সালাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সমূহ

সালাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সমূহ

সালাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সমূহ >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ৩

  • অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ

৬২৪. উমারাহ্ ইবনি রুআয়বাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি: এমন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্য উঠার ও ডোবার আগে সলাত আদায় করেছে, অর্থাৎ ফাজর ও আসরের সলাত। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৬৩৪, সহীহ আল জামি ৫২২৮, আবু দাউদ ৪২৭, নাসায়ী ৪৭১, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৩৮। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬২৫. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা সময়ের সলাত [অর্থাৎ ফাজর ও আসর] আদায় করিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫৭৪, মুসলিম ৬৩৫, আহমাদ ১৬৭৩০, দারিমি ১৪৬৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৮৫, সহীহ আল জামি ৬৩৩৭। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬২৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালায়িকাহ্ আসতে থাকেন। তারা ফাজর ও আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে [বান্দার] অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় ছেড়ে এসেছো? উত্তরে মালায়িকাহ্ বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে সলাত আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সলাত আদায় করছিল। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫৫৫, মুসলিম ৬৩২, নাসায়ী ৪৮৫, মালিক ১৮০/৫৯০, আহমাদ ১০৩০৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৩৭, সহীহ আল জামি ৮০১৯। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬২৭. জুনদুব আল ক্বসরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাজরের সলাত আদায় করিল সে আল্লাহর যিম্মাদারিতে থাকল। অতএব আল্লাহ যেন আপন যিম্মাদারীর কোন বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন। কারণ তিনি যার বিপক্ষে আপন দায়িত্বের কোন ব্যাপারে বাদী হবেন, তাকে [নিশ্চিত] ধরতে পারবেনই। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে ফেলবেন। {১}

আর মাসাবীহের কোন কোন নুসখায় [আরবি] পরিবর্তে [আরবি] রয়েছে।

{১} সহীহ : মুসলিম ৬৫৭, আহমাদ ১৮৮১৪, সহীহাহ্ ২৮৯০। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬২৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সলাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারী করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারী করত। আর যদি জানত সলাত আদায় করার জন্য আগে আগে আসার সাওয়াব, তাহলে তারা এ [যুহরের] সলাতে অন্যের আগে পৌঁছার চেষ্টা করত। যদি জানত ইশা ও ফাজরের সলাতের মধ্যে আছে, তাহলে [শক্তি না থাকলে] হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সলাতে হাযির হবার চেষ্টা করত। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬১৫, মুসলিম ৪৩৭, নাসায়ী ৫৪০, মালিক ৩, তিরমিজি ২২৫, আহমাদ ৭২২৬, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৬৫৯, সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬২৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুনাফিক্বদের জন্য ইশা ও ফাজরের সলাতের চেয়ে ভারী আর কোন সলাত নেই। যদি এ দুই সলাতের মধ্যে কি রয়েছে, তারা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সলাতে আসত। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৫৭, মুসলিম ৬৫১, ইবনি মাজাহ ৭৯৭, আহমাদ ৯৪৮৬, দারিমি ১৩০৯। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬৩০. উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইশার সলাত জামাআতে সাথে আদায় করেছে, সে যেন অর্ধেক রাত সলাতরত থেকেছে। আর যে ব্যক্তি ফাজরের সলাত জামাআতে আদায় করেছে, সে যেন পুরো রাত সলাত আদায় করেছে। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৬৫৬, সহীহ ইবনি হিব্বান ২০৬০, সহীহ আল জামি ৬৩৪১, তিরমিজি ২২১, আহমাদ ৪০৮, দারিমি ১২৬০। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬৩১. [আবদুল্লাহ] ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বেদুইনরা যেন তোমাদের মাগরিবের সলাতের নামকরণে তোমাদের উপর বিজয়ী হইতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, বেদুইনরা এ সলাতকে ইশা বলত। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৩, আহমাদ ৫/৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৩৬। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬৩২. [আবদুল্লাহ] ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বেদুইনরা যেন তোমাদের ইশার সলাতের নামকরণেরও তোমাদের উপর জয়ী হইতে না পারে। এটা আল্লাহর কিতাবে ইশা। তা পড়া হয় তাদের উষ্ট্রী দুধ দোহনের সময়। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৬৪৪, আবু দাউদ ৪৯৮৪, নাসায়ী ১/৯৩, ইবনি মাজাহ ৭০৪, আহমাদ ২/১০, ১৮, ৪৯, ১৪৪। এ সংকলনে দু দিক থেকে সমস্যা রয়েছে। প্রথমত এটি এ ধারণা দিচ্ছে যে উভয়টি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত একটি হাদিস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা দুটি হাদিস একটি মাগরিব সলাতের বিষয়ে আর অপরটি ইশা সলাতের বিষয়ে। দ্বিতীয়ত এ ধারণাও দিচ্ছে যে, ঈমাম মুসলিম [রাহিমাহুল্লাহ] এভাবেই পরিপূর্ণ আকারে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ইবনি উমার হইতে দ্বিতীয় হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আর প্রথম হাদিসটি [অর্থাৎ- মাগরিব সলাতের ক্ষেত্রে] ঈমাম বোখারী আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্ফাল [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬৩৩. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খন্দাক্বের যুদ্ধের দিন বলেছিলেন, কাফিররা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সলাত অর্থাৎ আস্‌রের সলাত আদায় করা থেকে বিরত রেখেছে। আল্লাহ তাআলা তাদের ঘর আর ক্ববরগুলো আগুন দিয়ে ভরে দিন। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৪৫৩৩, মুসলিম ৬২৭, আবু দাউদ ৪০৯, দারিমি ১২৬৮। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৬৩৪. ইবনি মাস্ঊদ ও সামুরাহ্ ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : [উস্‌ত্বা- সলাত] মধ্যবর্তী সলাত হচ্ছ আস্‌রের সলাত। {১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ১৮১-১৮২, মুসলিম ২/১১২, সহীহুল জামি ৩৮৩৫। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ যদি লেখক رَوَاهُ -এর স্থলে رَوَاهُمَا বলতো তাহলে ভালো হতো। কারণ এ দুটি ভিন্ন সানাদে বর্ণিত দুটি হাদিস। প্রথমটি মুররাহ্ আল হামদানীর সূত্রে ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত। তিরমিজি যেটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। আর দ্বিতীয়টি হাসান বসরীর সূত্রে সামুরাহ্ ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণিত যেটি তিরমিজিতে রয়েছে। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬৩৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে আল্লাহর বাণী [আর-বী]

 إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا

“ফাজ্‌রের ক্বিরাআতে [সলাতে] উপস্থিত হয়”- [সূরাহ্‌ ইসরা ১৭ : ৭৮] এর য় বলেন, এতে উপস্থিত হয় রাতের ও দিনের মালায়িকাহ্। {১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ৩১৩৫। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৬৩৬. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] ও আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উভয়ে বলেন, উস্‌ত্বা সলাত [মধ্যবর্তী সলাত] যুহরের সলাত। ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে এবং ঈমাম তিরমিজি উভয় হইতে মুআল্লাক্ব হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। {১}

{১} হাসান : মালিক ৪৬০, তিরমিজি ১৮২। যদিও এর সানাদে ইবনি ইয়ারবূ আল মাখযূমী নামে একজন অপরিচিত রাবী রয়েছে কিন্তু যায়দ ইবনি সাবিত-এর সূত্রে ত্বহাবীতে বর্ণিত এর একটি শাহিদমূলক বর্ণনা থাকায় তা হাসানের স্তরে উন্নীত হয়েছে।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

৬৩৭. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের সলাত আগে আগে আদায় করিতেন। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] এমন কোন সলাত আদায় করিতেন না যা তাহাঁর [সাঃআঃ] সাহাবীগণের জন্য যুহরের চেয়ে কষ্টসাধ্য ছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হল :

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوتِ وَالصَّلوةِ الْوُسْطى

“তোমরা সব সলাতের, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের হিফাযাত করিবে”- [সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২: ২৩৮]। তিনি {যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.]] বলেন,যুহরের সলাতের আগেও দুটি সলাত [ইশা ও ফাজ্‌র] আছে। আর পরেও দুটি সলাত [আস্‌র ও মাগরিব] আছে। {১}

{১} সহীহ : আহমাদ ২১০৮০, আবু দাউদ ৬৩৭। সালাতের ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৬৩৮. আলী ও আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ঈমাম মালিক-এর নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে পৌছেছে যে, আলী ও আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিতেন : সলাতুল উস্‌ত্বা দ্বারা উদ্দেশ্য ফাজ্‌রের সলাত। {১}

{১} জইফ : মালিক ৩১৬। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৬৩৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিরমিজি ইবনি আব্বাস ও ইবনি উমার হইতে মুআল্লাক্ব হিসবে এ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন।

এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়

৬৪০. সালমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি : যে লোক ভোরে ফাজ্‌রের সলাত আদায়ের জন্য গেল সে লোক ঈমানের পতাকা উড়িয়ে গেল। আর যে লোক ভোরে বাজারের দিকে গেল সে লোক ইবলীসের [শায়ত্বনের] পতাকা উড়িয়ে গেল। {১}

{১} খুবই দুর্বল : ইবনি মাজাহ ২২৩৪। কারণ এর সানাদে আবীস ইবনি মায়মূন রয়েছে যাকে ঈমাম বোখারীসহ আরো অনেকে মুনকিরুল হাদিস হিসেবে অবহিত করিয়াছেন। আর ইবনি হিব্বান বলেছেন যে, সে বিশ্বস্ত রাবী থেকে ধারণার ভিত্তিতে বানোয়াট হাদিস বর্ণনা করে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply