সালাতে কেরাত উচ্চৈঃস্বরে এবং নিঃশব্দে পড়ার বর্ণনা

সালাতে কেরাত উচ্চৈঃস্বরে এবং নিঃশব্দে পড়ার বর্ণনা

সালাতে কেরাত উচ্চৈঃস্বরে এবং নিঃশব্দে পড়ার বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ১০, আযান, অধ্যায়ঃ (৯৫-১১০)=১৬টি

১০/৯৫. অধ্যায়ঃ সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী, মুকীম অবস্থায় হোক বা সফরে, সশব্দে কিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দে সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী
১০/৯৬ অধ্যায়ঃ যুহরের সালাতে কিরাআত পড়া ।
১০/৯৭. অধ্যায়ঃ আসরের সালাতে কিরাআত ।
১০/৯৮. অধ্যায়ঃ মাগরিবের সালাতে কিরাআত ।
১০/৯৯. অধ্যায়ঃ মাগরিবের সালাতে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ ।
১০/১০০. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতে সশব্দে কিরাআত ।
১০/১০১. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতে সিজদার আয়াত (সম্বলিত সুরা) তেলাওয়াত ।
১০/১০২. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতে কিরাআত ।
১০/১০৩. অধ্যায়ঃ প্রথম দুরাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করা ও শেষ দু রাকআতে তা সংক্ষেপ করা ।
১০/১০৪. অধ্যায়ঃ ফজরের সালাতে কিরাআত ।
১০/১০৫. অধ্যায়ঃ ফজরের সালাতে সশব্দে কিরাআত ।
১০/১০৬. অধ্যায়ঃ এক রাকআতে দু সুরা মিলিয়ে পড়া, সুরার শেষাংশ পড়া, এক সুরার পূর্বে আরেক সুরা পড়া এবং সুরার প্রথমাংশ পড়া ।
১০/১০৭. অধ্যায়ঃ শেষ দু রাকআতে সুরা ফাতিহা পড়া ।
১০/১০৮. অধ্যায়ঃ যুহরে ও আসরে নিঃশব্দে কিরাআত পড়া ।
১০/১০৯. অধ্যায়ঃ ইমাম আয়াত শুনিয়ে পাঠ করলে ।
১০/১১০. অধ্যায়ঃ প্রথম রাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করা ।

১০/৯৫. অধ্যায়ঃ সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী, মুকীম অবস্থায় হোক বা সফরে, সশব্দে কিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দে সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী

৭৫৫. জাবির ইবনু সামুরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কূফাবাসীরা সাদ (রাদি.)-এর [১] বিরুদ্ধে উমর (রাদি.)-এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন এবং আম্মার (রাদি.)-কে তাদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। কূফার লোকেরা সাদ (রাদি.)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করিতে গিয়ে এ-ও বলে যে, তিনি ভালরূপে সালাত আদায় করিতে পারেন না। উমর (রাদি.) তাঁকে ডেকে পাঠালেন এবং বলিলেন, হে আবু ইসহাক! তারা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, আপনি নাকি ভালরূপে সালাত আদায় করিতে পারেন না। সাদ (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাসুল (সাঃআঃ)-এর সালাতের অনুরূপই সালাত আদায় করে থাকি। তাতে কোন ত্রুটি করি না। আমি ইশার সালাত আদায় করিতে প্রথমে দু রাকাআত একটু দীর্ঘ ও শেষের দু রাকাআত সংক্ষেপ করতাম। উমর (রাদি.) বলিলেন, হে আবু ইসহাক! আপনার সম্পর্কে আমার এ-ই ধারণা। অতঃপর উমর (রাদি.) কূফার অধিবাসীদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে সাদ (রাদি.) এর সঙ্গে কূফায় পাঠান। সে ব্যক্তি প্রতিটি মসজিদে গিয়ে সাদ (রাদি.) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো এবং তাঁরা সকলেই তাহাঁর ভূয়সী প্রশংসা করিলেন। অবশেষে সে ব্যক্তি বনূ আবস গোত্রের মসজিদে উপস্থিত হয়। এখানে উসামা উবনু কাতাদা নামে এক ব্যক্তি যাকে আবু সাদাহ ডাকা হত– দাঁড়িয়ে বলিল, যেহেতু তুমি আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে জিজ্ঞেস করেছ, সাদ (রাদি.) কখনো সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে যান না, গানীমাতের মাল সমভাবে বন্টন করেন না এবং বিচারে ইনসাফ করেন না। তখন সাদ (রাদি.) বলিলেন, মনে রেখো, আল্লাহর কসম! আমি তিনটি দুআ করছিঃ হে আল্লাহ! যদি তোমার এ বান্দা মিথ্যাবাদী হয়, লোক দেখানো এবং অপপ্রচারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে– ১. তার হায়াত বাড়িয়ে দিন, ২. তার অভাব বাড়িয়ে দিন, এবং ৩. তাঁকে ফিতনার সম্মুখীন করুন। পরবর্তীকালে লোকটিকে (তার অবস্থা সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করা হলে সে বলতো, আমি বয়সে বৃদ্ধ, ফিতনায় লিপ্ত। সাদ (রাদি.) এর দুআ আমার উপর লেগে আছে। বর্ণনাকারী আবদুল মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, পরে আমি সে লোকটিকে দেখেছি, অতি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তার ভ্রু চোখের উপর ঝুলে গেছে এবং সে পথে মেয়েদের বিরক্ত করত এবং তাদের চিমটি দিত।

[১] তিনি তখন কূফায় আমীর হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন ।

৭৫৬. উবাদাহ ইবনু সমিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতে সুরা আল-ফাতিহা পড়ল না তার সালাত হলো না। [১]

[১] আমাদের দেশের হানাফী ভাইয়েরা ইমামের পেছনে সুরা আল-ফাতিহা পাঠ করেন না, এটা নাবী (সাঃআঃ) এর আমলের বিপরীত। ইমামের পিছনে মুক্তাদীকে অবশ্যই সুরা আল-ফাতিহা পাঠ করিতে হইবে। মুক্তাদী ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা না পড়লে তার সালাত, সালাত বলে গণ্য হইবে না ।

বুখারীর অন্য বর্ণনায় জুযউল ক্বিরাআতের মধ্যে আছে- আমর্‌ বিন শুয়াইব তাহাঁর পিতা হইতে, তাহাঁর পিতা তাহাঁর দাদা হইতে বর্ণনা করে বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন তোমরা কি আমার পেছনে কিছু পড়ে থাক? তাঁরা বলিলেন, হাঁ আমরা খুব তাড়াহুড়া করে পাঠ করে থাকি। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন তোমরা উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সুরা ফাতিহা ব্যতিত কিছুই পড়বে না। (বুখারী ১ম ১০৪ পৃষ্ঠা। জুযউল কিরায়াত। মুসলিম ১৬৯, ১৭০ পৃষ্ঠা। আবু দাউদ ১০১ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ১ম খণ্ড ৫৭, ৭১ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪৬ পৃষ্ঠা। ইবনু মাজাহ ৬১ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ৯৫ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মালিক ১০৬ পৃষ্ঠা। সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ১ম খণ্ড ২৪৭ পৃষ্ঠা। মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদীস নং ৭৫৮-৭৬৭ ও ৮২০-৮২৪। হাদীস শরীফ, মাওঃ আবদুর রহীম, ২য় খণ্ড ১৯৩-১৯৬ পৃষ্ঠা, ইসলামিয়াত বি-এ, হাদীস পর্ব ১৪৪-১৬১ পৃষ্ঠা। হিদায়াহ দিরায়াহ ১০৬ পৃষ্ঠা। মেশকাত ৭৮ পৃষ্ঠা। বুখারী আযীযুল হক ১ম হাদীস নং ৪৪১। বুখারী- আঃপ্রঃ ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭১২। বুখারী-ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭১৮। তিরমিযী- ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২৪৭। মিশকাত- নূর মোহাম্মদ আযমী ২য় খণ্ড ও মাদরাসা পাঠ্য হাদীস নং ৭৬৫, ৭৬৬, ৭৯৪। বুলূগুল মারাম ৮৩ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সায়াদাত ১ম খণ্ড ২০৪ পৃষ্ঠা ।)

৭৫৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মসজিদে প্রবেশ করিলেন, তখন একজন সাহাবী এসে সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে সালাম করিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বলিলেন, আবার গিয়ে সালাত আদায় কর। কেননা, তুমিতো সালাত আদায় করনি। তিনি ফিরে গিয়ে পূর্বের মত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর এসে নাবী (সাঃআঃ)-কে সালাম করিলেন। তিনি বললেনঃ ফিরে গিয়ে আবার সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার বলিলেন। সাহাবী বলিলেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন- আমিতো এর চেয়ে সুন্দর করে সালাত আদায় করিতে জানি না। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। অতঃপর কুরআন হইতে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। অতঃপর রুকুতে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ করিবে। অতঃপর সিজদা হইতে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর তোমার পুরো সালাতে এভাবেই করিবে।

৭৫৮. জাবির ইবনু সামুরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

সাদ (রাদি.) বলেন, আমি তাদেরকে নিয়ে বিকালের দু সালাত (যুহর ও আসর) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সালাতের মত সালাত আদায় করতাম। এতে কোন ত্রুটি করতাম না। প্রথম দু রাকআতে কিরআত দীর্ঘায়িত এবং শেষ দু রাকআতে তা সংক্ষিপ্ত করতাম। উমর (রাদি.) বলেন, তোমার ব্যাপারে এটাই ধারণা।

১০/৯৬ অধ্যায়ঃ যুহরের সালাতে কিরাআত পড়া ।

৭৫৯. আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহরের প্রথম দু রাকআতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে আরও দুটি সুরা পাঠ করিতেন। প্রথম রাকআতে দীর্ঘ করিতেন এবং দ্বিতীয় রাকআত সংক্ষেপ করিতেন। কখনো কোন আয়াত শুনিয়ে পড়তেন। আসরের সালাতেও তিনি সুরা ফাতিহার সাথে অন্য দুটি সুরা পড়তেন। প্রথম রাকআত দীর্ঘ করিতেন। ফজরের প্রথম রাকআতও তিনি দীর্ঘ করিতেন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সংক্ষেপ করিতেন।

৭৬০. আবু মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কী করে তা বুঝতেন? তিনি বলিলেন, তাহাঁর দাড়ির নড়াচড়ায়।

১০/৯৭. অধ্যায়ঃ আসরের সালাতে কিরাআত ।

৭৬১. আবু মামার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি খাব্বাব ইবনু আরত্ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কী করে তাহাঁর কিরাআত বুঝতেন? তিনি বলিলেন, তাহাঁর দাড়ি নড়াচড়ায়।

৭৬২. আবু কাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহর ও আসরের প্রথম দু রাকআতে সুরা আল-ফাতিহার সাথে আর একটি করে সুরা পড়তেন। আর কখনো কখনো কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন।

১০/৯৮. অধ্যায়ঃ মাগরিবের সালাতে কিরাআত ।

৭৬৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উম্মুল ফায্‌ল (রাদি.) তাঁকে وَالمُرسَلاتِ غُرفاً সুরাটি তেলাওয়াত করিতে শুনে বলিলেন, বেটা! তুমি এ সুরা তেলাওয়াত করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে মাগরিবের সালাতে এ সুরাটি পড়তে শেষবারের মত শুনিয়াছিলাম।

৭৬৪. মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা যায়িদ ইবনু সাবিত (রাদি.) আমাকে বলিলেন, কী ব্যাপার, মাগরিবের সালাতে তুমি যে কেবল ছোট ছোট সুরা তেলাওয়াত কর? অথচ আমি নাবী (সাঃআঃ) কে দুটি দীর্ঘ সুরার মধ্যে অধিকতর দীর্ঘটি পাঠ করিতে শুনিয়াছি। [১]

[১] অপেক্ষাকৃত দুটি দীর্ঘতম সুরা দ্বারা সুরা আরাফ ও সুরা আনআমকে বুঝানো হয়েছে। আর এ দুটির মাঝে দীর্ঘতম সুরা আরাফ।

১০/৯৯. অধ্যায়ঃ মাগরিবের সালাতে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ ।

৭৬৫. জুবায়র ইবনু মুতইম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে মাগরিবের সালাতে সুরা আত-তূর পড়তে শুনিয়াছি।

১০/১০০. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতে সশব্দে কিরাআত ।

৭৬৬. আবু রাফি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরাইরা (রাদি.)-এর সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করলাম। সেদিন তিনি إِذاَ السَّماءُ انشَقَّت সুরাটি তেলাওয়াত করে সিজদা করিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম (সাঃআঃ)-এর পিছনে এ সিজদা করেছি, তাই তাহাঁর সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এ সুরায় সিজদা করব।

৭৬৭. আদী (ইবন সাবিত) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বারাআ (রাদি.) হইতে শুনিয়াছি যে, নাবী (সাঃআঃ) এক সফরে ইশা সালাতের প্রথম দু রাকআতের এক রাকআতে সুরা وَالتّيِنِ وَالزَّيتوُنِ পাঠ করেন।

১০/১০১. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতে সিজদার আয়াত (সম্বলিত সুরা) তেলাওয়াত ।

৭৬৮. আবু রাফি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু হুরাইরা (রাদি.)-এর সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করলাম। তিনি إِذاَ السَّماءُ انشَقَّت সুরাটি তেলাওয়াত করে সিজদা করিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এ সিজদা কেন? তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম (সাঃআঃ)-এর পিছনে এ সুরায় সিজদা করেছি, তাই তাহাঁর সঙ্গে মিলিত না হওয়া অবধি আমি এতে সিজদা করব।

১০/১০২. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতে কিরাআত ।

৭৬৯. বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে ইশার সালাতে وَالتّيِنِ وَالزَّيتوُنِ -“সুরা আত তীন” পড়তে শুনিয়াছি। আমি তাহাঁর চেয়ে কারো সুন্দর কন্ঠ অথবা কিরাআত শুনিনি।

১০/১০৩. অধ্যায়ঃ প্রথম দুরাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করা ও শেষ দু রাকআতে তা সংক্ষেপ করা ।

৭৭০. জাবির ইবনু সামুরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমর (রাদি.) সাদ (রাদি.)-কে বলিলেন, আপনার বিরুদ্ধে তারা (কূফাবাসীরা) সর্ব বিষয়ে অভিযোগ করেছে, এমনকি সালাত সম্পর্কেও। সাদ (রাদি.) বলিলেন, আমি প্রথম দুরাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করে থাকি এবং শেষের দু রাকআতে তা সংক্ষেপ করি। আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পিছনে যেমন সালাত আদায় করেছি, তেমনই সালাত আদায়ের ব্যাপারে আমি ক্রটি করিনি। উমর (রাদি.) বলিলেন আপনি ঠিকই বলেছেন, আপনার ব্যাপারে ধারণা এমনই, কিংবা (তিনি বলেছিলেন) আপনার সম্পর্কে আমার এ রকমই ধারণা।

১০/১০৪. অধ্যায়ঃ ফজরের সালাতে কিরাআত ।

উম্মূ সালামা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সুরা তূর পড়েছেন।

৭৭১. সাইয়ার ইবনু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ও আমার পিতা আবু বারযা আসলামী (রাদি.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে সালাতসমূহের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহরের সালাত সূর্য ঢলে গেলেই আদায় করিতেন। আর আসর (এমন সময় যে, সালাতের শেষে) কোন ব্যক্তি সূর্য সতেজ থাকাবস্থায় মদীনার প্রান্তে ফিরে আসতে পারতো। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কী বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। আর তিনি রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ইশা বিলম্ব করিতে কোন দ্বিধা করিতেন না এবং ইশার পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি পছন্দ করিতেন না। আর তিনি ফজর আদায় করিতেন এমন সময় যে, সালাত শেষে ফিরে যেতে লোকেরা তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারতো। এর দু রাকআতে অথবা রাবী বলেছেন, এক রাকআতে তিনি ষাট থেকে একশ আয়াত পাঠ করিতেন।

৭৭২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, প্রত্যেক সালাতেই কিরাআত পড়া হয়। তবে যে সব সালাত আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের শুনিয়ে পড়েছেন, আমরাও তোমাদের শুনিয়ে পড়ব। আর যে সব সালাতে আমাদের না শুনিয়ে পড়েছেন, আমরাও তোমাদের না শুনিয়ে পড়ব। যদি তোমরা সুরা আল- ফাতিহার উপরে আরো অধিক না পড়, সালাত আদায় হয়ে যাবে। আর যদি অধিক পড় তা উত্তম।

১০/১০৫. অধ্যায়ঃ ফজরের সালাতে সশব্দে কিরাআত ।

উম্মু সালামা (রাদি.) বলেন, আমি লোকদের পিছনে তাওয়াফ করছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) তখন সালাত আদায় করছিলেন এবং সুরা তূর পাঠ করছিলেন ।

৭৭৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা করেন। আর দুষ্ট জিন-দের [১] উর্দ্ধলোকের সংবাদ সংগ্রহের পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় এবং তাদের দিকে অগ্নিপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হয়। কাজেই শয়তানরা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। তারা জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলিল, আমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে বাধা দেখা দিয়েছে এবং আমাদের দিকে অগ্নিপিণ্ড ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন তারা বলিল, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু ঘটেছে বলেই তোমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই, পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত ঘুরে দেখ, কী কারণে তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহের বাধা সৃষ্টি হয়েছে? তাই তাদের যে দলটি তিহামার দিকে গিয়েছিল, তারা নাবী (সাঃআঃ)-এর দিকে অগ্রসর হল। তিনি তখন উকায বাজারের পথে নাখ্‌লা নামক স্থানে সাহাবীগণকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। তারা যখন কুরআন শুনতে পেল, তখন সেদিকে মনোনিবেশ করলো। অতঃপর তারা বলে উঠলো, আল্লাহর শপথ! এটিই তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে বাধা সৃষ্টি করেছে। এমন সময় যখন তারা গোত্রের নিকট ফিরে আসল এবং বলিল হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনিয়াছি যা সঠিক পথ নির্দেশ করে, আমরা এতে ঈমান এনেছি এবং কখনো আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরীক স্থির করব না। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রতি ……قُل أُوحِيَ إِلَيَّ সুরা নাযিল করেন। মূলতঃ তাহাঁর নিকট জিনদের কথাবার্তাই ওয়াহীরূপে অবর্তীণ করা হয়েছে।

[১] হাদীসে উল্লেখিত “শায়াতিন” (شَياطين) শব্দটি দুষ্ট প্রকৃতির জিন্নদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

৭৭৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যেখানে কিরাআত পাঠের [১] জন্য আদেশ পেয়েছেন, সেখানে পড়েছেন। আর যেখানে চুপ থাকতে [২] আদেশ পেয়েছেন সেখানে চুপ থেকেছেন রয়েছেন। (আল্লাহ তাআলার বাণী):

‏وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا

“তোমার প্রতিপালক ভুল করেন না”-(সুরা মারইয়াম ১৯/৬৪)।

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

“নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুল-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সুরা আল-আহযাব ৩৩/২১)

৭৭৪/১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত।

কুবার মসজিদে এক আনসারী ব্যক্তি তাঁদের ইমামাত করিতেন। তিনি সশব্দে কিরা-আত পড়া হয় এমন কোন সালাতে যখনই কোন সুরা তেলাওয়াত করিতেন, قُل هُوَ اللهُ أَحَدٌ সুরা দ্বারা শুরু করিতেন। তা শেষ করে অন্য একটি সুরা এর সাথে মিলিয়ে পড়তেন। আর প্রতি রাকআতেই তিনি এমন করিতেন। তাহাঁর সঙ্গীরা এ ব্যাপারে তাহাঁর নিকট বলিলেন যে, আপনি এ সুরাটি দিয়ে শুরু করেন, এটি যথেষ্ট হয় বলে আপনি মনে করেন না তাই আর একটি সুরা মিলিয়ে পড়েন। হয় আপনি এটিই পড়বেন, না হয় এটি বাদ দিয়ে অন্যটি পড়বেন। তিনি বলিলেন, আমি এটি কিছুতেই ছাড়তে পারব না। আমার এভাবে ইমামাত করা যদি আপনারা অপছন্দ করেন, তাহলে আমি আপনাদের ইমামাত ছেড়ে দেব। কিন্তু তাঁরা জানতেন যে, তিনি তাদের মাঝে উত্তম। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তাদের ইমামাত করুক এটা তাঁরা অপছন্দ করিতেন। পরে নাবী যখন তাঁদের এখানে আগমন করেন, তাঁরা বিষয়টি নাবী (সাঃআঃ)-কে জানান। তিনি বলিলেন, হে, অমুক! তোমার সঙ্গীগণ যা বলেন তা করিতে তোমাকে কিসে বাধা দেয়? আর প্রতি রাকআতে এ সুরাটি বাধ্যতামূলক করে নিতে কিসে উদ্বুদ্ধ করছে? তিনি বলিলেন, আমি এ সুরাটি ভালবাসি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এ সুরার ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।

(আ.প্র. অনুচ্ছেদ পৃষ্ঠা ৩৩৬, ই.ফা. অনুচ্ছেদ ৪৯৮ ). [১] অর্থাৎ সশব্দে পড়ার।. [২] নিঃশব্দে পড়ার।

১০/১০৬. অধ্যায়ঃ এক রাকআতে দু সুরা মিলিয়ে পড়া, সুরার শেষাংশ পড়া, এক সুরার পূর্বে আরেক সুরা পড়া এবং সুরার প্রথমাংশ পড়া ।

আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ) ফজরের সালাতে সুরা মুমিনূন পড়তে শুরু করেন। যখন মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) বা ঈসা (আঃ)-এর আলোচনা এল, তাহাঁর কাশি উঠল আর তখন তিনি রুকূতে চলে গেলেন। উমর (রাদি.) প্রথম রাকআতে সুরা বাকারার একশবিশ আয়াত তেলাওয়াত করেন এবং দ্বিতীয় রাকআতে মাসানী সুরা সমূহের কোন একটি তেলাওয়াত করেন। আহনাফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রথম রাকআতে সুরা কাহফ তেলাওয়াত করেন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সুরা ইউসুফ বা সুরা ইউনুস তেলাওয়াত করেন এবং তিনি বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি উমর (রাদি.)-এর পিছনে এ দুটি সুরা দিয়ে ফজরের সালাত আদায় করেন। ইবনু মাসউদ (রাদি.) (প্রথম রাকআতে) সুরা আল-আনফালের চল্লিশ আয়াত পড়েন এবং দ্বিতীয় রাকআতে মুফাস্‌সাল সুরা সমূহের একটি পড়েন। যে ব্যক্তি দু রাকআতে একই সুরা ভাগ করে পড়ে বা দু রাকআতে একই সুরা দুহরিয়ে পড়ে তার সম্পর্কে কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সবই আল্লাহর কিতাব। (অর্থাৎ জায়িয)।

৭৭৫. আবু ওয়াইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু মাসউদ (রাদি.)-এর নিকট এসে বলিল, গতরাতে আমি মুফাস্সাল সুরাগুলো এক রাকআতেই তেলাওয়াত করেছি। তিনি বলিলেন, তাহলে নিশ্চয়ই কবিতার ন্যায় দ্রুত পড়েছ। নাবী (সাঃআঃ) পরস্পর সমতুল্য যে সব সুরা মিলিয়ে পড়তেন, সেগুলো সম্পর্কে আমি জানি। এ বলে তিনি মুফাস্‌সাল সুরাসমূহের বিশটি সুরা উল্লেখ পূর্বক বলেন, নাবী (সাঃআঃ) প্রতি রাকআতে এর দুটি করে সুরা পড়তেন।

১০/১০৭. অধ্যায়ঃ শেষ দু রাকআতে সুরা ফাতিহা পড়া ।

৭৭৬. আবু কাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) যুহরের প্রথম দুরাকআতে সুরা আল-ফাতিহা ও দুটি সুরা পড়তেন এবং শেষ দুরাকআতে সুরা আল-ফাতিহা পাঠ করিতেন এবং তিনি কোন কোন আয়াত আমাদের শোনাতেন, আর তিনি প্রথম রাকআতে যত দীর্ঘ করিতেন, দ্বিতীয় রাকআতে তত দীর্ঘ করিতেন না। আসরে এবং ফজরেও এ রকম করিতেন।

১০/১০৮. অধ্যায়ঃ যুহরে ও আসরে নিঃশব্দে কিরাআত পড়া ।

৭৭৭. আবু মামার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বলিলেন হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কী করে বুঝলেন? তিনি বলিলেন, তাহাঁর দাড়ি নড়াচড়া দেখে।

১০/১০৯. অধ্যায়ঃ ইমাম আয়াত শুনিয়ে পাঠ করলে ।

৭৭৮. আবু কাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) যুহর ও আসরের সালাতের প্রথম দুরাকআতে সুরা ফাতিহার সাথে আরেকটি সুরা পড়তেন। কখনো কোন কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন এবং তিনি প্রথম রাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করিতেন।

১০/১১০. অধ্যায়ঃ প্রথম রাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করা ।

৭৭৯. আবু কাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) যুহরের সালাতের প্রথম রাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করিতেন ও দ্বিতীয় রাকআতে সংক্ষিপ্ত করিতেন এবং এ রকম করিতেন ফজরের সালাতেও।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply