সাদকার ফজিলত ও মর্যাদা

সাদকার ফজিলত ও মর্যাদা

সাদকার ফজিলত ও মর্যাদা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৬, অধ্যায়ঃ ৬

  • অধ্যায়ঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ

১৮৮৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বৈধভাবে অর্জিত সম্পদ থেকে একটি খেজুর সমান সদাক্বাহ্ করে এবং আল্লাহর তাআলা বৈধ ব্যতীত কোন কিছু কবূল করেন না। তাই বৈধ সম্পদ থেকে সদাক্বাহ্ করলে আল্লাহর তাআলা তা ডান হাতে কবূল করেন। অতঃপর এ সদাক্বাহ্ দানকারীর জন্য এভাবে লালন-পালন করেন যেভাবে তোমরা ঘোড়ার বাছুর লালন-পালন করে থাকো। এমনকি এ সদাক্বাহ্ অথবা এর সওয়াব একসময় পাহাড়ের মতো হয়ে যায়।

[বোখারী, মুসলীম] {১}. {১} সহীহ : বোখারী ১৪১০, মুসলিম ১০১৪, আহমাদ ৮৩৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৪৬, ইরওয়া ৮৮৬, সহীহ আত তারগীব ৮৫৬, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬১৫২, মুয়াত্ত্বা মালিক ২/১। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৮৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দান সদাক্বাহ্ ধন-সম্পদ কমায় না। যে ব্যক্তি কারো অপরাধ ক্ষমা করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে শুধু আল্লাহরই জন্য বিনয় প্রকাশ করে আল্লাহর তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।

[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৫৮৮, আত তিরমিজি ২০২৯, দারিমী ১৭১৮, ইবনি খুযায়মাহ্ ২৪৩৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৯০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৩৩, ইরওয়া ২২০০, সহীহ আত তারগীব ৮৫৮, সহীহ আল জামে আস্ সগীর ৫৮০৯। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ হইতে কোন জিনিস এক জোড়া [দু গুণ] আল্লাহর পথে সন্তষ্টির জন্য সদাক্বাহ্ করিবে, জান্নাতের সবগুলো দরজা দিয়ে তাকে সাদর সম্ভাষণ জানানো হবে। আর জান্নাতের অনেক [আটটি] দরজা আছে। যে ব্যক্তি নামাজ আদায়কারী হবে, তাকে বাবুস্ নামাজ হইতে ডাকা হবে। যে আল্লাহর পথে জিহাদ করিবে, তাকে ডাকা হবে বাবুল জিহাদ হইতে। দান সদাক্বাকারীকে ডাকা হবে বাবুস্ সদাক্বাহ দিয়ে। যে ব্যক্তি সায়িম [রোযাদার] হবে, তাকে বাবুর রাইয়্যান দিয়ে ডাকা হবে। এ কথা শুনে আবু বাকর [রাদি.] জানতে চাইলেন, যে ব্যক্তিকে এসব দরজার কোন একটি দিয়ে ডাকা হবে তাকে কি অন্য সকল দরজা দিয়ে ডাকার প্রয়োজন হবে? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ হ্যাঁ [হবে] আর আমি আশা করি তুমিই তাদেরই একজন হবে।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, 1] সহীহ : বোখারী ১৮৯৭, মুসলিম ১০২৭, আত তিরমিজি ৩৬৭৪, নাসায়ী ২৪৩৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৭০০, আহমাদ ৭৬৩৩, ইবনি হিব্বান ৩০৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৭৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬১০৯। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদিন সহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেলেন, তোমাদের কে আজ সওম রেখেছ? আবু বাকর [রাদি.] বললেন, আমি। তিনি বললেন আজ কে জানাযার সাথে গিয়েছ? আবু বাকর [রাদি.] বললেন, আমি। তিনি বললেন তোমাদের কে আজ কে মিসকিনকে খাবার দিয়েছ? আবু বাকর [রাদি.] জবাবে বললেন, আমি। তিনি বললেন, তোমাদের কে অসুস্থকে দেখিতে গিয়েছ? আবু বাকর [রাদি.] বললেন, আমি। একথা শুনে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেলেনঃ [শুনে রাখো] যে ব্যক্তির মধ্যে এতা গুনের সমাহার, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবেই।

[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১০২৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৩০, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৮৮, সহীহ আত তারগীব ৯৫৩। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হে মুসলিম মহিলারা! তোমরা এক প্রতিবেশী আর এক প্রতিবেশীকে তুহফা দেয়া ছোট করে দেখো না। তা বকরীর খুর হলেও।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ২৫৬৬, মুসলিম ১০৩০, আহমাদ ৭৫৯১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৪৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৯৮৯। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৩. জাবির [রাদি.] ও হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

জাবির ও হুযায়ফাহ্ [রাদি.] একত্রে বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক নেক কাজই সদাক্বাহ্।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৬০২১, মুসলিম ১০০৫, আবু দাউদ ৪৯৪৭, আত তিরমিজি ১৯৭০, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৫৪২৬, আহমাদ ২৩৩৭০, ইবনি হিব্বান ৩৩৭৮, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৫৫৫। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৪. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কোন নেক কাজকে ছোট ভেবো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিখুশী মুখে সাক্ষাৎ করা হয়।

[মুসলিম] {১},{১} সহীহ : মুসলিম ২৬২৬। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৫. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [আল্লাহর নিআমাতের শুকরিয়া হিসাবে] প্রত্যেক মুসলিমেরই সদাক্বাহ্ দেয়া উচিৎ। সাহাবীগণ আরয করিলেন, যদি কারো কাছে সদাক্বাহ্ করার মতো কিছু না থাকে? তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ উচিত হবে কাজ করে নিজ হাতে উপার্জন করা। তাহলে নিজেও উপকৃত হইতে পারবে, আবার দান সদাক্বাও করিতে পারবে। সাহাবীগণ বললেন, যদি সে ব্যক্তি সামর্থ্যবান না হয়; অথবা বলেছেন, নিজ হাতে কাজকর্ম করিতে না পারে? তিনি বললেন, সে যেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পরমুখাপেক্ষী লোকে সাহায্য করে। সাহাবীগণ আরয করিলেন, যদি এটিও সে না করিতে পারে? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাহলে সে যেন ভাল কাজের নির্দেশ দেয়। সাহাবীগণ পুনঃ জানতে চাইলেন, যদি এটিও সে না পারে? তাহলে সে মন্দ কাজ হইতে ফিরে থাকিবে। এটাই তার জন্য সদাক্বাহ্।

[বোখারী, মুসলিম] {১},{১} সহীহ : বোখারী ৬০২২, মুসলিম ১০০৮, নাসায়ী ২৫৩৮, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৬৬৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৮২১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৭৩, সহীহ আত তারগীব ২৬২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪০৩৭। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষের উচিত শরীরের প্রতি জোড়ার জন্য প্রতিদিন সদাক্বাহ্ দেয়া। দু ব্যক্তির মধ্যে ন্যায়বিচার করাও সদাক্বাহ্, কোন ব্যক্তিকে অথবা তার আসবাবপত্র নিজের বাহনে উঠিয়ে নেয়াও সদাক্বাহ্, কারো সাথে ভালো কথা বলা, সলাতের দিকে যাবার প্রতিটি কদম, এসবই এমনকি চলাচলের পথ থেকে কষ্টদায়ক কিছু সরিয়ে দেয়াও সদাক্বাহ্।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ২৯৮৯, মুসলিম ১০০৯, আহমাদ ৮১৮৩, ইবনি হিব্বান ৩৩৮১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১০২৫, সহীহ আত তারগীব ৩০৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৫২৮। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদম সন্তানের প্রত্যেককে তিনশ ষাটটি জোড়া দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অবস্থায় যে ব্যক্তি আল্ল-হু আকবার, আলহামদুলিল্লা-হ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, সুবহা-নাল্ল-হ বলবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করিবে, মানুষের পথ হইতে পাথর, কাঁটা কিংবা হাড্ডি সরিয়ে দেবে অথবা ভাল কাজের হুকুম করিবে, খারাপ কাজে বাধা দেবে, আর এসব কাজ তিনশ ষাটটি জোড়ার সংখ্যা অনুসারে করিবে, সে ব্যক্তি নিজকে সেদিন থেকে জাহান্নাম হইতে বাঁচিয়ে চলতে থাকল।

[মুসলিম] {১},1] সহীহ : মুসলিম ১০০৭, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৬০৫, ইবনি হিব্বান ৩৩৮০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮২২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৭১৭, সহীহ আত তারগীব ১৫৬০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২৩৯১। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক তাসবীহ অর্থাৎ সুবহা-নাল্ল-হ বলা সদাক্বাহ্, প্রত্যেক তাকবীর অর্থাৎ আল্ল-হু আকবার বলা সদাক্বাহ্, প্রত্যেক তাহমীদ বা আলহামদুলিল্ল-হ বলা সদাক্বাহ্। প্রত্যেক তাহলীল বা লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলা সদাক্বাহ্। নেককাজের নির্দেশ দেয়া, খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা সদাক্বাহ্। নিজের স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে সহবাস করাও সদাক্বাহ্। সাহাবীগন আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নিজের কামভাব চরিতার্থ কতে তাতেও কি সে সাওয়াব পাবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমাকে বলো, কোন ব্যক্তি যদি হারাম উপায়ে কামভাব চরিতার্থ করে তাহলে সেকি গুনাহগার হবে না? ঠিক এভাবেই হালাল উপায়ে [স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে] কামভাব চরিতার্থকারী সাওয়াব পাবে।

[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১০০৬, আহমাদ ২১৪৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮২৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৫৪, সহীহ আত তারগীব ১৫৫৬, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২৫৮৮। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রচুর দুধ দানকারী উট, প্রচুর দুধ দানকারী বকরী কাউকে দুধ পান করার জন্য ধার দেয়াও উত্তম সদাক্বাহ্। যা সকাল এবং বিকালে পাত্র ভরে দুধ দেয়।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৫৬০৮, মুসলিম ১০১৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৬২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬৭৭৪। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯০০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিম যে গাছ লাগায় অথবা ফসল ফলায় অতঃপর কোন মানুষ অথবা পশু, পাখী [মালিক-এর বিনানুমতিতে] এর থেকে কিছু খেয়ে ফেলে, তাহলে [এ ক্ষতি] মালিক-এর জন্য সদাক্বাহ্ গন্য হবে

। [বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ২৩২০, মুসলিম ১৫৫২, আত তিরমিজি ১৩৮২, আহমাদ ১২৪৯৫, দারিমী ২৬৫২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৭, সহীহ আত তারগীব ২৫৯৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৬৮। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯০১. মুসলিমের হইতে বর্ণীতঃ

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, যা চুরি হয়ে যায় তাও তার জন্য সদাক্বাহ্। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ১৫৫২, সহীহ আত তারগীব ২৫৯৬।সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯০২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [একবার] একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেয়া হলো। [কারণ] মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখলো সে পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি [এ করুন অবস্থা দেখে] নিজের মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে [কূপ হইতে] পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেয়া হলো। [এ কথা শুনে] সাহাবীগণ আরয করিলেন, পশু-পাখির সাথে ভালো ব্যবহার করার মধ্যেও কি আমাদের জন্য সাওয়াব আছে? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ হ্যাঁ। প্রত্যেকটা প্রাণীর সাথে ভাল ব্যবহার করার মধ্যেও সাওয়াব আছে।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৩৩২১, মুসলিম ২২৪৫, আহমাদ ১০৬২১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৬৬, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪১৬৩। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯০৩. ইবনি উমার [রাদি.] ও আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাঁরা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শুধু একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে ক্ষুধায় কষ্ট দিয়ে হত্যা করার কারণে একজন মহিলেকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। মহিলাটি বিড়ালটিকে না খাবার দিত, না ছেড়ে দিত। বিড়ালটি মাটির নীচের কিছু [ইঁদুর ইত্যাদি] খেত।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ২৩৬৫, মুসলিম ২২৪২, ২২৪৩, আহমাদ ৯৪৮২, ইবনি হিব্বান ৫৪৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০০৭১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৭০, ইরওয়া ২১৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮, সহীহ আত তারগীব ২২৭১, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩৯৯৫। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯০৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [একদিন] এক ব্যক্তি পথচলা অবস্থায় সামনে দেখে একটি গাছের ডাল পথের উপর পড়ে আছে। সে ভাবলো, আমি মুসলিমদের চলার পথ থেকে ডালটিকে সরিয়ে দেব, যাতে তাদের কষ্ট না হয়। এ কারণে এ লোকটিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১৯১৪, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮৬৩। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯০৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম জান্নাতে একটি গাছের নীচে স্বাচ্ছন্দে হাঁটছে। সে এমন একটি গাছ রাস্তার মধ্য থেকে কেটে ফেলে দিয়েছিল যা মানুষকে কষ্ট দিত।

[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১৯১৮, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫১৩৪। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯০৬. আবু বারযাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দান করুন, যাতে আমি [পরকালে] উপকৃত হই। তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ মুসলিমদের চলাচলের পথে কষ্টদায়ক কোন কিছু পেলে তা ফেলে দিবে।

[মুসলিম]{১}, ঈমাম মুসলিম বলেন, আদী ইবনি হাতিম-এর বর্ণনা [জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ] ইনশাআল্লাহ আমি “আলা-মা-তুন্ নুবুওয়্যাহ্” অধ্যায়ে উল্লেখ করব। {১} সহীহ : মুসলিম ২৬১৮, আহমাদ ১৯৭৬৮, সহীহ আত তারগীব ২৯৬৮। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

১৯০৭. আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] মাদীনায় আগমন করার পর আমি তাহাঁর কাছে গেলাম। তাহাঁর চেহারা মুবারাক দেখেই আমি চিনতে পেরেছি এ কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা হইতে পারে না। সর্বপ্রথম তিনি যে কথা বলেছিলেন তা ছিল, “হে লোকেরা! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করো, রাতের বেলা যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকিবে, তখন তাহাজ্জুদের সালাত আদায় কর, তাহলে প্রশান্তচিত্তে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ, দারিমী] {১}, {১} সহীহ : আত তিরমিজি ২৪৮৫, ইবনি মাজাহ ৩২৫১, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৩৫৮৪৭, আহমাদ ২৩৭৮৪, দারিমী ১৪৬০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪২৮৩, সহীহ আত তারগীব ৬১৬। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯০৮. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রহমানের ইবাদাত করো, খাবার দাও, মুসলিমদেরকে সালাম দাও তোমরা সহজে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ] {১}, {১} সহীহ লিগায়রিহী : আত তিরমিজি ১৮৫৫, ইবনি মাজাহ ৩৬৯৪, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৭১, সহীহ আত তারগীব ৯৪৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১৯০৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অবশ্য অবশ্য সদাক্বাহ্ আল্লাহ তাআলার ক্রোধকে ঠান্ডা করে, আর খারাপ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে।

[তিরমিজি] {১},{১} জইফ : আত তিরমিজি ৬৬৪, ইবনি হিব্বান ৩৩০৯, ইরওয়া ৮৮৫, জইফ আত তারগীব ৫১৩, জইফ আল জামি আস্ সগীর ১৪৮৯। কারণ হাসান عَنْعَنَ সূত্রে বর্ণনা করায় একজন মুদ্দালিস রাবী দ্বিতীয়ত আবদুল্লাহ ইবনি ঈসা আল খাযযার একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯১০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি ভাল কাজই সদাক্বাহ‌, আর তোমার নিজের কোন ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং কোন ভাইয়ের পাত্রে নিজের বালতি থেকে পানি ঢেলে দেয়াও ভাল কাজের অন্তর্ভূক্ত।

[আহমাদ, তিরমিজি] {১}, {১} সহীহ লিগায়রিহী : আত তিরমিজি ১৯৭০, আহমাদ ১৪৮৭৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৪২, সহীহ আত তারগীব ২৬৮৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১৯১১. আবু যার গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমার ভাইয়ের সামনে হাসি মুখে আগমন করা সদাক্বাহ্, নেক কাজ নির্দেশ, খারাপ কথাবার্তা হইতে বিরত থাকা তোমার জন্য সদাক্বাহ‌, পথহারা প্রান্তরে কোন মানুষকে পথ বলে দেয়া, কোন অন্ধ বা দুর্বল দৃষ্টিশক্তির মানুষকে সাহায্য করা সদাক্বাহ্, পথের কাঁটা বা হাড় সরিয়ে দেয়া, নিজের বালতি থেকে অন্য কোন ভাইয়ের বালতিতে পানি দিয়ে ভরে দেয়া তোমার জন্য সাদাক্বাহ‌্।

[তিরমিজি; তিনি বলেন, এ হাদিসটি গারীব] {১}, {১} সহীহ : আত তিরমিজি ১৯৫৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৭২, সহীহ আত তারগীব ২৬৮৫, সহীহ আল জামি ২৯০৮। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯১২. সাদ ইবনি উবাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! উম্মু সাদ [অর্থাৎ আমার মা] মৃত্যুবরণ করিয়াছেন, তাহাঁর মাগফিরাতের জন্য কোন ধরনের দান সদাক্বাহ্ উত্তম? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ “পানি”, [এ কথা শুনে] সাদ কূপ খনন করিলেন এবং বললেন, এ কূপ উম্মু সাদ [রাদি.] এর জন্য সদাক্বাহ্।

[আবু দাউদ, নাসায়ী] {১}, {১} হাসান লিগায়রিহী : আবু দাউদ ১৬৮১, নাসায়ী ৩৬৬৪, সহীহ আত তারগীব ৯৬২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

১৯১৩. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে মুসলিম কোন একজন উলঙ্গ মুসলিমকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্বিয়ামাতের দিন জান্নাতের সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। যে মুসলিম কোন ক্ষুধার্ত মুসলিমকে খাবার দেবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের ফল-ফলাদি খাওয়াবেন। আর যে মুসলিম কোন পিপাসার্ত মুসলিমের পিপাসা মেটাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে রাহীকুল মাখতূমেরর পানীয় দিয়ে পরিতৃপ্ত করাবেন।

[আবু দাউদ, তিরমিজি] {১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ১৬৮২, আত তিরমিজি ২৪৪৯, জইফ আত তারগীব ১২৭৯, জইফ আল জামি আস্ সগীর ২২৪৯। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে আবু খালিদ আদ্ দালানী একজন সত্যবাদী রাবী কিন্তু বেশি বেশি ভুল করে এবং তাদলীস করে। তাই সে জইফ রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯১৪. ফাত্বিমাহ্ বিনতু কুবায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই সম্পদে যাকাত ছাড়াও [গরীবের] আরো অন্যান্য হাক্ব প্রতিষ্ঠিত আছে। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করিলেন,

لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ

“তোমরা নিজেদের মুখ পূর্ব দিকে কর কিংবা পশ্চিম দিকে এতে কোন পুণ্য [কল্যাণ] নেই”-[সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২:১৭৭] আয়াতের শেষ পর্যন্ত।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ, দারিমী] {১}, {১} জইফ : আত তিরমিজি ৬৫৯, ইবনি মাজাহ ১৭৮৯, দারিমী ১৬৭৭, দারাকুত্বনী ২০১৬, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৪৩৮৩, জইফ আল জামি আস্ সগীর ১৯০৩। কারণ এর সানাদে আবু হামযা মায়মূন আল আওয়ার একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯১৫. মহিলা সাহাবী বুহায়সাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তাহাঁর পিতা আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কোন জিনিস যা দিতে অস্বীকার করা হালাল নয়? তিনি বললেন, পানি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর নবী! কোন জিনিস দিতে নিষেধ করা হালাল নয়? তিনি বললেন, লবণ। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর নবী! আর কোন জিনিস নিষেধ করা হালাল নয়? নবী [সাঃআঃ] বললেন, সর্বপ্রকার কল্যাণের কাজই তোমার জন্য কল্যাণকর।

[আবু দাউদ] {১}.{১} জইফ : আবু দাউদ ১৬৬৯, আহমাদ ১৫৯৪৫, দারিমী ২৬৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩০, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ২৯৬৪, জইফ আত তারগীব ৫৬৬। কারণ এর সানাদে সাইয়্যার ইবনি মানযূর এবং বুহায়নাহ্ দুজনই মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯১৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন অনাবাদী জমি আবাদ করে [অর্থাৎ ফসল উৎপাদনের উপযোগী করে] তার এ কাজে তার জন্য সাওয়াব আছে। যদি এ জমি ক্ষুধার্ত কিছু খায় তাহলে এটাও তার জন্য সদাক্বাহ।

[নাসায়ী, দারিমী] {১}, {১} সহীহ : আহমাদ ১৫০৮১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫১, দারিমী ২৬০৭; সহীহ আল জামি ৫৯৭৪।সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯১৭. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাউকে একটি দুগ্ধবতী ছাগী দুধ পানের জন্য দিবে অথবা রূপা [অর্থাৎ টাকা-পয়সা] ধার হিসেবে দেবে অথবা পথহারা কোন ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেবে, সে একটি গোলাম স্বাধীন করার মতো সাওয়াব পাবে।

[তিরমিজি] {১}, {১} সহীহ : আত তিরমিজি ১৯৫৭, সহীহ আত তারগীব ৮৯৮। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯১৮. আবু জুরাই জাবির ইবনি সুলায়ম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি একবার মাদীনায় এলাম, দেখলাম লোকেরা এক ব্যক্তির মতামত ও জ্ঞানবুদ্ধির উপর নির্ভরশীল। সে ব্যক্তি যা বলছে, মানুষ সে অনুযায়ী কাজ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলিল, ইনি আল্লাহর রসূল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি [তাহাঁর খিদমাতে হাযির হয়ে] দুবার বললাম, আলায়কাস্ সালা-ম। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ আলায়কাস সালা-ম বলো না। কারণ আলায়কাস সালা-ম হলো মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ। বরং বলো, আসসালা-মু আলায়কা। এরপর আমি বললাম, আপনি কি আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রসূল। ওই আল্লাহর, যিনি কোন বিপদ-আপদে তুমি তাঁকে ডাকলে তিনি তা দূর করে দেন। তুমি যদি দুর্ভিক্ষে পতিত হয়ে তাঁকে ডাকো, তাহলে তিনি জমিনে তোমার জন্য সবুজ ফসল ফলিয়ে দেবেন। তৃণ ও প্রাণহীন কোন মরুপ্রান্তরে অথবা ময়দানে যখন থাকো এবং সেখানে তোমার বাহন হারিয়ে গেলে তুমি তাঁকে ডাকো, তিনি তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবেন। জাবির [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, আমাকে কিছু নসীহাত করুন। তিনি বললেন, কাউকে গালমন্দ করো না। আবু জুরাই বলেন, এরপর আমি আর কাউকে গালমন্দ করিনি-মুক্ত ব্যক্তিকে, গোলামকে, উট এবং বকরী কাউকেই নয়। [এরপর] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ কোন নেক কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যখন তোমার কোন ভাইয়ের সাথে কথাবার্তা বলবে তখন হাসিমুখে বলবে, এটাও নেক কাজের অংশ। তুমি তোমার পাজামা-লুঙ্গী হাঁটুর নীচ পর্যন্ত উঠিয়ে পড়বে। এতটুকু উঁচুতে উঠাতে না চাইলে টাখনুদ্বয়ের উপরে রেখে পড়বে। কাপড় টাখনুর নীচে ছেড়ে দেয়া সম্পর্কে সাবধান, কারণ টাখনুর নীচে কাপড় পড়া অহংকারের লক্ষণ। আল্লাহ তাআলা অহংকার পছন্দ করেন না। কেউ তোমাকে গালি দিলে এবং তোমার এমন কোন দোষের জন্য লজ্জা দিলে যা তোমার মধ্যে আছে বলে সে জানে, তাহলে তুমি [প্রতিশোধ নিতে] তার কোন দোষের জন্য তাকে লজ্জা দেবে না, যা তুমি জানো। কারণ তার গুনাহের ভাগী সে হবে।

[আবু দাউদ; তিরমিজি এ হাদিসটি প্রথমাংশ অর্থাৎ আসসালা-ম পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজির অপর এক বর্ণনায়, “ফায়াকূনু লাকা আজরু যা-লিকা, ওয়া ওয়াবা-লুহূ আলাইহি” {তাহলে এর প্রতিদান তুমি পাবে এবং এর খারাপ পরিণতি তার উপর বর্তাবে] পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ৪০৮৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৯৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১১০৯, সহীহ আত তারগীব ২৬৮৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৩০৯। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯১৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার সাহাবীগণ [অথবা তাহাঁর পরিবারবর্গ] একটি বকরী যবাহ্ করিলেন। [গোশত বন্টনের পর] নবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, এর আর কী বাকী আছে? আয়িশাহ্ [রাদি.] বললেন, একটি বাহু ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ এর ঐ বাহুটি ছাড়া আর সবই বাকী আছে।

[তিরমিজি, তিনি বলেন, এ হাদিসটি সহীহ।] {১}, {১} সহীহ : আত তিরমিজি ২৪৭০, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫৪৪, সহীহ আত তারগীব ৮৫৯। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯২০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি, যে মুসলিম ব্যক্তি অন্য কোন মুসলিম ব্যক্তিকে কাপড় পরাবে, সে আল্লাহ তাআলার হিফাযাতে থাকিবে যতদিন ঐ কাপড়ের একটি টুকরা তাহাঁর পরনে থাকিবে।

[আহমাদ, তিরমিজি] {১}, {১} জইফ : আত তিরমিজি ২৪৮৪, জইফ আত তারগীব ১২৭৮, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫২১৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯২১. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নাম করে বলেন যে, তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালবাসেন- [১] যে রাতে উঠে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, [২] যে ডান হাতে কিছু দান করে এবং গোপন রাখে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মনে করি, তিনি বলেছেন- আপন বাম হাত থেকে [গোপন রাখে] এবং [৩] যে ব্যক্তি সৈন্যদলে থাকাবস্থায় তার সহচরগণ পরাজিত হলেও সে শত্রুর দিকে অগ্রসর হলো [এবং তাদেরকে পরাজিত করিল অথবা শাহীদ হলো]। [তিরমিজি, তিনি একে গায়রে মাহফূয বা শায বলেছেন। এর একজন বর্ণনাকারী আবু বাকর ইবনি আইয়্যাশ বেশ ভুল করিতেন।

{কিন্তু অপর সানাদ অনুসারে এটা সহীহ]] {১}, {১} জইফ : আত তিরমিজি ২৫৬৭, জইফ আল জামি আস্ সগীর ২৬০৯। কারণ এর সানাদে আবু বাকর ইবনি আইয়্যাশ একজন বেশি বেশি ভুলকারী রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯২২. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন প্রকার লোককে আল্লাহ ভালবাসেন। তিন প্রকার লোককে অপছন্দ করেন। আল্লাহ ভালবাসেন, ঐ ব্যক্তিকে যে এক দল লোকের কাছে এসে আল্লাহর দোহাই দিয়ে চাইল, কোন আত্মীয়তা বা নৈকট্যের দোহাই দিলো না। এ দলটি তাকে কিছু না দিয়ে বিমুখ করিল। এরপর এদের মধ্যে এক ব্যক্তি সংগোপনে লোকটিকে কিছু দিলো। আল্লাহ এবং যাকে দান করেছে সে ছাড়া এ দানের কথা আর কেউ জানে না। দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি যে তার দলের সাথে গোটা রাত অতিবাহিত করিল। যখন তাদের সবার কাছে ঘুম প্রিয়তম হলো এবং দলের সকলে ঘুমিয়ে পড়ল। এ সময় ঐ ব্যক্তি দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার কাছে কান্নাকাটি করিল ও কুরআন তিলাওয়াত শুরু করিল। মোকাবেলা হলে তার বাহিনী যখন পরাজিত হল তখন সে ব্যক্তি শত্রুর মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করিল, যতক্ষণ না শাহীদ অথবা বিজয়ী হলো। যে তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ অপছন্দ করেন, [তারা হলো] বৃদ্ধ যিনাকারী, অহংকারী ফকীর এবং অত্যাচারী ধনী।

[তিরমিজি, নাসায়ী] {১}, {১} জইফ : আত তিরমিজি ২৫৬৮, নাসায়ী ২৫৭০, আহমাদ ২১৩৫৫, ইবনি খুযায়মাহ্ ২৪৫৬, ২৫৬৪, ইবনি হিব্বান ৩৩৫০, ৪৭৭১, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৫২০, জইফ আত তারগীব ১১৩৮, জইফ আল জামি আস্ সগীর ২৬১০। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯২৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করার পর তা দুলতে লাগল। তখন পাহাড়গুলো সৃষ্টি করে সেগুলো পৃথিবীর উপর দাঁড় করিয়ে দিলেন। পৃথিবী স্থির হয়ে গেল। পাহাড়ের শক্তি দেখে মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] বিস্মিত হলেন। তারা জিজ্ঞেস করিলেন, হে রাব্বুল আলামীন! আপনার সৃষ্টি জগতে পাহাড়ের চেয়ে শক্তিধর জিনিস আর কী আছে? আল্লাহ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আছে। তা হলো লোহা। মালাকগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে রব! লোহার চেয়ে শক্তিধর কী কিছু আছে? আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, আগুন। মালাকগণ বললেন, পরওয়ারদিগার। আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুনের চেয়েও বেশী শক্তিধর কী? আল্লাহ তাআলা বললেন, পানি। তারপর মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করিলেন, হে পরওয়ারদিগার! সৃষ্টির মধ্যে বাতাসের চেয়েও শক্তিধর কিছু আছে কী? আল্লাহ তাআলা বললেন, হ্যাঁ, আছে। [আর তা হলো] আদাম সন্তানের দান খায়রাত। ডান হাতে দান [এমনভাবে যে] বাম হাত হইতেও গোপন করে থাকে।

[তিরমিজি; তিনি বলেন, এ হাদিসটি গারীব] {১},মুআয-এর হাদিস [আরবী] [অর্থাৎ দান-সদাক্বাহ্ পাপ মিটিয়ে দেয়] কিতাবুল ঈমান-এ উল্লেখ করা হয়েছে। {১} জইফ : আত তিরমিজি ৩৩৬৯, শুআবুল ঈমান ৩১৬৭, জইফ আত তারগীব ৫২৯। কারণ এর সানাদে সুলায়মান ইবনি আবু সুলায়মান একজন প্রায় অপরিচিত রাবী যেমনটি ঈমাম যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

অধ্যায়ঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

১৯২৪. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেনঃ যে মুসলিম বান্দা তার ধন-সম্পদ থেকে দু দুটি [জোড়া] আল্লাহর পথে খরচ করে, জান্নাতের সকল প্রহরী তাকে অভ্যর্থনা জানাবে। তাকে তাদের কাছে রক্ষিত জিনিসের দিকে ডাকবে। আবু যার [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, দু দুটির অর্থ কী? তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ যদি তাহাঁর কাছে উট থাকে তাহলে দু দুটি করে উট আর যদি গরু থাকে, তাহলে দু দুটি করে গরু [দান করিবে]।

[নাসায়ী] {১}, {১} সহীহ : নাসায়ী ৩১৮৫, আহমাদ ২১৩৪১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৬৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৭৪। সাদকার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯২৫. মারসাদ ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর কিছু সাহাবী আমাকে এ হাদিসটি শুনিয়েছেন যে, তাঁরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে এ কথা বলিতে শুনেছেন, “ক্বিয়ামাতের দিন মুমিনের ছায়া হবে তার দান সদাক্বাহ্”।

[আহমাদ] {১}, {১} হাসান : আহমাদ ১৮০৪৩, সহীহ আত তারগীব ৮৭২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৯২৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজের পরিবার পরিজনের জন্য উদারহস্তে খরচ করিবে আল্লাহ তাআলা গোটা বছর উদারহস্তে তাকে দান করিবেন। সুফইয়ান সাওরী বলেন, আমরা এর পরীক্ষা করেছি এবং কথার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি।

[রযীন] {১}, {১} জইফ : রাযীন, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫৮৭৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯২৭. বায়হাক্বী আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ, আবু হুরাইরাহ [রাদি.], আবু সাঈদ ও জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এ হাদিসটিকে ঈমাম বায়হাক্বী আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ, আবু হুরাইরাহ, আবু সাঈদ ও জাবির [রাদি.] হইতে শুআবুল ঈমানে নকল করিয়াছেন। তিনি এটি দুর্বল বলেও আখ্যায়িত করিয়াছেন। {১}

{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ৩৫১৪, ৩৫১৫, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৬৮২৪, কারণ আবু হুরাইরার হাদিসের সানাদে হাজ্জাজ ইবনি নুসায়র-কে ঈমাম যাহাবী জইফ বলেছেন আবার কেউ কেউ মাতরূক বলেছেন। আর মুহাম্মাদ ইবনি যাকওয়ান-কে ঈমাম বোখারী মুনকারুল হাদিস বলেছেন। আবু সাঈদ -এর হাদিসের সানাদে رَجُلٌ একজন অপরিচিত রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯২৮. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু যার [রাদি.] আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বলুন সদাক্বার সাওয়াব কী? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ এর সাওয়াব কয়েক গুণ। বরং আল্লাহর কাছে এর সাওয়াব আরও বেশী। [আহমাদ] {১}

{১} জইফ : আহমাদ ২২২৮৮, জইফ আত তারগীব ৫৩১। কারণ এর সানাদে আলী ইবনি যায়দ একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply