সালাম ও তার পদ্ধতি
সালাম ও তার পদ্ধতি >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-৪০ঃ অনুমতি প্রার্থনা, অনুচ্ছেদঃ (১-৩৪)=৩৪টি
১. অনুচ্ছেদঃ সালামের প্রসার করা
২. অনুচ্ছেদঃ সালামের ফাযীলাত সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
৩. অনুচ্ছেদঃ তিনবার অনুমতি চাইতে হইবে
৪. অনুচ্ছেদঃ সালামের জবাব দেয়ার নিয়ম
৫. অনুচ্ছেদঃ সালাম পৌঁছানো
৬. অনুচ্ছেদঃ প্রথমে সালাম প্রদানকারী ব্যক্তির ফাযীলাত
৭. অনুচ্ছেদঃ হাতে ঈশারা করে সালাম দেয়া মাকরূহ
৮. অনুচ্ছেদঃ শিশুদেরকে সালাম দেয়া
৯. অনুচ্ছেদঃ স্ত্রীলোককে সালাম দেয়া
১০. অনুচ্ছেদঃ নিজের ঘরে প্রবেশকালে সালাম দেয়া
১১. অনুচ্ছেদঃ কথা বলার আগেই সালাম দিতে হইবে
১২. অনুচ্ছেদঃ যিম্মীদের [অমুসলিম নাগরিকদের] সালাম দেয়া অপছন্দনীয়
১৩. অনুচ্ছেদঃ মুসলিম ও অমুসলিমদের একত্র সমাবেশে সালাম প্রদান
১৪. অনুচ্ছেদঃ সাওয়ারী ব্যক্তি পদচারী ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করিবে
১৫. অনুচ্ছেদঃ উঠতে বসতে সালাম করা
১৬. অনুচ্ছেদঃ বাড়ির সম্মুখভাগ দিয়ে সম্মতি চাইবে
১৭. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বাসিন্দাদের বিনা অনুমতিতে তাহাদের ঘরের ভিতরে উঁকি ঝুঁকি মারে
১৮. অনুচ্ছেদঃ অনুমতি চাওয়ার পূর্বেই সালাম দিতে হয়
১৯. অনুচ্ছেদঃ সফরে থেকে ফিরে রাতের বেলায় স্ত্রীর নিকট যাওয়া অপছন্দনীয়
২০. অনুচ্ছেদঃ লেখার ওপর ধুলা ছিটিয়ে দেওয়া
২১. অনুচ্ছেদঃ কলম কানের উপর রাখা
২২. অনুচ্ছেদঃ সুফিয়ানী ভাষা শিক্ষা করা
২৩. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের সাথে পত্রবিনিময়
২৪. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের নিকট চিঠি লেখার নিয়ম
২৫. অনুচ্ছেদঃ চিঠির উপর সীলমোহর লাগানো
২৬. অনুচ্ছেদঃ সালাম বিনিময়ের নিয়ম
২৭. অনুচ্ছেদঃ প্রস্রাবরত লোককে সালাম দিয়া মাকরূহ
২৮. অনুচ্ছেদঃ প্রথমেই “আলাইকাস্ সালাম” বলা নিষেধ
২৯. অনুচ্ছেদঃ মাজলিসে খালি জায়গায় বসা
৩০. অনুচ্ছেদঃ পথের পার্শ্বে বসা লোকের দায়িত্ব
৩১. অনুচ্ছেদঃ মুসাফাহার [করমর্দন] বর্ণনা
৩২. অনুচ্ছেদঃ মুআনাকা [কোলাকুলি] ও চুম্বন
৩৩. অনুচ্ছেদঃ হাতে ও পায়ে চুমু দেওয়া
৩৪. অনুচ্ছেদঃ মারহাবা [স্বাগতম] বলা
১. অনুচ্ছেদঃ সালামের প্রসার করা
২৬৮৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না, যে পর্যন্ত না [তোমরা] ঈমানদার হইবে, আর ঈমানদার হইতে পারবে না, যে পর্যন্ত না পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করিবে। আমি কি এমন একটি কাজের কথা তোমাদেরকে বলে দিব না, যখন তোমরা তা করিবে, পরস্পর ভালোবাসা স্থাপিত হইবে? তোমরা একে অপরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৬৯২], মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনি সালাম, শুরাইহ ইবনি হানী তার বাবার সূত্রে, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আল-বারাআ, আনাস ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২. অনুচ্ছেদঃ সালামের ফাযীলাত সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
২৬৮৯. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট একজন লোক এসে বলিল,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ দশ [নেকী]। তারপর অন্য এক লোক এসে বলিল,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ বিশ। অতঃপর আরেক লোক এসে বলিল,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ, আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ ত্রিশ।
সহীহঃ তালীকুর রাগীব [৩/২৬৮] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, তবে এ সূত্রে গারীব। আলী, আবু সাঈদ ও সাহল ইবনি হুনাইফ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩. অনুচ্ছেদঃ তিনবার অনুমতি চাইতে হইবে
২৬৯০. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু মূসা [রাদি.] উমার [রাদি.] এর নিকট অনুমতি চেয়ে বলেন,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম, আমি কি আসতে পারি?
উমার [রাদি.] বলেন, এক। আবু মূসা [রাদি.] কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তিনি আবারও সালাম দিয়ে বলেন, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? উমার [রাদি.] বলেন, দুই। তারপর আবু মূসা [রাদি.] অল্প সময় নীরবতা অবলম্বন করিলেন। তিনি আবার বলিলেন, আসসালামু আলাইকুম السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ, আমি কি আসতে পারি? উমার [রাদি.] বলিলেন, তিন। এবার তিনি চলে যেতে লাগলেন। উমার [রাদি.] প্রহরীকে জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি কি করছেন? প্রহরী বলিল, তিনি চলে গেছেন। তিনি বলিলেন, তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে নিয়ে এসো। তারপর তিনি উমারের সামনে এলে তিনি প্রশ্ন করিলেন, আপনি এরকম করিলেন কেন? তিনি বলিলেন, আমি সুন্নাত পালন করেছি। উমার [রাদি.] বলিলেন, সুন্নাত পালন করিয়াছেন? আল্লাহর কসম! এর স্বপক্ষে আপনাকে দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করিতে হইবে, তা না হলে আমি আপনার ব্যবস্থা করছি [অর্থাৎ- শাস্তি দিব]। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি [আবু মূসা] আমাদের নিকট আসলেন। আমরা কয়জন আনসারী বন্ধু একসাথে বসে ছিলাম। তিনি বলিলেন, হে আনসার সম্প্রদায়! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর হাদীস সম্পর্কে কি তোমরা সবার চাইতে বেশি জ্ঞাত নও? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বলেননি যে, তিনবার অনুমতি চাইতে হইবে? তারপর তোমাকে অনুমতি দিলে তো দিল, নতুবা ফিরে যাবে। উপস্থিত লোকজন তার সাথে কৌতুক করিতে লাগল। আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, এবার আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম এবং বললাম, আপনার উপর এ ব্যাপারে কোন শাস্তি হলে আমি আপনার অংশীদার হব। রাবী বলেন, তারপর তিনি উমারের নিকট এসে এ ঘটনা বলিলেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, আমি এ সম্পর্কে জানতাম না।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আলী [রাদি.] সাদ [রাদি.] এর মুক্তদাসী উম্মু তারিক [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলে, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আল-জুরাইরীর নাম সাঈদ ইবনি ইয়াস, উপনাম আবু মাসউদ। এ হাদীসটি আবু নাযরা হইতে অন্যরাও বর্ণনা করিয়াছেন। আবু নাযরা আল-আবদীর নাম আল-মুনযির ইবনি মালিক ইবনি কুতাআহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৬৯১. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে তিনবার সম্মতি চাইলাম। তিনি আমাদের সম্মতি দিলেন।
সনদ দূর্বল, মতন মুনকার। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু যুমাইলের নাম সিমাক আল-হানাফী। উমার [রাদি.] নিজেই যেখানে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট তিনবার সম্মতি চাওয়ায় তিনি তাকে [বাড়ির ভেতরে যাওয়ার] সম্মতি দেন, সেখানে তিনিই আবার আবু মূসা [রাদি.]- এর হাদীস প্রত্যাখ্যান করেন। এর কারণ এই যে, তিনি আবু মূসা [রাদি.] বর্ণিত হাদীসের “তোমাকে সম্মতি দিলে তো দিল, নতুবা ফিরে যাবে।” অংশটুকু প্রসঙ্গে জানতেন না। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৪. অনুচ্ছেদঃ সালামের জবাব দেয়ার নিয়ম
২৬৯২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সে সময়ে মসজিদের এক পাশে বসা ছিলেন। লোকটি নামাজ আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ
وَعَلَيْكَ
ওয়াআলাইকা, তুমি ফিরে গিয়ে আবার নামাজ আদায় কর। তারপর তিনি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করিলেন।
সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১১৬০], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীস উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে, তিনি সাঈদ আল-মাক্ববুরী হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে এই সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ বর্ণনায় “ফা সাল্লামা আলাইহি, ওয়া ক্ব-লা ওয়া আলাইকা” এর উল্লেখ নেই। ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি অনেক বেশি সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫. অনুচ্ছেদঃ সালাম পৌঁছানো
২৬৯৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, জিবরীল [আঃ] তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তিনি [আয়িশাহ] বলিলেন,
وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
ওয়া আলাইহিস সালামু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ।এ অনুচ্ছেদে বানী নুমাইরের জনৈক ব্যক্তি তার বাবা হইতে, তিনি দাদা হইতে এই সূত্রে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি যুহরীও আবু সালামা হইতে, তিনি আয়িশাহ [রাদি.] এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬. অনুচ্ছেদঃ প্রথমে সালাম প্রদানকারী ব্যক্তির ফাযীলাত
২৬৯৪. আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! দুজন লোকের মধ্যে সাক্ষাৎ হলে কে প্রথম সালাম দিবে? তিনি বললেনঃ তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার বেশি নিকটবর্তী।
সহীহঃ মিশকাত [৪৬৪৬], তাখরীজুল কালিমিত তাইয়্যিব [১৯৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। মুহাম্মাদ [বুখারী] বলেন, আবু ফারওয়া আর-রাহাবী বর্ণনাকারী হিসেবে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু তার ছেলে মুহাম্মাদ তার সূত্রে বহু মুনকার হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭. অনুচ্ছেদঃ হাতে ঈশারা করে সালাম দেয়া মাকরূহ
২৬৯৫. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী-নাসারাদের অনুকরণ করো না। কেননা ইয়াহূদীগণ আঙ্গুলের ইশারায় এবং নাসারাগণ হাতের ইশারায় সালাম দেয়।
হাসানঃ সহীহাহ [২১৯৪] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটির সনদ যঈফ। এই হাদীসটি ইবনি লাহীআর সূত্রে ইবনি মুবারক বর্ণনা করিয়াছেন কিন্তু তা মারফূ হিসেবে নয়। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৮. অনুচ্ছেদঃ শিশুদেরকে সালাম দেয়া
২৬৯৬. সাইয়্যার [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি সাবিত আল-বুনানীর সাথে হাঁটছিলাম। তিনি কয়েকজন শিশুর পাশ দিয়ে চলার সময় তাহাদেরকে সালাম দিলেন এবং বলিলেন, কোন একদিন আমি আনাস [রাদি.] এর সাথে ছিলাম। তিনি শিশুদের পাশ দিয়ে চলার সময় তাহাদেরকে সালাম দিলেন এবং বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে ছিলাম। তিনি শিশুদের পাশ দিয়ে চলার সময় তাহাদেরকে সালাম দিয়েছেন।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। এ হাদীসটি সাবিত [রঃ] হইতে একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন। অন্য সূত্রেও আনাস [রাদি.] হইতে এ হাদীস বর্ণিত আছে। কুতাইবা-জাফার ইবনি সুলাইমান হইতে, তিনি সাবিত হইতে, তিনি আনাস [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত আছে। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯. অনুচ্ছেদঃ স্ত্রীলোককে সালাম দেয়া
২৬৯৭. আসমা বিনতু ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখানে একদল মহিলা বসা ছিল। তিনি হাত উঠিয়ে তাহাদেরকে সালাম দিলেন। আবদুল হামীদ তার হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন।
“হাতের ইশারা” ব্যতীত হাদীসটি সহীহঃ জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমাহ [১৯৪-১৯৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আহমাদ ইবনি হাম্বল [রঃ] বলেন, আবদুল হামীদ ইবনি বাহরাম-শাহর ইবনি হাওশাব সূত্রে বর্ণিত হাদীসে কোন সমস্যা নেই। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল [আল-বুখারী] বলেন, শাহর হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে উত্তম পর্যায়ের এবং তিনি [এ কথা বলে] তার বিষয়টি মজবুত করিয়াছেন। তিনি আরো বলেছেন, ইবনি আওন তার সমালোচনা করিয়াছেন, অতঃপর হিলাল ইবনি আবী যাইনাব-শাহর ইবনি হাওশাব সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আবু দাউদ বালখী-আন-নাযর ইবনি শুমাইল হইতে, তিনি ইবনি আওন হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইবনি আওন বলেন, মুহাদ্দিসগণ শাহরকে বাদ দিয়েছেন। আবু দাউদ [রঃ] বলেন, আন-নাযর বলেছেন, “তারা তাকে বাদ দিয়েছেন” অর্থ তারা তাঁকে তিরস্কার বা অভিযুক্ত করিয়াছেন এ কারণে যে, তিনি শাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০. অনুচ্ছেদঃ নিজের ঘরে প্রবেশকালে সালাম দেয়া
২৬৯৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলেছেনঃ হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের নিকটে যাও, তখন সালাম দিও। তাতে তোমার ও তোমার পরিবার-পরিজনের কল্যাণ হইবে।
হাদীসটির সানাদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান, সহীহ গারীব। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১১. অনুচ্ছেদঃ কথা বলার আগেই সালাম দিতে হইবে
২৬৯৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কথা-বার্তা বলার আগেই সালাম বিনিময় হইবে।
হাসানঃ সহীহাহ [৮১৬]। এ সানাদেই নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ সালাম দেয়ার পরই কাউকে খাবারের দাওয়াত দাও। মাওযূঃ যঈফ আল-জামি [৩৩৭৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি মুনকার। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীসটি জেনেছি। আমি মুহাম্মাদ [বুখারী] কে বলিতে শুনিয়াছি, আনবাসা ইবনি আবদুর রহমান হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল এবং অবহেলিত। আর মুহাম্মাদ ইবনি যাযান প্রত্যাখ্যাত বর্ণনাকারী। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১২. অনুচ্ছেদঃ যিম্মীদের [অমুসলিম নাগরিকদের] সালাম দেয়া অপছন্দনীয়
২৭০০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা ইয়াহূদী-নাসারাদেরকে প্রথম সালাম করো না। রাস্তায় তাহাদের মধ্যে কারো সাথে তোমাদের দেখা হলে, পথের সংকীর্ণ পার্শ্ব দিয়ে তাঁকে চলতে বাধ্য কর।
সহীহ।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭০১. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন একদল ইয়াহূদী নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলিল,
السَّامُ عَلَيْكَ
আসসামু আলাইকা [আপনার মৃত্যু হোক]। তাহাদের এ কথার জবাবে নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ
عَلَيْكُمْ
আলাইকুম [তোমাদেরই তাই হোক]। আয়িশাহ [রাদি.] বলিলেন,
عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ
আলাইকুমুস সাম ওয়াল লানাত [তোমাদের উপর মৃত্যু ও অভিশাপ পতিত হোক]। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ হে আয়িশাহ! আল্লাহ তাআলা সকল ব্যাপারেই কোমলতা পছন্দ করেন। আয়িশাহ [রাদি.] বলিলেন, তারা কি বলেছে আপনি কি তা শুনেননি? তিনি বললেনঃ আমিও তো বলে দিয়েছি, আলাইকুম।
