুযাইফা ইবনিল ইয়ামান [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮১২. হুযাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! যদি আপনি কাউকে খালীফা [স্থলাভিসিক্ত] নিযুক্ত করে যেতেন। তিনি বললেনঃ আমি কাউকে তোমাদের খালীফা নিযুক্ত করে গেলে এবং তোমরা তার অবাধ্যাচারী হলে তোমাদেরকে সাজা দেয়া হইবে। সুতরাং হুযাইফা [রাদি.] তোমাদের নিকট যা বর্ণনা করে তাকে সত্য বলে গ্রহণ কর এবং ইবনি মাসউদ [রাদি.] তোমাদেরকে যা কিছু পাঠ করায় তা পাঠ করে নাও।

যঈফ, মিশকাত [৬২৩২], আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান বলেন, আমি ইসহাক ইবনি ঈসাকে বললাম, লোকেরা বলেন, এ হাদীস আবু ওয়াইল হইতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, না, বরং তা ইনশা আল্লাহ যাযান থেকে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। এটি শারীকের বর্ণিত হাদীস। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৪০. অনুচ্ছেদঃ যাইদ ইবনি হারিসাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮১৩. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি উসামা [রাদি.]-এর মাহিনা নির্ধারণ করিলেন তিন হাজার পাঁচ শত দিরহাম এবং আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর মাহিনা নির্ধারণ করিলেন তিন হাজার। সুতরাং আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তার পিতাকে বলিলেন, আপনি উসামাকে কেন আমার উপর স্থান দিলেন? আল্লাহ্‌র কসম! সে কোন যুদ্ধে আমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। উমার [রাদি.] বলিলেন, তোমার পিতার চাইতে [তার পিতা] যাইদ [রাদি.] ছিল রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] বেশি প্রিয়পাত্র। আর তোমার চাইতে উসামা ছিল রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] বেশি পছন্দনীয় ব্যক্তি। তাই আমি আমার পছন্দনীয় ব্যক্তির উপর রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] পছন্দনীয় ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।

যঈফ, মিশকাত [৬১৬৪] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮১৪. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে তাহাঁর বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা যাইদ [রাদি.]-কে যাইদ ইবনি হারিসাহ্‌ না বলে বরং যাইদ ইবনি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলে সম্বোধন করতাম। অবশেষে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়

ادعُوهُمْ لآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِنْدَ اللَّهِ

[অনুবাদে]ঃ “তোমরা তাহাদের কে তাহাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাকো, এটাই আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে বেশি ন্যায়সঙ্গত”-[সূরা আহ্‌যাব ৫]।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এটি ৩২০৯ নং হাদীসের পুনরুক্তি। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮১৫. যাইদ ইবনি হারিসাহ্‌ [রাদি.]-এর সহোদর জাবালাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট হাজির হয়ে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আমার সহোদর যাইদকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিন। তিনি বলিলেন, এইতো সে হাজির। সে যদি তোমার সঙ্গে চলে যেতে চায়, তাকে আমি বাধা দিবো না। যাইদ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আল্লাহ্‌র ক্বসম! আমি আপনাকে ছেড়ে অন্য কাউকে গ্রহণ করবো না। বর্ণনাকারী [জাবালাহ্‌] বলেন, আমি দেখলাম আমার সিদ্ধান্তের তুলনায় আমার ভাইয়ের সিদ্ধান্তই বেশি উত্তম।

হাসানঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৬১৬৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীসটি আমরা শুধুমাত্র ইবনির রূমী হইতে আলী ইবনূ মুসহির-এর সনদেই অবগত হয়েছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৮১৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন এক যুদ্ধাভিযানে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] একটি সামরিক বাহিনী পাঠান এবং উসামাহ্‌ ইবনি যাইদ [রাদি.]-কে তাহাদের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। কিছু লোক উসামাহ্‌র নেতৃত্বের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে। সে সময় নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেলেনঃ যদি আজ তোমরা উসামাহ্‌র নেতৃত্বের ব্যাপারে বিরূপ সমালোচনা করে থাকো, তবে ইতোপূর্বে তোমরা তার বাবার নেতৃত্বের প্রসঙ্গেও বিরুপ সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহ্‌র ক্বসম! নিশ্চয়ই সে নেতৃত্বের ব্যাপারে বেশি যোগ্য ছিল এবং সমস্ত লোকের মাঝে আমার সবচাইতে বেশি পছন্দনীয় ছিল। আর তার পরে তার ছেলেও আমার কাছে সবার তুলনায় বেশি প্রিয়।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আলী ইবনি হুজর-ইসমাঈল উবনু জাফার হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি দীনার হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে মালিক ইবনি আনাস [রঃ] কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১. অনুচ্ছেদঃ উসামাহ্ ইবনি যাইদ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮১৭. মুহাম্মাদ ইবনি উসামাহ্ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে তাহাঁর বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] অধিক অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি ও আরো কিছু লোক মাদীনায় গেলাম। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট আমি প্রবেশ করলাম। তিনি নীরব ছিলেন এবং কোন কথা বলেননি। তাই রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর হাত দুখানা আমার শরীরের উপর রাখতেন এবং তা উত্তোলন করিতেন। তাতে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি আমার জন্য দুআ করছেন।

হাসানঃ মিশকাত [৬১৬৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৮১৮. উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উসামাহ্‌র নাকের শ্লেষ্মা মুছে দেওয়ার ইচ্ছা করিলেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমাকে অনুমতি দিন আমিই তা মুছে দেই। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ হে আয়িশাহ্‌! তুমি তাকে মুহাব্বাত করিবে, কেননা আমি তাকে মুহাব্বাত করি।

সহীহঃ মিশকাত [৬১৬৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮১৯. উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বসে থাকাকালীন সময়ে আলী ও আব্বাস [রাদি.] হাযির হয়ে সম্মতি চেয়ে বলেন, হে উসামা! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে আমাদের ঢোকার অনুমতি চাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আলী ও আব্বাস [রাদি.] প্রবেশের অনুমতিপ্রার্থী। তিনি বলিলেনঃ তুমি কি জান তারা কেন এসেছে? আমি বললাম, না, আমি জানি না। তিনি বলিলেন, কিন্তু আমি জানি। তাহাদেরকে সম্মতি দিলেন। তারা দুজনে ভেতরে আসলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার নিকট এ কথা জানতে এসেছি যে, আপনার পরিজনদের মধ্যে কে আপনার বেশি আদরের? তিনি বললেনঃ ফাতিমা বিনতু মুহাম্মাদ। তারা বলিলেন, আমরা আপনার পরিজন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করিতে আসিনি। তিনি বলিলেন, আমার পরিজনদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আমার বেশি আদরের যার প্রতি আল্লাহ তাআলাও দয়া করিয়াছেন এবং আমিও দয়া করেছি অর্থাৎ উসামা ইবনি যাইদ। তারা আবার প্রশ্ন করেন, তারপর কে? তিনি বললেনঃ তারপর আলী ইবনি আবু তালিব। আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আপনার চাচাকে সবার শেষ ভাগে রাখলেন? তিনি বলিলেনঃ হিজরাতের কারণে আলী আপনাকে ছেড়ে গেছে।

যঈফ, মিশকাত [৬১৬৮] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৪২. অনুচ্ছেদঃ জারীর ইবনি আবদুল্লাহ আল-বাজালী [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮২০. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর হইতে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে কখনো তাহাঁর নিকট প্রবেশে বাধা প্রদান করেননি এবং আমাকে যখনই দেখেছেন তখনই হেসে দিয়েছেন।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৫৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮২১. জারীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর হইতে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে তাহাঁর ঘরে প্রবেশ করিতে কখনো বাধা দেননি এবং তিনি যখনই আমাকে দেখেছেন তখনই মুচকি হেসেছেন।

সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। অত্র হাদীসে বর্ণিত শব্দাবলী অধিক প্রণিধানযোগ্য। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮২২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে দুবার দেখেছেন এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্য দুবার দুআ করিয়াছেন।

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি মুরসাল। আবু জাহযাম [রাহঃ] ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর দেখা পাননি। তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনি আব্দিল্লাহ ইবনি আব্বাসের সূত্রে ইবনি আব্বাস হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তার নাম মূসা ইবনি সালিম। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮২৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করার জন্য রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আল্লাহ তাআলার নিকট দুবার দুআ করিয়াছেন।

সহীহঃ রাওযুন্‌ নাযীর [৩৯৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং আতার বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সনদে গারীব। হাদীসটি ইকরিমাহ্‌ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে রিওয়ায়াত করছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮২৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে তাহাঁর বুকে চেপে ধরে বললেনঃ হে আল্লাহ! তাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করুন।

সহীহঃ প্রাগুক্ত, বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮২৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমার হাতে একখণ্ড রেশমী কাপড়। আমি জান্নাতের যে দিকেই ইশারা করি সেটি আমাকে সেদিকেই উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমি ঘ্টনাটি হাফসা [রাদি.]-এর কাছে বর্ণনা করি। হাফসাহ্‌ [রাদি.] তা নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে জানান। তিনি বলেনঃ তোমার ভাই নিশ্চয়ই একজন সৎলোক অথবা বলেছেন, নিশ্চয়ই আবদুল্লাহ একজন সৎলোক।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫. অনুচ্ছেদঃ আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮২৬. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যুবাইর [রাদি.]-এর ঘরে প্রদীপ জ্বলতে দেখে বললেনঃ হে আয়িশাহ্‌! আমার মনে হয় আসমা সন্তান প্রসব করেছে। তোমরা তার নাম রেখ না, আমিই তার নাম রাখব। অতএব তিনি তার নাম রাখলেন আবদুল্লাহ এবং একটি খেজুর চর্বন করে তা নিজ হাতে তাহাঁর মুখে দেন।

হাসানঃ বুখারী [৩৯০৯, ৩৯১০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৪৬. অনুচ্ছেদঃ আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮২৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [আমাদের এখান দিয়ে] যাচ্ছিলেন এবং আমার মা উম্মু সুলাইম [রাদি.] তাহাঁর আওয়াজ শুনতে পেয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, এই যে [আমার পুত্র] উনাইস। আনাস [রাদি.] বলেন, তারপর আমার জন্য রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তিনটি দুআ করেন। অবশ্য এর মাঝে দুটি আমি দুনিয়াতেই লাভ করেছি এবং তৃতীয়টি আখিরাতে পাওয়ার আশা রাখি।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উপর্যুক্ত সনদে গারীব। অবশ্য এ হাদীস আনাস [রাদি.]-এর বরাতে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে একাধিক সনদে বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮২৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] প্রায়ই আমাকে বলিতেনঃ হে দুই কানের অধিকারী। আবু উসামাহ্‌ বলেন, অর্থাৎ তাহাঁর সাথে তিনি [এ কথা বলে] রসিকতা করিতেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮২৯. উম্মু সুলাইম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আনাস ইবনি মালিক আপনার সেবক, আল্লাহ তাআলার নিকট তাহাঁর জন্য দুআ করুন। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আনাসের ধন-মাল ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দাও এবং তুমি তাকে যা কিছু দিয়েছ তাতে বারাকাত দান কর।

সহিহঃ সহীহাহ্‌ [২২৪৬], তাখরীজ মুশকিলাতুল ফাক্‌র [১২], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৩০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি সবজির নামানুসারে আমার নামের উপনাম রাখেন, সে সবজি তুলে আনতাম।

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। শুধু জাবির আল-জুফী হইতে আবু নাসর সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াত হিসেবে আমরা হাদীস জেনেছি। আবু নাসর হলেন খাইসামা ইবনি আবু খাইসামা আল-বাসরী, তিনি আনাস [রাদি.] হইতে অনেক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৩৮৩১. সাবিত আল-বুনানী [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] আমাকে বলিলেন, হে সাবিত! আমার হইতে [হাদীস] সংগ্রহ কর। যেহেতু আমার তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য কারো নিকট হইতে কিছু [হাদীস] সঞ্চয়ন করিতে পারবে না। কারণ আমি তা সঞ্চয়ন করেছি  রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে। আর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা সংগ্রহ করিয়াছেন জিবরাইল আলাইহিস সালাম হইতে এবং জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তা সঞ্চয়ন করিয়াছেন আল্লাহ্ তাআলার নিকট হইতে।

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু যাইদ ইবনিল হুবাবের সূত্রেই এই হাদীস জেনেছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৩২. আবু কুরাইব-যাইদ হইতে বর্ণীতঃ

তিনি মাইমূন আবু আবদুল্লাহ হইতে, তিনি সাবিত হইতে, তিনি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] সূত্রে ইবরাহীম ইবনি ইয়াকূব বর্ণিত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ সূত্রে এ কথার উল্লেখ নেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিবরাঈল আলাইহিস সালাম হইতে তা গ্রহণ করিয়াছেন।

দেখুন পূর্বের হাদীস। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৩৮৩৩. আবু খাল্‌দাহ্‌ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আবুল আলিয়াহ্‌ [রঃ]-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আনাস [রাদি.] কি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে হাদীস শুনেছেন? আবুল আলিয়াহ্‌ [অবাক হয়ে] বলেন, তিনি তো একাধারে দশ বছর তাহাঁর সেবা করিয়াছেন এবং তাহাঁর জন্য নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] দুআ করিয়াছেন। তাহাঁর একটি বাগান ছিল যাতে বছরে দুবার ফল ধরত। ঐ বাগানে একটি ফুলগাছ ছিল যা হইতে কস্তুরির ঘ্রাণ আসত।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [২২৪১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আবু খালদার নাম খালিদ ইবনি দীনার এবং তিনি হাদীস বিশারদদের মতে নির্ভরযোগ্য। তিনি আনাস ইবনি মালিক[রাদি.]-এর সাক্ষাৎ লাভ করিয়াছেন এবং তাহাঁর নিকট হইতে হাদীসও রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭. অনুচ্ছেদেঃ আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮৩৪. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে এসে তাহাঁর সম্মুখে আমার কাপড় [চাদরখানা] বিছিয়ে দিলাম। তারপর কাপড়খানা তুলে জড়ো করে তিনি আমার বুকের উপড় রাখলেন। এরপর হইতে আমি আর কোন কিছুই ভুলিনি।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপর্যুক্ত সূত্রে গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩৮৩৫. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনার কাছ হইতে আমি যা কিছু শ্রবণ করি তা মনে রাখতে পারি না। তিনি বলিলেন, তোমার চাদরখানা বিছাও। অতএব আমি তা বিছালাম। তারপর তিনি বহু হাদীস রিওয়ায়াত করিলেন যা আমি কখনো ভুলিনি।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাদীসটি একাধিক সূত্রে আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৩৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু হুরায়রা্‌ [রাদি.]-কে তিনি বলিলেন, হে আবু হুরায়রা্‌! আপনি আমাদের চেয়ে বেশি সময় রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছাকাছি কাটিয়েছেন এবং আমাদের তুলনায় তাহাঁর বেশি হাদীস মুখস্থ করিয়াছেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৩৭. মালিক ইবনি আবু আমির [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক তালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাদি.]-এর নিকট এসে বলিল, হে আবু মুহাম্মাদ! ঐ ইয়ামানী লোকটি অর্থাৎ আবু হুরাইরা [রাদি.] প্রসঙ্গে আপনার কি বক্তব্য? তিনি কি আপনাদের চাইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাদীস অনেক বেশি জানেন? তার নিকট আমরা এমন কিছু হাদীস শুনি যা আপনাদের নিকট শুনতে পাই না। অথবা তিনি কি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বরাতে এমন কথা বলেন যা প্রকৃতপক্ষে তিনি বলেননি? তালহা [রাদি.] বলিলেন, বস্তুত তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এ হাদীস শুনেছেন যা আমরা শুনতে পারিনি। তার কারণ এই যে, তিনি ছিলেন একজন গরীব লোক, তার কিছুই ছিল না। তিনি ছিলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অতিথি। তার হাত থাকত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাতের সাথে [অর্থাত সব সময় তাহাঁর সঙ্গে থাকতেন]। আর আমরা ছিলাম বাড়ি-ঘর ও পরিবার-পরিজনসহ ধনবান। তাই আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খিদমাতে হাযির হওয়ার সুযোগ পেতাম দিনের দুই ভাগে [সকাল ও সন্ধ্যায়]। তাই নিঃসন্দেহে তিনি অবশ্যই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাণী শুনেছেন, যা আমরা শুনিনি। আর তুমি এমন একজন সৎ লোকও খুঁজে পাবে না যিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বরাতে এমন কথা বলবেন, যা সত্যিকার অর্থে তিনি বলেননি।

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাকের সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। অবশ্য ইউসুফ ইবনি বুকাইর প্রমুখগণ এ হাদীস মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৩৮. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রশ্ন করেনঃ তুমি কোন গোত্রের লোক? আমি বললাম, দাওস গোত্রীয়। তিনি বললেনঃ আমি জ্ঞাত ছিলাম না যে, দাওস গোত্রে কোন উত্তম ব্যাক্তি আছে।

সহীহঃ সহিহাহ্‌ [২৯৩৬]। তাইসীরুল ইনতিফা মুহাজির ইবনি মাখলাদ হইতে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আবু খাল্‌দাহ্‌র নাম খালিদ ইবনি দীনার এবং আবু আলিয়্যার নাম রুফাই। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৩৯. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি কয়েকটি খেজুরসহ নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এ খেজুরগুলোতে বারাকাত হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করুন। তিনি খেজুরগুলো জড়ো করিলেন, তারপর আমার জন্য খেজুরগুলোয় বারাকাত হওয়ার দুআ করিলেন, তারপর আমাকে বললেনঃ এগুলো নাও এবং তোমার এই থলেতে রাখ। আর যখনই তা হইতে তুমি কিছু খেজুর নিতে চাও, সে সময় থলের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বের করে নিবে এবং কখনও থলেটি ঝেড়ে ফেল না। এরপর আমি উক্ত থলে হইতে এত এত ওয়াসাক খেজুর আল্লাহ তাআলার রাস্তায় দান করেছি। আর এ হইতে আমরা নিজেরাও খেতাম এবং অন্যকেও খাওয়াতাম। থলেটি আমার কোমড় হইতে কখনো আলাদা হয়নি। অবশেষে উসমান [রাদি.] যেদিন শাহাদাত বরণ করেন সেদিন আমার [কোমড়] হইতে থলেটি পড়ে যায়।

আবু ঈসা বলেন, উক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান গারীব। হাদীসটি আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে অন্য সনদেও বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৮৪০. আবদুল্লাহ ইবনে রাফি [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্‌ [রাদি.]-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আবু হুরায়রা্‌ [বিড়ালের বাপ] আপনার ডাকনাম হলো কেন? তিনি বলিলেন, তুমি আমাকে কি ভয় পাও? আমি বললাম, হ্যাঁ আল্লাহ্‌র শপথ, অবশ্যই আপনাকে আমি ভয় করি। তিনি বলিলেন, আমি আমার পরিবারের মেষপাল চড়াতাম এবং আমার একটি ছোট বিড়াল ছিল। রাতের বেলা আমি এটিকে একটি গাছে বসিয়ে রাখতাম। আর দিন হলে আমি এটাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতাম এবং এর সাথে খেলা করতাম। তাই লোকেরা আমাকে আবু হুরায়রা্‌ ডাকনাম দেয়।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৮৪১. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্‌ ইবনি আম্‌র [রাদি.] ছাড়া আর কেউ আমার চেয়ে অধিক রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাদীস রেওয়ায়েত করেনি। কেননা তিনি [হাদীস] লিখে রাখতেন কিন্তু আমি লিখতাম না।

সহীহঃ বুখারী [২৬৬৮] নং হাদীস পুর্বে উল্ল্যেখ হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৮. অনুচ্ছেদঃ মুআবিয়াহ্‌ ইবনি আবী সুফ্‌ইয়ান [রাদি.]-এর মর্যাদা।

৩৮৪২. আবদুর রহমান ইবনি আবী উমাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবী ছিলেন; নাবী [সাঃআঃ] মুআবিয়া [রাদি.]-এর জন্য দুআ করেনঃ “হে আল্লাহ্‌! তুমি তাকে পথপ্রদর্শক ও হেদায়াতপ্রাপ্ত বানাও এবং তার মাধ্যমে [মানুষকে] সৎপথ দেখাও।

সহীহঃ মিশকাত [৬২৩] সহীহাহ্‌ [১৯৬৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৪৩. আবু ইদরিস আল-খাওলানী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] যখন উমাইর ইবনি সাদ [রাদি.]-কে পদচ্যুত করে সে পদে মুআবিয়াহ্‌ [রাদি.]-কে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করিলেন তখন লোকেরা বলিল, তিনি উমাইরকে পদচ্যুত করে সে পদে মআবিয়াহ্‌কে শাসক নিযুক্ত করিয়াছেন। উমাইর [রাদি.] বলেন, তোমরা মুআবিয়াহ্‌কে ভালভাবে স্মরণ কর। কেননা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ

 اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا وَاهْدِ بِهِ

“হে আল্লাহ্‌! তুমি তার মাধ্যমে [লোকদের] পথ দেখাও।

পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি গারীব। আমর ইবনি ওয়াক্বীদকে দুর্বল মনে করা হয়। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯. অনুচ্ছেদঃ আমর ইবনিল আস [রাদি.]-এর মর্যাদা।

৩৮৪৪. উক্কবাহ্‌ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ লোকেরা ইসলাম কবূল করেছে আর আমর ইবনিল আস বিশ্বাস স্থাপন করেছে।

হাসানঃ সহীহাহ্‌ [১১৫], মিশকাত [৬২৩৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীস শুধুমাত্র ইবনি লাহীআহ্‌র বরাতে মিশরাহ্‌ হইতে জানতে পেরেছি। এর সনদসূত্র খুব একটা মাযবুত নয়। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৮৪৫. তালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ আমর ইবনি আস কুরাইশদের অধিক ভালো ব্যক্তিদের দলভুক্ত।

আবু ঈসা বলেনঃ আমরা এ হাদীস শুধু নাফি ইবনি উমার আল- জুমাহীর বর্ণনা হইতেই জেনেছি। নাফি একজন নির্ভরযোগ্য রাবী। কিন্তু হাদীসটির সনদসূত্র মুত্তাসিল [সংষুক্ত] নয়। ইবনি আবু মুলাইকা [রাহঃ] তালহা [রাদি.]-এর দেখা পাননি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫০. অনুচ্ছেদঃ খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.]- এর মর্যাদা।

৩৮৪৬. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আমরা এক মানযিলে যাত্রা বিরতি করলাম। আমাদের সম্মুখ দিয়ে লোকেরা চলাফেরা করিতে লাগল। আর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রশ্ন করিতে থাকলেনঃ হে আবু হুরায়রা্‌! ইনি কে? আমি বলতাম, অমুক। তখন তিনি বলিতেন, আল্লাহ্‌ তাআলার এ বান্দা খুব ভাল লোক। আবার এক ব্যাক্তি গেলে তিনি প্রশ্ন করিতেনঃ ইনি কে? আমি বলতাম, অমুক। তখন তিনি বলিতেন, আল্লাহ্‌ তালার এ বান্দা খুব মন্দ ব্যাক্তি। অবশেষে সেখান দিয়ে খালিদ ইবনিল ওয়ালীদ অতিক্রম করলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ এ লোকটি কে? আমি বললাম, ইনি খালিদ ইবনি ওয়ালীদ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলার এ বান্দা খালিদ ইবনিল ওয়ালীদ খুব ভাল ব্যাক্তি। ইনি আল্লাহ্‌ তাআলার তরবারিগুলোর মাঝের একখানা তরবারি।

সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৬২৫৩], সহীহাহ্‌ [১২৩৭, ১৮২৬] আহকামুল জানায়িয [১৬৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে যাইদ ইবনি আসলাম হাদীস শুনেছে বলে আমাদের জানা নেই। আমার মতে এটি মুরসাল হাদীস। এ অনুচ্ছেদে আবু বাক্‌র আস্‌-সিদ্দীক্ব [রাদি.] কতৃকও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫১. অনুচ্ছেদঃ সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-এর মর্যাদা।

৩৮৪৭. আল-বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে একখানা রেশমী কাপড় উপহার দেয়া হয়। সাহাবীগণ তার কোমলতায় বিস্মিত হন। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা এটা দেখে অবাক হচ্ছ। অথচ জান্নাতে সাদ ইবনি মুআযির রুমাল-এর তুলনায় আরো অনেক উন্নত মানের হইবে।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আনাস [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৪৮. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি সাদ ইবনি মুআযের লাশ সম্মুখে রেখে বলিতে শুনেছিঃ দয়াময় আল্লাহ্‌র আরশ তার জন্য নড়ে উঠেছে।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৫৮] বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে উসাইদ ইবনি হুযাইর, আবু সাঈদ ও রুমাইসাহ্‌ [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৪৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন সাদ ইবনি মুআযের জানাযা [লাশ] বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সে সময় মুনাফিক্বরা বলে, কতই না হালকা তার মৃতদেহটি। তাহাদের এমন মন্তব্যের কারণ ছিল বানূ কুরাইযা প্রসঙ্গে তার ফাইসালা। নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তার জানাযা [লাশ] বহন করিতেছিলেন [তাই হালকা মনে হচ্ছিলো]।

সহীহঃ মিশকাত [৬২২৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫২. অনুচ্ছেদঃ ক্বাইস ইবনি সাদ ইবনি উবাদাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা।

৩৮৫০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ক্বাইস ইবনি সাদ [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর জন্য শাসকের দেহরক্ষীর মত ছিলেন। [অধঃস্তন বর্ণনাকারী] মুহাম্মাদ ইবনি আবী আবদিল্লাহ আল-আনসারী বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর অনেক কাজ সমাধা করিতেন।

সহীহঃ বুখারী [৭১৫৫]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস আমরা শুধু আনসারীর বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে জেনেছি। মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া-মুহাম্মাদ ইবনি আবদিল্লাহ্‌ আল-আনসারীর সনদে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এই সনদে আনসারীর বক্তব্য উল্লেখ করেননি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩. অনুচ্ছেদঃ জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।

৩৮৫১. জাবির ইবনি আবদিল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আমার কাছে এসেছেন খচ্চরে কিংবা তুর্কী ঘোড়ায় চড়ে নয় [বরং পায়ে হেঁটে]।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [২৯১], বুখারী অনুরূপ অর্থে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৫২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] উটের রাতে আমার জন্য পঁচিশবার ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

যইফ, মিশকাত [৬২৩৮]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারিব। উটের রাত প্রসঙ্গে জাবির [রাদি.] হইতে কয়েকটি সনদে হাদীস বর্ণিত আছে যে, এক ভ্রমনে তিনি রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] এঁর সাথে ছিলেন। তিনি রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] এঁর নিকট এই শর্তে তার উটটি বিক্রয় করেন যে, তিনি এতে আরোহণ করে মদীনায় পৌঁছবেন। জাবির [রাদি.] প্রায়ই বলিতেন, যে রাতে আমি রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] এঁর নিকট উটটি বিক্রয় করি, সে রাতে তিনি আমার জন্য পঁচিশবার ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

জাবির [রাদি.]-এর পিতা আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি হারাম [রাদি.] উহুদের দিন শহীদ হন এবং কজন ছোট ছোট কন্যা সন্তান রেখে যান। জাবির তাহাদের লালন-পালন করিতেন এবং তাহাদের জন্য খরচ করিতেন। এ কারণে রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] তার সাথে ভাল আচরণ করিতেন এবং তার প্রতি দয়া দেখাতেন। জাবির [রাদি.]- এর সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে এরকমই বিবৃতি ব্যক্ত হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫৪. অনুচ্ছেদঃ মুসআব ইবনি উমাইর [রাদি.]-এর মর্যাদা।

৩৮৫৩. খাব্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই আমরা রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে হিজরত করি। সুতরাং এর পুরস্কার আল্লাহ্‌ তাআলার কাছেই আমাদের প্রাপ্য। আমাদের মাঝে কেউ এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করিয়াছেন যে, তিনি তার পুরস্কার কিছুই [পৃথিবীতে] ভোগ করিতে পারেননি। আবার আমাদের মাঝে কারো ফল পেকেছে এবং তিনি তা [পৃথিবীতে] ভোগ করিয়াছেন। আর মুসআব ইবনি উমাইর [রাদি.] মাত্র একখানা কাপড় ছাড়া আর কোন সম্পদই রেখে যাননি। [তার মৃত্যুর পর] লোকেরা ঐ কাপড়খানা দিয়ে তার মাথা ঢাকলে তার পা দুটি বের হয়ে যেত, আবার তা দিয়ে তার পা দুটি ঢেকে দিলে তার মাথাটি অনাবৃত হয়ে যেত। সে সময় রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা কাপড়টি দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং তার পায়ের উপর ইয্‌খির ঘাস বিছিয়ে দাও।

সহীহঃ আহকামুল জানায়িয [৫৭, ৫৮] বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হান্নাদ-ইবনি ইদরীস হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনি আবু ওয়ায়িল শ্বাক্বীক্ব ইবনি সালামাহ্‌ হইতে, তিনি খাব্বাব ইবনিল আরাত্তি [রাদি.] হইতে এই সনদে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫. অনুচ্ছেদঃ আল-বারাআ ইবনি মালিক [রাদি.]-এর মর্যাদা।

৩৮৫৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মাথায় উস্কুখুস্কু চুল ও দেহে ধূলিমলিন দুখানা পুরাতন কাপড় পরিহিত এরূপ অনেক ব্যাক্তি রয়েছে যার প্রতি লোকেরা দৃষ্টিপাত করেনা। অথচ সে আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে ওয়াদা করলে তিনি তা সত্যে পরিণত করেন। আল-বারাআ ইবনি মালিক তাহাদের দলভুক্ত।

সহীহঃ মিশকাত [৬২৩৯] তাখরীজুল মুশকিলাহ [১২৫]। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি এ সনদে হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৬. অনুচ্ছেদঃ আবু মুসা আল-আশআরী [রাদি.]-এর মর্যাদা।

৩৮৫৫. আবু মুসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ হে আবু মুসা! তোমাকে দাঊদ [আঃ]-এর পরিবারের সুমধুর কণ্ঠস্বরসমূহের মাঝের একটি সুর দান করা হয়েছে।

সহীহঃ বুখারী [৫০৮৪], মুসলিম [২/১৯৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ অনুচ্ছেদে বুরাইদাহ্‌ ও আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৫৬. সাহ্‌ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর পাশে ছিলাম। তিনি পরিখা খনন করছিলেন, আর আমরা মাটি সরাচ্ছিলাম। আমাদের পাশ দিয়ে তিনি চলাচল করিতেন আর বলিতেনঃ

اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الآخِرَةِ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَةِ

“হে আল্লাহ্‌! পরকালের ভোগবিলাসই আসল [স্থায়ী]। অতএব তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও”।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, উক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আবু হাযিমের নাম সালামাহ্‌ ইবনি দীনার আল-আরাজ আয্‌-যাহিদ। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৫৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [পরিখা খননকালে ছন্দাকারে] বলিতেনঃ

‏ اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الآخِرَةِ فَأَكْرِمِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَةَ 

“হে আল্লাহ! পরকালের সুখ শান্তিই হচ্ছে প্রকৃত সুখ-শাস্তি। সুতরাং তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে মর্যাদা দান কর”।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। এ হাদীস আনাস [রাদি.] হইতে অন্যভাবেও বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭. অনুচ্ছেদঃ যে লোক রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে দেখেছেন এবং তাহাঁর সাহচর্য লাভ করিয়াছেন তার মর্যাদা

৩৮৫৮. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ জাহান্নামের আগুন এমন মুসলিম লোককে ছুঁবে না যে আমাকে দেখেছে অথবা আমার দর্শনলাভকারীকে দেখেছে। তালহা ইবনি খিরাশ বলেন, আমি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] কে দেখেছি। মূসা ইবনি ইবরাহীম বলেন, তালহা ইবনি খিরাশকে কে দেখেছি। ইয়াহইয়া ইবনি হাবীব বলেন, মূসা ইবনি ইবরাহীম আমাকে বলেছেন, তুমি অবশ্যই আমাকে দেখেছ [আমার সান্নিধ্য লাভ করেছ]। সুতরাং আমরা আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট নাজাতের আশা রাখি।

যইফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৬০০৪], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারিব। আমরা শুধু মূসা ইবনি ইবরাহীম আল-আনসারীর সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। আলী ইবনি মাদীনী প্রমুখ হাদীসবেত্তাগন মূসা ইবনি ইবরাহীমের সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৫৯. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার যুগের ব্যক্তিরাই উত্তম। তারপর তাহাদের পরবর্তীগণ, তারপর তার পরবর্তীগণ। তারপর এরূপ ব্যক্তিদের আগমন ঘটবে, যারা সাক্ষী দেবার আগে শপথ করিবে অথবা শপথের আগে সাক্ষ্য দিবে।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৩৬২], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে উমার, ইমরান ইবনি হুসাইন ও বুরাইদাহ্‌ [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮. অনুচ্ছেদঃ যারা গাছের নীচে বাইআত গ্রহণ করিয়াছেন তাহাদের মর্যাদা

৩৮৬০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ যেসব ব্যক্তি [হুদাইবিয়ার প্রান্তরে] গাছের নীচে শপথ গ্রহণ করেছে তাহাদের কেউই জাহান্নামে যাবে না।

সহীহঃ যিলালুল জান্নাত [৮৬০], সহীহাহ্‌ [২১৬০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৯. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাহাবীদের গালি দেয়

৩৮৬১. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার সাহাবীদের তোমরা গালি দিও না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার শপথ! তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও দান-খাইরাত করে তবে তা তাহাদের কারো এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দ দান-খাইরাতের সমান মর্যাদা সম্পন্ন হইবে না।

সহীহঃ আয্‌-যিলাল [৯৮৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নাসীফাহু শব্দের অর্থ অর্ধ মুদ্দ। আল-হাসান ইবনি আলী আল-খাল্লাল- তিনি হাদীস শাস্ত্রে হাফিয ছিলেন- আবু মুআবিয়াহ্‌ হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৬২. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্‌ফাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হুঁশিয়ার! আমার সাহাবীদের বিষয়ে আল্লাহ্‌ তাআলাকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাহাদেরকে [গালি ও বিদ্রূপের] লক্ষ্যবস্তু বানিও না। যেহেতু যে ব্যক্তি তাহাদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করিল, সে আমার প্রতি ভালবাসার খাতিরেই তাহাদেরকে ভালবাসল। আর যে ব্যক্তি তাহাদের প্রতি শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করিল, সে আমার প্রতি শত্রুতা ও হিংসাবশেই তাহাদের প্রতি শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করিল। যে ব্যক্তি তাহাদেরকে কষ্ট দিল, সে আমাকেই কষ্ট দিল। যে আমাকে কষ্ট দিল, সে আল্লাহ্‌ তাআলাকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহ্‌ তাআলাকে কষ্ট দিল, শীঘ্রই আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে পাকড়াও করবেন।

যইফ, তাখরীজুত্ তাহা বিয়া[৪৭১], যইফা [২৯০১] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারিব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রে হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৬৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে লোক [হুদাইবিয়ায়] বৃক্ষের নীচে বাইয়াত [রিদওয়ান] করেছে, সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে, লাল বর্ণের উটের মালিক ছাড়া।

যইফ, সহীহা [২১৬০] নং হাদীসের অধীন। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারিব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৬৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

হাতিব ইবনি আবী বালতাআহ্‌ [রাদি.]-এর এক ক্রীতদাস রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকটে এসে তার বিরুদ্ধে নালিশ করে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় সে জাহান্নামে যাবে। তিনি বললেনঃ তুমি মিথ্যা বলেছ, সে কখনও জাহান্নামে যাবে না। কেননা সে বাদ্‌রের যুদ্ধে এবং হুদাইবিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে।

সহীহঃ মুসলিম [৭/১৬৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৬৫. আবদুল্লাহ ইবনি আবু বুরাইদা [রাহঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার সাহাবীদের মধ্যে কেউ যে অঞ্চলেই মারা যাবে কিয়ামতের দিন সেখানকার মানুষের নেতা ও নূর [জ্যোতি] হয়ে উঠবে।

যইফ, যইফা [৪৪৬৮], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারিব। এ হাদীস আবদুল্লাহ ইবনি মুসলিম-আবু তাইবা-ইবনি বুরাইদা হইতে রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে মুরসাল হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই বেশি সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬০. অনুচ্ছেদঃ যারা সাহাবীদের গালি দেয়

৩৮৬৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যারা আমার সাহাবীদের গালি দেয় তাহাদের দেখলে তোমরা বলবে, তোদের দুষ্কর্মের উপর আল্লাহ্‌ তাআআলার অভিসম্পাত।

অত্যন্ত দুর্বল, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৬০০৮], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি মুনকার। আমরা এটি উবাইদুল্লাহ ইবনি উমারের হাদীস হিসাবে এই রিওয়ায়াত ব্যতীত অন্য কোনভাবে জানতে পারিনি। নাযর ইবনি হাম্মাদ এবং সাইফ ইবনি উমার এই রাবীদ্বয় অপরিচিত। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৬১. অনুচ্ছেদঃ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কন্যা ফাতিমাহ্ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮৬৭. আল-মিসওয়ার ইবনি মাখরামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে মিম্বারের উপর বলিতে শুনেছিঃ হিশাম ইবনিল মুগীরাহ্ গোত্রের লোকেরা আলী ইবনি আবী ত্বালিবের নিকট তাহাদের মেয়ে বিবাহ দেয়ার প্রসঙ্গে আমার নিকট সম্মতি চেয়েছে। কিন্তু আমি অনুমতি দিব না, অনুমতি দিব না, অনুমতি দিব না। তবে আলী ইবনি আবী ত্বালিব ইচ্ছা করলে আমার কন্যাকে ত্বালাক দিয়ে তাহাদের মেয়ে বিবাহ করিতে পারে। ফাতিমাহ্ হচ্ছে আমার শরীরের অংশ। তার কাছে যা খারাপ লাগে আমার নিকটও তা খারাপ লাগে, যা তার জন্য কষ্টদায়ক, তা আমার জন্যও কষ্টদায়ক।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৯৯৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। লাইসের হাদীসের অনুরূপ হাদীস আম্‌র ইবনি দীনার, ইবনি আবী মুলাইকাহ্ হইতে, তিনি মিসওয়ার ইবনি মাখরামাহ্ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৬৮. বুরাইদা [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ নারীদের মধ্যে ফাতিমা [রাদি.] আর পুরুষদের মধ্যে আলী [রাদি.] ছিলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট সবচাইতে প্রিয়। ইবরাহীম [রঃ] বলেন, অর্থাৎ তাহাঁর পরিবারস্থ লোকদের মধ্যে।

মুনকার, নাকদুল কাত্তানী [২৯], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই হাদীসটি জেনেছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার

৩৮৬৯. আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আলী [রাদি.] আবু জাহলের কন্যাকে বিয়ে করার আলোচনা করেন। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তা শুনে বললেনঃ প্রকৃতপক্ষে ফাতিমাহ্ আমার শরীরের একটি অংশ। যা তাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়, যা তাকে ক্লান্ত করে তা আমাকেও ক্লান্ত করে।

সহীহঃ ইরওয়া [৮/২৯৪] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ রকমই বলেছেন আইউব-ইবনি আবী মুলাইকাহ্ হইতে, তিনি ইবনিয্ যুবাইর [রাদি.] হইতে। একাধিক বর্ণনাকারী ইবনি আবী মুলাইকাহ্ হইতে, তিনি মিসওয়ার ইবনি মাখরামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সম্ভবত ইবনি আবী মুলাইকাহ্ তাহাদের উভয়ের [ইবনিয যুবাইর ও মিসওয়ার] সনদে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৭০. যাইদ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন [রাদি.]-কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ তোমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে আমিও তাহাদের বিপক্ষে লড়াই করব এবং তোমরা যাদের সাথে শান্তি স্থাপন করিবে আমিও তাহাদের সাথে শান্তি স্থাপন করবো।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪৫] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আলোচ্য সূত্রেই জেনেছি। উম্মু সালামা [রাদি.]-এর মুক্তদাস সুবাইহ তেমন সুপরিচিত লোক নন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৭১. উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হাসান, হুসাইন, আলী ও ফাতিমাহ্ [রাদি.]-কে একখানা চাদরে ঢেকে বললেনঃ

 اللَّهُمَّ هَؤُلاَءِ أَهْلُ بَيْتِي وَخَاصَّتِي أَذْهِبْ عَنْهُمُ الرِّجْسَ وَطَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا ‏

“হে আল্লাহ! এরা আমার পরিবার-পরিজন এবং আমার একান্ত আপনজন। সুতরাং তাহাদের হইতে তুমি অপবিত্রতা দূরে সরিয়ে দাও এবং তাহাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর”। উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমিও কি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি মঙ্গলের কাছে আছ।

সহীহঃ পূর্বে বর্ণিত [৩২০৫] নং হাদীসের সহায়তায়। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং এ অনুচ্ছেদে বর্ণিত সব হাদীসের মাঝে এটাই সবচেয়ে ভাল। এ অনুচ্ছেদে উমার ইবনি আবী সালামাহ্, আনাস ইবনি মালিক, আবুল হামরা, মাকিল ইবনি ইয়াসার ও আয়েশা [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৭২. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর উঠা-বসা, আচার-অভ্যাস ও চালচলনের সাথে তাহাঁর কন্যা ফাতিমাহ্ [রাদি.]-এর অপেক্ষা বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ আমি আর কাউকে দেখিনি। আয়েশা [রাদি.] আরও বলেন, ফাতিমাহ্ [রাদি.] যখনই নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট আসতেন তিনি তখনই তার নিকট উঠে যেতেন, তাকে চুমু দিতেন এবং নিজের স্থানে বসাতেন। আর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তার ঘরে গেলে তিনিও নিজের জায়গা হইতে উঠে তাঁকে [পিতাকে] চুমা দিতেন এবং নিজের জায়গায় বসাতেন। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [মৃত্যুশয্যায়] অসুস্থ হয়ে পড়লে তাহাঁর নিকট এসে ফাতিমাহ্ [রাদি.] নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুখের উপর ঝুঁকে পড়েন এবং তাঁকে চুমু দেন, তারপর মাথা তুলে কাঁদেন। আবার তিনি তাহাঁর মুখের উপর ঝুঁকে পড়েন, তারপর মাথা তুলে হাসেন। আমি [আয়েশা] বললাম, আমি অবশ্যই জানি যে, তিনি নিশ্চয়ই আমাদের নারীদের মাঝে সর্বাধিক বুদ্ধিমতী, কিন্তু [তার হাসি দেখে ভাবলাম] অন্যান্য নারীর মত সে একজন নারীই। তারপর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ইন্তিকাল করলে তাকে আমি প্রশ্ন করলাম, কি ব্যাপার! আপনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুখের উপর ঝুঁকে পড়লেন, তারপর মাথা তুলে কাঁদলেন, আবার ঝুঁকে পড়লেন, তারপর মাথা তুলে হাসলেন। আপনি কি কারণে এরূপ করিলেন? ফাতিমাহ্ [রাদি.] বলিলেন, তাহাঁর জীবদ্দশায় আমি কথাটি গোপন রেখেছি [কারণ তিনি গোপন কথা প্রকাশ করা সঙ্গত মনে করিতেন না]। আমাকে তিনি জানান যে, এই অসুখেই তিনি ইন্তিকাল করবেন, তাই আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি আমাকে জানান যে, তাহাঁর পরিবারস্থ লোকদের মাঝে সবার পূর্বে আমিই তাহাঁর সঙ্গে একত্রিত হব। তাই আমি হেসেছি।

সহীহঃ নাক্বদুল কিত্তানী [৪৪-৪৫], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উক্ত সনদে গারীব। হাদীসটি একাধিক সূত্রে আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে।সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৭৩. উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মক্কা বিজয়ের বছর রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ফাতিমাকে ডেকে তার সাথে চুপিসারে কিছু কথা বলেন। এতে ফাতিমা কেঁদে ফেলেন। তারপর তিনি কিছু কথা বললে ফাতিমা হাসেন। উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর ইন্তিকালের পরে আমি ফাতিমাকে তার হাসি-কান্নার কারণ প্রশ্ন করি। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে অবহিত করেন যে, অচিরেই তিনি মৃত্যুবরণ করবেন, তাই আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, মারইয়াম বিনতু ইমরান ব্যতীত আমি জান্নাতের নারীদের নেত্রী হব, তাই আমি হেসেছি।

সহীহঃ মিশকাত [৬১৮৪], সহীহাহ্ [২/৪৩৯] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপর্যুক্ত সূত্রে গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৭৪. জুমায়্যি ইবনি উমাইর আত-তাইমী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার ফুফুর সাথে আইশা [রাদি.]-এর নিকট গেলাম। তখন তাকে প্রশ্ন করা হল, কোন লোকটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বলেন, ফাতিমা [রাদি.]। আবার প্রশ্ন করা হল, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বলিলেন, তাহাঁর স্বামী এবং তিনি ছিলেন বেশি পরিমাণে রোযা পালনকারী এবং বেশি পরিমাণে [রাতে] নামাজ আদায়কারী।

মুনকার, নাকদুল কাত্তানী [২০ পৃঃ] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবুল জাহ্‌হাফের নাম দাউদ ইবনি আবী আউফ। সুফিয়ান সাওরী আবুল জাহ্‌হাফের নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি সন্তষজনক ব্যক্তি ছিলেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার

৬২. অনুচ্ছেদঃ খাদীজাহ্ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮৭৫. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, খাদীজাহ্ [রাদি.]-এর প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হত, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর অন্য কোন সহধর্মিণীর প্রতি আমি ততটা ঈর্ষা পোষণ করতাম না। অথচ আমি তার দেখাও পাইনি। তা এজন্য যে, প্রায়ই রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তার কথা মনে করিতেন। আর তিনি বকরী যবাহ করলে খাদীজাহ্ [রাদি.]-এর বান্ধবীদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে তাহাদের জন্য গোশত উপহার পাঠাতেন।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৯৯৭], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৭৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, খাদীজাহ্ [রাদি.]-এর প্রতি আমি যতটা ঈর্ষা পোষণ করতাম অপর কোন নারীর প্রতি আমি ততটা ঈর্ষা পোষণ করিনি। অথচ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] খাদীজার মৃত্যুবরণের পরই আমাকে বিয়ে করিয়াছেন। আর ঈর্ষার কারণ এই ছিল যে, তিনি তার [খাদীজার] জন্য জান্নাতে এমন একটা মনি-মুক্তা খচিত সুরম্য প্রাসাদের সুখবর দিয়েছেন যাতে না আছে কোন হৈ-হুল্লোড় আর না আছে কোন কষ্টক্লেশ।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। মিন কাসাবিন অর্থ-মুক্তার ইট পাথর। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৭৭. আলী ইবনি আবী ত্বালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ খাদীজাহ্‌ বিনতু খুয়াইলিদ হলেন এই উম্মাতের নারীদের মাঝে শ্রেষ্ঠা। আর মারইয়াম বিনতু ইমরান ছিলেন [তৎকালীন উম্মাতের] নারীদের মাঝে শ্রেষ্ঠা।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আনাস, ইবনি আব্বাস ও আয়িশাহ্‌ [রাদি.] কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৭৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেনঃ সারা বিশ্বের নারীদের মধ্যে মারিয়াম বিনতু ইমরান, খাদীজাহ্‌ বিনতু খুয়াইলিদ, ফাতিমাহ্‌ বিনতু মুহাম্মাদ এবং ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়াহ্‌ তোমার জন্য যথেষ্ট।

সহীহ মিশকাত [৬১৮১] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩. অনুচ্ছেদঃ আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮৭৯. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা তাহাদের উপটৌকন প্রদানের জন্য আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-এর পালার দিনের অপেক্ষায় থাকত [যে দিন রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তার নিকট থাকেন]। আয়িশাহ্‌ [রাদি.] বলেন, আমার সতীনেরা উন্মু সালামাহ্ [রাদি.]-এর কাছে মিলিত হয়ে বলেন, হে উম্মু সালামাহ্‌! লোকেরা তাহাদের উপটৌকন আয়িশাহ্‌র পালার দিনে পেশ করার অপেক্ষায় থাকে। অথচ আমাদেরও কল্যাণ লাভের আকাংখা আছে, যেমন আয়িশাহ্‌র আছে। সুতরাং রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আপনি বলুন, তিনি যেন লোকদের বলেন যে, তিনি যেখানেই থাকুন তারা যেন তাহাদের উপটৌকন সেখানে পাঠিয়ে দেয়। উন্মু সালামাহ্‌ [রাদি.] বিষয়টি জানালে তিনি কোন ভ্রুক্ষেপ করিলেন না। তিনি পুনরায় আগমন করার পর উম্মু সালামাহ্ বিষয়টি উত্থাপন করে বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার সতীনেরা আলোচনা করেছে যে, লোকেরা তাহাদের উপটৌকন আয়িশাহ্‌র জন্য নির্দিষ্ট দিনে আপনার নিকট পাঠিয়ে থাকে। সুতরাং আপনি তাহাদেরকে হুকুম করুন যে, আপনি যেখানেই থাকুন তারা যেন তাহাদের উপটৌকন পাঠাতে থাকে। তিনি প্রসঙ্গটি তৃতীয়বার বললে তিনি বললেনঃ হে উম্মু সালামাহ্‌! তুমি আয়িশাহ্‌র বিষয়ে আমাকে ব্যথিত করো না। কেননা আয়িশাহ্‌ ছাড়া তোমাদের মাঝে অপর কারো লেপের নীচে থাকা অবস্থায় আমার নিকট ওয়াহী আসেনি।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস কেউ কেউ হাম্মাদ ইবনি যাইদ হইতে, তিনি হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌ হইতে, তিনি তাহাঁর পিতা হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে মুরসালরূপে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। এ হাদীস হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌ হইতে, তিনি আওফ ইবনি হারিস হইতে তিনি রুমাইসাহ্‌ হইতে, তিনি উন্মু সালামাহ্‌ [রাদি.] হইতে এই সনদে আংশিক বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌ হইতে বর্ণিত হয়েছে এবং তাতে বিভিন্নরূপ মতপার্থক্য আছে। সুলাইমান ইবনি বিলাল [রঃ] হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌ হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে, এই সূত্রে হাম্মাদ ইবনি যাইদের হাদীসের একই রকম রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

জিবরীল [আঃ] একখানা সবুজ রংয়ের রেশমী কাপড়ে তার [আয়িশাহ্‌র] প্রতিচ্ছবি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে নিয়ে এসে বলেন, ইনি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার স্ত্রী।

সহীহঃ বুখারী [৫১২৫, ৭০১১, ৭০১২], মুসলিম [৭/১৩৪], অনুরূপ আখিরাত শব্দ ব্যতীত। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনি আলক্বামার রিওয়ায়াত ছাড়া অপর কোনভাবে আমরা হাদীসটি প্রসঙ্গে জানি না। আবদুর রহমান ইবনি মাহ্‌দী এ হাদীস আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনি আলক্বামাহ্‌ হইতে উক্ত সনদে মুরসালরূপে রিওয়ায়াত করিয়াছেন এবং তাতে আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-এর উল্লেখ করেননি। আবু উসামাহ্‌-হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌ হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে উক্ত হাদীসের আংশিক রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮১. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ হে আয়িশাহ্‌! এই যে জিবরীল [আঃ], তোমাকে সালাম বলেছেন। আমি বললাম, তার প্রতিও সালাম, আল্লাহ তাআলার রাহমাত ও কল্যাণ বর্ষিত হোক। যা আপনি দেখেন আমরা তা দেখিতে পাই না।

সহীহঃ যঈফাহ্‌ [৫৪৩৩] নং হাদীসের অধীনে, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮২. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে বললেনঃ জিবরীল [আঃ] তোমাকে সালাম বলেছেন। আমি বললাম, তার উপরও শান্তি ও আল্লাহ তাআলার রহমাত বর্ষিত হোক ।

সহীহঃ ২৬৯৩ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮৩. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদের রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাহাবীদের- নিকট কোন হাদীসের অর্থ বুঝা কষ্টসাধ্য হলে আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-কে প্রশ্ন করে তার নিকট এর সঠিক জ্ঞাত লাভ করেছি।

সহীহঃ মিশকাত [৬১৮৫]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮৪. মূসা ইবনি ত্বালহা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-এর তুলনায় বেশি বিশুদ্ধভাষী আমি আর কাউকে দেখিনি।

সহীহঃ মিশকাত [৬১৮৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮৫. আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে যাতুস সালাসিল যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন। আম্‌র [রাদি.] বলেন, আমি তাহাঁর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনার নিকট কোন লোক সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বলিলেন, “আয়িশাহ্‌। আমি বললাম, পুরুষদের মাঝে কে? তিনি বললেনঃ তার বাবা।

সহীহঃ আত-তালীক আলা আল-ইহসান [৪৫২৩], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮৬. আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিলেন, আপনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় কোন ব্যক্তি? তিনি বললেনঃ আয়িশাহ্‌। তিনি আবার প্রশ্ন করিলেন, পুরুষদের মাঝে কে? তিনি বললেনঃ তার পিতা।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসন এবং ইসমাঈল-ক্বাইস হইতে এই সনদে বর্ণিত হাদীস হিসেবে গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ যাবতীয় খাদ্যের উপর যেরূপ সারীদের [শোরবাতে ভেজানো রুটি] মর্যাদা, সকল স্ত্রীলোকের উপর তেমন আয়িশাহ্‌র মর্যাদা।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩২৮১], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্‌ ও আবু মূসা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি মামার হলেন আবু তুওয়ালা আল-আনসারী, মাদীনার অধিবাসী এবং নির্ভরশীল বর্ণনকারী। মালিক ইবনি আনাস তার নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮৮. আমর ইবনি গালিব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

এক লোক আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.]-এর নিকটে বসে আইশা [রাদি.] প্রসঙ্গে কিছু বিরূপ মন্তব্য করলে আম্মার [রাদি.] বলেনঃ দূর হও পাপিষ্ঠ এখান থেকে! তুমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর প্রিয়তমাকে কষ্ট দিচ্ছ!

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৮৯. আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [আয়িশাহ্‌] নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর স্ত্রী দুনিয়াতে এবং আখিরাতেও।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ অনুরূপ, দেখুন হাদীস নং [৩৮৮০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আলী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৯০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! লোকের মাঝে কে আপনার সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বলিলেন, আয়িশাহ্‌। পুনরায় প্রশ্ন করা হল, পুরুষদের মাঝে কে? তিনি বললেনঃ তার পিতা।

সহীহঃ তালীক আলা আল-ইহসান। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং আনাস [রাদি.]-এর বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সনদে গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর স্ত্রীগণের মর্যাদা

৩৮৯১. ইকরিমাহ্‌ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে ফাজ্‌র নামাযের পর বলা হল যে, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর অমুক স্ত্রী মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাজদাহ্‌য় পড়ে গেলেন। তাকে বলা হল, আপনি এ সময় সাজদাহ্‌ করিলেন? তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কি বলেননিঃ তোমরা যখন কোন নিদর্শন দেখ, সে সময় সাজদাহ্‌ কর? অতএব নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর স্ত্রীদের দুনিয়া হইতে বিদায়ের চেয়ে বড় নিদর্শন আর কি আছে?

হাসানঃ সহীহ আবু দাউদ [১০৮১], মিশকাত [১৪৯১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপর্যুক্ত সনদসূত্রে হাদীসটি অবগত হয়েছি। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৮৯২. সাফিয়্যা বিনতু হুয়াই [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট এলেন, হাফসা ও আইশা [রাদি.] হইতে আমার সম্পর্কে কিছু কথা আমার নিকট পৌঁছুল। ঐ বিষয়টি আমি তাহাঁর নিকট উল্লেখ করলাম, তিনি বললেনঃ তুমি একথা কেন বললেনা যে, তোমরা আমার চেয়ে কিভাবে উত্তম হইতে পার? বাস্তব অবস্থা হল, আমার স্বামী মুহাম্মাদ, পিতা হারুন আর চাচা হল মূসা আলাইহিস সালাম সাফিয়্যার নিকট পৌঁছেছিল তা এই যে, তারা বলেছিল আমরা তাহাঁর চেয়ে সম্মানিত, কেননা আমরা রাসূল [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আবার তাহাঁর চাচাত বোন।

সনদ দুর্বল, দেখুন আর রাদ্দু আলাল হাবাশী, হাদীস নং ৩৩৮৫, পৃঃ [৩৫-৩৮], এ অনুচ্ছেদে আনার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র হাশিম আল কূফীর সুত্রেই সুফিয়্যা [রাদি.]-এর হাদীসটি জেনেছি। এর সনদ সুত্র মজবুত নয়। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৯৩. উন্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মাক্কা বিজয়ের বছর রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ফাতিমাহ্‌কে ডেকে তার সাথে গোপনে কিছু কথা বলিলেন। এতে ফাতিমাহ্‌ কেঁদে ফেললেন। তারপর তিনি কিছু কথা বললে ফাতিমাহ্‌ হাসলেন। উম্মু সালামাহ [রাদি.] বলেন, আমি ফাতিমাকে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর ইনতিকালের পরে তার হাসি-কান্নার কারণ জানতে চাই। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে জানান যে, খুব তাড়াতাড়ি তিনি মৃত্যুবরণ করবেন, তাই আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি আমাকে জানান যে, মারইয়াম বিনতু ইমরান ছাড়া জান্নাতের নারীদের নেত্রী হব, তাই আমি হেসেছি।

সহীহঃ ৩৮৭৩ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপর্যুক্ত সনদে গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৯৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাফিয়্যাহ্‌ [রাদি.]-এর কানে পৌঁছে যে, হাফসাহ্‌ [রাদি.] তাকে ইয়াহূদীর মেয়ে বলে ঠাট্টা করিয়াছেন। তাই তিনি কাঁদছিলেন। তার ক্ৰন্দনরত অবস্থায় নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তার ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি বললেনঃ তোমাকে কিসে কাঁদাচ্ছে? তিনি বলিলেন, হাফসাহ্‌ আমাকে ইয়াহূদীর মেয়ে বলে তিরস্কার করিয়াছেন। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ অবশ্যই তুমি একজন নাবীর কন্যা, তোমার চাচা অবশ্যই একজন নাবী এবং তুমি একজন নাবীর সহধর্মিণী। অতএব কিভাবে হাফসাহ্‌ তোমার উপরে অহংকার করিতে পারে? তারপর তিনি বললেনঃ হে হাফসাহ্‌! আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর।

সহীহঃ মিশকাত [৬১৮৩]। আবু ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৯৫. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে সে-ই ভাল যে তার পরিবারের নিকট ভাল। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের চাইতে উত্তম। আর তোমাদের কোন সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ করো।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [২৮৫]। আবু ঈসা বলেন, সাওরীর হাদীস হিসেবে এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। খুব কম সংখ্যক লোকই এটি সাওরী হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌-তার পিতা হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সনদে মুরসালরূপেও বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৯৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্উদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার সাহাবীগনের কেউ যেন তাহাদের অপরজনের কোন খারাপ কথা আমার নিকট না পৌছায়। যেহেতু আমি তাহাদের সাথে পরিষ্কার ও উদার মন নিয়েই দেখা করিতে ভালবাসি। আব্দুল্লাহ্‌ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে কিছু সম্পদ আসলে তিনি [জনতার মধ্যে] তা বিতরণ করেন। আমি একই সাথে বসে থাকা দুই ব্যক্তির নিকট গেলাম, তারা বলছিল, আল্লাহ্‌র শপথ! মুহাম্মাদ এই যে বিলি-বণ্টন করিলেন তা আল্লাহ্‌ তাআলার তুষ্টি লাভের ইচ্ছাই তাহাঁর ছিল না এবং পরকালের বাসস্থান [জান্নাত] অর্জনেরও নয়। কথাটি শুনে আমি মনে রাখলাম এবং ফিরে এসে তাঁকে জানালাম। এতে তাহাঁর মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো এবং তিনি বললেনঃ তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। মূসা [আঃ]-কে এর চেয়েও বেশি যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরেছেন।

আবু ঈসা বলেনঃ উপরোক্ত সুত্রে এ হাদীসটি গারীব। এর সনদে এক ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৮৯৭. মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাইল হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ-উবাইদুল্লাহ ইবনি মূসা হইতে, তিনি হুসাইন ইবনি মুহাম্মাদ হইতে, তিনি ইসরাইল হইতে, তিনি সুদ্দী হইতে, তিনি ওয়ালীদ ইবনি আবু হিশাম হইতে, তিনি যাইদ ইবনি যাইদা হইতে, তিনি ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেছেনঃ কেউ যেন তাহাদের অপরজনের খারাপ কথা আমার নিকট না পৌছায়।

যঈফ, মিশকাত [৪৮৫২]। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬৫. অনুচ্ছেদঃ উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর মর্যাদা

৩৮৯৮. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমাকে হুকুম করিয়াছেন যে, আমি যেন তোমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাই। তিনি তাকে  لمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا “লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূ” সূরাটি পাঠ করে শুনান। তাতে তিনি এও পাঠ করেন যে, আল্লাহ তাআলার কাছে আত্মসমর্পণের একনিষ্ঠ ভাবধারাপূর্ণ দীনই গ্রহণযোগ্য, ইয়াহূদীবাদ, খৃষ্টবাদ বা মাজূসীবাদ [অগ্নি উপাসনা] নয়। কেউ সৎকর্ম করলে তা কখনো প্রত্যাখান করা হইবে না [প্রতিদান দেয়া হইবে]। তারপর তিনি তাকে আরো তিলাওয়াত করে শুনানঃ কোন আদম সন্তান এক উপত্যকাপূর্ণ সম্পদের অধিকারী হয়ে গেলে সে তাহাঁর কাছে দ্বিতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদের আকাঙ্ক্ষা করিবে। তার দ্বিতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদ হয়ে গেলে সে তাহাঁর নিকট তৃতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদ লাভের আকাঙ্ক্ষা করিবে। ইবনি আদমের উদর মাটি ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে ভর্তি হইবে না। কেউ তাওবাহ্ করলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবাহ্ ক্ববূল করেন।

হাসানঃ তাখরীজুল মুশকিলাহ্ [১৪], সহীহাহ্ [২৯০৮] । লাও আন্না ……… শেষ পর্যন্ত সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা [রঃ] বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। অন্যসূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আবযা [রঃ] তার বাবা হইতে, তিনি উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে রিওয়ায়াত করিয়াছেন যে, তিনি উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-কে বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমাকে হুকুম দিয়েছেন যেন আমি তোমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাই।” কাত্বাদাহ্ [রঃ] আনাস [রাদি.] হইতে রিওয়ায়াত করেন যে, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উবাই [রাদি.]-কে বললেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আমি তোমাকে কুরআন তিলাওয়াত করে শুনাই”। সাহাবীদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

Comments

Leave a Reply