সহীহ তিরমিযী শরীফ । নাম রাখা, কুলক্ষণ, ওয়াদা, কবিতা ও উপমা

সহীহ তিরমিযী শরীফ । নাম রাখা, কুলক্ষণ, ওয়াদা, কবিতা ও উপমা

সহীহ তিরমিযী শরীফ । নাম রাখা, কুলক্ষণ, ওয়াদা, কবিতা ও উপমা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৪১, অনুচ্ছেদঃ (৫৮-৮২)=২৫টি

অনুচ্ছেদ-৫৮ঃ কুলক্ষণ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৫৯ঃ তৃতীয় ব্যাক্তিকে বাদ দিয়ে দুজনে কানাকানি [গোপন আলাপ] করিবে না
অনুচ্ছেদ-৬০ঃ ওয়াদাহ আঙ্গীকার
অনুচ্ছেদ-৬১ঃ আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক -এ কথা বলা
অনুচ্ছেদ-৬২ঃ “হে আমার পুত্র” বলে কাউকে সম্বোধন করা
অনুচ্ছেদ-৬৩ঃ দ্রুত সদ্যজাত শিশুর নাম রাখা
অনুচ্ছেদ-৬৪ঃ [আল্লাহ তায়ালার নিকট] পছন্দীয় নাম
অনুচ্ছেদ-৬৫ঃ [আল্লাহ তায়ালার নিকট] অপছন্দীয় নাম
অনুচ্ছেদ-৬৬ঃ নাম পরিবর্তন করা
অনুচ্ছেদ-৬৭ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নামসমূহ
অনুচ্ছেদ-৬৮ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নাম ও ডাকনাম একত্রে মিলিয়ে কারো নাম রাখা মাকরূহ।
অনুচ্ছেদ-৬৯ঃ কিছু কবিতা প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ
অনুচ্ছেদ-৭০ঃ কবিতা আবৃত্তি প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৭১ঃ তোমাদের কারো পেট কবিতার চাইতে বমি দ্বারা ভর্তি করাই উত্তম
অনুচ্ছেদ-৭২ঃ বাকপটুতা ও বাগ্মিতা
অনুচ্ছেদ-৭৩ঃ [নিয়মিত আমাল অল্প হলেও পছন্দনীয়]
অনুচ্ছেদ-৭৪ঃ পাত্র ঢেকে রাখা ও বাতি নিভিয়ে দেয়া
অনুচ্ছেদ-৭৫ঃ উটকে তার প্রাপ্য দাও
অনুচ্ছেদ-৭৬ঃ বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার দেয়া উপমা
অনুচ্ছেদ-৭৭ঃ নাবী [সাঃআঃ] ও অপরাপর নাবীগণের উপমা
অনুচ্ছেদ-৭৮ঃ নামাজ, রোযা ও দান-খাইরাতের উপমা
অনুচ্ছেদ-৭৯ঃ যে মুসলিম কুরআন পাঠ করে আর যে করে না তাহাদের উপমা
অনুচ্ছেদ-৮০ঃ পাচ ওয়াক্ত নামাযের উপমা
অনুচ্ছেদ-৮১ঃ এই উম্মাতের সূচনা ও সমাপ্তি দুটোই উত্তম
অনুচ্ছেদ-৮২ঃ মানুষ এবং তার আয়ু ও কামনা-বাসনার উপমা

অনুচ্ছেদ-৫৮ঃ কুলক্ষণ সম্পর্কে

২৮২৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [কুলক্ষণ সম্পর্কে কিছু থাকলে] এ তিনটিতে থাকতোঃ ১. নারী ২. ঘর ও ৩. জন্তু।

“কোন বস্তুতে কুলক্ষণ থাকলে” অংশসহ হদীসটি সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। ঐ অংশ ব্যাতীত হাদীসটি শাযঃ সহীহাহ [৪৪৩, ৭৯৯, ১৮৯৭]

আবু ঈসা বলেন, ও হাদীসটি হাসান সহীহ । ঈমাম বুখারীর কিছু শিষ্য অত্র হাদীসের সনদে বর্ণনাকারী হামযার উল্লেখ করেননি । তারা এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ সালিম-তার বাবা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে একইভাবে ইবনে আবি ঊমারও এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন সুফিইয়ান ইবনি উয়াইনাহ হইতে, তারা যুহরী হইতে তিনি ইবনি উমার [রাদি.]-এর পুত্রদ্বয় সালিম ও হামযা-তাহাদের বাবা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে ।সাঈদ ইবনি আবদুর রহমান সুফিইয়ান হইতে তিনি যুহরী হইতে তিনি সালিম [রাদি.] হইতে তার বাআব্র সুত্রে উপরে বর্ণিত হাদীসের সামর্থক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন । এ সুত্রে সাঈদ ইবনি আবদূর রাহমান হামযা হইতে এভাবে উল্লেখ করেননি । সাঈদের রিওয়ায়াত আধিকতর সহীহ । কেনান আলী ইবনিল মাদীনী ও হুমাইদী [রাদি.] সুফইয়ানের সুত্রে বর্ণনা করিয়াছেন । যুহরী আমাদের নিকট এ হাদীস শুধুমাত্র সালিম-ইবনি উমার [রাদি.]-এর সুত্রেই বর্ণনা করিয়াছেন । মালিক ইবনি আনাস [রঃ] এ হাদীসটি যুহরীর সুত্রে বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর পুত্রদ্বয় সালিম ও হামযা হইতে –তাহাদের বাবার সুত্রে । এ অনুচ্ছেদে সাহল ইবনি সাদ, আয়িশাহ ও আনাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত রয়েছে । অধিকন্তু নাবী [সাঃআঃ] হইতে আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “কোন কিছুতে কুলক্ষণ বলিতে থাকলে নারী, জন্তু ও ঘরের মধ্যেই থাকতো” ।

তাছাড়া হাকীম ইবনি মুআবিয়া [রাদি.] বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতেশুনেছিঃ কুলক্ষম বলিতে কিছু নেই । তবে কখনো কখনো ঘর, নারী ও ঘোড়ার মধ্যে শুভ লক্ষণ [বারাকাহ] দেখা যায় । সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৯৩০]আলী ইবনে হুজর-ইসমাইল ইবনি আইয়্যাশ হইতে, তিনি সুলাইমান ইবনি সুলাইম হইতে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনি জাবির আত-তাঈ হইতে, তিনি মুআবিয়া ইবনি হাকীম হইতে, তিনি তার চাচা হাসান ইবনি মুআবিয়া [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] এই সূত্রে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন ।সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

অনুচ্ছেদ-৫৯ঃ তৃতীয় ব্যাক্তিকে বাদ দিয়ে দুজনে কানাকানি [গোপন আলাপ] করিবে না

২৮২৫. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমরা তিনজন একত্রে থাকিবে তখন দুজনে তাহাদের সাথীকে বাদ দিয়ে কানাকানি [গোপন আলাপ] করিবে না। সুফইয়ানের বর্ণনায় আছেঃ দুজনে তৃতীয়জনকে বাদ দিয়েগোপন আলাপ না করে, কেননা ইহা তাকে চিন্তিত করে।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭৭৫], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ আরেক বর্ণনায় আছে যে, নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ “একজনকে বাদ দিয়ে দুজনে কানাকানি করিবে না । কেননা ইহা মুমিনের কষ্ট দেয় । আর আল্লাহ তায়ালা তো মুমিনকে কষ্ট দেয়া অপছন্দ করেন” । ইবনি উমার, আবু হুরাইরাহ্ ও ইবনি আব্বাস [রঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬০ঃ ওয়াদাহ আঙ্গীকার

২৮২৬. আবু জুহাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে রক্তিমাভ সাদা দেখলাম এবং তাহাঁর কিছু চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। আর হাসান ইবনি আলী ছিলেন ঠিক তারই প্রকৃতির। তিনি [রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ ]]-এর তেরটি উঠতি বয়সের উটনি আমাদেরকে দেওয়ার জন্য আদেশ করিলেন। কাজেই সেগুলো সংগ্রহের উদেশ্যে তাহাঁর নিকট রওয়ানা হলাম। এমন সময় আমাদের নিকট তাহাঁর মৃত্যুর সংবাদ এল। সেহেতু লোকেরা একটি উটনিও আমাদের দিলনা। তারপর আবু বকর [রাদি.] খিলাফাতে অধিষ্ঠিত হয়ে বলিলেন, যে ব্যাক্তির রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর ওয়াদাহ আছে সে যেন উপস্হিত হয়। কাজেই আমি তাহাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে সব কথা খুলে বললাম। তিনি আমাদেরকে উটনিগুলো দেয়ার আদেশ কার্যকর করিলেন।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ আবু ঈসা বলেন এ হাদীসটি হাসান । মারওয়ান ইবনি মুআবিয়াহও নিজস্ব সনদে আবু জুহাইফাহ [রাদি.] হইতে উক্ত হাদীসের মত বর্ণনা করিয়াছেন । একাধিক বর্ণনাকারী ইসমাঈল ইবনি আবু খালিদ থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবু জুহাইফাহ [রাদি.] বলেছেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে দেখেছি, হাসান ইবনি আলী ছিলেন ঠিক তাহাঁরই সদৃশ । এই বর্ণনায় এর বেশি নেই । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮২৭. আবু জুহাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে দেখেছি এবং হাসান ইবনি আলী [রাদি.] ছিলেন তাহাঁর মতোই [অবয়ব সম্পন্ন]।

আবু ঈসা বলেন, একাধিক বর্ণনাকারী ইসমাইল ইবনি আবু খালিদের সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন । জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আবু জুহাইফাহ [রাদি.]-এর নাম ওয়াহাব আস-সুওয়াঈ ।সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬১ঃ আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক -এ কথা বলা

২৮২৮. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কস [রাদি.] ব্যাতিত আর কারো জন্য তাহাঁর বাবা-মাকে একত্র করিতে শুনিনি। [অর্থাৎ এমন বলিতে শুনিনি যে, আমার বাবা-মা তোমার জন্য কুরবান হোক]।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [১৩০], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮২৯. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কস [রাদি.] ছাড়া আর কারো জন্য তাহাঁর বাবা-মাকে একত্র করে বলেননি যে, আমার বাবা-মা তোমার জন্য কুরবান হোক। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি তাকে [সাদকে] বলেছেনঃ চালাও তীর, আমার বাবা-মা তোমার জন্য কুরবান হোক। হে নওজোয়ান যুবক! তীর ছুড়ো।

“হে তরুন যুবক” এর উল্লেখ মুনকার, নাসাঈ। বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ এ অতিরিক্ত অংশ ব্যতীত বর্ণনা করিয়াছেন। এ অনুচ্ছেদে জুবাইর ও জাবির [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ । উক্ত হাদীস আলী [রাদি.] হইতে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত আছে । একাধিক বর্ণনাকারী এ হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ হইতে তিনি সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যাব হইতে তিনি সাদ ইবনি আবি ওয়াক্কাস [রাদি.] বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, উহুদের মাইদানে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার জন্য তাহাঁর বাবা-মাকে একত্র করিয়াছেন [অর্থাৎ-তিনি বলেছেনঃ আমার বাবা-মা তোমার জন্য কুরবান হোক তুমি নিক্ষেপ কর] । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

২৮৩০. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার জন্য রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর বাবা-মাকে একত্র করে বলেছেনঃ তোমার জন্য আমার বাবা-মা কুরবান হোক।

সহীহঃ বুখারী [৩৭২৫], মুসলিম আনুরুপ।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । উভয়ই হাদীসই সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬২ঃ “হে আমার পুত্র” বলে কাউকে সম্বোধন করা

২৮৩১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাকে “হে আমার পুত্র” বলে সম্বোধন করিয়াছেন।

সহীহঃ সহীহাহ [২৯৫৭], মুসলিম । মুগীরাহ ও উমার ইবনি আলী সালামাহ [রাদি.] হইতে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উক্ত সূত্রে গরীব এছাড়া অন্য সূত্রেও আনাস [রাদি.] হইতে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে । বর্ণনাকারী আবু উসমান হলেন হাদীসের নির্ভরযোগ্য শাইখ । তার নাম আল-জাদ ইবনি উসমান । তাকে ইবনি দীনারও বলা হয় । তিনি বাসরার অধিবাসী । ইউনুস ইবনি উবাইদ, শুবাহ এবং একাধিক ঈমাম তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬৩ঃ দ্রুত সদ্যজাত শিশুর নাম রাখা

২৮৩২. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে তার নাম রাখতে, মাথা মুন্ডন করিতে এবং আকীকা করিতে আদেশ করিয়াছেন।

হাসানঃ ইরওয়াহ [৪/৩৯৯-৪০০], তাহকীক সানী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬৪ঃ [আল্লাহ তায়ালার নিকট] পছন্দীয় নাম

২৮৩৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আবদুল্লাহ ও আবদূর রাহমান নাম আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশি পছন্দনীয়।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ[৩৭২৮], মুসলিম .আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপ্রোক্ত সূত্রে গারীব । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৩৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আবশ্যই আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক পছন্দীয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদূর রাহমান।

সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। এ হাদীসটি এ সূত্রে গারীব । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬৫ঃ [আল্লাহ তায়ালার নিকট] অপছন্দীয় নাম

২৮৩৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অবশ্যই আমি নিষেধ করছি রাফি , বারাকাত ও ইয়াসার নাম রাখতে।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৮২৯], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব । এ হাদীসটি আবু আহমাদ-সুফইয়ান হইতে, তিনি আবু আবুয যুবায়র হইতে, তিনি জাবির হইতে, তিনি উমার [রাদি.] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন । আন্যান্য বর্ণনাকারীগণ সুফইয়ান হইতে, তিনি আবু সুফইয়ান হইতে, তিনি জাবির [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন । আবু আহমাদ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী এবং হাদীসের হাফিয । কিন্তু জাবির [রাদি.] – নাবী [সাঃআঃ] হইতে, এই সূত্রেই লোকদের নিকট হাদীসটি প্রসিদ্ধ । তাতে উমার [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৩৬. সামুরাহ ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সন্তানদের নাম রাবাহ, আফলাহ, ইয়াসার ও নাজীহ রেখোনা। কেউ প্রশ্ন করিবে, ঐখানে ওমুক আছে কি? বলা হবেঃ না।

সহীহঃ ইবনি ম-জাহ [৩৬৩০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৩৭. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে সেই ব্যক্তির নাম আল্লাহ তাআলার নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট নাম হইবে, যে [দুনিয়ায়] রাজাধিরাজ [মালিকুল আমলাক] নাম ধারন করে।

সহীহ ঃ সহীহাহ্‌ [৯১৪], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। সুফ্‌ইয়ান বলেন, এর অর্থ হল শাহানশাহ । আখনাউ অর্থ আকবাহু [সর্বাধিক অবাঞ্ছিত] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬৬ঃ নাম পরিবর্তন করা

২৮৩৮. ইবনি উমার [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] আসিয়া [রাদি.]-এর নাম পরিবর্তন করে বলেনঃ তুমি জামীলাহ্‌।

সহীহ ঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭৩৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান গারীব । এ হাদীসটি উবাইদুল্লাহ নাফি হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাঃ] হইতে, এই সূত্রে ইয়াহ্‌ইয়া ইবুন সাঈদ আল-কাত্তান মারফূরূপে বর্ণনা করিয়াছেন । এটিকে কোন কোন বর্ণনাকারী উবাইদুল্লাহ-নাফি হইতে, তিনি উমার [রাঃ] হইতে এই সূত্রে মুরসাল হাদীস হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন । আবদুর রাহমান ইবনি আওফ, আবদুল্লাহ ইবনি সালাম, আবদুল্লাহ ইবনি মুতী, আয়িশাহ্‌, হাকাম ইবনি সাঈদ, মুসলিম, উসামাহ্‌ ইবনি আখদারী, শুরাইহ ইবনি হানী-তার পিতা হইতে এবং খাইসামাহ্‌ ইবনি আবদুর রাহমান-তার বাবা হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৩৯. আয়িশাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] নিকৃষ্ট নামসমূহ পরিবর্তন করে [ভালো নাম রেখে] দিতেন।

সহীহ ঃ সহীহাহ্‌ [২০৭, ২০৮]। আবু ঈসা বলেন, আবু বাক্‌র ইবনি নাফি বলেছেন, এই হাদীসের সনদের ক্ষেত্রে উমার ইবনি আলী কখনো বলেন, হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌-তার বাবা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে মুরসাল হিসেবে । তাতে তিনি আয়িশাহ্‌ [রাঃ]-এর উল্লেখ করেননি । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬৭ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নামসমূহ

২৮৪০. জুবাইর ইবনি মুতইম [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার কতগুলো নাম আছে। আমি মুহাম্মাদ [প্রশংসিত], আমি আহ্‌মাদ [সর্বাধিক প্রশংসাকারী], আমি মাহী [বিলীনকারী]। আল্লাহ তাআলা আমার দ্বারা কুফরী বিলীন করেন। আর আমি হাশির [সমবেতকারী], আমার পদাংক অনুসরণে মানুষকে হাশর করা হইবে। আমি আক্বিব [চূড়ান্ত পরিণতি বা সবার পশ্চাতে আগমনকারী]। আমার পরে কোন নাবী নেই।

সহীহ ঃ মুখ্‌তাসার শামা-য়িল [৩১৫], রাওযুন নাযীর [১/৩৪০]। হযাইফাহ্‌ [রাঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬৮ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নাম ও ডাকনাম একত্রে মিলিয়ে কারো নাম রাখা মাকরূহ।

২৮৪১. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর নাম ও ডাকনাম মিলিয়ে মুহাম্মাদ আবুল কাসিম এভাবে নাম রাখতে নিষেধ করিয়াছেন।

হাসান সহীহ ঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৪৭৬৯], সহীহাহ্‌ [২৯৪৬]। জাবির [রাঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । কিছু আলিম এটা মাকরূহ মনে করেন । কিন্তু কিছু সংখ্যক আলিম রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নাম ও ডাকনাম একত্রে মিলিয়ে নাম রেখেছেন । নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত, কোন একদিন তিনি বাজারে জনৈক ব্যক্তিকে “হে আবুল কাসিম” বলে ডাক দিতে শুনলেন । সুতরাং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালে লোকটি বলিল, আমি আপনাকে ডাকিনি । তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন ঃ তোমরা আমার ডাকনামে নাম রেখো না । আল-হাসান ইবনি আলী আল-খাল্লাল-ইয়াযীদ ইবনি হারূন হইতে, তিনি হুমাইদ হইতে, তিনি আনাস [রাঃ] হইতে এই সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন । আর এ হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, আবুল কাসিম ডাক নাম রাখা মাকরূহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৮৪২. জাবির [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখলে এক সঙ্গে আমার ডাকনামও রেখো না।

সহীহ ঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭৩৬], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং এই সূত্রে গারীব । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৪৩. আলী ইবনি আবী তালিব [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হে রসুলুল্লাহ! আপনার পরে যদি আমার কোন ছেলে হয়, তাহলে তার নাম মুহাম্মাদ এবং আপনার ডাকনামে তার ডাকনাম রাখতে পারি কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি [আলী] বলেন, এর দ্বারা আমাকে অনুমতি দেয়া হল।

সহীহ ঃ মুখতাসার তুফাতুল ওয়াদূদ, মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৪৭৭২]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৬৯ঃ কিছু কবিতা প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ

২৮৪৪. আবদুল্লাহ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই কোন কোন কবিতায় হিকমাত ও প্রজ্ঞা আছে।

হাসান সহীহ ঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উবাই ইবনি কাব হইতে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উপরোক্ত সূত্রে গারীব । এ হাদীসটি ইবনি আবু গানিয়্যার সূত্রে আবী সাইদ আল-আশাজ্জ মারফু হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন । অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ হাদীসটি ইবনি আবী গানিয়্যাহ্‌ হইতে মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন । উক্ত হাদীস অন্যসূত্রে আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃ]-এর বরাতে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে । উবাই ইবনি কাব, ইবনি আব্বাস, আয়িশাহ্‌, বুরাইদাহ্‌, কাসীর ইবনি আবদুল্লাহ তাহাঁর পিতা হইতে, তিনি তাহাঁর দাদা হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৮৪৫. ইবনি আব্বাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে কোন কোন কবিতায় প্রজ্ঞাপূর্ণ কথাও আছে।

হাসান সহীহ ঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭৫৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

অনুচ্ছেদ-৭০ঃ কবিতা আবৃত্তি প্রসঙ্গে

২৮৪৬. আয়িশাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [কবি] হাসসানের জন্য মসজিদে একটা মিম্বার রেখে দিতেন। তিনি তাতে দাঁড়িয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর গৌরবগাঁথা আবৃত্তি করিতেন অথবা তিনি [আয়িশাহ্‌] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর পক্ষ থেকে [কাফিরদের কটূক্তির] জবাব দিতেন। আর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিতেন ঃ আল্লাহ তাআলা রূহুল কুদুস জিবরীল এর মাধ্যমে হাস্‌সানকে সহযোগিতা করেন যতক্ষণ তিনি গৌরবগাঁথা আবৃত্তি করেন অথবা রাসূলের পক্ষ থেকে [কাফিরদের তিরস্কারের] জবাব দেন।

হাসান ঃ সহীহাহ্‌ [১৬৫৭] ইসমাঈল ইবনি মুসা ও আলী ইবনি হুজুর তারা উভয়ে ইবনি আবী যিনাদ হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি উরওয়া হইতে, তিনি আয়িশাহ্‌ [রাঃ] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন । আবু হুরাইরাহ্‌ ও আল-বারাআ [রাঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব । এটি ইবনি আবুয যিনাদের হাদীস । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৮৪৭. আনাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] যখন কাযা উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে মাক্কায় প্রবেশ করিলেন, তখন কবি আবদুল্লাহ ইবনি রাওয়াহা [রাদি.] তাহাঁর সামনে সামনে এ কবিতা বলে হেঁটে যাচ্ছিলেন ঃ

হে বানী কুফ্‌ফার! ছেড়ে দে তাহাঁর চলার পথ। আজ মারবো তোদের কুরআনের ভাষায় মারার মতো। কল্লা উড়ে যাবে তোদের গর্দান হইতে, বন্ধু হইতে বন্ধু হইবে পৃথক তাতে”।

উমার [রাদি.] তাকে বলিলেন, হে ইবনি রাওয়াহা! তুমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সামনে আল্লাহ তাআলার হেরেমের মধ্যে কবিতা বলছ? নাবী [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ হে উমার! তাকে বলিতে দাও। কেননা এই কবিতা তীরের চাইতেও দ্রুতগতিতে গিয়ে তাহাদেরকে [কাফিরদের] আহতকারী।

সহীহ ঃ মুখতাসার শামা-য়িল [২১০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, উক্ত সূত্রে গারীব । এ হাদীসটি মামার-যুহরী হইতে, তিনি আনাস [রাঃ] হইতে এই সূত্রে আবদুর রাযযাকও একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন । এ হাদীসটি ব্যতীতও অপর হাদীসে বর্ণিত আছে ঃ নাবী [সাঃআঃ] কাযা উমরাহ্‌ আদায়ের উদ্দেশ্যে মাক্কায় প্রবেশ করিলেন এবং কাব ইবনি মালিক [রাঃ] তাহাঁর সামনে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন” । এ বর্ণনাটি কিছু মুহাদ্দিসগণের নিকট অনেক বেশী সহীহ । কেননা আবদুল্লাহ ইবনি রাওয়াহা [রাঃ] মুতার যুদ্ধে শহীদ হন । আর এ উমরাতুল কাযার ঘটনা ছিল সে যুদ্ধের অনেক পরে । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৪৮. শুরাইহ্‌ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আয়িশা [রাদি.]-কে প্রশ্ন করা হল, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি উপমা দেয়ার জন্য কবিতা আবৃত্তি করিতেন? তিনি বলিলেন, তিনি ইবনি রাওয়াহার এ কবিতা আবৃত্তি করে উপমা দিতেন। “যাকে তুমি দাওনি তোশা, খবর আনবে সে নিশ্চয়ই।”

সহীহ ঃ সহীহাহ্‌ [২০৫৭] ইবনি আব্বাস [রাঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৪৯. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আরব কবিদের মধ্যে সর্বোত্তম ও সত্য কথা বলেছেন লাবীদ। তা হল এই “শুনে রেখ আল্লাহ ব্যতীত সব কিছুই বাতিল”।

হাদীসে বর্ণিত আশআর এর পরিবর্তে “আসদাক” শব্দে হাদীসটি সহীহ, মুখতাসার শামায়িল [২০৭], ফিকহুস্ সীরাহ [২৭]।

আবু ঈসা বলেন ঃ হাদীসটি হাসান সহীহ । সাওরী ও অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ হাদীসটি আবদুল মালিক ইবনি উমাইর-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

২৮৫০. জাবির ইবনি সামুরাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে শতাধিক বৈঠকে ছিলাম। সে সব বৈঠকে তাহাঁর সাহাবীগণ কবিতা আবৃত্তি করিতেন এবং জাহিলিয়াত যুগের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করিতেন। তিনি সেগুলো চুপ করে শুনতেন এবং কখনো কখনো মুচকি হাসতেন।

সহীহ ঃ মুখতাসার শামা-য়িল [২১১] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । এ হাদীসটি সিমাকের সূত্রে যুহাইরও বর্ণনা করিয়াছেন । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৭১ঃ তোমাদের কারো পেট কবিতার চাইতে বমি দ্বারা ভর্তি করাই উত্তম

২৮৫১. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো পেট কবিতার চাইতে বমিতে পূর্ণ থাকাই উত্তম যা উহাকে [পেটকে] খারাপ করে ফেলে।

সহীহ ঃ প্রাগুক্ত। সাদ, আবু সাঈদ, ইবনি উমার ও আবুদ্‌ দারদা [রাঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৫২. সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো পেট [খারাপ ও চরিত্র বিধ্বংসী] কবিতার চাইতে বমি দ্বারা পূর্ণ থাকাই উত্তম।

সহীহ ঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭৫৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৭২ঃ বাকপটুতা ও বাগ্মিতা

২৮৫৩. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সেসব বাকপটু-বাগ্মী লোকদেরকে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই ঘৃণা করেন, যারা গরুর জাবর কাটার ন্যায় কথা বলে।

সহীহ ঃ সহীহাহ্‌ [৮৭৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং এই সূত্রে গারীব । সাদ [রাঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৫৪. জাবির [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দেয়ালবিহীন ছাদে ঘুমাতে নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ ঃ সহীহাহ্‌ [৮২৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব । আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির হইতে জাবির [রাঃ]-এর রিওয়ায়াত হিসেবে জেনেছি । আবদুল জাব্বার ইবনি উমার আল-আইলীকে দুর্বল বর্ণনাকারী বলা হয়েছে । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৫৫. আবদুল্লাহ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সপ্তাহের দিনসমূহে আমাদেরকে ওয়াজ-নাসীহাতের ব্যাপারে আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন, যাতে আমরা বিরক্ত হয়ে না যাই।

সহীহ ঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্‌শার-ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি সুফ্‌ইয়ান হইতে, তিনি আল-আমাশ হইতে, তিনি শাকীক ইবনি সালামাহ্‌ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃ] হইতে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৭৩ঃ [নিয়মিত আমাল অল্প হলেও পছন্দনীয়]

২৮৫৬. আবু সালিহ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আয়িশাহ্‌ ও উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.]-কে প্রশ্ন করা হল, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট কোন্‌ ধরনের আমাল বেশী পছন্দনীয় ছিল? তারা বলিলেন। যে আমাল নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প হয়।

সহীহ ঃ বুখারী [১১৩২], মুসলিম [২/১৬৭] অনুরূপ, ওয়াইন কাল্লা শব্দ ব্যতীত। হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমে আয়িশাহ্‌ [রাঃ] হইতে পূর্ণভাবে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর বক্তব্য হিসেবে বর্ণিত আছে। সহীহ ঃ আবু দাঊদ [১২৩৮] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং এ সূত্রে গারীব । হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌ তার বাবা হইতে, তিনি আয়িশাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সে ধরনের আমাল বেশী পছন্দ করিতেন, যা নিয়মিত করা হয় । সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৭৪ঃ পাত্র ঢেকে রাখা ও বাতি নিভিয়ে দেয়া

২৮৫৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা খাবারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো, মশক বা পানির পাত্রগুলোর মুখ বন্ধ করে দিও, দরজাগুলো বন্ধ করে দিও এবং [শোয়ার সময়] বাতিগুলো নিভিয়ে দিও। কেননা অনেক সময় ছোট্ট ইদুরগুলো বাতির সালতে টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরের সবাইকে জ্বালিয়ে দেয়।

সহীহঃ মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি জাবির [রাদি.] সূত্রে রসুলুল্লাহ ত্র হইতে একাধিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৭৫ঃ উটকে তার প্রাপ্য দাও

২৮৫৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমরা উর্বর তৃণভূমি দিয়ে ভ্রমণ কর তখন তোমরা যমীন হইতে উটকে তার প্রাপ্য দিবে, [চরে ফিরে খাবার সুযোগ দিও] এবং শুষ্ক ও উষর ভূমি দিয়ে ভ্রমণ করলে খুব দ্রুত গতিতে পথ অতিক্রম কর, যাতে জন্তুযানের শক্তি বজায় থাকে। আর তোমরা কোন মনযিলে [গন্তব্যে] শেষরাতে যাত্রাবিরতি করলে পথ থেকে সরে বিশ্রাম নিবে। কারণ এ পথ হল পশুর এবং রাতে বিচরণশীল কীট-পতঙ্গের আশ্রয়স্থল।

সহীহ ঃ সহীহাহ [১৩৫৭], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হারূন ইবনি ইসহাক বাবা হইতে, তিনি আয়িশাহ [রাদি.] হইতে এই সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। আনাস ও জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত রহিয়াছে। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৭৬ঃ বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার দেয়া উপমা

২৮৫৯. আন-নাওয়াস ইবনি সামআন আল-কিলাবী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এভাবে সোজা পথের একটি উদাহরণ দিয়েছেন-রাস্তার দুধারে দুটি প্রাচীর। প্রাচীর দুটিতে আছে অনেকগুলো খোলা দরজা। এগুলোতে পর্দা ঝুলানো রহিয়াছে। একজন আহবানকারী রাস্তার মাথায় দাড়িয়ে আহবান করছেন। অন্য এক আহবানকারী পথের উপর থেকে ডাকছেন।

‏وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلاَمِ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ‏

“আর আল্লাহ তাআলা শান্তিময় আবাসের দিকে ডাকছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা সোজা পথের হিদায়াত দান করেন”— [সূরা ইউনুস ২৫]। রাস্তার দুপাশে দরজাগুলো হল আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমাসমূহ। সুতরাং কোন ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করলে তাতে [দরজার] পর্দা সরে যায়। আর উপর থেকে যে আহবায়ক আহবান করছেন তিনি হলেন আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে উপদেশদাতা !

সহীহঃ মিশকাত [১৯১ ও ১৯২]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমি আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রাহমানকে বলিতে শুনিয়াছি, আমি যাকারিয়া ইবনি আদীকে বলিতে শুনিয়াছি, আবু ইসহাক আল-ফাযারী বলেছেন, বর্ণনাকারী বাকিয়্যা বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীগণের সূত্রে যেসব হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং ইসমাঈল ইবনি আইয়্যাশ বিশ্বস্ত ও অবিশ্বস্ত যে কোন বর্ণনাকারীর সূত্রেই হাদীস বর্ণনা করুন তা গ্রহণ করো না। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৬০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন এক সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বের হয়ে আমাদের নিকটে এসে বলেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, জিবরাঈল [আঃ] যেন আমার মাথার দিকে এবং মীকাঈল [আঃ] আমার পাদুটির দিকে আছেন। তাঁদের একজন তাহাঁর সঙ্গীকে বলছেন, তাহাঁর কোন উদাহরন দিন। তিনি বলেনঃ তাহলে শুনুন। আপনার কান যেন শুনে এবং আপানার অন্তর যেন হৃদয়ঙ্গম করে। আপনার ও আপনার উম্মাতের তুলনা এই যে, কোন বাদশাহ একটি রাজমহল তৈরী করিলেন এবং তাতে একটি ঘর তৈরি করিলেন, তারপর তাতে রকমারি খানা ভর্তি খাঞ্চা রাখলেন। তারপর তিনি একজন আহ্বানকারীকে পাঠালেন লোকদেরকে খাবারের জন্য দাওয়াত দিতে। একদল লোক তার ডাকে সাড়া দিল এবং অন্য দল তা পরিত্যাগ করিল। আল্লাহ্ তাআলা হলেন সেই বাদশাহ, মহলটি হল ইসলাম, ঘরটি হল জান্নাত। আর হে মুহাম্মাদ! আপনি সেই আহ্বানকারী। যে ব্যক্তি আপনার ডাকে সাড়া দিল সে ইসলামে প্রবেশ করিল, আর যে ইসলামে প্রবেশ করিল সে জান্নাতে গেল। যে জান্নতে যাবে সে তাতে যা আছে তা খাবে।

সনদ দুর্বল। উপরোক্ত হাদীস রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে অন্যভাবে আরো সহীহ সনদসূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি মুরসাল। সাঈদ ইবনি আবু হিলাল জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] এর দেখা পাননি। এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে।সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৮৬১. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক রাতে এশার নামাজ আদায় করে বের হলেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদকে হাত ধরে মক্কার কংকরময় স্থান বাতহায় নিয়ে গেলেন এবং সেখানে তাকে বসালেন। তিনি তার চতুর্দিকে একটি বৃত্তরেখা টানলেন এবং বললেনঃ তুমি এ রেখা হইতে সরবে না। কয়েকজন লোক তোমার সামনে পর্যন্ত আসবে। তুমি তাহাদের সাথে কোন কথা বলবে না। তারাও তোমার সাথে কথা বলবে না। এই বলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেদিকে ইচ্ছা চলে গেলেন। আমি আমার বৃত্তের মধ্যে বসা। হঠাৎ কয়েকজন লোক আসল। তাহাদের চুল ও শারীরিক অবস্থা দেখে মনে হল যেন তারা জাঠ সম্প্রদায়ের। তাহাদের উলঙ্গও দেখা যাচ্ছিল না আবার পোশাক পরিহিতও মনে হচ্ছিল না। তারা আমার নিকটই এগিয়ে এলো কিন্তু বৃত্তরেখা অতিক্রম করিল না। তারপর তারা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর খোজে বেরিয়ে গেল। শেষ রাত পর্যন্ত তারা আর ফিরে এলো না। আমি তখনও বসা, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফিরে এসে বললেনঃ আমি আজ সন্ধ্যারাত থেকেই ঘুমাতে পারিনি। তিনি বৃত্তের মধ্যে প্রবেশ করিলেন এবং আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। আর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুমানোর সময় তার নাক ডাকতো। আমি বসে থাকলাম আর তিনি আমার উরুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে রইলেন। হঠাৎ আমি সাদা পোশাক পরিহিত কয়েকজন লোককে দেখিতে পেলাম। তাহাদেরকে কত যে সুন্দর দেখা যাচ্ছিল সেটা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। তারা আমার নিকট এলো এবং তাহাদের মাঝে একদল রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মাথার নিকট আরেক দল তার পদদ্বয়ের নিকট বসে পড়লো। তারপর তারা পরস্পর বলাবলি করিল, এ নাবী -কে যা দেয়া হয়েছে আর কাউকে এমন দিতে দেখিনি। তার চোখ দুটো ঘুমিয়ে থাকলেও তার অন্তর জাগ্রত থাকে। তোমরা তার একটা উপমা বর্ণনা কর। [উদাহরণ] এক নেতা একটি প্রাসাদ নির্মাণ করিলেন, তারপর মেহমানদারির আয়োজন করে লোকদেরকে পানাহারের জন্য দাওয়াত করিলেন। যে সব ব্যক্তি তার দাওয়াত গ্রহণ করিল তারা মেহমানীর খাবার ও পানীয় গ্রহণ করিল, আর যে সব ব্যক্তি দাওয়াত গ্রহণ করেনি তিনি তাহাদেরকে শাস্তি দিলেন। এই বলে তারা উঠে চলে গেল। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জেগে উঠলেন। তিনি বললেনঃ এরা যা বলেছে তুমি কি তা শুনেছ? তুমি কি জানো, এরা কারা? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই বেশি জানেন। তিনি বললেনঃ এরা হল ফেরেশতা। এরা যে উপমা বর্ণনা করিল তা কি জান? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ তারা যে উপমা দিল, তার অর্থ হল ঃ আল্লাহ তাআলা জান্নাত বানালেন এবং তার বান্দাদেরকে সেদিকে আহবান করিলেন। যে সব ব্যক্তি তার ডাকে সাড়া দিয়েছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে, আর যে সব ব্যক্তি সাড়া দেয়নি তাহাদেরকে আল্লাহ তাআলা শাস্তি দিবেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং এ সূত্রে । আবু তামীমা হুজাইমী গোত্রের লোক। তার নাম তারীফ ইবনি মুজালিদ। আবু উসমান আন-নাহদীর নাম আবদুর রাহমান ইবনি মাল্ল [মুল্ল, মিল্ল]। সুলাইমান আত-তাইনী হলেন তারখানের ছেলে। মুতামারও তার নিকট হইতে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। সুলাইমান তাইমী গোত্রের লোক নন কিন্তু তিনি তাইম গোত্রে অবস্থান করিতেন বলে তাহাদের সাথে যুক্ত করে তাকে তাইমী বলা হয়। আলী বলেন, ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ বলেছেন, আমি সুলাইমান আত-তাইনীর চাইতে আল্লাহ তাআলাকে বেশি ভয় করিতে আর কাউকে দেখিনি। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

অনুচ্ছেদ-৭৭ঃ নাবী [সাঃআঃ] ও অপরাপর নাবীগণের উপমা

২৮৬২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহঃ বলেছেনঃ আমার ও অপরাপর সকল নাবীর উপমা এই যে, যেমন এক ব্যক্তি একটি ঘর নির্মাণ করিলেন। তিনি এটিকে পূর্ণাঙ্গ ও অত্যন্ত মনোরম করিলেন। কিন্তু একটি ইটের জায়গা খালি [ফাকা] থেকে গেল। লোকজন এ বাড়ীতে প্রবেশ করে এবং [কারুকার্য ও সৌন্দর্য] দেখে বিক্ষিত হয় আর বলে, যদি এ একটি ইটের জায়গা খালি না থাকত।

সহীহঃ ফিকহুস সীরাহ [১৪১], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু হুরাইরাহ্ ও উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উক্ত সূত্রে গারীব। [অন্যান্য বর্ণনাতে উক্ত হাদীসের শেষে আরো আছে ঃ আমিই হলাম সেই ইট, আমার দ্বারা নবুওয়াতরূপ প্রাসাদের নির্মাণকার্য সমাপ্ত করা হয়েছে। অতএব আমার পরে আর কোন নাবী নেই। অনুবাদক। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৭৮ঃ নামাজ, রোযা ও দান-খাইরাতের উপমা

২৮৬৩. আল-হারিস আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ইয়াহইয়া ইবনি যাকারিয়া [আঃ]-কে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করিলেন যেন তিনি নিজেও তদনুযায়ী আমাল করেন এবং বানী ইসরাঈলকেও তা আমাল করার আদেশ করেন। তিনি এ নির্দেশগুলো লোকদেরকে জানাতে বিলম্ব করলে ঈসা [আঃ] তাকে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনি সে মুতাবিক আমাল করেন এবং বানী ইসরাঈলকেও তা আমাল করার আদেশ করেন। এখন আপনি তাহাদেরকে এগুলো করিতে নির্দেশ দিন, তা না হলে আমিই তাহাদেরকে সেগুলো করিতে নির্দেশ দিব। ইয়াহইয়া [আঃ] বললেনঃ আপনি এ বিষয়ে যদি আমার অগ্রবর্তী হয়ে যান তবে আমার ভয় হচ্ছে যে, আমাকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দেয়া হইবে কিংবা আযাব নেমে আসবে।

সুতরাং তিনি লোকদেরকে বাইতুল মাকদিসে একত্র করিলেন। সব লোক সমবেত হওয়াতে মসজিদ ভরে গেল, এমনকি তারা ঝুলন্ত বারান্দায় গিয়েও বসল। তারপর ইয়াহইয়া [আঃ] তাহাদেরকে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে পাচটি বিষয়ের নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন, যেন আমি সে মুতাবিক আমাল করি এবং তোমাদেরকেও আমাল করার আদেশ করি। এগুলোর প্রথম নির্দেশটি হল ঃ তোমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করিবে এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন করিবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থাপন করে তার উদাহরণ হল এমন এক ব্যক্তি যে তার খালিস সম্পদ অর্থাৎ- সোনা অথবা রুপার বিনিময়ে একটি দাস কিনল। সে তাকে [বাড়ী এনে] বলিল, এটা আমার বাড়ী আর এগুলো আমার কাজ। তুমি কাজ করিবে এবং আমাকে আমার প্রাপ্য দিবে। তারপর সেই দাস কাজ করত ঠিকই কিন্তু মালিকের প্রাপ্য দিয়ে দিত অন্যকে। তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে স্বীয় দাসের এমন আচরণে সন্তুষ্ট থাকতে পারে? আর আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নামাজ আদায়ের জন্য আদেশ করিয়াছেন। তোমরা নামাজ আদায়কালে এদিক সেদিক তাকাবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা তার চেহারা নামায়ীর চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন বান্দা নামাযের মধ্যে এদিক সেদিক না তাকানো পর্যন্ত। আর আমি তোমাদের রোযার নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তি যে কন্তুর ভর্তি একটি থলেসহ একদল মানুষের সাথে আছে। কস্তুরীর সুগন্ধ দলের সবার নিকট খুবই ভালো লাগে। আর রোযাদারের মুখের সুগন্ধ আল্লাহ তাআলার নিকট কন্তুরীর সুগন্ধের চাইতেও অধিক প্রিয়। আমি তোমাদের দান-খাইরাতের আদেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে শক্ররা বন্দী করে তার ঘাড়ের সাথে হাত বেঁধে ফেলেছে এবং তাকে হত্যার জন্য বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। তখন সে বলিল, আমি আমার প্রাণের বিনিময়ে আমার সমস্ত সম্পদ তোমাদেরকে দিচ্ছি। তারপর সে নিজেকে মালের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিল [দান-খাইরাতের মাধ্যমেও বান্দা নিজেকে বিপদমুক্ত করে নেয়]। আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি যেন তোমরা আল্লাহ তাআলার যিকর কর। যিকরের উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির ন্যায় যার দুশমনেরা তার পিছু ধাওয়া করছে। অবশেষে সে একটি সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে শক্র হইতে নিজের প্রাণ রক্ষা করিল। তদ্রুপ কোন বান্দা আল্লাহ তাআলার যিকির ব্যতীত নিজেকে শাইতানের হাত থেকে মুক্ত করিতে পারে না। [সাঃআঃ] বললেনঃ আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলো প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করিয়াছেন। কথা শুনবে, আনুগত্য করিবে, জিহাদ করিবে, হিজরাত করিবে এবং জামাআতবদ্ধ হয়ে থাকিবে। যে লোক জামাআত হইতে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হল সে ইসলামের বন্ধন তার ঘাড় হইতে ফেলে দিল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। আর যে লোক জাহিলিয়াত আমলের রীতি-নীতির দিকে আহবান করে সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত। জনৈক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! সে নামাজ আদায় করলেও, রোযা রাখলেও তিনি বললেনঃ হ্যা, সে নামাজ-রোযা করলেও। সুতরাং তোমরা সেই আল্লাহ তাআলার ডাকেই নিজেদেরকে ডাকবে যিনি তোমাদেরকে মুসলিম, মুমিন ও আল্লাহ তাআলার বান্দা নাম রেখেছেন।

সহীহঃ মিশকাত [৩৬৯৪], তালীকুর রাগীব [১/১৮৯-১৯০], সহীহুল জামি [১৭২৪] আৰু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল আল-বুখারী বলেন, আল-হারিস আল-আশআরী [রাদি.] রাসূলুল্লাহঃ-এর সাহচর্য লাভ করিয়াছেন। এটি ব্যতীত তার বর্ণিত আরো হাদীস আছে। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৬৪. মুহাম্মাদ ইববু বাশশার-আবু দাউদ আত-তাইয়ালিসী হইতে বর্ণীতঃ

মুহাম্মাদ ইববু বাশশার-আবু দাউদ আত-তাইয়ালিসী হইতে, তিনি আবান ইবনি ইয়াযীদ হইতে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনি আবু কাসীর হইতে,আল-আশআরী [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী ত্র হইতে এই সূত্রে একই মর্মে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আবু সাল্লাম আল-হাবশীর নাম মামতুর। আলী ইবনিল মুবারাক-ইয়াহইয়া ইবনি আবী কাসীর-এর সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

অনুচ্ছেদ-৭৯ঃ যে মুসলিম কুরআন পাঠ করে আর যে করে না তাহাদের উপমা

২৮৬৫. আৰু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে তার উদাহরণ হল কাগজী লেবুর মতো যার গন্ধও সুবাসিত, স্বাদও ভালো। আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না তার উদাহরণ হল খেজুরের মতো যার কোন গন্ধ নেই, তবে স্বাদ খুব মিষ্টি। আর কুরআন তিলাওয়াতকারী মুনাফিক হল রাইহানা ফুলের মতো যার গন্ধ ভালো কিন্তু স্বাদ অত্যন্ত তিক্ত। কুরআন তিলাওয়াত করে না এমন মুনাফিক হল মাকাল ফলের মতো যার গন্ধও তিক্ত স্বাদও তিক্ত।

সহীহঃ নাকদুল কাত্তানী [৪৩], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন ঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি শুবাহও কাতাদার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৬৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিনের উদাহরণ হল ক্ষেতের শস্যের মতো যাকে বাতাস সর্বদা আন্দোলিত করিতে থাকে। মুমিন সদাসর্বদাই বিপদগ্ৰস্ত হইতে থাকিবে। মুনাফিক হল বট গাছের মতো যা বাতাসে না হেললেও [ঝড়ে] সমূলে উৎপাটিত হয়।

সহীহঃ তাখরাজুল ঈমান ইবনি আবী শাইবা [৮৬], সহীহাহ [২৮৮৩], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৬৭. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গাছসমূহের মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা কখনো ঝরে না। সেটিই মুমিনের উদাহরণ। তোমরা আমাকে বল, সেটা কোন গাছ? আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, সকলেই ধারণা করিতে লাগল পাহাড়ী অথবা জংলী গাছ হইবে কিন্তু আমার মনে হল সেটা নিশ্চই খেজুর গাছ। অবশেষে রসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বললেনঃ সেটা খেজুর গাছ। অথচ আমি সেটা বলিতে লজ্জা পাচ্ছিলাম [বয়সে ছোট হবার কারণে তা বলিনি]। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, আমি উমর [রাদি.]-এর নিকট আমার মনের ধারণা প্রকাশ করলাম। তিনি বলিলেন, তুমি যদি সেই কথাটা বলে দিতে তাহলে সেটা আমার নিকট এত এত সম্পদের চাইতেও অধিক প্রিয় হতো।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮০ঃ পাচ ওয়াক্ত নামাযের উপমা

২৮৬৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কি মনে কর, যদি তোমাদের মধ্যে কারো বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি ঝর্ণা থাকে আর সে প্রতিদিন পাচবার তাতে গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? তারা বলিল, না, কোন ময়লাই থাকিবে না। তিনি বললেনঃ পাচ ওয়াক্ত নামাজও ঠিক সে রকমই। আল্লাহ তাআলা এগুলোর সাহায্যে গুনাহসমূহ বিলীন করে দেন।

সহীহঃ ইরওয়াহ [১৫], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। উপরোক্ত হাদীসের মতো হাদীস কুতাইবাহ-বাকর ইবনি মুযার আল-কুরাশী হইতে, তিনি ইবনিল হাদ [রঃ] হইতে এ সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮১ঃ এই উম্মাতের সূচনা ও সমাপ্তি দুটোই উত্তম

২৮৬৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাত সেই বৃষ্টির মতো যার প্রথম ভাগ না শেষ ভাগ বেশী ভালো তা জানা যায় না।

হাসান সহীহঃ মিশকাত [৬২৭৭], সহীহাহ [২২৮৬]। আম্মার, আবদুল্লাহ ইবনি আম্র ও ইবনি উমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গরীব। আবদুর রাহমান ইবনি মাহদী হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হাম্মাদ ইবনি ইয়াহইয়া আল-আবাহকে বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী বলে মতামত দিয়েছেন। তিনি বলিতেন, ইনি হলেন আমাদের অন্যতম শাইখ [শিক্ষক]। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

অনুচ্ছেদ-৮২ঃ মানুষ এবং তার আয়ু ও কামনা-বাসনার উপমা

২৮৭০. বুরাইদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটি নুড়ি পাথর ছুড়ে দিয়ে বলিলেন, এটা এবং ওটা কিসের মত তোমরা জান কি? সাহাবীগন বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা ও তাহাঁর রাসূল [সাঃআঃ]-ই ভাল জানেন। তিনি বলেলনঃ এটা হল মানুষের কামনা-বাসনা এবং এটা হল তার হায়াৎ।

যঈফ, তালীকুর রাগীব [৪/১৩৩], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং এই সূত্রে গারীব। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৮৭১. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পূর্ববর্তী উম্মাতগণের তুলনায় তোমাদের আয়ুষ্কাল হল আসরের নামাজ হইতে সূর্যস্ত পর্যন্ত সময়। তোমাদের ও ইয়াহুদী-খ্ৰীষ্টানদের দৃষ্টান্ত এই যে, এক লোক কয়েকজন শ্রমিক নিয়োগ করিতে চাইল। সে বলিল, এমন কে আছে যে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমার কাজ করে দিবে এক কীরাতের বিনিময়েঃ অতএব ইয়াহুদীরা দুপুর পর্যন্ত এক কীরাতের বিনিময়ে কাজ করিল। লোকটি আবার বলিল, এমন কে আছে যে দুপুর হইতে আসর এবার নাসারাগণ এক কীরাতের বিনিময়ে কাজ করিল। তারপর তোমরা দুই কীরাতের বিনিময়ে কাজ করলে।এতে ইয়াহুদী-খ্ৰীষ্টানগণ রাগান্বিত হয়ে বলিল, আমরা বেশি কাজ করা সত্বেও পারিশ্রমিক কম পেলাম। তিনি [আল্লাহ তাআলা] বলেন, আমি কি তোমাদের উপর যুলুম করে তোমাদের হক নষ্ট করেছি? তারা বলিল, না। তিনি বলেন, এটা আমার অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা আমি তাকেই তা দান করি।

সহীহঃ মুখতাসারুল বুখারী [৩১২], বুখারী। আৰু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৭২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষের উপমা হল যেমন- একশত উট যার মধ্যে কোন ব্যক্তি একটি সওয়ারীযোগ্য বাহনও পায় না [অর্থাৎ শতকরা একজনও সত্যিকার মানুষ পাওয়া দুষ্কর]।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৯৯০], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৭৩. ইবনি উমার [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মানুষের দৃষ্টান্ত হল এক শত উট, যার মধ্যে তুমি একটু উটও সোয়ারীর উপযুক্ত পাবে না। অথবা তিনি বলেছেনঃ তুমি এগুলোর মধ্যে একটি ছাড়া আরোহণযোগ্য কোন উট পাবে না।

সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৭৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার ও আমার উম্মাতের উদাহরণ হল এমন এক লোক, যে আগুন প্রজ্জলিত করিল। তারপর তাতে কীট-পতঙ্গ এসে ঝাপিয়ে পড়তে লাগল। আর আমি তোমাদের কোমর ধরে [আগুনে পতিত হওয়া থেকে] বাধা দিচ্ছি, কিন্তু তোমরা তাতে ঝাপিয়ে পড়ছে।

সহীহঃ যঈফা [৩০৮২] নং হাদীসের অধীনে, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাদীসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply