সালাতের ওয়াক্ত সমূহ , গুরুত্ব, কাফফারা, বিলম্ব, রাকাত ছুটে গেলে করনীয়
সালাতের ওয়াক্ত সমূহ , গুরুত্ব, কাফফারা, বিলম্ব, রাকাত ছুটে গেলে করনীয় >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৯, সালাতের ওয়াক্ত সমূহ, অধ্যায়ঃ (১-৪১)=৪১টি
৯/১. অধ্যায়ঃ সালাতের সময় ও তার গুরুত্ব।
৯/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “তোমরা আল্লাহ অভিমুখী হও এবং তাঁকে ভয় কর আর সালাত প্রতিষ্ঠা কর, এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না” (সুরা আর-রূম ৩০/৩১)
৯/৩. অধ্যায়ঃ সালাত কায়িমের ব্যাপারে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ।
৯/৪. অধ্যায়ঃ সালাত হল (গুনাহর) কাফফারা।
৯/৫. অধ্যায়ঃ সঠিক সময়ে সালাত আদায়ের মর্যাদা।
৯/৬. অধ্যায়ঃ পাঁচ ওয়াক্তের সালাত (গুনাহসমূহের) কাফফারা
৯/৭. অধ্যায়ঃ নির্ধারিত সময় হইতে দেরিতে সালাত আদায় করে তার হক নষ্ট করা।
৯/৮. অধ্যায়ঃ মুসল্লি সালাতে তার মহান প্রতিপালকের সাথে গোপনে কথোপকথন করে।
৯/৯. অধ্যায়ঃ প্রচন্ড গরমের সময় যুহরের সালাত ঠাণ্ডায় আদায় করা।
৯/১০. অধ্যায়ঃ সফরকালে গরম কমে গেলে যুহরের সালাত আদায়।
৯/১১. অধ্যায়ঃ যুহরের সময় হয় সূর্য ঢলে পড়ার পর।
৯/১২. অধ্যায়ঃ যুহরের সালাত আসরের ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত বিলম্ব করা
৯/১৩. অধ্যায়ঃ আসরের ওয়াক্ত।
৯/১৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তির আসরের সালাত ছুটে গেল তার গুনাহ।
৯/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দিলো তার গুনাহ।
৯/১৬. অধ্যায়ঃ আসরের সালাতের মর্যাদা
৯/১৭. অধ্যায়ঃ সূর্যাস্তের পূর্বে যে ব্যক্তি আসরের এক রাকআত পেল।
৯/১৮. অধ্যায়ঃ মাগরিবের ওয়াক্ত।
৯/১৯. অধ্যায়ঃ মাগরিবকে ইশা বলা যিনি অপছন্দ করেন।
৯/২০. অধ্যায়ঃ ইশা ও আতামাহ-এর বর্ণনা এবং যিনি এতে কোনো আপত্তি করেন না।
৯/২১. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতের সময় লোকজন একত্রিত হয়ে গেলে বা দেরিতে এলে।
৯/২২. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতের মর্যাদা।
৯/২৩. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো অপছন্দনীয়।
৯/২৪. অধ্যায়ঃ ঘুম প্রবল হলে ইশার পূর্বে ঘুমানো।
৯/২৫. অধ্যায়ঃ রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত ইশার সময়।
৯/২৬. অধ্যায়ঃ ফজরের সালাতের মর্যাদা।
৯/২৭. অধ্যায়ঃ ফজরের সময়।
৯/২৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ফজরের এক রাকআত পেল।
৯/২৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সালাতের এক রাকআত পেলো।
৯/৩০. অধ্যায়ঃ ফজরের পর সূর্য উঠার পূর্বে সালাত আদায়।
৯/৩১. অধ্যায়ঃ সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে সালাত আদায়ের উদ্যোগ নিবে না।
৯/৩২ অধ্যায়ঃ যিনি আসরের ও ফজরের পর ছাড়া অন্য সময়ে সালাত আদায় মাকরূহ মনে করে না।
৯/৩৩ অধ্যায়ঃ আসরের পর কাযা বা অনূরুপ কোন সালাত আদায় করা।
৯/৩৪ অধ্যায়ঃ মেঘলা দিনে জলদি সালাত আদায় করা।
৯/৩৫ অধ্যায়ঃ সময় চলে যাওয়ার পর আযান দেয়া।
৯/৩৬ অধ্যায়ঃ সময় চলে যাওয়ার পর লোকদের নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করা।
৯/৩৭ অধ্যায়ঃ কেউ যদি কোন ওয়াক্তের সালাত আদায় করিতে ভুলে যায়, তাহলে যখন স্মরণ হইবে, তখন সে তা আদায় করে নিবে। সে সালাত ব্যতীত অন্য সালাত পুনরায় আদায় করিতে হইবে না।
৯/৩৮ অধ্যায়ঃ একাধিক সালাতের কাযা ক্রমান্বয়ে আদায় করা।
৯/৩৯ অধ্যায়ঃ ইশার সালাতের পর গল্প গুজব করা মাকরূহ।
৯/৪০ অধ্যায়ঃ ইশার পর জ্ঞানচর্চা ও কল্যাণকর বিষয়ের আলোচনা।
৯/৪১ অধ্যায়ঃ পরিবার-পরিজন ও মেহমান সাথে রাতে কথাবার্তা বলা।
৯/১. অধ্যায়ঃ সালাতের সময় ও তার গুরুত্ব।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “ নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের উপর নির্ধারিত ফরয।” আয়াতে ব্যবহৃত মাওকূতান [مَوقُوتًا] শব্দটি মুয়াক্কাতান [مُؤَقَّتًا] এর অর্থে ব্যবহৃত, অর্থ্যাৎ নির্ধারিত সময়ে ফরয – যা আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন।
৫২১.ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একদা কোন এক সালাত আদায়ে বিলম্ব করিলেন। তখন উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর নিকট গেলেন এবং তাহাঁর নিকট বর্ণনা করিলেন যে, ইরাকে অবস্থানকালে মুগিরা ইবনু শুবা (রাদি.) একদা এক সালাত আদায়ে বিলম্ব করছিলেন। ফলে আবু মাসউদ আনসারী (রাদি.) তাহাঁর নিকট গিয়ে বললেনঃ হে মুগিরাহ! একী? তুমি কি অবগত নও যে, জিবরাঈল (আঃ) অবতরণ করে সালাত আদায় করিলেন আর, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও সালাত আদায় করিলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও সালাত আদায় করিলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করিলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও সালাত আদায় করিলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করিলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও সালাত আদায় করিলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করিলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) বলিলেন, আমি এজন্য আদিষ্ট হয়েছি। উমর (ইবনু আবদুল আযীয) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বলিলেন, “তুমি যা রিওয়ায়াত করছ তা একটু ভেবে দেখ। জিবরাঈলই কি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এঁর জন্য সালাতের ওয়াক্ত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন?” উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, বাশির ইবনু আবু মাসউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার পিতা হইতে এমনই বর্ণনা করিতেন।
৫২২. See Previous Hadith
উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
অবশ্য আয়েশা (রাদি.) আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এমন মুহূর্তে আসরের সালাত আদায় করিতেন যে, সূর্যরশ্মি তখনও তাহাঁর হুজরার মধ্যে থাকতো। তবে তা উপরের দিকে উঠে যাওয়ার পূর্বেই।
৯/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “তোমরা আল্লাহ অভিমুখী হও এবং তাঁকে ভয় কর আর সালাত প্রতিষ্ঠা কর, এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না” (সুরা আর-রূম ৩০/৩১)
৫২৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আবদুল কায়স গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এঁর দরবারে এসে বললো, আপনার ও আমাদের মাঝে সে রাবীআ গোত্র থাকায় শাহরে হারাম (নিষিদ্ধ মাসসমুহ) ছাড়া অন্য কোন সময় আমরা আপনার নিকট আসতে পারিনা। কাজেই আপনি আমাদের এমন কিছু নির্দেশ দিন যা আমরা নিজেরাও গ্রহন করবো এবং আমাদের যারা পিছনে রয়ে গেছে তাদের প্রতিও আহবান জানাবো। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের চারটি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি, আর চারটি বিষয় হইতে তোমাদের নিষেধ করছি। নির্দেশিত বিষয়ের মাঝে একটি হল ঈমান বিল্লাহ (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা)। অতঃপর তিনি তাদেরকে ব্যাখ্যা করে বুঝালেন যে, ঈমান বিল্লাহর অর্থ হলো, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই আর আমি আল্লাহর রাসুল; সালাত কায়েম করা, যাকাত দেয়া, আর গনীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ দান করা। আর তোমাদেরকে নিষেধ করছি কদুর পাত্র, সবুজ রঙের মাটির পাত্র, বিশেষ ধরনের তৈলাক্ত পাত্র ও গাছের গুড়ি খোদাই করে তৈরি পাত্র ব্যবেহার করিতে।
৯/৩. অধ্যায়ঃ সালাত কায়িমের ব্যাপারে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ।
৫২৪. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট সালাত আদায়, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলমানকে নসীহত করার বায়আত গ্রহন করেছি।
৯/৪. অধ্যায়ঃ সালাত হল (গুনাহর) কাফফারা।
৫২৫. হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একদা আমরা উমর (রাদি.) এঁর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বলিলেন, ফিতনা-ফাসাদ সম্পর্কে রসূল্লুলাহ (সাঃআঃ) -এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে মনে রেখেছো? হুযাইফা (রাদি.) বলিলেন, যেমনভাবে তিনি বলেছিলেন হুবুহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি। উমর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর বাণী মনে রাখার ব্যাপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছো। আমি বললাম (রসূল্ললাহ (সাঃআঃ) বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফিতনায় পতিত হয়- সালাত, সিয়াম, সদাকা (ন্যায়ের) আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়। উমর (রাদি.) বলিলেন, তা আমার উদ্দেশ্য নয়। বরং আমি সেই ফিতনার কথা বলছি যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হইবে। হুযাইফা (রাদি.) বলিলেন, হে আমিরুল মুমিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোন কারন নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিতনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। উমর (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, সে দরজাটি কি ভেঙ্গে ফেলা হইবে, না খুলে দেয়া হইবে? হুযাইফা (রাদি.) বলিলেন, ভেঙ্গে ফেলা হইবে। উমর (রাদি.) বলিলেন, তাহলে তো আর কোনদিন তা বন্ধ করা যাবে না। [হুযাইফা (রাদি.) এঁর ছাত্র শাক্বীক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,] আমরা জিজ্ঞেস করলাম, উমর (রাদি.) কি সে দরজাটি সমন্ধে জানতেন? হুযাইফা (রাদি.) বলিলেন, হাঁ, দিনের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি নিশ্চিতভাবে তিনি জানতেন। কেননা, আমি তাহাঁর কাছে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছি, যা মোটেও ত্রুটিযুক্ত নয়। (দরজাটি কী) এ বিষয়ে হুযাইফা (রাদি.) এর নিকট জানতে ভয় পাচ্ছিলাম। তাই আমরা মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে বললাম এবং তিনি তাকে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বলিলেন, দরজাটি উমর (রাদি.) নিজেই।
৫২৬. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জনৈক মহিলাকে চুম্বন করে বসে। পরে সে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বিষয়টি তাহাঁর গোচরীভূত করে। তখন আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করেনঃ
أَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ
“দিনের দুপ্রান্তে- সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম অংশে সালাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই ভাল কাজ পাপাচারকে মিটিয়ে দেয়”-(হুদ ১১/১১৪)। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসুল! এ কি শুধু আমার বেলায়? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতের জন্যই।
৯/৫. অধ্যায়ঃ সঠিক সময়ে সালাত আদায়ের মর্যাদা।
৫২৭. আবু আমর শায়বানি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.)-এর বাড়ির দিকে ইংগিত করে বলেন, এ বাড়ির মালিক আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বলিলেন, যথা সময়ে সালাত আদায় করা। ইবনু মাসউদ (রাদি.) পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, অতঃপর কোনটি? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, অতঃপর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ (আল্লাহর পথে জিহাদ)। ইবনু মাসউদ (রাদি.) বলেন, এগুলো তো আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বলেছেনই, যদি আমি আরও অধিক জানতে চাইতাম, তাহলে তিনি আমাকে আরও বলিতেন।
৯/৬. অধ্যায়ঃ পাঁচ ওয়াক্তের সালাত (গুনাহসমূহের) কাফফারা
৫২৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে বলিতে শুনেছেন, “বলতো যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তাহাঁর দেহে কোন ময়লা থাকবে? তারা বলিলেন, তাহাঁর দেহে কোনরূপ ময়লা বাকী থাকবে না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এ হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদহারণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহসমুহ মিটিয়ে দেন।”
৯/৭. অধ্যায়ঃ নির্ধারিত সময় হইতে দেরিতে সালাত আদায় করে তার হক নষ্ট করা।
৫২৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আজকাল কোনো জিনিসই সে অবস্থায় পাই না, যেমন নাবী (সাঃআঃ) -এর যুগে ছিল। প্রশ্ন করা হলো, সালাতও কি? তিনি বলিলেন, সে ক্ষেত্রেও যা হক নষ্ট করার তা-কি তোমরা করনি? [১]
[১] উওম ওয়াক্তে সালাত আদায় না করে দেরী করে আদায় করা। যেমন সময় হয়ে যাওয়ার পরও ফজর, যুহর ও আসরের সালাত ইচ্ছাকৃতভাবে দেরীতে আদায় করা।
৫৩০. যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি দামেশ্কে আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-এর এর নিকট উপস্থিত হলাম, তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে কোন বিষয়টি কাঁদাচ্ছে? তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর যুগে যা কিছু পেয়েছি তার মধ্যে কেবলমাত্র সালাত ছাড়া আর কিছুই বহাল নেই। কিন্তু সালাতকেও নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বক্র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার নিকট মুহাম্মাদ ইবনু বক্র বুরসানি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং উসমান ইবনু আবু রাওওয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন।
৯/৮. অধ্যায়ঃ মুসল্লি সালাতে তার মহান প্রতিপালকের সাথে গোপনে কথোপকথন করে।
৫৩১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে গোপনে কথা বলে। কাজেই, সে যেন ডানদিকে থুথু না ফেলে, তবে (প্রয়োজনে) বাম পায়ের নীচে ফেলতে পারে। তবে সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, সে যেন সামনের দিকে থুথু না ফেলে, কিন্তু বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে পারে। আর শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সে যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে থুথু না ফেলে, কিন্তু বামদিকে অথবা পায়ের তলায় ফেলতে পারে। আর হুমায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন, সে যেন কিবলার দিকে অথবা ডানদিকে থুথু না ফেলে, কিন্তু বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে পারে।
৫৩২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা সিজদায় ইতিদাল বজায় রাখ। তোমাদের কেউ যেন তাহাঁর বাহুদ্বয় কুকুরের মত বিছিয়ে না দেয়। আর যদি থুথু ফেলতে হয়, তাহলে সে যেন সামনে ও ডানে না ফেলে। কেননা সে তখন তার প্রতিপালকের সাথে গোপন কথায় লিপ্ত থাকে।[১]
[১] আঃপ্রঃর বুখারীর টীকায় ৩৯৬ নং হাদীসে সালাতে থুথু ফেলা মানসুখ হয়ে গেছে বললেও ৫০১ নং হাদীসের টীকায় প্রয়োজনে সালাতে বামে পায়ের নীচে থুথু ফেলা জায়িয এ সংক্রান্ত হাদীস এনেছেন এবং সালাত আদায়কালে প্রয়োজনে থুথু ফেলার বৈধতা স্বীকার করিয়াছেন এবং সেটিই সঠিক। আসলে মাযহাবের মতের সাথে সহীহ হাদীসের অমিল হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন প্রকার চিন্তা গবেষনা ছাড়াই “হাদীসটি মানসুখ হয়ে গেছে” এ ধরনের কথা বলা হাদীসের প্রতি অবজ্ঞা ও তথা রসূলের বাণীর প্রতি ধৃষ্টতারই শামিল।
৯/৯. অধ্যায়ঃ প্রচন্ড গরমের সময় যুহরের সালাত ঠাণ্ডায় আদায় করা।
৫৩৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) ও আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন গরমের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত আদায় করিবে। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ।
৫৩৪. See previous Hadith আবু হুরাইরা (রাদি.) ও আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন গরমের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত আদায় করিবে। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ।
৫৩৫. আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ-এর মুআযযিন যুহরের আযান দিলে তিনি বললেনঃ ঠাণ্ডা হইতে দাও, ঠাণ্ডা হইতে দাও। অথবা তিনি বলিলেন, অপেক্ষা কর, অপেক্ষা কর। তিনি আরও বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফলেই সৃষ্টি হয়। কাজেই গরম যখন বেড়ে যায় তখন গরম কমলেই সালাত আদায় করিবে। এমনকি (বিলম্ব করিতে বেলা এতটুকু গড়িয়ে গিয়েছিল যে) আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখিতে পেলাম।
৫৩৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন গরম বেড়ে যাবে তখন তোমরা তা কমে এলে যুহরের সালাত আদায় করো। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ।
৫৩৭. See previous Hadith
বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
জাহান্নাম তার প্রতিপালকের নিকট এ বলে নালিশ করেছিলো, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচন্ডতায়) আমার এক অংশ আর এক অংশকে গ্রাশ করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দুটি হলো, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচন্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচন্ড ঠাণ্ডা অনুভব কর তাই।
৫৩৮. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যুহরের সালাত গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হইতে। সুফিয়ান, ইয়াহইয়া এবং আবু আওয়ানা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
৯/১০. অধ্যায়ঃ সফরকালে গরম কমে গেলে যুহরের সালাত আদায়।
৫৩৯. আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াযযিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াযযিন আযান দিতে চাইলে নাবী (সাঃআঃ) (পুনরায়) বললেনঃ গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এতো বিলম্ব করিলেন যে, আমরা টিলাগুলো ছায়া দেখিতে পেলাম। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হইতে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করো। [*] ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, কুরআনেঃ (আরবী) শব্দটি (আরবী) ঝুঁকে পড়া, গড়িয়ে পড়ার অর্থে ব্যবেহৃত হয়েছে।
* আরবের মরু এলাকায় উত্তপ্ত বালু ও মরু ঝড়ের কারণে সেখানে প্রচন্ড গরম দেখা দিত। তাই কখনও কখনও যূহরের সালাত কিছুটা বিলম্বে আদায় করিতেন। কিন্তু আমাদের দেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ, তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা। তাই এখানে সব সময় আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায়ে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে অতীব গরমের সময় কিছুটা বিলম্ব করে যুহরের সালাত আদায় করাই সুন্নাত। কিন্তু অতীব দুঃখের কথা কি অতি গরম কি ঠাণ্ডা আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মসজিদে আওয়াল ওয়াক্ত বাদ দিয়ে সব সময় ওয়াক্ত হয়ে যাবার অনেক পরে সালাত আদায় করে আওয়াল ওয়াক্তের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন।
৯/১১. অধ্যায়ঃ যুহরের সময় হয় সূর্য ঢলে পড়ার পর।
জাবির (রাদি.) বলেন, দুপুরে নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিতেন।
৫৪০. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা সূর্য ঢলে পড়লে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বেরিয়ে এলেন এবং যুহরের সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর মিম্বারে দাঁড়িয়ে কিয়ামত সম্বন্ধে আলোচনা করেন এবং বলেন যে, ক্বিয়ামাতে বহু ভয়ানক ঘটনা ঘটবে। অতঃপর তিনি বলেন, আমাকে কেউ প্রশ্ন করিতে চাইলে করিতে পারে। আমি যতক্ষন এ বৈঠকে আছি, এর মধ্যে তোমরা আমাকে যা কিছু জিজ্ঞেস করিবে আমি তা জানিয়ে দিবো। এ শুনে লোকেরা খুব কাঁদতে শুরু করলো। আর তিনি বারবার বলিতে থাকলেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর, আমাকে প্রশ্ন কর। এ সময় আব্দুল্লাহ ইবনু হুযাফা সাহমী (রাদি.) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করিলেন, আমার পিতা কে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার পিতা হুযাফা। অতঃপর তিনি অনেকবার বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর। তখন উমর (রাদি.) নতজানু হয়ে বসে বলিলেন, “আমরা আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ (সাঃআঃ) কে নাবী হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণ পর বললেনঃ এক্ষুণি এ দেওয়ালের পাশে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সামনে তুলে ধরা হয়েছিল; এতো উত্তম ও এতো নিকৃষ্টের মত কিছু আমি আর দেখিনি।
৫৪১. আবু বারযাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করিতেন, যখন আমাদের একজন তার পার্শ্ববর্তী অপরজনকে চিনতে পারতো। আর এ সালাতে তিনি ষাট হইতে একশ আয়াত তিলাওয়াত করিতেন এবং যুহরের সালাত আদায় করিতেন যখন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়তো। তিনি আসরের সালাত আদায় করিতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে পৌছে আবার ফিরে আসতে পারতো, তখনও সূর্য সতেজ থাকতো। রাবী বলেন, মাগরীব সম্পর্কে তিনি [আবু বারযা (রাদি.)] কী বলেছিলেন, আমি তা ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে তিনি কোনোরূপ দ্বিধাবোধ করিতেন না। অতঃপর রাবী বলেন, রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে অসুবিধা বোধ করিতেন না। আর মুআজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন যে, শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, পরে আবু মিনহাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছিল, সে সময় তিনি বলেছিলেন, রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করিতে অসুবিধা বোধ করিতেন না।
৫৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – এর পিছনে গরমের সময় সালাত আদায় করতাম, তখন তাপ হইতে রক্ষা পাবার জন্য কাপড়ের উপর সিজদা করতাম।
৯/১২. অধ্যায়ঃ যুহরের সালাত আসরের ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত বিলম্ব করা
৫৪৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মদীনায় অবস্থানকালে (একবার) যুহর ও আসরের আট রাকআত এবং মাগরিব ও ইশার সাত রাকআত একত্রে মিলিত আদায় করেন। আইয়ূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সম্ভবত এটা বৃষ্টির রাতে হয়েছিল। জাবির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, সম্ভবত তাই।[১]
[১] ঝড় বৃষ্টি কিংবা শংকা থাকলে যুহর-আসর এবং মাগরিব-ইশা সালাতকে একসাথে পরপর আদায় করা জায়িজ। সফর অবস্থাতেও যুহর ও আসর ক্বসর করে যুহরের ওয়াক্তে কিংবা আসরের ওয়াক্তে আদায় করা জায়িজ। অনুরূপ অবস্থায় মাগরিবের তিন রাকআত ও পরক্ষণেই ইশার দুরাকআত একসঙ্গে আদায় করা সুন্নাত।
৯/১৩. অধ্যায়ঃ আসরের ওয়াক্ত।
৫৪৪,. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করিতেন যে, তখনো সূর্যরশ্মি ঘরের বাইরে যায়নি।
৫৪৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করেছিলেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো তাহাঁর ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাহাঁর ঘর হইতে বেরিয়ে পড়েনি।
৫৪৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আসরের সালাত আদায় করিতেন, আর সূর্যকিরণ তখনো আমার ঘরে থাকতো। সালাত আদায় করার পরও ছায়া (ঘরে) দৃষ্টিগোচর হতো না। আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, ইমাম মালিক, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, শুআইব ও ইবনু আবু হাফস্ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উক্ত সনদে এ হাদীসটির বর্ণনায়, সূর্যরশ্মি আমার ঘরের ভিতরে থাকতো, ঘরের মেঝেতে ছায়া নেমে আসেনি এমন বলেছেন।
৫৪৭. সায়্যার ইবনু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি ও আমার পিতা আবু বারযা আসলামী (রাদি.)- এর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফারয সালাতসমূহ কীভাবে আদায় করিতেন? তিনি বলিলেন, আল-হাজীর, যাকে তোমরা আল-উলা বা যুহর বলে থাকো, তা তিনি আদায় করিতেন যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়তো। আর আসরের সালাত এমন সময় আদায় করিতেন যে, অতঃপর আমাদের মাদিনার শেষ প্রান্তে তার ঘরে ফিরে যেতো আর সূর্য তখনও সতেজ থাকতো। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কী বলেছিলেন তা আমি ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত যাকে তোমরা আতামা বলে থাকো, তা তিনি বিলম্বে আদায় করা পছন্দ করিতেন। আর তিনি ইশার সালাতের পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করিতেন। তিনি ফজরের সালাত এমন সময় সমাপ্ত করিতেন যখন প্রত্যেকে তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারতো। এ সালাতে তিনি ষাট হইতে একশ আয়াত তিলাওয়াত করিতেন।
৫৪৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সাথে আসরের সালাত আদায় করতাম। সালাতের পর লোকেরা আমর ইনবু আওফ গোত্রের মহল্লায় গিয়ে তাদেরকে সালাত আদায় করা অবস্থায় পেতো। [১]
[১] আঃপ্রঃর ৫১৫ নং হাদীসের টীকায় কি একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তারা আসরের সালাত দেরী করে আদায় করিতেন বলেই আমাদের দেশে আসরের সালাত দেরীতে আদায় করা হয়। অথচ এটা উত্তম সময় ছিল না। কারণ উত্তম সময় হল দুমাইল হাঁটার পূর্বে আদায়কৃত সালাতের সময়। আর আসরের ওয়াক্ত সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বহাল থাকে, তাই বলে তা উত্তম সময় নয়।
৫৪৯. আবু উমামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সঙ্গে যুহরের সালাত আদায় করলাম। অতঃপর সেখান হইতে বেরিয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) এর নিকট গেলাম। আমরা গিয়ে তাঁকে আসরের সালাত আদায়ে রত পেলাম। আমি তাঁকে বললাম চাচা! এ কোন্ সালাত যা আপনি আদায় করিলেন? তিনি বলিলেন, আসরের সালাত আর এ হলো আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সালাত, যা আমি তাহাঁর সাথে আদায় করতাম।
৫৫০. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আসরের সালাত আদায় করিতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকতো। সালাতের পর কোনো গমনকারী আওয়ালীর দিকে রওয়ানা হয়ে তাদের নিকট পৌছে যেতো, আর তখনও সূর্য উপরে থাকতো। আওয়ালীর কোন কোন অংশ ছিল মদীনা হইতে চার মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।
[১] আওয়ালী বা উচু এলাকা। মদীনার উপকন্ঠে নজদের দিকের গ্রামগুলোকে আওয়ালী বা উচু এলাকা ধরা হত। আর তিহামার দিকের গ্রামগুলোকে সাফিলা (سافله) বা নিম্নএলাকা বলা হত।
৫৫১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা, আসরের সালাত আদায় করতাম, অতঃপর আমাদের কোনো গমনকারী কুবার দিকে যেতো এবং সূর্য যথেষ্ট থাকতেই সে তাদের নিকট পৌঁছে যেতো।
৯/১৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তির আসরের সালাত ছুটে গেল তার গুনাহ।
৫৫২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তির আসরের সালাত ছুটে যায়, তাহলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (আরবী পরিভাষায়) (আরবী) বাক্যটি ব্যবেহার করা হয় যখন কেউ কাউকে হত্যা করে অথবা মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়।
৯/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দিলো তার গুনাহ।
৫৫৩. আবু মালীহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা বুরাইদা (রাদি.) এর সঙ্গে ছিলাম। দিনটি ছিলো মেঘলা। তাই বুরাইদাহ (রাদি.) বলেন, শীঘ্র আসরের সালাত আদায় করে নাও। কারণ নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দেয় তার আমাল বিনষ্ট হয়ে যায়।
৯/১৬. অধ্যায়ঃ আসরের সালাতের মর্যাদা
৫৫৪. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখিতে পাবে। তাঁকে দেখিতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হইবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সালাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করিতে পারলে তোমরা তাই করিবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করিলেন, “কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে”- (সুরা ক্বাফ ৫০/৩৯)। ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এর অর্থ হল- এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করিবে যেন কখনো ছুটে না যায়।
৫৫৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মালাকগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। আসর ও ফজরের সালাতে উভয় দল একত্র হন। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায় রেখে আসলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। উত্তরে তাঁরা বলেন, আমরা তাদের সালাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের নিকট গিয়েছিলাম তখনও তারা সালাত আদায়রত অবস্থায় ছিলেন।
৯/১৭. অধ্যায়ঃ সূর্যাস্তের পূর্বে যে ব্যক্তি আসরের এক রাকআত পেল।
৫৫৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে আসরের সালাতের এক সিজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফজরের সালাতের এক সিজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়।
৫৫৭. সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছেন, আগেকার উম্মাতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হলো আসর হইতে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ন্যায়। তাওরাত অনুসারীদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিল। তারা তদনুযায়ী কাজ করিতে লাগলো; যখন দুপুর হলো, তখন তারা অপারগ হয়ে পড়লো। তাদের এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। আর ইনজীল অনুসারীদেরকে ইনজীল দেয়া হলো। তারা আসরের সালাত পর্যন্ত কাজ করে অপারগ হয়ে পড়লো। তাদেরকে এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হলো। অতঃপর আমাদেরকে কুরআন দেয়া হলো। আমরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করলাম। আমাদের দু দু কীরাত করে দেয়া হলো। এতে উভয় কিতাবী সম্প্রদায় বলিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দু দু কীরাত করে দান করিয়াছেন, আর আমাদের দিয়েছেন এক এক কীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশি। আল্লাহ তাআলা বললেনঃ তোমাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আমি কি তোমাদের প্রতি কোনোরূপ যুলুম করেছি? তারা বললো, না। তখন আল্লাহ তাআলা বললেনঃ এ হলো, আমার অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দেই।
৫৫৮. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন; মুসলিম, ইয়াহূদী ও নাসারাদের উদাহরণ হলো এমন, এক ব্যক্তি একদল লোককে নিয়োগ করলো, তারা তার জন্য রাত পর্যন্ত কাজ করিবে। কিন্তু অর্ধদিবস পর্যন্ত কাজ করার পর তারা বললো, আপনার পারিশ্রমিকের আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। সে ব্যক্তি অন্য আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করলো এবং বলিল, তোমরা দিনের বাকী অংশ কাজ কর, তোমরা আমার নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে। তারা কাজ করিতে শুরু করলো। যখন আসরের সালাতের সময় হলো, তখন তারা বললো, আমরা যা কাজ করেছি তা আপনার জন্য রেখে গেলাম। অতঃপর সে ব্যক্তি আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করলো। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের বাকী অংশে কাজ করলো এবং সে দুদলের পূর্ণ পারিশ্রমিক অর্জন করলো।
৯/১৮. অধ্যায়ঃ মাগরিবের ওয়াক্ত।
আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, রুগ্ন ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করিতে পারবে।
৫৫৯. রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ (তীর নিক্ষেপ করলে) নিক্ষিপ্ত তীর পড়ার জায়গা দেখিতে পেতো।
৫৬০. মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাজ্জাজ (ইবনু ইউসুফ) (মদীনায়) এলে আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে সালাতের ওয়াক্ত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম, (কেননা, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ বিলম্ব করে সালাত আদায় করিতেন)। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহরের সালাত প্রচন্ড গরমের সময় আদায় করিতেন। আর আসরের সালাত সূর্য উজ্জ্বল থাকতে আদায় করিতেন, মাগরিবের সালাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ইশার সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করিতেন। যদি দেখিতেন, সকলেই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সকাল সকাল আদায় করিতেন। আর যদি দেখিতেন, লোকজন আসতে দেরী করছে, তাহলে বিলম্বে আদায় করিতেন। আর ফজরের সালাত তাঁরা কিংবা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) অন্ধকার থাকতে আদায় করিতেন।
৫৬১. সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সূর্য পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম।
৫৬২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (মাগরিব ও ইশার) সাত রাকআত ও (যুহর ও আসরের) আট রাকআত একত্রে আদায় করিয়াছেন।
৯/১৯. অধ্যায়ঃ মাগরিবকে ইশা বলা যিনি অপছন্দ করেন।
৫৬৩. আবদুল্লাহ মুযানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বেদুঈনরা মাগরিবের সালাতের নামের ব্যাপারে তোমাদের উপর যেন প্রভাব বিস্তার না করে। রাবী (আবদুল্লাহ মুযানী (রাদি.) বলেন, বেদুঈনরা মাগরিবকে ইশা বলে থাকে।
৯/২০. অধ্যায়ঃ ইশা ও আতামাহ-এর বর্ণনা এবং যিনি এতে কোনো আপত্তি করেন না।
[১] ইশার সালাত দেরী করে আদায় করিয়াছেন এর জন্য (اَخَّرُ الْعَشَاءَ)না বলে (اَعْتَمَ) শব্দটি ব্যবহার করিয়াছেন। যাতে বর্ণনায় ইশা ও আতামা বলার ইঙ্গিত পাওয়া যায় । অর্থাৎ তিনি তার বর্ণনায় ইশা ও আতামা দুটো শব্দই ব্যবহার করিয়াছেন।
[২] শেষ ইশা বলে ইশার সালাতকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা, কোন কোন ক্ষেত্রে মাগরিবকেও ইশা বলা হয়।
আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর সালাত হল ইশা ও ফজর। তিনি আরও বলেছেন যে, তারা যদি জানতো, আতামা (ইশা) ও ফজরে কি কল্যাণ নিহিত আছে। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)বলেন, ইশা শব্দ ব্যবেহার করাই উত্তম। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ “ইশা সালাতের পর”- (সুরা আন-নূর ২৪/৫৮)।
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমরা পালাক্রমে নাবী (সাঃআঃ) -এর এখানে ইশার সালাতের সময় যেতাম। একবার তিনি তা দেরী করে আদায় করেন। ইবনু আব্বাস ও আয়েশা (রাদি.) হইতে (এরূপ) বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) ইশা দেরী করে আদায় করেন। বর্ণনাকারীদের কেউ কেউ বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আতামাহকে দেরী করে আদায় করেন। জাবির (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইশার সালাত আদায় করিলেন। আবু বারযা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইশার সালাত বিলম্বে আদায় করিতেন। আনাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) শেষ ইশা বিলম্বে আদায় করিলেন। ইবনু উমর, আবু আইয়ূব ও ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করেন।
৫৬৪. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে ইশার সালাত আদায় করেন, যে সালাতকে লোকেরা আতামা বলে থাকে। অতঃপর তিনি ফিরে আমাদের দিকে মুখ করে বলিলেন, আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমরা জান কি? এ রাত হইতে নিয়ে একশ বছরের শেষ মাথায় আজ যারা ভূপৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।
৯/২১. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতের সময় লোকজন একত্রিত হয়ে গেলে বা দেরিতে এলে।
৫৬৫. মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে নাবী (সাঃআঃ) -এর সালাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, মধ্যাহ্ন গড়ালেই নাবী (সাঃআঃ) যুহরের সালাত আদায় করিতেন এবং সূর্য সতেজ থাকতে আসর আদায় করিতেন। আর সূর্য পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাবার সাথে সাথে মাগরিব আদায় করিতেন। ইশার সালাতে লোকদের আধিক্য হলেই দ্রুত আদায় করে নিতেন আর সংখ্যায় কম হলে দেরীতে আদায় করিতেন। ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতেই আদায় করিতেন।
৯/২২. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতের মর্যাদা।
৫৬৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইশার সালাত আদায় করিতে বিলম্ব করিলেন। এ হলো ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রসারের পূর্বের কথা। (সালাতের জন্য) তিনি বেরিয়ে আসেননি, এমন কি উমর (রাদি.) বলিলেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং মসজিদের লোকদের লক্ষ্য করে বললেনঃ “তোমরা ব্যতীত যমীনের অধিবাসীদের কেউ ইশার সালাতের জন্য অপেক্ষায় নেই।”
৫৬৭. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ও আমার সাথীরা-যারা (আবিসিনিয়া হইতে) জাহাজ মারফত আমার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন- বাকীয়ে বুতহানের একটা মুক্ত এলাকায় বসবাসরত ছিলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) থাকতেন মদীনায়। বুতহানের অধিবাসীরা পালাক্রমে একদল করে প্রতি রাতে ইশার সালাতের সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর খিদমতে আসতেন। পালাক্রমে ইশার সালাতের সময় আমি ও আমার কতিপয় সঙ্গী নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে হাযির হলাম। তখন তিনি কোনো কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন, ফলে সালাত আদায়ে বিলম্ব করিলেন। এমন কি রাত অর্ধেক হয়ে গেলো। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বেরিয়ে এলেন এবং সবাইকে নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। সালাত শেষে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে যাও। তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি যে, আল্লাহর পক্ষ হইতে তোমাদের জন্য এটি এক নিয়ামত যে, তোমরা ছাড়া মানুষের মধ্যে কেউ এ মুহূর্তে সালাত আদায় করছে না। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তোমরা ছাড়া কোনো উম্মাত এ সময় সালাত আদায় করেনি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কোন্ বাক্যটি বলেছিলেন বর্ণনাকারী তা নিশ্চিত করে বলিতে পারেননি। আবু মূসা (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর এ কথা শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত মনে বাড়ি ফিরলাম।
৯/২৩. অধ্যায়ঃ ইশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো অপছন্দনীয়।
৫৬৮. আবু বারযাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করিতেন।
৯/২৪. অধ্যায়ঃ ঘুম প্রবল হলে ইশার পূর্বে ঘুমানো।
৫৬৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইশার সালাত আদায় করিতে দেরী করিলেন। উমর (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আস্-সালাত। নারী ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ তোমরা ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ এ সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না। (রাবী বলেন) তখন মদীনা ছাড়া অন্য কোথাও সালাত আদায় করা হতো না। (তিনি আরও বলেন যে) পশ্চিম আকাশের শাফাক (পশ্চিম আকাশের লাল কিরণ) অন্তর্হিত হবার পর হইতে রাতের প্রথম এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে তাঁরা ইশা সালাত আদায় করিতেন।
৫৭০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক রাতে কর্মব্যস্ততার কারণে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইশার সালাত আদায়ে দেরী করিলেন, এমন কি আমরা মসজিদে ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর জেগে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর আবার জেগে উঠলাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিকট বেরিয়ে এলেন, অতঃপর বললেনঃ তোমরা ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ এ সালাতের অপেক্ষা করছে না। ঘুম প্রবল হবার কারণে ইশার সালাত বিনষ্ট হবার আশংকা না থাকলে ইবনু উমর (রাদি.) তা আগে ভাগে বা বিলম্ব করে আদায় করিতে দ্বিধা করিতেন না। কখনও কখনও তিনি ইশার পূর্বে নিদ্রাও যেতেন।
৫৭১. See previous Hadithইবনু জুরায়জ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু জুরায়জ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ বিষয়ে আমি আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইশার সালাত আদায় করিতে দেরী করেছিলেন, এমন কি লোকজন একবার ঘুমিয়ে জেগে উঠল, আবার ঘুমিয়ে পড়ে জাগ্রত হলো। তখন উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) উঠে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে বলিলেন, আস-সালাত। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন, অতঃপর আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) বেরিয়ে এলেন- যেন এখনো আমি তাঁকে দেখছি- তাহাঁর মাথা হইতে পানি টপকে পড়ছিলো এবং তাহাঁর হাত মাথার উপর ছিলো। তিনি এসে বললেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হইবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে এভাবে (বিলম্ব করে) ইশার সালাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম। ইবনু জুরায়জ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যে মাথায় হাত রেখেছিলেন তা কীভাবে রেখেছিলেন, বিষয়টি সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করার জন্য আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বললাম। আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁক করিলেন, অতঃপর সেগুলোর অগ্রভাগ সম্মুখ দিক হইতে (চুলের অভ্যন্তরে) প্রবেশ করালেন। অতঃপর অঙ্গুলিগুলো একত্রিত করে মাথার উপর দিয়ে এভাবে টেনে নিলেন যে, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের সে পার্শ্বকে স্পর্শ করে গেলো যা মুখমণ্ডল সংলগ্ন চোয়ালের হাড্ডির উপর শ্মশ্রুর পাশে অবস্থিত। তিনি (নাবী (সাঃআঃ)) চুলের পানি ঝরাতে কিংবা চুল চাপড়াতে এমনই করিতেন। এবং তিনি বলেছিলেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হইবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে এভাবেই (বিলম্ব করে) সালাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম।
৯/২৫. অধ্যায়ঃ রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত ইশার সময়।
আবু বারযা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইশার সালাত দেরীতে আদায় করা পছন্দ করিতেন
৫৭২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একরাতে নাবী (সাঃআঃ) ইশার সালাত অর্ধেক রাত পর্যন্ত বিলম্ব করিলেন। অতঃপর সালাত আদায় করে তিনি বললেনঃ লোকেরা নিশ্চয়ই সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। শোন! তোমরা যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় ছিলে ততক্ষণ তোমরা সালাতেই ছিলে। ইবনু আবু মারইয়াম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর বর্ণনায় আরও আছে, তিনি বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুমায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি (হুমায়দ) আনাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনেছেন, সে রাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর আংটির উজ্জ্বলতা আমি যেন এখনও দেখিতে পাচ্ছি।
৯/২৬. অধ্যায়ঃ ফজরের সালাতের মর্যাদা।
৫৭৩. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক রাতে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলিলেন, শোন! এটি যেমন দেখিতে পাচ্ছো- তোমাদের প্রতিপালককেও তোমরা তেমনি দেখিতে পাবে। তাঁকে দেখিতে তোমরা ভিড়ের সম্মুখীন হইবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য উঠার পূর্বের সালাত ও সূর্য ডুবার পূর্বের সালাত আদায়ে সমর্থ হও, তাহলে তাই কর। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করুন”- (সু-রা ত্ব-হা্ ২০/১৩)। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…. জারীর (রাদি.) হইতে আরো বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে খালি চোখে দেখিতে পাবে।
৫৭৪. আবু বক্র ইবনু আবু মূসা (রাদি.) হইতে তাহাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন; যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আসরের) সালাত আদায় করিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। ইবনু রজা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু জামরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন যে, আবু বক্র ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর নিকট এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
আবদুল্লাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন।
৯/২৭. অধ্যায়ঃ ফজরের সময়।
৫৭৫. যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তাঁরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে সাহারী খেয়েছেন, অতঃপর ফজরের সালাতে দাঁড়িয়েছেন। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ দুয়ের মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিলো? তিনি বলিলেন, পঞ্চাশ বা ষাট আয়াত তিলাওয়াত করা যায়, এরূপ সময়ের ব্যবধান ছিলো।
৫৭৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) ও যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) একসাথে সাহারী খাচ্ছিলেন, যখন তাঁদের খাওয়া হয়ে গেলো- আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) (ফজরের) সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সালাত আদায় করিলেন। কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমরা আনাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তাঁদের সাহারী খাওয়া হইতে অবসর হয়ে সালাত শুরু করার মধ্যে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বলিলেন, একজন লোক পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করিতে পারে এতটুকু সময়।
৫৭৭. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সাহারী খেতাম। খাওয়ার পরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ফজরের সালাত পাওয়ার জন্য আমাকে খুব তাড়াহুড়া করিতে হতো।
৫৭৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন; মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ফজরের জামাআতে হাযির হইতেন। অতঃপর সালাত আদায় করে তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতেন। আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারতো না। [১]
[১]এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের দেশে অধিকাংশ মসজিদে যে সময় ফজরের সালাত আদায় করা হয় তা আদৌ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করা হয় না। কারণ ফজরের সালাত এমন অবস্থায় শেষ করা হয় যে, নিকট হইতে তো দূরের কথা অনেক দূর থেকেও একে অন্যকে চিনতে পারে। শুধু তা-ই নয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, রমযানের দিনগুলোতে যে সময় ফজরের আযান দেয়া হয় তার থেকে রমযান শুরুর পূর্বদিন ও ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তার অনেক পরে আযান দেয়া হয়। অথচ একদিনে সময়ের ব্যবধান এত হইতে পারে না। যদি কেউ নফল সওমের জন্য রমযানের সময়ের বাইরে দেয়া আযান পর্যন্ত সাহারী খেতে থাকেন তাহলে তার সাওম আদৌ হইবে কি? কারণ উক্ত আযানের সময় সাহারীর শেষ সময়ও পার হয়ে যায়। দলিলহীনভাবে এ রকম না করে উচিত ছিল সর্বদা রমযানের ন্যায়ই অন্য সময়ও আযান দেয়া যেন আযানের পূর্ব পর্যন্ত সাহারী খেলে সাহারীর সময় থাকে। শুধু তাই নয় বরং শুধুমাত্র রমযান মাসেই তারা আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের সালাত আদায় করে থাকেন।
৯/২৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ফজরের এক রাকআত পেল।
৫৭৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্য উঠার পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাকআত পায়, সে ফজরের সালাত পেল। আর যে ব্যক্তি সূর্য ডুবার পূর্বে আসরের সালাতের এক রাকআত পেলো সে আসরের সালাত পেলো।
৯/২৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সালাতের এক রাকআত পেলো।
৫৮০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন সালাতের এক রাকআত পায়, সে সালাত পেলো।
৯/৩০. অধ্যায়ঃ ফজরের পর সূর্য উঠার পূর্বে সালাত আদায়।
৫৮১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যক্তি- যাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন উমর (রাদি.) আমাকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
(আ.প্র. ৫৪৭, ই.ফা. ৫৫৪)
৫৮১/১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমার নিকট কয়েক ব্যক্তি এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (মুসলিম ৬/৫১, হাদীস ৮২৬) (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ৫৫৫)
৫৮২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায়ের ইচ্ছা করো না।
৫৮৩. See previous Hadith. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমর (রাদি.) আমাকে আরও বলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি সূর্যের একাংশ প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহলে পূর্ণরূপে উদিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায়ে দেরি করো। আর যদি তার একাংশ ডুবে যায় তাহলে সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায়ে দেরি করো। আবদাহও এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন।
৫৮৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুধরনের বেচা-কেনা করিতে, দুভাবে পোষাক পরিধান করিতে এবং দুসময়ে সালাত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। ফজরের পর সূর্য পূর্ণরূপে উদিত না হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো সালাত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আর পুরো শরীর জড়িয়ে কাপড় পরতে এবং এক কাপড়ে (যেমন লুঙ্গি ইত্যাদি পরে) হাঁটু খাড়া করে এমনভাবে বসতে নিষেধ করিয়াছেন যাতে লজ্জাস্থান উপরের দিকে খুলে যায়। আর মুনাবাযাহ ও মুলামাসাহ (এর পন্থায় বেচা-কেনা) নিষেধ করিয়াছেন।
১. মুনাবাযাঃ বিভিন্ন দরের একাধিক পণ্যদ্রব্য একস্থানে রেখে মূল্য হিসেবে একটি অংক নির্ধারণ করে এ শর্তে বিক্রি করা যে, ক্রেতা নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব থেকে পাথর নিক্ষেপ করে যে পণ্যের গায়ে লাগাতে পারবে, উল্লেখিত মূল্যে তাকে তা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করিতে হইবে। এ পন্থার বেচা-কেনা “মুনাবাযা” বলে অভিহিত।
২. মুলামাসাঃ একাধিক পণ্যের প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্নভাবে মূল্য নির্ধারণ করে এভাবে বিক্রি করা যে, ক্রেতা যেটি স্পর্শ করিবে, পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে তাকে অবশ্যই তা গ্রহণ করিতে হইবে। এ ধরনের বেচাকেনা শরয়ী পরিভাষায় মুলামাসা বলে অভিহিত। যেহেতু এতে পসন্দ অপসন্দের স্বাধীনতা থাকে না, তাই শরীয়াত এ দুটো পন্থাকে নিষিদ্ধ করেছে।
৯/৩১. অধ্যায়ঃ সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে সালাত আদায়ের উদ্যোগ নিবে না।
৫৮৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায়ের উদ্যোগ না নেয়।
৫৮৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ফজরের পর সূর্য উদিত হয়ে (একটু) উপরে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সালাত নেই।
৫৮৭. মুআবিয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তোমরা এমন এক সালাত আদায় করে থাক-রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) –এর সাহচর্য লাভ করা সত্ত্বেও আমরা তাঁকে কখনও তা আদায় করিতে দেখিনি। বরং তিনি তা হইতে নিষেধ করিয়াছেন। অর্থাৎ আসরের পর দুরাকআত।
৫৮৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুসময়ে সালাত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। ফজরের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য ডুবা পর্যন্ত।
৯/৩২ অধ্যায়ঃ যিনি আসরের ও ফজরের পর ছাড়া অন্য সময়ে সালাত আদায় মাকরূহ মনে করে না।
উমর, ইবন উমর, আবু সায়ীদ ও আবু হুরাইরা (রাদি.) এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
৫৮৯. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার সাথীদের যেভাবে সালাত আদায় করিতে দেখেছি সেভাবেই আমি সালাত আদায় করি। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ে সালাতের ইচ্ছা করা ভিন্ন রাতে বা দিনে যে কোন সময়ে কেউ সালাত আদায় করিতে চাইলে আমি নিষেধ করি না।
৯/৩৩ অধ্যায়ঃ আসরের পর কাযা বা অনূরুপ কোন সালাত আদায় করা।
কুরাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উম্মে সালামা (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) আসরের পর দুরাকাআত সালাত আদায় করিলেন এবং বলিলেন, আবদুল কায়স গোত্রের লোকেরা আমাকে যুহরের পরবর্তী দুরাকাআত সালাত আদায় থেকে ব্যস্ত রেখেছিল।
৫৯০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সে মহান সত্তার কসম, যিনি তাকে (নাবী (সাঃআঃ) ) উঠিয়ে নিয়েছেন, আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি দুরাকাত সালাত কখনই ছাড়েননি। আর সালাতে দাঁড়ানো যখন তাহাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি, তখনই তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। তিনি তাহাঁর এ সালাত অধিকাংশ সময়ে বসে বসেই আদায় করিতেন। আয়েশা (রাদি.) এ সালাত দ্বারা আসরের পরবর্তী দুরাকাতের কথা বুঝিয়েছেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ দুরাকাত সালাত আদায় করিতেন, তবে উম্মাতের উপর বোঝা হয়ে পড়ার আশংকায় তা মসজিদে আদায় করিতেন না। কেননা, উম্মতের জন্য যা সহজ হয় তাই তাহাঁর কাম্য ছিল।
৫৯১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হে ভাগ্নে! নাবী (সাঃআঃ) আমার নিকট উপস্থিত থাকার কালে আসরের পরবর্তী দুরাকআত কখনও ছাড়েননি।
৫৯২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, দুরাকাত সালাত আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন অবস্থাতেই ছাড়তেন না। তাহলো ফজরের সালাতের পূর্বের দুরাকাত ও আসরের পরের দুরাকাত।
৫৯৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যে দিনই আসরের পর আমার নিকট আসতেন সে দিনই দুরাকাত সালাত আদায় করিতেন।
৯/৩৪ অধ্যায়ঃ মেঘলা দিনে জলদি সালাত আদায় করা।
৫৯৪. আবু মালীহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক মেঘলা দিনে আমরা বুরাইদা (রাদি.) -এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বলিলেন, শীঘ্র সালাত আদায় করে নাও। কেননা নাবী (সাঃআঃ) বলছেন, যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দেয় তার সমস্ত আমাল বিনষ্ট হয়ে যায়।
৯/৩৫ অধ্যায়ঃ সময় চলে যাওয়ার পর আযান দেয়া।
৫৯৫. আবু কাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ছিলাম। যাত্রী দলের কেউ কেউ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রাতের এ শেষ প্রহরের আমদের নিয়ে যদি একটু বিশ্রাম নিতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার ভয় হচ্ছে সালাতের সময়ও তোমরা ঘুমিয়ে থকবে। বিলাল (রাদি.) বলিলেন, আমি আপনাদের জাগিয়ে দিব। কাজেই সবাই শুয়ে পড়লেন। এ দিকে বিলাল (রাদি.) তার হাওদার গায়ে একটু হেলান দিয়ে বসলেন। এতে তাহাঁর দুচোখ মুদে আসলো। ফলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। সূর্য কেবল উঠতে শুরু করেছে, এমন সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জাগ্রত হলেন এবং বিলাল (রাদি.) -কে ডেকে বলিলেন, হে বিলাল! তোমার কথা গেলো কোথায়? বিলাল (রাদি.) বলিলেন, আমার এতো অধিক ঘুম আর কখনও পায়নি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ তায়ালা যখন ইচ্ছা করিয়াছেন তখন তোমাদের রূহ কবয করে নিয়েছেন; আবার যখন ইচ্ছা করিয়াছেন তখন তা তোমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। হে বিলাল! উঠ, লোকদের জন্য সালাতের আযান দাও। অতঃপর তিনি উযু করিলেন এবং সূর্য যখন উপরে উঠল এবং উজ্জ্বল হলো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং সালাত আদায় করিলেন।
৯/৩৬ অধ্যায়ঃ সময় চলে যাওয়ার পর লোকদের নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করা।
৫৯৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) এসে কুরাইশ গোত্রীয় কাফিরদের ভর্ৎসনা করিতে লাগলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এখনও আসরের সালাত আদায় করিতে পারিনি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায়। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন আল্লাহর শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। অতঃপর আমরা উঠে বুতহানের দিকে গেলাম। সেখানে তিনি সালাত জন্য উযু করিলেন এবং আমরাও উযু করলাম; অতঃপর সূর্য ডুবে গেলে আসরের সালাত আদায় করেন, অতঃপর মাগরিবের সালাত আদায় করেন।
৯/৩৭ অধ্যায়ঃ কেউ যদি কোন ওয়াক্তের সালাত আদায় করিতে ভুলে যায়, তাহলে যখন স্মরণ হইবে, তখন সে তা আদায় করে নিবে। সে সালাত ব্যতীত অন্য সালাত পুনরায় আদায় করিতে হইবে না।
ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কেউ যদি বিশ বছরও এক ওয়াক্তের সালাত ছেড়ে দিয়ে থাকে তা হলে তাকে শুধু সে ওয়াক্তের সালাতই পুনরায় আদায় করিতে হইবে।
৫৯৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি কেউ কোনো সালাতের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হইবে, তখন তাকে তা আদায় করিতে হইবে। এ ব্যতীত সে সালাতের অন্য কোনো কাফফারা নেই। (কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন) “আমাকে স্মরণের উদ্দেশ্যে সালাত কায়িম কর”-(সুরা ত্ব-হা ২০/১৪)
মূসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, আমি তাকে [কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] পরে বলিতে শুনিয়াছি, “আমাকে স্মরণের উদ্দেশ্যে সালাত কায়িম কর”-(সুরা ত্ব-হা ২০/১৪)
হাব্বান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আনাস (রাদি.) -এর সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।
৯/৩৮ অধ্যায়ঃ একাধিক সালাতের কাযা ক্রমান্বয়ে আদায় করা।
৫৯৮. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধকালে এক সময় উমর (রাদি.) কুরাইশ কাফিরদের তিরস্কার করিতে লাগলেন এবং বলিলেন, সূর্যাস্তের পূর্বে আমি আসরের সালাত আদায় করিতে পারিনি, [জাবির (রাদি.) বলেন] অতঃপর আমরা বুতহান উপত্যকায় উপস্থিত হলাম। সেখানে তিনি সূর্যাস্তের পর সে সালাত আদায় করিলেন, তার পরে মাগরিবের সালাত আদায় করিলেন।
৯/৩৯ অধ্যায়ঃ ইশার সালাতের পর গল্প গুজব করা মাকরূহ।
(سَامِرُ) শব্দটি (السَّمْرُ) ধাতূ থেকে নির্গত। এর বহুবচন (السُّمَّارُ) এ আয়াতে (سَامِرُ) শব্দটি বহুবচনরূপে ব্যবহৃত হয়েছে।
৫৯৯. আবু মিনহাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে আবু বারযা আসলামী (রাদি.)-এর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফারয সালাতসমূহ কোন সময় আদায় করিতেন? তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুহরের সালাত যাকে তোমরা প্রথম সালাত বলে থাকো, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করিতেন। আর তিনি আসরের সালাত এমন সময় আদায় করিতেন যে, আমাদের কেউ সূর্য সজীব থাকতেই মদীনার শেষ প্রান্তে নিজ পরিজনের নিকট ফিরে আসতে পারতো। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কী বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। অতঃপর আবু বারযা (রাদি.) বলেন, ইশার সালাত একটু বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পছন্দ করিতেন। আর ইশার পূর্বে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলা তিনি অপছন্দ করিতেন। আর এমন মুহূর্তে তিনি ফজরের সালাত শেষ করিতেন যে, আমাদের যে কেউ তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনত পারত। এ সালাতে তিনি ষাট হইতে একশত আয়াত তিলাওয়াত করিতেন।
৯/৪০ অধ্যায়ঃ ইশার পর জ্ঞানচর্চা ও কল্যাণকর বিষয়ের আলোচনা।
৬০০. কুররা ইবনু খালিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি এতো বিলম্বে আসলেন যে, নিয়মিত সালাত শেষে চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো। এরপর তিনি এসে বলিলেন, আমাদের এ প্রতিবেশীগণ আমাদের ডেকেছিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন, এক রাতে আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর অপেক্ষায় ছিলাম। এমন কি প্রায় অর্ধেক রাত হয়ে গেলো, তখন এসে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর আমাদের সম্বোধন করে তিনি বলিলেন, জেনে রাখ! লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে, তবে তোমরা যতক্ষন সালাতের অপেক্ষায় ছিলে ততক্ষন সালাতেই রত ছিলে। হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মানুষ যতক্ষন কল্যাণের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষন তারা কল্যাণেই রত থাকে। কুররা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ উক্তি আনাস (রাদি.) কর্তৃক বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর হাদীসের অংশ।
৬০১. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) একবার তাহাঁর শেষ জীবনে ইশার সালাত আদায় করে সালাম ফিরবার পর বলিলেন, আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কী? আজ হইতে নিয়ে একশ বছরের মাথায় আজ যারা ভূ-পৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু সাহাবীগণ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর একশ বছরের এ উক্তি সম্পর্কে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা করিতে থাকলেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আজকে যারা জীবিত আছে তাদের কেউ ভূ-পৃষ্ঠে থাকবে না। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ শতাব্দী ঐ যুগের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।
৯/৪১ অধ্যায়ঃ পরিবার-পরিজন ও মেহমান সাথে রাতে কথাবার্তা বলা।
৬০২. আবদুর রহমান ইবনু আবু বক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আসহাবে সুফফা ছিলেন খুবই দরিদ্র। (একদা) নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যার নিকট দুজনের আহার আছে, সে যেন (তাঁদের হইতে) তৃতীয় জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজনকে সঙ্গে নিয়ে যায়। আবু বকর (রাদি.) তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রহমান (রাদি.) বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবু বক্রের ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা (এই তিনজন সদস্য) ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি-না? আবু বকর (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর ঘরেই রাতের আহার করেন, এবং ইশার সালাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সালাতের পর তিনি আবার (রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর ঘরে) ফিরে আসেন এবং নাবী (সাঃআঃ) -এর রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর বাড়ি ফিরলে তাহাঁর স্ত্রী তাকে বলিলেন, মেহমানদের নিকট আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মেহমান হইতে। আবু বক্র (রাদি.) বলিলেন, এখনও তাদের খাবার দাওনি? তিনি বলিলেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাদের সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। আবদুর রহমান (রাদি.) বলেন, (পিতার তিরস্কারের ভয়ে) আমি সরে গিয়ে আত্মগোপন করলাম। তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বলিলেন, ওরে বোকা এবং ভর্ৎসনা করিলেন। আর (মেহমানদের) বলিলেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি এ কখনই খাব না। আবদুর রহমান (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা লোকমা উঠিয়ে নিতেই নীচ হইতে তা অধিক পরিমানে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি খেলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ পূর্বের চেয়ে অধিক খাবার রয়ে গেলো। আবু বকর (রাদি.) খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখিতে পেলেন তা পূর্বের সমপরিমান কিংবা তার চাইতেও বেশী। তিনি তার স্ত্রীকে বলিলেন, হে বানূ ফিরাসের বোন। একি? তিনি বলিলেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন পূর্বের চেয়ে তিনগুন বেশি। আবু বকর (রাদি.)-ও তা হইতে আহার করিলেন এবং বলিলেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ হইতেই হয়েছিল। অতঃপর তিনি আরও লুকমা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নাবী (সাঃআঃ) -এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর কাছেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মাঝে যে সন্ধি ছিলো তার সময়সীমা পূর্ন হয়ে যায়। (এবং তারা মদীনায় আসে) আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই কিছু কিছু লোক ছিলো। তবে প্রত্যেকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য হইতে আহার করেন। (রাবী বলেন) কিংবা আবদুর রহমান (রাদি.) যেভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।
Leave a Reply