সাফা-মারওয়া র মাঝে দৌড়ানো (সাঈ) রুকন

সাফা-মারওয়া র মাঝে দৌড়ানো (সাঈ) রুকন

সাফা-মারওয়া র মাঝে দৌড়ানো [সাঈ] হজ্জের অন্যতম রুকন >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৪৩. অধ্যায়ঃ সাফা-মারওয়ার মাঝে দৌড়ানো [সাঈ] হাজ্জের অন্যতম রুকন, এ ছাড়া হাজ্জ শুদ্ধ হয় না
৪৪. অধ্যায়ঃ সাঈ একাধিবার করিতে হইবে না

৪৩. অধ্যায়ঃ সাফা-মারওয়া র মাঝে দৌড়ানো [সাঈ] হজ্জের অন্যতম রুকন, এ ছাড়া হজ্জ শুদ্ধ হয় না

২৯৬৯. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে তার পিতা সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে বললাম, আমি মনে করি কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়াহ্‌ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ না করলে তার কোন ক্ষতি হইবে না। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন কেন? আমি বললাম, কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ

সাফা-মারওয়াহ্‌ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম ……” – [সুরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৫৮]। তখন আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করলে আল্লাহ তার হজ্জ ও উমরাহ্ পূর্ণ করেন না। তুমি যা বলেছ যদি তাই হতো তবে আয়াতটি এভাবে হতো, “ঐ দুই পাহাড়ের মাঝে না দৌড়ালে কোন অসুবিধা নেই।” তুমি কি জান ব্যাপারটি কী ছিল? ব্যাপার তো ছিল এই যে, আনসারগণ জাহিলী যুগে দুটি প্রতিমার নামে সমুদ্রের তীরে ইহরাম বাঁধত। একটির নাম ইনসাফ, অপরটির নাম নায়িলাহ্। তারা এসে সাফা-মারওয়াহ্ সাঈ করত। অতঃপর মাথা কামাতো। ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা জাহিলী যুগে যা করত, সে কারণে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা খারাপ মনে করিল। তাই আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেন :

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ

“সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম…….।” অতঃপর লোকেরা সাঈ করে। {২২}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৪৩]

{২২} জাহিলী যুগে প্রতিমার নামে সমুদ্রের তীরে ইহরাম বাঁধত।

প্রতিমা দুটি কখনও সমুদ্রের তীরে ছিল না। বলা হয় যে, আসাফ ও নায়িলাহ্ দুজন ব্যক্তি। একজন পুরুষ, অন্যজন মহিলা। তারা ছিল জুরহাস গোত্রের। তারা উভয়ে কাবার অভ্যন্তরে যিনা করে, ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পাথরে পরিণত করে দেন। এ দুটি পাথরকে কাবার নিকটে, আবার বলা হয়েছে সাফা-মারওয়াহ্ পাহাড়ের উপর স্থাপন করা হয়েছে যাতে করে লোকেরা এগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করিতে পারে যে, তাদের পাপের পরিণতি কী দাঁড়িয়েছিল।

২৯৭০. উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে বললাম, আমি যদি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করি তবে এতে আমার জন্য কোন দোষ মনে করি না। তিনি বলিলেন, কেন? আমি বললাম, কেননা মহামহিম আল্লাহ বলেন:

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ

“সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম ….।” তখন আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, তুমি যেরূপ বলছ, যদি তাই হতো, তবে আয়াতের বক্তব্য এরূপ হতো : “এ দুই পাহাড়ের মাঝে না দৌড়ালে কোন দোষ নেই।” এ আয়াত আনসারদের সম্পর্কে নাযিল করা হয়। জাহিলী যুগে তারা যখন লাব্বায়কা বলত- তা মানাৎ দেবীর নামে লাব্বায়কা ধ্বনি করত। তাই তারা মনে করত যে, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা তাদের জন্য ঠিক নয়। তারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে [বিদায়] হাজ্জে এসে তাহাঁর নিকট এ বিষয়ে উল্লেখ করলে আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। অতএব আমার জীবনের শপথ! যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করে- আল্লাহ তার হজ্জ পূর্ণ করবেন না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৪৪]

২৯৭১. উরওয়াহ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহধর্মিণী আয়িশা [রাদি.]-কে বললাম, কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করলে এতে আমি দোষের কিছু দেখি না এবং আমি নিজেও এতদুভয়ের মাঝে সাঈ বর্জন করায় কিছু মনে করি না। আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, হে বোনপুত্র! তুমি যা বলেছ তা মন্দ বলেছ। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [সাফা-মারওয়ার মাঝে] তাওয়াফ [সাঈ] করিয়াছেন এবং মুসলিমরাও তাওয়াফ করেছে। অতএব তা সুন্নাত। যে সব লোক [জাহিলি যুগে] মুশাল্লাল নামক স্থানে অবস্থিত নাফরমান মানাৎ দেবীর নামে ইহরাম বাঁধত, তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করত না। ইসলামের আবির্ভাবের পর আমরা নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেন,

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا‏

“সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কেউ কাবাহ্ ঘরের হজ্জ কিংবা উমরাহ্ পালন করে, এ দুটির মধ্যে প্রদক্ষিণ করলে এতে তার কোন পাপ নেই …..” – [সূরাহ আল বাক্বারাহ্ ২ :১৫৮]। তুমি যা বলেছ, ব্যাপারটি যদি তদ্রূপ হতো তবে বলা হতো, “এ দুটির মধ্যে প্রদক্ষিণ না করলে তার কোন পাপ নেই।”

ঈমাম যুহ্রী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ প্রসঙ্গটি আমি আবু বকর ইবনি আবদুর রহমান ইবনি হারিস ইবনি হিশামের কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি তাতে বিস্মিত হলেন এবং বলিলেন, এর নামই জ্ঞান। তিনি আরও বলিলেন, জ্ঞানবান সমাজের অনেক লোককে বলিতে শুনেছি-সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ বর্জনকারী আরবের অধিবাসীরা বলত, এ দুই পাথরের মাঝে তাওয়াফ করা জাহিলী যুগের কাজ। আর আনসার সম্প্রদায়ের লোকেরা বলত, আমাদেরকে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে ত্বওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেন : “সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।”

আবু বকর ইবনি আবদুর রহমান বলেন, আমিও মনে করি যে, উল্লেখিত দুই সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৪৫]

২৯৭২. উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম …. পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় আছে- তারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিতে গিয়ে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফকে খারাপ করি। তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেন :

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا‏

“সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কেউ বায়তুল্লাহর হজ্জ কিংবা উমরাহ্ পালন করে- এ দুটির মাঝে তাওয়াফ করলে তার কোন দোষ নেই।”

আয়িশা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ করাকে বিধিবদ্ধ করিয়াছেন। অতএব এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ বর্জন করার কারো অধিকার নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৪৬]

২৯৭৩. উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আয়িশা [রাদি.] তাকে অভিহিত করিয়াছেন যে, আনসার সম্প্রদায় ও গাস্সান গোত্রের নিয়ম ছিল, তারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মানাৎ দেবীর জন্য ইহরাম বাঁধত। অতএব তারা সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করাকে পাপ মনে করত। এটা ছিল তাদের পূর্ব-পুরুষদের রীতি যে, তাদের কোন ব্যক্তি মানাৎ দেবীর জন্য ইহরাম বাঁধলে সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করত না। তারা ইসলাম গ্রহনের পর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন এ প্রসঙ্গে মহামহিম আল্লাহ নাযিল করেন :

 إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

“সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব যে কেউ বায়তুল্লাহর হজ্জ অথবা উমরাহ্ পালন করে, এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ করলে তার কোন দোষ নেই এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করলে আল্লাহ পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ” – [সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৫৮]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৪৭]

২৯৭৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আনসারগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফকে খারাপ কাজ মনে করত। অতএব এই সঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয় :

 إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا‏

“সাফা-মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব যে কোন ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ্জ অথবা উমরাহ্ পালন করে এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ করলে, তার কোন দোষ নেই ……।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৫০, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৪৮]

৪৪. অধ্যায়ঃ সাঈ একাধিবার করিতে হইবে না

২৯৭৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবীগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে একবারের অধিক সাঈ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৫১, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৪৯]

২৯৭৬. ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, “একবার মাত্র সাঈ [সাত চক্কর], তা হচ্ছে প্রথমবারের সাঈ।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৫২, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৫০]


Posted

in

by

Comments

One response to “সাফা-মারওয়া র মাঝে দৌড়ানো (সাঈ) রুকন”

Leave a Reply