সাদকা প্রদান ডান হাতে প্রকাশ্যে ও গোপনে। ইহা গুনাহ মিটিয়ে দেয়
সাদকা প্রদান ডান হাতে প্রকাশ্যে ও গোপনে। ইহা গুনাহ মিটিয়ে দেয় >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ২৪, যাকাত, অধ্যায়ঃ (৬-৩১)=২৬টি
২৪/৬. অধ্যায়ঃ সাদকা প্রদানে লোক দেখানো
২৪/৭. অধ্যায়ঃ খিয়ানত-এর মাল থেকে সাদকা দিলে তা আল্লাহ কবুল করেন না এবং হালাল উপার্জন হইতে কৃত সাদকাই তিনি কবুল করেন।
২৪/৮. অধ্যায়ঃ হালাল উপার্জন থেকে সাদকা প্রদান করা
২৪/৯. অধ্যায়ঃ ফিরিয়ে দেয়ার পূর্বেই সাদকা করা
২৪/১০. অধ্যায়ঃ তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ, এক টুকরা খেজুর অথবা অল্প কিছু সাদকা করে হলেও।
২৪/১১.১. অধ্যায়ঃ কোন প্রকারের সাদকা (দান-খয়রাত) উত্তম; সুস্থ, কৃপণ কর্তৃক সাদকা প্রদান।
২৪/১১.২. অধ্যায়ঃ
২৪/১২. অধ্যায়ঃ প্রকাশ্যে সাদকা প্রদান করা
২৪/১৩. অধ্যায়ঃ গোপনে সাদকা প্রদান করা
২৪/১৪. অধ্যায়ঃ না জেনে কোন ধনী ব্যক্তিকে সাদকা প্রদান করলে।
২৪/১৫. অধ্যায়ঃ নিজের অজান্তে কেউ তার পুত্রকে সাদকা দিলে।
২৪/১৬. অধ্যায়ঃ ডান হাতে সাদকা প্রদান করা
২৪/১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি স্বহস্তে সাদকা প্রদান না করে খাদেমকে তা দেয়ার নির্দেশ দেয়।
২৪/১৮. অধ্যায়ঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকা ব্যতীত সাদকা নেই।
২৪/১৯. অধ্যায়ঃ কিছু দান করে যে বলে বেড়ায়
২৪/২০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি যথাশীঘ্র সাদকা দেয়া পছন্দ করে।
২৪/২১. অধ্যায়ঃ সাদকা দেয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান ও সুপারিশ করা।
২৪/২২. অধ্যায়ঃ সাধ্যানুসারে সাদকা করা।
২৪/২৩. অধ্যায়ঃ সাদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয়।
২৪/২৪. অধ্যায়ঃ মুশরিক থাকাকালে সাদকা করার পর যে ইসলাম গ্রহণ করে (তার সাদকা কবূল হইবে কি না)
২৪/২৫. অধ্যায়ঃ মালিকের নির্দেশে ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত খাদিমের সাদকা করার প্রতিদান
২৪/২৬. অধ্যায়ঃ ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার স্বামীর গৃহ (সম্পদ) হইতে কিছু সাদকা প্রদান করলে বা আহার করালে স্ত্রী এর প্রতিদান পাবে।
২৪/২৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ অতঃপর যে ব্যক্তি দান করেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে আর ভাল কথাকে সত্য বলে বুঝেছে, তবে আমি তাকে শান্তির উপকরণ প্রদান করব। আর যে ব্যক্তি কার্পণ্য করেছে এবং বেপরোয়া হয়েছে আর ভাল কথাকে অবিশ্বাস করেছে, ফলতঃ আমি তাকে ক্লেশদায়ক বস্তুর জন্য আসবাব প্রদান করব। (আল-লাইলঃ ৫-৯)
২৪/২৮. অধ্যায়ঃ সাদকাকারী ও কৃপণের উপমা।
২৪/২৯. অধ্যায়ঃ উপার্জন করে প্রাপ্ত সম্পদ ও ব্যবসায় লব্ধ মালের সাদকা।
২৪/৩০. অধ্যায়ঃ সাদকা করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। কারো কাছে সাদকা করার মত কিছু না থাকলে সে যেন নেক কাজ করে।
২৪/৩১. অধ্যায়ঃ যাকাত ও সাদকা দানের পরিমাণ কত হইবে এবং যে ব্যক্তি বকরী সাদকা করে।
২৪/৬. অধ্যায়ঃ সাদকা প্রদানে লোক দেখানো
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “হে মুমিনগণ! দানের কথা প্রচার করে এবং ক্লেশ দিয়ে তোমাদের দানকে নিষ্ফল করো না — আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না” – (আল-বাকারাঃ ২৬৪)
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, — অর্থাৎ এমন বস্তু যার উপর কোন কিছুর চিহ্ন নেই। ইকরিমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, — অর্থাৎ ভারী বর্ষণ, — শিশির।
২৪/৭. অধ্যায়ঃ খিয়ানত-এর মাল থেকে সাদকা দিলে তা আল্লাহ কবুল করেন না এবং হালাল উপার্জন হইতে কৃত সাদকাই তিনি কবুল করেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীঃ “যে দানের পেছনে ক্লেশ রয়েছে তদাপেক্ষা ভাল কথা ও ক্ষমা উৎকৃষ্টতর। আল্লাহ মহাসম্পদশালী, পরম সহিষ্ণু।” (আল-বাক্বারাহঃ ২৬৩)
২৪/৮. অধ্যায়ঃ হালাল উপার্জন থেকে সাদকা প্রদান করা
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণীঃ “আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খায়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে পছন্দ করেন না। নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, নেক কাজ করেছে, সালাত কায়িম করেছে এবং যাকাত দিয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের নেই কোন ভয় এবং তারা দুঃখিতও হইবে না।” (আল-বাকারাঃ ২৭৭)
১৪১০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সাদকা করিবে, (আল্লাহ তা কবূল করবেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র মাল কবূল করেন আর আল্লাহ তাহাঁর ডান হাত [৩৪] দিয়ে তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সাদকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়। (আ.প্র. ১৩১৮)
সুলায়মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে হাদীস বর্ণনায় আব্দুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন এবং ওয়ারকা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু দীনার থেকে তিনি সাঈদ বিন ইয়ামার থেকে আবু হুরাইরা (রাদি.)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন এবং মুসলিম ইবনু আবু মারয়াম, যায়দ ইবনু আসলাম ও সুহায়ল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যম আবু হুরাইরা (রাদি.)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে হাদীসটি বর্ণনা করেন।
[৩৪] কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহর হাত আছে, পা আছে। কিন্তু এই হাত পা কেমন সে সম্পর্কে আমরা কোন ধারণাও করিতে পারি না, চিন্তাও করিতে পারি না। সৃষ্টিজগতে তাহাঁর কোন তুলনা নেই। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজের সম্পর্কে বলেছেন, তাহাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই, তিনি সবকিছু শুনেন ও দেখেন।
(সুরা শুরাঃ ১১). কুদরাতি হাত বা কুদরাতি চক্ষু ইত্যাদি অর্থ করা আল্লাহর গুণাবলীর বিকৃতি সাধন করার শামিল।
২৪/৯. অধ্যায়ঃ ফিরিয়ে দেয়ার পূর্বেই সাদকা করা
১৪১১. হারিসা ইবনু অহব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা সাদকা কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সাদকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। (যাকে দাতা দেয়ার ইচ্ছা করিবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোন প্রয়োজন নেই।
১৪১২. আবু হুরাইরা (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হইবে না যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে উপচে না পড়বে, এমনকি সম্পদের মালিকগণ তার সাদকা কে গ্রহণ করিবে তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। যাকেই দান করিতে চাইবে সে-ই বলবে, প্রয়োজন নেই।
১৪১৩. আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে ছিলাম, এমন সময় দুজন সাহাবী আসলেন, তাদের একজন দারিদ্রের অভিযোগ করছিলেন আর অপরজন রাহাজানির অভিযোগ করছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ রাহাজানির অবস্থা এই যে, কিছুদিন পর এমন সময় আসবে যখন কাফিলা মক্কা পর্যন্ত বিনা পাহারায় পৌছে যাবে। আর দারিদ্রের অবস্থা এই যে, তোমাদের কেউ সাদকা নিয়ে ঘোরাফেরা করিবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। এমন সময় না আসা পর্যন্ত ক্বিয়ামত কায়িম হইবে না। অতঃপর (বিচার দিবসে) আল্লাহর নিকট তোমাদের কেউ এমনভাবে খাড়া হইবে যে, তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল থাকবে না বা কোন ব্যাখ্যাকারী দোভাষীও থাকবে না। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমি কি তোমাকে সম্পদ দান করিনি? সে অবশ্যই বলবে, হ্যাঁ, তখন সে ব্যক্তি ডান দিকে তাকিয়ে শুধু আগুন দেখিতে পাবে, তেমনিভাবে বাম দিকে তাকিয়েও আগুন দেখিতে পাবে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের উচিত এক টুকরা খেজুর (সাদকা) দিয়ে হলেও যেন আগুন হইতে আত্মরক্ষা করে। যদি কেউ তা না পায় তবে যেন উত্তম কথা দিয়ে হলেও।
১৪১৪. আবু মূসা (আশআরী) (রাদি.)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মানুষের উপর অবশ্যই এমন এক সময় আসবে যখন লোকেরা সাদকার সোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু একজন গ্রহীতাও পাবে না। পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এবং নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চল্লিশজন নারী একজন পুরুষের অধীনে থাকবে এবং তার আশ্রয় গ্রহণ করিবে।
২৪/১০. অধ্যায়ঃ তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ, এক টুকরা খেজুর অথবা অল্প কিছু সাদকা করে হলেও।
আল্লাহর বাণীঃ “যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে ও নিজেদের মনের দৃঢ়তার জন্যে ধন-সম্পদ ব্যয় করে। (আল-বাকারাঃ ২৬৫)। তাদের উপমা কোন উচ্চভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান…. এবং যাতে সর্বপ্রকার ফলমূল আছে”। (আল-বাকারাঃ ২৬৬)
১৪১৫. আবু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন সাদকার আয়াত নাযিল হলো তখন আমরা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। এক ব্যক্তি এসে প্রচুর মাল সাদকা করলো। তারা (মুনাফিকরা) বলিতে লাগলো, এ ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশে দান করেছে, আর এক ব্যক্তি এসে এক সা পরিমাণ দান করলে তারা বললো, আল্লাহ তো এ ব্যক্তির এক সা হইতে অমুখাপেক্ষী। এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়ঃ
الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ
“মুমিনগণের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় সাদকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না তাদেরকে যারা দোষারোপ করে….”- (আত তাওবাঃ ৭৯)।
১৪১৬. আবু মাসঊদ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদেরকে সাদকা করিতে আদেশ করিলেন তখন আমাদের কেউ বাজারে গিয়ে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করে মুদ [৩৫] পরিমাণ অর্জন করিতে (এবং তা হইতেই সাদকা করত) অথচ আজ তাদের কেউ কেউ লক্ষপতি।
[৩৫] ১ মুদ সমান সিকি সা। অর্থাৎ সাহাবীর পাওয়া পাত্রের হিসাবে ৫১০ গ্রাম।
১৪১৭. আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা জাহান্নাম হইতে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সাদকা করে হলেও।
১৪১৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দুটি শিশু কন্যা সঙ্গে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইলো। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দুভাগ করে কন্যা দুটিকে দিয়ে দিল। এরপর ভিখারিণী বেরিয়ে চলে গেলে নাবী (সাঃআঃ) আমাদের নিকট আসলেন। তাহাঁর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেনঃ যাকে এরূপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরূপ পরীক্ষা করা হয় সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হইতে আড় হয়ে দাঁড়াবে।
২৪/১১.১. অধ্যায়ঃ কোন প্রকারের সাদকা (দান-খয়রাত) উত্তম; সুস্থ, কৃপণ কর্তৃক সাদকা প্রদান।
আল্লাহর বাণীঃ “আর তোমরা তা হইতে ব্যয় করিবে যা আমি তোমাদেরকে রিযক হিসেবে দিয়েছি তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। (আল-মুনাফিকূনঃ ১০)
তাহাঁর আরো বাণীঃ হে মুমিনগণ! আমি যা তোমাদেরকে রিযক হিসেবে দিয়েছি তা হইতে তোমরা ব্যয় কর সে দিন আসার পূর্বে যে দিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না। (আল-বাকারাঃ ২৫৪)
১৪১৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সাহাবী আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর কাছে এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোন সাদকার সওয়াব বেশি পাওয়া যায়? তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার সাদকা করা যখন তুমি দারিদ্রের আশঙ্কা করিবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। সাদকা করিতে এ পর্যন্ত দেরী করিবে না, যখন প্রাণবায়ু কন্ঠাগত হইবে, আর তুমি বলিতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে।
২৪/১১.২. অধ্যায়ঃ
১৪২০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কোন নাবী-সহধর্মিনী নাবী (সাঃআঃ)-কে বললেনঃ আমাদের মধ্য হইতে সবার পূর্বে (মৃত্যুর পর) আপনার সাথে কে মিলিত হইবে? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচেয়ে লম্বা। তাঁরা একটি বাঁশের কাঠির মাধ্যমে হাত মেপে দেখিতে লাগলেন। সওদার হাত সকলের হাতের চেয়ে লম্বা বলে প্রমাণিত হল। পরে [সবার আগে যায়নাব (রাদি.)-এর মৃত্যু হলে] আমরা বুঝলাম হাতের দীর্ঘতার অর্থ দানশীলতা। তিনি [যায়নাব (রাদি.)] আমাদের মধ্যে সবার আগে তাহাঁর ( (সাঃআঃ) ) সাথে মিলিত হন এবং তিনি দান করিতে ভালবাসতেন।
২৪/১২. অধ্যায়ঃ প্রকাশ্যে সাদকা প্রদান করা
আল্লাহর বাণীঃ “যারা ব্যয় করে নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের জন্য রয়েছে, তাদের পুণ্যফল তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের নেই কোন ভয় আর তারা দুঃখিতও হইবে না”। (আল-বাকারাঃ ২৭৪)
২৪/১৩. অধ্যায়ঃ গোপনে সাদকা প্রদান করা
আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি গোপনে সাদকা করলো এমনভাবে যে তার ডান হাত যা ব্যয় করেছে বাম হাত তা জানতে পারেনি। এবং আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান-খায়রাত কর তবে তা কতই না উত্তম; আর যদি তা গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের তা দিয়ে দাও তবে তোমাদের জন্য তা আরও ভাল”। (আল-বাকারাঃ ২৭১)
২৪/১৪. অধ্যায়ঃ না জেনে কোন ধনী ব্যক্তিকে সাদকা প্রদান করলে।
১৪২১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ (পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যে) এক ব্যক্তি বলিল, আমি কিছু সাদকা করব। সাদকা নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা বলাবলি করিতে লাগলো, চোরকে সাদকা দেয়া হয়েছে। এতে সে বললো, হে আল্লাহ! প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই সাদকা করবো। সাদকা নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচারিণীর হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করিতে লাগলো, রাতে এক ব্যভিচারিণীকে সাদকা দেয়া হয়েছে। লোকটি বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সাদকা) ব্যভিচারিণীর হাতে পৌছল। আমি অবশ্যই সাদকা করব। এরপর সে সাদকা নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলিতে লাগল, ধনী ব্যক্তিকে সাদকা দেয়া হয়েছে। লোকটি বলিল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সাদকা) চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়লো। পরে স্বপ্নযোগে তাকে বলা হলো, তোমার সাদকা চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা হইতে বিরত থাকবে, তোমার সাদকা ব্যভিচারিণী পেয়েছে, সম্ভবত সে তার ব্যভিচার হইতে পবিত্র থাকবে আর ধনী ব্যক্তি তোমার সাদকা পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করিবে এবং আল্লাহর দেয়া সম্পদ হইতে সাদকা করিবে।
২৪/১৫. অধ্যায়ঃ নিজের অজান্তে কেউ তার পুত্রকে সাদকা দিলে।
১৪২২. মান ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি, আমার পিতা (ইয়াযীদ) ও আমার দাদা (আখনাস) রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে বায়আত করলাম। তিনি আমার বিবাহের প্রস্তাব করেন এবং আমার বিবাহ সম্পন্ন করে দেন। আমি তাহাঁর কাছে (একটি বিষয়ে) বিচার প্রার্থী হই, একদা আমার পিতা ইয়াযীদ কিছু স্বর্ণমুদ্রা সাদকা করার নিয়্যাতে মসজিদে এক ব্যক্তির নিকট রেখে (তাকে তা বিতরণ করার সাধারণ অনুমতি দিয়ে) আসেন। আমি সে ব্যক্তির নিকট হইতে তা গ্রহণ করে পিতার নিকট আসলাম। তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে দেয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। বিষয়টি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি বলিলেন, হে ইয়াযীদ! তুমি যে নিয়্যাত করেছ, তা তুমি পাবে আর হে মান! তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমারই।
২৪/১৬. অধ্যায়ঃ ডান হাতে সাদকা প্রদান করা
১৪২৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না, সে দিন আল্লাহ তাআলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক। (২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভিতর গড়ে উঠেছে। (৩) যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সাথে থাকে। (৪) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে যে দুব্যক্তি পরষ্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের উপর। (৫) এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহবান জানিয়েছে। তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। (৬) যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সাদকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না। (৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ হইতে অশ্রু বের হয়ে পড়ে।
১৪২৪. হারিসা ইবনু অহব খুযাঈ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা সাদকা কর। কেননা অচিরেই তোমাদের উপর এমন সময় আসবে, যখন মানুষ সাদকার মাল নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, তখন এক ব্যক্তি বলবে, গতকাল নিয়ে এলে অবশ্যই গ্রহণ করতাম কিন্তু আজ এর কোন প্রয়োজন আমার নেই।
২৪/১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি স্বহস্তে সাদকা প্রদান না করে খাদেমকে তা দেয়ার নির্দেশ দেয়।
আবু মূসা (আশআরী) (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, (সাদকার আদেশদাতার ন্যায়) খাদিমও সাদকাকারীদের মধ্যে গণ্য।
১৪২৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন স্ত্রী যদি তার ঘর হইতে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া খাদ্যদ্রব্য সাদকা করে তবে এ জন্যে সে সওয়াব লাভ করিবে আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরূপ সওয়াব পাবে। তাদের একজনের কারণে অন্য জনের সওয়াবে কোন কমতি হইবে না।
২৪/১৮. অধ্যায়ঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকা ব্যতীত সাদকা নেই।
যে ব্যক্তি সাদকা করিতে চায় অথচ সে নিজেই দরিদ্র বা তার পরিবার-পরিজন অভাবগ্রস্ত অথবা সে ঋণগ্রস্ত, এ অবস্থায় তার জন্য সাদকা করা, গোলাম আযাদ করা ও দান করার চেয়ে ঋণ পরিশোধ করা অধিক কর্তব্য। বরং তা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির নিকট প্রত্যাবর্তনশীল লোকের সম্পদ বিনষ্ট করার অধিকার তার নেই। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি বিনষ্ট করার ইচ্ছায় লোকের সম্পদ হস্তগত করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দিবেন। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,] তবে এ ধরনের ব্যক্তি যদি ধৈর্যশীল বলে পরিচিত হয়, তথা নিজের দারিদ্র উপেক্ষা করে অন্যকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়, তাহলে সে সাদকা করিতে পারে। যেমন আবু বক্র (রাদি.)-এর (অমর) কীর্তি, তিনি সমুদয় সম্পদ সাদকা করে দিয়েছিলেন। তেমনিভাবে আনসারী সাহাবীগণ মুহাজির সাহাবীদেরকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) সম্পদ বিনষ্ট করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কাজেই (ঋন পরিশোধ না করে) সাদকা করার বাহানায় অন্যের সম্পদ বিনষ্ট করার কোন অধিকার কারো নেই। কাব ইবনু মালিক (রাদি.) বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আমার সম্পূর্ণ সম্পদ আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের উদ্দেশে সাদকা করিতে চাই, আমি আমার তাওবার অংশ হিসাবে। তিনি বললেনঃ তোমার কিছু মাল নিজের জন্য রেখে দিবে। আর এটাই তোমার জন্য শ্রেয়। আমি বললাম, আমি খায়বারে প্রাপ্ত অংশটুকু রেখে দিবো।
১৪২৬. আবু হুরাইরা (রাদি.)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হইতে সাদকা করা উত্তম। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে, প্রথমে তাদেরকে দিবে।
১৪২৭. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উপরের হাত (দাতার হাত) নীচের হাত (গ্রহীতার হাত) অপেক্ষা উত্তম। প্রথমে তাদেরকে দিবে যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তুমি বহন কর। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হইতে সাদকা করা উত্তম। যে ব্যক্তি (পাপ ও ভিক্ষা করা হইতে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা হইতে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন।
১৪২৮. Read previous Hadith. ওহায়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
১৪২৯. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একদা মিম্বারের উপর থাকা অবস্থায় সাদকা করা ও ভিক্ষা করা হইতে বেঁচে থাকা ও ভিক্ষা করা প্রসঙ্গে উল্লেখ করে বলেনঃ উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, আর নীচের হাত হলো ভিক্ষুকের।
২৪/১৯. অধ্যায়ঃ কিছু দান করে যে বলে বেড়ায়
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণীঃ “(তারাই মুমিন) যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তার কথা বলে বেড়ায় না…”। (আল-বাকারাঃ ২৬২)
২৪/২০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি যথাশীঘ্র সাদকা দেয়া পছন্দ করে।
১৪৩০. উকবাহ ইবনু হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আসরের সালাত আদায় করে দ্রুত ঘরে প্রবেশ করিলেন। অতঃপর বিলম্ব না করে বের হয়ে আসলেন। আমি বললাম বা তাঁকে বলা হলো, এমনটি করার কারণ কী? তখন তিনি বললেনঃ ঘরে সাদকার একখন্ড সোনা রেখে এসেছিলাম কিন্তু রাত পর্যন্ত তা ঘরে থাকা আমি পছন্দ করিনি। কাজেই তা বন্টন করে দিয়ে এলাম।
২৪/২১. অধ্যায়ঃ সাদকা দেয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান ও সুপারিশ করা।
১৪৩১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ঈদের দিন বের হলেন এবং দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন, এর আগে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। এরপর তিনি বিলাল (রাদি.)-কে সাথে নিয়ে মহিলাদের কাছে গেলেন। তাদের উপদেশ দিলেন এবং সাদকা করার নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলাগণ কানের দুল ও হাতের কংকন ছুঁড়ে মারতে লাগলেন।
১৪৩২. আবু মূসা (আশআরী) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট কেউ কিছু চাইলে বা প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়া হলে তিনি বলিতেনঃ তোমরা সুপারিশ কর সওয়াব প্রাপ্ত হইবে, আল্লাহ তাহাঁর ইচ্ছা তাহাঁর নাবীর মুখে চূড়ান্ত করেন।
১৪৩৩. আসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃ তুমি (সম্পদ কমে যাওয়ার আশঙ্কায়) সাদকা দেয়া বন্ধ করিবে না। অন্যথায় তোমার জন্যও আল্লাহ কর্তৃক দান বন্ধ করে দেয়া হইবে।
আবদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত যে, [পূর্বোক্ত সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন] তুমি (সম্পদ) গণনা করে জমা রেখো না, (এরূপ করলে) আল্লাহ তোমার রিযক বন্ধ করে দিবেন।
২৪/২২. অধ্যায়ঃ সাধ্যানুসারে সাদকা করা।
১৪৩৪. আসমা বিনতু আবু বক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি এক সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাঁকে বললেনঃ তুমি সম্পদ জমা করে রেখো না, এরূপ করলে আল্লাহ তোমা হইতে তা আটকে রাখবেন। কাজেই সাধ্যানুসারে দান করিতে থাক।
২৪/২৩. অধ্যায়ঃ সাদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয়।
১৪৩৫. হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে ফিতনা সম্পর্কিত হাদীস মনে রেখেছ? হুযায়ফা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যেভাবে বলেছেন, আমি ঠিক সেভাবেই তা স্মরণ রেখেছি। উমর (রাদি.) বলিলেন, তুমি [আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে] বড় দুঃসাহসী ছিলে, তিনি কিভাবে বলেছেন (বলতো)? তিনি বলেন, আমি বললাম, (হাদীসটি হলোঃ) মানুষ পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী নিয়ে ফিতনায় পতিত হইবে আর সালাত, সাদকা ও নেক কাজ সেই ফিতনা মুছে দিবে। সুলাইমান [অর্থাৎ আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আবু ওয়াইল কোন কোন সময় সালাত, সাদকা ও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করিতে বলিতেন। উমর (রাদি.) বলেন, আমি এ ধরনের ফিতনার কথা অবগত হইতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সাগরের ঢেউয়ের মত প্রবল বেগে ছুটে আসবে। হুযায়ফা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আমীরুল মুমিনীন। আপনার জীবনকালে ঐ ফিতনার কোন ভয় নেই। সেই ফিতনা ও আপনার মাঝে বদ্ধ দরজা রয়েছে। উমর (রাদি.) প্রশ্ন করিলেন, দরজা কি ভেঙ্গে দেয়া হইবে না কি খুলে দেয়া হইবে? হুযাইফা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, না বরং ভেঙ্গে দেয়া হইবে। উমর (রাদি.) বলিলেন, দরজা ভেঙ্গে দেয়া হলে কোন দিন তা আর বন্ধ করা সম্ভব হইবে না। তিনি বলেন, আমি বললাম, সত্যই বলেছেন। আবু ওয়াইল (রাদি.) বলেন, দরজা বলিতে কাকে বোঝানো হয়েছে- এ কথা হুযাইফা (রাদি.)-এর নিকট প্রশ্ন করে জানতে আমরা কেউ সাহসী হলাম না। তাই প্রশ্ন করিতে মাসরূককে অনুরোধ করলাম। মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুযাইফা (রাদি.)-কে প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেনঃ দরজা হলেন উমর (রাদি.)। আমরা বললাম, আপনি দরজা বলে যাকে উদ্দেশ করিয়াছেন, উমর (রাদি.) কি তা অনুধাবন করিতে পেরেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আগামীকালের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত (তেমনি নিঃসন্দেহে তিনি তা উপলব্ধি করিতে পেরেছেন)। এর কারণ হলো, আমি তাঁকে এমন হাদীস বর্ণনা করেছি, যাতে কোন ভুল ছিল না।
২৪/২৪. অধ্যায়ঃ মুশরিক থাকাকালে সাদকা করার পর যে ইসলাম গ্রহণ করে (তার সাদকা কবূল হইবে কি না)
১৪৩৬. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান আনয়নের পূর্বে (সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে) আমি সাদকা প্রদান, দাসমুক্ত করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ন্যায় যত কাজ করেছি, সেগুলোতে সওয়াব হইবে কি? তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি যে সব ভালো কাজ করেছ তা নিয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছ (তুমি সেসব কাজের সওয়াব পাবে)।
২৪/২৫. অধ্যায়ঃ মালিকের নির্দেশে ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত খাদিমের সাদকা করার প্রতিদান
১৪৩৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ স্ত্রী তার স্বামীর খাদ্য সামগ্রী হইতে বিপর্যয়ের উদ্দেশ্য ব্যতীত সাদকা করলে সে সাদকা করার সওয়াব পাবে, উপার্জন করার কারণে স্বামীও এর সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরূপ সওয়াব পাবে।
১৪৩৮. আবু মূসা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চী (আপন মালিক কর্তৃক) নির্দেশিত পরিমাণ সাদকার সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে, কোন কোন সময় তিনি – (বাস্তবায়িত করে) শব্দের স্থলে – (আদায় করে) শব্দ বলেছেন, সে খাজাঞ্চীও নির্দেশদাতার ন্যায় সাদকা দানকারী হিসেবে গণ্য।
২৪/২৬. অধ্যায়ঃ ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার স্বামীর গৃহ (সম্পদ) হইতে কিছু সাদকা প্রদান করলে বা আহার করালে স্ত্রী এর প্রতিদান পাবে।
১৪৩৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, স্ত্রী তার স্বামীর ঘর হইতে কাউকে কিছু সাদকা করলে (স্ত্রী এর সওয়াব পাবে)।
১৪৪০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার স্বামীর গৃহ হইতে কাউকে কিছু আহার করালে স্ত্রী এর সওয়াব পাবে স্বামীও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। স্বামী উপার্জন করার কারণে আর স্ত্রী দান করার কারণে সওয়াব পাবে।
১৪৪১.আয়েশা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার ঘরের খাদ্য সামগ্রী হইতে সাদকা করলে সে এর সওয়াব পাবে। উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
২৪/২৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ অতঃপর যে ব্যক্তি দান করেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে আর ভাল কথাকে সত্য বলে বুঝেছে, তবে আমি তাকে শান্তির উপকরণ প্রদান করব। আর যে ব্যক্তি কার্পণ্য করেছে এবং বেপরোয়া হয়েছে আর ভাল কথাকে অবিশ্বাস করেছে, ফলতঃ আমি তাকে ক্লেশদায়ক বস্তুর জন্য আসবাব প্রদান করব। (আল-লাইলঃ ৫-৯)
হে আল্লাহ তার দানে উত্তম প্রতিদান দিন।
১৪৪২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন,
اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا
হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।
২৪/২৮. অধ্যায়ঃ সাদকাকারী ও কৃপণের উপমা।
১৪৪৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ কৃপণ ও সাদকা দানকারীর দৃষ্টান্ত এমন দুব্যক্তির মত যাদের পরিধানে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে। অপর সনদে আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ….. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, কৃপণ ও সাদকা দানকারীর দৃষ্টান্ত এমন দুব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে যা তাদের বুক হইতে কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত। দাতা ব্যক্তি যখন দান করে তখন বর্মটি তার সম্পূর্ণ দেহ পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যায়। এমনকি হাতের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে ও (পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুলন্ত বর্ম) পদচিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন যৎসামান্যও দান করিতে চায়, তখন যেন বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্থানে সেঁটে যায়, সে তা প্রশস্ত করিতে চেষ্টা করলেও তা প্রশস্ত হয় না।
হাসান ইবনু মুসলিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে – শব্দটির বর্ণনায় ইবনু তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) –এর অনুসরণ করিয়াছেন।
১৪৪৪. তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে – (ঢাল) শব্দের উল্লেখ রয়েছে।
২৪/২৯. অধ্যায়ঃ উপার্জন করে প্রাপ্ত সম্পদ ও ব্যবসায় লব্ধ মালের সাদকা।
এ পর্যায়ে মহান আল্লাহর বাণীঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হইতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই, তন্মধ্যে যা উৎকৃষ্ট, তা ব্যয় কর, তা হইতে নিকৃষ্ট বস্তু দান করার ইচ্ছা কর না। (কেননা) তোমরা নিজেরাও তো ঐরূপ বস্তু (কারো নিকট হইতে) ভ্রুকুঞ্চিত না করে নিতে চাও না এবং জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাসম্পদশালী, প্রশংসিত”।
(আল-বাকারাঃ ২৬৭)
২৪/৩০. অধ্যায়ঃ সাদকা করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। কারো কাছে সাদকা করার মত কিছু না থাকলে সে যেন নেক কাজ করে।
১৪৪৫. আবু মূসা আশআরী (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ প্রতিটি মুসলিমের সাদকা করা উচিত। সাহাবীগণ আরয করিলেন, কেউ যদি সাদকা দেয়ার মত কিছু না পায়? (তিনি উত্তরে) বললেনঃ সে ব্যক্তি নিজ হাতে কাজ করিবে এতে নিজেও লাভবান হইবে, সাদকাও করিতে পারবে। তাঁরা বলিলেন, যদি এরও ক্ষমতা না থাকে? তিনি বললেনঃ কোন বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করিবে। তাঁরা বলিলেন, যদি এতটুকুরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি বললেনঃ এ অবস্থায় সে যেন সৎ আমল করে এবং অন্যায় কাজ হইতে বিরত থাকে। এটা তার জন্য সাদকা বলে গণ্য হইবে।
২৪/৩১. অধ্যায়ঃ যাকাত ও সাদকা দানের পরিমাণ কত হইবে এবং যে ব্যক্তি বকরী সাদকা করে।
১৪৪৬. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নুসায়বা নাম্নী আনসারী মহিলার জন্য একটি বকরী (সাদকা স্বরূপ) পাঠানো হলো। তিনি বকরীর কিছু অংশ আয়েশা (রাদি.) কে (হাদিয়া [৩৬] স্বরূপ) পাঠিয়ে দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদের কাছে (আহার্য) কিছু আছে কি? আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, নুসায়বা কর্তৃক প্রেরিত সেই বকরীর গোশত ব্যতীত আর কিছুই নেই। তখন তিনি বললেনঃ তাই নিয়ে এসো, কেননা বকরীর (সাদকা) যথাস্থানে পৌঁছে গেছে (সাদকা গ্রহীতার নিকট)।
[৩৬] সে ব্যক্তি সাদকা-যাকাতের কোন দ্রব্য পেয়েছে সে তা থেকে যে কোন লোককে হাদিয়া (উপঢৌকন) দিলে তা গ্রহণ করা জায়িয হইবে।
Leave a Reply