মসজিদ ও সালাতের স্থান
মসজিদ ও সালাতের স্থান >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ৭
- অধ্যায়ঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ
৬৯০. উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মুসলিম এ হাদিসটিকে উসামাহ্ ইবনি যায়দ হইতেও বর্ণনা করিয়াছেন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১৩৩০।এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
৬৯১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজে ও উসামাহ্ ইবনি যায়দ, উসমান ইবনি ত্বালহাহ্ আল হাজাবী ও বিলাল ইবনি রাবাহ্ [রাদি.] কাবায় প্রবেশ করিলেন। এরপর বিলাল অথবা উসমান [রাদি.] ভিতর থেকে [ভীড় হবার ভয়ে] দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারা কিছুক্ষণ ভিতরে রইলেন। ভিতর থেকে বের হয়ে এলে আমি বিলালকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবার ভিতরে কি করিলেন? উত্তরে বিলাল বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভিতরে প্রবেশ করে একটি স্তম্ভ বামে, দুটি ডানে, আর তিনটি পিছনে রেখে সলাত আদায় করিয়াছেন। সে সময় খানায়ে কাবা ছয়টি স্তম্ভ বা খিলানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল [এখন তিনটি স্তম্ভের উপর। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫০৫, মুসলিম ১৩২৯, আবু দাউদ ২০২৩, নাসায়ী ৭৪৯, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ৩২০৪। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬৯২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : মাসজিদে হারাম ছাড়া, আমার এই মাসজিদে সলাত আদায় করা অন্য জায়গায় এক হাজার রাকআত সলাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৯০, মুসলিম ১৩৯৪, নাসায়ী ২৮৯৯, তিরমিজি ৩২৫, ইবনি মাজাহ ১৪০৪, দারিমি ১৪৫৮, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৬২৫। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৩. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : তিন মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন মাসজিদে সফর করা যায় না : [১] মাসজিদে হারাম, [২] মাসজিদে আক্বসা ও [৩] আমার এই মাসজিদ [মাসজিদে নাবাবী]। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৯৭, মুসলিম ৮২৭, তিরমিজি ৩২৬, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৬১৭, ইরওয়া ৭৭৩, সহীহ আল জামি ৭৩৩২। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যখানে আছে জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্যকার একটি বাগান। আর আমার মিম্বার হচ্ছে আমার হাওজে কাওসারের উপর। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৯৬, মুসলিম ১৩৯১, মালিক ২১৪/৬৭১, তিরমিজি ৩৯১৬, আহমাদ ৭২২৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৭৫০, সহীহ আল জামি ৫৫৮৭। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, প্রতি শনিবার নবী [সাঃআঃ] পায়ে হেঁটে অথবা সওয়ারীতে আরোহণ করে মাসজিদে কুবায় গমন করিতেন। আর সেখানে দুই রাক্আত সলাত আদায় করিতেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৯৩, মুসলিম ১১৯৯, আহমাদ ৫৮৬০, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৬২৯; শব্দবিন্যাস মুসলিমের। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : আল্লাহর নিকট সকল জায়গা হইতে মাসজিদই হল সবচেয়ে প্রিয়, আর বাজার সবচেয়ে ঘৃণ্য স্থান। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৬৭১, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৬০০, সহীহ আল জামি ১৬৭। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৭. উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : যে ব্যাক্তি আল্লাহার উদ্দেশ্য একটি মাসজিদ নির্মাণ করিবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করিবেন । {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৫০, মুসলিম ৫৩৩, তিরমিজি ৩১৮, ইবনি মাজাহ ৭৩৬, দারিমি ১৪৩২, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ১২৯১। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : যে ব্যাক্তি সকাল-বিকাল মাসজিদে যাবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রত্যেক বারে যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারীর ব্যবস্হা করে রাখবেন । চাই সে সকালে যাক কী সন্ধ্যায় । {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৬৬২, মুসলিম ৬৬৯, আহমাদ ১০৬০৮, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ২০৩৭, সহীহ আল জামি ৬৩৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯৭০। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৬৯৯. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : সালাতে সব চেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে ঐ ব্যক্তি দূরত্বের দিক দিয়ে যার বাড়ী সব চেয়ে বেশী দূরে । আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামাআতে সালাত আদায় করার জন্য মাসজিদে গিয়ে অপেক্ষা করে, তার সাওয়াবও ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী হবে যে মাদজিদের নিকটে থাকে এবং তাড়াতাড়ি সালায় আদায় করেই ঘুমিয়ে থাকে । {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৬৫১, মুসলিম ৬২২, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ১৫০১। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন : মাসজিদে নাবাবীর পাশে কিছু জায়গা খালি হল। এতে বানূ সালিমাহ্ গোত্র মাসজিদের কাছে স্হানান্তরিত হয়ে আসতে চাইল । এ খবর নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট পোঁছল । তিনি বানূ সালিমাহ্ কে বললেন, খবর পেলাম, তোমরা নাকি জায়গা পরিবর্তন করে মাসজিদের কাছে আসতে চাইছ ? তারা বলিল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসুল! আমরা এ ইচ্ছা করেছি । তখন নবী [সাঃআঃ] বললেন : হে বানূ সালিমাহ্ ! তোমাদের জায়গাতেই তোমরা অবস্হান কর । তোমাদের আমালনামায় তোমাদের পায়ের চিহ্ন গুলো লেখা হয়– এ কথাটি নবী [সাঃআঃ] দুবার বললেন । {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৬৬৫, আহমাদ ১৪৫৬৬, সহীহ ইবনি হিব্বান ২০৪২, সহীহ আল জামি ৭৮৯৮। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন : সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তাআলা সেই দিন [ক্বিয়ামাতের দিন] তাহাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকিবে না : [১] ন্যায়পরায়ণ শাসক, [২] সেই যুবক যে যৌবন বয়স আল্লাহর ইবাদাতে কাটিয়েছে, [৩] যে ব্যাক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মাসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, [৪] সেই দুই ব্যাক্তি যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, [৫] সে ব্যাক্তি যে একাকী অবস্হায় আল্লাহর স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দুচোখ দিয়ে আশ্রু ঝরে, [৬] যে ব্যাক্তি যাকে কোন ঊচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, [৭] সেই ব্যাক্তি যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে । যার বাম হাতও বলিতে পারে না যে, তার ডান কী খরচ করেছে । {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৬৬০, মুসলিম ১০৩১, নাসায়ী ৫৩৮০, তিরমিজি ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনি হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর প্রিয় রসূল বলেছেন : ঘরে অথবা [ব্যস্ততার কারণে] কারো বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মাসজিদে জামাআতের সাথে সালাত আদয় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি । কারণ কোন ব্যাক্তি ভাল করে [সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে] উযূ করে নিঃস্বার্থভাবে সলাত আদায় করার জন্যই মাসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বদলা একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মাসজিদে পোঁছা পর্যন্ত [চলতে থাকে]। সলাত আদায় শেষ করে যখন সে মুসাল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ অনবরত এই দুআ করিতে থাকে : হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও । সে আল্লাহ! তুমি তার উপর রহমাত বর্ষন কর। আর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ সলাতের জন্য অপেক্ষা করিতে থাকে, সে সময়টা তার সলাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত হবে । আর এক বর্ণনার শব্দ হল, যখন কেউ মাসজিদে গেল। আর সলাতের জন্য অবস্হান করিল সেখানে, তাহলে সে যেন সলাতেই রইল। আর মালায়িকার দুআর শব্দাবলী আরো বেশী : Arbi “হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তাওবাহ্ কবুল কর ।” এভাবে চলতে থাকিবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে না যায় । {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৬৪৭। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০৩. আবু উসায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে প্রবেশ করিবে সে যেন এই দুআ পড়েঃ
اللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
হে আল্লাহ! তুমি আমার উপর তোমার রহমাতের দরজাগুলো খুলে দাও। যখন মাসজিদ হইতে বের হয়ে তখন বলবেঃ
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
“হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ফাযল বা অনুগ্রহ কামনা করি”। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৭১৩, আবু দাউদ ৪৬৫, নাসায়ী ৭২৯, আহমাদ ১৬০৫৭, দারিমি ২৭৩৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ২০৪৯। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০৪. আবু ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু রাক্আত সলাত আদায় করে নেয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৪৪, মুসলিম ৭১৪, নাসায়ী ৭৩০, তিরমিজি ৩১৬, ইবনি মাজাহ ১০১৩, আবু দাউদ ৪৬৭, আহমাদ ২২৫২৩, ইরওয়া ৪৬৭। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০৫. কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সফর হইতে দিনের সকালের দিক ছাড়া আগমন করিতেন না। আগমন করেই তিনি প্রথমে মাসজিদে প্রবেশ করিতেন। দু রাকআত সলাত আদায় করিতেন, তারপর সেখানে বসতেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩০৮৮, মুসলিম ৭১৬, আবু দাউদ ২৭৭৩, আহমাদ ১৫৭৭৫, নাসায়ী ৭৩১। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুনে অথবা দেখে মাসজিদে এসে কেউ তার হারানো জিনিস খুঁজছে, সে যেন তার উত্তরে বলে, আল্লাহ করুন তোমার হারানো জিনিস তুমি না পাও। কারণ হারানো জিনিস খুঁজবার জন্য এ ঘর তৈরি করা হয়নি। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫৬৮, আবু দাউদ ৪৭৩, ইবনি মাজাহ ৭৬৭, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ১৬৫১, সহীহ আল জামি ৬৩০২। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছের [পেঁয়াজ বা রসূনের] কিছু খাবে সে যেন আমাদের মাসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ মালায়িকাহ কষ্ট পান যেসব জিনিসে মানুষ কষ্ট পায়।{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৮৫৪, মুসলিম ৫৬৪, ইবনি মাজাহ ৩৩৬৫, ইবনি হিব্বান ২০৮৬, আহমাদ ১৫০১৪, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ১৬৬৮; শব্দবিন্যাস মুসলিমের। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মাসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ। [যদি কেউ ফেলে] তার ক্ষতিপূরণ হল ঐ থুথু মাটিতে পুঁতে ফেলা। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪১৫, মুসলিম ৫৫২, আবু দাউদ ৪৭৫, তিরমিজি ৫৭২, আহমাদ ১৩৯০৬, দারিমি ১৪৩৫, সহীহ আল জামি ২৮৮৬। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭০৯. আবু যার গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের ভালমন্দ সকল আমাল আমার কাছে উপস্থিত করা হলো। তখন আমি তাদের ভাল কাজগুলোর মধ্যে দেখিতে পেলাম-রাস্তা হইতে কষ্টদায়ক জিনিস ফেলে দেয়া। আর মন্দ কাজগুলোর মধ্যে দেখিতে পেলাম, কফ পুঁতে না ফেলে মাসজিদে ফেলে রাখা। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫৫৩, আহমাদ ২১৫৪৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৬৪১। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭১০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কারণ যতক্ষণ সে তার জায়নামাযে থাকে ততক্ষণ আল্লাহর সাথে একান্ত আলাপে রত থাকে। সে তার ডান দিকেও ফেলবে না, কারণ সেদিকে মালাক আছে। [নিবারণ করিতে না পারলে] সে যেন থুথু ফেলে তার বাম দিকে অথবা তার পায়ের নীচে, তারপর মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪১৬, মুসলিম ৫৪৮, আহমাদ ৮২৩৪, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৮৩, সহীহাহ্ ৩৯৭৪। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭১১. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এর বর্ণনায় আছেঃ তার বাম পায়ের নীচে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪০৯, মুসলিম ৫৪৮।সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭১২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার মৃত্যুশয্যায় বলেছেনঃ আল্লাহর অভিশাপ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রতি। তারা তাদের নবীদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিনত করেছে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৩৯০, মুসলিম ৫২৯, আহমাদ ২৪৫১৩। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭১৩. জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। সাবধান! তোমরা ক্ববরসমূহকে মাসজিদে পরিণত কর না। আমি তোমাদেরকে একাজ হইতে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫৩২, ইরওয়া ২৮৬, সহীহ আল জামি ২৪৪৫। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭১৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরেও কিছু কিছু সলাত আদায় করিবে এবং ঘরকে ক্ববরে পরিণত করিবে না। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৩২, মুসলিম ৭৭৭, আবু দাউদ ১০৪৩, নাসায়ী ১৫৯৮, তিরমিজি ৪৫১, সহীহ আল জামি ১৫৪। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৭১৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝখানেই ক্বিবলাহ্।{১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ৩৪২, ইরওয়া ২৯২। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭১৬. ত্বলক্ব ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা আমাদের গোত্রের প্রতিনিধি হিসেবে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এলাম। তাহাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করলাম। তাহাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম। এরপর আমরা তাহাঁর কাছে আবেদন করলাম, আমাদের এলাকায় আমাদের একটি গির্জা আছে। এটাকে আমরা এখন কী করব? আমরা তাহাঁর নিকট তাহাঁর উযূ করা কিছু পানি তাবাররুক হিসেবে চাইলাম। তিনি পানি আনালেন, উযূ করিলেন, কুলি করিলেন এবং তা আমাদের জন্য একটি পাত্রে ঢাললেন। আমাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তোমরা রওনা হয়ে যাও। তোমরা যখন তোমাদের এলাকায় পৌঁছবে, তোমাদের গির্জাটিকে ভেঙ্গে ফেলবে। গির্জার জায়গায় পানি ছিটিয়ে দিবে। এরপর একে মাসজিদ বানিয়ে নিবে। আমরা আবেদন করলাম, আমাদের এলাকা অনেক দূরে। ভীষণ খরা। পানি তো শুকিয়ে যাবে। রাসূল [সাঃআঃ] বললেন, আরও পানি মিশিয়ে এ পানি বাড়িয়ে নিবে। এ পানি তার পবিত্রতা ও বারাকাত বৃদ্ধি হওয়া ছাড়া কমাবে না। {১}
{১} হাসান : নাসায়ী ৭০১, আয্ যামারুল মুযতাত্বব ১/৪৯৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৭১৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মহল্লায় মাসজিদ গড়ে তোলার, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ও এতে সুগন্ধি ছড়াবার হুকুম দিয়েছেন। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৫৫, তিরমিজি ৫৯৪, ইবনি মাজাহ ৭৫৮, সহীহ আত তারগীব ২৭৯। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭১৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাকে মাসজিদ বানিয়ে তা চাকচিক্যময় করে রাখার হুকুম দেয়া হয়নি। ইবনি আব্বাস বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় যেভাবে ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানরা তাদের ইবাদাতখানাকে [স্বর্ণ-রূপা দিয়ে] চাকচিক্যময় করে রাখত তোমরাও একইভাবে তোমাদের মাসজিদ-এর শ্রীবৃদ্ধি ও সৌন্দর্য বর্ধন করিবে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৪৮। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭১৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের আলামতসমূহের একটি হচ্ছে মানুষেরা মাসজিদ নিয়ে পরস্পর গর্ব করিবে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৪৯, নাসায়ী ৬৮৯, দারিমী ১৪০৮, ইবনি মাজাহ ৭৩৯, সহীহ আল জামি ৫৮৯৫। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭২০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার সামনে আমার উম্মাতের সাওয়াবগুলো পেশ করা হয়, এমনকি খড়-কুটার সাওয়াবও পেশ করা হয় যা একজন মানুষ মাসজিদ হইতে বাইরে ফেলে দেয়। ঠিক একইভাবে আমার সামনে পেশ করা হয় আমার উম্মাতের গুনাহসমূহ। তখন আমি কারও কুরআনের একটি সূরাহ্ বা একটি আয়াত যা তাকে দেয়া হয়েছে [তারপর ভুলে গেছে, মুখস্ত করার পর তা ভুলে যাওয়া] এর চেয়ে আর কোন বড় গুনাহ আমি দেখিনি। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৪৬১, তিরমিজি ২৯১৬, জইফ আত তারগীব ১৮৪। কারণ হাদিসের সানাদে দু স্থানে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭২১. বুরায়দাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও তাদেরকে যারা অন্ধকারে মাসজিদে যায়। {১}
{১} সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিজি ২২৩, আবু দাউদ ৫৬১, সহীহ আত তারগীব ৩১৫। যদিও ঈমাম তিরমিজি হাদিসটির সানাদকে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু দশেরও অধিক সাহাবী থেকে বর্ণিত এর অনেক শাহিদমূলক বর্ণনা থাকায় তা সহীহ-এর স্তরে উন্নীত হয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৭২২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি মাজাহ-সাহ্ল ইবনি সাদ ও আনাস [রাদি.] হইতে। {১}
{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৭৮০, ৭৮১। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭২৩. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কাউকে তোমরা যখন নিয়মিত মাসজিদে যাতায়াত করিতে দেখবে তখন তার ঈমান আছে বলে সাক্ষ্য দেবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “আল্লাহর ঘর মাসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ করে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে”- [সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯:১৮]। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২৬১৭, ইবনি মাজাহ ৮০২, জইফ আত তারগীব ২০৩, দারিমী ১২৫৯। কারণ এর সানাদে দাররাজ আবুস্ সামহ রয়েছে যে অনেক মুনকার হাদিস বর্ণনা করেছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭২৪. উসমান ইবনি মায্ঊন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে খাসি হয়ে যাবার অনুমতি দিন। নবী [সাঃআঃ] উত্তরে বললেন, সেই লোক আমাদের মধ্যে নেই, যে কাউকে খাসি করে অথবা নিজে খাসি হয়। বরং আমার উম্মাতের খাসি হওয়া হল সিয়াম পালন করা। উসমান [রাদি.] আবেদন করিলেন, তাহলে আমাকে ভ্রমণ করার অনুমতি দিন। নবী [সাঃআঃ] উত্তরে বললেন, আমার উম্মাতের ভ্রমন হল আল্লাহর পথে জিহাদে যাওয়া। তারপর উসমান [রাদি.] বললেন, তাহলে আমাকে বৈরাগ্য অবলম্বন করার অনুমতি দিন। নবী [সাঃআঃ] বললেন, আমার উম্মাতের বৈরাগ্য হচ্ছে সলাতের অপেক্ষায় মাসজিদে বসে থাকা। {১}
{১} জইফ : ইবনুল মুবারক-এর আয্ যুহদ ৮৪৫। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ আমি পাইনি। কিন্তু মুল্লা আলী ক্বারী [রাহিমাহুল্লাহ] মিরক থেকে বর্ণনা করেন যে, এর সানাদে ত্রুটি রয়েছে। তবে اِئْذَنْ لَّنَا فِى السِّيَاحَةِ অংশটুকুর শাহিদ রয়েছে। আবু দাউদ হাদিসটি হাসান সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭২৫. আবদুর রহমান ইবনি আয়িশ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি আমার রবকে অতি উত্তম অবস্থায় স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, মালা-উল আলা- তথা শীর্ষস্থানীয় মালায়িকাহ্ কী ব্যাপারে ঝগড়া করছে? আমি বললাম, তা তো আপনিই ভাল জানেন। তখন আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর হাত আমার দুই কাধের মাঝখানে রাখলেন। হাতের শীতলতা আমি আমার বুকের মধ্যে অনুভব করলাম। আমি তখন আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই জানতে পারলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ
وَكَذلِكَ نُرِىْ اِبْرَاهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّموتِ وَالاَرْضِ وَلِيَكُوْنَ مِنَ الْمُوْقِنِيْنَ
“এভাবে আমি ইব্রহীমকে দেখালাম আকাশমন্ডলী ও জমিনের রাজ্যসমূহ যাতে সে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়”- [সূরাহ্ আল আন্আম ৭৫]। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ৩২৩৫, দারিমী ২১৪৯। ঈমাম তিরমিজি হাদিসটির হুকুম সম্পর্কে বলেনঃ হাসান। তিনি আরো বলেনঃ আমি ঈমাম বোখারীকে এ হাদিস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন হাসান সহীহ। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭২৬. আবদুর রহমান ইবনি আয়িশ, ইবন আব্বাস ও মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিরমিজিতে এ হাদিসটি কিছু শব্দগত পার্থক্যসহ আবদুর রহমান ইবনি আয়িশ, ইবন আব্বাস ও মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে। আর এতে আরো আছেঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন [অর্থাৎ নবীকে আসমান ও জমিনের জ্ঞান দেয়ার পর জিজ্ঞেস করিলেন], হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন “মালা-উল আলা-” কী বিষয়ে তর্ক করছে? আমি বললাম, হ্যাঁ! জানি, কাফফারাহ্ নিয়ে তর্কবিতর্ক করছে। আর এই কাফ্ফারাহ্ হল, সলাতের পর মাসজিদে আর এক সলাতের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা বা যিক্র আযকার করার জন্য বসে থাকা। জামাআতে সলাত আদায় করার জন্য পায়ে হেঁটে চলে যাওয়া। কঠিন সময়ে [যেমন অসুস্থ বা শীতের মৌসুমে] উযুর স্থানে ভাল করে পানি পৌঁছানো। যারা এভাবে উল্লিখিত আমালগুলো করিল কল্যাণের উপর বেঁচে থাকিবে, কল্যাণের উপর মৃত্যুবরণ করিবে। আর তার গুনাহসমূহ হইতে এমনভাবে পাক-পবিত্র হয়ে যাবে যেমন আজই তার মা তাকে প্রসব করেছে। আর আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! সলাত আদায় শেষ করার পর এ দুআটি পড়ে নিবেঃ
اَللّهُمَّ اِنِّى اَسْاَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ وَحُبَّ الْمَسَاكِيْنِ فَاِذَا اَرَدْتَّ بِعِبَادِكَ فتِْنَةً فَاقْبِضْنِىْ اِلَيْكَ غَيْرَ مَفْتُوْنٍ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ফিলাল খয়রা-তি ওয়াতার্কাল মুন্কারা-তি ওয়া হুব্বাল মাসা-কীনা ফায়িযা- আরাত্তা বিইবা-দিকা ফিত্নাতান্ ফাক্ববিয্নী ইলায়কা গয়রা মাফতূন”- [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে নেক কাজ করার, বদ কাজ ছাড়ার, গরীব-মিসক্বীনদের বন্ধুত্বের আবেদন করছি। যখন তুমি বান্দাদের মধ্যে পথভ্রষ্ঠতা ফিত্নাহ্-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার ইচ্ছা করিবে তখন আমাকে ফিত্নামুক্ত রেখে তোমার কাছে উঠিয়ে নিবে।] নবী [সাঃআঃ] আরও বললেন, দারাজাত হল সালামের প্রসার করা, গরীবকে খাবার দেয়া, রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সলাত আদায় করা। {১}
মিশকাতের সংকলক বলেন, যে হাদিস আবদুর রহমান হইতে মাসাবীহ-তে বর্ণিত হয়েছে তা আমি শারহে সুন্নাহ ছাড়া আর কোন কিতাবে দেখিনি। {১} সহীহ : তিরমিজি ৩২৩৩।সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭২৭. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। [১] যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হয়েছে সে আল্লাহর জিম্মাদারিতে রয়েছে, যে পর্যন্ত আল্লাহ তাকে উঠিয়ে না নেন এবং জান্নাতে প্রবেশ না করান। অথবা তাকে ফিরিয়ে আনেন, যে সাওয়াব বা যে গনীমাতের মাল সে যুদ্ধে লাভ করেছে তার সাথে। [২] যে ব্যক্তি মাসজিদে গমন করেছে সে আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে এবং [৩] যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করেছে, সে আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ২৪৯৪, সহীহ আত তারগীব ৩২১। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭২৮. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘর হইতে উযূ করে ফার্য সলাত আদায় করার জন্য বের হয়েছে তার সাওয়াব একজন ইহরাম বাঁধা হাজির সাওয়াবের সমান। আর যে ব্যক্তি সলাতুয্ যুহার জন্য বের হয়েছে আর এই সলাত ব্যতীত অন্য কোন জিনিস তাকে এদিকে ধাবিত করে না সে সাওয়াব পাবে একজন উমরাহকারীর সমান। এক সলাতের পর অন্য সলাত আদায় করা, যার মাঝখানে কোন বেহুদা কথা বলেনি তা “ইল্লীয়ীন“-এ লেখা হয়ে থাকে। {১}
{১} হাসান : আবু দাউদ ৫৫৮, সহীহ আত তারগীব ৩২০, আহমাদ ২২৩০৪, ২২৩৭৩।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৭২৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যখন জান্নাতের বাগানের কাছ দিয়ে যাবে, এর ফল খাবে। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের বাগান কী? উত্তরে তিনি বললেনঃ মাসজিদ। আবার জিজ্ঞেস করা হল এর ফল খাওয়া কী? তিনি [সাঃআঃ] বললেন,
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ وَلَا إِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ
“সুব্হা-নাল্ল-হি ওয়াল হাম্দু লিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার” – এ বাক্য বলা। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ৩৫০৯, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১১৫০। কারণ এর সানাদে হুমায়দ আল মাক্কি রয়েছে যিনি ইবনি আল কামার-এর আযাদকৃত দাস তার সম্পর্কে ঈমাম বোখারী ও ইবনি আদী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ সে আত্বা [রাহিমাহুল্লাহ] থেকে তিনটি হাদিস বর্ণনা করেছে যেগুলোর কোন মুতাবিআ নেই। হাফিয ইবনি হাজার তাক্বরীবে তাকে মাজহূল বা অপরিচিত বলেছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭৩০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মাসজিদে যে কাজের নিয়্যাত করে আসবে, সে সেই কাজেরই অংশ পাবে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৭২, সহীহ আল জামি ৫৯৩৬। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৩১. ফাত্বিমাহ্ বিনতু হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি তার দাদী ফাত্বিমাতুল কুবরা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ফাত্বিমাতুল কুবরা [রাদি.] বলেছেন, [আমার পিতা] রাসূল [সাঃআঃ] যখন মাসজিদে প্রবেশ করিতেন, মুহাম্মাদের [অর্থাৎ নিজের] উপর সালাম ও দরূদ পাঠ করিতেন। বলিতেন,
رَبِّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
“রব্বিগ্ফির্ লী যুনূবী ওয়াফ্তাহ লী আব্ওয়াবা রহমাতিকা” [অর্থাৎ- হে পরওয়ারদিগার! আমার গুনাহসমূহ মাফ কর। তোমার রহমাতের দুয়ার আমার জন্য খুলে দাও।]। তিনি যখন মাসজিদ হইতে বের হইতেন, তখন মুহাম্মাদের উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করিতেন। আর বলিতেন,
رَبِّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ فَضْلِكَ
“রব্বিগ্ফির্ লী যুনূবী ওয়াফ্তাহ লী আব্ওয়াবা ফাযলিকা” [অর্থাৎ- হে পরওয়ারদিগার! আমার গুনাহসমূহ মাফ করে দাও। আমার জন্য দয়ার দুয়ার খুলে দাও।]। {১}
কিন্তু আহমাদ ও ইবনি মাজার বর্ণনায় রয়েছে, ফাত্বিমাতুল কুবরা [রাদি.] বলেছেন, নবী [সাঃআঃ] যখন মাসজিদে প্রবেশ করিতেন এবং এভাবে মাসজিদ থেকে বের হইতেন, তখন মুহাম্মাদের উপর দরূদের পরিবর্তে বলিতেনঃ আল্লাহর নামে এবং শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহ তাআলার রাসূলের উপর। {2] তিরমিজি বলেন, হাদিসটির সানাদ মুত্তাসিল নয়। কেননা নাতনী ফাত্বিমাহ্ তার দাদী ফাত্বিমাহ [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ পাননি।
{১} সহীহ : তিরমিজি ৩১৪, আস্ সামারুল মুসতাত্বাব ২/৬০৭। যদিও হাদিসের সানাদে লায়স ইবনি সুলায়ম নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে কিন্তু এর অনেকগুলো শাহিদমূলক রিওয়ায়াত থাকায় তা সহীহর স্তরে পৌঁছেছে। {2] সহীহ : ইবনি মাজাহ ৭৭১। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৩২. আমর ইবনি শুআয়ব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তার পিতা তার দাদা হইতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে কবিতা আবৃত্তি করিতে, ক্রয়-বিক্রয় করিতে এবং জুমুআর দিন জুমুআর সলাতের পূর্বে গোল হয়ে বৃত্তাকারে বসতে নিষেধ করিয়াছেন। {১}
{১} হাসান : আবু দাউদ ১০৭৯, তিরমিজি ৩২২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৭৩৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কাউকে মাসজিদে বেচা-কেনা করিতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তোমার এ ব্যবসায়ে তোমাকে লাভবান না করুন। এভাবে কাউকে মাসজিদে হারানো জিনিস অনুসন্ধান করিতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তা তোমাকে ফেরত না দিন। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ১৩২১, ইরওয়া ১২৯৫, দারিমী ১৪৪১। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৩৪. হাকিম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করিতে ও তথায় কবিতা পাঠ ও হাদ্দ-এর শাস্তি কার্যকর করিতে নিষেধ করিয়াছেন। {১}
{১} হাসান : আবু দাউদ ৪৪৯০। আবু দাউদ তাহাঁর সুনান-এ, সাহিবু জামিউল উসূল তাহাঁর কিতাবে হাকিম থেকে। যদিও এর সানাদে যুফার ইবনি ওযিমাহ্ এবং হাকিম-এর মাঝে সাক্ষাৎ না ঘটায় বিচ্ছিন্নতা রয়েছে তবে হাদিসের প্রতিটি অংশের শাহিদ থাকায় তা হাসানের স্তরে পৌঁছেছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৭৩৫. সাহাবী জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আর মাসাবীহ-তে সহাবী জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
৭৩৬. মুআবিয়াহ্ ইবনি কুররাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটি গাছ অর্থাৎ পিঁয়াজ ও রসূন খেতে নিষেধ করেছে। যে তা খাবে সে যেন আমাদের মাসজিদের কাছে না আসে। তিনি আরো বলেছেন, যদি তোমাদের একান্তই খেতে হয় তবে পাকিয়ে দুর্গন্ধ দূর করে খাও। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩৮২৭, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩১০৬।সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৩৭. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্ববরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া দুনিয়ার আর সব জায়গায়ই মাসজিদ। কাজেই সব জায়গায়ই সলাত আদায় করা যায়। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৯২, তিরমিজি ৩১৭, আহকামুল জানায়িয ৮৭ পৃঃ, দারিমী ১৪৩০। ঈমাম তিরমিজির হাদিসটিকে মুরসাল বলা প্রত্যাখ্যাত। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৩৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাতটি জায়গায় সলাত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। [১]আবর্জনা ফেলার জায়গায়, [২]জানোয়ার যবাহ করার জায়গায় [কসাইখানায়], [৩]ক্ববরস্থানে, [৪]রাস্তার মাঝখানে, [৫]গোসলখানায়, [৬]উট বাঁধার জায়গায় এবং [৭]খানায়ে কাবার ছাদে। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ৩৪৬, ইবনি মাজাহ ৭৪৬। কারণ আত তিরমিজির সানাদে যায়দ ইবনুয্ যুবায়র নামে একজন খুবই দুর্বল রাবী রয়েছে। আর ইবনি মাজাহ্র সানাদে আবু সালিহ নামে দুর্বল রাবী রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭৩৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা ছাগল বাঁধার স্থানে সলাত আদায় করিতে পার, উট বাঁধার স্থানে সলাত আদায় করিবে না। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ৩৪৮, সহীহুল জামি ৩৭৮৭, ইরওয়া ৭৭। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৪০. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অভিসম্পাত করিয়াছেন ঐ সকল স্ত্রী লোককে যারা [ঘন ঘন] ক্ববর যিয়ারত করিতে যায় এবং ঐ সকল লোককেও অভিশাপ দিয়েছেন যারা কবরের উপর মাসজিদ নির্মাণ করে বা তাতে বাতি জ্বালায়। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৩২৩৬, তিরমিজি ৩২০, নাসায়ী ২০৪৩, জইফ আত তারগীব ২০৭৫, তামামুল মিন্নাহ ২৯৮। তবে প্রথম দুটি অংশ সহীহ। ঈমাম তিরমিজি হাদিসটি হাসান বলেছেন তবে তার এ মন্তব্যে বিতর্ক রয়েছে তবে এর দ্বারা যদি তিনি হাসান লিগয়রিহী উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন তাহলে তা প্রথম দু অনুচ্ছেদের দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু وَالسُّرُجُ শব্দের উল্লেখ এ হাদিস ছাড়া অন্য কোথাও নেই। এ কারণে এ অংশটুকু মুনকার। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭৪১. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের একজন আলিম রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করিলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম ? নবী [সাঃআঃ] নীরব রইলেন। তিনি বললেন, যতক্ষণ জিবরীল আমীন না আসবেন আমি নীরব থাকবো। তিনি নীরব থাকলেন। এর মধ্যে জিবরীল [আলাইহিস সালাম] আসলেন। তখন নবী [সাঃআঃ] জিবরীলকে ঐ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করিলেন। জিবরীল [আলাইহিস সালাম] উত্তর দিলেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি কিছু জানে না। তবে আমি আমার রবকে জিজ্ঞেস করব। এরপর জিবরীল [আলাইহিস সালাম] বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আল্লাহর এত নিকটে গিয়েছিলাম যা কোন দিন আর যাইনি। নবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, কিভাবে হে জিবরীল? তিনি বললেন, তখন আমার আর তাহাঁর মধ্যে মাত্র সত্তর হাজার নূরের পর্দা ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান হল বাজার, আর সবচেয়ে উত্তম স্থান হল মাসজিদ। ইবনি হিব্বান; তাহাঁর সহীহ গ্রন্থে ইবনি উমার থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। {১}
{১} সহীহ : তারগীব ১/১৩১, হাকিম ১/৭, ৮, আহমাদ ৪/৮১। যদিও এর সানাদে আত্বা ইবনি সায়িব নামে মুখতালাত রাবী রয়েছে কিন্তু এর শাহিদ বর্ণনা থাকায় তার সে ত্রুটি বিলুপ্ত হয়েছে। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৭৪২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ যে আমার এই মাসজিদে আসে এবং শুধু ভাল কাজের উদ্দেশ্যেই আসে, হয় সে ইল্ম শিক্ষা দেয় অথবা নিজে শিখে, সে আল্লাহর পথে জিহাদের অংশগ্রহণকারীর সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে আসে সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে অন্যের জিনিসকে হিংসার চোখে দেখে [কিন্তু ভোগ করিতে পারে না]। {১}
{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ২২৭, সহীহ আত তারগীব ৮৭, বায়হাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৫৭৫। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৪৩. হাসান বসরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ মাসজিদে বসে নিজেদের দুনিয়াদারীর কথাবার্তা বলবে। অতএব তোমরা এসব লোকেদের গল্প- গুজবে বসবে না। আল্লাহ তাআলার এমন লোকের প্রয়োজন নেই। {১}
{১} বায়হাক্বী-এর শুআবুল ঈমান ২৯৬২, হাকিম ৭৯১৬, সহীহাহ্ ১১৬৩। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ বায়হাক্বী হাদিসটি মাওযুল সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আর ত্ববারানী আল মুজাম আল কাবীরে এবং আবু ইসহাক আল-ফাওয়ায়িদুল মুনতাখাবা হইতে ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.]-এর বরাতে মারফূ সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন যার সানাদে বাযী আবুল খলীল নামে একজন রাবী রয়েছে যাকে হায়সামী মিথ্যুক বলেছেন। কিন্তু হাফিয ইরাক্বী বলেনঃ হাদিসটি ইবনি হিব্বান ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] থেকে এবং হাকিম আনাস [রাদি.] থেকে বর্ণনা করে তার সানাদটি সহীহ হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। আর ইবনি হিব্বান দ্বারা সহীহ ইবনি হিব্বান উদ্দেশ্য। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় তার হাদিসটি বাযী-এর সূত্রে নয়। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ কিন্তু আনাস [রাদি.]-এর হাদিসটি আমি এখন পর্যন্ত হাকিমে পাইনি। যেটি আবু আবদুল্লাহ [রাদি.] আল ফাল্লাকী তার ফাওয়ায়িদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য
৭৪৪. সায়িব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি মাসজিদে শুয়ে আছি, এমন সময় আমাকে একজন লোক কংকর মারল। আমি জেগে উঠে দেখি তিনি উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.]। তিনি আমাকে বললেন, যাও- ঐ দু ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে আস। আমি তাদেরকে নিয়ে আসলাম। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা কোন গোত্রের বা কোথাকার লোক? তারা বলিল, আমরা তায়িফের লোক। উমার [রাদি.] বললেন, যদি তোমরা মাদীনার লোক হইতে তাহলে আমি তোমাদেরকে নিশ্চয় কঠিন শাস্তি দিতাম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মাসজিদে তোমরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছ। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৭০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০২৬৫। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৪৫. ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমার [রাদি.] মাসজিদে নাবাবীর পাশে একটি বড় চত্বর বানিয়েছিলেন, এর নাম রাখা হয়েছিল বুত্বায়হা। তিনি লোকদেরকে বলে রেখেছিলেন, যে ব্যক্তি বাজে কথা বলবে অথবা কবিতা আবৃত্তি করিবে অথবা উঁচু কন্ঠে কথা বলিতে চায় সে যেন সেই চত্বরে চলে যায়। {১}
{১} মালিক ৪২২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
৭৪৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] ক্বিবলার দিকে থুথু পতিত হইতে দেখলেন। এতে তিনি ভীষণ রাগ করিলেন। তার চেহারায় এ রাগ প্রকাশ পেল। তিনি উঠে গিয়ে নিজের হাতে তা খুঁচিয়ে তুলে ফেলে দিলেন। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ যখন সলাতে দঁড়ায় তার রবের সাথে একান্ত আলাপে রত থাকে। আর তখন তার রব থাকেন তার ও ক্বিবলার মাঝে। অতএব কেউ যেন তার ক্বিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নিচে ফেলে। এরপর নবী [সাঃআঃ] নিজের চাদরের এক পাশ ধরলেন, এতে থুথু ফেললেন, তারপর চাদরের একাংশকে অপরাংশ দ্বারা মলে দিলেন এবং বললেনঃ সে যেন এভাবে থুথু নিঃশেষ করে দেয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪০৫, সহীহ আল জামি ১৫৩৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ২২৬৭। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৪৭. সায়িব ইবনি খল্লাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এর সহাবীগনের মধ্যে একজন বলেন, এক লোক কিছু লোকের ইমামাত করছিল। সে ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা দেখলেন এবং ঐ লোকগুলোকে বললেন, এ ব্যক্তি যেন আর তোমাদের সলাত আদায় না করায়। পরে এই লোক তাদের সলাত আদায় করাতে চাইলে লোকেরা তাকে সলাত আদায় করিতে নিষেধ করিল এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নির্দেশ তাকে জানিয়ে দিল। সে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জানালে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, হ্যাঁ [ঘটনা ঠিক]। রাবী [বর্ণনাকারী] বলেন, আমার মনে হয় নবী [সাঃআঃ] তাকে এ কথাও বলেছেন, তুমি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছ। {১}
{১} সহীহ লিগয়রিহী : বোখারী ৪৮১, সহীহ আত তারগীব ২৮৮। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৭৪৮. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [নিত্য দিনের অভ্যাসের বিপরীত] ফাজ্রের সলাতে আসতে এতটা দেরী করিলেন যে, সূর্য প্রায় উঠে উঠে। এর মধ্যে তাড়াহুড়া করে তিনি আসলেন। সাথে সাথে সলাতের ইক্বামাত দেয়া হল। নবী [সাঃআঃ] সংক্ষিপ্ত করে সলাত আদায় করিলেন। সালাম দেয়ার পর তিনি উচ্চ কণ্ঠে আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা সলাতের কাতারে যে যেভাবে আছ সেভাবে থাক। এরপর তিনি আমাদের দিকে ফিরলেন ও বললেন, শুন! আজ ভোরে তোমাদের কাছে আসতে যে কারণ আমার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা হল, আমি রাতে ঘুম থেকে উঠলাম। উযূ করলাম। পরে আমার পক্ষে যা সম্ভব হল সলাত আদায় করলাম। সলাতে আমার তন্দ্রা ধরল, ঘুমে অসাড় হয়ে পড়লাম। এ সময় দেখি, আমি আমার প্রতিপালক তাবারাকা ওয়া তাআলার কাছে উপস্থিত। তিনি খুবই উত্তম অবস্থায় আছেন। তিনি আমাকে ডাকলেন, হে মুহাম্মদ! আমি উত্তর দিলাম, হে আমার রব, আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, “মালা-উল আলা-” অর্থাৎ শীর্ষস্থানীয় মালায়িকাহ্ কী নিয়ে বিতর্ক করছে? আমি উত্তরে বললাম, আমি তো কিছু জানি না, হে আমার রব! এভাবে তিনি আমাকে তিনবার জিজ্ঞেস করিলেন। তারপর দেখি, তিনি আমার দুকাঁধের মাঝখানে তাহাঁর হাত রেখে দিয়েছেন। এতে আমি আমার সিনায় তাহাঁর আঙ্গুলের শীতলতা অনুভব করিতে লাগলাম। আমার নিকট তখন সব জিনিস প্রকাশ হয়ে পড়ল। আমি সকল ব্যাপার বুঝে গেলাম। তারপর তিনি আবার আমাকে ডাকলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে পরওয়ারদিগার। এখন বল দেখি “মালা-উল আলা-” কী নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছে? আমি বললাম, গুনাহ মিটিয়ে দেবার ব্যাপারসমূহ নিয়ে। আল্লাহ তাআলা বললেন, সে সব জিনিস কী? আমি বললাম, সলাতের জন্য মাসজিদে যাওয়া, সলাতের পরে দুআ ইত্যাদির জন্য মাসজিদে বসা এবং শীতের বা অন্য কারণে উযূ করা কষ্টকর হলেও তা উপেক্ষা করে উযূ করা। আবার আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করিলেন, আর কী ব্যাপারে তারা বিতর্ক করছে? আমি বললাম, দারাজাত অর্থাৎ মর্যাদার ব্যাপারে। তিনি বললেন, সে সব কী? আমি বললাম, গরীব-মিসকীনদের খাবার দেয়া, ভদ্রভাবে কথা বলা, রাতে মানুষ যখন ঘুমায় সে সময় উঠে [তাহাজ্জুদের] সলাত আদায় করা। তারপর আবার আল্লাহ তাআলা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তোমার যা চাওয়ার তা নিবেদন কর। তাই আমি দুআ করলামঃ Arbi “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে নেক কাজ করার, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার, মিসকীনের বন্ধুত্ব, তোমার ক্ষমা ও রহমাত চাই। আর যখন তুমি কোন জাতির মধ্যে গুমরাহী ছড়াতে চাও, তার আগে আমাকে গুমরাহী ছাড়া উঠিয়ে নিও। আমি তোমার কাছে তোমার ভালোবাসা আর ঐ ব্যক্তির ভালোবাসা চাই, যে তোমাকে ভালোবাসে, আর আমি এমন আমালকে ভালবাসতে চাই যে আমাল আমাকে তোমার ভালোবাসার নিকটবর্তী করিবে”। তারপর নবী [সাঃআঃ] বললেন, এ স্বপ্ন ষোলআনা সত্য। তাই তোমরা এ কথা স্মরণ রাখবে, আর লোকদেরকে শিখাবে। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ৩২৩৫, আহমাদ ২২১০৯। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৪৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে প্রবেশ করার সময় বলিতেন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মহান আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ চেহারার ও তাহাঁর অফুরন্ত ক্ষমতায় বিতাড়িত শয়তান হইতে। নবী [সাঃআঃ] বললেন, কেউ এ দুআ পাঠ করলে শয়তান বলে, আমার নিকট হইতে সে সারা দিনের জন্য রক্ষা পেয়ে গেল। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৬৬, সহীহ আত তারগীব ১৬০৬। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৫০. আত্বা ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ দুআ করলেনঃ
اللّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِىْ وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
“হে আল্লাহ! তুমি আমার ক্ববরকে ভূঁত বানিও না যা লোকেরা পূজা করিবে। আল্লাহ্র কঠিন রোষাণলে পতিত হবে সেই জাতি যারা তাদের নবীর ক্ববরকে মাসজিদে পরিণত করেছে।” ঈমাম মালিক মুরসাল হিসেবে। {১}
{১} মাওসূল সূত্রে সহীহ : মালিক ৪১৪। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৫১. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হিত্বান-এ সলাত আদায় করিতে ভালোবাসতেন। বর্ণনাকারীদের কেউ কেউ বলেছেন, হিত্বান অর্থ বাগান। {৭৬৫] ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, হাদিসটি গরীব। তিনি আরো বলেছেন, আমরা এ হাদিসটি হাসান ইবনি আবু জাফর ছাড়া অন্য কারো নিকট হইতে অবগত নই। আর হাসানকে ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাদ প্রমুখ যইফ বলেছেন।{১}
{১} জইফ : তিরমিজি ৩৩৪, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৪২৭০। কারণ এর সানাদে আল হাসান ইবনি আবি কাফার নামে একজন রাবী রয়েছে যাকে ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ ও অন্যান্যরা জইফ বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭৫২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ যদি তার ঘরে সলাত আদায় করে, তাহলে তার এ সলাত এক সলাতের সমান। আর যদি সে এলাকার পাঞ্জেগানা মাসজিদে সলাত আদায় করে তাহলে তার এই সলাত পঁচিশ সলাতের সমান। আর যদি জুমুআহ মাসজিদে সলাত আদায় করে তাহলে তার সলাত পাঁচশত সলাতের সমান। সে যদি মাসজিদে আক্বসা অর্থাৎ বায়তুল মাকদিসে সলাত আদায় করে, তার এ সলাত পঞ্চাশ হাজার সলাতের সমান। আর যদি আমার মাসজিদে [মাসজিদে নাবাবী] সলাত আদায় করে তার এ সলাত পঞ্চাশ হাজার সলাতের সমান। আর সে যদি মাসজিদুল হারামে সলাত আদায় করে তবে তার সলাত এক লাখ সলাতের সমান। {১}
{১} খুবই জইফ : ইবনি মাজাহ ১৪১৩, জইফ আল জামি ৭৫৬। কারণ এর সানাদে বাযীক্ব আবু আবদুল্লাহ [রাদি.] আল আলহানী নামে একজন মুখতালিফ ফি রাবী রয়েছে। তার শিক্ষক আবদুল খাত্ত্বাব আদ্ দিমাশক্বী সেও একজন মাজহুল বা অপরিচিত রাবী। ঈমাম যাহাবী একে মুনকার বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
৭৫৩. আবু যার গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়াতে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ নির্মিত হয়েছে? তিনি বললেন, মাসজিদুল হারাম। আমি বললাম, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, মাসজিদুল আক্বসা। আমি বললাম, এ উভয় মাসজিদ তৈরির মধ্যে সময়ের পার্থক্য কত? তিনি বললেন, চল্লিশ বছরের পার্থক্য। তারপর দুনিয়ার সব জায়গায়ই তোমার জন্য মাসজিদ, সলাতের সময় যেখানেই হবে সেখানেই সলাত আদায় করে নেবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৩৬৬, মুসলিম ৫২০, নাসায়ী ৬৯০, ইবনি মাজাহ ৭৫৩, আহমাদ ২১৩৩৪, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৫৯৮। সালাতের স্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply