সাহাবিদের মর্যাদা । সরাসরি হাদিস থেকে বর্ণিত

সাহাবিদের মর্যাদা । সরাসরি হাদিস থেকে বর্ণিত

সাহাবিদের মর্যাদা । সরাসরি হাদিস থেকে বর্ণিত , এই পর্বের হাদীস =(১৫৪০-১৬৫১) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৪৪ঃ সাহাবাগণের মর্যাদা

৪৪/১. আবু বকর আস্সিদ্দীক [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/২. উমার [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩. উসমান বিন আফ্ফান [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৪. আলী বিন আবু ত্বলিব [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৫. সাদ বিন আবু ওয়াক্‌কাস [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৬. ত্বলহা ও যুবায়র [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৭. আবু উবাইদাহ বিন জার্‌রাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৮. হাসান ও হুসাইন [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/১০. যায়দ বিন হারিসাহ ও উসামাহ বিন যায়দ [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/১১. আবদুল্লাহ বিন জাফার [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/১২. উম্মুল মুমিনীন খাদীজাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/১৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/১৪. উম্মু যারআ [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/১৫. ফাতিমা বিনতু নাবী [সাঃআঃ]-এর মর্যাদা।
৪৪/১৬. উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/১৭. উম্মুল মুমিনীন যাইনাব [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/১৯. আনাস বিন মালিক [রাদি.]-এর মাতা উম্মু সুলায়ম [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/২২. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদি.] ও তাহাঁর মায়ের মর্যাদা।
৪৪/২৩. উবাই বিন কাব ও একদল আনসার [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/২৪. সাদ বিন মুআয [রাদি.]-এর বর্ণনা।
৪৪/২৬. জাবির [রাদি.]-এর পিতা আবদুল্লাহ বিন আম্‌র বিন হারাম [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/২৮. আবু যার [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/২৯. জারীর বিন আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩০. আবদুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩১. আবদুল্লাহ বিন উমার [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩২. আনাস বিন মালিক [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩৩. আবদুল্লাহ বিন সালাম [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩৪. হাস্‌সান বিন সাবিত [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩৫. আবু হুরাইরাহ আদ্‌দাওসী [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩৬. বদর যুদ্ধের শহীদদের মর্যাদা এবং হাতিব বিন আবি বালতা [রাদি.]-এর কাহিনী।
৪৪/৩৮. আবু মূসা ও আবু আমির আল আশআরী [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৩৯. আল আশআরী [রাদি.]-দের মর্যাদা।
৪৪/৪১. জাফার বিন আবু ত্বলিব, আসমা বিনতু উমায়স এবং তাহাদের নৌকারোহীদের [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৪৩. আনসার [রাদি.]-এর মর্যাদা।
৪৪/৪৪. আনসার [রাদি.] পরিবারের মধ্যে সর্বোত্তম।
৪৪/৪৫. আনসারদের [রাদি.] সঙ্গ লাভে যে কল্যাণ লাভ করা যায়।
৪৪/৪৬. গিফার ও আসলাম গোত্রের জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর দুআ।
৪৪/৪৭. গিফার, আসলাম, জুহাইনাহ, আশযা, মুজাইনাহ, তামিম, দাওস ও তাঈ গোত্রগুলোর ফাযীলাত।
৪৪/৪৮. মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম।
৪৪/৪৯. কুরাইশ নারীদের ফাযীলাত।
৪৪/৫০. নাবী [সাঃআঃ] কর্তৃক তাহাঁর সাথীদের মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধন প্রতিষ্ঠা।
৪৪/৫২. নাবী [সাঃআঃ]-এর সহাবীদের মর্যাদা, অতঃপর তাহাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাহাদের পরবর্তীদের।
৪৪/৫৩. নাবী [সাঃআঃ]-এর উক্তিঃ আজ যারা বেঁচে আছে তাহাদের কেউই একশ বছর পর পৃথিবীর উপর জীবিত থাকিবে না।
৪৪/৫৪. নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবী [রাদি.]-দের গালি দেয়া নিষিদ্ধ।
৪৪/৫৫. পারস্যবাসীদের ফাযীলাত।
৪৪/৬০. নাবী [সাঃআঃ]-এর উক্তিঃ মানুষ উটের ন্যায়, একশটি উটের মধ্যে একটিও আরোহণের উপযোগী পাবে না।

৪৪/১. আবু বকর আস্সিদ্দীক [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৪০. আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা যখন গুহায় আত্মগোপন করেছিলাম তখন আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বললাম, যদি কাফিররা তাহাদের পায়ের নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করে তবে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বলিলেন, হে আবু বকর! ঐ দুই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কী ধারণা আল্লাহ্ যাঁদের তৃতীয় জন।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৩৬৫৩; মুসলিম ৪৪/১ হাদীস ২৩৮১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৪১. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] মিম্বরে বসলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ্ তার এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটি বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। তার একটি হল দুনিয়ার ভোগ-বিলাস আর একটি হল আল্লাহ্‌র নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহ্‌র কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করিলেন। একথা শুনে, আবু বকর [রাদি.] কেঁদে ফেললেন, এবং বলিলেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য কুরবানী করলাম। তাহাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলিতে লাগল, এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ, রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] এক বান্দা সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ্ ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তার কাছে যা রয়েছে, এ দুয়ের মধ্যে বেছে নিতে বলিলেন আর এ বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতাপিতা উৎসর্গ করলাম। রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-ই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবু বকর [রাদি.]-ই হলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি।

রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি তার সঙ্গ ও সম্পদ দিয়ে আমার প্রতি সবচেয়ে ইহসান করিয়াছেন তিনি হলেন আবু বকর [রাদি.] । যদি আমি আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে অন্তরঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবু বকরকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবু বকর [রাদি.] এর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকিবে না।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৩৯০৪; মুসলিম ৪৪/১, হাঃ নং ২৩৮২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৪২. আম্‌র ইবনি আস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে যাতুস্ সালাসিল যুদ্ধের সেনাপতি করে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাহাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলিলেন, আয়িশাহ্। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বলিলেন, তাহাঁর পিতা [আবু বকর]। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন্ লোকটি? তিনি বলিলেন, উমার ইবনি খাত্তাব অতঃপর আরো কয়েকজনের নাম করিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৬২; মুসলিম ৪৪/১, হাঃ ২৩৮৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৪৩. যুবায়র ইবনি মুতঈম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক নাবী [সাঃআঃ]-এ নিকট এল। তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বলিলেন। স্ত্রীলোকটি বলিল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কী করব? এ কথা দ্বারা স্ত্রীলোকটি নাবী [সাঃআঃ]-এর মৃত্যুর প্রতি ইশারা করেছিল। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, যদি আমাকে না পাও তাহলে আবু বকরের নিকট আসবে

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৫৯; মুসলিম ৪৪/১ হাঃ ২৩৮৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৪৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নাবী [সাঃআঃ] ফাজরের সালাত শেষে লোকজনের দিকে ঘুরে বসলেন এবং বলিলেন, একদা এক লোক একটি গরু হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সেটির পিঠে চড়ে বসলো এবং ওকে প্রহার করিতে লাগল। তখন গরুটি বলিল, আমাদেরকে এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি, আমাদেরকে চাষাবাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এতদশ্রবণে লোকজন বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ্! গরুও কথা বলে? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি এবং আবু বকর ও উমার তা বিশ্বাস করি। অথচ তখন তাঁরা উভয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আর এক রাখাল একদিন তার ছাগল পালের মাঝে অবস্থান করছিল, এমন সময় একটি চিতা বাঘ পালে ঢুকে একটি ছাগল নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের পিছনে ধাওয়া করে ছাগলটি উদ্ধার করে নিল। তখন বাঘটি বলিল, তুমি ছাগলটি আমার থেকে কেড়ে নিলে বটে, তবে ঐদিন কে ছাগলকে রক্ষা করিবে যেদিন হিংস্র জন্তু ওদের আক্রমণ করিবে এবং আমি ব্যতীত তাহাদের অন্য কোন রাখাল থাকিবে না। লোকেরা বলিল, সুবহানাল্লাহ! চিতা বাঘ কথা বলে! নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি এবং আবু বকর ও উমার তা বিশ্বাস করি অথচ তাঁরা উভয়েই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৩৪৭১; মুসলিম ৪৪/১ হাঃ ২৩৮৮] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/২. উমার [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৪৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাদি.]-এর লাশ খাটের উপর রাখা হল। খাটটি কাঁধে তোলে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দুআ পাঠ করছিল। আমিও তাহাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার স্কন্ধে হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি আলী। তিনি উমার [রাদি.]-এর জন্য আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতের দুআ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে উমার! আমার জন্য আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় এমন কোন ব্যক্তি আপনি রেখে যাননি, যাঁর কালের অনুসরণ করে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহ্‌র কসম। আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ্ আপনাকে আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সঙ্গে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি অনেকবার নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি, আবু বকর ও উমার গেলাম। আমি, আবু বকর ও উমার প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবু বকর ও উমার বাহির হলাম ইত্যাদি।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৬৮৫; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৮৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৪৬. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একবার আমি নিদ্রাবস্থায় [স্বপ্নে] দেখলাম যে, লোকদেরকে আমার সামনে আনা হচ্ছে। আর তাহাদের পরণে রয়েছে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত আর কারো জামা এর নীচ পর্যন্ত। আর উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-কে আমার সামনে আনা হল এমন অবস্থায় যে, তিনি তাহাঁর জামা [অধিক লম্বা হওয়ায়] টেনে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাহাবীগণ আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আপনি এর কী তাবীর করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ [এ জামা অর্থ] দীন।

[বোখারী পর্ব ২ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ২৩; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৪৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, একদা আমি নিদ্রাবস্থায় ছিলাম। তখন [স্বপ্নে] আমার নিকট এক পিয়ালা দুধ নিয়ে আসা হল। আমি তা পান করলাম। এমনকি আমার মনে হইতে লাগল যে, সে পরিতৃপ্তি আমার নখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর অবশিষ্টাংশ আমি উমার ইবনিল-খাত্তাবকে দিলাম। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আপনি এ স্বপ্নের কী ব্যাখ্যা করেন? তিনি জবাবে বললেনঃ তা হল আল-ইল্ম।

[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৮২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৪৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমি আমাকে এমন একটি কূপের কিনারায় দেখিতে পেলাম যেখানে বালতিও রয়েছে, আমি কূপ হইতে পানি উঠালাম যে পরিমাণ আল্লাহ্ ইচ্ছে করিলেন। অতঃপর বালতিটি ইবনি আবু কুহাফা নিলেন এবং এক বা দুবালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্ তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর উমার ইবনি খাত্তাব বালতিটি তার হাতে নিলেন। তার হাতে বালতিটির আয়তন বেড়ে গেল। পানি উঠানোতে আমি উমারের মত শক্তিশালী বাহাদুর ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। শেষে মানুষ নিজ নিজ আবাসে অবস্থান নিল।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৬৪; মুসলিম পর্ব ৪৪/২ হাঃ ২৩৯২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৪৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আমি স্বপ্নে দেখিতে পেলাম, একটি কুপের পাড়ে বড় বালতি দিয়ে পানি তুলছি। তখন আবু বকর[রাদি.] এসে এক বালতি বা দুবালতি পানি তুললেন। তবে পানি তোলার মধ্যে তাহাঁর দুর্বলতা ছিল, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। অতঃপর উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] এলেন। বালতিটি তাহাঁর হাতে গিয়ে বড় আকার ধারণ করিল। তাহাঁর মত এমন দৃঢ়ভাবে পানি উঠাতে আমি কোন তাকৎওয়ালাকেও দেখেনি। এমনকি লোকেরা তৃপ্তির সাথে পানি পান করে গৃহে বিশ্রাম নিল।

[বোখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৬৮২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করে একটি প্রাসাদ দেখিতে পেলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, এটি কার প্রাসাদ? তাঁরা [ফেরেশতাগণ] বলিলেন, এ প্রাসাদটি উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর। আমি তার মধ্যে প্রবেশ করিতে চাইলাম; কিন্তু {তিনি সেখানে উপস্থিত উমার [রাদি.]-এর উদ্দেশে বলিলেন} তোমার আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে সেখানে প্রবেশে বাধা দিল। এ কথা শুনে উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র নাবী [সাঃআঃ]! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনার ক্ষেত্রেও আমি [উমার] আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করব?

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৭ হাদীস নং ৫২২৬; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বলিলেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম। দেখলাম আমি জান্নাতে অবস্থিত। হঠাৎ দেখলাম এক নারী একটি দালানের পাশে উযু করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ দালানটি কার? তারা উত্তরে বলিলেন, উমারের। তখন তাহাঁর আত্মমর্যাদার কথা আমার স্মরণ হল। আমি পেছনের দিকে ফিরে চলে আসলাম। একথা শুনে উমার [রাদি.] কেঁদে ফেললেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আপনার সম্মুখে কি আমার কোন মর্যাদাবোধ থাকতে পারে?

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩২৪২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫২. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, একদা উমার[রাদি.] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাহাঁর সঙ্গে কয়েকজন কুরায়শ নারী কথাবার্তা বলছিল। তারা খুব উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছিল। অতঃপর যখন উমার[রাদি.] অনুমতি চাইলেন, তারা উঠে শীঘ্র পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাঁকে অনুমতি প্রদান করিলেন। তখন তিনি মুচকি হাসছিলেন। তখন উমার বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আল্লাহ আপনাকে সর্বদা সহাস্য রাখুন। তিনি বলিলেন, আমার নিকট যে সব মহিলা ছিল তাহাদের ব্যাপারে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। তারা যখনই তোমার আওয়াজ শুনল তখনই দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আপনাকেই তাহাদের বেশি ভয় করা উচিত ছিল। অতঃপর তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলিলেন, হে আত্মশত্রু মহিলাগণ! তোমরা আমাকে ভয় করছ অথচ আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে ভয় করছ না? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ, কারণ তুমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর চেয়ে অধিক কর্কশ ভাষী ও কঠোর হৃদয়ের লোক। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, শপথ ঐ সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তুমি যে পথে চল শয়তান কখনও সে পথে চলে না বরং সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৩২৯৪; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উবাই মারা গেল, তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দরবারে আসলেন এবং তার পিতাকে রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জামাটি দিয়ে কাফন দেবার আবেদন করিলেন। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] জামা প্রদান করিলেন, এরপর তিনি জানাযার সালাত আদায়ের জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আবেদন জানালেন। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] জানাযার সালাত পড়ানোর জন্য [বসা থেকে] উঠে দাঁড়ালেন, ইত্যবসরে উমার [রাদি.] রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাপড় টেনে ধরে আবেদন করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আপনি কি তার জানাযার সালাত আদায় করিতে যাচ্ছেন? অথচ আপনার রব আপনাকে তার জন্য দুআ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে আমাকে [দুআ] করা বা না করার সুযোগ দিয়েছেন। আর আল্লাহ তো ইরশাদ করিয়াছেন, “তুমি তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর; যদি সত্তরবারও তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর তবু আমি তাহাদের ক্ষমা করব না”। সুতরাং আমি তার জন্য সত্তরবারের চেয়েও বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করব। উমার [রাদি.] বলিলেন, সে তো মুনাফিক, শেষ পর্যন্ত রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন, এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। “তাহাদের [মুনাফিকদের] কেউ মারা গেলে আপনি কক্ষনো তাহাদের জানাযাহ্‌র সালাত আদায় করবেন না এবং তাহাদের কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না। {বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৯] তাওবাহ

[বারাআহ] অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৪৬৭০; মুসলিম ৪৪/২, হাঃ ২৪০০} সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩. উসমান বিন আফ্ফান [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৫৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাদীনাহ্র এক বাগানের ভিতর আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে বাগানের দরজা খুলে দেয়ার জন্য বলিল। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম যে, তিনি আবু বকর [রাদি.]। তাঁকে আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর দেয়া সুসংবাদ দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে দরজা খোলার জন্য বলিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম, তিনি উমার [রাদি.]। তাঁকে আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সুসংবাদ জানিয়ে দিলাম। তখন তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করিলেন। অতঃপর আর একজন দরজা খুলে দেয়ার জন্য বলিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, দরজা খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সু-সংবাদ জানিয়ে দাও। কিন্তু তার উপর ভয়ানক বিপদ আসবে। দেখলাম যে, তিনি উসমান [রাদি.]। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যা বলেছেন, আমি তাকে বললাম। তখন তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করিলেন আর বলিলেন, আল্লাহই সাহায্যকারী।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৬৯৩; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪০৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫৫. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একদা ঘরে উযূ করে বের হলেন এবং মনে মনে বলিলেন আমি আজ সারাদিন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে কাটাব, তাহাঁর হইতে পৃথক হব না। তিনি মাসজিদে গিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর খবর নিলেন, সাহাবীগণ বলিলেন, তিনি এদিকে বেরিয়ে গেছেন, আমিও ঐ পথ ধরে তাহাঁর অনুসরণ করলাম। তাহাঁর খোঁজ জিজ্ঞাসাবাদ করিতে থাকলাম। তিনি শেষ পর্যন্ত আরীস কূপের নিকট গিয়ে পৌঁছলেন। আমি দরজার নিকট বসে পড়লাম। দরজাটি খেজুরের শাখা দিয়ে তৈরি ছিল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যখন তাহাঁর প্রয়োজন সেরে উযূ করিলেন। তখন আমি তাহাঁর নিকটে দাঁড়ালাম এবং দেখিতে পেলাম তিনি আরীস কূপের কিনারার বাঁধের মাঝখানে বসে হাঁটু পর্যন্ত পা দুটি খুলে কূপের ভিতরে ঝুলিয়ে রেখেছেন, আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং ফিরে এসে দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে স্থির করে নিলাম যে আজ আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করব। এ সময় আবু বকর [রাদি.] এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বলিলেন, আবু বকর! আমি বললাম, অপেক্ষা করুন, আমি গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আবু বকর [রাদি.] ভিতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি ফিরে এসে আবু বকর [রাদি.] কে বললাম, ভিতরে আসুন। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবু বকর [রাদি.] ভিতরে আসলেন এবং আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর ডানপাশে কূপের ধারে বসে দুপায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর মত কূপের ভিতর ভাগে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে উযূ রত অবস্থায় রেখে এসেছিলাম। তারও আমার সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। তাই আমি বলিতে লাগলাম, আল্লাহ যদি তার কল্যাণ চান তবে তাকে নিয়ে আসুন। এমন সময় এক ব্যক্তি দরজা নাড়তে লাগল। আমি বললাম, কে? তিনি বলিলেন, আমি উমার ইবনি খাত্তাব। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট সালাম পেশ করে আরয করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! উমার ইবনি খাত্তাব অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, তাকে ভিতরে আসার অনুমতি এবং জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও। আমি এসে তাঁকে বললাম, ভিতরে আসুন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আপনাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিচ্ছেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ করিলেন এবং আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এর বামপাশে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় উঠিয়ে কূপের ভিতর দিকে পা ঝুলিয়ে বসে গেলেন। আমি আবার ফিরে আসলাম এবং বলিতে থাকলাম আল্লাহ্ যদি আমার ভাইয়ের কল্যাণ চান, তবে যেন তাকে নিয়ে আসেন। অতঃপর আর এক ব্যক্তি এসে দরজা নাড়তে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে? তিনি বলিলেন, আমি উসমান ইবনি আফ্‌ফান। আমি বললাম, থামুন নাবী [সাঃআঃ]-এর খেদমতে গিয়ে জানালাম। তিনি বলিলেন, তাকে ভিতরে আসতে বল এবং তাকেও জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়ে দাও। তবে কঠিন পরীক্ষা হইবে। আমি এসে বললাম, ভিতরে আসুন, রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আপনাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিচ্ছেন; তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে। তিনি ভিতরে এসে দেখলেন, কূপের ধারে খালি জায়গা নেই। তাই তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর সম্মুখে অপর এক স্থানে বসে পড়লেন।

সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, আমি এর দ্বারা তাহাদের কবর এরূপ হইবে এই অর্থ করেছি।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৭৪; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪০৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪. আলী বিন আবু ত্বলিব [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৫৬. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] তাবূক যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হন। আর আলী [রাদি.]-কে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত করেন। আলী [রাদি.] বলেন, আপনি কি আমাকে শিশু ও নারীদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি এ কথায় রাযী নও যে, তুমি আমার কাছে সে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত মূসা [আঃ]র নিকট যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন হারূন [আঃ]। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, {হারূন [আ.] নাবী ছিলেন আর} আমার পরে কোন নাবী নেই।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৭৯ হাদীস নং ৪৪১৬; মুসলিম ৪৪/৪, হাঃ ২৪০৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫৭. সাহ্‌ল ইবনি সাআদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি খায়বারের যুদ্ধের সময় নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যার হাতে বিজয় আসবে। অতঃপর কাকে পতাকা দেয়া হইবে, সেজন্য সকলেই আশা করিতে লাগলেন। পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করিতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে পতাকা দেয়া হইবে। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আলী কোথায়? তাঁকে জানানো হলো যে, তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন তিনি আলীকে ডেকে আনতে বলিলেন। তাকে ডেকে আনা হল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাহাঁর মুখের লালা তাহাঁর উভয় চোখে লাগিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, তাহাঁর কোন অসুখই ছিল না। তখন আলী [রাদি.] বলিলেন, আমি তাহাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি সোজা এগিয়ে যাও। তুমি তাহাদের প্রান্তরে উপস্থিত হলে প্রথমে তাহাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাও এবং তাহাদের কর্তব্য সম্পর্কে তাহাদের অবহিত কর। আল্লাহ্‌র কসম, যদি একটি ব্যক্তিও তোমার দ্বারা হিদায়াত লাভ করে, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের চেয়েও উত্তম।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১০২ হাদীস নং ২৯৪২; মুসলিম ৪৪/৪ হাঃ ২৪০৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫৮. সালামাহ ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আলী[রাদি.] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] থেকে পেছনে থেকে যান, [কারণ] তাহাঁর চোখে অসুখ হয়েছিল। তখন তিনি বলিলেন, আমি কি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] থেকে পিছিয়ে থাকব? অতঃপর আলী [রাদি.] বেরিয়ে পড়লেন এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। যখন সে রাত এল, যে রাত শেষে সকালে আলী [রাদি.] খায়বার জয় করেছিলেন, তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব, কিংবা [বলেন] আগামীকাল এমন এক ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করিবে যাকে আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূল  [সাঃআঃ] ভালবাসেন। অথবা তিনি বলেছিলেন, যে আল্লাহ্ তাআলা ও তাহাঁর রসূল  [সাঃআঃ]-কে ভালবাসে, আল্লাহ্ তাআলা তারই হাতে খায়বার বিজয় দান করবেন। হঠাৎ আমরা দেখিতে পেলাম যে, আলী [রাদি.] এসে হাজির, অথচ আমরা তাহাঁর আগমন আশা করিনি। তারা বলিলেন, এই যে আলী [রাদি.] চলে এসেছেন। তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাঁকে পতাকা প্রদান করিলেন। আর আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁরই হাতে বিজয় দিলেন।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১২১ হাদীস নং ২৯৭৫; মুসলিম হাঃ ২৪০৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫৯. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ফাতিমা [রাদি.]-এর গৃহে এলেন, কিন্তু আলী [রাদি.]-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাহাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার নিকট দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বললোঃ হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ], তিনি মাসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এলেন, তখন আলী [রাদি.] কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাহাঁর শরীরের এক পাশের চাদর পড়ে গেছে এবং তাহাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাহাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবু তুরাব! উঠ, হে আবু তুরাব! {আবু তুরাবঃ আলী [রাদি.]-এর উপাধি}

[বোখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৫৮ হাদীস নং ৪৪১; মুসলিম ৪৪/৪, হাঃ ২৪০৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৫. সাদ বিন আবু ওয়াক্‌কাস [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৬০. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, [এক রাতে] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] জেগে কাটান। অতঃপর তিনি যখন মাদীনায় এলেন এই আকাঙক্ষা প্রকাশ করিলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, ইনি কে? ব্যক্তিটি বলিল, আমি সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস, আপনার পাহারার জন্য এসেছি। তখন নাবী [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে গেলেন।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৭০ হাদীস নং ২৮৮৫; মুসলিম ৪৪/৫ হাঃ ২৪১০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬১. আলি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-কে সাদ [রাদি.] ব্যতীত আর কারো জন্য তাহাঁর পিতা-মাতাকে উৎসর্গ করার কথা বলিতে দেখিনি। আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, তুমি তীর নিক্ষেপ কর, তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ [ফিদা] হোক

[সহীহ বুখারি ২৯০৫, মুসলিম ২৪১২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬২. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে নাবী [সাঃআঃ] আমার জন্য তাহাঁর মাতা-পিতাকে একত্র করেছিলেন, [তোমার উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক]।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৩৭২৫; মুসলিম ৪৪/৫ হাঃ ২৪১১]সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৬. ত্বলহা ও যুবায়র [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৬৩. আবু উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যেসব যুদ্ধে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] স্বয়ং যোগদান করেছিলেন, তন্মধ্যে এক যুদ্ধে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে কোন এক সময় ত্বলহা ও সাদ [রাদি.] ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। আবু উসমান [রাদি.] তাঁদের উভয় হইতে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৩৭২২-৩৭২৩; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪১৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের সময় আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, কে আমাকে শত্রু পক্ষের খবরাখবর এনে দিবে? যুবাইর [রাদি.] বলিলেন, আমি আনব। তিনি আবার বলিলেন, আমার শত্রু পক্ষের খবরাখবর কে এনে দিবে? যুবায়র [রাদি.] আবারও বলিলেন, আমি আনব। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, প্রত্যেক নাবীরই সাহায্যকারী থাকে আর আমার সাহায্যকারী যুবাইর।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৪০ হাদীস নং ২৮৪৬; মুসলিম ৪৪/৬ হাঃ ২৪১৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬৫. আবদুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধ চলাকালে আমি এবং উমার ইবনি আবু সালামাহ মহিলাদের দলে চলছিলাম। হঠাৎ যুবায়েরকে দেখিতে পেলাম যে, তিনি অশ্বারোহণ করে বনী কুরায়যা গোত্রের দিকে দুবার অথবা তিনবার আসা যাওয়া করছেন। যখন ফিরে আসলাম তখন বললাম, আব্বা! আমি আপনাকে কয়েকবার যাতায়াত করিতে দেখেছি। তিনি বলিলেন, হে প্রিয় বৎস! তুমি কি আমাকে দেখিতে পেয়েছিলে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলিলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছিলেন কে বনী কুরায়যা গোত্রের নিকট গিয়ে তাহাদের খবরা-খবর জেনে আসবে? তখন আমিই গিয়েছিলাম। যখন আমি ফিরে আসলাম তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আমার জন্য তাহাঁর মাতা-পিতাকে একত্র করে বলিলেন, আমার মাতাপিতা তোমার জন্য কুরবান হোক।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ৩৭২০; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪১৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৭. আবু উবাইদাহ বিন জার্‌রাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৬৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি থাকেন আর আমাদের এ উম্মাতের মধ্যে বিশ্বস্ত ব্যক্তি হচ্ছে আবু উবাইদাহ ইবনিল জার্‌রাহ [রাদি.]।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৩৭৪৪; মুসলিম হাঃ ২৪১৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬৭. হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] নাজরানবাসীকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন; আমি এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাব যিনি হইবেন প্রকৃতই বিশ্বস্ত। একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করিতে লাগলেন। পরে তিনি [সাঃআঃ] আবু উবাইদাহ[রাদি.]-কে পাঠালেন।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৩৭৪৫; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪২০]সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৮. হাসান ও হুসাইন [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৬৮. আবু হুরাইরাহ্ দাওসী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] দিনের এক অংশে বের হলেন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাহাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বানূ কায়নুকা বাজারে এলেন [সেখান হইতে ফিরে এসে] ফাতিমা [রাদি.]-এর ঘরের আঙিণায় বসে পড়লেন। তারপর বলিলেন, এখানে খোকা {হাসান[রাদি.]} আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? ফাতিমা [রাদি.] তাঁকে কিছুক্ষণ দেরী করালেন। আমার ধারণা হল তিনি তাঁকে পুতির মালা সোনা-রূপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন। তারপর তিনি দৌড়িয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকেও [হাসানকে] মহব্বত কর এবং তাকে যে ভালবাসবে তাকেও মহব্বত কর।

[বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৪৯ হাদীস নং ২১২২; মুসলিম ৪৪/৮, হাঃ ২৪২১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬৯. বারা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি হাসানকে নাবী [সাঃআঃ]-এর স্কন্ধের উপর দেখেছি। সে সময় তিনি [সাঃআঃ] বলেছিলেন, হে আল্লাহ্! আমি একে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৩৭৪৯; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪২২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১০. যায়দ বিন হারিসাহ ও উসামাহ বিন যায়দ [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৭০. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর আযাদকৃত গোলাম যায়দ ইবনি হারিসাহ্কে আমরা “যায়দ ইবনি মুহাম্মদ-ই” ডাকতাম, যে পর্যন্ত না এ আয়াত নাযিল হয়। তোমরা তাহাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক, আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে এটিই অধিক ন্যায়সঙ্গত।

{বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৩৩] আল-আহযাব অধ্যায় ২ হাদীস নং ৪৭৮২; মুসলিম ৪৪/১০, হাঃ ২৪২৫} সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] একটি সেনাবাহিনী পাঠানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন, এবং উসামাহ ইবনি যায়দ [রাদি.] কে উক্ত বাহিনীর নেতা মনোনীত করেন। কিছু সংখ্যক লোক তাহাঁর নেতৃত্বের উপর মন্তব্য প্রকাশ করিতে লাগলো। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তার নেতৃত্বের প্রতি তোমরা সমালোচনা করছ। ইতোপূর্বে তার পিতার নেতৃত্বের প্রতিও তোমরা সমালোচনা করেছ। আল্লাহ্‌র কসম, নিশ্চয়ই সে নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি ছিল এবং আমার প্রিয়পাত্রদের একজন ছিল। অতঃপর তার পুত্র আমার প্রিয়পাত্রদের একজন।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩৭৩০; মুসলিম ৪৪ হাঃ ২৪২৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১১. আবদুল্লাহ বিন জাফার [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৭২. আব্দুল্লাহ ইবনি জাফর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি যুবায়র [রাদি.], ইবনি জাফর [রাদি.]-কে বলিলেন, তোমার কি মনে আছে, যখন আমি ও তুমি এবং ইবনি আব্বাস [রাদি.] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম? ইবনি জাফর [রাদি.] বলিলেন, হ্যাঁ, স্মরণ আছে। রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বাহনে তুলে নিলেন আর তোমাকে ছেড়ে আসলেন।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৯৬ হাদীস নং ৩০৮২; মুসলিম ৪৪/১১ হাঃ ২৪২৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১২. উম্মুল মুমিনীন খাদীজাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৭৩. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি যে, সমগ্র নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারইয়াম হলেন সর্বোত্তম আর নারীদের সেরা হলেন খাদীজাহ [রাদি.]।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৩৪৩২; মুসলিম ৪৪/১২ হাঃ ২৪৩০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, পুরুষের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতা অর্জন করিয়াছেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম ব্যতীত আর কেউ পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়নি। তবে আয়িশাহ্র মর্যাদা সব মহিলার উপর এমন, যেমন সারীদের [গোশতের সুরুয়ায় ভিজা রুটির] মর্যাদা সকল প্রকার খাদ্যের উপর।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ৩৪১১; মুসলিম ৪৪/১২ হাঃ ২৪৩১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, জিব্‌রাঈল [আ.] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট হাযির হয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! ঐ যে খাদীজাহ [রাদি.] একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাদ্যদ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌঁছে যাবেন তখন তাঁকে তাহাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হইতে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি ভবনের খোশ খবর দিবেন যার অভ্যন্তর ভাগ ফাঁকা-মোতি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে থাকিবে না কোন প্রকার শোরগোল; কোন প্রকার দুঃখ-ক্লেশ।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩৮২০; মুসলিম ৪৪/১২, হাঃ নং ২৪৩২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭৬. ইসমাঈল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আবু আউফা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী [সাঃআঃ] খাদীজাহ [রাদি.]-কে জান্নাতের খোশ খবর দিয়েছিলেন কি? তিনি বলিলেন, হাঁ। এমন একটি ভবনের খোশ খবর দিয়েছিলেন, যে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে এমন মোতী দ্বারা যার ভিতরদেশ ফাঁকা। আর সেখানে থাকিবে না শোরগোল, কোন প্রকার ক্লেশ ও দুঃখ

। [বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩৮১৯; মুসলিম ৪৪/১২ হাঃ ২৪৩২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭৭. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি এতটুকু ঈর্ষা করিনি যতটুকু খাদীজাহ [রাদি.]-এর প্রতি করেছি। অথচ আমি তাঁকে দেখিনি। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর কথা বেশি সময় আলোচনা করিতেন। কোন কোন সময় বকরী যবহ করে গোশতের পরিমাণ বিবেচনায় হাঁড়-মাংসকে ছোট ছোট টুকরা করে হলেও খাদীজাহ [রাদি.]-এর বান্ধবীদের ঘরে পৌঁছে দিতেন। আমি কোন সময় ঈর্ষা ভরে নাবী [সাঃআঃ]-কে বলতাম, মনে হয়, খাদীজাহ [রাদি.] ছাড়া দুনিয়াতে যেন আর কোন নারী নাই। উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বলিতেন, হাঁ। তিনি এমন ছিলেন, এমন ছিলেন, তাহাঁর গর্ভে আমার সন্তানাদি জন্মেছিল।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩৮১৮; মুসলিম ৪৪/১২, হাঃ নং ২৪৩৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭৮. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ খাদীজাহ্র বোন হালা বিনতে খুয়াইলিদ [একদিন] রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য অনুমতি চাইলেন। [দুবোনের গলার স্বর ও অনুমতি চাওয়ার ভঙ্গি একই রকম ছিল বলে] নাবী [সাঃআঃ] খাদীজাহ্র অনুমতি চাওয়ার কথা মনে করে হতচকিত হয়ে পড়েন। তারপর [প্রকৃতিস্থ হয়ে] তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! এতো দেখছি হালা! আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেনঃ এতে আমার ভারী ঈর্ষা হলো। আমি বললাম, কুরাইশদের বুড়ীদের মধ্য থেকে এমন এক বুড়ীর কথা আপনি আলোচনা করেন যার দাঁতের মাড়ির লাল বর্ণটাই শুধু বাকি রয়ে গিয়েছিল, যে শেষ হয়ে গেছেও কত কাল আগে। তার পরিবর্তে আল্লাহ তো আপনাকে তার চেয়েও উত্তম উত্তম স্ত্রী দান করিয়াছেন।* {আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-এর কথার জবাবে নাবী [সাঃআঃ] কী বলেছেন তা উল্লেখ সহীহুল বোখারীতে নেই। তবে হাদীস সংকলক আহ্‌মাদ ও তারবানী এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আয়েশা [রাদি.] বলেনঃ এতে নাবী [সাঃআঃ] ক্রুদ্ধ হন। অবশেষে আমি বললামঃ যিনি আপনাকে সত্যের বাহকরূপে পাঠিয়েছেন তাহাঁর কসম, ভবিষ্যতে আমি তাহাঁর[খাদীজাহ্র] সম্পর্কে উত্তম মন্তব্য ছাড়া অন্য কোনরূপ মন্তব্য করবো না

। [বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩৮২১; মুসলিম ৪৪/১২, হাঃ নং ২৪৩৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৭৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলেন, দুবার তোমাকে আমায় স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, তুমি একটি রেশমী কাপড়ে আবৃতা এবং আমাকে বলছে ইনি আপনার স্ত্রী, আমি তার ঘোমটা সরিয়ে দেখলাম, সে মহিলা তুমিই। তখন আমি ভাবছিলাম, যদি তা আল্লাহ্‌র পক্ষ হইতে হয়ে থাকে, তবে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ৩৮৯৫; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ নং ২৪৩৮] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮০.আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, “আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশী থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।” আমি বললাম, কী করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বলিলেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, না! মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, না! ইব্রাহীম [আ.]-এর রব-এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহ্‌র কসম, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৯ হাদীস নং ৫২২৮; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ৬১০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮১. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলতো। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাহাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৮১ হাদীস নং ৬১৩০; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮২. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

লোকেরা তাহাদের হাদিয়া পাঠাবার ব্যাপারে আয়েশা [রাদি.]-এর জন্য নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত।

[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ২৫৭৪; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪১, ২৪৪২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

মৃত্যু রোগকালীন অবস্থায় রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব। আগামীকাল কার ঘরে? এর দ্বারা তিনি আয়েশা [রাদি.]-এর ঘরের পালার ইচ্ছে পোষণ করিতেন। সহধর্মিণীগণ নাবী [সাঃআঃ]-কে যার ঘরে ইচ্ছে অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] আয়েশা [রাদি.]-এর ঘরে ছিলেন। এমনকি তাহাঁর ঘরেই তিনি ইন্তিকাল করেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে ইন্তিকাল করেন এবং আল্লাহ তাহাঁর রূহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে, তাহাঁর মাথা ছিল আমার কণ্ঠ ও বক্ষের মধ্যে।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৫০; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৪. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালের পূর্বে যখন তাহাঁর পিঠ আমার উপর হেলান দেয়া অবস্থায় ছিল, তখন আমি কান ঝুঁকিয়ে দিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন এবং মহান বন্ধুর সঙ্গে আমাকে মিলিত করুন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৪০; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৫. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এ কথা শুনিয়াছিলাম যে, কোন নাবী [সাঃআঃ] মারা যান না যতক্ষণ না তাঁকে বলা হয় দুনিয়া বা আখিরাতের একটি বেছে নিতে। যে রোগে নাবী [সাঃআঃ] ইন্তিকাল করেন সে রোগে আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে যন্ত্রণায় কাতর অবস্থায় বলিতে শুনিয়াছি-তাঁদের সঙ্গে যাঁদের প্রতি আল্লাহ তাআলা নিআমত প্রদান করিয়াছেন {তাঁরা হলেন- নাবী [আ.]-গণ, সিদ্দীকগণ এবং শহীদগণ।} [সূরাহ আন-নিসা ৪/৬৯]। তখন আমি ধারণা করলাম যে, তাঁকেও একটি বেছে নিতে বলা হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৩৫; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] সুস্থাবস্থায় বলিতেন, জান্নাতে তাহাঁর স্থান দেখানো ব্যতীত কোন নাবী [আ.]-এর প্রাণ কখনো কবজ করা হয়নি। তারপর তাঁকে জীবন বা মৃত্যু একটি গ্রহণ করিতে বলা হয়। এরপর যখন নাবী [সাঃআঃ] অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাহাঁর মাথা আয়েশা [রাদি.]-এর উরুতে রাখাবস্থায় তাহাঁর জান কবজের সময় উপস্থিত হল তখন তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে গেলেন। এরপর যখন তিনি সংজ্ঞা ফিরে পেলেন তখন তিনি ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ! উচ্চে সমাসীন বন্ধুর সঙ্গে [মিলিত হইতে চাই]। অনন্তর আমি বললাম, তিনি আর আমাদের মাঝে থাকতে চাচ্ছেন না। এরপর আমি উপলব্ধি করলাম যে, এটা হচ্ছে ঐ কথা যা তিনি আমাদের কাছে সুস্থাবস্থায় বর্ণনা করিতেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৩৭; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৭. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখনই নাবী [সাঃআঃ] সফরে যাওয়ার ইরাদা করিতেন, তখনই স্ত্রীগণের মাঝে লটারী করিতেন। এক সফরের সময় আয়েশা [রাদি.] এবং হাফসাহ [রাদি.]-এর নাম লটারীতে ওঠে। নাবী [সাঃআঃ]-এর অভ্যাস ছিল যখন রাত হত তখন আয়েশা [রাদি.]-এর সঙ্গে এক সওয়ারীতে আরোহণ করিতেন এবং তাহাঁর সঙ্গে কথা বলিতে বলিতে পথ চলতেন। এক রাতে হাফসাহ [রাদি.] আয়েশা [রাদি.]-কে বলিলেন, আজ রাতে তুমি কি আমার উটে আরোহণ করিবে এবং আমি তোমার উটে, যাতে করে আমি তোমাকে এবং তুমি আমাকে এক নতুন অবস্থায় দেখিতে পাবে? আয়েশা [রাদি.] উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমি রাযী আছি। সে হিসাবে আয়েশা [রাদি.] হাফসাহ [রাদি.]-এর উটে এবং হাফসাহ [রাদি.] আয়েশা [রাদি.]-এর উটে সওয়ার হলেন। নাবী [সাঃআঃ] আয়েশা [রাদি.]-এর নির্ধারিত উটের কাছে এলেন, যার ওপর হাফসাহ [রাদি.] বসা ছিলেন। তিনি সালাম করিলেন এবং তাহাঁর পার্শ্বে বসে সফর করিলেন। পথিমধ্যে এক স্থানে সবাই অবতরণ করিলেন। আয়েশা [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলেন। যখন তাঁরা সকলেই অবতরণ করিলেন তখন আয়েশা [রাদি.] নিজ পদযুগল ইযখির নামক ঘাসের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বলিতে লাগলেন, হে আল্লাহ্! তুমি আমার জন্য কোন সাপ বা বিচ্ছু পাঠিয়ে দাও, যাতে আমাকে দংশন করে। কেননা, আমি এ ব্যাপারে রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-কে কিছু বলিতে পারব না।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৯৮ হাদীস নং ৫২১১; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, আয়েশা [রাদি.]-এর মর্যাদা নারীদের উপর এমন যেমন সারীদের মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৩৭৭০; মুসলিম ৪/১৩ হাঃ ২৪৪৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একদা নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, হে আয়িশা! এই যে জিব্রাঈল [আ.] তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন তিনি বলিলেন, তাহাঁর প্রতি সালাম, আল্লাহর রহমত এবং তাহাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আপনি এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখিতে পাই না। এর দ্বারা তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে বুঝিয়েছেন।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২১৭; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১৪. উম্মু যারআ [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৯০. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ১১ জন মহিলা এক স্থানে একত্রিত হয়ে বসল এবং সকলে মিলে এ কথার ওপর একমত হল যে, তারা নিজেদের স্বামীর ব্যাপারে কোন তথ্যই গোপন রাখবে না।

প্রথম মহিলা বলিল,

আমার স্বামী হচ্ছে অত্যন্ত হাল্কা-পাতলা দুর্বল উটের গোশতের মত যেন কোন পর্বতের চূড়ায় রাখা হয়েছে এবং সেখানে আরোহণ করা সহজ কাজ নয় এবং গোশতের মধ্যে এত চর্বিও নেই, যে কারণে সেখানে উঠার জন্য কেউ কষ্ট স্বীকার করিবে।

দ্বিতীয় মহিলা বলিল,

আমি আমার স্বামী সম্পর্কে কিছু বলব না, কারণ আমি ভয় করছি যে, তার সম্পর্কে বলিতে গিয়ে শেষ করা যাবে না। কেননা, যদি আমি তার সম্পর্কে বলিতে যাই, তা হলে আমাকে তার সকল দুর্বলতা এবং মন্দ দিকগুলো সম্পর্কেও বলিতে হইবে।

তৃতীয় মহিলা বলিল,

আমার স্বামী একজন দীর্ঘদেহী ব্যক্তি। আমি যদি তার বর্ণনা দেই [আর সে যদি তা শোনে] তাহলে সে আমাকে ত্বলাক্ব দিবে। আর যদি আমি কিছু না বলি, তাহলে সে আমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখবে। অর্থাৎ ত্বলাক্বও দেবে না, স্ত্রীর মতো ব্যবহারও করিবে না।

চতুর্থ মহিলা বলিল,

আমার স্বামী হচ্ছে তিহামার রাতের মত মাঝামাঝি- অতি গরমও না, অতি ঠাণ্ডাও না, আর আমি তাকে ভয়ও করি না, আবার তার প্রতি অসন্তুষ্টও নই।

পঞ্চম মহিলা বলিল,

যখন আমার স্বামী ঘরে প্রবেশ করে তখন চিতা বাঘের মত থাকে। যখন বাইরে যায় তখন সিংহের ন্যায় তার স্বভাব থাকে এবং ঘরের কোন কাজের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তোলে না।

৬ষ্ঠ মহিলা বলিল,

আমার স্বামী যখন খেতে বসে, তখন সব খেয়ে ফেলে। যখন পান করে, তখন সব শেষ করে। যখন নিদ্রা যায়, তখন একাই চাদর বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। এমনকি হাত বের করেও আমার খবর নেয় না।

সপ্তম মহিলা বলিল,

আমার স্বামী হচ্ছে পথভ্রষ্ট অথবা দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন এবং চরম বোকা, সব রকমের দোষ তার আছে। সে তোমার মাথায় বা শরীরে অথবা উভয় স্থানে আঘাত করিতে পারে।

অষ্টম মহিলা বলিল,

আমার স্বামীর পরশ হচ্ছে খরগোশের মত এবং তার দেহের সুগন্ধ হচ্ছে যারনাম [এক প্রকার বনফুল-এর মত]।

নবম মহিলা বলিল,

আমার স্বামী হচ্ছে অতি উচ্চ অট্টালিকার মত এবং তার তরবারি ঝুলিয়ে রাখার জন্য সে চামড়ার লম্বা ফালি পরিধান করে [অর্থাৎ সে দানশীল ও সাহসী]। তার ছাইভষ্ম প্রচুর পরিমাণের [অর্থাৎ প্রচুর মেহমান আছে এবং মেহমানদারীও হয়] এবং মানুষের জন্য তার গৃহ অবারিত। এ লোকজন তার সঙ্গে সহজেই পরামর্শ করিতে পারে।

দশম মহিলা বলিল,

আমার স্বামীর নাম হল মালিক। মালিকের কী প্রশংসা আমি করব। যা প্রশংসা করব সে তার চেয়ে উর্ধ্বে। তার অনেক মঙ্গলময় উট আছে, তার অধিকাংশ উটকেই ঘরে রাখা হয় [অর্থাৎ মেহমানদের যবাই করে খাওয়ানোর জন্য] এবং অল্প সংখ্যক মাঠে চরার জন্য রাখা হয়। বাঁশির শব্দ শুনলেই উটগুলো বুঝতে পারে যে, তাহাদেরকে মেহমানদের জন্য যবাই করা হইবে।

একাদশতম মহিলা বলিল,

আমার স্বামী আবু যারআ। তার কথা আমি কী বলব। সে আমাকে এত অধিক গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট হয়েছি যে, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে আমাকে এনেছে অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে, যে পরিবার ছিল মাত্র কয়েকটি বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা যায়। সে আমাকে ধন-সম্পদের মধ্যে রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম, সে বিদ্রুপ করত না এবং আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে দেরী করে উঠতাম এবং যখন আমি পান করতাম, অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পান করতাম।

আর আবু যারআর আম্মার কথা কী বলব! তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার ঘর ছিল প্রশস্ত।

আবু জারআর পুত্রের কথা কী বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ তরবারি অর্থাৎ সে অত্যন্ত হালকা-পাতলা দেহের অধিকারী। তার খাদ্য হচ্ছে ছাগলের একখানা পা।

আর আবু যারআর কন্যা সম্পর্কে বলিতে হয় যে, সে কতই না ভাল। সে বাপ-মায়ের সম্পূর্ণ অনুগতা সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী, যে কারণে সতীনরা তাকে হিংসা করে। আবু যারআর ক্রীতদাসীরও অনেক গুণ। সে আমাদের গোপন কথা কখনো প্রকাশ করত না, সে আমাদের সম্পদকে কমাত না এবং আমাদের বাসস্থানকে আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না।

সে মহিলা আরও বলিল, একদিন দুধ দোহন করার সময় আবু যারআ বাইরে বেরিয়ে এমন একজন মহিলাকে দেখিতে পেল, যার দুটি পুত্র-সন্তান রয়েছে। ওরা মায়ের স্তন নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল [দুধ পান করছিল]। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল এবং আমাকে ত্বলাক্ব দিয়ে তাকে শাদী করিল। এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যক্তিকে শাদী করলাম। সে দ্রুতগামী অশ্বে আরোহণ করত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে, হে উম্মু যারআ! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও, পরিধান কর এবং উপহার দাও।

মহিলা আরও বলিল, সে আমাকে যা কিছু দিয়েছে, তা আবু যারআর একটি ক্ষুদ্র পাত্রও পূর্ণ করিতে পারবে না [অর্থাৎ আবু যারআর সম্পদের তুলনায় তা খুবই সামান্য ছিল]।

আয়েশা [রাদি.] বলেন, রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, “আবু যারআ তার স্ত্রী উম্মু যারআর প্রতি যেরূপ [আমিও তোমার প্রতি তদ্রুপ [পার্থক্য এতটুকুই] আমি তোমাকে ত্বলাক্ব দেব না এবং তোমার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করব।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৮৩ হাদীস নং ৫১৮৯; মুসলিম ৪৪/১৪, হাঃ ২৪৪৮]সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১৫. ফাতিমা বিনতু নাবী [সাঃআঃ]-এর মর্যাদা।

১৫৯১. আলী ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, যখন তাঁরা ইয়াযীদ ইবনি মুআবিয়াহর নিকট হইতে হুসাইন [রাদি.]-এর শাহাদাতের পর মাদীনায় আসলেন, তখন তাহাঁর সঙ্গে মিসওয়ার ইবনি মাখরামাহ [রাদি.] মিলিত হলেন এবং বলিলেন, আপনার কি আমার নিকট কোন প্রয়োজন আছে? থাকলে বলুন। তখন আমি তাঁকে বললাম, না। তখন মিসওয়ার [রাদি.] বলিলেন, আপনি কি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর তরবারীটি দিবেন? আমার আশঙ্কা হয়, লোকেরা আপনাকে কাবু করে তা ছিনিয়ে নিবে। আল্লাহ্‌র কসম! আপনি যদি আমাকে এটি দেন, তবে আমার জীবন থাকা অবধি কেউ আমার নিকট হইতে তা নিতে পারবে না। একবার আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] ফাতিমাহ [রাদি.] থাকা অবস্থায় আবু জাহল কন্যাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। আমি তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর মিম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের এ খুত্বা দিতে শুনিয়াছি, আর তখন আমি সাবালক। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, ফাতিমা আমার হইতেই। আমি আশঙ্কা করছি সে দ্বীনের ব্যাপারে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। অতঃপর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বানূ আবদে শামস গোত্রের এক জামাতার ব্যাপারে আলোচনা করেন। তিনি তাহাঁর জামাতা সম্পর্কে প্রশংসা করেন এবং বলেন, সে আমার সঙ্গে যা বলেছে, তা সত্য বলেছে, আমার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছে, তা পূরণ করেছে। আমি হালালকে হারামকারী নই এবং হারামকে হালালকারী নই। কিন্তু আল্লাহ্‌র কসম! আল্লাহর রসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর দুশমনের মেয়ে একত্র হইতে পারে না।

[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩১১০; মুসলিম ৪৪/১৫ হাঃ ২৪৪৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯২.মিসওয়ার ইবনি মাখরামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু জেহেলের কন্যাকে আলী [রাদি.] বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। ফাতিমাহ [রাদি.] এ খবর শুনতে পেয়ে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে বলিলেন, আপনার গোত্রের লোকজন মনে করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের সম্মানে রাগান্বিত হন না। আলী তো আবু জেহেলের কন্যাকে বিবাহ করিতে প্রস্তুত। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] খুত্বা দিতে প্রস্তুত হলেন। [মিস্ওয়ার বলেন] তিনি যখন হামদ ও সানা পাঠ করেন, তখন আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি আবুল আস ইবনি রাবির নিকট আমার মেয়েকে শাদী দিয়েছিলোম। সে আমার সঙ্গে যা বলেছে সত্যই বলেছে। আর ফাতিমাহ আমার টুক্রা; তাহাঁর কোন কষ্ট হোক তা আমি কখনও পছন্দ করি না। আল্লাহ্‌র কসম, আল্লাহ্‌র রাসূলের মেয়ে এবং আল্লাহ্‌র দুশমনের মেয়ে একই লোকের নিকট একত্রিত হইতে পারে না। আলী [রাদি.] তাহাঁর বিবাহের প্রস্তাব উঠিয়ে নিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৩৭২৯; মুসলিম ৪৪/১৫ হাঃ ২৪৪৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা[রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একবার আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সব স্ত্রী তাহাঁর নিকট জমায়েত হয়েছিলাম। আমাদের একজনও অনুপস্থিত ছিলাম না। এমন সময় ফাতেমাহ [রাদি.] পায়ে হেঁটে আসছিলেন। আল্লাহ্‌র কসম! তাহাঁর হাঁটা রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাঁটার মতই ছিল। তিনি যখন তাঁকে দেখলেন, তখন তিনি আমার মেয়ের আগমন শুভ হোক বলে তাঁকে সম্বর্ধনা জানালেন। এরপর তিনি তাঁকে নিজের ডান পাশে অথবা [রাবী বলেন] বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তার সঙ্গে কানে-কানে কিছু কথা বলিলেন, তিনি [ফাতেমাহ] খুব অধিক কাঁদতে লাগলেন। এরপর তাঁকে চিন্তিত দেখে দ্বিতীয়বার তাহাঁর সঙ্গে তিনি কানে-কানে আরও কিছু কথা বলিলেন। তখন ফাতেমাহ [রাদি.] হাসতে লাগলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণের মধ্য থেকে আমি বললামঃ আমাদের উপস্থিতিতে রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বিশেষ করে আপনার সঙ্গে বিশেষ কী গোপনীয় কথা কানে-কানে বলিলেন, যার ফলে আপনি খুব কাঁদছিলেন? এরপর যখন নাবী [সাঃআঃ] উঠে চলে গেলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তিনি আপনাকে কানে-কানে কী বলেছিলেন? তিনি বললেনঃ আমি রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ভেদ [গোপনীয় কথা] ফাঁস করবো না। এরপর রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যু হল। তখন আমি তাঁকে বললামঃ আপনার উপর আমার যে দাবী আছে, আপনাকে আমি তার কসম দিয়ে বলছি যে, আপনি কি গোপনীয় কথাটি আমাকে জানাবেন না? তখন ফাতেমাহ [রাদি.] বললেনঃ হাঁ এখন আপনাকে জানাবো। সুতরাং তিনি আমাকে জানাতে গিয়ে বললেনঃ প্রথমবার তিনি আমার নিকট যে গোপন কথা বলেন, তা হলো এই যে, তিনি আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, জিবরীল [আ.] প্রতি বছর এসে পূর্ণ কুরআন একবার আমার নিকট পেশ করিতেন। কিন্তু এ বছর তিনি এসে তা আমার কাছে দু বার পেশ করিয়াছেন। এতে আমি ধারণা করছি যে, আমার চির বিদায়ের সময় সন্নিকট। সুতরাং তুমি আল্লাহ্‌কে ভয় করে চলবে এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করিবে। নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগমনকারী। তখন আমি কাঁদলাম যা নিজেই দেখলেন। তারপর যখন আমাকে চিন্তিত দেখলেন, তখন দ্বিতীয়বার আমাকে কানে-কানে বললেনঃ তুমি জান্নাতের মুসলিম মহিলাদের অথবা এ উম্মাতের মহিলাদের নেত্রী হওয়াতে সন্তুষ্ট হইবে না? [আমি তখন হাসলাম]।

[বোখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ৬২৮৫-৬২৮৬; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাদীস নং ২৪৫০ [আ.প্র. ৫৮৪২, ই.ফা. ৫৭৩৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১৬. উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৯৪. উসামাহ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে জানানো হল যে, একবার জিবরাঈল [আ.] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলেন। তখন উম্মু সালামাহ [রাদি.] তাহাঁর নিকট ছিলেন। তিনি এসে তাহাঁর সঙ্গে আলোচনা করিলেন। অতঃপর উঠে গেলেন। নাবী [সাঃআঃ] উম্মু সালামাহ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, লোকটিকে চিনতে পেরেছ কি? তিনি বলিলেন, এতো দেহ্ইয়া। উম্মু সালামাহ [রাদি.] বলেন, আল্লাহ্‌র কসম। আমি দেহ্ইয়া বলেই বিশ্বাস করছিলাম কিন্তু নাবী [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর খুত্বায় জিব্রাঈল [আ.]-এর আগমনের কথা বলিতে শুনলাম।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬৩৪; মুসলিম ৪৪/১৬ হাঃ ২৪৫১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১৭. উম্মুল মুমিনীন যাইনাব [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৯৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

কোন নাবী সহধর্মিনী নাবী [সাঃআঃ]-কে বললেনঃ আমাদের মধ্য হইতে সবার পূর্বে [মৃত্যুর পর] আপনার সাথে কে মিলিত হইবে? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচেয়ে লম্বা। তাঁরা একটি বাঁশের কাঠির মাধ্যমে হাত মেপে দেখিতে লাগলেন। সওদার হাত সকলের হাতের চেয়ে লম্বা বলে প্রমাণিত হল। পরে {সবার আগে যায়নাব [রাদি.]-এর মৃত্যু হলে} আমরা বুঝলাম হাতের দীর্ঘতার অর্থ দানশীলতা। তিনি {যায়নাব [রাদি.]} আমাদের মধ্যে সবার আগে তাহাঁর [সাঃআঃ] সাথে মিলিত হন এবং তিনি দান করিতে ভালবাসতেন

[বোখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ১৪২০; মুসলিম ৪৪/১৭, হাঃ ২৪৫২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/১৯. আনাস বিন মালিক [রাদি.]-এর মাতা উম্মু সুলায়ম [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৫৯৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] মাদীনায় উম্মু সুলাইম ছাড়া কারো ঘরে যাতায়াত করিতেন না তাহাঁর স্ত্রীদের ব্যতীত। এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, উম্মু সুলাইমের ভাই আমার সঙ্গে জিহাদে শরীক হয়ে শহীদ হয়েছে, তাই আমি তার প্রতি সহানুভূতি জানাই।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৩৮ হাদীস নং ২৮৪৪; মুসলিম ৪৪/১৯ হাঃ ২৪৫৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/২২. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদি.] ও তাহাঁর মায়ের মর্যাদা।

১৫৯৭. মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি এবং আমার ভাই ইয়ামান হইতে মাদীনাহ্তে আসি এবং বেশ কিছুদিন মাদীনাহ্তে অবস্থান করি। তখন আমরা মনে করতাম যে, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর পরিবারেরই একজন লোক। কারণ আমরা তাঁকে এবং তাহাঁর মাকে হরহামেশা নাবী [সাঃআঃ]-এর ঘরে প্রবেশ করিতে দেখতাম।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৩৭৬৩; মুসলিম ৪৪/২২ হাঃ ২৪৬০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯৮. শাকীক ইব্‌ন সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! সত্তরেরও কিছু অধিক সূরাহ আমি রসূল  [সাঃআঃ]-এর মুখ থেকে হাসিল করেছি। আল্লাহ্‌র কসম! নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীরা জানেন, আমি তাঁদের চেয়ে আল্লাহ্‌র কিতাব সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত; অথচ আমি তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম নই।

শাকীক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সহাবীগণ তাহাঁর কথা শুনে কী বলেন তা শোনার জন্য আমি মজলিসে বসে থাকলাম, কিন্তু আমি কাউকে অন্যরকম কথা বলে আপত্তি করিতে শুনিনি।

[বোখারী পর্ব ৬৬ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫০০০; মুসলিম ৪৪/২২, হাঃ ২৪৬২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯৯. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, আল্লাহ্‌র কিতাবে অবতীর্ণ প্রতিটি সূরাহ সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোন্ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম।

[বোখারী পর্ব ৬৬ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫০০২; মুসলিম ৪৪/২২, হাঃ ২৪৬৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০০. মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবনি আম্‌র [রাদি.]-এর মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর আলোচনা হলে তিনি বলিলেন, আমি এই লোককে ঐদিন হইতে অত্যন্ত ভালবাসি যেদিন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা চার ব্যক্তি হইতে কুরআন শিক্ষা কর, আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ- সর্বপ্রথম তাহাঁর নাম বলিলেন আবু হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রাদি.]-এর মুক্ত গোলাম সালিম, উবাই ইবনি কাব [রাদি.] ও মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] থেকে। উবাই [রাদি.] ও মুআয [রাদি.] এ দুজনের কার নাম আগে বলেছিলেন সেটুকু আমার স্মরণ নেই।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৩৭৫৮; মুসলিম ৪৪/২২ হাঃ ২৪৬৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/২৩. উবাই বিন কাব ও একদল আনসার [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬০১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]-এর যুগে [সর্বপ্রথম] যে চার ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআন হিফয করেছিলেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন আনসারী। [তাঁরা হলেন] উবাই ইবনি কাব [রাদি.], মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.], আবু যায়দ [রাদি.] এবং যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.]।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩৮১০; মুসলিম ৪৪/২৩, হাঃ নং ২৪৬৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-কে বলিলেন, আল্লাহ “সূরা বায়্যিনাহ” তোমাকে পড়ে শুনানোর জন্য আমাকে আদেশ করিয়াছেন। উবাই ইবনি কাব [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন, আল্লাহ কি আমার নাম করিয়াছেন? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, হাঁ। তখন তিনি কেঁদে ফেললেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৩৮০৯; মুসলিম ৪৪/২৩, হাঃ নং ২৪৬৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/২৪. সাদ বিন মুআয [রাদি.]-এর বর্ণনা।

১৬০৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-এর মৃত্যুতে আল্লাহ্ তাআলার আরশ কেঁপে উঠেছিল।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৩৮০৩; মুসলিম ৪৪/২৪ হাঃ ২৪৬৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৪. বারা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-কে এক জোড়া রেশমী কাপড় হাদীয়া দেয়া হল। সাহাবায়ে কেরাম [রাদি.] তা স্পর্শ করে এর কোমলতায় অবাক হয়ে গেলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এর কোমলতায় তোমরা অবাক হচ্ছ? অথচ সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-এর [জান্নাতের] রুমাল এর চেয়ে অনেক উত্তম, অথবা বলেছেন অনেক মোলায়েম।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৩৮০২; মুসলিম ৪৪/২৪, হাঃ নং ২৪৬৮] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-কে একটি রেশমী জুব্বা হাদিয়া দেয়া হল। অথচ তিনি রেশমী কাপড় ব্যবহার করিতে নিষেধ করিতেন। এতে সাহাবীগণ খুশী হলেন। তখন তিনি বলিলেন, সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, জান্নাতে সাদ ইবনি মুআযের রুমালগুলো এর চেয়ে উৎকৃষ্ট।

[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ২৬১৫; মুসলিম ৪৪/২৪ হাঃ ২৪৬৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/২৬. জাবির [রাদি.]-এর পিতা আবদুল্লাহ বিন আম্‌র বিন হারাম [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬০৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার পিতাকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তিত অবস্থায় নিয়ে এসে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সামনে রাখা হল। তখন একখানি বস্ত্র দ্বারা তাঁকে আবৃত রাখা হয়েছিল। আমি তাহাঁর উপর হইতে আবরণ উন্মোচন করিতে আসলে আমার কাওমের লোকেরা আমাকে নিষেধ করিল। পুনরায় আমি আবরণ উন্মুক্ত করিতে থাকলে আমার কাওমের লোকেরা [আবার] আমাকে নিষেধ করিল। পরে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নির্দেশে তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হল। তখন তিনি [রসূল  [সাঃআঃ]] এক ক্রন্দনকারিণীর শব্দ শুনে জিজ্ঞেস করিলেন, এ কে? লোকেরা বলিল, আমরের মেয়ে অথবা [তারা বলিল,] আমরের বোন। তিনি বলিলেন, ক্রন্দন করছো কেন? অথবা বলেছেন, ক্রন্দন করো না। কেননা, তাঁকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাঁদের পক্ষ বিস্তার করে তাঁকে ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৩৪ হাদীস নং ১২৯৩; মুসলিম ৪৪/২৬, হাঃ ২৪৭১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/২৮. আবু যার [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬০৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর আবির্ভাবের খবর যখন আবু যার [রাদি.] এর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাহাঁর ভাইকে বলিলেন, তুমি এ উপত্যকায় গিয়ে ঐ লোক সম্পর্কে জেনে আস যে লোক নিজেকে নাবী বলে দাবী করছেন ও তাহাঁর কাছে আসমান হইতে সংবাদ আসে। তাহাঁর কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শুনাও। তাহাঁর ভাই রওয়ানা হয়ে ঐ লোকের কাছে পৌঁছে তাহাঁর কথাবার্তা শুনলেন। এরপর তিনি আবু যারের নিকট ফিরে গিয়ে বলিলেন, আমি তাঁকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম আখলাক গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম যা পদ্য নয়। এতে আবু যার [রাদি.] বলিলেন, আমি যে জন্য তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে না। আবু যার [রাদি.] সফরের জন্য সামান্য পাথেয় সংগ্রহ করিলেন এবং একটি ছোট্ট পানির মশকসহ মাক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে নাবী [সাঃআঃ]-কে খোঁজ করিতে লাগলেন। তিনি তাঁকে চিনতেন না। আবার কাউকে তাহাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাও পছন্দ করিলেন না। এ অবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি শুয়ে পড়লেন। আলী [রাদি.] তাঁকে দেখে বুঝলেন যে, লোকটি বিদেশী। যখন আবু যার আলী [রাদি.]-কে দেখলেন, তখন তিনি তাহাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন না। আবু যার [রাদি.] পুনরায় তাহাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে হারামের দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] তাকে দেখিতে পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন। তখন আলী [রাদি.] তাহাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলিলেন, এখনও কি মুসাফিরের গন্তব্য স্থানের সন্ধান হয়নি? সে এখনও এ জায়গায় অবস্থান করছে। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করিলেন না। এ অবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। আলী [রাদি.] পূর্বের ন্যায় তাহাঁর পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন। তুমি কি আমাকে বলবে না কোন জিনিস এখানে আসতে তোমাকে অনুপ্রেরিত করেছে? আবু যার [রাদি.] বলিলেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক রাস্তা দেখানোর পাকা অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলিতে পারি। আলী [রাদি.] অঙ্গীকার করিলেন এবং আবু যার [রাদি.] ও তাহাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বলিলেন। আলী [রাদি.] বলিলেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ], যখন ভোর হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করিবে। তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন ব্যাপার আমি দেখিতে পাই তবে আমি রাস্তার পাশে চলে যাব যেন আমি পেশাব করিতে চাই। আর যদি আমি সোজা চলতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করিতে থাকিবে এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করিবে। আবু যার [রাদি.] তাই করিলেন। আলী [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে প্রবেশ করিলেন এবং তিনিও তাহাঁর [আলীর] সাথে প্রবেশ করিলেন। তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর কথাবার্তা শুনলেন এবং ঐখানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তোমার স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাহাদেরকে অবহিত করিবে। আবু যার [রাদি.] বলিলেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মাসজিদে হারামে গিয়ে হাজির হলেন এবং উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করিলেন, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاِّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ লোকজন তাহাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং মারতে মারতে তাঁকে মাটিতে ফেলে দিল। এমন সময় আব্বাস [রাদি.] এসে তাঁকে রক্ষা করিলেন এবং বলিলেন, তোমাদের বিপদ অবধারিত। তোমরা কি জাননা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর তোমাদের ব্যবসায়ী কাফেলাগুলিকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াত করিতে হয়। এ কথা বলে তিনি তাহাদের হাত হইতে আবু যারকে রক্ষা করিলেন। পরদিন সকালে তিনি ঐরূপই বলিতে লাগলেন। লোকেরা তাহাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে ভীষণভাবে মারতে লাগল। আব্বাস [রাদি.] এসে তাঁকে সামলে নিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৩৩ হাদীস নং ৩৮৬১; মুসলিম ৪৪/২৮ হাঃ ২৪৭৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/২৯. জারীর বিন আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬০৮. জারীর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর নিকট প্রবেশ করিতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন। আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট আমার অসুবিধার কথা জানালাম যে, আমি অশ্ব পৃষ্ঠে স্থির থাকতে পারি না। তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আমার বক্ষে হাত দিয়ে আঘাত করিলেন এবং এ দুআ করিলেন, হে আল্লাহ্! তাকে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়তপ্রাপ্ত করুন

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৬২ হাদীস নং ৩০৩৫-৩০৩৬; মুসলিম ৪৪/২৯ হাঃ ২৪৭৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৯. জারীর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শান্তি দিবে না? খাশআম গোত্রের একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর [রাদি.] বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ অশ্বারোহীকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা করলাম। তারা সুদক্ষ অশ্বারোহী ছিল। জারীর [রাদি.] বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করিলেন যে, আমি আমার বুকে তাহাঁর অঙ্গুলির চিহ্ন দেখিতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দুআ করিলেন, হে আল্লাহ্! তাকে স্থির রাখুন এবং হিদায়াত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন। অতঃপর জারীর [রাদি.] সেখানে যান এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলেন ও জ্বালিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে এ খবর দেওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে তাহাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর [রাদি.]-এর দূত বলিতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ্ তাআলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখন যুলখালাসাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। জারীর [রাদি.] বলেন, অতঃপর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাঁচবার বরকতের দুআ করেন।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৫৪ হাদীস নং ৩০২০; মুসলিম ৪৪/২৯ হাঃ ২৪৭৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩০. আবদুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬১০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একদা নাবী [সাঃআঃ] পায়খানায় গেলেন, তখন আমি তাহাঁর জন্য উযূর পানি রাখলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কে রেখেছে? তাঁকে জানানো হলে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! তুমি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান কর।

[বোখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ১৪৩; মুসলিম ৪৪/৩০, হাঃ ২৪৭৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩১. আবদুল্লাহ বিন উমার [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬১১. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর জীবিতকালে কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখলে তা আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর খিদমতে বর্ণনা করত। এতে আমার মনে আকাঙক্ষা জাগলো যে, আমি কোন স্বপ্ন দেখলে তা আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট বর্ণনা করব। তখন আমি যুবক ছিলাম। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সময়ে আমি মাসজিদে ঘুমাতাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন দুজন ফিরিশ্‌তা আমাকে ধরে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলেছেন। তা যেন কুপের পাড় বাঁধানোর ন্যায় পাড় বাঁধানো। তাতে দুটি খুঁটি রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে এমন কতক লোক, যাদের আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি বলিতে লাগলাম, আমি জাহান্নাম হইতে আল্লাহ্‌র নিকট পানাহ চাই। তিনি বলেন, তখন অন্য একজন ফেরেশ্‌তা আমাদের সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি আমাকে বলিলেন, ভয় পেয়ো না।

আমি এ স্বপ্ন [আমার বোন উম্মুল মুমিনীন] হাফসাহ [রাদি.]-এর নিকট বর্ণনা করলাম। অতঃপর হাফসা [রাদি.] তা আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট বর্ণনা করিলেন। তখন তিনি বললেনঃ আবদুল্লাহ্ কতই ভাল লোক! যদি রাত জেগে সে সালাত [তাহাজ্জুদ] আদায় করত! তারপর হইতে আবদুল্লাহ্ [রাদি.] খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন।

[বোখারী পর্ব ১৯ অধ্যায় ২ হাদীস নং ১১২১-১১২২; মুসলিম ৪৪/৩২, হাঃ ২৪৭৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩২. আনাস বিন মালিক [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬১২. উম্মু সুলায়ম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আনাস [রাদি.] আপনার খাদিম, আপনি আল্লাহ্‌র নিকট তার জন্য দুআ করুন। তিনি দুআ করলেনঃ

اللهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ

হে আল্লাহ! আপনি তার মাল ও সন্তান বাড়িয়ে দিন, আর আপনি তাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে বারাকাত দান করুন।

[বোখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৪৭ হাদীস নং ৬৩৭৮-৬৩৭৯; মুসলিম ৪৪/৩১, হাঃ ২৪৮০, ২৪৮১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একবার নাবী [সাঃআঃ] আমার কাছে একটি বিষয় গোপনে বলেছিলেন। আমি তাহাঁর পরেও কাউকে তা জানাইনি। এটা সম্পর্কে উম্মু সুলায়ম [রাদি.] আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকেও বলিনি।

[বোখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪৬ হাদীস নং ৬২৮৯; মুসলিম ৪৪/৩২, হাঃ ২৪৮২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩৩. আবদুল্লাহ বিন সালাম [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬১৪. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] ছাড়া যমীনে বিচরণশীল কারো ব্যাপারে এ কথাটি বলিতে শুনিনি যে, নিশ্চয়ই তিনি জান্নাতবাসী। সাদ [রাদি.] বলেন, তাহাঁরই ব্যাপারে সূরা আহকাফের এ আয়াত নাযিল হয়েছেঃ “এ ব্যাপারে বনী ইসরাঈলের মধ্য থেকেও একজন সাক্ষ্য দান করেছে।”

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৩৮১২; মুসলিম ৪৪/৩৩, হাঃ নং ২৪৮৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১৫. কায়স ইবনি উবাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মাদীনাহর মাস্জিদে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন এমন এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করিলেন যার চেহারায় বিনয় ও নম্রতার ছাপ ছিল। লোকজন বলিতে লাগলেন, এ ব্যক্তি জান্নাতীগণের একজন। তিনি হালকাভাবে দুরাকআত সালাত আদায় করে মাসজিদ হইতে বেরিয়ে এলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনি যখন মাসজিদে প্রবেশ করছিলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল যে, ইনি জান্নাতবাসীগণের একজন। তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম কারো জন্য এমন কথা বলা উচিত নয়, যা সে জানে না। আমি তোমাকে আসল কথা বলছি কেন তা বলা হয়। আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর যামানায় একটি স্বপ্ন দেখে তাহাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। আমি দেখলাম যে, আমি যেন একটি বাগানে অবস্থান করছি; বাগানটি বেশ প্রশস্ত, সবুজ। বাগানের মধ্যে একটি লোহার স্তম্ভ যার নিম্নভাগ মাটিতে এবং উপরিভাগ আকাশ স্পর্শ করেছে; স্তম্ভের উপরে একটি শক্ত কড়া সংযুক্ত রয়েছে। আমাকে বলা হল, উপরে উঠ। আমি বললাম, এটাতো আমার সামর্থ্যের বাইরে। তখন একজন খাদিম এসে পিছন দিক হইতে আমার কাপড়সহ চেপে ধরে আমাকে উঠতে সাহায্য করিলেন। আমি উঠতে লাগলাম এবং উপরে গিয়ে আংটাটি ধরলাম। তখন আমাকে বলা হল, শক্তভাবে আংটাটি ধর। তারপর কড়াটি আমার হাতের মুঠায় ধরা অবস্থায় আমি জেগে গেলাম। নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট স্বপ্নটি বললে, তিনি বলিলেন, এ বাগান হল ইসলাম, আর স্তম্ভটি হল ইসলামের খুঁটি, আর খুঁটিসহ কড়াটি হল “উরুয়াতুল উস্‌কা” [শক্ত ও অটুট কড়া] এবং তুমি আজীবন ইসলামের উপর কায়েম থাকিবে। [রাবী বলেন] এ ব্যক্তি হলেন, আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৩৮১৩; মুসলিম ৪৪/৩৩, হাঃ নং ২৪৮৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩৪. হাস্‌সান বিন সাবিত [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬১৬. সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা উমার [রাদি.] মাসজিদে নববীতে আগমন করেন, তখন হাস্‌সান ইবনি সাবিত [রাদি.] কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। তখন তিনি বলিলেন, এখানে আপনার চেয়ে উত্তম ব্যক্তির উপস্থিতিতেও আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম। অতঃপর তিনি আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর দিকে তাকালেন এবং বলিলেন, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি; আপনি কি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, “তুমি আমার পক্ষ হইতে জবাব দাও। হে আল্লাহ! আপনি তাকে রুহুল কুদুস {জিবরীল [আ.]} দ্বারা সাহায্য করুন।” তিনি উত্তরে বলিলেন, হ্যাঁ।* {মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করিতে হাস্‌সান সাবিত [রাদি.]-এর প্রতি উমার [রাদি.] আপত্তি করাতে তিনি আবু হুরাইরাহ [রাদি.]-কে সাক্ষী হিসেবে পেশ করিলেন যে, তিনি আল্লাহর রসূল  [সাঃ]-এর উপস্থিতিতেও মাসজিদে কবিতা আবৃত্তি করিয়াছেন।}

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২১২; মুসলিম ৪৪/৪৩ হাঃ ২৪৮৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১৭, বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] হাস্‌সান [রাদি.]-কে বলেছেন, তুমি তাহাদের কুৎসা বর্ণনা কর অথবা তাহাদের কুৎসার জবাব দাও। তোমার সঙ্গে জিবরীল [আ.] আছেন।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২১৩; মুসলিম ৪৪/৪৩ হাঃ ২৪৮৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১৮. উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন আয়েশা [রাদি.]-এর সম্মুখে হাস্‌সান [রাদি.]-কে তিরস্কার করিতে উদ্যত হলে, তিনি আমাকে বলিলেন, তাকে গালি দিও না। সে নাবী [সাঃআঃ]-এর তরফ হইতে কবিতার মাধ্যমে শত্রুর কথার আঘাত প্রতিহত করত।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৩৫৩১; মুসলিম ৪৪/৪৩ হাঃ ২৪৮৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১৯. মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা [রাদি.]-এর নিকট গেলাম। তখন তাহাঁর কাছে হাস্‌সান ইবনি সাবিত [রাদি.] তাঁকে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছেন। তিনি আয়েশা [রাদি.]-এর প্রশংসায় বলছেন,

“তিনি সতী, ব্যক্তিত্বসম্পন্না ও জ্ঞানবতী, তাহাঁর প্রতি কোন সন্দেহই আরোপ করা যায় না।

তিনি অভুক্ত থাকেন, তবুও অনুপস্থিত লোকেদের গোশত খান না [অর্থাৎ গীবত করেন না]।

এ কথা শুনে আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, কিন্তু আপনি তো এরূপ নন। মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন যে, আমি আয়েশা [রাদি.]-কে বললাম যে, আপনি কেন তাকে আপনার কাছে আসার অনুমতি দেন? অথচ আল্লাহ তাআলা বলছেন, “তাহাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি।” আয়েশা [রাদি.] বলেন, অন্ধত্ব থেকে কঠিনতর শাস্তি আর কী হইতে পারে? তিনি তাঁকে আরো বলেন যে, হাস্‌সান ইবনি সাবিত [রাদি.] রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পক্ষাবলম্বন করে কাফিরদের সঙ্গে মুকাবালা করিতেন অথবা কাফিরদের বিপক্ষে নিন্দাপূর্ণ কবিতা রচনা করিতেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৪১৪৬; মুসলিম ৪৪/৩৪, হাঃ ২৪৮৮] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬২০. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হাসসান [রাদি.] কবিতার ছন্দে মুশরিকদের নিন্দা করিতে অনুমতি চাইলে নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার বংশকে কিভাবে তুমি আলাদা করিবে? হাসসান [রাদি.] বলিলেন, আমি তাহাদের মধ্য হইতে এমনভাবে আপনাকে আলাদা করে নিব যেমনভাবে আটার খামির হইতে চুলকে আলাদা করে নেয়া হয়।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৩৫৩১; মুসলিম ৪৪/৩৪ হাঃ ২৪৮৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩৫. আবু হুরাইরাহ আদ্‌দাওসী [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬২১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমাদের ধারণা আবু হুরাইরাহ [রাদি.] রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] থেকে হাদীস বর্ণনায় বাড়াবাড়ি করছে। আল্লাহ্‌র কাছে একদিন আমাদেরকে হাযির হইতে হইবে। আমি ছিলাম একজন মিসকীন। খেয়ে না খেয়েই আমি রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর সান্নিধ্যে লেগে থাকতাম। মুহাজিরদেরকে বাজারের বেচাকেনা লিপ্ত রাখত। আর আনসারগণকে ব্যস্ত রাখত তাঁদের ধন-দৌলতের ব্যবস্থাপনা। একদা আমি রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর খিদমাতে উপস্থিত ছিলাম। রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত যে ব্যক্তি স্বীয় চাদর বিছিয়ে তারপর তা গুটিয়ে নেবে, সে আমার নিকট হইতে শ্রুত বাণী কোন দিন ভুলবে না। তখন আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম। সে সত্তার কসম, যিনি তাঁকে হক্কের সঙ্গে প্রেরণ করিয়াছেন! এরপর থেকে আমি তাহাঁর কাছে যা শুনিয়াছি, এর কিছুই ভুলিনি।

[বোখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৭৩৫৪; মুসলিম ৪৪/৮৫, হাঃ ২৪৯২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩৬. বদর যুদ্ধের শহীদদের মর্যাদা এবং হাতিব বিন আবি বালতা [রাদি.]-এর কাহিনী।

১৬২২. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আমাকে এবং যুবায়র ও মিকদাদ ইবনি আসওয়াদ [রাদি.]-কে পাঠিয়ে বলিলেন, তোমরা খাখ্ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখিতে পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা নিয়ে আসবে। তখন আমরা রওনা দিলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুত বেগে চলছিল। অবশেষে আমরা উক্ত খাখ্ নামক বাগানে পৌঁছে গেলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখিতে পেলাম। আমরা বললাম, পত্র বাহির কর। সে বলিল, আমার নিকট তো কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হইবে। তখন সে তার চুলের খোঁপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট হাজির হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইবনি বালতাআ [রাদি.]-এর পক্ষ থেকে মাক্কাহর কয়েকজন মুশরিকের প্রতি লেখা হয়েছে। যাতে তাহাদেরকে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, হে হাতিব! এ কী ব্যাপার? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আমার ব্যাপারে কোন তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আসলে আমি কুরাইশ বংশোদ্ভূত নই। তবে তাহাদের সঙ্গে মিশে ছিলাম। আর যারা আপনার সঙ্গে মুহাজিরগণ রয়েছেন, তাহাদের সকলেরই মাক্কাহবাসীদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাঁদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাহাদের প্রতি এমন কিছু অনুগ্রহ দেখাই, যদ্‌দ্বারা অন্তত তারা আমার আপনজনদের রক্ষা করিবে। আর আমি তা কুফরী কিংবা মুরতাদ হওয়ার উদ্দেশ্যে করিনি এবং কুফরীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণেও নয়। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলছে। তখন উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ্ তাআলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাহাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমার যা ইচ্ছে আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৪১ হাদীস নং ৩০০৭; মুসলিম ৪৪/৩৬ হাঃ ২৪৯৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩৮. আবু মূসা ও আবু আমির আল আশআরী [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬২৩. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট মাক্কাহ ও মাদীনাহ্‌র মধ্যবর্তী জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলাম। তখন বিলাল [রাদি.] তাহাঁর কাছে ছিলেন। এমন সময়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলিল, আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পূরণ করবেন না? তিনি তাঁকে বলিলেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর। সে বলিল, সুসংবাদ গ্রহণ কর কথাটি তো আপনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তখন তিনি ক্রোধ ভরে আবু মূসা ও বিলাল [রাদি.]-এর দিকে ফিরে বলিলেন, লোকটি সুসংবাদ ফিরিয়ে দিয়েছে। তোমরা দুজন তা গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে বলিলেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি এক পাত্র পানি আনতে বলিলেন। তিনি এর মধ্যে নিজের উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুয়ে কুল্লি করিলেন। তারপর বলিলেন, তোমরা উভয়ে এ থেকে পান করো এবং নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুকে ছিটিয়ে দাও। আর সুসংবাদ গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে পাত্রটি তুলে নিয়ে নির্দেশ মত কাজ করিলেন। এমন সময় উম্মু সালামাহ [রাদি.] পর্দার আড়াল থেকে ডেকে বলিলেন, তোমাদের মায়ের জন্যও অতিরিক্ত কিছু রাখ। কাজেই তাঁরা এ থেকে অতিরিক্ত কিছু তাহাঁর {উম্মু সালামাহ [রাদি.]-এর} জন্য রাখলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৭ হাদীস নং ৪৩২৮; মুসলিম ৪৪/৩৬ হাঃ ২৪৯৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬২৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নাবী [সাঃআঃ] আবু আমির [রাদি.]-কে একটি সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি দুরাইদ ইবনি সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গীদেরকেও পরাস্ত করেন। আবু মূসা [রাদি.] বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আবু আমির [রাদি.]-এর সঙ্গে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবু আমির [রাদি.]-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাহাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন আমি তাহাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবু মূসা [রাদি.]-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বলিলেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র ভাগতে শুরু করিল। আমি এ কথা বলিতে বলিতে তার পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও। লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দুজনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা করে ফেললাম। তারপর আমি আবু আমির [রাদি.]-কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বলিলেন, হে ভাতিজা! তুমি নাবী [সাঃআঃ]-কে আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দুআ করিতে বলবে। আবু আমির [রাদি.] তাহাঁর স্থলে আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ করিলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচে ছিলেন, তারপর ইন্তিকাল করিলেন। [যুদ্ধ শেষে] আমি ফিরে এসে নাবী [সাঃআঃ]-এর গৃহে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর [যৎসামান্য] একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাহাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে আমাদের এবং আবু আমির [রাদি.]-এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও বললাম যে, [মৃত্যুর পূর্বে বলে গিয়েছেন] তাঁকে {নাবী [সাঃআঃ]-কে} আমার মাগফিরাতের জন্য দুআ করিতে বলবে। এ কথা শুনে নাবী [সাঃআঃ] পানি আনতে বলিলেন এবং অযু করিলেন। তারপর তাহাঁর দুহাত উপরে তুলে তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা আবু আমিরকে ক্ষমা করো। [হস্তদ্বয় উত্তোলনের কারণে] আমি তাহাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখিতে পেয়েছি। তারপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক মাখলূকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও [দুআ করুন]। তিনি দুআ করিলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহ! আবদুল্লাহ ইবনি কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও।

বর্ণনাকারী আবু বুরদাহ [রাদি.] বলেন, দুটি দুআর একটি ছিল আবু আমির [রাদি.]-এর জন্য আর অপরটি ছিল আবু মূসা [আশআরী] [রাদি.]-এর জন্য।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৬ হাদীস নং ৪৩২৩; মুসলিম ৪৪/৩৮, হাঃ ২৪৯৮ সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৩৯. আল আশআরী [রাদি.]-দের মর্যাদা।

১৬২৫. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আশআরী গোত্রের লোকেরা রাতের বেলায় এলেও আমি তাহাদেরকে তাহাদের কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ দিয়েই চিনতে পারি এবং রাতের বেলায় তাহাদের কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনেই আমি তাহাদের বাড়িঘর চিনতে পারি যদিও আমি দিবাভাগে তাহাদেরকে নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করিতে দেখিনি। হাকীম ছিলেন আশআরীদের একজন। যখন তিনি কোন দল কিংবা [বর্ণনাকারী বলেছেন] কোন দুশমনের মুখোমুখী হইতেন তখন তিনি তাহাদেরকে বলিতেন, আমার সাথীরা তোমাদের বলেছেন, যেন তোমরা তাঁদের জন্য অপেক্ষা কর।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২৩২; মুসলিম ৪৪/৩৯, হাঃ ২৪৯৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬২৬. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আশআরী গোত্রের লোকেরা যখন জিহাদে গিয়ে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা মদীনাতেই তাহাদের পরিবার পরিজনদের খাবার কম হয়ে যায়, তখন তারা তাহাদের যা কিছু সম্বল থাকে, তা একটা কাপড়ে জমা করে। তারপর একটা পাত্র দিয়ে মেপে তা নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নেয়। কাজেই তারা আমার এবং আমি তাহাদের।

[বোখারী পর্ব ৪৭ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৪৮৬; মুসলিম ৪৪/৩৯ হাঃ ২৫০০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪১. জাফার বিন আবু ত্বলিব, আসমা বিনতু উমায়স এবং তাহাদের নৌকারোহীদের [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬২৭. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নাবী [সাঃআঃ]-এর হিজরতের খবর পৌঁছল। তাই আমি ও আমার দুভাই আবু বুরদা ও আবু রুহম এবং আমাদের কাওমের আরো মোট বায়ান্ন কি তিপ্পান্ন কিংবা আরো কিছু লোকজনসহ আমরা হিজরতের উদ্দেশে বের হলাম। আমি ছিলাম আমার অপর দুভাইয়ের চেয়ে বয়সে ছোট। আমরা একটি জাহাজে উঠলাম। জাহাজটি আমাদেরকে আবিসিনিয়া দেশের [বাদশাহ্] নাজ্জাশীর নিকট নিয়ে গেল। সেখানে আমরা জাফর ইবনি আবু তালিবের সাক্ষাৎ পেলাম এবং তাহাঁর সঙ্গেই আমরা থেকে গেলাম। অবশেষে নাবী [সাঃআঃ]-এর খাইবার বিজয়ের সময় সকলে এক যোগে [মাদীনায়] এসে তাহাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। এ সময়ে মুসলিমদের কেউ কেউ আমাদেরকে অর্থাৎ জাহাজে আগমনকারীদেরকে বলিল, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী।

আমাদের সঙ্গে আগমনকারী আসমা বিন্‌ত উমাইস একবার নাবী [সাঃআঃ]-এর সহধর্মিণী হাফসাহ্‌র সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে এসেছিলেন। তিনিও [তাহাঁর স্বামী জাফরসহ] নাজ্জাশীর দেশে হিজরাতকারীদের সঙ্গে হিজরাত করেছিলেন। আসমা [রাদি.] হাফসাহ্‌র কাছেই ছিলেন। এ সময়ে উমার [রাদি.] তাহাঁর ঘরে প্রবেশ করিলেন। উমার [রাদি.] আসমাকে দেখে জিজ্ঞেস করিলেন, ইনি কে? হাফসাহ [রাদি.] বলিলেন, তিনি আসমা বিনত উমাইস [রাদি.]। উমার [রাদি.] বলিলেন, ইনি হাবশায় হিজরাতকারিণী আসমা? ইনিই কি সমুদ্রগামিনী? আসমা [রাদি.] বলিলেন, হ্যাঁ! তখন উমার [রাদি.] বলিলেন, হিজরাতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে আগে আছি। সুতরাং তোমাদের তুলনায় রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর প্রতি আমাদের হক অধিক। এতে আসমা [রাদি.] রেগে গেলেন এবং বলিলেন, কক্ষনো হইতে পারে না। আল্লাহ্‌র কসম! আপনারা তো রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আপনাদের ক্ষুধার্তদের খাবারের ব্যবস্থা করিতেন, আপনাদের অবুঝ লোকদেরকে নসীহত করিতেন। আর আমরা ছিলাম এমন এক এলাকায় অথবা তিনি বলেছেন এমন এক দেশে যা রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বহুদূরে এবং সর্বদা শত্রু বেষ্টিত হাবশা দেশে। আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের উদ্দেশেই ছিল আমাদের এ হিজরাত। আল্লাহ্‌র কসম! আমি কোন খাবার খাবো না, পানিও পান করব না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা বলেছেন তা আমি রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-কে না জানাব। সেখানে আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হত, ভয় দেখানো হত। শীঘ্রই আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে এসব কথা বলব এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করব। তবে আল্লাহ্‌র কসম! আমি মিথ্যা বলব না, পেচিয়ে বলব না, বাড়িয়েও কিছু বলব না। এরপর যখন নাবী [সাঃআঃ] আসলেন, তখন আসমা [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র নাবী [সাঃআঃ]! উমার [রাদি.] এই কথা বলেছেন, তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কী উত্তর দিয়েছ? আসমা [রাদি.] বললেনঃ আমি তাঁকে এই এই বলেছি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, [এ ব্যাপারে] তোমাদের চেয়ে উমার [রাদি.] আমার প্রতি অধিক হক রাখে না। কারণ উমার [রাদি.] এবং তাহাঁর সাথীরা একটি হিজরাত লাভ করেছে, আর তোমরা যারা জাহাজে হিজরাতকারী ছিলে তারা দুটি হিজরাত লাভ করেছে।

আসমা [রাদি.] বলেন, এ ঘটনার পর আমি আবু মূসা [রাদি.] এবং জাহাজযোগে হিজরাতকারী অন্যদেরকে দেখেছি যে, তাঁরা সদলবলে এসে আমার নিকট থেকে এ হাদীসখানা শুনতেন। আর নাবী [সাঃআঃ] তাঁদের সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন সে কথাটির চেয়ে তাঁদের কাছে দুনিয়ার অন্য কোন জিনিস অধিকতর প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

আবু বুরদাহ [রাদি.] বলেন যে, আসমা [রাদি.] বলেছেন, আমি আবু মূসা {আশআরী [রাদি.]}-কে দেখেছি, তিনি বারবার আমার নিকট হইতে এ হাদীসটি শুনতে চাইতেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২৩০-৪২৩১; মুসলিম ৪৪/৪১, হাঃ ২৪৯৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪৩. আনসার [রাদি.]-এর মর্যাদা।

১৬২৮. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, إِذْ هَمَّتْ طَائِفَتَانِ مِنْكُمْ أَنْ تَفْشَلَا যখন তোমাদের মধ্যে দুদলের সাহস হারাবার উপক্রম হয়েছিল আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে তথা বনূ সালিমাহ এবং বনু হারিসাহ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াতটি অবতীর্ণ না হোক তা আমি চাইনি। কেননা এ আয়াতেই আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ উভয় দলেরই সাহায্যকারী।

{মুসলিম ৪৪/৩৯, হাঃ ২৪৯৯} [বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৪০৫১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬২৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হার্‌রায় যাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল তাহাদের খবর শুনে শোকে মুহ্যমান হয়েছিলাম। আমার এ শোকের সংবাদ যায়দ ইবনি আরকাম [রাদি.]-এর কাছে পৌঁছলে তিনি আমার কাছে পত্র লিখেন। পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি রসূল কে [সাঃআঃ] বলিতে শুনেছেন,

اللهُمَّ اغْفِرْ لِلأَنْصَارِ، وَلأَبْنَاءِ الأَنْصَارِ

হে আল্লাহ্! আনসার ও আনসারদের সন্তানদেরকে তুমি ক্ষমা করে দাও। এ দুআয় রসূল  [সাঃআঃ] আনসারদের সন্তানদের সন্তানদের জন্য দুআ করিয়াছেন কিনা এ ব্যাপারে ইবনি ফায্ল [রাদি.] সন্দেহ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬৩ হাদীস নং ৪৯০৬; মুসলিম ৪৪/৪৩, হাঃ ২৫০৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৩০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, [আনসারের] কতিপয় বালক-বালিকা ও নারীকে রাবী বলেন, আমার মনে হয়- তিনি বলেছিলেন, কোন বিবাহ অনুষ্ঠান শেষে ফিরে আসতে দেখে নাবী [সাঃআঃ] তাঁদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ্ জানেন, তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৭৮৫; মুসলিম ৪৪/৪৩, হাঃ নং ২৫০৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৩১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একজন আনসারী মহিলা তার শিশুসহ রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর নিকট হাযির হলেন। রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] তার সঙ্গে কথা বলিলেন এবং বলিলেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, লোকদের মধ্যে তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। কথাটি তিনি দুবার বলিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৭৮৬; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ নং ২৫০৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৩২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আনসারগণ আমার অতি আপনজন ও বিশ্বস্ত লোক। লোকসংখ্যা বাড়তে থাকিবে আর তাহাদের সংখ্যা কমতে থাকিবে। তাই তাহাদের নেক্‌কারদের নেক আমালগুলো কবূল কর এবং তাহাদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দাও।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৩৮০১; মুসলিম ৪৪/৪৩, হাঃ নং ২৫১০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪৪. আনসার [রাদি.] পরিবারের মধ্যে সর্বোত্তম।

১৬৩৩. আবু উসায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ আবদুল আশহাল তারপর বনূ হারিস ইবনি খাযরাজ তারপর বানূ সায়িদা এবং আনসারদের সকল গোত্রের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। এ শুনে সাদ [রাদি.] বলিলেন, নাবী [সাঃআঃ] অন্যদেরকে আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন? তখন তাকে বলা হল; তোমাদেরকে তো অনেক গোত্রের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৩৭৮৯; মুসলিম ৪৪/৪৪, হাঃ নং ২৫১১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪৫. আনসারদের [রাদি.] সঙ্গ লাভে যে কল্যাণ লাভ করা যায়।

১৬৩৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সফরে আমি জারীর ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.]-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমার খেদমত করিতেন। যদিও তিনি আনাস [রাদি.]-এর চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। জারীর [রাদি.] বলেন, আমি আন্‌সরদের এমন কিছু কাজ দেখেছি, যার কারণে তাহাদের কাউকে পেলেই সম্মান করি।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৭১ হাদীস নং ২৮৮৮; মুসলিম ৪৪/৪৫ হাঃ ২৫১৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪৬. গিফার ও আসলাম গোত্রের জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর দুআ।

১৬৩৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ্ তাহাদেরকে নিরাপত্তা দিন। গিফার গোত্র, আল্লাহ্ তাহাদেরকে মাফ করুন।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৫১৪; মুসলিম ৪৪/৪৬ হাঃ ২৫১৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৩৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় বলেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ্ তাহাদেরকে মাফ করুন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ্ তাহাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন আর উসাইয়া গোত্র, তারা আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূলের অবাধ্যতা করেছে।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৫১৩; মুসলিম ৪৪/৪৬ হাঃ ২৫১৮] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪৭. গিফার, আসলাম, জুহাইনাহ, আশযা, মুজাইনাহ, তামিম, দাওস ও তাঈ গোত্রগুলোর ফাযীলাত।

১৬৩৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেন, কুরাইশ, আনসার, জুহায়নাহ, মুযায়নাহ, আসলাম, আশজা ও গিফার গোত্রগুলো আমার সাহায্যকারী। আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূল  ছাড়া তাঁদের সাহায্যকারী আর কেউ নেই।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৩৫০৪; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২০] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৩৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আসলাম, গিফার এবং মুযাইনাহ ও জুহানাহ গোত্রের কিছু অংশ অথবা জুহাইনাহর কিছু অংশ কিংবা মুযায়নাহর কিছু অংশ আল্লাহ্‌র নিকট অথবা বলেছেন কিয়ামতের দিন আসাদ, তামীম, হাওয়াযিন ও গাত্ফান গোত্র চেয়ে উত্তম বলে বিবেচিত হইবে।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৩৫২৩; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৩৯. আবু বাক্‌রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আকরা ইবনি হাবিস নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আরয করিলেন, আসলাম গোত্রের সুররাক, হাজীজ, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয় আপনার নিকট বায়আত করেছে এবং [রাবী বলেন] আমার ধারণা জুহায়না গোত্রও। এ ব্যাপারে ইবনি আবু ইয়াকুব সন্দেহ পোষণ করিয়াছেন। নাবী [সাঃআঃ] বলেন, তুমি কি জান, আসলাম, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয়, [রাবী বলেন] আমার মনে হয় তিনি জুহায়না গোত্রের কথাও উল্লেখ করিয়াছেন যে বনূ তামীম, বনূ আমির, আসাদ এবং গাত্ফান [গোত্রগুলো] যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হয়েছে, তাহাদের তুলনায় পূর্বোক্ত গোত্রগুলো উত্তম। রাবী বলেন, হাঁ। নাবী [সাঃআঃ] বলেন, সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, প্রাগুক্তগুলো শেষোক্ত গোত্রগুলোর তুলনায় অবশ্যই অতি উত্তম।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৫১৬; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৪০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তুফাইল ইবনি আম্‌র দাওসী ও তাহাঁর সঙ্গীরা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! দাওস গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণে অবাধ্যতা করেছে ও অস্বীকার করেছে। আপনি তাহাদের বিরুদ্ধে দুআ করুন। অতঃপর বলা হলো, দাওস গোত্র ধ্বংস হোক। তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন,

 اللهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَأْتِ بِهِمْ

হে আল্লাহ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন এবং তাহাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসুন।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১০০ হাদীস নং ২৯৩৭; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২৪] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৪১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে তিনটি কথা শোনার পর হইতে বনী তামীম গোত্রকে আমি ভালবেসে আসছি। আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, দাজ্জালের মুকাবিলায় আমার উম্মতের মধ্যে এরাই হইবে অধিকতর কঠোর। আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] বলেন, একবার তাহাদের পক্ষ হইতে সদকার মাল আসল। তখন রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, এ যে আমার কাওমের সাদাকা। আয়েশা [রাদি.]-এর হাতে তাহাদের এক বন্দিনী ছিল। তা দেখে নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, একে মুক্ত করে দাও। কেননা, সে ইসমাঈলের বংশধর।

[বোখারী পর্ব ৪৯ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ২৫৪৩; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪৮. মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম।

১৬৪২. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা মানুষকে ঋণির মত পাবে। আইয়্যামে জাহিলীয়্যাতের উত্তম ব্যক্তিগণ ইসলাম গ্রহণের পরও তারা উত্তম যখন তারা দীনী জ্ঞান অর্জন করে আর তোমরা শাসন ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে লোকদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে এ ব্যাপারে তাহাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক অনাসক্ত।

আর মানুষের মধ্যে সব থেকে নিকৃষ্ট ঐ দুমুখী ব্যক্তি যে একদলের সঙ্গে এক ভাবে কথা বলে অপর দলের সঙ্গে আরেকভাবে কথা বলে।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩৪৯৩-৩৪৯৪; মুসলিম ৪৪/৪৮ হাঃ ২৫২৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৪৯. কুরাইশ নারীদের ফাযীলাত।

১৬৪৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, কুরাইশ বংশীয়া নারীরা উটে আরোহণকারী সকল নারীদের তুলনায় উত্তম। এরা শিশু সন্তানের উপর অধিক স্নেহশীলা হয়ে থাকে আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব যত্নবান হয়ে থাকে। অতঃপর আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] বলেছেন, ইমরানের কন্যা মারইয়াম কখনও উটে আরোহণ করেননি।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৬ হাদীস নং ৩৪৩৪; মুসলিম ৪৪/৪৯ হাঃ ২৪৩১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৫০. নাবী [সাঃআঃ] কর্তৃক তাহাঁর সাথীদের মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধন প্রতিষ্ঠা।

১৬৪৪. আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার নিকট কি এ হাদীস পৌঁছেছে যে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, ইসলামে হিল্‌ফ [জাহিলী যুগের সহযোগিতা চুক্তি] নেই? তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমার ঘরে কুরায়শ এবং আনসারদের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৩৯ অধ্যায় ২ হাদীস নং ২২৯৪; মুসলিম ৪৪/৫০, হাঃ ২৫২৯] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৫২. নাবী [সাঃআঃ]-এর সহাবীদের মর্যাদা, অতঃপর তাহাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাহাদের পরবর্তীদের।

১৬৪৫. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, এমন এক সময় আসবে যখন একদল লোক আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করিবে। তাহাদেরকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমাদের সঙ্গে কি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের কেউ আছেন? বলা হইবে, হ্যাঁ। অতঃপর [তাহাঁর বারাকাতে] বিজয় দান করা হইবে। অতঃপর এমন এক সময় আসবে, যখন জিজ্ঞেস করা হইবে, নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের সহচরদের মধ্যে কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছেন? বলা হইবে, হ্যাঁ, অতঃপর তাহাদের বিজয়দান করা হইবে। অতঃপর এক যুগ এমন আসবে যে, জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন, যিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের সহচরদের সাহচর্য লাভ করেছে, [তাবি-তাবিঈন]? বলা হইবে, হ্যাঁ। তখন তাহাদেরও বিজয় দান করা হইবে।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৭৬ হাদীস নং ২৮৯৭; মুসলিম ৪৪/৫২ হাঃ ২৫৩২] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৪৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, অতঃপর যারা তাহাদের নিকটবর্তী। এরপরে এমন সব ব্যক্তি আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেয়ার আগে কসম করে বসবে।

[বোখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ২৬৫২; মুসলিম ৪৪/৫২ হাঃ ২৫৩৩] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৪৭. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। অতঃপর তাহাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, অতঃপর তাহাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা। ইমরান [রাদি.] বলেন, আমি বলিতে পারছি না, নাবী [সাঃআঃ] [তাহাঁর যুগের] পরে দুই যুগের কথা বলছিলেন, না তিন যুগের কথা। নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের পর এমন লোকেরা আসবে, যারা খিয়ানত করিবে, আমানত রক্ষা করিবে না। সাক্ষ্য দিতে না ডাকলেও তারা সাক্ষ্য দিবে। তারা মান্নত করিবে কিন্তু তা পূর্ণ করিবে না। তাহাদের মধ্যে মেদওয়ালাদের প্রকাশ ঘটবে।

[বোখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ২৬৫১; মুসলিম ৪৪/৫২ হাঃ ২৫৩৫] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৫৩. নাবী [সাঃআঃ]-এর উক্তিঃ আজ যারা বেঁচে আছে তাহাদের কেউই একশ বছর পর পৃথিবীর উপর জীবিত থাকিবে না।

১৬৪৮. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ইশার সালাত আদায় করিলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জান? বর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছে, একশ বছরের মাথায় তাহাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকিবে না।

[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ১১৬; মুসলিম ৪৪/৫৩, হাঃ ২৫৩৬] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৫৪.  নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবী [রাদি.]-দের গালি দেয়া নিষিদ্ধ।

১৬৪৯. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ কর না। তোমাদের কেউ যদি উহূদ পর্বত পরিমাণ সোনা আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় কর, তবুও তাহাদের একমুদ বা অর্ধমুদ-এর সমপরিমাণ সাওয়াব হইবে না।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৭৩; মুসলিম ৪৪/৫৪ হাঃ ২৫৪১] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৫৫. পারস্যবাসীদের ফাযীলাত।

১৬৫০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে বসেছিলাম। এমন সময় তাহাঁর উপর অবতীর্ণ হলো সূরাহ জুমুআহ, যার একটি আয়াত হলো ঃ “এবং তাহাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাহাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি।” তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তিনবার এ কথা জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমাদের মাঝে সালমান ফারসী [রাদি.]-ও উপস্থিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] সালমান [রাদি.]-এর উপর হাতে রেখে বলিলেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের নিকট থাকলেও আমাদের কতক লোক অথবা তাহাদের এক ব্যক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে।

{৪৮৯৮; মুসলিম ৪৪/৫৯, হাঃ ২৫৪৬, আহমাদ ৯৪১০} [বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬২ হাদীস নং ৪৮৯৮] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪/৬০. নাবী [সাঃআঃ]-এর উক্তিঃ মানুষ উটের ন্যায়, একশটি উটের মধ্যে একটিও আরোহণের উপযোগী পাবে না।

১৬৫১. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই মানুষ শত উটের ন্যায়, যাদের মধ্য থেকে সাওয়ারীর উপযোগী একটি পাওয়া তোমার পক্ষে দুষ্কর।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৬৪৯৮; মুসলিম ৪৪ অধ্যায় ৬০, হাঃ ২৫৪৭] সাহাবিদের মর্যাদা – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “সাহাবিদের মর্যাদা । সরাসরি হাদিস থেকে বর্ণিত”

Leave a Reply