সালাতে কিবলামুখী হওয়া ও মসজিদ হইতে হাত দিয়ে থুথু পরিষ্কার করা

সালাতে কিবলামুখী হওয়া ও পরিপূর্ণভাবে সিজদার ফজিলত

সালাতে কিবলামুখী হওয়া ও মসজিদ হইতে হাত দিয়ে থুথু পরিষ্কার করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৮, সালাত (নামাজ), অধ্যায়ঃ (২৬-৪০)=১৫টি

৮/২৬. অধ্যায়ঃ পরিপূর্ণভাবে সিজদা না করা।
৮/২৭. অধ্যায়ঃ সিজদায় বাহুমূল খোলা রাখা এবং দুপাশ আলগা রাখা।
৫/২৮. অধ্যায়ঃ দুলজ্জাস্থান পরস্পর মিলিত হলে।
৫/২৯. অধ্যায়ঃ স্ত্রী অঙ্গ হইতে কিছু লাগলে ধুয়ে ফেলা।
৮/৩০ অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/১২৫)
৮/৩১. অধ্যায়ঃ যেখানেই হোক (সালাতে) কিবলামুখী হওয়া।
৮/৩২. অধ্যায়ঃ কিবলা সম্পর্কে বর্ণনা ভুলবশতঃ কিবলার পরিবর্তে অন্যদিকে মুখ করে সালাত আদায় করলে তা পুনরায় আদায় করা যাদের মতে আবশ্যকীয় নয়।
৮/৩৩. অধ্যায়ঃ মসজিদ হইতে হাত দিয়ে থুথু পরিষ্কার করা।
৮/৩৫. অধ্যায়ঃ সালাতে ডান দিকে থুথু ফেলবে না।
৮/৩৬.অধ্যায়ঃ থুথু যেন বাম দিকে কিংবা বাম পায়ের নীচে ফেলা হয়।
৮/৩৭. অধ্যায়ঃ মসজিদে থুথু ফেলার কাফ্‌ফারা।
৮/৩৮.অধ্যায়ঃ মসজিদে কফ দাবিয়ে দেয়া।
৮/৩৯. অধ্যায়ঃ থুথু ফেলতে বাধ্য হলে তা কাপড়ের কিনারে ফেলবে।
৮/৪০. অধ্যায়ঃ সালাত পূর্ণ করার ও ক্বিবলার ব্যাপারে লোকদের ইমামের উপদেশ প্রদান।

৮/২৬. অধ্যায়ঃ পরিপূর্ণভাবে সিজদা না করা।

৩৮৯. হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি তার রুকু-সিজদা পুরোপুরি আদায় করছিল না। সে যখন সালাত শেষ করলো তখন তাকে হুযাইফা (রাদি.) বললেনঃ তোমার সালাত ঠিক হয়নি। রাবী বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি (হুযাইফা) এ কথাও বলেছেন, (এ অবস্থায়) তোমার মৃত্যু হলে তা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) এর তরীকার বাইরে হইবে।

(আঃপ্রঃ ৩৭৬, ইঃফাঃ ৩৮২)

৮/২৭. অধ্যায়ঃ সিজদায় বাহুমূল খোলা রাখা এবং দুপাশ আলগা রাখা।

৩৯০. আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) সালাতের সময় উভয় বাহু পৃথক রাখতেন। এমনকি তাহাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যেতো। লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ জাফর ইবনু রবীআহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার নিকট অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ ,৩৭৭ ইঃফাঃ ৩৮৩)

৮/২৮ অধ্যায়ঃ কিবলামুখী হবার ফযীলাত, পায়ের আঙ্গুলকেও কিবলামুখী রাখবে।

আবু হুমায়দ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

৩৯১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের ক্বিবলামুখী হয় আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সেই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।

(আঃপ্রঃ ৩৭৮, ইঃফাঃ ৩৮৪)

৩৯২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেনঃ আমাকে লোকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা লা– ইলা–হা ইল্লাল্লাহ” স্বীকার করিবে। যখন তারা তা স্বীকার করে নেয়, আমাদের মত সালাত আদায় করে, আমাদের ক্বিবলামুখী হয় এবং আমাদের যবেহ করা প্রানী খায়, তখন তাদের জান-মালসমূহ আমাদের জন্য হারাম হয়ে যায়। অবশ্য রক্তের বা সম্পদের দাবীর কথা ভিন্ন। আর তাদের হিসাব আল্লাহর নিকট।

(আঃপ্রঃ ৩৭৯, ইঃফাঃ ৩৮৫)

৩৯৩. আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুমায়দ হইতে (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ মায়মূন ইবনু সিয়াহ আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আবু হামযাহ ! কিসে মানুষের জান- মাল হারাম হয়? তিনি জবাব দিলেন, যে ব্যক্তি লা– ইলা–হা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেয়, আমাদের ক্বিবলামুখী হয়, আমাদের মত সালাত আদায় করে আর আমাদের যবহ করা প্রানী খায় , সেই মুসলিম। অন্য মুসলমানের মতই তার অধিকার রয়েছে। আর অন্য মুসলমানদের মতই তাকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিতে হইবে। ইবনু আবু মারইয়াম, ইয়াহইয়া ইবনু আয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)……… আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে (অনুরূপ) বর্ণনা করেন।

(আঃপ্রঃ ৩৭৯ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩৮৫ শোষংশ)

৮/২৯ অধায়ঃ মাদীনাহ, সিরিয়া ও (মাদীনাহর) পূর্ব দিকের অধিবাসীদের ক্বিবলাহ। পূর্বে বা পশ্চিমে ক্বিবলাহ নয়।

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা পায়খানা বা পেশাব করিতে কিবলাহমুখী হইবে না, বরং তোমরা (উত্তর অঞ্চলের অধিবাসীরা) পূর্ব দিকে কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরাবে।

৩৯৪. আবু আইয়ূব আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন তোমরা পায়খানা করিতে যাও , তখন ক্বিবলার দিকে মুখ করিবে না কিংবা পিঠও দিবে না, বরং তোমরা পূর্ব দিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে।

আবু আইয়ূব আনসারী (রাদি.) বলেনঃ আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো ক্বিবলামুখী বানানো পেলাম। আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবাহ ইসতিগফার করতাম। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমি আবু আইয়ূব (রাদি.)-কে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি।

(আঃপ্রঃ ৩৮০, ইঃফাঃ ৩৮৬)

৮/৩০ অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/১২৫)

৩৯৫. আমর ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমরা ইবনু উমর (রাদি.)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম – যে ব্যক্তি উমরাহর ন্যায় বাইতুল্লাহর ত্বওয়াফ করেছে কিন্তু সাফা-মারওয়ায় সাঈ করে নি, সে কি তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করিতে পারবে? তিনি জবাব দিলেন, নাবী (সাঃআঃ) এসে সাতবার বায়তুল্লাহ তওয়াফ করিয়াছেন, মাকামে ইবরাহীমের নিকট দুরাকআত সালাত আদায় করিয়াছেন আর সাফা-মারওয়ায় সাঈ করিয়াছেন। তোমাদের জন্যে আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।

(১৬২৩, ১৬২৭, ১৬৪৫, ১৬৪৭, ১৭৯৩ দ্রষ্টব্য) (আ.প্র. ৩৮১, ই.ফা. ৩৮৭) (আঃপ্রঃ ৩৮১, ইঃফাঃ ৩৮৭)

৩৯৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি বলেছেনঃ সাফা-মারওয়ার সাঈ করার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর নিকটবর্তী (সহবাস) হইবে না।

(আঃপ্রঃ ৩৮১ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩৮৭ শেষাংশ)

৩৯৭. মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাদি.)-এর নিকট এলেন এবং বললেনঃ ইনি হলেন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ), তিনি কাবা ঘরে প্রবেশ করিয়াছেন। ইবনু উমর বলেনঃ আমি সেদিকে এগিয়ে গেলাম এবং দেখলাম যে, নাবী (সাঃআঃ) কাবা হইতে বেরিয়ে পড়েছেন। আমি বিলাল (রাদি.) কে দুই কপাটের মাঝখানে দাঁড়ানো দেখে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) কি কাবা ঘরের অভ্যন্তরে সালাত আদায় করিয়াছেন? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ, কাবায় প্রবেশ করার সময় তোমার বাঁ দিকের দুই স্তম্ভের মাঝখানে দুরাকআত সালাত আদায় করিয়াছেন। অতঃপর তিনি বের হলেন এবং কাবার সামনে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন।

(আঃপ্রঃ ,৩৮২ ইঃফাঃ ৩৮৮)

৩৯৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যখন নাবী (সাঃআঃ) কাবায় প্রবেশ করেন, তখন তার সকল দিকে দুআ করিয়াছেন, সালাত আদায় না করেই বেরিয়ে এসেছেন এবং বের হবার পর কাবার সামনে দুরাকআত সালাত আদায় করিয়াছেন এবং বলেছেন, এটাই কিবলা।

(আঃপ্রঃ ৩৮৩, ইঃফাঃ ৩৮৯)

৮/৩১. অধ্যায়ঃ যেখানেই হোক (সালাতে) কিবলামুখী হওয়া।

আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কিবলামুখী হও এবং তাকবীর বল।

৩৯৯. বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে ষোল বা সতের মাস সালাত আদায় করিয়াছেন। আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কাবার দিকে কিবলা করা পছন্দ করিতেন। মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ

‏قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ‏

“আকাশের দিকে আপনার বারাবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করছি”- (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৪)।

অতঃপর তিনি কাবার দিকে মুখ করেন। আর নির্বোধ লোকেরা- তারা ইয়াহুদি- বলতো, “তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিল, তা হইতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল?

‏قُلْ لِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

বলুনঃ (হে নাবী) পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন”- (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪২)।

তখন নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে এক ব্যক্তি সালাত আদায় করিলেন এবং বেরিয়ে গেলেন। তিনি আসরের সালাতের সময় আনসারগণের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি বলিলেন- (তিনি নিজেই) সাক্ষী যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সঙ্গে তিনি সালাত আদায় করিয়াছেন, আর তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কাবার দিকে মুখ করিয়াছেন। তখন সে গোত্রের লোকজন ঘুরে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৮৪, ইঃফাঃ ৩৯০)

৪০০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) নিজের সওয়ারীর উপর (নফল) সালাত আদায় করিতেন- সওয়ারী তাঁকে নিয়ে যে দিকেই মুখ করত না কেন। কিন্তু যখন ফরয সালাত আদায়ের ইচ্ছা করিতেন, তখন নেমে পড়তেন এবং কিবলামুখী হইতেন।

(আঃপ্রঃ ৩৮৫, ইঃফাঃ ৩৯১)

৪০১. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিলেন। রাবী ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমার জানা নেই, তিনি বেশি করিয়াছেন বা কম করিয়াছেন, সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! সালাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কি? তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরূপ সালাত আদায় করিলেন। তিনি তখন তাহাঁর দুপা ঘুরিয়ে কিবলামুখী হলেন। আর দুটি সিজদা আদায় করিলেন। অতঃপর সালাম ফিরলেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সালাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত পূর্ণ করে। অতঃপর যেন সালাম ফিরিয়ে দুটি সিজদা দেয়।

(আঃপ্রঃ ৩৮৬, ইঃফাঃ ৩৯২)

৮/৩২. অধ্যায়ঃ কিবলা সম্পর্কে বর্ণনা ভুলবশতঃ কিবলার পরিবর্তে অন্যদিকে মুখ করে সালাত আদায় করলে তা পুনরায় আদায় করা যাদের মতে আবশ্যকীয় নয়।

নাবী (সাঃআঃ) যুহরের দুরকাআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে মুসল্লীগণের দিকে মুখ করিলেন। তার পরে বাকী সালাত পূর্ণ করিলেন।

৪০২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমর (রাদি.) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আল্লাহর ওয়াহীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা যদি মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানাতে পারতাম! তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ

‏وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى‏

“তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানাও” – (সুরা আল-বাক্কারাহ ২/১২৫)।

(দ্বিতীয়) পর্দার আয়াত, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যদি আপনার সহধর্মিণীগণকে পর্দার আদেশ করিতেন! কেননা, সৎ ও অসৎ সবাই তাঁদের সাথে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়। আর একবার নাবী (সাঃআঃ) এর সহধর্মিণীগণ অভিমান সহকারে একত্রে তাহাঁর নিকট উপস্থিত হন। তখন আমি তাঁদেরকে বললামঃ “আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যদি তোমাদের ত্বালাক দেন, তাহলে তাহাঁর রব তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চেয়ে উত্তম অনুগত স্ত্রী দান করবেন” – (সু-রা তাহরীম ৬৬/৫)। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (৪৪৮৩, ৪৭৯০, ৪৯১৬)

৪০২/১. অপর সনদে হুমায়দ বলেন, আমি আনাস (রাদি.) হইতে অনুরূপ শুনিয়াছি।

(আ.প্র. ৩৮৭, ই.ফা. ৩৯৩) (আঃপ্রঃ ৩৮৭, ইঃফাঃ ৩৯৩)

৪০৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা লোকেরা কুবা নামক স্থানে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাদের নিকট এক ব্যক্তি এসে বলিলেন যে, এ রাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে। আর তাঁকে কাবামুখী হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই তোমরা কাবার দিকে মুখ কর। তখন তাঁদের চেহারা ছিল শামের (বায়তুল মুকাদ্দাসের) দিকে। একথা শুনে তাঁরা কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৮৮, ইঃফাঃ ৩৯৪)

৪০৪. আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা নাবী (সাঃআঃ) যুহরের সালাত পাঁচ রাকআত আদায় করেন। তখন মুসল্লীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ সালাতে কি কিছু বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ তা কি? তারা বললেনঃ আপনি যে পাঁচ রাকআত সালাত আদায় করিয়াছেন। রাবী বলেন, তিনি নিজের পা ঘুরিয়ে (কিবলামুখী হয়ে) দু সিজদা (সিজদা সাহু) করে নিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৮৯, ইঃফাঃ ৩৯৫)

৮/৩৩. অধ্যায়ঃ মসজিদ হইতে হাত দিয়ে থুথু পরিষ্কার করা।

৪০৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) ক্কিবলার দিকে (দেয়ালে) কফ দেখলেন। এটা তাহাঁর নিকট কষ্টদায়ক মনে হল। এমনকি তাহাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠল। তিনি উঠে গিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তার ও ক্কিবলার মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যেন ক্কিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নিচে তা ফেলে। অতঃপর চাদরের আঁচল নিয়ে তাতে তিনি থুথু ফেললেন এবং তার এক অংশকে অন্য অংশের উপর ভাঁজ করিলেন এবং বললেনঃ অথবা সে এমন করিবে।

(আঃপ্রঃ ৩৯০, ইঃফাঃ ৩৯৬)

৪০৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ক্কিবলার দিকের দেওয়ালে থুথু দেখে তা পরিষ্কার করে দিলেন। অতঃপর লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন সালাত আদায় করে তখন তার সামনের দিকে আল্লাহ তাআলা থাকেন।

(আঃপ্রঃ ৩৯১, ইঃফাঃ ৩৯৭)

৪০৭. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ক্বিবলার দিকের দেয়ালে নাকের শ্লেস্মা, থুথু কিংবা কফ দেখলেন এবং তা পরিষ্কার করিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৯২, ইঃফাঃ ৩৯৮)

৮/৩৪. অধ্যায়ঃ কাঁকর দিয়ে মসজিদ হইতে নাকের শ্লেষ্মা পরিষ্কার করা।

ইবন আব্বাস (রাদি.) বলেছেনঃ যদি আর্দ্র আবর্জনায় তোমার পা ফেল, তখন তা ধুইয়ে ফেলবে, আর শুকনো হলে ধোয়ার প্রয়োজন নেই

৪০৮. আবু হুরাইরা ও আবু সাঈদ (খুদরী) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মসজিদের দেয়ালে কফ দেখে কাঁকর নিয়ে তা মুছে ফেললেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তা তার বাম দিকে অথবা তার বাম পায়ের নীচে ফেলে।

(আঃপ্রঃ ৩৯৩, ইঃফাঃ ৩৯৯)

৪০৯. See previous Hadith. আবু হুরাইরা ও আবু সাঈদ (খুদরী) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মসজিদের দেয়ালে কফ দেখে কাঁকর নিয়ে তা মুছে ফেললেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তা তার বাম দিকে অথবা তার বাম পায়ের নীচে ফেলে।

(আঃপ্রঃ ৩৯৩, ইঃফাঃ ৩৯৯)

৮/৩৫. অধ্যায়ঃ সালাতে ডান দিকে থুথু ফেলবে না।

৪১০. আবু হুরাইরা (রাদি.) ও আবু সাঈদ (খুদরী) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মসজিদের দেয়ালে কফ দেখলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কিছু কাঁকর নিলেন এবং তা মুছে ফেললেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ কফ ফেললে তা যেন সে সামনে অথবা ডানে না ফেলে। বরং সে বাম দিকে কিংবা বাম পায়ের নীচে ফেলে।

(আঃপ্রঃ ৩৯৪, ইঃফাঃ ৪০০)

৪১১. আবু হুরাইরা (রাদি.) ও আবু সাঈদ (খুদরী) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মসজিদের দেয়ালে কফ দেখলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কিছু কাঁকর নিলেন এবং তা মুছে ফেললেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ কফ ফেললে তা যেন সে সামনে অথবা ডানে না ফেলে। বরং সে বাম দিকে কিংবা বাম পায়ের নীচে ফেলে।

(আঃপ্রঃ ৩৯৪, ইঃফাঃ ৪০০)

৪১২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার সামনে বা ডানে থুথু নিক্ষেপ না করে; বরং তার বামে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলে।

(আঃপ্রঃ ৩৯৫, ইঃফাঃ ৪০১)

৮/৩৬.অধ্যায়ঃ থুথু যেন বাম দিকে কিংবা বাম পায়ের নীচে ফেলা হয়।

৪১৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুমিন যখন সালাতে থাকে, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে, বরং তার বাম দিকে অথবা (বাম) পায়ের নীচে ফেলে। [১]

(আঃপ্রঃ ৩৯৬, ইঃফাঃ ৪০২). [১] সালাতের মধ্যে কথা বলা পূর্বে বৈধ ছিল, পরে নিষিদ্ধ করা হয়। থুথু ফেলা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

৪১৪. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একদা মসজিদের ক্বিবলার দিকের দেয়ালে কফ দেখলেন, তখন তিনি কাঁকর দিয়ে তা মুছে দিলেন। অতঃপর সামনের দিকে অথবা ডান দিকে থুথু ফেলতে নিষেধ করিলেন। কিন্তু (প্রয়োজনে) বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলতে বলিলেন। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুমাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে অনুরূপ রিওয়ায়াত আছে।

(আঃপ্রঃ ৩৯৭, ইঃফাঃ ৪০৩)

৮/৩৭. অধ্যায়ঃ মসজিদে থুথু ফেলার কাফ্‌ফারা।

৪১৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ, আর তার কাফফারাহ (প্রতিকার) হচ্ছে তা দাবিয়ে দেয়া (মুছে ফেলা)।

(আঃপ্রঃ ৩৯৮, ইঃফাঃ ৪০৪)

৮/৩৮.অধ্যায়ঃ মসজিদে কফ দাবিয়ে দেয়া।

৪১৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) সুত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। কেননা সে যতক্ষণ তার মুসল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সাথে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। তার ডানদিকে থাকেন ফেরেশতা। সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা দাবিয়ে দেয়।

(আঃপ্রঃ ৩৯৯, ইঃফাঃ ৪০৫)

৮/৩৯. অধ্যায়ঃ থুথু ফেলতে বাধ্য হলে তা কাপড়ের কিনারে ফেলবে।

৪১৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) ক্বিবলার দিকে (দেয়ালে) কফ দেখে তা নিজ হাতে মুছে ফেললেন আর তাহাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল। বা সে কারনে তাহাঁর চেঁহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেলো এবং এর প্রতি তাহাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পেল। তিনি বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে চুপে চুপে কথা বলে। অথবা (বলেছেন) তখন তার প্রতিপালক, ক্বিবলা ও তার মাঝখানে থাকেন। কাজেই সে যেন ক্বিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং (প্রয়োজনে) তার বাম দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে। অতঃপর তিনি চাদরের কোণ ধরে তাতে থুথু ফেলে এক অংশের উপর অপর অংশ ভাঁজ করে দিলেন এবং বললেনঃ অথবা এমন করিবে।

(আঃপ্রঃ ৪০০, ইঃফাঃ ৪০৬)

৮/৪০. অধ্যায়ঃ সালাত পূর্ণ করার ও ক্বিবলার ব্যাপারে লোকদের ইমামের উপদেশ প্রদান।

৪১৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা কি মনে কর যে, আমার দৃষ্টি (কেবল) ক্বিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার নিকট খুশু (বিনয়) ও রুকূ কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন হইতেও তোমাদের দেখিতে পাই।

(আঃপ্রঃ ৪০১, ইঃফাঃ ৪০৭)

৪১৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি মিম্বারে উঠলেন এবং ইরশাদ করলেনঃ তোমাদের সালাতে ও রুকূতে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আমার পেছন হইতে দেখে থাকি, যেমন এখন তোমাদেরকে দেখিতে পাচ্ছি।

(আঃপ্রঃ ৪০২, ইঃফাঃ ৪০৮)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply