সালাম সম্পর্কিত হাদিস অধ্যায়। ইহুদী ও খৃস্টানকে সালাম দেয়া
সালাম সম্পর্কিত হাদিস অধ্যায়। ইহুদী ও খৃস্টানকে সালাম দেয়া, এই অধ্যায়ে হাদীস =৮ টি ( ১৭৮৭-১৭৯৪ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৫৩ঃ সালাম সম্পর্কিত
পরিচ্ছেদ ১: সালাম প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদ ২: ইহুদী ও খৃস্টানকে সালাম দেয়া প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদ ৩: সালাম সম্বন্ধীয় বিভিন্ন হাদীস
পরিচ্ছেদ ১: সালাম প্রসঙ্গ
১৭৩০ যায়দ ইব্নু আসলাম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন যে, সওয়ার ব্যক্তি পথচারীকে সালাম করিবে। আর যখন দলের কোন এক ব্যক্তি সালাম করে, উহা সকলের পক্ষ হইতে যথেষ্ট হইবে।
{১} [বুখারি ৬২৩২, মুসলিম ২১৬০, ঈমাম মুসলিম অনুরূপ হাদীস আবু হুরায়রা [রাদি.] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] {১} অত্র হাদীসের মর্ম এই যে, আরোহণকারী পথচারীকে এবং পথচারী বসা ব্যক্তিকে বরং আরোহণকারী পথচারী এবং বসা ব্যক্তিকে সালাম করিবে। অবশ্য এর বিপরীতও জায়েয আছে অর্থাৎ বসা ব্যক্তি পথচারীকে কিংবা সওয়ারকে এবং পথচারী সওয়ারকে সালাম দিতে পারে। তবে সালাম দেয়া সুন্নত এবং উহার জওয়াব দেয়া ওয়াজিব। কোন দলের এক ব্যক্তি সালাম দিলে উহা সকলের পক্ষ হইতে হয়ে যায়। অনুরূপভাবে সালামের সওয়াব দলের কোন একজনে দিলেও সকলের পক্ষ হইতে আদায় হয়ে যায়।
সালাম সম্পর্কিত হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৭৩১ মুহাম্মাদ ইব্নু আমর ইব্নু আতা [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট এসে ছিলাম; এমন সময় ইয়ামানের অধিবাসী এক ব্যক্তি এসে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” আরও কয়েকটি শব্দ এর সাথে সংযোজন করিল। তখন ইব্নু আব্বাসের দৃষ্টিশক্তি ছিল না। তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? উপস্থিত সকলে বলল, ইনি সেই ইয়ামানী লোক, যে আপনার কাছে [সর্বদা] আসা-যাওয়া করে। এই বলে তারা লোকটির পরিচয় করিয়ে দিল। তখন ইব্নু আব্বাস [রাদি.] লোকটিকে চিনতে পারলেন। অতঃপর ইব্নু আব্বাস লোকটিকে বলিলেন, “বরকত” পর্যন্ত সালাম শেষ হয়।” {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইয়াহ্ইয়া [রহঃ] বলেন, মালিক [রহঃ]-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হল যে, পুরুষ স্ত্রীলোককে [কিংবা স্ত্রীলোক পুরুষকে] সালাম করিবে কি? তিনি উত্তর দিলেন যে, বৃদ্ধের জন্য তো ইহা খারাপ নয়, তবে যুবক [যুবতী]-এর জন্য ভাল নয়। {২}
{১} অর্থাৎ “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহ” বলাই হল পূর্ণ সালাম। এর অধিক কিছু বলা ঠিক নয়। কমপক্ষে “আসসালামু আলাইকুম” বলবে।{২} অত্র হাদীসে গাইরে মাহরমের কথা বলা হয়েছে। মাহরম হলে যুবক কিংবা যুবতী উভয়েই পরস্পরকে সালাম দেয়াতে কোন অসুবিধা নেই ।সালাম সম্পর্কিত হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ২: ইহুদী ও খৃস্টানকে সালাম দেয়া প্রসঙ্গ
১৭৩২ আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, ইহুদীদের কেউ তোমাদেরকে সালাম দিলে তারা বলে “আসসাম আলাইকুম” [অর্থাৎ তোমার মৃত্যু হোক]। এতদুত্তরে তোমার কেবল “ওয়ালাইকুম” বলবে [অর্থাৎ মৃত্যু তোমাদের হোক]।
[বুখারি ৬২৫৭, মুসলিম ২১৬৪]ইয়াহইয়া বলেন, মালিক [রহঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কেউ যদি ইয়াহুদী অথবা খ্রীষ্টানকে সালাম দেয় তা হলে সেও কি ঐরূপ বলবে? মালিক [রহঃ] বলিলেন, না [ঐরূপ বলবে না]।সালাম সম্পর্কিত হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ৩: সালাম সম্বন্ধীয় বিভিন্ন হাদীস
১৭৩৩ আবু ওয়াকিদ লাইসী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মসজিদে বসে ছিলেন, আরও বহু লোক তাঁর সাথে ছিলেন। ইত্যবসরে তিন ব্যক্তিবিশিষ্ট একটি দল সেখানে আগমন করিল। এদের মধ্যে দুইজন রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর দিকে অগ্রসর হল এবং একজন চলে গেল [প্রত্যাবর্তন করিল]। অতঃপর ঐ দুইজন রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট গিয়ে সালাম করিল। তাদের একজন [সাহাবীগণের] হালকায় ফাঁকা স্থান পেয়ে সেখানে বসল এবং অপরজন তাঁদের পেছনে বসল। তৃতীয়জন তো আগেই চলে গিয়েছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তালীম হইতে ফারিগ হলেন এবং বলিলেন আমি তোমাদেরকে এই [আগন্তুক] তিনজনের অবস্থা বলব কি? [অর্থাৎ নিশ্চয়ই বলব]। উহাদের একজন আল্লাহ্র কাছে আগমন করেছে। আল্লাহও তাকে স্থান দান করিয়াছেন আর একজন লজ্জা করেছে [এবং মানুষকে কষ্ট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেনি, বরং পিছনে রয়েছে] আল্লাহ্ তাআলাও লজ্জা করিয়াছেন [এবং তার প্রতি রহম নাযিল করিয়াছেন]। আর একজন ফিরে গিয়েছে অতঃপর আল্লাহ্ তাআলাও তার দিক হইতে ফিরে গিয়েছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সালাম সম্পর্কিত হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৭৩৪ আনাস ইব্নু মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] হইতে শুনেছেন যে, এক ব্যক্তি তাহাকে [উমারকে] সালাম করলে পর তিনি সালামের জাওয়াব দিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন আছ? লোকটি বলল, আল্লাহ্র শোকর [ভাল আছি]। উমার [রাদি.] বলিলেন, আমি তোমার কাছে ইহাই কামনা করেছিলাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সালাম সম্পর্কিত হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৭৩৫ ইসহাক ইব্নু আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবু তালহা [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তুফাইল ইব্নু উবাই ইব্নু কাব [রহঃ] সকালে সকালে আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.]-এর নিকট আসতেন এবং তাঁর সঙ্গে বাজারে গমন করিতেন। তুফাইল [রাদি.] বলেন, আমরা বাজারে পৌঁছালে ইব্নু উমার [রাদি.] যে কোন মামুলী জিনিস বিক্রেতাকে যেকোন দোকানদারকে, যেকোন মিসকীনকে, এমন কি প্রত্যেককে সালাম দিতেন। তুফাইল বলেন, একদা আমি আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.]-এর নিকট গেলাম। পরে তিনি আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনি বাজারে যেয়ে কি করিবেন? বেচাকেনার নিকটে আপনি যান না, কোন বস্তু সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞেস করেন না, কোন জিনিসের দামও জিজ্ঞেস করেন না কিংবা বাজারের কোন মজলিসেও বসেন না। এর চাইতে এখানে বসে থাকুন এবং আমরা পরস্পর আলাপ-আলোচনা করি। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] বলিলেন হে ভুঁড়িওয়ালা! [তুফাইলের পেট মোটা ছিল বলে এই রকম বলিলেন] আমি সালাম করবার জন্যই বাজারে যাই, যার সাথে সাক্ষাৎ হয় তাকে সালাম করি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সালাম সম্পর্কিত হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৭৩৬ ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমারকে এই বলে সালাম করিল, “আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়াল গাদিয়াতু ওয়ার রায়িহাতু।” [অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি হোক, আল্লাহ্র রহমত এবং বরকতসমূহ ও সকালে-বিকালে আগত ও বিগত নিয়ামতরাশি]। এতদুত্তরে আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] বলিলেন, “ওয়া আলাইকা আলফান” [অর্থাৎ তোমার উপর ইহার এক হাজার গুণ]। তিনি উহাকে [অর্থাৎ সেই ব্যক্তির দেয়া সালামকে] খারাপ মনে করেছিলেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} অর্থাৎ “বরকাতুহু” পর্যন্ত সালাম শেষ হয়। অতএব উহার উপর আরও কিছু সংযোজন করা ঠিক নয়। তাই তিনি সংযোজিত শব্দদ্বয়ের কারণে উক্ত রকম জওয়াব দান করেছিলেন যাতে তাঁর অসন্তুষ্টির লক্ষণ সুস্পষ্ট ছিল।সালাম সম্পর্কিত হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৭৩৭ বর্ণণাকারী হইতে বর্ণিতঃ
মালিক [রহঃ]-এর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছিয়াছে যে, যদি কেহ কোন খালি ঘরে যায়, তবে “আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহি সালিহীন” বলবে অর্থাৎ আমাদের উপর এবং আল্লাহ্র নেক বান্দাদের উপর সালাম। {১}
{১} আল্লাহ তাআলা বলেন, واذا دخلتم بيوتا فسلموا على اهلها “কোন ঘরে তোমরা প্রবেশ করলে সেই ঘরের অধিবাসিগণকে সালাম করিবে”। এই হাদীস দিয়ে বোঝা যায়, ঘর খালি হলেও সালাম দিতে হয়, তবে তখন সালাম নিজেকে ও আল্লাহর নেক বান্দাদের দিবে।
সালাম সম্পর্কিত হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply