সাক্ষাৎকালীন আদব। সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করা- রি.সা.

সাক্ষাৎকালীন আদব। সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করা- রি.সা.

সাক্ষাৎকালীন আদব। সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করা- রি.সা. >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

পরিচ্ছেদ – ১৪৩: সাক্ষাৎকালীন আদব

সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করা, হাসিমুখ হওয়া, সৎ ব্যক্তির হাত চুমা, নিজ সন্তানকে স্নেহভরে চুমা দেওয়া, সফর থেকে আগত ব্যক্তির সাথে মু‘আনাকা [কোলাকুলি] করা মুস্তাহাব। আর [কারোর সম্মানার্থে] সামনে মাথা নত করা মাকরূহ।

1/890 عَن أَبي الخَطَّابِ قَتَادَةَ، قَالَ: قُلْتُ ِلأَنَسٍ: أكَانَتِ المُصَافَحَةُ فِي أصْحَابِ رَسُولِ اللهِ ﷺ ؟ قَالَ: نَعَمْ . رواه البخاري

 ১/৮৯০। আবূল খাত্ত্বাব ক্বাতাদাহ রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আনাস রাঃআঃ-কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাহাবীদের মধ্যে কি মুসাফাহা [করমর্দন] করার প্রথা ছিল?’ তিনি বলিলেন, ‘হ্যাঁ।’ [বুখারী] [1]

2/891 وَعَنْ أَنَسٍ  رضي الله عنه، قَالَ: لَمَّا جَاءَ أهْلُ اليَمَنِ، قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « قَدْ جَاءَكُمْ أهْلُ اليَمَنِ ». وَهُمْ أوَّلُ مَنْ جَاءَ بِالمُصَافَحَةِ. رواه أَبُو داود بإسناد صحيح

 ২/৮৯১। আনাস রাঃআঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন ইয়ামানবাসীরা আগমন করল, তখন রসূল সাঃআঃ বলে উঠলেন, ‘‘ইয়ামানবাসীরা তোমাদের নিকট আগমন করেছে।’’ [আনাস বলেন,] এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা আনয়ন করেছিল। [আবূ দাউদ-বিশুদ্ধ সূত্রে][2]

3/892 وَعَنْ البَرَاءِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَا مِنْ مُسْلِمَينِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا ». رواه أَبُو داود

৩/৮৯২। বারা’ রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘দু’জন মুসলিম সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করলেই একে অপর থেকে পৃথক হবার পূর্বেই তাহাদের [গুনাহ] মাফ করে দেওয়া হয়।’’ [আবূ দাউদ] [3]

4/893 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أخَاهُ، أَوْ صَدِيقَهُ، أَيَنحَنِي لَهُ؟ قَالَ: « لاَ » . قَالَ: أفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ ؟ قَالَ: « لاَ » قَالَ: فَيَأخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ ؟ قَالَ: « نَعَمْ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »

৪/৮৯৩। আনাস রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটা লোক বলিল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্য থেকে কোন লোক তার ভাইয়ের সাথে কিংবা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার সামনে কি মাথা নত করিবে?’ তিনি বলিলেন, ‘‘না।’’ সে বলিল, ‘তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দেবে?’ তিনি বলিলেন, ‘‘না।’’ সে বলিল, ‘তাহলে কি তার হাত ধরে তার সঙ্গে মুসাফাহা করিবে?’ তিনি বলিলেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ [তিরমিযী-হাসান] [4] 

5/894 وعن صَفْوان بن عَسَّال رضي الله عنه قال: قال يَهُودي لِصَاحبه اذْهب بنا إلى هذا النبي فأتيا رسول الله ﷺ فَسَألاه عن تسْع آيات بَينات فَذَكرَ الْحَديث إلى قَوْله: فقَبَّلا يَدَهُ وَرِجْلَهُ وقالا: نَشْهَدُ أنَّكَ نبي . رواه الترمذي وغيره بأسانيد صحيحة.

৫/৮৯৪। সাফওয়ান ইবনু আসসাল রাঃআঃ হতে বর্ণিত, এক ইয়াহূদী তার সাথীকে বললঃ এসো আমরা এই নাবীর নিকট যাই। ফলে তারা দু’জন রাসূলুল্লাহ রাঃআঃ-এর নিকট এল এবং তাঁকে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করল। হাদীসের বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন যে, তারপর তারা দু’জন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর হাতে ও পায়ে চুমা দিল এবং বলিল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি নিঃসন্দেহে আপনি নাবী। এ হাদীস ইমাম তিরমিযী প্রমুখ সহীহ সানাদ সহকারে বর্ণনা করিয়াছেন। [তিরমিযী ও অন্যরা সহীহ সনদে][5]

6/895 وعن ابن عمر رضي الله عنهما قصة قال فيها: فَدَنَوْنا من النبي ﷺ فقَّبلْنا يده . رواه أبو داود.

৬/৮৯৫। ইবনু উমার রাঃআঃ হতে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি তাতে বলেছেন, অতঃপর আমরা নাবী সাঃআঃ এর নিকট গেলাম এবং তাহাঁর হাতে চুম্বন দিলাম। হাদীসটি আবূ দাউদ বর্ণনা করিয়াছেন। যঈফ। [এ নম্বরের হাদীসটি দুর্বল।][6]

7/896 وعن عائشة رضي الله عنها قالت: قَدم: زَيْدُ بُن حَارثة المدينة ورسول الله  ﷺفي بَيْتي فأتَاهُ فَقَرَعَ الباب. فَقَام إليهْ النبي ﷺ يَجُرُّ ثوْبَهُ فاعتنقه وقبله » رواه الترمذي وقال: حديث حسن .

৭/৮৯৬। আয়িশাহ রাঃআঃ হতে বর্ণিত, যাইদ ইবনু হারিসা রাঃআঃ মদীনায় এলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার ঘরে ছিলেন। যাইদ [দেখা করার জন্য] তাহাঁর কাছে এলেন এবং দরজায় টোকা মারলেন। নিজের কাপড় টানতে টানতে উঠে গিয়ে নাবী রাঃআঃ তার সাথে কোলাকুলি করিলেন এবং তাকে চুমা দিলেন। [তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন][7]

8/897 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُول اللهِ ﷺ: « لاَ تَحقِرَنَّ مِنَ الْمَعرُوف شَيْئاً، وَلَوْ أنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ». رواه مسلم

৮/৮৯৭। আবূ যার্র রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে বলিলেন, ‘‘কোন পুণ্য কাজকে তুমি অবশ্যই তুচ্ছ মনে করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে সাক্ষাৎ করার পুণ্যই হোক না কেন।’’ [মুসলিম] [8]

9/898 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَبَّلَ النَّبِيُّ ﷺ الحَسَنَ بنَ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، فَقَالَ الأقْرَعُ بنُ حَابِسٍ: إنَّ لِي عَشْرَةً مِنَ الْوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدَاً . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ لاَ يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ ! ». متفقٌ عَلَيْهِ

 ৯/৮৯৮। আবূ হুরাইরা রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ হাসান ইবনি আলী [রাঃআঃমা]কে চুম্বন দিলেন। [তা দেখে] আক্বরা’ ইবনি হাবেস বলে উঠল, ‘আমার তো দশটি সন্তান আছে, তাহাদের মধ্যে কাউকে আমি চুমা দিইনি।’ [তা শুনে] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, ‘‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’’ [বুখারী ও মুসলিম] [9]


[1] সহীহুল বুখারী ৬২৬৩, তিরমিযী ২৭২৯

[2] আবূ দাউদ ৫২১৩, আহমাদ ১২৮০০, ১৩২১২

[3] আবূ দাউদ ৫২১২, ৫২১১, তিরমিযী ২৭২৭, ইবনু মাজাহ ৩৭০৩

[4] তিরমিযী ২৭২৮, ইবনু মাজাহ ৩৭০২

[5] ইমাম নাবাবী বলেনঃ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী প্রমুখ বিভিন্ন সহীহ্ সনদে বর্ণনা করিয়াছেন। আমি [আলবানী] বলছি: ইমাম তিরমিযী এবং অন্য কারো নিকট একটি সনদ ব্যতীত দ্বিতীয় কোন সনদ নেই। তা সত্ত্বেও এ সনদে আব্দুল্লাহ্ ইবনু সালেমাহ্ আলমুরাদী রয়েছেন যার সম্পর্কে মতভেদ করা হয়েছে। তিনিই হচ্ছেন ‘জুনবী ব্যক্তি কর্তৃক কুরআন তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ’ মর্মে বর্ণিত হাদীস আলী [রাযি] হতে বর্ণনাকারী। তাকে মুহাক্কিক হাফিযগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। যেমনটি লেখক নিজেই বলেছেন। যারা তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন তাহাদের মধ্যে ইমাম আহমাদ, শাফে‘ঈ, বুখারী প্রমুখ রয়েছেন। যেমনটি ‘‘য‘ঈফু আবী দাঊদ’’ গ্রন্থে [নং ৩০] বিস্তারিত দেখবেন। আল্লামাহ্ যাইলা‘ঈ ‘‘নাসবুর রায়া’’ গ্রন্থে [৪/২৫৮] ইমাম নাসাঈর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি ইমাম তিরমিযীর হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ এ হাদীসটি মুনকার। তিনি আরো বলেনঃ মুনযেরী বলেনঃ সম্ভত তার মুনকার সাব্যস্ত করার ব্যাপারে কথা রয়েছে। তিরমিযী ২৭৩৩, ৩১৪৪, ইবনু মাজাহ ৩৭০৫

[6] আমি [আলবানী] বলছিঃ এর সনদে ইয়াযীদ ইবনু আবী যিয়াদ হাশেমী রয়েছেন। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল এবং তাকে ভুল ধরিয়ে দিতে হতো। এ সমস্যার দ্বারায় মুনযেরী সমস্যা বর্ণনা করিয়াছেন। আর ‘‘আলকাশেফ’’ গ্রন্থে এসেছেঃ তার হেফ্য শক্তি মন্দ ছিল। দেখুন ‘‘য‘ঈফু আবী দাঊদ-আলউম্ম-’’ [নং ১০৬]। আবূ দাউদ ৫২২৩, ইবনু মাজাহ ৩৭০৪, আহমাদ ৫৩৬১।

[7] আমি [আলবানী] বলছি : হাদীসটির সনদের মধ্যের বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক আন্ আন্ করে বর্ণনা করিয়াছেন। আর তিনি হচ্ছেন প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস [দোষ গোপন করে] বর্ণনাকারী। উল্লেখ্য শাইখ আলবানী ‘‘দিফা‘ আনিল হাদীসিন নাবাবী অস সীরাহ্’’ গ্রন্থে [নং ১০] বলেছেনঃ এর সনদে ধারাবাহিকভাবে তিনজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন। এ কারণেই হাফিয যাহাবী বলেছেনঃ হাদীসটি মুনকার। তিরমিযী ২৭৩২।

[8] মুসলিম ২৬২৬, তিরমিযী ১৮৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, দারেমী ২০৭৯

[9] সহীহুল বুখারী ৫৯৯৭, মুসলিম ২৩১৮, তিরমিযী ১৯১১, আবূ দাউদ ৫২১৮, ব্হ ৮০৮১, ৭২৪৭, ৭৫৯২, ১০২৯৫

Comments

Leave a Reply