সালামের নিয়ম -মহিলা পুরুষ ও অমুসলিমদের সালাম ও জবাব কীভাবে দিবে

সালামের নিয়ম -মহিলা পুরুষ ও অমুসলিমদের সালাম ও জবাব কীভাবে দিবে

সালামের নিয়ম -মহিলা পুরুষ ও অমুসলিমদের সালাম ও জবাব কীভাবে দিবে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৭৯, অনুমতি চাওয়া, অধ্যায়ঃ (১-২২)=২৩টি

৭৯/১. অধ্যায়ঃ সালামের সূচনা
৭৯/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর। সেখানে যদি কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত। সে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হইবেনা, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। [১৯ ] (সুরা আন-নূর ২৪/২৭-২৯)
৭৯/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার নামের মধ্যে সালাম একটি নাম।
৭৯/৪. অধ্যায়ঃ অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোকেদের সালাম করিবে।
৭৯/৫. অধ্যায়ঃ আর আরোহী পদচারী কে সালাম করিবে।
৭৯/৬. অধ্যায়ঃ পদচারী উপবিষ্টকে সালাম দিবে।
৭৯/৭. অধ্যায়ঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে সালাম করিবে।
৭৯/৮. অধ্যায়ঃ সালামের বিস্তারণ।
৭৯/৯. অধ্যায়ঃ পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।
৭৯/১০. অধ্যায়ঃ পর্দার আয়াত
৭৯/১১. অধ্যায়ঃ তাকানোর অনুমতি গ্রহন করা ।
৭৯/১২. অধ্যায়ঃ যৌনাঙ্গ ব্যতীত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার ।
৭৯/১৩. অধ্যায়ঃ তিনবার সালাম দেয়া ও অনুমতি চাওয়া ।
৭৯/১৪. অধ্যায়ঃ যখন কোন ব্যক্তিকে ডাকা হয় আর সে আসে, সেও কি প্রবেশের অনুমতি নিবে ?
৭৯/১৫. অধ্যায়ঃ শিশুদের সালাম দেয়া।
৭৯/১৬. অধ্যায়ঃ মহিলাকে পুরুষদের এবং পুরুষকে মহিলাদের সালাম দেয়া।
৭৯/১৭. অধ্যায়ঃ যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন যে, ইনি কে? আর তিনি বলেন, আমি।
৭৯/১৮. অধ্যায়ঃ যে সালামের জবাব দিল এবং বললঃ আলাইকাস্‌ সালাম।
৭৯/১৯. অধ্যায়ঃ যদি কেউ বলে যে, অমুক তোমাকে সালাম দিয়েছে।
৭৯/২০. অধ্যায়ঃ মুসলিম ও মুশরিকদের একত্রিত মাজলিসে সালাম দেয়া।
৭৯/২১. অধ্যায়ঃ গুনাহগার ব্যক্তির তাওবাহ করার আলামাত প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এবং গুনাহগারের তাওবাহ কবূল হবার প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত যিনি তাকে সালাম করেননি এবং তার সালামের জবাবও দেননি।
৭৯/২২. অধ্যায়ঃ অমুসলিমদের সালামের জবাব কীভাবে দিতে হইবে।

৭৯/১. অধ্যায়ঃ সালামের সূচনা

৬২২৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদাম (আঃ) –কে তাহাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শোনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ এটাই হইবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বললেনঃ

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ‏

আস্‌সালামু আলাইকুম।

তাঁরা জবাবে বললেনঃ

السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّ

আস্‌সালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ।

তাঁরা বাড়িয়ে বললেনঃ

 وَرَحْمَةُ اللَّهِ

ওয়া রহমাতুল্লাহ

বাক্যটি। তারপর নাবী (সাঃআঃ) আরও বললেনঃ যারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে তারা আদাম (আঃ) –এর আকৃতি বিশিষ্ট হইবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ কমে আসছে।

(আঃপ্রঃ- ৫৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮১)

৭৯/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর। সেখানে যদি কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত। সে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হইবেনা, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। [১৯ ] (সুরা আন-নূর ২৪/২৭-২৯)

৬২২৮. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একবার কুরবানীর দিনে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফায্‌ল ইবনু আব্বাস (রাদি.) –কে আপন সওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে বসালেন। ফায্‌ল একজন সুপুরুষ ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) লোকেদের মাসাআলা মাসায়িল বলে দেয়ার জন্য আসলেন। এ সময় খাশআম গোত্রের এক সুন্দরী নারী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট একটা মাসাআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আসল। তখন ফায্‌ল (রাদি.) তার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য তাঁকে আকৃষ্ট করিল। নাবী (সাঃআঃ) ফায্‌ল (রাদি.) –এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফায্‌ল (রাদি.) তাহাঁর দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফায্‌ল (রাদি.) –এর চিবুক ধরে ঐ নারীর দিকে না তাকানোর জন্য তার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। [২০] এরপর স্ত্রীলোকটি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাহাঁর বান্দাদের উপর যে হাজ্জ ফরয হবার বিধান দেয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বৃদ্ধ হবার কারণে সওয়ারীর উপরে বসতে তিনি অক্ষম। যদি আমি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে? তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ হাঁ।

(আঃপ্রঃ- ৫৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮২)

৬২২৯. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, একবার নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের রাস্তায় বসা ব্যতীত গত্যন্তর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তখন তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি তোমাদের রাস্তায় মজলিস করা ব্যতীত উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাস্তার হক আদায় করিবে। তারা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কী? তিনি বলিলেন, তা হলো চক্ষু অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা। সালামের জবাব দেয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয়া আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।

আঃপ্রঃ- ৫৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৩)

৭৯/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার নামের মধ্যে সালাম একটি নাম।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “যখন তোমাদেরকে সসম্মানে সালাম প্রদান করা হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তমরূপে জওয়াবী সালাম দাও কিংবা (কমপক্ষে) অনুরূপভাবে দাও।” (সুরা আন-নিসা ৪ : ৮৬)

৬২৩০

 আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যখন আমরা নাবী সাঃআঃ -এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম, তখন আমরা আল্লাহর প্রতি তাহাঁর বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম, জিব্রীল আ.)-এর প্রতি সালাম, মীকাঈল (আ.)-এর প্রতি সালাম এবং অমুকের প্রতি সালাম দিলাম। নাবী সাঃআঃ সালাত শেষ করে, আমাদের দিকে তাহাঁর চেহারা ফিরিয়ে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা নিজেই সালাম। অতএব যখন তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে বসবে, তখন বলবেঃ

التَّحِيَّاتُ لله وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ

মুসল্লী যখন এ কথাটা বলবে, তখনই আসমান যমীনে সব নেক বান্দাদের নিকট এ সালাম পৌঁছে যাবে। তারপর বলবে

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه” وَرَسُوْلُه”

তারপর সে তার পছন্দমত দুআ বেছে নেবে। [৮৩১]

আঃপ্রঃ- ৫৭৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৪)

৭৯/৪. অধ্যায়ঃ অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোকেদের সালাম করিবে।

৬২৩১

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে।

[৬২৩২, ৬২৩৩,৬২৩৪; মুসলিম ৩৯/১, হাদীস ২১৬০, হাদীস ১০৬২৯] (আ. প্র. ৫৭৯০, ই. ফা. ৫৬৮৫)

৭৯/৫. অধ্যায়ঃ আর আরোহী পদচারী কে সালাম করিবে।

৬২৩২

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে।

[৬২৩১] (আ. প্র. ৫৭৯১, ই. ফা. ৫৬৮৬)

৭৯/৬. অধ্যায়ঃ পদচারী উপবিষ্টকে সালাম দিবে।

৬২৩৩

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে।

(আঃপ্রঃ- ৫৭৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৭)

৭৯/৭. অধ্যায়ঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে সালাম করিবে।

৬২৩৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে।

(আঃপ্রঃ- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)

৭৯/৮. অধ্যায়ঃ সালামের বিস্তারণ।

৬২৩৫

বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাতটি কাজেরঃ রোগীর খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, হাঁচি দাতার জন্য দুআ করা, দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলূমের সাহায্য করা, সালাম প্রসার করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ণ করা। আর নিষেধ করিয়াছেন (সাতটি কাজ থেকে): রূপার পাত্রে পানাহার, স্বর্ণের আংটি পরিধান, রেশমী যিনের উপর সাওয়ার হওয়া, মিহিন রেশমী বস্ত্র পরিধান, পাতলা রেশম বস্ত্র ব্যবহার, রেশম মিশ্রিত কাতান বস্ত্র পরিধান এবং গাঢ় রেশমী বস্ত্র পরিধান করা।

(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৮)

৭৯/৯. অধ্যায়ঃ পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।

৬২৩৬

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক নাবী (সাঃআঃ) কে জিজ্ঞেস করলঃ ইসলামে কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেনঃ তুমি ক্ষুধার্তকে অন্ন দেবে, আর সালাম দেবে যাকে তুমি চেন আর যাকে চেন না।(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৯)

৬২৩৭

আবু আইউব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ)বলেছেনঃ কোন মুসলিমের পক্ষে তার কোন ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে, তাদের দুজনের দেখা সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে, আরেকজন অন্যদিকে চেহারা ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে প্রথম সালাম করিবে। আবু সুফ্‌ইয়ান (রাদি.) বলেন যে, এ হাদীসটি আমি যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে তিনবার শুনিয়াছি।(আঃপ্রঃ- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯০)

৭৯/১০. অধ্যায়ঃ পর্দার আয়াত

৬২৩৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, রাসুলুল্লাহ (রাদি.) যখন মদিনায় আসলেন, তখন তাহাঁর (বর্ণনাকারীর) বয়স ছিল দশ বছর। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর জীবনের দশটি বছর আমি তাহাঁর খিদমত করি। আর পর্দার বিধান ব্যাপারে আমি সব চেয়ে অধিক অবগত ছিলাম, যখন তা অবতীর্ণ হয়। উবাই ইবনু কাব (রাদি.) প্রায়ই আমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতেন। যাইনাব বিনত জাহশ (রাদি.)- এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর বাসরের দিনে প্রথম পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়। নাবী (সাঃআঃ) নতুন দুলহা হিসেবে সে দিন লোকেদের দাওয়াত করেন এবং এরপর অনেকেই দাওয়াত খেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কয়েকজন তাহাঁর কাছে রয়ে যান এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং আমিও তাহাঁর সঙ্গে যাই, যাতে তারা বের হয়ে যায়। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) চলেন এবং আমিও তাহাঁর সঙ্গে চলি। এমনকি তিনি আয়েশাহ (রাদি.) –এর ঘরের দরজায় এসে পৌঁছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ভাবলেন যে, নিশ্চয়ই তারা বেরিয়ে গেছে। তখন তিনি ফিরে আসেন আর তাহাঁর সঙ্গে আমিও ফিরে আসি। তিনি যাইনাব (রাদি.) –এর ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তারা তখনও বসেই আছেন, চলে যায়নি। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফিরে গেলেন এবং আমিও তাহাঁর সঙ্গে ফিরে গেলাম। এমনকি তিনি আয়েশাহ (রাদি.)- এর দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত এসে পৌছেন। এরপর তিনি ভাবলেন যে, এখন তারা অবশ্যই বেরিয়ে গেছে। তাই তিনি ফিরে এসে দেখেন যে, তারা বেরিয়ে গেছে। এ সময় পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং তিনি তাহাঁর ও আমার মধ্যে পর্দা টেনে দেন।

(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯১)

৬২৩৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) যাইনাব (রাদি.) –কে বিয়ে করিলেন, তখন একদল (মেহমান) তাহাঁর ঘরে এসে খাওয়া-দাওয়া করিলেন। এরপর তাঁরা ঘরে বসেই আলাপ-আলোচনা করিতে লাগলেন। তিনি দাঁড়ালে কিছু লোক উঠে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু অবশিষ্ট কিছু লোক বসেই থাকলেন। নাবী (সাঃআঃ) ঘরে প্রবেশ করার জন্য ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা বসেই আছেন। কিছুক্ষন পরে তারা উঠে চলে গেলেন। তারপর আমি নাবী (সাঃআঃ) কে ওদের চলে যাবার খবর দিলে তিনি এসে প্রবেশ করিলেন। তখন আমি ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে করলে তিনি আমার ও তাহাঁর মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। এ সময় আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “হে ইমানদারগণ! তোমরা নাবীর ঘরগুলোতে প্রবেশ করো না”। …… শেষ পর্যন্ত।

(সুরা আল-আহযাবঃ ৫৩)(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯২)

৬২৪০. নাবী (সাঃআঃ)- এর স্ত্রী আয়েশাহ হইতে বর্ণিতঃ

যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট প্রায়ই বলিতেন যে , আপনি আপনার স্ত্রীদের পর্দা করান। কিন্তু তিনি তা করেননি। নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রীগণ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রাতে মাঠের দিকে বাইরে যেতেন। একবার সাওদাহ বিনত যামআহ (রাদি.) বেরিয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। উমার (রাদি.) মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি পর্দার নির্দেশ অবতীর্ণ হবার আগ্রহে বললেনঃ ওহে সাওদাহ! আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। তখন আল্লাহ তাআলা পর্দার আয়াত নাযিল করিলেন।

(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৩)

৭৯/১১. অধ্যায়ঃ তাকানোর অনুমতি গ্রহন করা ।

৬২৪১. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একবার এক লোক নাবী (সাঃআঃ)- এর কোন এক হুজরায় উঁকি দিয়ে তাকালো। তখন নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে একটা মিদরা ছিল, যা দিয়ে তিনি তাহাঁর মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ যদি আমি জানতাম যে , তুমি উঁকি দিবে, তবে এ দিয়ে তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহনের বিধান দেয়া হয়েছে।

(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৪)

৬২৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে , একবার জনৈক লোক নাবী (সাঃআঃ) -এর এক কক্ষে উঁকি দিল। তখন তিনি একটা তীর ফলক কিংবা তীর ফলকসমূহ নিয়ে তার দিকে দৌড়ালেন। আনাস (রাদি.) বলেনঃ তা যেন আমি এখনও দেখছি। তিনি ঐ লোকটির চোখ ফুঁড়ে দেয়ার জন্য তাকে খুঁজছিলেন।

[৬৮৮৯, ৬৯০০; মুসলিম ৩৮/৯, হাদীস ২১৫৭, আহমাদ ১৩৫০৭] আঃপ্রঃ- ৫৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৫)

৭৯/১২. অধ্যায়ঃ যৌনাঙ্গ ব্যতীত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার ।

৬২৪৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বানী আদামের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হইবে। চোখের জিনা হলো দেখা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।

[২১][মুসলিম ৪৬/৫, হাদীস ২৬৫৭, আহমাদ ৮২২২] আঃপ্রঃ- ৫৮০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৬)

৭৯/১৩. অধ্যায়ঃ তিনবার সালাম দেয়া ও অনুমতি চাওয়া ।

৬২৪৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে ,নাবী (সাঃআঃ) যখন সালাম করিতেন , তখন তিনবার সালাম দিতেন এবং যখন কথা বলিতেন তখন তিনবার তার পুনরাবৃত্তি করিতেন।

(আঃপ্রঃ- ৫৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৭)

৬২৪৫. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি আনসারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবু মূসা (রাদি.) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেনঃ আমি তিনবার উমার (রাদি.)- এর নিকট অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম। উমার (রাদি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাকে ভেতরে প্রবেশ করিতে কিসে বাধা দিল? আমি বললামঃ আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে এলাম। (কারণ) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাতে অনুমতি দেয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়। তখন উমার (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাকে এ কথার উপর অবশ্যই প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মাঝে কেউ আছে কি যিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীস শুনেছে? তখন উবাই ইবনু কাব (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আপনার কাছে প্রমাণ দিতে দলের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিই উঠে দাঁড়াবে। আর আমি দলের সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তাহাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললামঃ নাবী (সাঃআঃ) অবশ্যই এ কথা বলেছেন।

ইবনু মুবারাক বলেন, আবু সাঈদ হইতে ভিন্ন একটি সূত্রেও অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

[২০৬২; মুসলিম ৩৮/৭, হাদীস ২১৫৩, আহমাদ ১৯৬৩০] আঃপ্রঃ- ৫৮০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৮)

৭৯/১৪. অধ্যায়ঃ যখন কোন ব্যক্তিকে ডাকা হয় আর সে আসে, সেও কি প্রবেশের অনুমতি নিবে ?

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত । নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ এ ডাকাই তার জন্য অনুমতি ।

৬২৪৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদিন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে তাহাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে গিয়ে একটি পেয়ালায় দুধ পেলেন। তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবু হির! তুমি আহলে সুফ্‌ফার নিকট গিয়ে তাদের আমার নিকট ডেকে আন। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে এলাম। তারপর তারা এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাদের অনুমতি দেয়া হলো। তারপর তারা প্রবেশ করিল।

(আঃপ্রঃ- ৫৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৯)

৭৯/১৫. অধ্যায়ঃ শিশুদের সালাম দেয়া।

৬২৪৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, একবার তিনি একদল শিশুর পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করা কালে তিনি তাদের সালাম করে বলিলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) -ও তা করিতেন।

[মুসলিম ৩৯/৫, হাদীস ২১৬৮] আঃপ্রঃ- ৫৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০০)

৭৯/১৬. অধ্যায়ঃ মহিলাকে পুরুষদের এবং পুরুষকে মহিলাদের সালাম দেয়া।

৬২৪৮. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা জুমুআহর দিনে খুশি হতাম। রাবী বলেন, আমি তাঁকে বললামঃ কেন? তিনি বললেনঃ আমাদের একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। সে কোন লোককে বুদাআ নামক খেজুর বাগানে পাঠিয়ে বীট চিনির শিকড় আনতো। তা একটি হাঁড়িতে দিয়ে সে তাতে কিছুটা যবের দানা দিয়ে ঘুঁটে এক রকম খাবার তৈরি করতো। এরপর আমরা যখন জুমুআহর সলাত আদায় করে ফিরতাম, তখন আমরা ঐ মহিলাকে সালাম দিতাম। তখন সে আমাদের ঐ খাবার পরিবেশন করতো। আমরা এজন্য খুশি হতাম। আমাদের নিয়ম ছিল যে, আমরা জুমুআহর পরেই মধ্যাহ্ন ভোজন ও মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করতাম।

(আঃপ্রঃ- ৫৮০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০১)

৬২৪৯. আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)বললেনঃ হে আয়েশাহ! ইনি জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন আমিও বললামঃ ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমরা যা দেখছি না, তা আপনি দেখছেন। ইউনুস ও নুমান যুহরী সূত্রে বলেন, এবং বারাকাতুহু –ও বলেছেন।

(আঃপ্রঃ- ৫৮০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০২)

৭৯/১৭. অধ্যায়ঃ যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন যে, ইনি কে? আর তিনি বলেন, আমি।

৬২৫০. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

জাবির (রাদি.) বলেন, আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল। এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে এলাম এবং দরজায় আঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? আমি বললামঃ আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি আমি, যেন তিনি তা অপছন্দ করিলেন।

[২১২৭; মুসলিম ৩৮/৮, হাদীস ২১৫৫] আঃপ্রঃ- ৫৮০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৩)

৭৯/১৮. অধ্যায়ঃ যে সালামের জবাব দিল এবং বললঃ আলাইকাস্‌ সালাম।

জিবরীল (আঃ) এর সালামের উত্তরে আয়েশাহ (রাদি.) “ওয়া আলাইহিস্‌ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু” বলেছেন। আর নাবী (সাঃআঃ)বলেনঃ আদাম (আঃ) –এর সালামের জবাবে ফেরেশতা বলেনঃ “আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ”।

৬২৫১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সলাত আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করলো। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ

وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ

ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কারণ তুমি সলাত আদায় করো নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে এসে আবার সালাম করিল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কারণ তুমি সালাত আদায় করোনি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে তাঁকে সালাম করিল। তখন সে দ্বিতীয় বারে অথবা তার পরের বারে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করিবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযূ করিবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হইবে, তা তিলাওয়াত করিবে। তারপর তুমি রুকূ করিবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সাজদাহ করিবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করিবে। আবু উসামাহ (রাদি.) বলেন, এমনকি শেষে তুমি সোজা হয়ে দণ্ডায়মান হইবে।

(আঃপ্রঃ- ৫৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৪)

৬২৫২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তারপর উঠে বস ধীরস্থিরভাবে।

(আঃপ্রঃ- ৫৮১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৫)

৭৯/১৯. অধ্যায়ঃ যদি কেউ বলে যে, অমুক তোমাকে সালাম দিয়েছে।

৬২৫৩. আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেনঃ

 وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللَّ

ওয়া আলাইহিস্‌ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ

(আঃপ্রঃ- ৫৮১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৬)

৭৯/২০. অধ্যায়ঃ মুসলিম ও মুশরিকদের একত্রিত মাজলিসে সালাম দেয়া।

৬২৫৪. উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, একবার নাবী (সাঃআঃ) এমন একটি গাধার উপর সাওয়ার হলেন, যার জ্বীনের নীচে ফাদাকের তৈরী একখানি চাদর ছিল। তিনি উসামাহ ইবনু যায়দকে নিজের পিছনে বসিয়েছিলেন। তখন তিনি হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্রের সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) -এর দেখাশোনার উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছিলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের আগের ঘটনা। তিনি এমন এক মাজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, প্রতিমাপূজক, মুশরিক ও ইয়াহূদী ছিল। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূলও ছিল। আর এ মাজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.)-ও হাজির ছিলেন। যখন সাওয়ারীর পদাঘাতে বিক্ষিপ্ত ধূলাবালি মাজলিসকে ঢেকে ফেলছিল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার চাদর দিয়ে তার নাক ঢাকল। তারপর বললঃ তোমরা আমাদের উপর ধূলাবালি উড়িয়ো না। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাদের সালাম করিলেন। তারপর এখানে থামলেন ও সাওয়ারী থেকে নেমে তাদের আল্লাহর প্রতি আহ্বান করিলেন এবং তাদের কাছে কুরআন পাঠ করিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল বললঃ হে আগন্তুক! আপনার এ কথার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। তবে আপনি যা বলছেন, যদিও তা সত্য, তবুও আপনি আমাদের মাজলিসে এসব বলে আমাদের বিরক্ত করবেন না। আপনি আপনার নিজ বাসস্থানে ফিরে যান। এরপর আমাদের মধ্য হইতে কোন লোক আপনার নিকট গেলে তাকে এসব কথা বলবেন। তখন ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের মাজলিসে আসবেন, আমরা এসব কথা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহূদীদের মধ্যে পরস্পর গালাগালি শুরু হয়ে গেল। এমনকি তারা একে অন্যের উপর আক্রমণ করিতে উদ্যত হল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের নিরস্ত করিতে লাগলেন। শেষে তিনি তাহাঁর সাওয়ারীতে উঠে রওয়ানা হলেন এবং সাদ ইবনু উবাদাহর কাছে পোঁছলেন। তারপর তিনি বললেনঃ হে সাদ! আবু হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কী বলেছে, তা কি তুমি শুনোনি? সাদ (রাদি.) বললেনঃ সে এমন কথাবার্তা বলেছে। তিনি আরো বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তাকে মাফ করে দিন। আর তার কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তাআলা আপনাকে যেসব নিয়ামত দান করার ছিল তা সবই দান করিয়াছেন। অন্যদিকে এ শহরের অধিবাসীরা তো পরামর্শ করে স্থির করেছিল যে, তারা তাকে রাজমুকুট পরাবে। আর তার শিরে রাজকীয় পাগড়ী বেঁধে দিবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে দ্বীনে হক দান করিয়াছেন, তা দিয়ে তিনি তাদের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে সে (দুঃখের আগুনে) জ্বলছে। এজন্যই সে আপনার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তা আপনি নিজেই দেখেছেন। তারপর নাবী (সাঃআঃ) তাকে মাফ করে দিলেন।

(আঃপ্রঃ- ৫৮১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৭)

৭৯/২১. অধ্যায়ঃ গুনাহগার ব্যক্তির তাওবাহ করার আলামাত প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এবং গুনাহগারের তাওবাহ কবূল হবার প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত যিনি তাকে সালাম করেননি এবং তার সালামের জবাবও দেননি।

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) বলেনঃ শরাব খোরদের সালাম দিবে না।

৬২৫৫. আবদুল্লাহ ইবনু কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু কাব (রাদি.) বলেনঃ যখন কাব ইবনু মালিক (রাদি.) তাবূকের যুদ্ধে যোগদান না করে পিছনে রয়ে যান, আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার সাথে সালাম কালাম করিতে সকলকে নিষেধ করে দেন। (তখনকার ঘটনা) আমি কাব ইবনু মালিক (রাদি.) –কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে আসতাম এবং তাঁকে সালাম করতাম আর মনে মনে বলতাম যে, আমার সালামের জবাবে তাহাঁর ঠোঁট দুটি নড়ছে কিনা। পঞ্চাশ দিন পূর্ণ হলে নাবী (সাঃআঃ) ফজরের সালাতের সময় ঘোষণা দিলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওবাহ কবূল করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ- ৫৮১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৮)

৭৯/২২. অধ্যায়ঃ অমুসলিমদের সালামের জবাব কীভাবে দিতে হইবে।

৬২৫৬. আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার একদল ইয়াহূদী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বললঃ আস্‌সামু আলাইকা। (তোমার মরণ হোক)। আমি এ কথার অর্থ বুঝে বললামঃ আলাইকুমুস্‌ সামু ওয়াল লানাতু। (তোমাদের উপর মৃত্যু ও লানাত)। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আয়েশাহ! তুমি থামো। আল্লাহ সর্ব হালতে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! তারা যা বললোঃ তা কি আপনি শুনেননি? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এ জন্যই আমিও বলেছি, ওয়া আলাইকুম (অর্থাৎ তোমাদের উপরও)।

(আঃপ্রঃ- ৫৮১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৯)

৬২৫৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ইয়াহূদী যদি তোমাদের সালাম করে তবে তাদের কেউ অবশ্যই বলবেঃ

السَّامُ عَلَيْكَ

আস্‌সামু আলাইকা। তখন তোমরা উত্তরে বলবে

وَعَلَيْكَ 

ওয়াআলাইকা

[৬৯২৮; মুসলিম ৩৯/৪, হাদীস ২১৬৪, আহমাদ ৪৬৯৮] আঃপ্রঃ- ৫৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১০)

৬২৫৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা বলবে

 وَعَلَيْكُمْ

ওয়া আলাইকুম (তোমাদের উপরও)।

[২৯৬২; মুসলিম ৩৯/৪, হাদীস ২১৬৩, আহমাদ ১১৯৪৮] আঃপ্রঃ- ৫৮১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১১)

Comments

Leave a Reply