দেউলিয়া ও সম্পত্তি এর কর্তৃত্ব বিলোপ
দেউলিয়া ও সম্পত্তি এর কর্তৃত্ব বিলোপ >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-৬ঃ দেউলিয়া ও সম্পত্তি এর কর্তৃত্ব বিলোপ
পরিচ্ছেদ ০১. নিঃস্ব ব্যক্তির নিকটে ঋণদাতা তার মাল হুবহু পেয়ে গেলে তার বিধান
পরিচ্ছেদ ০২. সামর্থবান ব্যক্তির ঋণখেলাপি হওয়া হারাম এবং তার বিরুদ্ধে যা করা বৈধ
পরিচ্ছেদ ০৩. নিঃস্ব ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন এবং তাকে দান করা শরীয়তসম্মত
পরিচ্ছেদ ০৪. নিঃস্ব ব্যক্তির মালিকানা হরণ শরীয়তসম্মত
পরিচ্ছেদ ০৫. গুপ্ত স্থানে লোম উঠার মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া
পরিচ্ছেদ ০৬. -স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে স্ত্রীর নিজের মাল হইতে খরচ করার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৭. কোন ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া তিনজন সাক্ষী ব্যতীত গ্রহীত হইবে না
পরিচ্ছেদ ০১. নিঃস্ব ব্যক্তির নিকটে ঋণদাতা তার মাল হুবহু পেয়ে গেলে তার বিধান
৮৬৪ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যখন কেউ তার মাল এমন লোকের কাছে পায়, যে নিঃসম্বল হয়ে গেছে, তবে অন্যের চেয়ে সে-ই তার বেশী হকদার। {৯২৪}
ইমাম আবূ দাউদ ও মালিক উক্ত আবূ বাক্র [রাঃআঃ] থেকে মুরসালরূপে এরূপ শব্দযোগে বর্ণনা করিয়াছেন `কোন ব্যক্তি কোন বস্তু [বাকীতে] বিক্রয় করিল, তারপর ক্রেতা অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়লো, অথচ বিক্রেতা তার মূল্য বাবদ কিছুই গ্রহণ করেনি-যদি ঐ বিক্রিত বস্তুটি পূর্ববৎই থেকে থাকে তাহলে বিক্রেতাই ঐ বস্তুর অধিক হকদার হইবে।
আর যদি ক্রেতা মরে গিয়ে থাকে তাহলে বিক্রেতা অন্যান্য মহাজনদের সমপর্যায়ভুক্ত হইবে। {৯২৫} [সহিহ লিগাইরিহি]
বাইহাকি একে মাওসূল বা অবিচ্ছিন্ন সানাদযুক্ত হাদিসরূপে বর্ণনা করিয়াছেন ও আবূ দাউদের অভিমতের অনুকূলে হাদিসটিকে জঈফ বলেছেন। {৯২৬}
আর `উমার বিন খালদাহ কর্তৃক আবূ দাউদে ও ইবনু মাযাহইতে বর্ণিত হয়েছে- আমরা আমাদের এক নিঃস্ব বন্ধুর ব্যাপারে আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ]-এর নিকটে আসলাম। তিনি বলিলেন, আমি এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর ফয়সালা অনুযায়ী ফয়সালা দেব। [তা হচ্ছে] যে ব্যক্তি বাকীতে কোন বস্তু ক্রয় করার পর নিঃস্ব হয়ে যায় অথবা মারা যায়, আর বিক্রেতা ব্যক্তি তার ঐ মাল ঠিকভাবে পেয়ে যায়, তাহলে সে ঐ বস্তুর সর্বাপেক্ষা অধিক হকদার হইবে। হাকিম হাদিসটিকে সহীহ্ বলেছেন। আর আবূ দাউদ একে জঈফ বলেছেন এবং অত্র হাদীসে মৃত্যুর উল্লেখ সংযেজিত অংশটুকুকেও তিনি জঈফ বলেছেন। {৯২৭}
{৯২৪} বুখারি ২৪০২, মুসলিম ১৫৫৯, তিরমিজি ১২৬২, ৪৬৭৬, নাসায়ী ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, আবূ দাউদ ৩৫১৯, ৩৫২০, ইবনু মাযাহ ২৩৫৮, ২৩৫৯, আহমদ ৭০৮৪, ৭৩২৫, ৭৩৪৩, মুওয়াত্তা মালেক ১৩৮৩, দারেমী ২৫৯০। {৯২৫} আবূ দাউদ ৩৫২২। {৯২৬} বাইহাকি ৬ষ্ঠ খণ্ড ৪৭ পৃষ্ঠা। {৯২৭} হাদীসের বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে সহিহ লিগাইরিহি, তাওযিহুল আহকাম ৪/৪৮০ পৃঃ। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ০২. সামর্থবান ব্যক্তির ঋণখেলাপি হওয়া হারাম এবং তার বিরুদ্ধে যা করা বৈধ
৮৬৫ -আম্র ইবনু শারীদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, সামর্থ্যবান ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করার অপরাধ তার সম্মানহানি ও শাস্তিপ্রাপ্তিকে বৈধ করে দেয়। -বুখারি হাদিসটিকে মু`আল্লাকরূপে বর্ণনা করিয়াছেন; ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। {৯২৮}
{৯২৮} ইবনু মাযাহ ৩৬২৭, আবূ দাঊদ ৩৬২৮, নাসাঈ ৪৬৯০, ইবনু মাযাহ ২৪২৭, আহমাদ ১৮৯৬২। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৩. নিঃস্ব ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন এবং তাকে দান করা শরীয়তসম্মত
৮৬৬ -আবূ সা`ঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর যুগে কোন ব্যক্তি ফল ক্রয় করে তাতে বিপদগ্ৰস্ত হয়ে পড়েন এবং তার ঋণের বোঝা বেড়ে যায়। ফলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা তাকে সাদাকাহ [সাহায্য] প্রদান কর। লোকেরা তাকে সাদাকাহ বা সাহায্য করলো কিন্তু ঐ সাহায্যের পরিমাণ ঋণ সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করার মত হল না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার পাওনাদারদেরকে বলিলেন, যা পাচ্ছ তা নাও, এর অধিক আর তোমাদের জন্য হইবে না। {৯২৯}
{৯২৯} মুসলিম ১৫৫৬, তিরমিজি ৬৫৫, নাসায়ী ৪৫৩০, ৪৬৭৮, আবূ দাউদ ৩৪৬৯, ইবনু মাযাহ ২৩৫৬ আহমাদ ১১১৫৭। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৪. নিঃস্ব ব্যক্তির মালিকানা হরণ শরীয়তসম্মত
৮৬৭ -কা`ব বিন মালিক কর্তৃক তাহাঁর পিতা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
অবশ্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [তাহাঁর প্রিয় সাহাবী] মু`আযের মালের উপর ক্রোক আরোপ করেছিলেন, আর তাহাঁর ঋণ পরিশোধ হেতু তাহাঁর মাল বিক্রয় করে দিয়েছিলেন। দারাকুতনী [রাঃআঃ], হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন; আবূ দাউদ একে মুরসাল হাদিসরূপে বর্ণনা করিয়াছেন এবং হাদিসটি মুরসাল হওয়াকে অগ্রগণ্য বলেছেন। {৯৩০}
{৯৩০} মারফু` হিসেবে জঈফ। মুরসাল হিসেবে সহিহ। ইবনু হাজার আসকালানী তাহাঁর আত্-তালখীসুল হাবীর গ্রন্থে ৩য় খণ্ড ১০০১ পৃষ্ঠায় হাদিসটিক মুরসাল বলেছেন। তিনি তার লিসানুল মীযান গ্রন্থে ১ম খণ্ড ৩৬৫ পৃষ্ঠায় বলেন, এর বর্ণনাকারীর মধ্যে ইবরাহীম বিন মু`আবিয়া আয যিয়াদী রহিয়াছে। উকাইলী তার আযযুআফা আল কাবীর গ্রন্থে ১ম খণ্ড ৬৮ পৃষ্ঠায় উক্ত ইবরাহীম সম্পর্কে বলেন, তার বর্ণিত হাদীসের সমর্থনে অন্য কেউ হাদিস বর্ণনা করেন নি। ইমাম হাইসামী মাজমাউজ যাওয়ায়েদ গ্রন্থে ৪র্থ খণ্ড ১৪৬ পৃষ্ঠায় এ রাবীকে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৮৬৮ -ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমার ১৪ বছর বয়সে ওহুদ যুদ্ধের সময় আমাকে যোদ্ধাদের মধ্যে শামিল করার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকটে হাজির করা হলে তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। তারপর খন্দকের যুদ্ধের সময় ১৫ বছর বয়সে আমাকে তাহাঁর সম্মুখে পেশ করা হলে তিনি আমাকে এর অনুমতি প্রদান করেন। {৯৩১}
বাইহাকিতে আছে, আমাকে অনুমতি দেননি আর আমাকে সাবালক মনে করেননি। ইব্নু খুযাইমাহ হাদিসটিকে সহীহ্ বলেছেন। {৯৩২}
{৯৩১} বুখারি ২৬৬৪, ৪০৯৭, ৪১০৭, মুসলিম ১৮৬৮, তিরমিজি ১৭১১, নাসায়ী ৩৪৩১, আবূ দাউদ ৪৪০৬, ইবনু মাযাহ ২৫৪৩, ৪৬৪৭। খারি এবং মুসলিমের বর্ণনায় আরো রহিয়াছে, নাফি` [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি খলীফা `উমার ইবনু `আবদুল `আযীযের নিকট গিয়ে এ হাদিস শুনালাম। তিনি বলিলেন, এটাই হচ্ছে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়সের সীমারেখা। অতঃপর তিনি তাহাঁর গভর্নরদেরকে লিখিত নির্দেশ পাঠালেন যে, [সেনাবাহিনীতে] যাদের বয়স পনের হয়েছে তাহাদের জন্য যেন ভাতা নির্দিষ্ট করেন। {৯৩২} ইবনু হিব্বান ৪৭০৮, দারাকুতনী ৩য় খণ্ড ৩৫১ পৃষ্ঠা। আবদুর রাযযাক ইবনু জুরাইজ থেকে এ হাদিসটিকে সহিহ হিসেবে সমর্থন করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৫. গুপ্ত স্থানে লোম উঠার মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া
৮৬৯ -আতিয়্যাহ কুরাযী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, বানু কুরাইযার [সামরিক শাস্তির] ঘটনাকালে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকটে আমাদেরকে হাজির করা হয়, তাতে যে সব যুবকের গুপ্ত স্থানের লোম উদ্গম হয়েছিল তাহাদেরকে [অপরাধী ধরে] হত্যা করা হল আর যাদের তা বের হয়নি তাহাদেরকে ছেড়ে দেয়া হল। আমার সে সময় তা বের হয়নি বলে আমাকে [নাবালেগ ধরে] ছেড়ে দেয়া হয়েছিল-ইব্নু হিব্বান ও হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন। {৯৩৩}
{৯৩৩} তিরমিজি ১৫৮৪, নাসায়ী ৩৪৩০, ৪৯৮১, আবূ দাউদ ৪৪০৪, ইবনু মাযাহ ২৫৪২ আহমাদ ১৮২৯৯, ১৮৯২৮, ২২১৫২, দারেমী ২৪৬৪। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৬. -স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে স্ত্রীর নিজের মাল হইতে খরচ করার বিধান
৮৭০ -`আম্র বিন শু`আইব হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পিতা হইতে, তিনি তাহাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, স্বামীর বিনা অনুমতিতে কোন দান বৈধ হইবে না। অন্য শব্দে আছে, কোন স্ত্রীলোকের জন্য তার মালের হস্তান্তর বা অন্যকে প্রদান করা বৈধ হইবে না যদি তাহাঁর স্বামী তার ইজ্জত আব্রুসহ জীবনযাপনের দায়িত্ব বহন করেন। -ইমাম হাকিম সহীহ্ বলেছেন। {৯৩৪}
{৯৩৪} নাসায়ী ২৫৪০, ৩৭৫৬ আবূ দাউদ ৩৫৪৬, ৩৫৪৭, আহমাদ ৬৬৪৩, ৭০১৮। হাসান সহিহ, তাওযিহুল আহকাম ৪/৪৯৫ পৃঃ- হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৭. কোন ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া তিনজন সাক্ষী ব্যতীত গ্রহীত হইবে না
৮৭১ -কাবীসাহ বিন মুখারিক হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক ব্যতীত কারও জন্য ভিক্ষা করা বৈধ নয়। ১ কোন ব্যক্তি কারও ঋণ পরিশোধের জিম্মাদারী নিয়েছে তা আদায় দেয়া পর্যন্ত তার ভিক্ষা চাওয়া বৈধ- তারপর সে তা থেকে বিরত থাকিবে। ২ কোন ব্যক্তির ধনসম্পদ কোন দুর্যোগহেতু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তার জন্য- তার জীবন ধারনের সামর্থ্য অর্জন পর্যন্ত ভিক্ষা করা বৈধ হইবে। ৩ ঐ ব্যক্তি যাকে দুর্ভিক্ষে পেয়েছে, অতঃপর তার অনাহার থাকার পক্ষে তার কওমের মধ্যে থেকে তিনজন জ্ঞানী লোক সাক্ষী দেন যে অমুক ব্যক্তিকে দুর্ভিক্ষে পেয়েছে, তার জন্য ভিক্ষা করা বৈধ হইবে। {৯৩৫}
{৯৩৫} মুসলিম ১০৪৪, নাসায়ী ২৫৭৯, ২৫৯১, আবূ দাউদ ১৬৪০, আহমদ ১৫৪৮৬, ২০০৭৮, দারেমী ১৬৭৮। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply