সালাতের জিকির আজকার

সালাতের জিকির আজকার

সালাতের জিকির আজকার  >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ১৮

  • অধ্যায়ঃ ১৮. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ১৮. প্রথম অনুচ্ছেদ

৯৫৯. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সলাত শেষ হওয়াটা বুঝতাম

اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লা-হু আকবার বলার মাধ্যমে। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৮৪২, মুসলিম ৫৮৩। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৬০. উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাতের সালাম ফিরাবার পর শুধু এ দুআটি শেষ করার পরিমান সময় অপেক্ষা করিতেন,

اَللّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

“আল্লাহুম্মা আনতাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম” [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত]। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫৯২। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৬১. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার

اسْتَغْفَرَ

আস্তাগফিরুল্ল-হ” বলিতেন, তারপর এ দুআ পড়তেন:

اَللّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَام 

“আল্লাহুম্মা আনতাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম” [অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আধাঁর। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত] {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫৯১। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৬২. মুগীরাহ্ ইবনি শুবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] সব ফারয সলাতের পরে এ দুআ পড়তেন:

 اَللّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

“লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, আল্ল-হুম্মা লা- মা-নিআ লিমা- আত্বয়তা, ওয়ালা-মুত্বিয়া লিমা- মানাতা, ওয়ালা-ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু” [অর্থাৎ আল্লাহ ভিন্ন কোন উপাস্য নেই। তিনি অদ্বিতীয় l তার কোন অংশীদার নেই l রাজত্ব একমাত্র তারই এবং সব প্রশংসা একমাত্র তার জন্যে l তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো, কেউ নেই তা ফিরাবার। আর যা তুমি দান করিতে বারণ করো, কেউ নেই তা দান করার। ধনবানকে ধন-সম্পদে পারবে না কোন উপকার করিতে আপনার আক্রোশ-এর সামনে] {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৮৪৪, মুসলিম ৫৯৩। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৩. আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সলাতের সালাম ফিরানোর পর উচ্চকন্ঠে বলিতেন,

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ، لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَو كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ

“লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া আলা-কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, লা-হাওলা ওয়ালা-ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা-নাবুদু ইল্লা- ঈয়্যাহু, লাহুন নিমাতু, ওয়ালাহুল ফাযলু, ওয়ালাহুস সানা-উল হাসানু, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন” [অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নেই, তিনি এক তাহাঁর কোন শারীক নেই, রাজত্ব তাহাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাহাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। কোন অন্যায় ও অনিষ্ট হইতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই এবং কোন সৎ কাজ করারও ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আল্লাহ ছাড়া সত্যিাকার কোন মাবূদ নেই, আমরা একমাত্র তাহাঁরই ইবাদাত করি, যাবতীয় নিআমত ও অনুগ্রহ একমাত্র তাহাঁরই পক্ষা থেকে এবং উত্তম প্রশংসাও তাহাঁর। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নেই। আমরা তাহাঁর দেয়া জীবন বিধান একমাত্র তাহাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিরদের নিকট তা অপ্রীতিকর। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫৯৪, يَقوْلُ بِصَوْيَه لْأَ عْلى শব্দটি মুসনাদে শাফিঈর। কিন্তু সহীহ মুসলিমের শব্দ হলো يهلل بهن।.সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৪. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তার সন্তানদেরকে দুআর এ কালিমাগুলো শিক্ষা দিতেন ও বলিতেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাতের পর এ কালিমাগুলো দ্বারা আল্লাহর নিকটে আশ্রয় চাইতেন:

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْقَبْرِ

“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আউযুবিকা মিন আরযালিল উমুরি, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া-ওয়া আযা-বিল ক্ববরি” [অর্থাৎ হে আল্লাহ!আমি কাপুরুষতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বখিলী থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। নিষ্কর্মা জীবন থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। দুনিয়ার ফিতনাহ ও ক্ববরের শাস্তি থেকে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই]।{১}

{১} সহীহ : বোখারী ২৮২২, ৬৩৭০। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রসূল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট হাযির হয়ে আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদশালী লোকজন সম্মানে ও স্থায়ী নিআমতের ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক অগ্রগামী। তিনি বললেন, এটা কিভাবে? তারা বললেন, আমরা যেমন সলাত আদায় করি তারাও আমাদের মতই সলাত আদায় করে, আমাদের মতো সওম পালন করে। তবে যারা দান-সদক্বাহ করে। আমরা তা করিতে পারি না। তারা গোলাম মুক্ত করে, আমরা গোলাম মুক্ত করিতে পারি না। অতঃপর রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন কিছু শিখাব না যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে এবং তোমাদের পশ্চাদগামীদের চেয়ে আগে যেতে পারবে, কেউ তোমাদের চেয়ে বেশী উত্তম হইতে পারবে না, তারা ছাড়া যারা তোমাদের মতো আমাল করিবে? গরীব লোকেরা বললেন, বলুহ হে আল্লাহর রসূল! রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তোমরা প্রতি সলাতের পর

سُبْحَانَ اللهِ

সুবহা-নাল্লাহ,

اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্ল-হু আকবার,

الْحَمْدُ لِلَّهِ

আলহামদু লিল্লা-হ তেত্রিশবার করে পড়বে। রাবী আবু সালিহ বলেন, পরে সে গরীব মুহাজিরগণ রসূলের দরবারে ফিরে এসে বললেন, আমাদের ধনী লোকেরা আমাদের আমালের কথা শুনে তারাও তদ্রূপ আমার করছেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, এটা আল্লাহ তাআলার কুরুনা, যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। [বোখারী, মুসলিম; আবু সালিহ-এর কথা শুধু মুসলিমেই বর্ণিত। বোখারীর অন্য বর্ণনায় তেত্রিশবারের স্থানে প্রতি সলাতের পর দশবার করে সুবহা-নাল্ল-হ, আলাহমাদু লিল্লা-হ, আল্ল-হু আকবার পাঠ করার কথা পাওয়া যায়। {১}

সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৬. কাব ইবনি উজরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, প্রতি ফারয সলাতের পর পাঠ করার মতো কিছু কালিমাহ আছে যেগুলো পাঠকারী বা আমালকারী বঞ্চিত হয় না। সে কালিমাগুলো হলো: সুবহা-নাল্লা-হ তেত্রিশবার, আলহামদু লিল্লাহ তেত্রিশবার ও আল্ল-হু আকবার চৌত্রিশবার করে পড়া। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫৯৬। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সলাতের শেষে সুব্‌হা-নাল্ল-হ তেত্রিশবার, আলহাম্‌দু লিল্লা-হ তেত্রিশবার এবং আল্ল-হু আকবার তেত্রিশবার পড়বে, যার মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার

لاَ إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

“লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্‌দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ওয়াহুওয়া আলা-কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর” [অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাহাঁর কোন শারীক নেই। সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাহাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাহাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।] পাঠ করিবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির সমানও হয়। [ {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫৯৭। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৯৬৮. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্‌ [সময়ের] দুআ [আল্লাহর কাছে] বেশী শ্রুতি হয়। তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের [দুআ] এবং ফার্‌য সলাতের শেষের দুআ। {১}

{১} হাসান লিগায়রিহী : তিরমিজি ৩৪৯৯, সহীহ আত তারগীব ১৬৪৮। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

৯৬৯.উক্ববাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ববাহ্‌ ইবনি আমির [রাদি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে প্রতি সলাতের শেষে “কুল আঊযু বিরাব্বিন্‌ না-স” ও “কুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব” পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন”। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৫২৩। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৭০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আনাস [রাদি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ যারা ফাজ্‌রের সলাত শেষ করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিক্‌রে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, ইসমাঈল [আঃ]–এর সন্তান থেকে চারজনকে দাসত্বমুক্ত করার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয়। আর যারা আস্‌রের সলাতের শেষে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিক্‌রে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, চারজনকে আযাদ করার চেয়ে আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। {১}

{১} হাসান : আবু দাউদ ৩৬৬৭, সহীহ আত তারগীব ৪৬৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

৯৭১. উক্ত রাবী {আনাস [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি ফাজ্‌রের সলাত জামাআতে আদায় করিল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিক্‌র করিতে থাকল, তারপর দু রাক্আত সলাত আদায় করিল, সে একটি পূর্ণ হাজ্জ ও একটি সম্পূর্ণ উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কথাটি তিনবার বলেছেন, সম্পূর্ণ হাজ্জ ও সম্পূর্ণ উমরার সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। {১}

{১} হাসান লিগায়রিহী : তিরমিজি ৫৮৬, সহীহ আত তারগীব ৪৬৪। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই হাদিসের সানাদটি মূলত দুর্বল কিন্তু এর অনেক শাহিদ বর্ণনা থাকায় তা হাসানের স্তরে উন্নীত হয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

অধ্যায়ঃ ১৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৯৭২. আযরাক্ব ইবনি ক্বায়স [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদের ঈমাম, যার উপনাম ছিল আবু রিমসাহ্‌ [রাদি.], তিনি আমাদেরকে সলাত আদায় করালেন। সলাতের শেষে তিনি বললেন, আমি এ সলাত অথবা এ সলাতের মতো সলাত রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর সাথে আদায় করেছি। আবু রিমসাহ্‌ বলেন, আবু বাক্‌র ও উমার [রাদি.] প্রথম কাতারে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ডানপাশে দাঁড়ালেন। এক লোক এসে সলাতের প্রথম তাকবীরে উপস্থিত হলো। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাত আদায় করালেন। অতঃপর তিনি তার ডানে ও বামে সালাম ফিরালেন এমনকি আমরা তাহাঁর দুই গালের শুভ্রতা দেখিতে পেলাম। তারপর তিনি [সাঃআঃ] ফিরলেন, যেভাবে রিমসাহ্‌ ফিরছেন। যে ব্যক্তি প্রথম তাকবীর পেয়েছিল, সে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করিতে লাগল। উমার তার দিকে চড়াও হলেন এবং তার দু কাঁধ ধরে ধাক্কা দিয়ে বললেন, বসে যাও। কারণ আহ্‌লে কিতাবরা ধ্বংস হয়েছে এজন্য যে, তারা দু সলাতের মাঝে কোন পার্থক্য করত না। উমার-এর এ কথা শুনে নবী [সাঃআঃ] চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন, হে খাত্ত্বাবের ছেলে! আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১০০৭, সহীহাহ্ ৩১৭৩, মুজামুল আওসাত্ব ২০৮৮, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৯৯৬। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৭৩. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে, প্রতি সলাতের শেষে সুব্‌হা-নাল্ল-হ তেত্রিশবার, আলহাম্‌দু লিল্লা-হ তেত্রিশবার ও আল্ল-হু আকবার চৌত্রিশবার পাঠ করিতে। একজন আনসারী স্বপ্নে দেখিতে পেল যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি তোমাদেরকে প্রতি সলাত শেষে এতো এতো বার তাসবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন? আনসারী স্বপ্নের মধ্যে বলিল, হ্যাঁ। মালাক [ফেরেশ্‌তা] বললেন, এ তিনটি কালিমাকে পঁচিশবার করে পাঠ করার জন্য নির্ধারিত করিবে। এবং এর সাথে লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ পাঠ করে নিবে। সকালে ঐ আনসারী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তার স্বপ্ন সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করিলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, যা বলা হয়েছে তাই করো। {১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ৩৪১৩, দারিমী ১৩৯৪, আহমাদ ২১৬০০। সালাতের জিকির আজকার -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৯৭৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ মিম্বারের কাঠের উপর বসে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি প্রতি সলাত শেষে আয়াতুল কুরসী পড়বে তাকে মৃত্যু ব্যতীত আর কোন বিষয় জান্নাতে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। আর যে ব্যক্তি ঘুমাবার সময় আয়াতুল কুরসী পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার ঘর, প্রতিবেশীদের ঘর ও তার চারপাশের ঘর-বাড়ীর নিরাপত্তা দিবেন। এ হাদিসটি বায়হাক্বী শুআবুল ঈমান গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেন, এর সূত্র দুর্বল। {১}

{১} মাওযূ : শুআবুল ঈমান ২৩৯৫। কারণ এর সানাদে হাম্মুওয়াহি বিন আল হুসায়ন নামে একজনে দুর্বল এবং নাহশাল নামে একজন মিথ্যুক বর্ণনাকরী রয়েছে যেমনটি ইবনুল জাওযী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস

৯৭৫. আবদুর রহমান ইবনি গানম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাজ্‌র ও মাগরিবের সলাতের শেষে জায়গা হইতে উঠার ও পা ঘুরানোর আগে এ দুআ দশবার পড়েঃ

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ يُحْيِىْ وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্‌দাহু লা- শারীকা লাহ্‌ লাহুল মুল্‌কু ওয়ালাহুল হাম্‌দু বিয়াদিহিল খায়রু, ইউহ্‌য়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াওহুয়া আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর” [অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, তাহাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাহাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাহাঁরই, তাহাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ রয়েছে, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।]। তাহলে প্রতিবারের বিনিময়ে তার জন্য দশ নেকী লিখা হয়। তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। তাকে দশটি মর্যাদার স্তরে উন্নীত করা হয়। আর এ দুআ তাকে সমস্ত অপছন্দনীয় ও বিতাড়িত শয়তান থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। শির্‌ক ছাড়া অন্য কোন গুনাহের কারণে তাকে ধর-পাকড় করা হালাল হবে না। আমালের দিক দিয়ে এ লোক হবে অন্য লোকের চেয়ে উত্তম, তবে সে ব্যক্তি ব্যাতীত যে এর চেয়েও অতি উত্তম আমাল করিবে। {১}

{১} হাসান লিগায়রিহী : আহমাদ ১৭৯৯৯, সহীহ আত তারগীব ৪৭৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

৯৭৬.আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এ বর্ণনাটি ঈমাম তিরমিজি আবু যার [রাদি.]-এর সূত্রে …. “ইল্লাশ্‌ শির্‌কা” পর্যন্ত হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন। সে তার বর্ণনায় <<صَلَاةَ الْمَغْرِبِ>> “সালা-তাল মাগরিব” ও <<بِيَدِهِ الْخَيْرُ>> “বিয়াদিহিল খয়র” শব্দ উল্লেখ করেনি।

[তিনি {তিরমিজি] বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ গরীব।] {১}; {১} হাসান লিগায়রিহী : তিরমিজি ৩৪৭৪, সহীহ আত তারগীব ৪৭২ সুনানুল কুবরা ৯৬৭।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

৯৭৭. উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] এক সৈন্য বাহিনী নাজ্‌দ-এর দিকে প্রেরণ করিলেন। তারা অনেক গানীমাতের মাল প্রাপ্ত হলেন এবং দ্রুত মাদীনায় ফিরে এলেন। আমাদের মাঝে এক লোক যে ঐ বাহিনীর সাথে বের হয়নি, সে বলিল, আমরা এমন কোন বাহিনী দেখিনি এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এত উত্তম গানীমাতের মাল নিয়ে ফেরত আসতে। এটা শুনে নবী [সাঃআঃ] বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি দলের নির্দেশনা দেব না যারা গানীমাতের মালেও দ্রুত ফিরে আসার ব্যাপারে এদের চেয়েও উত্তম? তিনি বললেন, যারা ফাজ্‌রের সলাতে হাজির হয়, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর যিক্‌র করে। এরাই দ্রুত ফিরে আসা ও উত্তম গানীমাতের মাল আনার লোকদের চেয়েও বেশী উত্তম।

[তিরমিজি; তিনি বলেন, হাদিসটি গরীব। আর এর একজন বর্ণনাকারী হাম্মাদ ইবনি আবু হুমায়দ হাদিস শাস্ত্রে দুর্বল।] {১};{১} জইফ : তিরমিজি ৩৫৬১, জইফ আত তারগীব ২৪৭। কারণ এর সানাদে রাবী হাম্মাদ বিন আবী হুমায়দ একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply