নামাজে সালাম ফিরানোর পর দোয়া জিকির তাসবিহ
নামাজে সালাম ফিরানোর পর দোয়া জিকির তাসবিহ >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১১, নামাজ আরম্ভ করা, হাদীস (১৩১৬-১৩৬৬)
পরিচ্ছেদঃ নামাজে সালাম ফিরানো
পরিচ্ছেদঃ সালামের সময় হস্তদ্বয় রাখার স্থান
পরিচ্ছেদঃ ডান দিকে কিভাবে সালাম ফিরাবে?
পরিচ্ছেদঃ বাম দিকে কিভাবে সালাম ফিরাবে?
পরিচ্ছেদঃ উভয় হাত দ্বারা সালাম ফিরানো
পরিচ্ছেদঃ ইমামের সালাম ফিরানোর সময় মুকতাদির সালাম ফিরানো
পরিচ্ছেদঃ নামাজের পর সিজদা করা
পরিচ্ছেদঃ নামাজে সালাম দেওয়ার এবং কথা বলার পর সাহুর [ভুল সংশোধনের জন্য] দুটি সিজদা করা
পরিচ্ছেদঃ সাহুর দুটি সিজদার পর সালাম [ফিরানো]
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানো এবং ইমামের কিবলার দিক থেকে মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসার মধ্যবর্তী সময়ে ইমামের বসা
পরিচ্ছেদঃ ইমামের সালাম ফিরানোর পর তাকবির বলা
পরিচ্ছেদঃ নামাজের সালাম ফিরাবার পর মু’আওয়াযাত [সূরা ফালাক ও সূরা নাস] পড়ার নির্দেশ
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর ইস্তিগফার করা [মাগফিরাত চাওয়া]
পরিচ্ছেদঃ ইস্তিগফার করার পর যিকির করা
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর তাহলীল পড়া [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া]
পরিচ্ছেদঃ সালামের পর যিকির ও তাহলীলের সংখ্যা
পরিচ্ছেদঃ নামাজ শেষে আরেক প্রকার দোয়া
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর অন্য প্রকার যিকির
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর আরেক প্রকার দোয়া ও যিকির
পরিচ্ছেদঃ নামাজ শেষে আরেক প্রকার দোয়া
পরিচ্ছেদঃ সালামের পর [বিতাড়িত শয়তান থেকে] পানাহ চাওয়া
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর তাসবীহের সংখ্যা
পরিচ্ছেদঃ আর এক প্রকার তাসবীহর সংখ্যা
পরিচ্ছেদঃ তাসবীহ গণনা করা
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর কপাল না মোছা
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর ইমামের তাহাঁর নামাজের স্থানে বসে থাকা
পরিচ্ছেদঃ নামাজ আদায় শেষে ফিরে বসা
পরিচ্ছেদঃ মহিলারা নামাজ শেষে কখন ফিরে যাবে?
পরিচ্ছেদঃ নামাজ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ইমামের অগ্রে গমনের নিষেধাজ্ঞা
পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে তাহাঁর সালাম ফিরানো পর্যন্ত নামাজ আদায় করে তাহাঁর সওয়াব
পরিচ্ছেদঃ ইমামের জন্য মুসল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়ার অনুমতি
পরিচ্ছেদঃ যখন কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি কি নামাজ আদায় করেছ ? তখন সে কি না বলবে?
পরিচ্ছেদঃ নামাজে সালাম ফিরানো
১৩১৬. সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [নামাজে] তাহাঁর ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরাতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩১৭. সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখতাম যে, তিনি তাহাঁর ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরাতেন তখন তাহাঁর গণ্ডদেশের শুভ্রতা দেখা যেত।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালামের সময় হস্তদ্বয় রাখার স্থান
১৩১৮. জাবির ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা যখন নাবী [সাঃআঃ] এর পেছনে নামাজ আদায় করতাম তখন বলতাম
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম
হাদিসের অন্যতম রাবী মিসআর [রাঃআঃ] তাহাঁর হাত দ্বারা ডান দিকে এবং বাম দিকে ইশারা করছিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন তাঁদের কি হল? তাঁরা এমনভাবে হাত দ্বারা ইশারা করে যেন তা অস্থির ঘোড়ার লেজ। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য এটা কি যথেষ্ট নয় যে, সে উরুর উপর হাত রাখবে এবং ডানে এবং বামে আপন ভাই-এর প্রতি সালাম করিবে।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ডান দিকে কিভাবে সালাম ফিরাবে?
১৩১৯. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি যে, তিনি প্রত্যেক নীচু হওয়ার সময় এবং উপরে উঠার সময় তাকবীর বলিতেন ,আর দাঁড়াবার সময় এবং বসার সময়েও তাকবীর বলিতেন। আর তিনি তাহাঁর ডান দিকে এবং বাম দিকে
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ”
বলে সালাম ফিরাতেন, তখন তাহাঁর গণ্ডদেশের শুভ্রতা দেখা যেত। আর আমি আবু বক্র[রাঃআঃ] এবং উমর [রাঃআঃ]-কেও অনুরূপ করিতে দেখেছি।”
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩২০. ওয়াসি ইবনি হাব্বান [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ]-কে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, তিনি প্রত্যেক বার যখন মাথা নিচু করিতেন তখন এবং যখন মাথা উঠাতেন তখন আল্লাহু আকবার বলিতেন তারপর তাহাঁর ডান দিকে
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
এবং তাহাঁর বাম দিকে
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
বলিতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ বাম দিকে কিভাবে সালাম ফিরাবে?
১৩২১. ওয়াসি ইবনি হাব্বান [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি ইবনি উমর [রাঃআঃ]-কে বললাম, আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ সম্পর্কে অবহিত করুন যে, তা কিরূপ ছিল? রাবী বলেন, তিনি তাকবীরের কথা উল্লেখ করিলেন। রাবী বলেন, তিনি অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] এমন কিছু বাক্য উল্লেখ করিলেন, যার অর্থ হল- নাবী [সাঃআঃ] তাকবীর এবং
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
বলে ডান দিকে এবং
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম
বলে বাম দিকে সালাম ফিরাতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৩২২. আব্দুল্লাহ[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চেহারার শুভ্রতা দেখছি। তিনি ডান দিকে
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ এবং বাম দিকে
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরাতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩২৩. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ডান দিকে সালাম ফিরাতেন, তখন তাহাঁর চেহারার শুভ্রতা দেখা যেত। আর যখন বাম দিকে সালাম ফিরাতেন তখনও তাহাঁর চেহারার শুভ্রতা দেখা যেত।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩২৪. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাহাঁর ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরাতেন,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
বলে তখন তাহাঁর চেহারার শুভ্রতা দেখা যেত, এদিক থেকে এবং ওদিক থেকে।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩২৫. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ডান দিকে সালাম ফিরাতেন
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ বলে তখন তাহাঁর চেহারার ডান দিকের শুভ্রতা দেখা যেত। অনুরূপভাবে বাম দিকে
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরালে তাহাঁর চেহারার বাম দিকের শুভ্রতা দেখা যেত।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ উভয় হাত দ্বারা সালাম ফিরানো
১৩২৬. জাবির ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি [একদিন] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করছিলাম, আমরা যখন সালাম ফিরালাম তখন হাত দ্বারা ইশারা করে বললাম,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম
তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে বলিলেন, তোমাদের কি হল যে, তোমরা হাত দ্বারা ইশারা করছ? যেন তা অস্থির ঘোড়ার লেজ ! যখন তোমাদের কেউ সালাম ফিরাবে তখন সে তার সাথীর প্রতি তাকাবে এবং স্বীয় হাত দ্বারা ইশারা করিবে না।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ইমামের সালাম ফিরানোর সময় মুকতাদির সালাম ফিরানো
১৩২৭. ইতবান ইবনি মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমার গোত্রে বনূ সালিমের সাথে নামাজ আদায় করতাম। একদা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আমি এসে বললাম [ইয়া রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]!] আমার দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পেয়েছে, আর [কখনো কখনো] আমার এবং আমার গোত্রের মসজিদের মাঝখানে বন্যা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, তাই আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি এসে আমার ঘরের কোন এক স্থানে নামাজ আদায় করেন যাকে আমি আমার নামাজের স্থান রূপে নির্দিষ্ট করে নিতে পারি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, ইনশাআল্লাহ! অতি শীঘ্রই আমি তা করব। পরের দিন সূর্য প্রখর হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার কাছে আসলেন, আর আবু বক্র [রা]-ও তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন। নাবী [সাঃআঃ] এসে আমার কাছে অনুমতি চাইলেন, আমি তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি না বসেই বলিলেন, তুমি তোমার ঘরের কোন্ স্থানে আমার নামাজ আদায় করা পছন্দ করো? তখন আমি তাঁকে ঐ স্থান দেখিয়ে দিলাম যে স্থানে তাহাঁর নামাজ আদায় করা আমি পছন্দ করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়ালেন, আমরাও তাহাঁর পেছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি [নামাজের শেষে] সালাম ফিরালে আমরাও তাহাঁর সঙ্গে সালাম ফিরালাম।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নামাজের পর সিজদা করা
১৩২৮. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ শেষ করার পর ফজর পর্যন্ত এগার রাকআত নামাজ আদায় করিতেন এবং সেই এগার রাকআত নামাজকে একটি রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দিতেন এবং প্রতিটি সিজদা এত দীর্ঘ করিতেন যে, তাতে তোমাদের কেউ তাহাঁর মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করিতে পারতো। এই হাদিসের কোন কোন রাবী একে অন্যের থেকে কিছু অংশ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নামাজে সালাম দেওয়ার এবং কথা বলার পর সাহুর [ভুল সংশোধনের জন্য] দুটি সিজদা করা
১৩২৯. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] [একদা নামাজে] সালাম ফিরালেন। পরে কথা বলে ফেললেন। তারপর সাহুর [ভুলের] দুটি সিজদা করিলেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সাহুর দুটি সিজদার পর সালাম [ফিরানো]
১৩৩০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [একদা নামাজে] সালাম ফিরিয়ে ফেললেন এবং সেই বসা অবস্থায় থেকেই দুটি সাহুর সিজদা করিলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৩৩১. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
[একদা] নাবী [সাঃআঃ] তিন রাকআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন। তখন তাঁকে খিরবাক [রাঃআঃ] বলিলেন, আপনি নামাজ তিন রাকআত আদায় করিয়াছেন। তখন তিনি মুসল্লীদের নিয়ে অবশিষ্ট এক রাকআত আদায় করে নিলেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে সাহুর দুটি সিজদা করে নিলেন এবং আবারো সালাম ফিরালেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানো এবং ইমামের কিবলার দিক থেকে মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসার মধ্যবর্তী সময়ে ইমামের বসা
১৩৩২. বারা ইবনি আযিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর দিকে তাহাঁর নামাজ আদায়কালে লক্ষ্য রাখছিলাম, আমি তাহাঁর কিয়াম [দাঁড়ানো], রুকূ এবং রুকূর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো দেখছিলাম। তাহাঁর সিজদা, সিজদার মাঝখানের বসা, তাহাঁর সিজদা, তাহাঁর সালাম ফিরানো এবং মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা প্রায়ই সমান হতো।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৩৩. উম্মে সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
মহিলারা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে যখন নামাজের শেষে সালাম ফিরাত, দাঁড়িয়ে যেত১ এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের স্থানে বসে থাকতেন। আর পুরুষদের মধ্যে যারা যারা নামাজ শেষ করে ফেলত [তারাও বসে থাকত] যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়াতেন তখন পুরুষরাও দাঁড়িয়ে যেত।
{১ এরা মসজিদ থেকে বের হয়ে নিজ নিজ ঘরে পৌঁছে যেত।}
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৩৪. ইয়াযীদ ইবনি আসওয়াদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি [একদা] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। যখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ শেষ করিলেন তখন তিনি মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসলেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ইমামের সালাম ফিরানোর পর তাকবির বলা
১৩৩৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ শেষ হওয়া জানতে পারতাম তাকবিরের দ্বারা।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নামাজের সালাম ফিরাবার পর মু’আওয়াযাত [সূরা ফালাক ও সূরা নাস] পড়ার নির্দেশ
১৩৩৬. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে প্রত্যেক নামাজের পর সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তে আদেশ করিয়াছেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর ইস্তিগফার করা [মাগফিরাত চাওয়া]
১৩৩৭. মাহমূদ ইবন খালিদ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর [আযাদকৃত] গোলাম সাওবান [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাহাঁর নামাজে সালাম ফিরাতেন, তিনবার ইস্তিগফার করিতেন এবং বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتُ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রকতা ইয়া- যাল জালা-লি ওয়াল ইকর-ম”
(হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময়, আর তোমার কাছ থেকেই শান্তি আসে, তুমি বরকতময়, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক।)।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ইস্তিগফার করার পর যিকির করা
১৩৩৮. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন [নামাজে] সালাম ফিরাতেন তখন বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
আল্ল-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রকতা ইয়া- যাল জালা-লি ওয়াল ইকর-ম”
(হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময়, আর তোমার কাছ থেকেই শান্তি আসে, তুমি বরকতময়, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক।)।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর তাহলীল পড়া [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া]
১৩৩৯. আবু যুবায়র [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ] কে এই মিম্বরের উপর বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জকহ্ন সালাম ফিরাতেন তখন বলিতেনঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ، أَهْلَ النِّعْمَةِ وَالْفَضْلِ وَالثَّنَاءِ الْحَسَنِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর লা- হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি লা- ইলা-হা ইল্লাল্লহু লা- না’বুদু ইল্লা- ইয়্যাহু আহলান্ নি’মাতি ওয়াল ফাযলি ওয়াসসানা-য়িল হাসানি লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন”
(আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শারীক নেই। মহাবিশ্বের গোটা রাজত্ব তাঁর। সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। সর্বশক্তিমান তিনি। আল্লাহ ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই, তিনি ছাড়া কোন ভরসাস্থলও নেই। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বুদ নেই। আমরা কেবল তাকে ছাড়া আর কারো গোলামী করি না। সমস্ত নি’আমাত, অনুগ্রহ ও উত্তম গুণাবলীর অধিকারী তিনিই। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমরা একনিষ্ঠভাবে কেবল তারই আনুগত্য করি- যদিও কাফিররা তা পছন্দ করে না।)।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালামের পর যিকির ও তাহলীলের সংখ্যা
১৩৪০. আবু যুবায়র [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ] প্রত্যেক নামাজের পর তাহলীল করিতেন। তিনি বলিতেনঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- না বুদু ইল্লা- ইয়াহু লাহুন নি’ মাতু ওয়ালাহুল ফাযলু ওয়ালাহুস সানা-উল হাসানু লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন”
(আল্লাহ ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই আর তিনি সর্বোপরি শক্তিমান। আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। তাঁর ছাড়া আমরা আর কারো ইবাদত করি না, তাঁরই যাবতীয় নি’আমাত [সম্পদ], তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ এবং তাঁরই যাবতীয় সুপ্রশংসা আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধচিত্তে তাঁরই উপাসনা করি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।)
তারপর ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ] বলিতেন যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই সমস্ত বাক্য দ্বারা [প্রত্যেক] নামাজের পর তাহলীল পড়তেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নামাজ শেষে আরেক প্রকার দোয়া
১৩৪১. ওয়াররাদ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, মুআবিয়া [রাঃআঃ] মূগীরা ইবনি শু’বা [রাঃআঃ] এর কাছে লিখলেন যে, আপনি আমাকে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছ থেকে শোনা কিছু দোয়া সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ শেষ করিতেন তখন বলিতেনঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর আল্ল-হুম্মা লা- মা-নি’আ লিমা- আত্বয়তা ওয়ালা- মু’ত্বিয়া লিমা- মানা’তা ওয়ালা-ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ”
(আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, যিনি একক ও শরীকবিহীন, সকল রাজত্ব ও রাজ্য তাঁরই এবং তার জন্যেই সকল প্রশংসা। আর তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো তা কেউ রোধ করতে পারে না, তুমি যা থেকে বঞ্চিত করো তা কেউ দান করতে পারে না, তুমি যা নির্ধারণ করে দিয়েছো তা কেউ রোধ করতে পারে না। আর কোন সম্মানী ব্যক্তির উচ্চ পদমর্যাদা তাকে তোমার শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারবে না।)
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৪২. ওয়াররাদ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৪৩. ওয়াররাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] মুয়াবিয়া [রাঃআঃ]-এর কাছে লিখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] [প্রত্যেক] নামাজের পর যখন সালাম ফিরাতেন তখন বলিতেনঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুলি শাইয়িন কদীর”
(আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, যিনি একক ও শরীকবিহীন, সকল রাজত্ব ও রাজ্য তাঁরই এবং তার জন্যেই সকল প্রশংসা। আর তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান।)।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর অন্য প্রকার যিকির
১৩৪৪. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কোন মজলিসে বসতেন অথবা নামাজ আদায় করিতেন তখন কিছু বাক্য উচ্চারন করিতেন। আয়িশাহ [রাঃআঃ] তাঁকে উক্ত বাক্যসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, কেউ যদি ভাল বাক্য বলে তা হলে সেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত তাহাঁর মোহরস্বরূপ হইবে। আর সে যদি অন্য ধরনের বাক্য বলে তা হলে সেগুলো তাহাঁর জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ হইবে। [সে বাক্যগুলো হল]ঃ
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক”
(হে আল্লাহ! মহিমা আপনার, আমি আপনার প্রশংসা সহকারে শুরু করছি। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং অনুতপ্ত হয়ে আপনার নিকট ফিরে আসছি।)।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর আরেক প্রকার দোয়া ও যিকির
১৩৪৫. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমার কাছে এক জন ইহুদী মহিলা এসে বলিল, কবরের আযাব পেশাব থেকে [সাবধানতা অবলম্বন না করার কারনে] হইবে। {আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন} তখন আমি তাঁকে বললাম, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। সে বলিল – না, সত্য। আমরা পেশাব লাগলে চামড়া এবং কাপড় অবশ্যই কেটে ফেলতাম। এ সময় রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজের জন্য বের হয়ে এলেন। ইত্যবসরে আমাদের আওয়াজ বড় হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি বলিলেন, কি ব্যাপার? আমি তাঁকে ঐ ইহুদী মহিলা যা যা বলেছিল সে সম্পর্কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বলিলেন, সে সত্যই বলেছে। তারপর তিনি এমন কোন নামাজ আদায় করেননি, যে নামাজের পর [আরবি] বলেননি।
رَبَّ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ أَعِذْنِي مِنْ حَرِّ النَّارِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নামাজ শেষে আরেক প্রকার দোয়া
১৩৪৬. আবু মারওয়ান [রহঃ] হইতে বর্ণীত
কা’ব [রাঃআঃ] তাহাঁর কাছে ঐ আল্লাহর শপথ করে বলেছেন, যিনি মূসা [আ.] এর জন্য সমুদ্রকে বিদীর্ণ করেছিলেন, নিশ্চয়ই আমরা তাওরাতে দেখিতে পাই যে, দাউদ নাবীয়্যুল্লাহ [আঃ] যখন তাহাঁর নামাজ থেকে সালাম ফিরাতেন তখন বলিতেনঃ —-
اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِي الَّذِي جَعَلْتَهُ لِي عِصْمَةً وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي جَعَلْتَ فِيهَا مَعَاشِي اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَأَعُوذُ بِعَفْوِكَ مِنْ نِقْمَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
—মারওয়ান [রহঃ] বলেন, কা’ব [রাঃআঃ] আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, সুহায়ব [রাঃআঃ] তাহাঁর কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত মুহাম্মদ [সাঃআঃ] ঐ সমস্ত দোয়া তাহাঁর নামাজ শেষে সালাম ফিরানোর পর বলিতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালামের পর [বিতাড়িত শয়তান থেকে] পানাহ চাওয়া
১৩৪৭. মুসলিম ইবনি আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমার পিতা প্রত্যেক নামাজের পর বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি ওয়া ‘আযা-বিল কবর”
(হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরী, দরিদ্রতা ও কবরের আযাব হতে আশ্রয় চাচ্ছি।)
তারপর আমিও তা বলিতে থাকলে আমার পিতা আমাকে বলিলেন, হে বৎস! তুমি এ দোয়াগুলো কার কাছ থেকে শিখেছ? আমি বললাম, আপনার কাছ থেকে। তারপর তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [প্রত্যেক] নামাজের পর এই দোয়াগুলো বলিতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর তাসবীহের সংখ্যা
১৩৪৮. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, দুটি অভ্যাস এমন রয়েছে যে, কোন মুসলমান ঐ দুটি অভ্যাসে অভ্যস্ত হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। ঐ দুটি অভ্যাস সহজ অথচ তার আমলকারী হইবে খুবই কম। তিনি বলে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তোমাদের কেউ যদি প্রত্যেক নামাজের পর দশবার তাসবীহ
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র , তাহমীদ
পড়ে, দশবার
الْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর এবং তাকবীর
পড়ে, আর দশবার
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
বলে, তাহলে একশত পঞ্চাশ বার মুখে বলা হয় আর তা পাল্লায় হইবে এক হাজার পাঁচশত বার আর আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে দেখলাম যে, তিনি তা অঙ্গুলি দ্বারা গণনা করছেন। আর যখন তোমাদের কেউ তার বিছানায় অথবা শয়নের স্থানে আসবে, তখন সে যেন সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আর আল্লাহু আকবর ৩৪ বার বলে। এ তো মুখে বলা হইবে একশত বার, আর পাল্লায় হইবে এক হাজার বার। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে প্রত্যেক দিন রাতে দুই হাজার পাঁচশত গুনাহ করে? কেউ বলিল, ইয়া রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ]! আমরা কেন তার অভ্যাস গড়ে তুলব না? তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, শয়তান তোমাদের আরো কাছে এসে তার নামাজরত অবস্থায় বলিতে থাকে, অমুক কাজ স্মরণ কর, অমুক কাজ স্মরণ কর আর তার নিদ্রার সময় তার কাছে এসে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ আর এক প্রকার তাসবীহর সংখ্যা
১৩৪৯. কা’ব ইবনি উজরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, এমন কতগুলো তাসবীহ রয়েছে যার পাঠকারী তার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হইবে না। প্রত্যেক নামাজের পর সে
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র , (৩৩ বার)
الْحَمْدُ لِلَّهِ
‘উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান (৩৩ বার) এবং
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান (৩৪ বার) বলবে।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৫০. যায়দ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, [একদা] সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করা হলো – তারা যেন প্রত্যেক নামাজের পর
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র , (৩৩ বার)
الْحَمْدُ لِلَّهِ
‘উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান (৩৩ বার) এবং
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান (৩৪ বার) বলবে।
তারপর যায়দ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] এর স্বপ্নে এক আনসারী সাহাবী নীত হলে যায়দ [রাঃআঃ] কে উদ্দেশ্য করে বলা হল, তোমাদের কি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদেশ করিয়াছেন যে, তোমরা প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবর’ বলবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন ঐ আনসারী বলিলেন, তোমরা ঐ তাসবীহগুলোকে ২৫ বার পড়বে এবং তাতে
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু কেও অন্তর্ভুক্ত করে নেবে। যখন সকাল হল তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আসে স্বপ্ন বৃত্তান্ত করাতে তিনি বলিলেন, তোমরা তাসবীহগুলোকে অনুরুপভাবেই পড়বে।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৫১. ইবন উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল যে, কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করছে যে, তোমাদের নাবী [সাঃআঃ] কিসের আদেশ করিয়াছেন? সে বলিল, আমাদের নাবী [সাঃআঃ]
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র , (৩৩ বার)
الْحَمْدُ لِلَّهِ
‘উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান (৩৩ বার) এবং
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান (৩৪ বার) বলবে।
বলিতে আদেশ করিয়াছেন। এ হল একশত বার। সে বলিল, তোমরা ২৫ বার ‘সুবহানাল্লাহ‘ ২৫ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ‘ এবং ২৫ বার ‘আল্লাহু আকবর‘ এবং ২৫ বার
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে, তাও একশত বার হইবে। যখন সকাল হল ঐ ব্যক্তি স্বপ্ন বৃত্তান্ত নাবী [সাঃআঃ] কে জানাল। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা তাসবীহ অনুরুপই বলবে, যেরূপ আনসারী ব্যক্তি বলেছে।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৩৫২. জুওয়ায়রিয়া বিনত হারিস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যে, [একদা] নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর কাছ দিয়ে গেলেন। তখন তিনি মসজিদে দোয়া করছিলেন। পুনরায় প্রায় দ্বিপ্রহরের সময় তাহাঁর কাছ দিয়ে গেলেন, তখন তাঁকে বলিলেন, তুমি তোমার পূর্বাবস্থায় এখনো রয়ে গেছ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ; রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি কি তোমাকে শিক্ষা দেব না অর্থাৎ এমন কিছু দোয়া যেগুলো তুমি বলবে ?
سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ
“সুবহা-নাল্ল-হি ‘আদাদা খলকিহী সুবহা-নাল্ল-হি ‘আদাদা খলকিহী সুবহা-নাল্ল-হি ‘আদাদা খলকিহী, সুবহা-নাল্ল-হি রিযা- নাফসিহী সুবহা-নাল্ল-হি রিযা- নাফসিহী সুবহা-নাল্ল-হি রিযা- নাফসিহী, সুবহা-নাল্ল-হি যিনাতা ‘আরশিহী সুবহা-নাল্ল-হি যিনাতা ‘আরশিহী সুবহা-নাল্ল-হি যিনাতা ‘আশিহী, সুবহা-নাল্ল-হি মিদা-দা কালিমা-তিহী সুবহা-নাল্ল-হি মিদা-দা কালিমা-তিহী সুবহা-নাল্ল-হি মিদা-দা কালিমা-তিহী” (পবিত্রতা ও প্রশংসা আল্লাহরই তার সৃষ্টির সংখ্যানুপাতে, পবিত্রতা ও প্রশংসা আল্লাহরই তার সৃষ্টির সংখ্যানুপাতে, পবিত্রতা ও প্রশংসা আল্লাহরই তার সৃষ্টির সংখ্যানুপাতে। আল্লাহর পবিত্রতা তাঁর সন্তুষ্টি পরিমাণ, আল্লাহর পবিত্রতা তার সন্তুষ্টি পরিমাণ, আল্লাহর পবিত্রতা তার সন্তুষ্টি পরিমাণ। আল্লাহর পবিত্রতা তাঁর আরশের ওজন অনুপাতে, আল্লাহর পবিত্রতা তাঁর আরশের ওজন অনুপাতে, আল্লাহর পবিত্রতা তার আরশের ওজন অনুপাতে। আর আল্লাহর পবিত্রতা তাঁর কালিমাসমূহের কালি অনুসারে, আর আল্লাহর পবিত্রতা তার কালিমাসমূহের কালি অনুসারে, আর আল্লাহর পবিত্রতা তার কালিমাসমূহের কালি অনুসারে।)*
* এ হাদীসটি মুসলিম-এর বর্ণনায় শব্দগুলো সংক্ষিপ্ত এভাবে এসেছে। তাই নিম্নোল্লেখিতভাবে পড়লেও চলবে-
“সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহি আদাদা খল্কিহি ওয়া রিযা- নাফসিহি ওয়াযিনাতা আরশিহি ওয়ামি দা-দা কালিমা-তিহি”,
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৫৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, কিছু দরিদ্র লোক [একদা] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে সে বলিল, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! ধনীরাও নামাজ আদায় করে থাকে যেমনিভাবে আমরা আদায় করে থাকি আর তারাও সিয়াম পালন করে থাকে যেমনিভাবে আমরা পালন করে থাকি, কিন্তু তাহাদের জন্য রয়েছে সম্পদ, যা থেকে তারা দান-সদকা করে থাকে এবং গোলাম [কিনে] আযাদ করে থাকে। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যখন তোমরা নামাজ আদায় করিবে, তখন বলবে, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবর ৩৩ বার এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ১০ বার। কেননা, এর দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমপর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারবে এবং তোমাদের পরবর্তী থেকে অগ্রগামী হয়ে যেতে পারবে।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
১৩৫৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের নামাজের পর একশত বার
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র
এবং একশত বার
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হইবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনাসম হয়।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ তাসবীহ গণনা করা
১৩৫৫. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে দেখেছি যে, তিনি তাসবীহ গণনা করিতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর কপাল না মোছা
১৩৫৬. আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [প্রতি] মাসের মধ্যবর্তী দশ দিন ইতিকাফ করিতেন। যখন বিংশতিতম রাত অতিবাহিত হওয়ার এবং একবিংশতিতম রাতের আগমনের সময় হত তিনি তাহাঁর ঘরে ফিরে আসতেন এবং তাহাঁর সঙ্গে যারা ইতিকাফ করিতেন তারাও ফিরে আসতেন। তারপর তিনি অন্য এক সাথে, যে মাসে ইতিকাফ করেছিলেন ঐ রাতেও রয়ে গেলেন যে রাতে তিনি ঘরে ফিরে আসতেন এবং লোকদের সামনে খুতবা দিলেন। তাঁদেরকে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী আদেশ করিলেন। তারপর বলিলেন, আমি এই মধ্যবর্তী দশদিন ইতিকাফ করতাম, পরে আমার কাছে প্রকাশ পেল যে, আমি এই শেষ দশ দিনেও ইতিকাফ করি, অতএব জারা আমার সাথে গত মধ্যবর্তী দশদিন ইতিকাফ করেছ তাঁরা স্বীয় ইতিকাফের স্থানে স্থির থাকিবে। আমি এই শবে কদরকে স্বপ্নে দেখেছিলাম কিন্তু আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে, অতএব তোমরা তা এই শেষ দশ রাতে প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ করো। স্বপ্নে আমাকে দেখলাম যে, আমি পানি এবং কাদার মধ্যে সিজদা করছি। আবু সাঈদ [রাঃআঃ]বলেন, আমাদের উপর একবিংশতিতম রাতে বৃষ্টি হল, বৃষ্টির পানি মসজিদে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ আদায় করার জায়গার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেল। আমি তাহাঁর দিকে লক্ষ্য করলাম যে, তিনি ফজরের নামাজ থেকে সালাম ফিরিয়ে নিয়েছেন, আর তাহাঁর চেহারা পানি ও কাদা দ্বারা আপ্লুত ছিল।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর ইমামের তাহাঁর নামাজের স্থানে বসে থাকা
১৩৫৭. জাবির ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফজরের নামাজের পর তাহাঁর নামাজের স্থানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৫৮. সিমাক ইবনি হার্ব [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনি সামুরা [রাঃআঃ]-কে বললাম, আপনি তো রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সঙ্গে উঠা-বসা করে থাকতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ; যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফজরের নামাজ আদায় করিতেন, তাহাঁর নামাজের স্থানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। তখন তাহাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে কথাবার্তা বলিতেন, তাঁরা জাহিলী যুগের ঘটনাসমুহের আলোচনা করিতেন, কবিতা আবৃত্তি করিতেন এবং হাসা-হাসিও করিতেন, আর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুচকি হাসতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নামাজ আদায় শেষে ফিরে বসা
১৩৫৯. সুদ্দী [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি যখন নামাজ শেষ করি তখন কিভাবে ফিরে বসব? আমার ডান দিক থেকে না আমার বাম দিক থেকে? তিনি বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে যা অধিকাংশ সময় দেখেছি তা হলো তিনি তাহাঁর ডান দিক থেকে ফিরে বসতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৬০. আসওয়াদ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন শয়তানের জন্য তার মনে কোন অংশ না রাখে এরূপ মনে করে যে, তার জন্য [নামাজ শেষে] ডান দিক থেকে ফেরাই জরুরী। আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি, তাহাঁর অধিকাংশ ফিরে বসা তাহাঁর বাম দিক থেকেই হত।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৬১. আয়শা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দাঁড়িয়ে ও বসে পানি পান করিতে, খালি পায়ে ও জুতা পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করিতে এবং নামাজ শেষে তাহাঁর ডান দিক থেকে ও বাম দিক থেকে ফিরে বসতে দেখেছি।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ মহিলারা নামাজ শেষে কখন ফিরে যাবে?
১৩৬২. আয়শা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, মহিলারা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করত। যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সালাম ফিরাতেন তখন তারা চাদর মুড়ি দেওয়া অবস্থায় ফিরে যেত। তাহাদেরকে অন্ধকারের দরুন চেনা যেত না।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নামাজ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ইমামের অগ্রে গমনের নিষেধাজ্ঞা
১৩৬৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন, তারপর তিনি আমাদের দিকে তাহাঁর চেহারা ফিরিয়ে বলিলেন, আমি হলাম তোমাদের ঈমাম। অতএব, তোমরা রুকুতে আমার আগে যাবে না। সিজদাতেও না, দাঁড়ানোতেও না এবং ফিরে যাবার সময়েও না। কেননা, আমি তোমাদের আমার সামনের দিক থেকেও দেখি এবং পেছনের দিক থেকেও। তারপর তিনি বলিলেন, ঐ আল্লাহর শপথ যাঁর কুদরতী হাতে আমার প্রাণ! যদি তোমরা ঐ জিনিস দেখিতে যা আমি দেখেছি, তাহলে তোমরা অবশ্যই কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে। আমরা বললাম, আপনি কি দেখেছেন ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বলিলেন, জান্নাত এবং জাহান্নাম।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে তাহাঁর সালাম ফিরানো পর্যন্ত নামাজ আদায় করে তাহাঁর সওয়াব
১৩৬৪. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা এক রমযানে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সিয়াম পালন করলাম, সেবার তিনি আমাদের সাথে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন না, যত দিন পর্যন্ত না মাসের সাত দিন অবশিষ্ট রইল; তখন তিনি আমাদের সাথে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন তাতে রাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়ে গেল। তারপর যখন ছয়দিন অবশিষ্ট রইল, তখনও তিনি আমাদের সাথে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন না। পরে যখন পাঁচ দিন অবশিষ্ট রইলো আবার তিনি আমাদের সাথে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন এবং তাতে রাত্রের প্রায় অর্ধেক অতিবাহিত হয়ে গেল। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! যদি আপনি আমাদের নিয়ে পুরো রাত তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিতেন! তিনি বলিলেন, কোন ব্যক্তি যখন ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে নামাজ থেকে বের হওয়া পর্যন্ত তার নামাজ আদায় করে তার জন্য এক পূর্ণ রাত নামাজ আদায় করার সওয়াব লেখা হয়। তারপর যখন চারদিন অবশিষ্ট রইল তিনি তখনও আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন না। তারপর যখন মাসের তিনদিন অবশিষ্ট রইল, তিনি তাহাঁর কন্যা এবং স্ত্রীগণের কাছে লোক পাঠালেন এবং সাহাবীগণকে একত্র করিলেন এবং আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র নামাজ এমনিভাবে আদায় করিলেন যে, আমরা ভয় পেয়ে গেলাম- আমরা ফালাহ-এর সময় না হারিয়ে ফেলি। তারপর তিনি আমাদের নিয়ে ঐ মাসের আর কোনদিন তারাবীহ্র নামাজ আদায় করেননি। রাবী দাঊদ [রহঃ] বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ফালাহ-এর অর্থ কি? তিনি বলিলেন, সাহরী খাওয়া।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ইমামের জন্য মুসল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়ার অনুমতি
১৩৬৫. উকবা ইবনি হারিস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] এর সঙ্গে মদীনাতে একবার আসরের নামাজ আদায় করলাম। তারপর তিনি সালাম ফিরিয়ে দ্রুত মুসল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে চলে গেলেন। মুসল্লীরা তাহাঁর দ্রুততায় আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলে, তাহাঁর কিছু সাহাবী তাঁকে অনুসরণ করিলেন। পরে তিনি তাহাঁর কোনো এক বিবির কাছে গিয়ে বের হয়ে এলেন এবং বলিলেন, আসরের নামাজ আদায়রত অবস্থায় আমার কাছে থাকা কিছু স্বর্ণের কথা মনে পড়লো। আমি সমীচীন মনে করলাম না যে, সেগুলো আমার কাছে রাতে থাকুক। অতএব, আমি সেগুলো বন্টন করে দেওয়ার আদেশ দিয়ে এসেছি।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ যখন কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি কি নামাজ আদায় করেছ ? তখন সে কি না বলবে?
১৩৬৬. জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যে, উমর ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ] খন্দকের যুদ্ধের দিন সুর্যাস্তের পর কাফির কুরাইশদের গালমন্দ করিতে লাগলেন এবং বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আসরের নামাজ আদায় না করিতেই সূর্য অস্তমিত হওয়ার উপক্রম হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমিও তো উক্ত নামাজ আদায় করিনি। তারপর আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর সঙ্গে বুতহান১ নামক স্থানে অবতরণ করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজের জন্য ওযূ করিলেন, আমরাও নামাজের জন্য ওযূ করলাম। তারপর তিনি সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আসরের নামাজ আদায় করিলেন। পরে তিনি মাগরিবের নামাজ আদায় করিলেন।
{১. মদীনার এক উপত্যকার নাম}
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply