সালাতের পোশাক , চাটাই, বিছানা, মোজা ও জুতা

সালাতের পোশাক , চাটাই, বিছানা, মোজা ও জুতা

সালাতের পোশাক , চাটাই, বিছানা, মোজা ও জুতা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৮, সালাত (নামাজ), অধ্যায়ঃ (১-২৫)=২৫টি

৮/১. অধ্যায়ঃ ইসরা [১] মিরাজে কীভাবে সালাত ফরয হলো?
৮/২. অধ্যায়ঃ সালাত আদায়কালীন সময়ে কাপড় পরিধান করার আবশ্যকতা।
৮/৩. অধ্যায়ঃ সালাতে কাঁধে লুঙ্গি বাঁধা।
৮/৪. অধ্যায়ঃ একটি মাত্র কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা।
৮/৫. অধ্যায়ঃ কেউ এক কাপড়ে সালাত আদায় করলে সে যেন উভয় কাঁধের উপরে (কিছু অংশ) রাখে।
৮/৬. অধ্যায়ঃ যদি কাপড় সংকীর্ণ হয়। /৭. অধ্যায়ঃ শামী জুব্বা পরে সালাত আদায় করা।
৮/৮. অধ্যায়ঃ সালাতে ও তার বাইরে উলঙ্গ হওয়া অপছন্দনীয়। ৮/৯. অধ্যায়ঃ জামা, পায়জামা, জাঙ্গিয়া ও কাবা [১] পরে সালাত আদায় করা।
৮/১০. অধ্যায়ঃ লজ্জাস্থান আবৃত করা।
৮/১১. অধ্যায়ঃ চাদর গায়ে না দিয়ে সালাত আদায় করা। ৮/১২. অধ্যায়ঃ ঊরু সম্পর্কে বর্ণনা।
৮/১৪. অধ্যায়ঃ কারুকার্য খচিত কাপড়ে সালাত আদায় করা এবং ঐ কারুকার্যে দৃষ্টি পড়া।
৮/১৫. অধ্যায়ঃ ক্রুশ চিহ্ন অথবা ছবিযুক্ত কাপড়ে সালাত ফাসিদ হইবে কিনা এবং এ সম্বন্ধে নিষেধাজ্ঞা।
৮/১৬. অধ্যায়ঃ রেশমী জুব্বা পরে সালাত আদায় করা ও পরে তা খুলে ফেলা।
৮/১৭. অধ্যায়ঃ লাল কাপড় পরে সালাত আদায় করা। ৮/১৮. অধ্যায়ঃ ছাদ, মিম্বার ও কাঠের উপর সালাত আদায় করা।
৮/১৯. অধ্যায়ঃ মুসল্লীর কাপড় সিজদা করার সময় স্ত্রীর গায়ে লাগা।
৮/২১. অধ্যায়ঃ ছোট চাটাইয়ের উপর সালাত আদায়। ৮/২২. অধ্যায়ঃ বিছানায় সালাত আদায়। ৮/২৩. অধ্যায়ঃ প্রচন্ড গরমের সময় কাপড়ের উপর সিজদা।
৮/২৪. অধ্যায়ঃ জুতা পরে সালাত আদায় করা।
৮/২৫. অধ্যায়ঃ মোযা পরা অবস্থায় সালাত আদায় করা।

৮/১. অধ্যায়ঃ ইসরা [১] মিরাজে কীভাবে সালাত ফরয হলো?

ইবন আব্বাস (রাদি.) বলেন : আমার কাছে আবু সুফিয়ান ইবনে হারব (রাদি.) হিরাকল-এর হাদীসে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে সালাত, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার নির্দেশ দিয়েছেন।

৩৪৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আবু যার (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি মক্কায় থাকা অবস্থায় আমার গৃহের ছাদ উন্মুক্ত করা হল। অতঃপর জিবরীল (আঃ) অবতীর্ণ হয়ে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করিলেন। আর তা যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করিলেন। অতঃপর হিকমাত ও ঈমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন। পরে যখন দুনিয়ার আকাশে আসলাম জিবরীল (আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেনঃ দরজা খোল। আসমানের রক্ষক বললেনঃ কে আপনি? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ আমি জিবরীল (আঃ)। (আকাশের রক্ষক) বললেনঃ আপনার সঙ্গে কেউ রয়েছেন কি? জিবরীল বললেনঃ হাঁ মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) রয়েছেন। অতঃপর রক্ষক বললেনঃ তাকে কি ডাকা হয়েছে? জিবরীল বললেনঃ হাঁ। অতঃপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমানকে খুলে দেয়া হল আর আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম তখন দেখি সেখানে এমন এক ব্যক্তি উপবিষ্ট রয়েছেন যার ডান পাশে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে আর বাম পাশে রয়েছে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন হেসে উঠছেন আর যখন বাম দিকে তাকাচ্ছেন কাঁদছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ স্বাগতম ওহে সৎ নাবী ও সৎ সন্তান। আমি (রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)) জিবরীল (আঃ)-কে বললামঃ কে এই ব্যক্তি? তিনি জবাব দিলেনঃ ইনি হচ্ছেন আদম (আঃ)। আর তাহাঁর ডানে বামে রয়েছে তাহাঁর সন্তানদের রূহ। তার মধ্যে ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বাম দিকের লোকেরা জাহান্নামী। ফলে তিনি যখন ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। অতঃপর তার রক্ষককে বললেনঃ দরজা খোল। তখন এর রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতই প্রশ্ন করিলেন। পরে দরজা খুলে দেয়া হল। আনাস (রাদি.) বলেনঃ আবু যার (রাদি.) উল্লেখ করেন যে, তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] আসমানসমূহে আদম, ইদরীস, মূসা, ঈসা এবং ইবরাহীম (আলাইহিমুস সালাম)-কে পান। কিন্তু আবু যার (রাদি.) তাদের স্থানসমূহ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। তবে এতটুকু উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি আদম (আঃ)-কে দুনিয়ার আকাশে এবং ইবরাহীম (আঃ)-কে ষষ্ঠ আসমানে পান।

আনাস (রাদি.) বলেনঃ জিবরীল (আঃ) যখন নাবী (সাঃআঃ) কে নিয়ে ইদরীস (আঃ) নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তখন ইদরীস (আঃ) বলেনঃ মারহাবা ওহে সৎ ভাই ও পুণ্যবান নাবী। আমি (রাসুলুল্লাহ) বললামঃ ইনি কে? জিবরীল বললেনঃ ইনি হচ্ছেন ইদরীস (আঃ)। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করাকালে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে সৎ নাবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললামঃ ইনি কে? জিবরীল বললেনঃ ইনি মূসা (আঃ)। অতঃপর আমি ঈসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করাকালে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে সৎ নাবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললামঃ ইনি কে? জিবরীল বললেনঃ ইনি হচ্ছেন ঈসা (আঃ)। অতঃপর আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে পুণ্যবান নাবী ও নেক সন্তান। আমি বললামঃ ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি হচ্ছেন ইবরাহীম (আঃ)। ইবনু শিহাব বলেনঃ ইবনু হায্‌ম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, ইবনু আব্বাস ও আবু হাব্বা আল-আনসারী উভয়ে বলিতেনঃ নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ অতঃপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল অতঃপর এমন এক সমতল স্থানে এসে আমি উপনীত হই যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পাই। ইবনু হায্‌ম ও আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ অতঃপর আল্লাহ আমার উম্মাতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দেন। অতঃপর তা নিয়ে আমি ফিরে আসি। অবশেষে যখন মূসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করি তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আপনার উম্মাতের উপর কি ফরয করিয়াছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করিয়াছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত তা পালন করিতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট পুনরায় গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মাত এটিও আদায় করিতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেয়া হল। আবারো মূসা (আঃ)-এর নিকট গেলাম, এবারো তিনি বললেনঃ আপনি পুনরায় আপনার প্রতিপালকের নিকট যান। কারণ আপনার উম্মত এটিও আদায় করিতে সক্ষম হইবে না। তখন আমি পুনরায় গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (নেকির দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (বলে গণ্য হইবে)। আমার কথার কোন রদবদল হয় না। আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলে তিনি আমাকে আবারও বললেনঃ আপনার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় যান। আমি বললামঃ পুনরায় আমার প্রতিপালকের নিকট যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। অতঃপর জিবরীল (আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা [১] পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে আবৃত ছিল, যার তাৎপর্য আমি অবগত ছিলাম না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলে আমি দেখিতে পেলাম যে, তাতে রয়েছে মুক্তোমালা আর তার মাটি হচ্ছে কস্তুরী।

(১৬৩৬, ৩৩৪২; মুসলিম ১/৭৪, হাদীস ১৬৩, আহমাদ ২১১৯৩) (আঃপ্রঃ ৩৩৬, ইঃফাঃ ৩৪২). [১] সিদরাতুল মুনতাহাদীস উর্দ্ধাকাশে মালাকগণের চলাচলের শেষ সীমানায় একটি কুল বৃক্ষ আছে সেই কুল বৃক্ষটিকে সিদরাতুল মুনতাহা বলা হয়।

৩৫০. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মুকীম অবস্থায় ও সফরে দুরাকআত সালাত ফরয করেছিলেন। পরে সফরের সালাত আগের মত রাখা হয় আর মুকীম অবস্থার সালাত বাড়িয়ে দেয়া হয়।

(১০৯০, ৩৯৩৫; মুসলিম ৬/১, হাদীস ৬৮৫) (আঃপ্রঃ ৩৩৭, ইঃফাঃ ৩৪৩)

৮/২. অধ্যায়ঃ সালাত আদায়কালীন সময়ে কাপড় পরিধান করার আবশ্যকতা।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- خُذُوا زِينَتَكُم عِندَ كُلِّ مَسجِدٍ তোমরা প্রত্যেকে সালাতের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করিবে (৭ : ৩১)

এক বস্ত্র শরীরে জড়িয়ে সালাত আদায় করা। সালামা ইবনুল আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা জামায় বোতাম লাগিয়ে নাও এমন কি কাঁটা দিয়ে হলেও। এই হাদীসের সনদ সম্পর্কে কথা আছে। যে কাপড় পড়ে স্ত্রী সহবাস করা হয়েছে তাতে কোন নাপাকি দেখা না গেলে তা পরিধান করে সালাত আদায় করা যায়। আর নাবী (সাঃআঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, উলঙ্গ অবস্থায় যেন কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ না করে।

৩৫১. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) ঈদের দিবসে ঋতুবতী এবং পর্দানশীন নারীদের বের করে আনার নির্দেশ দিলেন, যাতে তারা মুসলমানদের জামাআত ও দুআয় অংশ গ্রহণ করিতে পারে। অবশ্য ঋতুবতী নারীগণ সালাতের জায়গা হইতে দূরে অবস্থান করিবে। এক মহিলা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি বললেনঃ তার সাথীর উচিত তাকে নিজের ওড়না পরিয়ে দেয়া।

(আঃপ্রঃ৩৩৮, ইঃফাঃ ৩৪৪).আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে এরূপ বলিতে শুনিয়াছি।

৮/৩. অধ্যায়ঃ সালাতে কাঁধে লুঙ্গি বাঁধা।

আর আবু হাযিম (র.) সাহল ইবন সাদ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, সাহাবায়ে কিরাম নাবী (সাঃআঃ) –এর সঙ্গে তহবন্দ কাঁধে বেঁধে সালাত আদায় করেছিলেন।

৩৫২. মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা জাবির (রাদি.) কাঁধে লুঙ্গি বেঁধে সালাত আদায় করেন। আর তাহাঁর কাপড় (জামা) আলনায় রাখা ছিল। তখন তাঁকে এক ব্যক্তি বললোঃ আপনি যে এক লুঙ্গি পরে সালাত আদায় করিলেন? তিনি জবাবে বললেনঃ তোমার মত আহাম্মকদের দেখানোর জন্য আমি এমন করেছি। নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে আমাদের কার দুটো কাপড় ছিল?

(৩৫৩, ৩৬১, ৩৭০ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ৩৩৯ , ইঃফাঃ ৩৪৫)

৩৫৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে এক কাপড়ে সালাত আদায় করিতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে এক কাপড়ে সালাত আদায় করিতে দেখেছি।

(৩৫২; মুসলিম, ৪/৫২, হাদীস ৫১৮, আহমাদ ১৫১৩৩) (আঃপ্রঃ৩৪০, ইঃফাঃ ৩৪৬)

৮/৪. অধ্যায়ঃ একটি মাত্র কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা।

যুহরী (র.) তাহাঁর হাদীসে বর্ণনা করিয়াছেন যে, مُلتَحِفُ -এর অর্থ مُتَوَشِّحُ -অর্থ্যাৎ যে চাদরের উভয় অংশ বিপরীত কাঁধে রাখে। এভাবে কাঁধের উপর চাদর রাখাকে ইশতিমাল বলে। উম্মে হানী (রাদি.) বলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) এক চাদর গায়ে দিলেন এবং তিনি চাদরের উভয় প্রান্ত বিপরীত কাঁধে রাখলেন।

৩৫৪. উমর ইবনু আবু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একটি মাত্র কাপড় পরিধান করে সালাত আদায় করিয়াছেন, যার উভয় প্রান্ত বিপরীত দিকে রেখেছিলেন।

(৩৫৫, ৩৫৬; মুসলিম ৪/৫২, হাদীস ৫১৭, আহমাদ ২৭৬০) (আঃপ্রঃ ৩৪১, ইঃফাঃ ৩৪৭)

৩৫৫. উমর ইবনু আবু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে উম্মু সালামা (রাদি.)-এর ঘরে একটি মাত্র কাপড় পরিধান করে সালাত আদায় করিতে দেখেছেন। তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] সে কাপড়ের উভয় প্রান্ত নিজের উভয় কাঁধে রেখেছিলেন।

৩৫৬. উমর ইবনু আবু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে একটি মাত্র পোষাক জড়িয়ে উম্মু সালামা (রাদি.)-এর ঘরে সালাত আদায় করিতে দেখেছি, যার প্রান্তদ্বয় তাহাঁর দুই কাঁধের উপর রেখেছিলেন।

(৩৫৪; মুসলিম ৪/৫২, হাদীস ৫১৭, আহমাদ ১৬৩৩৫) (আঃপ্রঃ ৩৪৩, ইঃফাঃ ৩৪৯)

৩৫৭. উম্মু হানী বিনতু আবু ত্বলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমি ফতহে মক্কার বছর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর নিকট গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাহাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাদি.) তাঁকে আড়াল করে রেখেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে সালাম প্রদান করলাম। তিনি জানতে চাইলেনঃ এ কে? আমি বললামঃ আমি উম্মু হানী বিনতু আবু ত্বলিব। তিনি বললেনঃ মারহাবা, হে উম্মু হানী! গোসল শেষ করে তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাকআত সালাত আদায় করিলেন। সালাত সমাধা করলে তাঁকে আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার সহোদর ভাই [আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) ] এক ব্যক্তিকে হত্যা করিতে চায়, অথচ আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি। সে ব্যক্তিটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ হে উম্মু হানী ! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ, আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মু হানী (রাদি.) বলেনঃ এ সময় ছিল চাশতের ওয়াক্ত।

(২৮০; মুসলিম ৩/১৬, হাদীস ৩৩৬, আহমাদ ২৬৯৭৩) (আঃপ্রঃ ৩৪৪, ইঃফাঃ ৩৫০)

৩৫৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে একটি কাপড়ে সালাত আদায়ের মাসআলা জিজ্ঞেস করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উত্তরে বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কি দুটি করে কাপড় আছে?

(৩৬৫; মুসলিম ৪/৫২, হাদীস ৫১৫, আহমাদ ৭১৫২) (আঃপ্রঃ ৩৪৫, ইঃফাঃ ৩৫১)

৮/৫. অধ্যায়ঃ কেউ এক কাপড়ে সালাত আদায় করলে সে যেন উভয় কাঁধের উপরে (কিছু অংশ) রাখে।

৩৫৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ এক কাপড় পরে এমনভাবে যেন সালাত আদায় না করে যে, তার উভয় কাঁধে এর কোন অংশ নেই।

(৩৬০; মুসলিম ৪/৫২, হাদীস ৫১৬, আহমাদ ৭৩১১) (আঃপ্রঃ ৩৪৬, ইঃফাঃ ৩৫২)

৩৬০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এক কাপড়ে সালাত আদায় করে, সে যেন কপড়ের দুপ্রান্ত বিপরীত পাশে রাখে।

(আঃপ্রঃ ৩৪৭, ইঃফাঃ ৩৫৩)

৮/৬. অধ্যায়ঃ যদি কাপড় সংকীর্ণ হয়।

৩৬১. সাঈদ ইবনু হারিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে একটি কাপড়ে সালাত আদায় করা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কোন এক সফরে বের হয়েছিলাম। এক রাতে আমি কোন দরকারে তাহাঁর নিকট গেলাম। দেখলাম, তিনি সালাতে রত আছেন। তখন আমার শরীরে মাত্র একখানা কাপড় ছিল। আমি কাপড় দিয়ে শরীর জড়িয়ে নিলাম আর তাহাঁর পার্শ্বে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সালাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেনঃ জাবির! রাতের বেলা আসার কারণ কী? তখন আমি তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা জানালাম। আমার কাজ শেষ হলে তিনি বললেনঃ এ কিরূপ জড়ানো অবস্থায় তোমাকে দেখলাম? আমি বললামঃ কাপড় একটিই ছিল (তাই এভাবে করেছি)। তিনি বললেনঃ কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে পরবে। আর যদি ছোট হয় তাহলে লুঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করিবে।

(৩৫২; মুসলিম ৫৩/১৮, হাদীস ৩০১০) (আঃপ্রঃ ৩৪৮, ইঃফাঃ ৩৫৪)

৩৬২. সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা শিশুদের মত নিজেদের লুঙ্গি কাঁধে বেঁধে সালাত আদায় করিতেন। আর মহিলাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যে, তারা যেন পুরুষদের ঠিকমত বসে যাওয়ার পূর্বে সিজদা হইতে মাথা না উঠায়।

(৮১৪, ১২১৫; মুসলিম ৪/২৯, হাদীস৪৪১, আহমাদ ১৫৫৬২) (আঃপ্রঃ৩৪৯, ইঃফাঃ৩৫৫)

৮/৭. অধ্যায়ঃ শামী জুব্বা পরে সালাত আদায় করা।

হাসান (র.) বলেন : মাজূসী (অগ্নিপূজক) দের তৈরী কাপড়ে সালাত আদায় করায় কোন ক্ষতি নেই। আর মামার (র.) বলেন : আমি যুহরী (র.) কে ইয়ামানের তৈরি কাপড়ে সালাত আদায় করিতে দেখেছি, যা পেশাবের দ্বারা রঞ্জিত (কাপড় ধৌত করার পরেও দাগ যায়নি এমন কাপড়) ছিল। আলী ইবন আবু তালিব (রাদি.) অধোয়া নতুন কাপড়ে সালাত আদায় করিয়াছেন।

৩৬৩. মুগীরা ইবনু শুবা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি কোন এক সফরে নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে মুগীরা! বদনাটি নাও। আমি তা নিলাম। তিনি আমার দৃষ্টির অগোচরে গিয়ে প্রয়োজন সারলেন। তখন তার শরীরে ছিল শামী জুব্বা। তিনি জুব্বার আস্তিন হইতে হাত বের করিতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ হবার ফলে তিনি নীচের দিক দিয়ে হাত বের করিলেন। আমি পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করিলেন। আর তাহাঁর উভয় মোজার উপর মাস্‌হ করিলেন ও পরে সালাত আদায় করিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৫০, ইঃফাঃ ৩৫৬)

৮/৮. অধ্যায়ঃ সালাতে ও তার বাইরে উলঙ্গ হওয়া অপছন্দনীয়।

৩৬৪. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (নবুওয়াতের পূর্বে) কুরাইশদের সাথে কাবার (মেরামতের) জন্যে পাথর তুলে দিচ্ছিলেন। তাহাঁর পরিধানে ছিল লুঙ্গি। তাহাঁর চাচা আব্বাস (রাদি.) তাঁকে বললেনঃ ভাতিজা! তুমি লুঙ্গি খুলে কাঁধে পাথরের নীচে রাখলে ভাল হত। জাবির (রাদি.) বলেনঃ তিনি লুঙ্গি খুলে কাঁধে রাখলেন এবং তৎক্ষণাৎ বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। এরপর তাঁকে আর কখনো নগ্ন অবস্থায় দেখা যায়নি।

(১৫৮২, ৩৮২৯; মুসলিম ৩/১৯, হাদীস ৩৪০) (আঃপ্রঃ ৩৫১, ইঃফাঃ ৩৫৭)

৮/৯. অধ্যায়ঃ জামা, পায়জামা, জাঙ্গিয়া ও কাবা [১] পরে সালাত আদায় করা।

[১] কাবাঃ সাধারণত জামার উপরিভাগে যে ঢিলাঢালা জোব্বা আচকান পরা হয় ।

৩৬৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট দাঁড়িয়ে এক কাপড়ে সালাত আদায়ের হুকুম জিজ্ঞেস করিল। তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের নিকট কি দুখানা করে কাপড় আছে? অতঃপর এক ব্যক্তি উমর (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করিল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ যখন তোমাদের সামর্থ্য দিয়েছেন তখন তোমরাও নিজেদের সামর্থ্য প্রকাশ কর। লোকেরা যেন পুরো পোশাক একত্রে পরিধান করে অর্থাৎ মানুষ লুঙ্গি ও চাদর, লুঙ্গি ও জামা, লুঙ্গি ও কাবা, পায়জামা ও চাদর, পায়জামা ও জামা, পায়জামা ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও জামা পরে সালাত আদায় করে। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন যে, আমার মনে হয় উমর (রাদি.) জাঙ্গিয়া ও চাদরের কথাও বলেছিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৫২, ইঃফাঃ ৩৫৮)

৩৬৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, ইহরামকারী কী পরিধান করিবে? তিনি বলিলেন, সে জামা পরবে না, পায়জামা পরবে না, টুপি পরবে না, যাফরান বা ওয়ার্‌স [১] রঙের রঞ্জিত কাপড় পরবে না। আর জুতা না পেলে মোজা পরবে। তবে তা কর্তন করে পায়ের গিরার নীচ পর্যন্ত নেবে। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), ইবনু উমর (রাদি.)-সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৫৩, ইঃফাঃ ৩৫৯). [১] ওয়ারসঃ এক প্রকার হলুদ রঙের তৃণ জাতীয় সুগন্ধি ।

৮/১০. অধ্যায়ঃ লজ্জাস্থান আবৃত করা।

৩৬৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইশতিমালে সাম্মা [১] এবং এক কাপড়ে ইয়াহতিবা [২] করিতে নিষেধ করিয়াছেন যাতে তার লজ্জাস্থানে কাপড়ের কোন অংশ না থাকে।

(আঃপ্রঃ ৩৫৪, ইঃফাঃ ৩৬০). ১] ইশতিমালে সাম্মাঃ ছিদ্র বিহীন কাপড়ে শরীর এমনভাবে জড়ানো যাতে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করিতে অসুবিধা হয়।. [২] ইয়াহতিবাহঃ সামনে দিকে দুই হাঁটু খাড়া করে রেখে পাছার ভরে বসা যাতে লজ্জাস্থান দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩৬৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দুধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করিয়াছেন। তা হল লিমাস [৩] ও নিবায [৪] আর ইশতিমালে সাম্মা এবং এক কাপড়ে ইহতিবা করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৫৫, ইঃফাঃ ৩৬১). [৩] লিমাসঃ ক্রয়-বিক্রয় এর সময় ক্রেতা দ্রব্যটি স্পর্শ করলেই ক্রয় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া।. [৪] নিবায: মুল্য নির্ধারনের সময় বিক্রেতা ক্রেতার দিকে দ্রব্যটি ছুঁড়ে মারলে কিংবা ক্রেতা দ্রব্যটির দিকে কংকর ছুঁড়ে মারলে ক্রয়-বিক্রয় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া।

৩৬৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে আবু বকর (রাদি.) [যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর পক্ষ হইতে তাঁকে হজ্জের আমীর বানানো হয়েছিল] কুরবানির দিন ঘোষকদের সাথে মিনায় এ ঘোষণা করার জন্য পাঠালেন যে, এ বছরের পর কোন মুশরিক বায়তুল্লাহর হজ্জ করিতে পারবে না। আর উলঙ্গ লোকও বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করিতে পারবে না। হুমায়দ ইবনু আব্দুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আলী (রাদি.) কে আবু বক্‌র এর পিছনে প্রেরণ করেন আর তাঁকে সুরা বারাআতের (প্রথম অংশের) ঘোষণা করার নির্দেশ দেন। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেনঃ তখন আমাদের সঙ্গে আলী (রাদি.) কুরবানীর দিন মিনায় ঘোষণা দেন যে, এ বছরের পর হইতে আর কোন মুশরিক হজ্জ করিতে পারবে না এবং কোন উলঙ্গ ব্যক্তিও আর ত্বওয়াফ করিতে পারবে না।

(আঃপ্রঃ ৩৫৬, ইঃফাঃ ৩৬২)

৮/১১. অধ্যায়ঃ চাদর গায়ে না দিয়ে সালাত আদায় করা।

৩৭০. মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.)-এর নিকট গিয়ে দেখি তিনি একটি মাত্র কাপড় নিজের শরীরে জড়িয়ে সালাত আদায় করছেন অথচ তাহাঁর একটি চাদর সেখানে রাখা ছিল। সালাতের পর আমরা বললাম, হে আবু আবদুল্লাহ। আপনি সালাত আদায় করিয়াছেন, অথচ আপনার চাদর তুলে রেখেছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ, তোমাদের মত নির্বোধদের দেখানোর জন্য আমি এমন করেছি। আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে এভাবে সালাত আদায় করিতে দেখেছি।

(আঃপ্রঃ ৩৫৭, ইঃফাঃ ৩৬৩)

৮/১২. অধ্যায়ঃ ঊরু সম্পর্কে বর্ণনা।

আবু আবদুল্লাহ (র.) বলেন, বর্ণিত আছে যে, ইবন আব্বাস, জারহাদ ও মুহাম্মদ ইবন জাহ্শ (রাদি.) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ঊরু সতরের অন্তর্ভুক্ত। আর আনাস (রাদি.) বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাঁর ঊরু থেকে কাপড় সরিয়েছিলেন (আবু আবদুল্লাহ বুখারী [রঃ] বলেন) সনদের দিক থেকে আনাস (রাদি.)-এর হাদীস অধিক সহীহ আর জারহাদ (রাদি.)-এর হাদীস অধিকতর সতর্কতামূলক। এভাবেই আমরা (উম্মতের মধ্যে) মতবিরোধ এড়াতে পারি। আর আবু মূসা (রাদি.) বলেছেনঃ উসমান (রাদি.)-এর আগমনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাঁর হাঁটু ঢেকে নেন। যায়িদ ইবন সাবিত (রাদি.) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) এর উপর ওহী নাযিল করিয়াছেন এমন অবস্থায় যখন তাহাঁর ঊরু ছিল আমার ঊরুর উপর। আমার কাছে তাহাঁর ঊরু এত ভারী বোধ হচ্ছিল যে, আমি আশংকা করছিলাম, হয়ত আমার ঊরুর হাড় ভেঙ্গে যাবে।

৩৭১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খাইবার অভিযানে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা খুব ভোরে ফজরের সালাত আদায় করলাম। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) সওয়ার হলেন। আবু তাল্‌হা (রাদি.)-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবু তালহার পিছনে উপবিষ্ট ছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সওয়ারীকে খায়বারের পথে চালিত করিলেন। আমার হাঁটু নাবী (সাঃআঃ)-এর ঊরুতে লাগছিল। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ)-এর ঊরু হইতে ইযার সরে গেল। এমনকি নাবী (সাঃআঃ)-এর উজ্জ্বলতা যেন এখনও আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করিলেন তখন বললেনঃ আল্লাহু আকবার। খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গনে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভোর হইবে কতই না মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, খায়বারের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠল, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)! আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী “পুর্ণ বাহিণীসহ” (ওয়াল খামীস) শব্দও যোগ করিয়াছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বার জয় করলাম। তখন যুদ্ধবন্দীদের সমবেত করা হল। দিহয়া (রাদি.) এসে বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! বন্দীদের হইতে আমাকে একটি দাসী দিন। তিনি বলিলেন, যাও, তুমি একটি দাসী নিয়ে যাও। তিনি সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই (রাদি.)-কে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বললঃ ইয়া নাবীয়াল্লাহ! বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীরের অন্যতম নেত্রী সাফিয়্যা বিনতে হুয়াইকে আপনি দিহয়াকে দিচ্ছেন? তিনি তো একমাত্র আপনারই যোগ্য। তিনি বলিলেন, দিহয়াকে সাফিয়্যা সহ ডেকে আন। তিনি সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নাবী (সাঃআঃ) সাফিয়্যা (রাদি.)-কে দেখলেন তখন (দিহয়াকে) বলিলেন, তুমি বন্দীদের হইতে অন্য একটি দাসী দেখে নাও। রাবী বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) সাফিয়্যা (রাদি.)-কে আযাদ করে দিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করিলেন। রাবী সাবিত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হামযা (আনাস) (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে কি মাহর দিলেন? আনাস (রাদি.) জবাব দিলেনঃ তাঁকে আযাদ করাই তাহাঁর মাহর। এর বিনিময়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করিয়াছেন। অতঃপর পথে উম্মু সুলায়ম (রাদি.) সাফিয়্যা (রাদি.)-কে সাজিয়ে রাতে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহু)-এর খিদমতে পেশ করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বাসর রাত যাপন করে ভোরে উঠলেন। তিনি ঘোষণা দিলেনঃ যার নিকট খাবার কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। এ বলে তিনি একটি চামড়ার দস্তরখান বিছালেন। কেউ খেজুর নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমার মনে হয় আনাস (রাদি.) ছাতুর কথাও উল্লেখ করিয়াছেন। অতঃপর তাঁরা এসব মিশিয়ে খাবার তৈরি করিলেন। এ-ই ছিল রাসুল (সাঃআঃ)-এর ওয়ালীমাহ।

(আঃপ্রঃ ৩৫৮, ইঃফাঃ ৩৬৪)

৮/১৩. অধ্যায়ঃ নারীগণ সালাত আদায় করিতে কয়টি কাপড় পরবে?

ইকরিমা (র.) বলেনঃ যদি একটি কাপড়ে মহিলার সমস্ত শরীর ঢেকে যায় তবে তাতেই সালাত জায়েয হইবে।

৩৭২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফজরের সালাত আদায় করিতেন আর তাহাঁর সঙ্গে অনেক মুমিন মহিলা চাদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হত। অতঃপর তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতো। আর তাদেরকে কেউ চিনতে পারতো না।

(আঃপ্রঃ ৩৫৯, ইঃফাঃ ৩৬৫)

৮/১৪. অধ্যায়ঃ কারুকার্য খচিত কাপড়ে সালাত আদায় করা এবং ঐ কারুকার্যে দৃষ্টি পড়া।

৩৭৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একদা একটি কারুকার্য খচিত চাদর গায়ে দিয়ে সালাত আদায় করিলেন। আর সালাতে সে চাদরের কারুকার্যের প্রতি তাহাঁর দৃষ্টি পরল। সালাত শেষে তিনি বললেনঃ এ চাদরখানা আবু জাহমের নিকট নিয়ে যাও, আর তাহাঁর কাছ হইতে আমবিজানিয়্যাহ (কারুকার্য ছাড়া মোটা চাদর) নিয়ে আস। এটা তো আমাকে সালাত থেকে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল। হিশাম ইবনে উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতা হইতে এবং তিনি আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি সালাত আদায়ের সময় এর কারুকার্যের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে। তখন আমি আশংকা করেছিলাম যে, এটা আমাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে।

(আঃপ্রঃ৩৬০, ইঃফাঃ ৩৬৬)

৮/১৫. অধ্যায়ঃ ক্রুশ চিহ্ন অথবা ছবিযুক্ত কাপড়ে সালাত ফাসিদ হইবে কিনা এবং এ সম্বন্ধে নিষেধাজ্ঞা।

৩৭৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমার সামনে থেকে তোমার এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সালাত আদায়ের সময় এর ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে।

(আঃপ্রঃ ৩৬১, ইঃফাঃ ৩৬৭)

৮/১৬. অধ্যায়ঃ রেশমী জুব্বা পরে সালাত আদায় করা ও পরে তা খুলে ফেলা।

৩৭৫. উকবা ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ)-কে একটা রেশমী জুব্বা হাদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে সালাত আদায় করিলেন। কিন্তু সালাত শেষ হবার সাথে সাথে দ্রুত তা খুলে ফেললেন, যেন তিনি তা পড়া অপছন্দ করছিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ মুত্তাকীদের জন্যে এই পোশাক সমীচীন নয়। [১]

(আঃপ্রঃ ৩৬২, ইঃফাঃ ৩৬৮). [১] পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান হারাম হবার পূর্বের ঘটনা এটি ।

৮/১৭. অধ্যায়ঃ লাল কাপড় পরে সালাত আদায় করা।

৩৭৬. আবু জুহাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে চামড়ার একটি লাল তাবুতে দেখলাম এবং তাহাঁর জন্য উযুর পানি নিয়ে বিলাল (রাদি.)-কে উপস্থিত দেখলাম। আর লোকেরা তাহাঁর উযুর পানির জন্য প্রতিযোগিতা করছে। কেউ সামান্য পানি পাওয়া মাত্র তা দিয়ে শরীর মুছে নিচ্ছে। আর যে পায়নি সে তার সাথীর ভিজা হাত হইতে নিয়ে নিচ্ছে। অতঃপর বিলাল (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট একটি লৌহফলকযুক্ত ছড়ি নিয়ে এসে তা মাটিতে পুঁতে দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) একটা লাল ডোরাযুক্ত পোশাক পরে বের হলেন, তাহাঁর তহবন্দ কিঞ্চিৎ উঁচু করে পড়া ছিল। সে ছড়িটি সামনে রেখে লোকদের নিয়ে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। আর মানু ষ ও জন্ত-জানোয়ার ঐ ছড়িটির বাইরে চলাফেরা করছিল।

(আঃপ্রঃ ৩৬৩, ইঃফাঃ ৩৬৯)

৮/১৮. অধ্যায়ঃ ছাদ, মিম্বার ও কাঠের উপর সালাত আদায় করা।

আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বরফ ও পুলের উপর সালাত আদায় করা দূষণীয় মনে করিতেন না-যদিও তার নীচ দিয়ে, উপর দিয়ে অথবা সামনের দিক দিয়ে পেশাব প্রবাহিত হয়; যদি উভয়ের মাঝে ব্যবধান থাকে। আবু হুরাইরা (রাদি.) মসজিদের ছাদে ইমামের সাথে সালাত আদায় করেছিলেন্ ইবন উমার (রাদি.) বরফের উপর সালাত আদায় করিয়াছেন।

৩৭৭. আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

লোকেরা সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করিল [(নাবী (সাঃআঃ) এর] মিম্বার কিসের তৈরি ছিল? তিনি বললেনঃ এ বিষয়ে আমার চেয়ে বেশি জ্ঞাত আর কেউ নেই। তা ছিল গাবা নামক স্থানের ঝাউগাছের কাঠ দিয়ে তৈরি। অমুক মহিলার আযাদকৃত দাস অমুক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর জন্য তা তৈরি করেছিল। তা পুরোপুরি তৈরি ও স্থাপিত হবার পর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার উপর দাঁড়িয়ে ক্বিবলার দিকে মুখ করে তাকবীর বলিলেন। লোকেরা তাহাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি কিরাআত পড়লেন ও রুকূতে গেলেন। সকলেই তাহাঁর পিছনে রুকূতে গেলেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে পেছনে সরে গিয়ে মাটিতে সিজদা করিলেন। পুনরায় মিম্বারে ফিরে আসলেন এবং কিরাআত পড়ে রুকূতে গেলেন। অতঃপর তাহাঁর মাথা তুললেন এবং পেছনে সরে গিয়ে মাটিতে সিজদা করিলেন। এ হলো মিম্বারের ইতিহাস। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, আমাকে আহমদ ইবনু হাম্বাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ আমার ধারনা, নাবী (সাঃআঃ) সবচাইতে উঁচু স্থানে ছিলেন। সুতরাং ইমামের মুক্তাদীদের চেয়ে উঁচু স্থানে দাঁড়ানোতে কোন দোষ নেই। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমি আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে বললামঃ সুফাইয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে এ বিষয়ে বহুবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনি তাহাঁর নিকট এ বিষয়ে কিছু শোনেননি? তিনে জবাব দিলেনঃ না।

(আঃপ্রঃ ৩৬৪, ইঃফাঃ ৩৭০)

৩৭৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একদা ঘোড়া হইতে পড়ে গেলেন, এতে তিনি পায়ের গোছায় অথবা (রাবী বলেছেন) কাঁধে আঘাত পান। তিনি তাহাঁর স্ত্রীদের হইতে এক মাসের জন্য পৃথক হয়ে থাকেন। তখন তিনি ঘরের উপরের কক্ষে অবস্থান করেন যার সিঁড়ি ছিল খেজুর গাছের কান্ডের তৈরি। সাহাবীগণ তাঁকে দেখিতে এলেন, তিনি তাঁদের নিয়ে বসে সালাত আদায় করিলেন, আর তাঁরা ছিলেন দাঁড়ানো। সালাম ফিরিয়ে তিনি বললেনঃ ইমাম এজন্যে যে, মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করিবে। সুতরাং ইমাম তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে, তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকূ করিবে। তিনি সিজদা করলে তোমরাও সিজদা করিবে। ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিবে। অতঃপর ঊনত্রিশ দিন পূর্ণ হলে তিনি নেমে আসলেন। তখন লোকেরা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো এক মাসের শপথ করেছিলেন। তিনি বললেনঃ এ মাস ঊনত্রিশ দিনের।

(আঃপ্রঃ ৩৬৫, ইঃফাঃ ৩৭১)

৮/১৯. অধ্যায়ঃ মুসল্লীর কাপড় সিজদা করার সময় স্ত্রীর গায়ে লাগা।

৩৭৯. মাইমূনা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন সালাত আদায় করিতেন তখন হায়েয অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও আমি তাহাঁর বরাবর বসে থাকতাম। কখনো কখনো তিনি সিজদা করার সময় তাহাঁর কাপড় আমার গায়ে লাগতো। আর তিনি ছোট চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করিতেন।

(আঃপ্রঃ ৩৬৬, ইঃফাঃ ৩৭২)

৮/২০. অধ্যায়ঃ চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করা।

জাবির ইবন আবদুল্লাহ ও আবু সাঈদ (রাদি.) নৌকায় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিয়াছেন। হাসান (র.) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সাথীদের জন্যে কষ্টকর না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিবে। আর নৌকার দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘুরে যাবে। অন্যথায় বসে সালাত আদায় করিবে।

৩৮০. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাহাঁর দাদী মুলাইকা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন, যা তাহাঁর জন্যই তৈরি করেছিলেন। তিনি তা হইতে খেলেন, অতঃপর বললেনঃ উঠ, তোমাদের নিয়ে আমি সালাত আদায় করি। আনাস (রাদি.) বলেনঃ আমি আমাদের একটি চাটাই আনার জন্য উঠলাম, তা অধিক ব্যবহারে কালো হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সেটা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাতের জন্য দাঁড়ালেন। আর আমি এবং একজন ইয়াতীম [৮] বালক (যুমাইরাহ) তাহাঁর পেছনে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা দাদী আমাদের পেছনে ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি চলে গেলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৬৭, ইঃফাঃ ৩৭৩. [৮] ইয়াতীমঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর জনৈক আযাদকৃত দাসের উপাধি।

৮/২১. অধ্যায়ঃ ছোট চাটাইয়ের উপর সালাত আদায়।

৩৮১. মাইমূনা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) ছোট চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করিতেন।

(আঃপ্রঃ ৩৬৮, ইঃফাঃ ৩৭৪)

৮/২২. অধ্যায়ঃ বিছানায় সালাত আদায়।

আনাস ইবন মালিক (রাদি.) নিজের বিছানায় সালাত আদায় করিতেন। আনাস (রাদি.) বলেনঃ আমরা নাবী (সাঃআঃ)–এর সঙ্গে সালাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ কেউ নিজ কাপড়ের উপর সিজদা করত।

৩৮২. নাবী (সাঃআঃ) এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দুখানা তাহাঁর ক্বিবলার দিকে ছিল। তিনি সিজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দুখানা গুটিয়ে নিতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দুখানা প্রসারিত করতাম। তিনি বলেনঃ সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না।

(আঃপ্রঃ৩৬৯, ইঃফাঃ ৩৭৫)

৩৮৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উরওয়া (রাদি.) কে বলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিতেন আর তিনি [আয়েশা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও তাহাঁর ক্বিবলার মধ্যে পারিবারিক বিছানার উপর জানাযার মত আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতেন।

(আঃপ্রঃ ৩৭০, ইঃফাঃ ৩৭৬)

৩৮৪. উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিতেন, আর আয়েশা (রাদি.) তাহাঁর ও ক্বিবলার মাঝখানে তাঁদের বিছানায় যাতে তারা ঘুমাতেন আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে থাকতেন।

(আঃপ্রঃ ৩৭১, ইঃফাঃ ৩৭৭)

৮/২৩. অধ্যায়ঃ প্রচন্ড গরমের সময় কাপড়ের উপর সিজদা।

হাসান বসরী (র.) বলেন, লোকেরা পাগড়ী ও টুপির উপর সিজদা করতো আর তাদের হাত আস্তিনের মধ্যে থাকত।

৩৮৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমরা নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে সালাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ কেউ সিজদা কালে বেশী গরমের কারণে কাপড়ের প্রান্ত সিজদার স্থানে রাখতো।

(আঃপ্রঃ ৩৭২, ইঃফাঃ ৩৭৮)

৮/২৪. অধ্যায়ঃ জুতা পরে সালাত আদায় করা।

৩৮৬. আবু মাসলামা সাঈদ ইবনু ইয়াযীদ আল-আয্‌দী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, নাবী (সাঃআঃ) কি তাহাঁর নালাইন (চপ্পল) পরে সালাত আদায় করিতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।

(আঃপ্রঃ ,৩৭৩ ইঃফাঃ ৩৭৯)

৮/২৫. অধ্যায়ঃ মোযা পরা অবস্থায় সালাত আদায় করা।

৩৮৭. হাম্মাম ইবনু হারিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) কে দেখলাম যে, তিনি পেশাব করিলেন। অতঃপর উযূ করিলেন আর উভয় মোজার উপরে মাস্‌হ করিলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ) কেও এরূপ করিতে দেখেছি। ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ এ হাদীস মুহাদ্দিসীনের নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয়। কারণ জারীর (রাদি.) ছিলেন নাবী (সাঃআঃ) এর শেষ সময়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে একজন।

(আঃপ্রঃ ৩৭৪, ইঃফাঃ ৩৮০)

৩৮৮. মুগীরা ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে উযূ করিয়েছি। তিনি (উযূর সময়) মোজা দুটির উপর মাস্‌হ করিলেন ও সালাত আদায় করিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৭৫, ইঃফাঃ ৩৮১)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply