সাহাবীগণের ফযীলত ও মুহাজিরগণের গুণাবলী

সাহাবীগণের ফযীলত ও মুহাজিরগণের গুণাবলী

সাহাবীগণের ফযীলত ও মুহাজিরগণের গুণাবলী >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬২, সাহাবিগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ (১-২)=২টি

৬২/১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণের ফযীলত। [১]
৬২/২. অধ্যায়ঃ মুহাজিরগণের গুণাবলী ও ফযীলত।

৬২/১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণের ফযীলত। [১]

মুসলিমদের মধ্য হইতে যিনি নাবী (সাঃআঃ)–এর সঙ্গ লাভ করিয়াছেন অথবা তাঁকে (সাঃআঃ) যিনি দেখেছেন তিনি তাহাঁর সাহাবী।

৩৬৪৯

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, লোকেদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের জন্য বের হইবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সাহচর্য লাভ করিয়াছেন? তাঁরা বলবেন, হাঁ আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হইবে। অতঃপর জনগণের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য লাভ করিয়াছেন? তখন তারা বলবেন, হাঁ আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হইবে। অতঃপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করিবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি আল্লাহর রাসুল(সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণের সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য প্রাপ্ত হয়েছেন? বলা হইবে আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হইবে।

(আঃপ্রঃ ৩৩৭৭, ইঃফাঃ ৩৩৮৪)

* সহাবায়ি কিরাম [রাযিয়াল্লাহু আনহুম] এর মর্যাদা বিষয়কঃ

এখান থেকে কয়েক পৃষ্ঠা পরেই নাবী (সাঃআঃ)-এর সম্মানিত সহাবীদের মান-মর্যাদা বিষয়ক আলোচনা শুরু হইতে যাচ্ছে। যাতে নাবী (সাঃআঃ)-এর কয়েকজন বিশিষ্ট সহাবী ও সমগ্র সহাবায়ে কেরামদের মর্যাদা, তাঁদের প্রতি সাধারণ মুমিন মুসলমানদের ভক্তি-শ্রদ্ধা, মর্যাদাবোধ ইত্যাদি বিষয়ে একান্ত আবশ্যিক আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নাবী (সাঃআঃ)-এর সমগ্র সহাবীগণই সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার হকদার। সমগ্র সহাবীদের মধ্যে ৪ খলীফা মর্যাদা পাওয়ার দিক দিয়ে অন্যান্য সহাবীদের চেয়ে বেশী হকদার এ কথা প্রত্যেক বিবেকবান লোক স্বীকার করিতে একান্ত বাধ্য। উক্ত সার্বজনীন স্বীকৃত ইসলামী শরীয়াতের রীতি-নীতি প্রাথমিক যুগের মুসলিম মনীষীগণ যেমন শ্রদ্ধা ভরে মেনে নিয়েছিলেন, তেমনি পরবর্তী যুগের ইসলামী মনীষীগণও উপরোক্ত বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে আসছেন। রাসুল (সাঃআঃ)-এর সহাবীগণ সকলেই দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন ইনসাফকারী। যেমন নাবী (সাঃআঃ) প্রত্যেক সহাবীদেরকেই ইনসাফকারী বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। যথা নবাী (সাঃআঃ) ইরশাদ করিয়াছেন عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين الهمديين وكلهم عدول متفق عليه

তোমাদের উপর আমার রেখে যাওয়া সুন্নাহ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শনকারী খলীফাগণের সুন্নাত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং উক্ত খলীফাগণের প্রত্যেকেই ইনসাফকারী। অন্যত্র আছে, যার সানাদও সহীহ বটে, আর তা এই যে, আমার সব সহাবীই ইনসাফকারী। ইমাম বুখারীর বর্ণনায় উক্ত সহীহ বুখারীর মধ্যেই كتاب فضائل الصحابة নামক অধ্যায়ের ৩৬৬৫ নং হাদীসে নাবী (সাঃআঃ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, তোমরা (পরবর্তীকালে) আমার সহাবীদেরকে গালি-গালাজ করো না।

عن أبي سعيد الخدري (رض) قال قال النبي صلى الله عليه وسلم لا تسبوا أصحابي

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর বিশ্বখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম ইবনু হাজার আস্কালানী বলেছেন, যারা নাবী (সাঃআঃ)-কে নিজ চোখে দেখেনি, নাবী (সাঃআঃ)-এর নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য যাদের হয়নি, এমন সকলের জন্যেই উপরোক্ত নিষেধবাণী প্রযোজ্য হইবে। (ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা)

প্রকাশ থাকে যে, পরবর্তীকালে খারিজী, রাফিজী, মুতাজিলা, জায়েদিয়া, আশারিয়া, ইসমাঈলিয়া তথা শিয়া মাযহাবের লোকজন নিজেদের ভ্রান্ত-ধারণার বশবর্তী হয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর সহাবীদের বিরুদ্ধে অনেক অনেক অপবাদ দেয়ার মতো ধৃষ্টতা ও অপরাধপূর্ণ সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে মুসলিম জাতিকে পারস্পরিক বিভেদ ও বিচ্ছেদের প্ররোচনা দিয়েছে। যা প্রতিটি বিবেকবান মুসলমানের নিকট অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বটে।

শারঈয়তের বিধিবিধানকে সস্পষ্ট করার জন্য এবং সঠিকভাবে মান্য করার জন্য সাহাবীগণ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াকে তার উপর বহাল থাকতে হইবে। যেমন কুরআন একত্রিকরণ, খালীফাহ নির্ধারণ, উসমান < কর্তৃক তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজারের মধ্যে জুমুআহর দিন দ্বিতীয় আযান চালু করা। (বর্তমানে মাইকের আযান দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত বিধায় এখন এ আযান নিষ্প্রয়োজন।

বুখারী كتاب فضائل الصحابة পর্বে সহীহ সানাদে হাদীসসমূহে আছে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ ) একজন স্বীয় ঘরে অবস্থান করছিলেন, এমন সময় আবু মূসা আল আশআরী বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ )-কে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আবু বাকর অনুমতি চায় (প্রবেশের জন্য)। নাবী (সাঃআঃ ) বলিলেন, তাঁকে অনুমতি দেয়া হলো এবং তাঁকে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে দাও। অতঃপর উমার অনুমতি চাইলে তাঁকেও এমনই বলে সুসংবাদ দেয়া হলো। (বুখারী হাদীস ৩৬৭৩, বিস্তারিত বাখ্যা- ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা)

এভাবেই ৪ খলীফাহ সহ জলীলুল ক্বদর কয়েকজন সহাবী সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল বিভিন্ন সময় অনেক সুসংবাদ জাতীয় ভবিষদ্বাণী করিয়াছেন আল্লাহর আদেশক্রমে। এ জাতীয় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সহাবীদের সংখ্যা ১০ জন।

এতদ্ব্যতীত অন্যান্য সহাবীদের ব্যাপারেও নাবী (সাঃআঃ ) স্বীয় পবিত্র মুখে চমৎকার মন্তব্য করে তাদেরকে বিশ্ববাসীর নিকট সম্মানিত করিয়াছেন। সুতরাং সহাবীদের ব্যাপারে মন্তব্য করিতে সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যক। অতীব পরিতাপের ও দুঃখের বিষয় এই যে, শিয়া মাযহাবের লোকজন ইসলামের উক্ত সম্মানিত ১ম থেকে ৩য় খলীফা দেরকে জবরদস্তিমূলক খিলাফত দখলকারী, অন্যায়কারী, অত্যাচারী পর্যন্ত বলার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। পক্ষান্তরে আলী এর প্রতি অতিরিক্ত মর্যাদা দিতে গিয়ে তারা তাঁকে পায় নবুয়্যাতের কাছাকাছি বা সম মর্যাদায় নিয়ে গেছে। আর কেউ কেউ শিয়াদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে গিয়ে মহামতি ইমাম হুসাইন কে গদীলোভী, অযথা রাষ্ট্রীয় শৃংখলা বিনষ্টকারী হিসেবে আখ্যায়িত করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। ইমাম হাসান, হুসাইন আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত, আর আহলে বাইতদের প্রতি মুহাব্বাত রাখার নির্দেশ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনেও তাদের পবিত্রতা এভাবে ঘোষিত হয়েছে

(إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْراً) (الأحزاب: من الآية৩৩)

সবশেষে সহাবীদের ব্যাপারে সমীহ ভাবপ্রদর্শন ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব।

ফাযীলাত।১

১ সহাবায়ি কিরাম [রাযিয়াল্লাহু আনহুম] এর মর্যাদা বিষয়ক ঃ

এখান থেকে কয়েক পৃষ্ঠা পরেই নাবী (সাঃআঃ )-এর সম্মানিত সহাবীদের মান-মর্যাদা বিষয়ক আলোচনা শুরু হইতে যাচ্ছে। যাতে নাবী (সাঃআঃ )-এর কয়েকজন বিশিষ্ট সহাবী ও সমগ্র সহাবায়ে কেরামদের মর্যাদা, তাঁদের প্রতি সাধারণ মুমিন মুসলমানদের ভক্তি-শ্রদ্ধা, মর্যাদাবোধ ইত্যাদি বিষয়ে একান্ত আবশ্যিক আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নাবী (সাঃআঃ )-এর সমগ্র সহাবীগণই সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার হকদার। সমগ্র সহাবীদের মধ্যে ৪ খলীফা মর্যাদা পাওয়ার দিক দিয়ে অন্যান্য সহাবীদের চেয়ে বেশী হকদার এ কথা প্রত্যেক বিবেকবান লোক স্বীকার করিতে একান্ত বাধ্য। উক্ত সার্বজনীন স্বীকৃত ইসলামী শরীয়াতের রীতি-নীতি প্রাথমিক যুগের মুসলিম মনীষীগণ যেমন শ্রদ্ধা ভরে মেনে নিয়েছিলেন, তেমনি পরবর্তী যুগের ইসলামী মনীষীগণও উপরোক্ত বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে আসছেন। রাসুল (সাঃআঃ )-এর সহাবীগণ সকলেই দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন ইনসাফকারী। যেমন নাবী (সাঃআঃ ) প্রত্যেক সহাবীদেরকেই ইনসাফকারী বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। যথা নবাী (সাঃআঃ ) ইরশাদ করিয়াছেন ঃ عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين الهمديين وكلهم عدول متفق عليه

তোমাদের উপর আমার রেখে যাওয়া সুন্নাহ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শনকারী খলীফাগণের সুন্নাত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং উক্ত খলীফাগণের প্রত্যেকেই ইনসাফকারী। অন্যত্র আছে, যার সানাদও সহীহ বটে, আর তা এই যে, আমার সব সহাবীই ইনসাফকারী। ইমাম বুখারীর বর্ণনায় উক্ত সহীহ বুখারীর মধ্যেই كتاب فضائل الصحابة নামক অধ্যায়ের ৩৬৬৫ নং হাদীসে নাবী (সাঃআঃ ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, তোমরা (পরবর্তীকালে) আমার সহাবীদেরকে গালি-গালাজ করো না।

عن أبي سعيد الخدري (رض) قال قال النبي صلى الله عليه وسلم لا تسبوا أصحابي

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর বিশ্বখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম ইবনু হাজার আস্কালানী বলেছেন, যারা নাবী (সাঃআঃ )-কে নিজ চোখে দেখেনি, নাবী (সাঃআঃ )-এর নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য যাদের হয়নি, এমন সকলের জন্যেই উপরোক্ত নিষেধবাণী প্রযোজ্য হইবে। (ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা)

প্রকাশ থাকে যে, পরবর্তীকালে খারিজী, রাফিজী, মুতাজিলা, জায়েদিয়া, আশারিয়া, ইসমাঈলিয়া তথা শিয়া মাযহাবের লোকজন নিজেদের ভ্রান্ত-ধারণার বশবর্তী হয়ে নাবী (সাঃআঃ )-এর সহাবীদের বিরুদ্ধে অনেক অনেক অপবাদ দেয়ার মতো ধৃষ্টতা ও অপরাধপূর্ণ সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে মুসলিম জাতিকে পারস্পরিক বিভেদ ও বিচ্ছেদের প্ররোচনা দিয়েছে। যা প্রতিটি বিবেকবান মুসলমানের নিকট অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিতও বটে।

শারঈয়তের বিধিবিধানকে সস্পষ্ট করার জন্য এবং সঠিকভাবে মান্য করার জন্য সাহাবীগণ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াকে তার উপর বহাল থাকতে হইবে। যেমন কুরআন একত্রিকরণ, খালীফাহ নির্ধারণ, উসমান (রাদি.) কর্তৃক তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজারের মধ্যে জুমুআহর দিন দ্বিতীয় আযান চালু করা। (বর্তমানে মাইকের আযান দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত বিধায় এখন এ আযান নিষ্প্রয়োজন।

বুখারী كتاب فضائل الصحابة পর্বে সহীহ সানাদে হাদীসসমূহে আছে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ ) একজন স্বীয় ঘরে অবস্থান করছিলেন, এমন সময় আবু মূসা আল আশআরী বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ )-কে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আবু বাকর অনুমতি চায় (প্রবেশের জন্য)। নাবী (সাঃআঃ ) বলিলেন, তাঁকে অনুমতি দেয়া হলো এবং তাঁকে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে দাও। অতঃপর উমার < অনুমতি চাইলে তাঁকেও এমনই বলে সুসংবাদ দেয়া হলো। (বুখারী হাদীস ৩৬৭৩, বিস্তারিত বাখ্যা- ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা)

এভাবেই ৪ খলীফাহ সহ জলীলুল ক্বদর কয়েকজন সহাবী সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল বিভিন্ন সময় অনেক সুসংবাদ জাতীয় ভবিষদ্বাণী করিয়াছেন আল্লাহর আদেশক্রমে। এ জাতীয় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সহাবীদের সংখ্যা ১০ জন।

এতদ্ব্যতীত অন্যান্য সহাবীদের ব্যাপারেও নাবী (সাঃআঃ ) স্বীয় পবিত্র মুখে চমৎকার মন্তব্য করে তাদেরকে বিশ্ববাসীর নিকট সম্মানিত করিয়াছেন। সুতরাং সহাবীদের ব্যাপারে মন্তব্য করিতে সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যক। অতীব পরিতাপের ও দুঃখের বিষয় এই যে, শিয়া মাযহাবের লোকজন ইসলামের উক্ত সম্মানিত ১ম থেকে ৩য় খলীফাদেরকে জবরদস্তিমূলক খিলাফত দখলকারী, অন্যায়কারী, অত্যাচারী পর্যন্ত বলার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। পক্ষান্তরে আলী (রাদি.) এর প্রতি অতিরিক্ত মর্যাদা দিতে গিয়ে তারা তাঁকে পায় নবুয়্যাতের কাছাকাছি বা সম মর্যাদায় নিয়ে গেছে। আর কেউ কেউ শিয়াদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে গিয়ে মহামতি ইমাম হুসাইন <-কে গদীলোভী, অযথা রাষ্ট্রীয় শৃংখলা বিনষ্টকারী হিসেবে আখ্যায়িত করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। ইমাম হাসান, হুসাইন (রাদি.) আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত, আর আহলে বাইতদের প্রতি মুহাব্বাত রাখার নির্দেশ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনেও তাদের পবিত্রতা এভাবে ঘোষিত হয়েছে

(إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْراً) (الأحزاب: من الآية৩৩)

সবশেষে সহাবীদের ব্যাপারে সমীহ ভাবপ্রদর্শন ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব।

৩৬৫০

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমার উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ আমার যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। ইমরান (রাদি.) বলেন, তিনি তাহাঁর যুগের পর দুযুগ অথবা তিনি যুগ বলেছেন তা আমার স্মরণ নেই। অতঃপর এমন লোকের আগমন ঘটবে যারা সাক্ষ্য প্রদানে আগ্রহী হইবে অথচ তাদের নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হইবে না। বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে তাদেরকে কেউ বিশ্বাস করিবে না। তারা মানত করিবে কিন্তু তা পূরণ করিবে না। তারা হইবে চর্বিওয়ালা মোটাসোটা।

(আঃপ্রঃ ৩৩৭৮, ইঃফাঃ ৩৩৮৫)

৩৬৫১

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমার উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ (সাহাবীগণ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর এমন লোকদের আগমন হইবে যাদের কেউ সাক্ষ্য দানের পূর্বে কসম এবং কসমের পূর্বে সাক্ষ্য দান করিবে। ইব্রাহীম (নাখ্‌য়ী; রাবী) বলেন, ছোট বেলায় আমাদের মুরুব্বীগণ আল্লাহর নামে কসম করে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য এবং ওয়াদা-অঙ্গীকার করার কারণে আমাদেরকে মারধর করিতেন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৭৯, ইঃফাঃ ৩৩৮৬)

৬২/২. অধ্যায়ঃ মুহাজিরগণের গুণাবলী ও ফযীলত।

তাদের মধ্য হইতে আবু বক্‌র আবদুল্লাহ ইবনু আবু কুহাফা তায়মী (রাদি.)

মহান আল্লাহর বাণীঃ এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য . . . (আল-হাশর ৮) এবং মহান আল্লাহর বাণীঃ যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর তবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন। (আত্-তাওবাহ ৪০)

আয়েশা, আবু সাঈদ ও ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আবু বাক্‌র (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সাওর গুহায় ছিলেন।

৩৬৫২

বারাআ (ইবনু আযিব) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু বকর (রাদি.) আযিব (রাদি.) এর নিকট হইতে তের দিরহামের একটি হাওদা কিনলেন। আবু বকর (রাদি.) আযিবকে বলিলেন, তোমার ছেলে বারাকে হাওদাটি আমার নিকট পৌঁছে দিতে বল। আযিব (রাদি.) বলিলেন, আমি বারাকে বলব না যতক্ষণ আপনি আমাদেরকে সবিস্তারে বর্ণনা করে না শুনাবেন যে, আপনি ও নাবী (সাঃআঃ) কী করেছিলেন যখন আপনারা মক্কা হইতে বেরিয়ে পড়েছিলেন? আর মক্কার মুশরিকগণ আপনাদের পিছু ধাওয়া করেছিল।

আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আমরা মক্কা হইতে বেরিয়ে সারা রাত এবং পরের দিন দুপুর পর্যন্ত অবিরত চললাম। যখন ঠিক দুপুর হয়ে গেল, এবং উত্তাপ তীব্র হলো আমি চারদিকে চেয়ে দেখলাম কোথাও কোন ছায়া দেখা যায় কিনা, যেন আমরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারি। তখন একটি বড় আকারের পাথর চোখে পড়ল। এই পাথরটির পাশে কিছু ছায়াও আছে। আমি সেখানে আসলাম এবং ঐ ছায়াপূর্ণ জায়গাটি সমতল করে নাবী (সাঃআঃ)-এর জন্য বিছানা করে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন। তিনি শুয়ে পড়লেন। আমি চারদিকের অবস্থা দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম, আমাদের খোঁজে কেউ আসছে কিনা? ঐ সময় আমি দেখিতে পেলাম, একজন মেষ পালক তার ভেড়া ছাগল হাঁকিয়ে ঐ পাথরের দিকে আসছে। সেও আমাদের মত ছায়া খোঁজ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে যুবক! তুমি কার রাখাল? সে একজন কুরাঈশের নাম বলিল, আমি তাকে চিনতে পারলাম। আমি তাকে শুধালাম, তোমার বক্‌রীর পালে দুধেল বকরী আছে কি? সে বলিল, হাঁ আছে। আমি বললাম। তুমি কি আমাদেরকে দুধ দোহন করে দিবে? সে বলিল, হাঁ, দিব। আমি তাকে তা দিতে বললে তৎক্ষণাৎ সে বক্‌রীর পাল হইতে একটি বক্‌রী ধরে নিয়ে এল এবং পিছনের পা দুটি বেঁধে নিল। আমি তাকে বললাম, বকরীর স্তন দুটি ঝেড়ে মুছে ধূলাবালি হইতে পরিষ্কার করে নাও এবং তোমার হাত দুটি পরিষ্কার কর। তিনি এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে (পরিষ্কারের ধরণ) দেখালেন। অতঃপর সে আমাদেরকে পাত্র ভরে দুধ এনে দিল। আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর জন্য একটি চামড়ার পাত্র সঙ্গে রেখে ছিলাম যার মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা ছিল। আমি দুধে অল্প পানি মিশিয়ে দিলাম যেন দুধের নিম্নভাগও ঠান্ডা হয়ে যায়। অতঃপর আমি দুধ নিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে দেখলাম তিনি জেগেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি দুধ পান করুন। তিনি দুধ পান করিলেন। আমি খুশী হলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের রওয়ানা হওয়ার সময় হয়েছে কি? তিনি বলিলেন, হাঁ হয়েছে। আমরা রওয়ানা দিলাম। মক্কাবাসী মুশরিকরা আমাদের খোঁজে ছুটাছুটি করছে। কিন্তু সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জুশাম ছাড়া আমাদের সন্ধান তাদের অন্য কেউ পায়নি। সে ঘোড়ায় চড়ে আসছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! খোঁজকারী আমাদের দেখা পেয়ে গেল। তিনি বলিলেন, চিন্তা করো না, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮০, ইঃফাঃ ৩৩৮৭)

৩৬৫৩

আবু বাক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা যখন গুহায় আত্মগোপন করেছিলাম তখন আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বললাম, যদি কাফিররা তাদের পায়ের নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করে তবে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বলিলেন, হে আবু বাক্‌র, ঐ দুই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কী ধারণা আল্লাহ যাঁদের তৃতীয় জন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮১, ইঃফাঃ ৩৩৮৮)

Comments

Leave a Reply