সাহাবীদের গুরুত্ব মর্যাদা ঘটনা ফাযীলাত ও আলোচনা
সাহাবীদের গুরুত্ব মর্যাদা ঘটনা ফাযীলাত ও আলোচনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৩, আনসারগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ (১২-২৪)=১৩টি
৬৩/১২. অধ্যায়ঃ সাদ ইবনু মুআয (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৬৩/১৩. অধ্যায়ঃ উসায়দ ইবনু হুযায়র ও আব্বাদ ইবনু বিশ্র (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৬৩/১৪. অধ্যায়ঃ মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৬৩/১৫. অধ্যায়ঃ সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৬৩/১৬. অধ্যায়ঃ উবাই ইবনু কাব (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৬৩/১৭. অধ্যায়ঃ যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৬৩/১৮. অধ্যায়ঃ আবু ত্বলহা (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৬৩/১৯. অধ্যায়ঃ আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৬৩/২০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর সাথে খাদীজাহ (রাদি.) – এর বিবাহ এবং তাহাঁর ফাযীলাত।
৬৩/২১. অধ্যায়ঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাদি.) – এর উল্লেখ।
৬৩/২২. অধ্যায়ঃ হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান আবসী (রাদি.) – এর উল্লেখ।
৬৩/২৩. অধ্যায়ঃ উতবাহ ইবনু রাবীআহর কন্যা হিন্দ (রাদি.) – এর আলোচনা।
৬৩/২৪. অধ্যায়ঃ যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাদি.) – এর ঘটনা।
৬৩/১২. অধ্যায়ঃ সাদ ইবনু মুআয (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৩৮০২
বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) – কে এক জোড়া রেশমী কাপড় হাদীয়া দেয়া হল। সহাবায়ে কেরাম (রাদি.) তা স্পর্শ করে এর কোমলতায় অবাক হয়ে গেলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এর কোমলতায় তোমরা অবাক হচ্ছ? অথচ সাদ ইবনু মুআয (রাদি.)- এর (জান্নাতের) রুমাল এর চেয়ে অনেক উত্তম, অথবা বলেছেন অনেক মোলায়েম। হাদীসটি ক্বাতাদাহ ও যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫২০, ইঃফাঃ ৩৫২৭)
৩৮০৩
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
জাবির (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনিয়াছি সাদ ইবনু মুআয (রাদি.) – এর মৃত্যুতে আল্লাহ তাআলার আরশ কেঁপে উঠেছিল। আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)……নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ রকমই বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি জাবির (রাদি.) – কে বলিল, বারা ইবনু আযিব (রাদি.) তো বলেন, জানাযার খাট নড়েছিল। তদুত্তরে জাবির (রাদি.) বলিলেন, সাদ ও বারা (রাদি.) – এর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল, কেননা আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে “আল্লাহর আর্শ সাদ ইবনু মুআযের (ওফাতে) কেঁপে উঠল” (কথাটি) বলিতে শুনিয়াছি।
৩৮০৪
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কতিপয় লোক (বনী কুরায়যার ইয়াহূদীগণ) সাদ ইবনু মুআয (রাদি.) – কে সালিশ মেনে (দুর্গ থেকে) নেমে আসে। তাঁকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠানো হল। তিনি গাধায় সাওয়ার হয়ে আসলেন। যখন মসজিদের নিকটে আসলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি অথবা (বলিলেন) তোমাদের সরদার আসছেন তাহাঁর দিকে দাঁড়াও। তারপর তিনি বলিলেন, হে সাদ! তারা তোমাকে সালিশ মেনে বেরিয়ে এসেছে। সাদ (রাদি.) বলিলেন, আমি তাদের সম্পর্কে এ ফয়সালা দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হোক এবং শিশু ও মহিলাদেরকে বন্দী করে রাখা হোক। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি আল্লাহ তাআলার ফায়সালা মোতাবেক ফায়সালা দিয়েছ অথবা (বলেছিলেন) তুমি বাদশাহর অর্থাৎ আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা করেছ।
(আঃপ্রঃ ৩৫২২, ইঃফাঃ ৩৫২৯)
৬৩/১৩. অধ্যায়ঃ উসায়দ ইবনু হুযায়র ও আব্বাদ ইবনু বিশ্র (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৩৮০৫
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
দু ব্যক্তি অন্ধকার রাতে নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট হইতে বের হলেন। হঠাৎ তারা তাদের সম্মুখে একটি উজ্জ্বল আলো দেখিতে পেলেন। রাস্তায় তাঁরা যখন আলাদা হলেন তখন আলোটিও তাঁদের উভয়ের সাথে আলাদা আলাদা হয়ে গেল। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাবিত এর মাধ্যমে আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, এদের একজন উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাদি.) এবং অন্যজন এক আনসারী ব্যক্তি ছিলেন এবং হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাবিত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- এর মাধ্যমে আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, উসায়দ (ইবনু হুযায়র) ও আব্বাদ ইবনু বিশ্র (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট ছিলেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫২৩, ইঃফাঃ ৩৫৩০)
৬৩/১৪. অধ্যায়ঃ মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৩৮০৬
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি যে, কুরআন পাঠ শিখ চার জনের নিকট হতেঃ ইবনু মাসউদ, আবু হুযাইফার আযাদকৃত গোলাম সালিম, উবাই (ইবনু কাব) ও মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.) থেকে।
(আঃপ্রঃ ৩৫২৪, ইঃফাঃ ৩৫৩১)
৬৩/১৫. অধ্যায়ঃ সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) – এর মর্যাদা।
আয়েশা (রাদি.) বলেন, তিনি এর পূর্বে নেক লোক ছিলেন।
৩৮০৭
আবু উসাইদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আনসার গোত্রগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গোত্র হল, বানু নাজ্জার, তারপর বানু আবদ-ই-আশহাল, তারপর বানু হারিস ইবনু খাযরাজ তারপর বানু সায়িদাহ। আনসারদের সব গোত্রের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। তখন সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) যিনি ছিলেন প্রথম যুগের অন্যতম মুসলমান বলিলেন, আমার ধারণা যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) অন্যদেরকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন, তাঁকে বলা হল, আপনাদেরকে বহু গোত্রের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে।
(আঃপ্রঃ ৩৫২৫, ইঃফাঃ ৩৫৩২)
৬৩/১৬. অধ্যায়ঃ উবাই ইবনু কাব (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৩৮০৮
মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) – এর মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) – এর আলোচনা হচ্ছিল। তখন তিনি বলিলেন; তিনি সে ব্যক্তি যাঁকে নাবী (সাঃআঃ)- এর বক্তব্য শুনার পর হইতে আমি খুব ভালবাসি। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কুরআন শিক্ষা কর চারজনের নিকট থেকে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (সর্ব প্রথম তিনি এ নামটি বলিলেন), সালিম- আবু হুযাইফার আযাদকৃত গোলাম, মুআয ইবনু জাবাল ও উবাই ইবনু কাব (রাদি.)।
(আঃপ্রঃ ৩৫২৬, ইঃফাঃ ৩৫৩৩)
৩৮০৯
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) উবাই ইবনু কাব (রাদি.) – কে বলিলেন, আল্লাহ “সুরা لَمْ يَكُنِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ ” তোমাকে পড়ে শুনানোর জন্য আমাকে আদেশ করিয়াছেন। উবাই ইবনু কাব (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন আল্লাহ কি আমার নাম করিয়াছেন? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হাঁ। তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। (৪৯৫৯, ৪৯৬০, ৪৯৬১, মুসলিম ৬/৩৯, হাদীস নং ৭৯৯, আহমাদ ২১১৯৪
(আঃপ্রঃ ৩৫২৭, ইঃফাঃ ৩৫৩৪)
৬৩/১৭. অধ্যায়ঃ যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৩৮১০
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) – এর যুগে (সর্বপ্রথম) যে চার ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআন হিফয করেছিলেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন আনসারী। (তাঁরা হলেন) উবাই ইবনু কাব (রাদি.), মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.), আবু যায়দ (রাদি.) ও যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.)। কাতাদাহ (রাদি.) বলেন, আমি আনাস (রাদি.) – কে জিজ্ঞেস করলাম, আবু যায়দ কে? তিনি বলিলেন, তিনি আমার চাচাদের একজন।
(আঃপ্রঃ ৩৫২৮, ইঃফাঃ ৩৫৩৫)
৬৩/১৮. অধ্যায়ঃ আবু ত্বলহা (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৩৮১১
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ওহুদ যুদ্ধের এক সময়ে সহাবাগণ নাবী (সাঃআঃ) হইতে আলাদা হয়ে পড়েছিলেন। তখন আবু ত্বলহা (রাদি.) ঢাল হাতে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) – এর সামনে প্রাচীরের মত দৃঢ় হয়ে দাঁড়ালেন। আবু ত্বলহা (রাদি.) সুদক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন। এক নাগাড়ে তীর ছুঁড়তে থাকায় তাহাঁর হাতে ঐদিন দু বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে যায়। ঐ সময় তীর ভর্তি তীরাধার নিয়ে যে কেউ তাহাঁর নিকট দিয়ে যেতো নাবী (সাঃআঃ) তাকেই বলিতেন, তোমরা তীরগুলি আবু ত্বলহার জন্য রেখে দাও। এক সময় নাবী (সাঃআঃ) মাথা উঁচু করে শত্রুদের অবস্থা দেখিতে চাইলে আবু ত্বলহা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! আমার মাতা পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি মাথা উঁচু করবেন না। হয়ত শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে আপনার গায়ে লাগতে পারে। আমার বক্ষ আপনাকে রক্ষার জন্য ঢাল স্বরূপ। আনাস (রাদি.) বলেন, ঐদিন আমি আবু বকর (রাদি.) – এর কন্যা আয়েশা (রাদি.) – কে এবং (আমার মাতা) উম্মে সুলায়মকে দেখিতে পেলাম যে, তাঁরা পরনের কাপড় এতটুকু পরিমাণ উঠিয়েছেন যে, তাঁদের পায়ের খাঁড়ু আমি দেখিতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা পানির মশক ভরে নিজেদের পিঠে বহন করে এনে আহতদের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। পুনরায় ফিরে গিয়ে পানি ভরে নিয়ে আহতদেরকে পান করাচ্ছিলেন। ঐ সময় আবু ত্বলহা (রাদি.) – এর হাত হইতে (তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে) তাহাঁর তরবারিটি দুবার অথবা তিনবার পড়ে গিয়েছিল।
(আঃপ্রঃ ৩৫২৯, ইঃফাঃ ৩৫৩৬)
৬৩/১৯. অধ্যায়ঃ আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) – এর মর্যাদা।
৩৮১২
সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) ছাড়া যমীনে বিচরণশীল কারো ব্যাপারে এ কথাটি বলিতে শুনিনি যে, “নিশ্চয়ই তিনি জান্নাতবাসী। সাদ (রাদি.) বলেন, তাহাঁরই ব্যাপারে সুরা আহকাফের এ আয়াত নাযিল হয়েছেঃ “এ ব্যাপারে বনী ইসরাঈলের মধ্য থেকেও একজন সাক্ষ্য দান করেছে। (উক্ত হাদীসের শুরুতে উল্লেখিত সানাদে ইমাম বুখারীর উস্তাজ) আবদুল্লাহ বিন ইউসুফ (সন্দেহ পোষণ করে) বলেন যে, বর্ণনাকারী মালিক উল্লেখিত আয়াতটি নিজের তরফ হইতে এখানে বৃদ্ধি করে বলেছেন নাকি এ হাদীসের সানাদের সাথেই সম্পৃক্ত তা জানি না।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩০, ইঃফাঃ ৩৫৩৭)
৩৮১৩
কায়স ইবনু উবাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি মদীনার মসজিদে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন এমন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করিলেন যার চেহারায় বিনয় ও নম্রতার ছাপ ছিল। লোকজন বলিতে লাগলেন, এই ব্যক্তি জান্নাতীগণের একজন। তিনি হালকাভাবে দুরাকআত সলাত আদায় করে মসজিদ হইতে বেরিয়ে এলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করছিলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল যে, ইনি জান্নাতবাসীগণের একজন। তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম কারো জন্য এমন বলা উচিত নয়, যা সে জানে না। আমি তোমাকে আসল কথা বলছি কেন তা বলা হয়। আমি নাবী (সাঃআঃ) – এর যামানায় একটি স্বপ্ন দেখে তাহাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। আমি দেখলাম যে, আমি যেন একটি বাগানে অবস্থান করছি; বাগানটি বেশ প্রশস্ত, সবুজ। বাগানের মধ্যে একটি লোহার স্তম্ভ যার নিম্নভাগ মাটিতে এবং উপরিভাগ আকাশ স্পর্শ করেছে; স্তম্ভের উপরে একটি শক্ত কড়া সংযুক্ত রয়েছে। আমাকে বলা হল, উপরে উঠ। আমি বললাম, এটাতো আমার সামর্থ্যের বাইরে। তখন একজন খাদিম এসে পিছন দিক হইতে আমার কাপড় সহ চেপে ধরে আমাকে উঠাতে সাহায্য করিলেন। আমি উঠতে লাগলাম এবং উপরে গিয়ে আংটাটি ধরলাম। তখন আমাকে বলা হল, শক্তভাবে আংটাটি ধর। তারপর কড়াটি আমার হাতের মুঠায় ধরা অবস্থায় আমি জেগে গেলাম। নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট স্বপ্নটি বললে, তিনি বলিলেন, এ বাগান হল ইসলাম, আর স্তম্ভটি হল ইসলামের খুঁটিসমূহ, কড়াটি হল “উরুয়াতুল উস্কা” (শক্ত ও অটুট কড়া) এবং তুমি আজীবন ইসলামের উপর অটল থাকবে। (রাবী বলেন) এই ব্যক্তি হলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাদি.)। খলীফা (র.) مَنْصِفٌ–এর স্থলে وَصِيْفٌ বলেছেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩১, ইঃফাঃ ৩৫৩৮)
৩৮১৪
আবু বুরদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আবু বুরদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি মদীনায় গেলাম; আবদুল্লাহ ইবনু সালামের সাথে আমার দেখা হল। তিনি আমাকে বলিলেন, তুমি আমাদের এখানে আসবে না? তোমাকে আমি খেজুর ও ছাতু খেতে দিব এবং একটি ঘরে থাকতে দেব। অতঃপর তিনি বলিলেন, তুমি এমন স্থানে (ইরাকে) বসবাস কর, যেখানে সুদের কারবার খুব ব্যাপক। যখন কোন মানুষের নিকট তোমার কোন প্রাপ্য থাকে আর সেই মানুষটি যদি তোমাকে কিছু ঘাস, খড় অথবা খড়ের ন্যায় সামান্য কিছুও হাদীয়া পেশ করে তার কাছ থেকে তা গ্রহন কর না, যেহেতু তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। নায্র (রাদি.), আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও ওয়াহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে بَيْتُ শব্দটি বর্ণনা করেন নি।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩২, ইঃফাঃ ৩৫৩৯)
৬৩/২০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর সাথে খাদীজাহ (রাদি.) – এর বিবাহ এবং তাহাঁর ফাযীলাত।
৩৮১৫
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, মারিয়াম (আঃ) ছিলেন (পূর্বের) নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতমা নারী। আর খাদীজাহ (রাদি.) (এ উম্মাতের) নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠা।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩৩, ইঃফাঃ ৩৫৪০)
৩৮১৬
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – এর কোন স্ত্রীর প্রতি এতটুকু ঈর্ষা করিনি যতটুকু খাদীজাহ (রাদি.) – এর প্রতি করেছি। কেননা, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে তাহাঁর কথা বারবার আলোচনা করিতে শুনিয়াছি, অথচ আমাকে বিবাহ করার আগেই তিনি ইন্তিকাল করেছিলেন। খাদীজাহ (রাদি.) – কে জান্নাতে মণি-মুক্তা খচিত একটি প্রাসাদের খোশ খবর দেয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা নাবী (সাঃআঃ) – কে আদেশ করেন। কোন দিন বকরী যবেহ হলে খাদীজাহ (রাদি.) – এর বান্ধবীদের নিকট তাদের প্রত্যেকের দরকার মত গোশত নাবী (সাঃআঃ) উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়ে দিতেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩৪, ইঃফাঃ ৩৫৪১)
৩৮১৭
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – এর অন্য কোন স্ত্রীর ব্যাপারে এত ঈর্ষা পোষণ করিনি, যতটুকু খাদীজাহ (রাদি.) – এর প্রতি করেছি। যেহেতু নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর আলোচনা বেশি করিতেন। তিনি (আরো) বলেন, খাদীজাহ (রাদি.) – এর (ইন্তিকালের) তিন বছর পর তিনি আমাকে বিবাহ করেন। আল্লাহ নিজে অথবা জিবরাঈল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ) – কে আদেশ করিলেন যে, খাদীজাহ (রাদি.) – কে জান্নাতে মণিমুক্তা খচিত একটি ভবনের খোশ খবর দিন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩৫, ইঃফাঃ ৩৫৪২)
৩৮১৮
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – এর অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি এতটুকু ঈর্ষা করিনি যতটুকু খাদীজাহ (রাদি.) – এর প্রতি করেছি। অথচ আমি তাঁকে দেখিনি। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কথা বেশি সময় আলোচনা করিতেন। কোন কোন সময় বকরী যবেহ করে গোশতে্র পরিমাণ বিবেচনায় হাড়-গোশতকে ছোট ছোট টুকরো করে হলেও খাদীজাহ (রাদি.) – এর বান্ধবীদের ঘরে পৌঁছে দিতেন। আমি কোন সময় ঈর্ষা ভরে নাবী (সাঃআঃ) – কে বলতাম, মনে হয় খাদীজাহ (রাদি.) ছাড়া দুনিয়াতে যেন আর কোন নারী নাই। উত্তরে তিনি (সাঃআঃ) বলিতেন, হাঁ। তিনি এমন ছিলেন, এমন ছিলেন, তাহাঁর গর্ভে আমার সন্তানাদি জন্মেছিল।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩৬, ইঃফাঃ ৩৫৪৩)
৩৮১৯
ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবু আউফা (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) খাদীজাহ (রাদি.) – কে জান্নাতের খোশ খবর দিয়েছিলেন কি? তিনি বলিলেন, হাঁ। এমন একটি ভবনের খোশ খবর দিয়েছিলেন, যে ভবনটি তৈরী করা হয়েছে এমন মোতি দ্বারা যার ভিতরদেশ ফাঁকা। আর সেখানে থাকবে না শোরগোল, কোন প্রকার ক্লেশ ও দুঃখ।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩৭, ইঃফাঃ ৩৫৪৪)
৩৮২০
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, জিবরাঈল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট হাযির হয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! ঐ যে খাদীজাহ (রাদি.) একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাদ্যদ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌঁছে যাবেন তখন তাঁকে তাহাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হইতে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি ভবনের খোশ খবর দিবেন যার অভ্যন্তর ভাগ ফাঁকা-মোতি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার শোরগোল; কোন প্রকার দুঃখ-ক্লেশ।
(আঃপ্রঃ ৩৫৩৮, ইঃফাঃ ৩৫৪৫ প্রথমাংশ)
৩৮২১
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ খাদীজাহর বোন হালা বিনতে খুয়াইলিদ (একদিন) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য অনুমতি চাইলেন। (দুবোনের গলার স্বর ও অনুমতি চাওয়ার ভঙ্গি একই রকম ছিল বলে) নাবী (সাঃআঃ) খাদীজাহর অনুমতি চাওয়ার কথা মনে করে হতচকিত হয়ে পড়েন। তারপর (প্রকৃতিস্থ হয়ে) তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! এতো দেখছি হালা! আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ এতে আমার ভারী ঈর্ষা হলো। আমি বললাম, কুরাইশদের বুড়ীদের মধ্য থেকে এমন এক বুড়ীর কথা আপনি আলোচনা করেন যার দাঁতের মাড়ির লাল বর্ণটাই শুধু বাকি রয়ে গিয়েছিল, যে শেষ হয়ে গেছে কতকাল আগে। তার পরিবর্তে আল্লাহ তো আপনাকে তার চাইতেও উত্তম স্ত্রী দান করিয়াছেন। [১]
(আঃপ্রঃ ৩৫৩৯, ইঃফাঃ নাই)
[১] আয়েশা (রাদি.) – এর এ কথার জবাবে নাবী (সাঃআঃ) কী বলেছেন তার উল্লেখ বুখারীতে নেই। তবে হাদীস সংকলন আহমাদ ও তাবারানী এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ এতে নাবী (সাঃআঃ) ক্রুদ্ধ হন। অবশেষে আমি বললামঃ যিনি আপনাকে সত্যের বাহকরূপে পাঠিয়েছেন তাহাঁর কসম, ভবিষ্যতে আমি তাহাঁর (খাদীজাহর) সম্পর্কে উত্তম মন্তব্য ছাড়া অন্য কোনরূপ মন্তব্য করবো না।
৬৩/২১. অধ্যায়ঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাদি.) – এর উল্লেখ।
৩৮২২
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর গৃহে প্রবেশ করিতে কোনদিন আমাকে বাধা প্রদান করেননি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন, মুচকি হাসি দিয়েছেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪০ প্রথমাংশ, ইঃফাঃ ৩৫৪৬ প্রথমাংশ)
৩৮২৩
জারীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
জারীর (রাদি.) আরো বলেন, জাহিলী যুগে যুল-খালাসা নামে একটি ঘর ছিল। যাকে কাবায়ে ইয়ামানী ও কাবায়ে শামী বলা হত। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, তুমি কি যুল-খালাসার ব্যাপারে আমাকে শান্তি দিতে পার? জারীর (রাদি.) বলেন, আমি আহমাস গোত্রের একশ পঞ্চাশ জন ঘোড়-সওয়ার সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলাম এবং (প্রতীমা ঘরটি) বিধ্বস্ত করে দিলাম। সেখানে যাদেরকে পেলাম হত্যা করলাম। এসে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে খবর জানালাম। তিনি আমাদের জন্য এবং আহমাস গোত্রের জন্য দুআ করিলেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪০ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩৫৪৬ শেষাংশ)
৬৩/২২. অধ্যায়ঃ হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান আবসী (রাদি.) – এর উল্লেখ।
৩৮২৪
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ওহুদ যুদ্ধে মুশরিকগণ যখন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে পড়লো, তখন ইবলীস চীৎকার করে (মুসলমানগণকে) বলিল, হে আল্লাহর বান্দাগণ! পিছনের দিকে লক্ষ্য কর। তখন অগ্রগামী দল পিছন দিকে ফিরে গেল (শত্রুদল মনে করে) নিজদলের উপর আক্রমণ করে বসল এবং একে অন্যকে হত্যা করিতে লাগল। এমন সময় হুযাইফাহ (রাদি.) পিছনের দলে তাহাঁর পিতাকে দেখিতে পেয়ে চীৎকার করে বলিতে লাগলেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ! এই যে আমার পিতা, এই যে আমার পিতা। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আল্লাহর শপথ, কিন্তু তারা কেউই বিরত হয়নি। অবশেষে তাঁকে হত্যা করে ফেলল। হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। (অধস্তন রাবী হিশাম বলেন) আমার পিতা উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আল্লাহর কসম, এ কথার কারণে হুযাইফাহ (রাদি.) – এর মধ্যে তাহাঁর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কল্যাণের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪১, ইঃফাঃ ৩৫৪৭)
৬৩/২৩. অধ্যায়ঃ উতবাহ ইবনু রাবীআহর কন্যা হিন্দ (রাদি.) – এর আলোচনা।
৩৮২৫
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উতবাহর মেয়ে হিন্দ (রাদি.) এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! এক সময় আমার মনের অবস্থা পৃথিবীর বুকে কোন পরিবারের লাঞ্ছিত হইতে দেখা আমার নিকট আপনার পরিবারের অপমানিত দেখার চেয়ে অধিক কাঙ্ক্ষিত ছিল না। কিন্তু এখন আমার অবস্থা এমন হয়েছে যে দুনিয়ার বুকে কোন পরিবারের সম্মানিত হইতে দেখা আমার নিকট আপনার পরিবারের সম্মানিত দেখার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তিনি বলিলেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। তারপর সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আবু সুফইয়ান (রাদি.) একজন কৃপণ ব্যক্তি। যদি তার মাল আমি ছেলে-মেয়েদের জন্য ব্যয় করি তবে তাতে কি আমার কিছু হইবে? তিনি বলিলেন, না, যদি যথাযথ ব্যয় করা হয়।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪২, ইঃফাঃ ২১৩৩ পরিচ্ছেদ)
৬৩/২৪. অধ্যায়ঃ যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাদি.) – এর ঘটনা।
৩৮২৬
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, ওয়াহী নাযিল হওয়ার পূর্বে একবার নাবী (সাঃআঃ) মক্কার নিম্ন অঞ্চলের বালদাহ নামক জায়গায় যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়লের সাথে সাক্ষাৎ করিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) – এর সামনে খাদ্য পূর্ণ একটি খানচা পেশ করা হল। তিনি তা হইতে কিছু খেতে অস্বীকার করিলেন। এরপর যায়দ (রাদি.) বলিলেন, আমিও ঐ সব জন্তুর গোশ্ত খাই না যা তোমরা তোমাদের দেব-দেবীর নামে যবেহ কর। আল্লাহর নামে যবেহকৃত ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা জন্তুর গোশ্ত আমি কিছুতেই খাই না। যায়দ ইবনু আমর কুরাইশের যবেহকৃত জন্তু সম্পর্কে তাদের উপর দোষারোপ করিতেন এবং বলিতেন; বকরীকে সৃষ্টি করিলেন আল্লাহ, তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করিলেন। ভূমি হইতে উৎপন্ন করিলেন তৃণ-লতা অথচ তোমরা আল্লাহ তাআলার সমূহদান অস্বীকার করে প্রতিমার প্রতি সম্মান করে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করছ। (আঃপ্রঃ ৩৫৪৩ প্রথমাংশ, ইঃফাঃ ৩৫৪৮ প্রথমাংশ)
৩৮২৭
আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
মূসা (সনদসহ) বলেন, সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। মূসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার জানা মতে তিনি ইবনু উমার (রাদি.) হইতে এ ঘটনাটি বর্ণনা করিয়াছেন যে, যায়দ ইবনু আমর সঠিক তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত দ্বীনের খোঁজে সিরিয়ায় যান। সে সময় একজন ইয়াহূদী আলেমের সাথে তাহাঁর সাক্ষাৎ হল। তিনি তার নিকট তাদের দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন এবং বলিলেন, হয়ত আমি তোমাদের দ্বীনের অনুসারী হব, আমাকে সে সম্পর্কে জানাও। তিনি বলিলেন, তুমি আমাদের দ্বীন গ্রহন করিবে না। গ্রহণ করলে যতখানি গ্রহণ করিবে সে পরিমাণ আল্লাহর গযব তোমার উপর পতিত হইবে। যায়দ বলিলেন, আমি তো আল্লাহর গযব হইতে পালিয়ে আসছি। আমি যথাসাধ্য আল্লাহর সামান্য পরিমাণ গযবও বহন করব না। আর আমার কি তা বহনের শক্তি-সামার্থ্য আছে? তুমি কি আমাকে এছাড়া অন্য কোন পথের দিশা দিতে পার? সে বলিল, আমি তা জানি না, তবে তুমি দীনে হানীফ কবুল করে নাও। যায়দ জিজ্ঞেস করিলেন (দ্বীনে) হানীফ কী? সে বলিল, তা হল ইবরাহীম (আঃ) – এর দীন। তিনি ইয়াহূদীও ছিলেন না, নাসারাও ছিলেন না। তিনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করিতেন না। তখন যায়দ বের হলেন এবং তাহাঁর সাথে একজন খ্রিস্টান আলিমের সাক্ষাত হল। ইয়াহূদী আলিমের নিকট ইতিপূর্বে তিনি যা যা বলেছিলেন তার কাছেও তা বলিলেন। তিনি বলিলেন, তুমি আমাদের দ্বীন গ্রহণ করিবে না। গ্রহণ করলে যত পরিমাণ গ্রহণ করিবে তত পরিমাণ আল্লাহর লানত তোমার উপর পতিত হইবে। যায়দ বলিলেন, আমি তো আল্লাহর লানত হইতে পালিয়ে আসছি। আর আমি যথাসাধ্য সামান্য আল্লাহর লানতও বহন করব না। আমি কি তা বহনের শক্তি রাখি? তুমি কি আমাকে এছাড়া অন্য কোন পথের দিশা দেবে? সে বলিল, আমি অন্য কিছু জানি না। শুধু এতটুকু বলিতে পারি যে, তুমি দীনে হানীফ গ্রহণ কর। তিনি বলিলেন, হানীফ কী? উত্তরে তিনি বলিলেন, তা হল ইবরাহীম (আঃ) – এর দীন, তিনি ইয়াহূদীও ছিলেন না এবং খ্রিস্টানও ছিলেন না এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করিতেন না। যায়দ যখন ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে তাদের মন্তব্য জানতে পারলেন, তখন তিনি বেরিয়ে পড়ে দুহাত তুলে বলিলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি দ্বীনে ইবরাহীম (আঃ) – এর উপর আছি।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪৩ মধ্যমাংশ, ইঃফাঃ ৩৫৪৮ মধ্যমাংশ)
৩৮২৮
লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন হিশাম তাহাঁর পিতা সূত্রে তিনি আসমা বিনত আবু বকর (রাদি.) হইতে বর্ণনা করিতে গিয়ে আমার কাছে লিখছেন যে, তিনি (আসমা) বলেন, আমি দেখলাম যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল কাবা শরীফের দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বলছেন, হে কুরাইশ গোত্র, আল্লাহর কসম, আমি ব্যতীত তোমাদের কেউ-ই দ্বীনে ইবরাহীমের উপর নেই। আর তিনি যেসব কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়ার জন্য নেয়া হত তাদেরকে তিনি বাঁচাবার ব্যবস্থা করিতেন। যখন কোন লোক তার কন্যা সন্তানকে হত্যা করার জন্য ইচ্ছা করত, তখন তিনি এসে বলিতেন, হত্যা করো না, আমি তার জীবিকার ব্যয়ভার গ্রহণ করবো। এ বলে তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতেন। শিশুটি বড় হলে তার পিতাকে বলিতেন, তুমি যদি তোমার কন্যাকে নিয়ে যেতে চাও তাহলে আমি দিয়ে দেব। আর তুমি যদি নিতে না চাও, তবে আমিই এর সকল ব্যয় ভার বহন করে যাব।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪৩, ইঃফাঃ ৩৫৪৮ শেষাংশ)
Leave a Reply