দাস, ওয়ালা, পানি, মদ, পশু, কর্জ, শুফআ ও সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়
দাস, ওয়ালা, পানি, মদ, পশু, কর্জ, শুফআ ও সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয় >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪৫, ক্রয়-বিক্রয়, হাদীস (৪৬৩৬-৪৭০৫)
১.পরিছেদঃ দাস বিক্রয় করলে তার মালের শর্ত করা
২.পরিছেদঃ ক্রয়-বিক্রয়ে শর্ত করলে বিক্রি ও শর্ত উভয়ই বৈধ
৩.পরিছেদঃ ক্রয়- বিক্রয়ে ফাসিদ শর্ত করলে বিক্রি বৈধ হয়, কিন্তু শর্ত বাতিল হইয়া যায়
৪.পরিছেদঃ বণ্টনের পূর্বে গনীমতের মাল বিক্রয় করা
৫.পরিছেদঃ এজমালি সম্পত্তি বিক্রি করা
৬.পরিছেদঃ বিক্রয়কালে সাক্ষী না রাখার অবকাশ
৭.পরিছেদঃ মূল্য নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বিরোধ
৮.পরিছেদঃ আহলে কিতাবের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করা
৯.পরিছেদঃ মুদাব্বার বিক্রয় করা
১০.পরিছেদঃ মুকাতাব গোলাম বিক্রয় করা
১১.পরিছেদঃ মুকাতাবকে বিক্রি করা বৈধ, যদি সে চুক্তির অর্থ কিছুমাত্র আদায় না করে
১২.পরিছেদঃ ওয়ালা বিক্রয়
১৩.পরিছেদঃ পানি বিক্রয়
১৪.পরিছেদঃ প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রয় করা
১৫.পরিছেদঃ মদ বিক্রয় করা
১৬.পরিছেদঃ কুকুর বিক্রয় করা
১৭.পরিছেদঃ যে কুকুর বিক্রি করা যায়
১৮.পরিছেদঃ শূকর বিক্রয় করা
১৯.পরিছেদঃ উটের পাল দেওয়ার বিনিময় গ্রহন
২০.পরিছেদঃ ক্রয় করার পর ক্রেতা যদি নিঃস্ব হইয়া যায়, আর বিক্রিত মাল তার কাছে পাওয়া যায়
২১.পরিছেদঃ বিক্রিত দ্রব্যে কোন হকদারের হোক প্রমাণিত হলে
২২.পরিছেদঃ কর্জ নেওয়া
২৩.পরিছেদঃ দেনা সম্পর্কে কঠিন সতর্কবাণী
২৪.পরিছেদঃ কর্জ নেওয়ার অবকাশ
২৫.পরিছেদঃ কর্জ আদায়ে সামর্থবান লোকের টালবাহানা করা
২৬.পরিছেদঃ হাওয়ালা
২৭.পরিছেদঃ কর্জের জামিন হওয়া
২৮.পরিছেদঃ উত্তমরূপে কর্জ আদায়ের জন্য উতসাহ প্রদান
২৯.পরিছেদঃ কর্জ উসুল করিতে কোমল ব্যবহার করা
৩০.পরিছেদঃ মাল ব্যতীত শরীক হওয়া
৩১.পরিছেদঃ গোলাম-বাঁদীতে অংশীদার হওয়া
৩২.পরিছেদঃ খেজুরগাছের অংশীদার হওয়া
৩৩.পরিছেদঃ জমিতে অংশীদারি
৩৪.পরিছেদঃ শুফআ ও তার বিধান
১.পরিছেদঃ দাস বিক্রয় করলে তার মালের শর্ত করা
৪৬৩৬. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পরাগায়ণের পর খেজুর বৃক্ষ ক্রয় করে, তার ফল বিক্রেতা পাবে। তবে যদি ক্রেতা শর্ত করে নেয়, তাহলে সে পাবে। আর যে ব্যক্তি দাস বিক্রি করে, আর ঐ দাসের কিছু মাল থাকে, সেই মাল বিক্রেতার, কিন্তু যদি ক্রেতা শর্ত করে, তবে মাল তার হইবে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২.পরিছেদঃ ক্রয়-বিক্রয়ে শর্ত করলে বিক্রি ও শর্ত উভয়ই বৈধ
৪৬৩৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি এক সফরে রাসূল্ললাহ [সাঃআঃ]- এর সঙ্গে ছিলাম। পথে আমার উট অচল হইয়া গেলে আমি ঐ উটকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করলাম। এমন সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে আমার সাথে মিলিত হলেন এবং তিনি ঐ উটের জন্য দুআ করিলেন এবং তাকে হাঁকালেন। পরে তা এমন দ্রুত চলতে লাগলো যে, পূর্বে কখনও তা এমন চলেনি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন ঃ এই উট চল্লিশ দিরহামের বিনিময়ে আমার কাছে বিক্রি করে দাও। আমি বললাম ঃ আমি তা বিক্রি করবো না। তিনি বলিলেন ঃ বিক্রি করে ফেল। তখন আমি চল্লিশ দিরহামের বিনিময়ে তা বিক্রি করে ফেললাম এবং এই শর্তে করলাম যে, আমার মদিনায় পৌঁছা পর্যন্ত তাতে সওয়ার হব। যখন আমরা মদিনায় পৌঁছালাম, তখন আমি উট নিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর নিকট উপস্থিত হলাম এবং মূল্য চাইলাম। তারপর আমি ফিরে চললে রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] আমাকে ডেকে পাঠালেন। তারপর বললেনঃ তুমি কি মনে কর যে, আমি তোমার সাথে দর-কষাকষি করেছিলাম তোমার উট নেয়ার জন্য? নাও, এই তোমার উট এবং এই তোমার দিরহাম।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৩৮. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সঙ্গে আমাদের একটি পানি বহনকারী উটের উপর সওয়ার হইয়া জিহাদ করেছি। এর পর তিনি লম্বা হাদীস বর্ণনা করে বলিলেন কিছু কথা, যাহার মর্ম হলো, আমার উট অচল হইয়া গেল; রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সে উটকে হাঁকালে সেটি দ্রুত চলতে আরম্ভ করিল। এমনকি তা বাহিনীর অগ্রগামী হইয়া গেল। তখন রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] বললেনঃ হে জাবির! আমি তা দেখিছি, তোমার উট দ্রতগামী হইয়া গেছে। আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ। সে তো আপনার বরকতে। তিনি বলিলেন ঃ তুমি তা আমার নিকট বিক্রয় কর এবং মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত তাতে আরোহণ কর। আমি তা তাহাঁর নিকট বিক্রয় করলাম, যদিও আমর উটের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। আমার লজ্জা হলো যে, তিনি ক্রয় করিতে চাচ্ছেন, আর আমি তা বিক্রয় করবো না। জিহাদ শেষে আমরা যখন মদীনার নিকটবর্তী হলাম, তখন আমি দ্রুত গমনের জন্য তাহাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলাম। আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি সদ্য বিবাহিত। তিনি বলিলেন ঃ তুমি কুমারী বিবাহ করেছ, না বিধবা? আমি বললামঃ বিধবা। কারণ আমার পিতার মৃত্যুর পর তিনি কয়েকজন কুমারী কন্যা রেখে গেছেন। সেজন্য তাহাদের সামনে একটি কুমারী স্ত্রী বিবাহ করা আমার ভাল মনে হয়নি। তাই আমি বিধবা বিবাহ করেছি। যেন সে তাহাদেরকে শিক্ষা দেয় এবং আদব-কায়দার তালীম দেয়। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে অনুমতি দান করিলেন এবং বলিলেনঃ রাত্রে স্ত্রীর নিকট গমন কর। আমি মদীনায় এসে মামার নিকট উট বিক্রি করার ঘটনা বললাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদীনায় আসলে আমি ভোরে উট নিয়া গেলাম। তখন তিনি উটের মূল্য দিলেন এবং উটও ফিরিয়ে দিলেন। তিনি অন্যান্যের সঙ্গে আমাকে গনীমতের অংশ দান করিলেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৩৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক সফরে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর সঙ্গে ছিলাম। আমি উটে সওয়ার ছিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তুমি সকলের পিছনে থাক, কারণ কি? আমি বললামঃ আমার উট দুর্বল হইয়া গেছে। তিনি তার লেজ ধরে হাঁকালেন; ফলে সে এমন হলো যে, আমি সামনের লোকদের মধ্যে পৌঁছে গেলাম এবং আমি চিন্তিত হইয়া পড়লাম যে, আমার উটটির মাথা অন্যদের উটের সামনে চলে যায় কিনা। মদীনার নিকটবর্তী হলে তিনি বলিলেনঃ তোমার উটের অবস্থা কী? এটি আমার নিকট বিক্রি কর। আমি বললামঃ বিক্রয় নয়, বরং ইয়া রসূলুল্লাহ! এটি আপনারই। তিনি বলিলেন ; না, বিক্রি কর। আমি বললাম ঃ আপনি মূল্য ছাড়াই গ্রহণ করুন। তিনি বলিলেনঃ না, বিক্রি কর; আমি তা চল্লিশ দিরহামে কিনলাম। তুমি এতে সওয়ার হইতে থাক, মদিনায় পৌঁছলে আমার নিকট নিয়ে এস। আমি মদীনা পৌঁছে তাহাঁর খিদমতে উট হাযির করলাম। তিনি বিলাল [রাঃআঃ]- কে বলিলেনঃ হে বিলাল! তাকে এক উকিয়া{১} রূপা মেপে দাও, আরো এক কীরাত{২} অধিক দিও। আমি বললামঃ এই এক কীরাত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে অতিরিক্ত দান করিলেন, এজন্য আমি তা একটি থলিতে রাখলাম এবং তা সর্বদা আমার নিকট রক্ষিত থাকতো। অবশেষে হাররার{৩} দিন সিরীয়াবাসীর এলে তারা আমার নিকট থেকে সব কিছুই লুট করে নিয়ে গেল।
{১} চল্লিশ দিরহাম বা ১০.৫ তোলা রূপার ওজনবিশেষ।{২} দীনারের একাংশের এক- চতুর্থাংশ।{৩} মদীনার এক স্থানের নাম যেখানে কালো বর্ণের পাথর রয়েছে। আর ঐখানেই সিরিয়াবাসীদের সাথে মদীনাবাসীদের যুদ্ধ হইয়াছিল। এই যুদ্ধই হাররার যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ।ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৪০. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে আমাদের একটি পানি বহনকারী মন্দ উটের উপর সওয়ার দেখলেন। আমি বললামঃ আফসোস! আমাদের সর্বদা পানি বহনের খারাপ উট থাকে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে জাবির! তুমি কি এটি বিক্রয় করিবে? আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! এই উট মূল্য ছাড়াই আপনার জন্য। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! জাবিরকে ক্ষমা করুন এবং তার উপর রহম করুন। আমি এত মূল্যে এটা ক্রয় করলাম। আর আমি তোমাকে মদীনা পর্যন্ত তাতে সওয়ার হওয়ার অনুমতি দিলাম। মদীনায় পৌঁছে আমি উট প্রস্তুত করে নিয়ে গেলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে বিলাল। তাকে তার মূল্য দিয়ে দাও। আমি ফিরে যেতে থাকলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে আবার ডাকলেন। আমার আশংকা হলো যে, তিনি না আবার উটটি ফিরিয়ে দেন। তিনি বলিলেন, উটও তোমারই [অতএব তুমি তা নিয়ে যাও]।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৪৬৪১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর সঙ্গে সফর করছিলাম। আমি একটি পানি আনয়নকারী উটের উপর সওয়ার ছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি এটা এত মূল্যে বিক্রয় করিবে? আল্লাহ তোমায় ক্ষমা করুন। আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! এটা আপনারই। তিনি আবার বললেনঃ তুমি এটা এতো মূল্যে বিক্রয় করিবে কি? আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! এটা আপনারই। তিনি বললেনঃ তুমি কি এটা এতো মূল্যে বিক্রয় করিবে? আমি বললামঃ হ্যাঁ, ইয়া রসূলুল্লাহ! এটা আপনারই। আবু নাযরা[রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ “আল্লাহ তোমায় ক্ষমা করুন”- এমন একটি কথা, যা মুসলমানগণ বলে থাকে; এই এই কাজ কর, আল্লাহ তোমায় ক্ষমা করবেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩.পরিছেদঃ ক্রয়- বিক্রয়ে ফাসিদ শর্ত করলে বিক্রি বৈধ হয়, কিন্তু শর্ত বাতিল হইয়া যায়
৪৬৪২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি বারীরা [রাঃআঃ]- কে ক্রয় করলে তার মালিকগণ শর্ত করলো যে, ওয়ালা{১} তারা পাবে। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট তা উল্লেখ করলে, তিনি বলিলেনঃ তুমি আযাদ করে দাও। ওয়ালা সে-ই পাবে, যে অর্থ খরচ করে। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে ডেকে আনান এবং তার স্বামীর ব্যাপারে তাকে ইখতিয়ার দেন। সে তার স্বামী হইতে পৃথক হওয়াকেই পছন্দ করে, আর তার স্বামী ছিল স্বাধীন।
{১} ওয়ালাঃ মুক্তিপ্রাপ্ত দাসের উত্তরাধিকার।ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৪৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মুক্ত করার জন্য বারীরা [রাঃআঃ]- কে ক্রয় করার ইচ্ছা করলে তার মালিকেরা শর্ত আরোপ করে যে, তার ওয়ালা আমরা নেব। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এই ঘটনা উল্লেখ করা হলে, তিনি বলিলেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দাও। কেননা ওয়ালা সে-ই পাবে, যে মুক্ত করেছে। একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর নিকট গোশত উপস্থিত করা হলে, কেউ কেউ বললোঃ এ তো সাদকার গোশত যা বারীরা [রাঃআঃ]- কে দেওয়া হইয়াছে। তখন তিনি বলিলেনঃ বারীরার জন্য সাদকা, আর আমাদের জন্য [বারীরার পক্ষ হইতে] হাদিয়া। বারীরা মুক্ত হওয়ার পর তাকে ইখতিয়ার দেওয়া হলো[যে, সে ইচ্ছা করলে তার স্বামীর কাছে থাকতে পারে বা পৃথক হইতে পারে]।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৪৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা [রাঃআঃ] একজন দাসী ক্রয় করে মুক্ত করার ইচ্ছা করলে তার মালিকেরা বললোঃ আমরা এই দাসীকে আপনার নিকট এই শর্তে বিক্রয় করিতে পারি যে, তার ওয়ালা আমরা পাবো। তিনি তা রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ]-এর নিকট বর্ণনা করলে, তিনি বলিলেনঃ এই শর্ত যেন তোমাকে ক্রয় করা হইতে বিরত না রাখে। কেননা ওয়ালা ঐ ব্যক্তিরই হইবে যে মুক্ত করিবে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিছেদঃ বণ্টনের পূর্বে গনীমতের মাল বিক্রয় করা
৪৬৪৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বণ্টনের পূর্বে গনীমতের মাল বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন, [যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে] যারা অন্তঃসত্তা, সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তাহাদের সাথে সহবাস করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আর বন্য জন্তুর মধ্যে যেসব দাঁতে শিকার করে, সেগুলোর গোশ্ত খেতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫.পরিছেদঃ এজমালি সম্পত্তি বিক্রি করা
৪৬৪৬. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক এজমালি সম্পত্তিতে শুফ্আ [ক্রয়ের অগ্রাধিকার] রয়েছে, তা বাগান হোক অথবা ঘরবাড়ি হোক। কাজেই এক শরীকের জন্য তা বিক্রয় করা বৈধ হইবে না অন্য শরীকের না জানিয়ে। যদি বিক্রয় করে ফেলে, তবে অন্য শরীকই তার বেশি হকদার, যতক্ষণ না সে অনুমতি দান করে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬.পরিছেদঃ বিক্রয়কালে সাক্ষী না রাখার অবকাশ
৪৬৪৭. উমারা ইবনি খু্যায়মা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর চাচা যিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবী ছিলেন, তাহাঁর নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক বেদুঈন হইতে একটি ঘোড়া ক্রয় করিলেন। তারপর বেদুঈন ঘোড়ার মূল্য গ্রহণের জন্য তাহাঁর পিছনে চলল। নাবী [সাঃআঃ] দ্রুত চলছিলেন আর সে ধীরে। এ সময়, লোকজন তার সামনে পড়লে তারা ঘোড়ার দরদাম করিতে লাগলো। তারা জানতো না যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা ক্রয় করিয়াছেন। তাই তারা তার স্থিরীকৃত মূল্যের উপর আরও মূল্য বাড়িয়ে বলিতে লাগলো। শেষে ঐ বেদুঈন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আহবান করে বলিতে লাগল, আপনি যদি এটা ক্রয় করেন তবে করুন, না হয় আমি অন্যের নিকট বিক্রি করে দিচ্ছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথা শুনে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ তুমি কি এটা আমার নিকট বিক্রি করনি? সে বললোঃ না, আমি এটা আপনার নিকট বিক্রি করিনি। তিনি বলিলেনঃ আমি এটা তো তোমার থেকে ক্রয় করে নিয়েছি। কোন কোন লোক এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর পক্ষ অবলম্বন করলো, আর কেউ কেউ বেদুঈনের পক্ষ অবলম্বন করলো। বেদুইন বললোঃ তা হলে আপনি সাক্ষী পেশ করুন, যে সাক্ষ্য দেবে যে, আমি এটা আপনার নিকট বিক্রয় করেছি। তখন খুজায়মা ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] বলিলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি তাহাঁর নিকট এটা বিক্রয় করেছ। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খুযায়মাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কেন সাক্ষ্য দিচ্ছ [তুমি তো উপস্থিত ছিলে না]? তিনি বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনাকে সত্য নাবী বলে বিশ্বাস করার দরুন। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] খুযায়মা [রাঃআঃ]- এর একার সাক্ষ্যকে দুই ব্যক্তির সাক্ষ্যরূপে সাব্যস্ত করেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭.পরিছেদঃ মূল্য নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বিরোধ
৪৬৪৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছিঃ যখন ক্রেতা এবং বিক্রেতা মূল্যের ব্যাপারে বিরোধ করিবে, আর তাহাদের মধ্যে সাক্ষী না থাকিবে, তখন বিক্রেতার কথা ধর্তব্য হইবে অথবা তারা সে বেচাকেনা পরিত্যাগ করিবে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৪৯. আবদুল মালিক ইবন্ উবায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
একদা আমরা আবু উবায়দা ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ –এর নিকট উপস্থিত হলাম। এমন সময় সেখানে দুইজন লোক আসল, যারা মাল বিক্রি করেছে। এক ব্যক্তি বললোঃ আমি তো এত মূল্যে খরিদ করেছি। অন্যজন বললোঃ এত মূল্যে বিক্রয় করেছি। আবু উবায়দা [রাঃআঃ] বলিলেনঃ ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ]-এর নিকট এরূপ একটি মোকদ্দমা আসলে তিনি বলিলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তাহাঁর নিকট অনুরূপ এক মোকদ্দমা আসলে তিনি বিক্রেতাকে শপথ করিতে বলিলেন এবং ক্রেতাকে বলিলেন, এই মূল্যে হয় তুমি তা ক্রয় কর, না হয় তা পরিত্যাগ কর।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮.পরিছেদঃ আহলে কিতাবের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করা
৪৬৫০. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ইয়াহুদীর নিকট হইতে ধারে কিছু খাদ্যবস্তু খরিদ করেন এবং তিনি তাহাঁর লৌহ বর্ম বন্ধক রাখেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৫১. ইবনি আব্বাস[রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন ইনতিকাল করেন, তখনও তাহাঁর লৌহ বর্ম এক ইয়াহূদীর নিকট ত্রিশ সা যবের বিনিময়ে বন্ধক ছিল। যা তিনি তাহাঁর পরিবারস্থ লোকের জন্য খরিদ করেছিলেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯.পরিছেদঃ মুদাব্বার বিক্রয় করা
৪৬৫২. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আযরা গোত্রের এক ব্যক্তির তার এক দাসকে তার মৃত্যুর পর সে মুক্ত হইবে এই মর্মে মুক্তি দিল। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেনঃ এই দাস ব্যতীত তোমার নিকট অন্য কোন মাল আছে কী? সে বললোঃ না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আমার নিকট হইতে এই দাসকে কেউ ক্রয় করিবে কি? তখন নুআয়ম ইবনি আবদুল্লাহ ঐ দাসকে আটশত দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করিলেন এবং ঐ দিরহামের তাহাঁর নিকট উপস্থিত করিলেন। তিনি এই দিরহাম ঐ মালিকেকে দিয়ে বলিলেনঃ প্রথমে নিজের জন্য খরচ কর। তারপর কিছু থাকলে তা পরিবারের লোকদেরকে দান কর। আরও অবশিষ্ট থাকলে আত্বীয়- স্বজনকে দান কর। তারপরও যদি থেকে যায়, তবে এরূপ, এরূপ এবং এরূপ। অর্থাৎ তোমার সামনে, তোমার ডানে এবং তোমার বামে দান কর।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৫৩. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু মাযকূর নামের এক আনসারী তাহাঁর ইয়াকূব নামের দাসকে বলিল, তুমি আমার মৃত্যুর পর মুক্ত হইয়া যাবে। তার এ ছাড়া কোন অর্থ-সম্পদ ছিল না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে ডেকে আনলেন। তারপর বলিলেন, কে এই গোলামকে ক্রয় করিবে? নুআয়ম ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] ঐ গোলামকে আটশত দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ দিরহামগুলো আনসারী ব্যক্তিকে দিয়ে বলিলেন, তোমাদের কেউ গরীব হলে সে যেন নিজ হইতে আরম্ভ করে। তারপরও কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে যেন স্বীয় পরিবারস্থ লোকের জন্য ব্যয় করে। তারপরও কিছু থাকলে তা আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ব্যয় করিবে। তারপরও কিছু অবশিষ্ট থাকলে, এদিক-ওদিক গরীব-দুঃখীদের দান করিবে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৫৪. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] মুদাব্বার গোলাম বিক্রি করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০.পরিছেদঃ মুকাতাব গোলাম বিক্রয় করা
৪৬৫৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বারীরা [রাঃআঃ] তাহাঁর মুক্তিলাভের চুক্তিতে ধার্যকৃত অর্থ সাহায্য চাওয়ার জন্য আয়েশা [রাঃআঃ]-এর নিকট আসলেন। তিনি বললেনঃ তুমি গিয়ে তোমার মালিকদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তারা এ কথায় সম্মত হয় যে, আমি তাহাদের সকল প্রাপ্য আদায় করে দিলে ওয়ালা আমার হইবে, তা হলে আমি তোমার সমুদয় প্রাপ্য আদায় করে দেব। বারীরা [রাঃআঃ] তাহাঁর মালিকদের একথা জানালে তারা তা অস্বীকার করে বললোঃ যদি আয়েশা তোমাকে সাহায্য করে পূণ্য অর্জন করিতে চান তবে করিতে পারেন, কিন্তু ওয়ালা আমাদেরই থাকিবে। আয়েশা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট একথা উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ তুমি ক্রয় করে তাকে মুক্ত করে দাও। ওয়ালা তারই, যে মুক্ত করে। এরপর তিনি বলিলেনঃ আফসোস! লোকের কি হলো, তারা এমন শর্ত আরোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যারা এমন শর্ত করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা পূর্ণ হইবে না, যদিও শতবার শর্ত করে। আল্লাহর শর্তই অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও পালনীয়।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১.পরিছেদঃ মুকাতাবকে বিক্রি করা বৈধ, যদি সে চুক্তির অর্থ কিছুমাত্র আদায় না করে
৪৬৫৬. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ বারীরা [রাঃআঃ] আমার নিকট এসে বললোঃ হে আয়েশা! আমি আমার মালিকদের সাথে সাত উকিয়ার বিনিময়ে মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবদ্ধ হইয়াছি, প্রতি বছর আমি এক উকিয়া আদায় করবো। অতএব আপনি এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন।
সে তখনও কিছুই আদায় করেনি। আয়েশা[রাঃআঃ] তাহাঁর প্রতি সদয় হইয়া বলেনঃ তুমি তোমার মালিকদের কাছে গিয়ে বল, যদি তারা সম্মত হয়, তবে আমি একত্রেই তাহাদের প্রাপ্য সাত উকিয়া আদায় করে দেব কিন্তু ওয়ালা আমারই হইবে। তারা বললোঃ আয়েশা [রাঃআঃ] ইচ্ছা করলে সওয়াবের উদ্দেশ্য তোমার সাথে ভাল ব্যবহার যা ইচ্ছা করিতে পারেন, কিন্তু ওয়ালা আমাদের থাকিবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আয়েশা[রাঃআঃ] এটা প্রকাশ করলে তিনি বলিলেনঃ তাহাদের কথায় তুমি এর থেকে বিরত থেক না। তুমি তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দাও। কেননা ওয়ালা ঐ ব্যক্তির হইবে, যে মুক্ত করে। তিনি তাই করিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ লোকের অবস্থা কী হলো যে, তারা এমন শর্ত আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে এমন শর্ত আরোপ করিবে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তার সে শর্ত বাতিল বলে গণ্য হইবে, তাতে শত শর্তই করুক না কেন। আল্লাহর আদেশই অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং আল্লাহর শর্তই বেশি শক্তিশালী। ওয়ালা আযাদকারী ব্যক্তিই পাবে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২.পরিছেদঃ ওয়ালা বিক্রয়
৪৬৫৭. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়ালা বিক্রয় বা হেবা করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
{১} আযাদকৃত দাস-দাসীর উত্তরাধিকার।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৫৮. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়ালা বিক্রয় বা হেবা করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৫৯. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়ালা বিক্রি করিতে বা হেবা করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩.পরিছেদঃ পানি বিক্রয়
৪৬৬০. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পানি বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৬১. আবু মিনহাল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইয়াস ইবনি উমার [রাঃআঃ] আরেকবার বলেন, ইযাস ইবনি আবদ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে পানি বিক্রি নিষেধ করিতে শুনিয়াছি।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪.পরিছেদঃ প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রয় করা
৪৬৬২. ইয়াস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৬৩. ইয়াস ইবনি আবদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ অতিরিক্ত পানি বিক্রয় করো না। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অতিরিক্ত পানি বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫.পরিছেদঃ মদ বিক্রয় করা
৪৬৬৪. ইবনি ওয়ালা মিসরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর নিকট আঙুর নিংড়ানো পানি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এক মটকা মদ হাদিয়া দিয়েছিল। তখন তিনি তাকে বললেনঃ তোমার কি জানা নেই যে, আল্লাহ্ তাআলা মদ হারাম করিয়াছেন? এক ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির কানে কানে কি কথা বললো, আর কী বললো তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি তার নিকটস্থ এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি এর কানে কানে কী বলেছ? সে বললোঃ আমি তার কানে কানে বলেছি, তুমি এটা বিক্রয় করে দাও। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যেই সত্তা এর পান করাকে হারাম করিয়াছেন, তিনি এর বিক্রয় করাও হারাম করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৬৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন সুদের আয়াত নাযিল হলো, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বরে দাঁড়িয়ে তা পাঠ করে শোনালেন। এরপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬.পরিছেদঃ কুকুর বিক্রয় করা
৪৬৬৬. আবু মাসউদ উকবা ইব্ন আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুকুরের মূল্য, পতিতার রোজগার এবং গণকের পারিতোষিক নিষিদ্ধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৬৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কতকগুলো বস্তুকে হারাম বলেছেন, এদের মধ্যে তিনি কুকুরের মূল্যের কথাও উল্লেখ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
16পরিছেদঃ যে কুকুর বিক্রি করা যায়
৪৬৬৮. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুকুর ও বিড়ালের মূল্য নিতে নিষেধ করিয়াছেন; তবে শিকারী কুকুর ব্যতীত।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮.পরিছেদঃ শূকর বিক্রয় করা
৪৬৬৯. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় বলিতে শোনেনঃ আল্লাহ্ এবং তাহাঁর রাসূল মদ, মৃত জন্তু, শূকর এবং মূর্তি বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। এক লোক জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! মৃত জন্তুর চর্বি বিক্রয় সম্বদ্ধে আপনি কী বলেন, যা দ্বারা নৌকা ইত্যাদি তৈলাক্ত করা হয় এবং চামড়ার তেল লাগানো হয়, আর লোকে তার দ্বারা প্রদীপ জ্বালায়? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ না, তা হারাম। এরপর তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন, যখন আল্লাহ্ তাআলা তাহাদের উপর চর্বি হারাম করেন, তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রয় করিল এবং তার মূল্য ভোগ করিল।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯.পরিছেদঃ উটের পাল দেওয়ার বিনিময় গ্রহন
৪৬৭০. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উটের পাল দেওয়ার বিনিময় গ্রহন করিতে, পানি বিক্রয় করিতে এবং কৃষিযোগ্য জমি বিক্র্য় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৭১. আবদুল্লাহ ইব্ন উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীর সাথে নরের পাল দেয়ার পর বিনিময় গ্রহন করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৭২. আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কিলাব গোত্রের এক অংশ বনী সাক-এর এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে নর ও মাদী পশুর পাল দেওয়ার বিনিময় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে তা থেকে নিষেধ করেন। তখন সে ব্যক্তি বলেঃ এর বিনিময়ে আমাদেরকে সম্মান করা হয়।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৭৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সিঙ্গা লাগানোর বিনিময়, পশুর পাল দেওয়ার বিনিময় এবং কুকুর বিক্রির বিনিময় নিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৭৪. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নর-মাদীর পাল দিয়ে বিনিময় গ্রহন করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৭৫. আবু হাযিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুকুরের মূল্য গ্রহন করিতে এবং নর-মাদীর পাল দিয়ে বিনিময় গ্রহন করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২০.পরিছেদঃ ক্রয় করার পর ক্রেতা যদি নিঃস্ব হইয়া যায়, আর বিক্রিত মাল তার কাছে পাওয়া যায়
৪৬৭৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] সূত্রে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন মাল ক্রয় করার পর নিঃস্ব হইয়া যায়, আর তার নিকট বিক্রিত মাল তদবস্থায় পাওয়া যায় তবে সে মালে অন্যান্য লোক অপেক্ষা বিক্রেতাই অধিক হকদার।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৭৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি নিঃস্ব হইয়া যায়, আর তার নিকট কারো বিক্রিত মাল হুবহু পাওয়া যায়, আর বিক্রেতা তা চিনতে পারে, তবে তা সেই ব্যক্তিরই, যে তা বিক্রি করেছে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৭৮. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সময়ে এক ব্যক্তির ক্রয় করা ফল বিনষ্ট হওয়ায় তার প্রচুর দেনা হইয়া গেল। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা তাকে দান কর। লোকে তাকে দান করলো, কিন্তু তা তার দেনা পরিমাণ হলো না। তখন যারা পাওনাদার ছিল, তাহাদেরকে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা যা আছে তাই নিয়ে নাও, এর অতিরিক্ত কিছুই পাবে না।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২১.পরিছেদঃ বিক্রিত দ্রব্যে কোন হকদারের হোক প্রমাণিত হলে
৪৬৭৯. উসায়দ ইবনি হুযায়র ইবনি সিমাক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফয়সালা দিয়েছেন, যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন ব্যক্তির নিকট তার মাল পায় যাহার উপর চুরির অভিযোগ আনা যায় না, তবে তার ইচ্ছা হলে সে ঐ মূল্য দিয়ে তা গ্রহণ করিতে পারে, যে মূল্যে সে ব্যক্তি ক্রয় করেছে। আর ইচ্ছা করলে চোরের অনুসন্ধান করিতে পারে। আবু বকর এবং উমার [রাঃআঃ]- ও এরূপ ফয়সালা প্রদান করেন।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৮০. ইকরিমা ইবনি খালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উসায়দ ইবনি হুযায়র আনসারী [রাঃআঃ] ইয়ামামার শাসনকর্তা ছিলেন। মারওয়ান তার নিকট লিখেন যে, মুয়াবিয়া [রাঃআঃ] তার নিকট লিখেছেনঃ যাহার কোন বস্তু চুরি যায়, তবে সে তার অধিক হকদার, যেখানেই সে তা পাক না কেন। উসায়দ [রাঃআঃ] বলেনঃ মারওয়ান আমাকে এরূপ লিখলে আমি মারওয়ানকে লিখলামঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফয়সালা দিয়েছেনঃ যে ব্যক্তি চোরের নিকট হইতে তা ক্রয় করেছে সে যদি এমন লোক হয়, যাহার প্রতি চুরির অভিযোগ নেই, তবে মালের মালিক ইচ্ছা করলে মুল্য দিয়ে তা নিবে, না হয় চোরের অনুসন্ধান করিবে। এরপর এর অনুকরণে আবু বকর, উমার [রাঃআঃ] এবং উসমান [রাঃআঃ] ফয়সালা করেন। মুয়াবিয়া [রাঃআঃ] মারওয়ানকে লিখেন যে, তুমি এবং উসায়দ আমার বিপরীতে ফয়সালা দিতে পার না; বরং আমি যে কর্তৃত্ব লাভ করেছি, সে জন্য আমিই তোমাদের বিপরীতে ফয়সালা দিতে পারি। অতএব আমি যে আদেশ করেছি তা কার্যকর কর। মারওয়ান মুয়াবিয়া [রাঃআঃ]- এর চিঠি আমার নিকট পাঠালে আমি বললামঃ আমি যতদিন শাসক থাকি, ততদিন তাহাঁর কথামত বিচার করবো না।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৮১. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক কারও কাছে তার মাল পেলে সে-ই তার মালের অধিক হকদার। আর ক্রেতা সেই ব্যক্তিকে ধরবে, যে তার কাছে তা বিক্রি করেছে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৬৮২. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কোন মহিলাকে দুই অভিভাবক বিয়ে দেয়, তবে প্রথম যাহার সাথে বিবাহ হইয়াছে, সে তারই স্ত্রী হইবে। আর যদি কেউ কোন জিনিস দুজন লোকের কাছে বিক্রি করে, তবে তা প্রথমজনেরই প্রাপ্য।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২২.পরিছেদঃ কর্জ নেওয়া
৪৬৮৩. ইসমাইল ইবনি ইবরাহীম ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আবু রাবীআ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হইতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট হইতে চল্লিশ হাজার দিরহাম কর্জ নিয়েছিলেন। এরপর তাহাঁর নিকট মাল আসলে তিনি তা আদায় করে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমার ঘরে এবং মালে বরকত দান করুন। কর্জের বিনিময় তো এই যে, লোক কর্জদাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিবে এবং তা আদায় করিবে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩.পরিছেদঃ দেনা সম্পর্কে কঠিন সতর্কবাণী
৪৬৮৪. মুহাম্মদ ইবনি জাহাশ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় তিনি আকাশের দিকে তাহাঁর মাথা উঠান, তারপর তাহাঁর হাত ললাটের উপর স্থাপন করে বলেনঃ সুব্হানাল্লাহ্! কী কঠোরতা অবতীর্ণ হলো! আমরা ভয়ে নির্বাক হইয়া গেলাম। পরদিন আমি জিজ্ঞাস করলামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! ঐ কঠোরতা কী ছিল, যা অবতীর্ণ হইয়াছে? রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যাঁহার নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ তাহাঁর কসম। যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, আবার জীবন লাভ করে; আবার শহীদ হয় এবং আবার জীবিত হয়, পরে আবার শহীদ হয়, আর তার উপর কর্জ থাকে, তবে তার পক্ষ হইতে সে কর্জ আদায় না হওয়া পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৪৬৮৫. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা এক জানাযায় রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তিনবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ এখানে অমুক গোত্রের কেউ আছে কি? এক ব্যক্তি দাঁড়ালে তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম দুইবার উত্তর দাও নি কেন? আমি তোমার ভালোর জন্যই ডেকেছি। এরপর তিনি তাহাদের এক ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেনঃ সে তো মারা গেছে, কিন্তু সে দেনার দায়ে আবদ্ধ রয়েছে।
ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪.পরিছেদঃ কর্জ নেওয়ার অবকাশ
৪৬৮৬. ইমরান ইবনি হুযায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ মায়মুনা [রাঃআঃ] লোকের নিকট হইতে অনেক কর্জ নিতেন। তাহাঁর পরিবারের লোক তাকে এ ব্যাপারে কঠিন কথা বললো, তিরস্কার করলো এবং তাহাঁর উপর অসন্তুষ্ট হলো। তখন তিনি বলিলেন, আমি কর্জ নেওয়া পরিত্যাগ করব না। কারণ, আমি আমার প্রিয়তম [সাঃআঃ]- কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কর্জ করে আর আল্লাহ তাআলা অবগত আছেন যে, সে তা আদায়ের ইচ্ছা রাখে, তা হলে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে তার কর্জ পরিশোধ করে দিবেন।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৮৭. উবায়দুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উতবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা [রাঃআঃ] কর্জ গ্রহণ করিতেন। তাঁকে বলা হলোঃ হে উম্মুল মুমিনীন। আপনি তো কর্জ নিচ্ছেন, অথচ এত কর্জ পরিশোধ করার মত সম্পত্তি আপনার নেই। তিনি বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]- কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কর্জ নিয়ে তা পরিশোধের ইচ্ছা রাখে, আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করে থাকেন।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৫.পরিছেদঃ কর্জ আদায়ে সামর্থবান লোকের টালবাহানা করা
৪৬৮৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তোমাদের কাউকে [তার প্রাপ্যের ব্যাপারে] ধনী ব্যক্তির উপর হাওয়ালা করা হলে সে যেন তা গ্রহণ করে নেয়। আর যদি ধনী লোক কর্জ আদায়ে টালবাহানা করে, তবে তা হইবে যুলুম।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৮৯. আমর ইবনি শারীদ [রাঃআঃ] তাহাঁর পিতা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ধনী ব্যক্তি কর্তৃক দেনা পরিশোধে টালবাহানা করাটা তার মানহানি {অর্থাৎ, তার সম্পর্কে অভিযোগ করা} এবং শাস্তিকে বৈধ করে দেয়।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৪৬৯০. ইবনি শারীদ [রাঃআঃ] তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ধনবান লোক যদি কর্জ আদায় করিতে টালবাহানা করে, তবে তার মানহানি ঘটানো এবং তাকে শাস্তি দেওয়া বৈধ হইয়া যায়।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৬.পরিছেদঃ হাওয়ালা
৪৬৯১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ধনী ব্যক্তির কর্জ আদায় করিতে দেরী করা যুলুম। আর তোমাদের কাউকে যদি কর্জ আদায় করার ব্যাপারে ধনীর উপর হাওয়ালা করা হয়, তবে সে যেন তা গ্রহণ করে নেয়।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭.পরিছেদঃ কর্জের জামিন হওয়া
৪৬৯২. আবু কাতাদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক আনসারী ব্যক্তির মৃতদেহ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর নিকট আনা হলো যেন তিনি তার জানাযা পড়ান। তখন তিনি বললেনঃ এর উপর তো কর্জ রয়েছে। আবু কাতাদা বললেনঃ আমি এর যামিন হলাম। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তার সম্পূর্ণ কর্জের? আবু কাতাদা [রাঃআঃ] বলিলেন, সম্পূর্ণ কর্জের।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮.পরিছেদঃ উত্তমরূপে কর্জ আদায়ের জন্য উতসাহ প্রদান
৪৬৯৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] সূত্রে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে উত্তমরূপে কর্জ পরিশোধ করে।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯.পরিছেদঃ কর্জ উসুল করিতে কোমল ব্যবহার করা
৪৬৯৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] সূত্রে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি কখনও কোন ভাল কাজ করেনি। তবে সে মানুষের সংগে বাকিতে কারবার করত আর তার প্রতিনিধিকে বলত, যেখানে কর্জদার নিঃস্ব গরীব হয়, সেখানে ছেড়ে দাও, মাফ করে দাও। হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাদের মাফ করে দেবেন। যখন সেই লোকের মৃত্যু হল, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি কোন নেক কাজ করেছ? সে ব্যক্তি বললঃ না, কিন্তু আমার এক চাকর ছিল, আমি লোকদেরকে কর্জ দিতাম, যখন আমি তাকে কর্জ উসূল করিতে পাঠাতাম, তখন বলে দিতামঃ যদি সহজভাবে পাওয়া যায়, তবে তা নেবে আর যেখানে কষ্ট হয়, সেখানে ছেড়ে দেবে, ক্ষমা করে দেবে। তখন আল্লাহ তাআলা বললেনঃ আমিও তোমাকে ক্ষমা করলাম।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৪৬৯৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক ব্যক্তির লোকদের কর্জ দিত; যখন সে কোন গরীবকে দেখতো, তখন সে তার চাকরকে বলতোঃ তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। এরপর লোকটির মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলার দরবারে উপস্থিত হলে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬৯৬. উসমান ইবনি আফ্ফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এমন এক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যে ব্যক্তি ক্রয় কর্জত, বিক্রয় কর্জত, উসূল কর্জত এবং আদায় কর্জত লোকের সাথে কোমল ব্যবহার করত।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩০.পরিছেদঃ মাল ব্যতীত শরীক হওয়া
৪৬৯৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি, আম্মার এবং সাদ বদরের দিন অংশীদার হলাম। সাদ [রাঃআঃ] তো দুইজন বন্দি ধরে আনলেন কিন্তু আমি এবং আম্মার কিছুই আনলাম না।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৬৯৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ]} হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোলামের মধ্যে তার অংশ মুক্ত করে দেয়, তখন সে যেন অন্যের অংশও নিজের মাল দ্বারা মুক্ত করে দেয়, যদি তার নিকট গোলামের মূল্য পরিমাণ মাল থাকে।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩১.পরিছেদঃ গোলাম-বাঁদীতে অংশীদার হওয়া
৪৬৯৯. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দাস অথবা দাসীর মধ্যে নিজের অংশ মুক্ত করে, আর তার এত মাল রয়েছে, যা সেই দাস বা দাসীর অবশিষ্ট অংশের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সে তার মাল দ্বারা মুক্ত হইয়া যাবে।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩২.পরিছেদঃ খেজুরগাছের অংশীদার হওয়া
৪৭০০. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যাহার নিকট জমি অথবা খেজুর গাছ থাকে, সে যেন তার অংশীদারকে না জানিয়ে তা বিক্রয় না করে।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৩.পরিছেদঃ জমিতে অংশীদারি
৪৭০১. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রত্যেক এমন এজমালি সম্পত্তিতে শুফআ- এর আদেশ করিয়াছেন, যা এখনও বন্টন করা হয়নি, তা ঘরবাড়ি হোক বা বাগান, এক অংশীদারের নিজের অংশ অন্য অংশীদারকে না জানিয়ে এবং তার অনুমতি ছাড়া বিক্রি করা বৈধ নয়। সেই অংশীদারের ইচ্ছা, সে নিতেও পারে, নাও নিতে পারে। যদি কোন অংশীদার অন্য অংশীদারকে না জানিয়ে বিক্রি করে দেয়, তবে সে তার অধিক হকদার।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৪.পরিছেদঃ শুফআ ও তার বিধান
৪৭০২. আবু রাফে [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিবেশী শুফআর বেশি হকদার।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭০৩. আমর ইবনি শারীদ তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জমি আছে, যাতে কারও অংশীদারিত্ব নেই এবং কারো ভাগও নেই। তবে আমার প্রতিবেশী আছে। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ প্রতিবেশী শুফআর অদিক হকদার।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭০৪. আবু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শুফআ প্রত্যেক এমন সম্পত্তিতে রয়েছে, যা বন্টন করা হয়নি। যখন সীমানা চিহ্নিত হইয়া যায়, পথ নির্দিষ্ট হইয়া যায়, তখন আর শুফআ থাকে না।
সুনানে নাসায়ী pdf ক্রয়-বিক্রয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭০৫. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শুফআ এবং প্রতিবেশীর অধিকারের পক্ষে ফয়সালা দিয়েছেন।
সুনানে নাসায়ী pdf
Leave a Reply