সহীহঃ রাওযুন নাযীর [৭৬৪], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু বাসরা আল-গিফারী, ইবনি উমার, আনাস ও আবু আবদুর রহমান আল-জুহানী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩. অনুচ্ছেদঃ মুসলিম ও অমুসলিমদের একত্র সমাবেশে সালাম প্রদান
২৭০২. উসামাহ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ইয়াহূদী-মুসলিম সম্মিলিত একটি সমাবেশের পাশ দিয়ে চলার সময় তাহাদেরকে সালাম দিলেন।
সহীহঃ বুখারী [৬২৫৪], মুসলিম [৫/১৮২-১৮৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪. অনুচ্ছেদঃ সাওয়ারী ব্যক্তি পদচারী ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করিবে
২৭০৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী বসা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক বেশি সংখ্যককে সালাম দিবে। ইবনিল মুসান্না বর্ণিত হাদীসে আরো আছেঃ বয়সে নাবীনরা প্রবীণদেরকে সালাম করিবে।
সহীহঃ সহীহাহ [১১৪৫], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবদুর রহমান ইবনি শিবল, ফাযালাহ ইবনি উবাইদ ও জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। আইয়ূব সাখতিয়ানী, ইউনুস ইবনি উবাইদ ও আলী ইবনি যাইদ বলেনঃ হাসান আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে হাদীস শ্রবণ করেননি। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭০৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অল্প বয়সী বেশী বয়সীদেরকে, পদচারী বসা লোকদেরকে এবং অল্প সংখ্যক বেশি সংখ্যককে সালাম করিবে।
সহীহঃ প্রাগুক্ত [১১৪৯], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭০৫. ফাযালাহ ইবনি উবাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অশ্বারোহী পথচারীকে, পথচারী দাঁড়ানো ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক বেশি সংখ্যককে সালাম দিবে।
সহীহঃ প্রাগুক্ত [১১৫০]. আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু আলী আল-জানাবীর নাম আমর ইবনি মালিক। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫. অনুচ্ছেদঃ উঠতে বসতে সালাম করা
২৭০৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কোন মাজলিসে উপস্থিত হলে সে যেন সালাম করে, তারপর তার ইচ্ছা হলে বসে পড়বে। তারপর সে যখন উঠে দাঁড়াবে, তখনো যেন সালাম করে। কেননা পরের সালামের চাইতে প্রথম সালাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
হাসান সহীহঃ সহীহাহ [১৮৩], তাখরীজুল কালিম [২০১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীসটি ইবনি আজলান-সাঈদ আল-মাকবুরী হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রেও বর্ণিত আছে। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৬. অনুচ্ছেদঃ বাড়ির সম্মুখভাগ দিয়ে সম্মতি চাইবে
২৭০৭. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক পর্দা তুলে কারো ঘরের মধ্যে তাকালো এবং সম্মতি পাওয়ার আগেই ঘরের গোপনীয় বিষয় দেখে ফেললো, সে দন্ডনীয় অপরাধী হয়ে গেলো, যা করা তার পক্ষে বৈধ নয়। সে যখন ঘরের ভেতরে তাকিয়ে ছিলো, তখন কেউ যদি এগিয়ে এসে তার দুচোখ ফুঁড়ে বা সমূলে উপড়ে ফেলে দিত তবে তাকে আমি অপরাধী সাব্যস্ত করতাম না। আর কেউ যদি উন্মুক্ত দরজার পাশ দিয়ে যায় যার পর্দা নেই , আর সে যদি এদিকে তাকায়, তবে তাতে তার কোন দোষ নেই, বরং দোষ বাড়িওয়ালার [পর্দা ঝুলানো তাহাদের দায়িত্ব ]।
যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৩৫২৬] এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা ও আবু উমামা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে, আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা ইবনি আবু লাহীআর রিওয়ায়াত ছাড়া এ রকম হাদীস জানতে পারিনি। আবু আবদুর রহমান আল–হুবুলীর নাম আবদুল্লাহ ইবনি ইয়াযীদ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৭. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বাসিন্দাদের বিনা অনুমতিতে তাহাদের ঘরের ভিতরে উঁকি ঝুঁকি মারে
২৭০৮. আনাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
কোন এক সময় নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর ঘরে ছিলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি তাহাঁর দিকে উঁকি দিল। তিনি তীরের ফলা তার দিকে তাক করলে সে সরে পড়ল।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭০৯. সাহ্ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জনৈক লোক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর ঘরের একটি ছিদ্রপথে তাহাঁর দিকে উঁকি দিল। তখন তিনি একটি লোহার চিরুনি দিয়ে তাহাঁর মাথার চুল বিন্যাস করছিলেন, নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি যদি জানতাম যে উঁকি দিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে, তাহলে এটা [চিরুনি] তোমার চোখে ঢুকিয়ে দিতাম। দৃষ্টিশক্তির কারণেই তো অনুমতি প্রার্থনায় নিয়ম চালু করা হয়েছে।
সহীহঃ সহীহুত্ তারগীব [৩/২৭৩], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু হুরাইরাহ্ [রাঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮. অনুচ্ছেদঃ অনুমতি চাওয়ার পূর্বেই সালাম দিতে হয়
২৭১০. কালাদাহ্ ইবনি হাম্বল [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যা [রাদি.] তাকে কিছু দুধ, ছানা ও তরকারীসহ নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট পাঠান। সে সময়ে নাবী [সাঃআঃ] উপত্যকার উপরে অবস্থান করছিলেন। তিনি [কালাদাহ্] বলেন, আমি অনুমতিও চাইলাম না, সালামও করলাম না, বরং এমনি তাহাঁর নিকট চলে গেলাম। নাবী [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে বল,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আস্সালামু আলাইকুম, আমি কি আসতে পারি? [তারপর আমার নিকট এসো]। আর এ ঘটনাটি সাফওয়ানের ইসলাম গ্রহণের পরের।
সহীহঃ সহীহাহ্ [৮১৮] আম্র ইবনি আবু সুফ্ইয়ান বলেন, উক্ত হাদীসটি আমাকে উমাইয়্যাহ্ ইবনি সাফওয়ান জানিয়েছেন এবং এই সূত্রে তিনি বলেননি যে, আমি এ হাদীসটি কালাদার নিকট শুনিয়াছি। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র ইবনি জুরাইজের রিওয়ায়াত হিসেবে জেনেছি। ইবনি জুরাইজের সূত্রে আবু আসিমও উক্ত হাদীসের মতো বর্ণনা করিয়াছেন। যাগাবীস এক প্রকার উদ্ভিদ যা খাওয়া যায়। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭১১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার বাবার কিছু ঋণ ছিল। এ ব্যাপারে আমি নাবী [সাঃআঃ] –এর নিকট যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কে? আমি বললাম, আমি। তিনি বলেন, আমি, আমি। মানে হল যেন তিনি এ ধরণের উত্তর অপছন্দ করিয়াছেন।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯. অনুচ্ছেদঃ সফরে থেকে ফিরে রাতের বেলায় স্ত্রীর নিকট যাওয়া অপছন্দনীয়
২৭১২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] সফর থেকে ফিরে রাতের বেলায় স্ত্রীর নিকট যেতে তাহাদেরকে নিষেধ করিয়াছেন।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আনাস, ইবনি উমার ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী [সাঃআঃ] -এর এ হাদীসটি জাবির [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত , নাবী [সাঃআঃ] রাতের বেলায় সফর থেকে ফিরে এসে তাহাদেরকে স্ত্রীদের নিকট যেতে নিষেধ করিয়াছেন। নাবী [সাঃআঃ] -এর এ নিষেধাজ্ঞার পরও দুজন লোক রাতে তাহাদের স্ত্রীদের ঘরে ঢুকে তাহাদের প্রত্যেকের সাথে একজন করে পরপুরুষের দেখিতে পেল। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০. অনুচ্ছেদঃ লেখার ওপর ধুলা ছিটিয়ে দেওয়া
২৭১৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ কিছু লিখলে [শুকানোর জন্য] তার ওপর যেন কিছু ধুলা ছিটিয়ে দেয়। কেননা তা লক্ষ্য পূরণে পরিপূরক।
যঈফ, মিশকাত [৫৬৫৭], যঈফা [১৭৩৮] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি মুনকার। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই আবুয যুবাইর হইতে এ হাদীস জেনেছি। আমার মতে হামযা হলেন আমর আন-নাসীবীর পুত্র এবং তিনি হাদীস শাস্ত্রে দূর্বল। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২১. অনুচ্ছেদঃ কলম কানের উপর রাখা
২৭১৪. যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে উপস্থিত হলাম। তাহাঁর সম্মুখে একজন লেখক বসে ছিলেন। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনলামঃ তোমার কানে কলমটি রেখে দাও, কেননা তা বিষয়বস্তু মনে রাখতে সহায়ক।
মাওযূ, যাঈফা [৮৬৫] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সনদেই এ হাদীস জেনেছি। উহার সনদ দূর্বল। মুহাম্মাদ ইবনি যাযান ও আনবাসা ইবনি আবদুর রহমান উভয়েই হাদীস শাস্ত্রে দূর্বল বলে আখ্যায়িত। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ জাল হাদীস
২২. অনুচ্ছেদঃ সুফিয়ানী ভাষা শিক্ষা করা
২৭১৫. যাইদ ইবনি সাবিত [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]আমাকে ইয়াহূদীদের কিতাবী ভাষা [হিব্রু] অধ্যয়নের জন্য আদেশ করেন এবং বলেনঃ আল্লাহ্র কসম! আমি আমার পত্রাদির ব্যাপারে ইয়াহূহীদের উপর নিশ্চিন্ত হইতে পারি না। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, তারপর মাসের অর্ধেক যেতে না যেতেই আমি সুফিয়ানী ভাষা আয়ত্ত করে ফেললাম, এ ভাষা শিক্ষার পর থেকে তিনি ইয়াহূদীদের নিকট কোন কিছু লিখতে চাইলে আমিই তা লিখে দিতাম। আর তারা তাহাঁর নিকট কোন চিঠি পাঠালে, আমি তাঁকে তা পড়ে শুনাতাম।
হাসান সহীহঃ মিশকাত[৪৬৫৯] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি ভিন্ন সূত্রেও যাইদ ইবনি সাবিত [রাঃ] হইতে বর্ণিত আছে। আমাশ – সাবিত ইবনি উবাইদ হইতে , তিনি যাইদ ইবনি সাবিত [রাঃ] হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে সুরিয়ানী ভাষা শিখতে আদেশ করেন। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৩. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের সাথে পত্রবিনিময়
২৭১৬. আনাস ইবনি মালিক [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর মৃত্যুর পূর্বে কিস্রা,কাইসার ও নাজাশী এবং তখনকার সব পরাক্রান্ত রাজা-বাদশাহ্দের নিকট তাহাদেরকে আল্লাহ্র দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। তবে ইনি সেই নাজাশী নন,নাবী [সাঃআঃ] যার জানাযা আদায় করেছিলেন।
সহীহঃ মুসলিম [৫/১৬৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের নিকট চিঠি লেখার নিয়ম
২৭১৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু সুফ্ইয়ান ইবনি হার্ব [রাদি.] তাঁকে বলেছেন, তিনি কুরাইশদের একটি ব্যবসায়ী দলে সিরিয়া গিয়েছিলেন। হিরাকল [হিরাক্লিয়াস] তাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তার নকট গেলেন। তারপর বর্ণনাকারী তার বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর একটি চিঠি নিয়ে আসা হল এবং তা পড়ানো হল। তাঁকে লিখা ছিলঃ বিসমিল্লা-হির-রাহমা-নির রাহীম, আল্লাহ্র বান্দা ও তাহাঁর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ হইতে রোমের রাষ্ট্রপ্রধান হিরাকলের প্রতি। হিদায়তের অনুসারীদের প্রতি সালাম। তারপর এই……।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, আবু সুফ্ইয়ান [রাঃ]-এর নাম সাখর ইবনি হার্ব দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৫. অনুচ্ছেদঃ চিঠির উপর সীলমোহর লাগানো
২৭১৮. আনাস ইবনি মালিক [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন অনাবরদের চিঠি লিখতে চাইলেন, তখন তাঁকে বলা হল, অনাবরগণ সীল লাগানো ব্যাতীত কোন চিঠিপত্র গ্রহণ করে না।
তারপর তিনি একটি আংটি [সীল] বানালেন। তিনি [আনাস] বলেন, এখনও মনে হচ্চে যেন আমি তাহাঁর হাতে এর শুভ্রতা [আংটির চাকচিক্য ] দেখিতে পাচ্ছি।
সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল [৭৪] , বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন , হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৬. অনুচ্ছেদঃ সালাম বিনিময়ের নিয়ম
২৭১৯. মিক্বদাদ ইবনিল আস্ওয়াদ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি এবং আমার দুজন সাথী এমন অবস্থায় [মাদীনায়] পৌছালাম যে, আমাদের চোখ-কান ক্ষুধার যন্ত্রণায় অচল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। তারপর আমরা আমাদেরকে নাবী [সাঃআঃ] -এর সাহাবীদের নিকট উপস্থাপন করিতে লাগলাম; কিন্তু কেউই আমাদেরকে গ্রহণ করিলেন না। অবশেষে আমরা নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট হাযির হলাম। তিনি আমাদেরকে নিয়ে তাহাঁর পরিবারের নিকট গেলেন। সেখানে তিনটি বকরী ছিল। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা এগুলোর দুধ দোহন কর। তারপর আমরা এগুলো দোহন করে প্রত্যেকেই যার যার অংশের দুধ পান করতাম এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর অংশ উঠিয়ে রেখে দিতাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতের বেলায় আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যে, ঘুমন্ত লোকেরা জাগ্রত হত না অথচ জাগ্রত লোকেরা তা শুনতে পেত। তারপর তিনি মসজিদে গিয়ে নাময আদায় করিতেন, তারপর তাহাঁর জন্য রাখা দুধ পান করিতেন।
সহীহঃ আদাবুয্ যিফা-ফ নতুন সংস্করণ [১৬৭-১৯৬], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭. অনুচ্ছেদঃ প্রস্রাবরত লোককে সালাম দিয়া মাকরূহ
২৭২০. ইবনি উমার [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] –এর প্রস্রাবরত অবস্থায় একজন লোক তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু তিনি [সাঃআঃ] তার সালামের উত্তর দেননি।
হাসান সহীহঃ ৯০ নং হাদীসের পুনরুক্তি।মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহ্ইয়া আন-নাইশাবূরী –মুহাম্মাদ ইবনি ইউসুফ হইতে , তিনি সুফ্ইয়ান হইতেম তিনি যাহ্হাক ইবনি উসমান [রাঃ] হইতে একই সনদে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত আছে। আলকামা ইবনি ফাগওয়া, জাবির , বারাআ ও মুহাজির ইবনি কুনফুয [রাঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আনূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৮. অনুচ্ছেদঃ প্রথমেই “আলাইকাস্ সালাম” বলা নিষেধ
২৭২১. আবু তামীমা আল-হুজাইমী [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে খোঁজ করে না পেয়ে বসে রইলাম। এরই মধ্যে আমি তাঁকে একদল লোকেরা মাঝে দেখিতে পেলাম, কিন্তু আমি তাঁকে চিনতাম না। তাহাদের মাঝে তিনি মীমাংসা করেছিলেন। কাজ শেষে কয়েকজন তাহাঁর সাথে উঠে দাড়ালো এবং বলিল, হে আল্লাহ্র রাসূল ! আমি ইহা দেখে তাঁকে বললাম, আলাইকাস্ সালামু ইয়া রসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ
عَلَيْكَ السَّلاَمُ
“আলাইকাস্ সালামু ” হল মৃত ব্যক্তির জন্য সালাম। এ কথাটি তিনি তিন বার বলিলেন। তারপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ কোন ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের সময় যেন বলে,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহি”। অতঃপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার সালামের উত্তর দিলেনঃ
وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
ওয়া আলাইকা ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ ওয়া আলাইকা ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ।
সহীহঃ সহীহাহ্ [১৪০৩] আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি আবু তামীমাহ্ আল-হুজাইমী-আবু জুরায়্যি জাবির ইবনি সুলাইম আল-হুজাইমীর সূত্রে আবু গিফার বর্ণনা করিয়াছেন। আবু জুরায়্যি [রাঃ] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট এলাম… তিনি পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। আবু তামীমার নাম তারীফ ইবনি মুজালিদ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭২২. জাবির ইবনি সুলাইম [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললাম,
عَلَيْكَ السَّلاَمُ
আলাইকাস্ সালাম। তিনি বলিলেন, আলাইকাস্ সালাম বল না বরং
السَّلاَمُ عَلَيْكَ
আসসালামু আলাইকা বল। তারপর তিনি দীর্ঘ ঘটনা বর্ণনা করেন।
সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭২৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সালাম করার সময় তিনবার সালাম করিতেন এবং কোন কথা বলার সময় তিনবার পুনরাবৃত্তি করিতেন।
হাসান সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল [১৯২], বুখারী। আবী ঈসা বলেন হাদীসটি গারীব। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৯. অনুচ্ছেদঃ মাজলিসে খালি জায়গায় বসা
২৭২৪. আবু ওয়াকিদ আল-লাইসী [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
কোন এক সময় কয়েকজন লোকসহ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদে বসা ছিলেন। সে সময় তিনজন লোক এসে হাযির হল। তাহাদের দুজন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে আসল এবং একজন চলে গেল। এরা দুজন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাম করিল এবং এদের একজন বৈঠকে খালি জায়গা দেখে বসে পড়ল আর অন্যজন লোকদের পিছনে গিয়ে বসল। এদের তৃতীয়জন তো পিঠ ফিরিয়ে চলে গেল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন অবসর হলেন , তখন উপস্থিত লোকদেরকে বললেনঃ আমি কি এদের তিনজনের ব্যাপারে তোমাদেরকে জানাবো না? এদের একজন তো আল্লাহ তাআলার আশ্রয় নিল, ফলে আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিয়েছেন; দ্বিতীয়জন লজ্জা পেল, কাজেই আল্লাহ তাআলা ও তার হইতে লজ্জা করিয়াছেন, আর তৃতীয়জন আল্লাহ হইতে মুখ ফিরিয়ে নিল, কাজেই আল্লাহ তাআলাও তার হইতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু ওয়াকিদ আল-লাইসীর নাম আল-হারিস ইবনি আওফ। আবু মুর্রাহ্ হলেন উম্মু হানী [রাঃ] বিনতু আবী তালিবের মুক্তদাস, মতান্তরে আকীল [রাঃ] ইবনি আবী তালিবের মুক্তদাস, তার নাম ইয়াজিদ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭২৫. জাবির ইবনি সামুরাহ্ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা যখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট আসতাম, তখন যে যেখানেই জায়গা পেতো সে সেখানেই বসে পড়তো।
সহীহঃ সহীহাহ্ [৩৩০], তাখরীজুল ইল্ম লি আবী খাইসামহ্ [১০০]। আবী ঈসা বলেন , এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। এ হাদীসটি সিমাকের সূত্রে যুহাইর ইবনি মুআবিয়াহ্ও বর্ণনা করিয়াছেন। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০. অনুচ্ছেদঃ পথের পার্শ্বে বসা লোকের দায়িত্ব
২৭২৬. বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
কোন একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাস্তার পাশে বসা কয়েকজন আনসারীর সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাহাদের বললেনঃ তোমাদের খুব প্রয়োজনে রাস্তায় বসতে হলে তোমরা সালামের জবাব দিবে, মাযলুমদকে সাহায্য করিবে এবং লোকদেরকে রাস্তা দেখিয়ে দিবে।
মতন [বক্তব্য] সহীহ। আবু হুরাইরাহ্ ও আবু শুরায়হ্ আল-খুযাঈ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছে্দে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩১. অনুচ্ছেদঃ মুসাফাহার [করমর্দন] বর্ণনা
২৭২৭. বারাআ ইবনি আযিব [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে দুজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করে তাহাদের আলাদা হবার পূর্বেই তাহাদের [সগীরা ] গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭০৩] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং আবু ইসহাক-বারাআ [রাঃ]-এর সূত্রে গারীব। বারাআ [রাঃ] হইতে ভিন্ন সূত্রেও এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭২৮. আনাস ইবনি মালিক [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন , কোন একসময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করিল , হে আল্লাহর রাসুল ! আমাদের কোন ব্যক্তি তার ভাই কিংবা বন্ধুর সাথে দেখা করলে সে কি তার সামনে ঝুঁকে [নত] যাবে? তিনি বললেনঃ না। সে আবার প্রশ্ন করন , তাহলে কি সে গলাগলি করে তাকে চুমু খাবে? তিনি বললেনঃ না। সে এবার বলিল, তাহলে সে তার হাত ধরে মুসাফাহা [করমর্দন] করিবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
হাসানঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭০২]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান । দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৭২৯. কাতাদাহ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]–কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলাল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর সাহাবীদের মধ্যে মুসাফাহার প্রচলন ছিল কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।
সহীহঃ বুখারী [৬২৬৩] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ ।দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭৩০. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সালামের সময় হাত ধরা [মুসাফাহা করা] সালামের পূর্ণতা সম্পাদনকারী।
যঈফ, যঈফা [২৬৯১] এ অনুচ্ছেদে বারাআ এবং ইবনি উমার হইতেও হাদীস বর্নিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সুলাইম হইতে সুফিয়ানের সূত্রেই শুধুমাত্র আমরা এ হাদীস জেনেছি । আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলকে এ হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি এটিকে সংরক্ষিত বলে মনে করেননি এবং বলেছেন, সম্ভবত ইয়াহ্ইয়া- আমার মতে সুফিয়ান বর্ণিত হাদীস উদ্দেশ্য করেছিলেন যা মানসূর-খাইসামা হইতে যিনি ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে রিওয়ায়াত করিয়াছেন- তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি নামাজ আদায়ের ইচ্ছা রাখে সে এবং মুসাফির ছাড়া [এশার পর] আলাপ-আলোচনা করার অনুমতি নেই”। মুহাম্মাদ আল-বুখারী আরো বলেন, মানসূর-আবু ইসহাক হইতে তিনি আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ অথবা অপরের সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “মুসাফাহা করলে সালাম পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়”। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৭৩১. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ রোগীকে সম্পূর্নভাবে সেবা করার পূর্ণতা হল তার কপালে হাত রাখা অথবা [রাবীর সন্দেহ] তিনি বলেনঃ রোগীর হাতের উপর হাত রেখে প্রশ্ন করা, সে কেমন আছে? আর তোমাদের সালামের পূর্ণতা হল একে অন্যের সঙ্গে মুসাফাহা করা।
যঈফ, যঈফা [১২৮৮] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটির সনদ খুব একটা মজবুত নয়। মুহাম্মাদ [বুখারী রঃ] বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবনি যাহ্র বিশ্বস্ত রাবী এবং আলী ইবনি ইয়াযীদ দূর্বল রাবী। আল-কাসিম হলেন আবদুর রহমানের পুত্র, উপনাম আবু আবদুর রহমান, তিনি বিশ্বস্ত রাবী । তিনি আবদুর রহমান ইবনি খালিদ ইবনি ইয়াযীদ ইবনি মুআবিয়ার মুক্তদাস। আল-কাসিম সিরিয়ার অধিবাসী। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩২. অনুচ্ছেদঃ মুআনাকা [কোলাকুলি] ও চুম্বন
২৭৩২. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যাইদ ইবনি হারিসা [রাদি.] যখন [সফর হইতে] মদীনায় ফিরে এলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন আমার ঘরে ছিলেন। তিনি এসে দরজা খটখট করিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] খালি গায়ে কাপড় টানতে টানতে তার নিকটে গেলেন। আল্লাহ্র শপথ! আমি তাঁকে আগে বা পরে কখনো খালি গায়ে দেখিনি। তারপর তিনি যাইদের সাথে কোলাকুলি করিলেন এবং তাকে চুমু খেলেন।
যঈফ, মিশকাত [৪৬৮২], রিয়াদুস সালেহীন এর মুকাদ্দামা [ওয়াও/৫] নাকদুল কাত্তানী [১৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। যুহ্রীর বর্ণনা হিসাবে আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩৩. অনুচ্ছেদঃ হাতে ও পায়ে চুমু দেওয়া
২৭৩৩. সাফওয়ান ইবনি আসসাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহূদী তার এক সঙ্গিকে বলিল, আস আমরা এই নাবীর নিকট যাই। তার বন্ধু বলিল, নাবী বলো না, তিনি যদি শুনে ফেলেন তাহলে খুশীতে তাহাঁর চার চোখ হয়ে যাবে। অতঃপর এরা দুজন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করিল। তিনি তাহাদের বললেনঃ আল্লাহ্র সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, চুরি করো না, যেনা করো না, আল্লাহ যেসব প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন সঙ্গত কারণ ছাড়া সেগুলো হত্যা করো না, হত্যার উদ্দেশ্যে কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে বিচারালয়ে নিয়ে যেও না, যাদু করো না, সুদ খেয়ো না, সতী-সাধ্বী মহিলাকে যেনার অপবাদ দিও না, যুদ্ধের ময়দান থেকে পিঠ ফিরিয়ে পলায়ন করো না এবং বিশেষ করে তোমরা ইয়াহূদীগণ শনিবারের সীমা লংঘন করো না। রাবী বলেন, এসব স্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা শুনে তারা তাহাঁর হাতে-পায়ে চুমু দিল এবং বলিল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নাবী। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তাহলে আমার অনুসরণ করিতে তোমাদের বাধা কিসের? রাবী বলেন, তারা বলিল, দাঊদ [আঃ] তাহাঁর রবের নিকটে দুআ করেছিলেন যে, তাহাঁর [বংশধরের] সন্তানদের মধ্যেই যেন নাবী হন। আমরা আশংকা করছি আমরা যদি আপনার অনুসরণ করি তাহলে ইয়াহূদীগণ আমাদের হত্যা করে ফেলবে।
যঈফ, ইবনি মাযাহ [৩৭০৫] এ অনুচ্ছেদে ইয়াযীদ ইবনিল আসওয়াদ, ইবনি উমার ও কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩৪. অনুচ্ছেদঃ মারহাবা [স্বাগতম] বলা
২৭৩৪. উম্মু হানী [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি মক্কা বিজয়ের বৎসর রাসুলাল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর নিকট হাযির হলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন। এবং ফাতিমা [রাদি.] একটি কাপড় দ্বারা তাঁকে আড়াল করে রেখেছিলেন। তিনি বলেন , আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি [রাসুল্লাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইই ওয়া সাল্লাম] প্রশ্ন করলেনঃ কে? আমি বললাম , আমি উম্মু হানী। তিনি বললেনঃ উম্মু হানীকে স্বাগতম। তারপর বর্ণনাকারী এ হাদীসের পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করেন।
সহীহঃ বুখারী [৩৫৭] , মুসলিম [২/১৫৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭৩৫. ইকরিমা [রাদি.] ইবনি আবু জাহল হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি যেদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এলাম তখন তিনি বললেনঃ আরোহী মুহাজিরকে খোশআমদেদ।
সনদ দূর্বল।এ অনুচ্ছেদে বুরাইদা, ইবনি আব্বাস ও আবু জুহাইফা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটির সনদ সহীহ নয়। মূসা ইবনি মাসঊদী-সুফিয়ান সূত্রেই শুধুমাত্র আমরা এরকম হাদীস জেনেছি। মূসা ইবনি মাসঊদী হাদীস শাস্ত্রে দূর্বল। আবদুর রহমান ইবনি মাহ্দী [রঃ] সুফিয়ান হইতে আবু ইসহাক সূত্রে এ হাদীস মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তিনি এতে মুসআব ইবনি সাদের উল্লেখ করেননি। এটাই সর্বাধিক সহীহ। আমি মুহাম্মাদ ইবনি বাশশারকে বলিতে শুনিয়াছি যে, মূসা ইবনি মাসউদ হাদীস শাস্ত্রে দূর্বল। তিনি আরো বলেন, আমি মূসা ইবনি মাসঊদী হইতে বহু সংখ্যক হাদীস লিখেছিলাম পরে তা বাতিল করেছি। দরসে তিরমিজি – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
Leave a Reply