সফর এর আদব-দুয়া। বৃহস্পতিবার বের হওয়া উত্তম
সফর এর আদব-কায়দা। বৃহস্পতিবার বের হওয়া উত্তম >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
সফর এর আদব-দুয়া। বৃহস্পতিবার বের হওয়া উত্তম
পরিচ্ছেদ – ১৬৬: বৃহস্পতিবার সকালে সফরে বের হওয়া উত্তম
পরিচ্ছেদ – ১৬৭: সফরের জন্য সাথী খোঁজ করা এবং কোন একজনকে আমীর (দলপতি) নিযুক্ত করে তার আনুগত্য করা শ্রেয়
পরিচ্ছেদ – ১৬৮: সফরে চলা, বিশ্রাম নিতে অবতরণ করা, রাত কাটানো এবং সফরে ঘুমানোর আদব-কায়দা । রাতে পথচলা মুস্তাহাব, সওয়ারী পশুদের প্রতি নম্রতা প্রদর্শন করা এবং তাদের বিশ্রামের খেয়াল রাখা । যে তাদের অধিকারের ব্যাপারে ত্রুটি করে তাকে তাদের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দেওয়া । সওয়ারী সমর্থ হলে আরোহীর নিজের পিছনে অন্য কাউকে বসানো বৈধ ।
পরিচ্ছেদ – ১৬৯: সফরের সঙ্গীকে সাহায্য করা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ – ১৭০: কোন সওয়ারী বা যানবাহনে চড়ার সময় দুআ
পরিচ্ছেদ – ১৭১: উঁচু জায়গায় চড়ার সময় মুসাফির ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং নীচু জায়গায় নামবার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। ‘তক্বীর’ ইত্যাদি বলার সময় অত্যন্ত উচ্চঃস্বরে বলা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ১৭২: সফরে দুআ করা মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ – ১৭৩: মানুষ বা অন্য কিছু থেকে ভয় পেলে কী দুআ পড়বে?
পরিচ্ছেদ – ১৭৪: কোন মঞ্জিলে (বিশ্রাম নিতে) অবতরণ করলে সেখানে কী দুআ পড়বে?
পরিচ্ছেদ – ১৭৫: প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলে সফর থেকে অতি শীঘ্র বাড়ি ফিরা মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ – ১৭৬: সফর শেষে বাড়িতে দিনের বেলায় আসা উত্তম এবং অপ্রয়োজনে রাতের বেলায় ফিরা অনুত্তম
পরিচ্ছেদ – ১৭৭: সফর থেকে বাড়ি ফিরার সময় এবং নিজ গ্রাম বা শহর দেখার সময় দুআ
পরিচ্ছেদ – ১৭৮: সফর থেকে বাড়ি ফিরে প্রথমে বাড়ির নিকটবর্তী কোন মসজিদে দু’ রাকআত নফল নামায পড়া মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ – ১৭৯: কোনো মহিলার একাকিনী সফর করা হারাম
পরিচ্ছেদ – ১৬৬: বৃহস্পতিবার সকালে সফরে বের হওয়া উত্তম
৯৬৩. কা‘ব ইবনে মালেক রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ তাবুক অভিযানে বৃহস্পতিবার বের হলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার (সফরে) বের হওয়া পছন্দ করতেন।
সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৪৯, ২৭৫৮, ২৯৪৭, ২৯৪৮, ২৯৫০, ৩০৮৮, ৩৫৫৬, ৩৮৮৯, ৩৯৫১, ৪৪১৮, ৪৬৭৩, ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, ৪৬৭৮, ৬২৫৫, ৬৬৯০, ৭২২৫, মুসলিম ২৭৬৯, তিরমিজী ৩১০২, নাসাঈ ৩৮২৪, ৩৮২৬, আবু দাঊদ ২২০২, ৩৩১৭, ৩৩১৯, ৩৩২১, ৪৬০০, আহমাদ ১৫৩৪৩, ১৫৩৪৫, ১৫৩৫৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৬৪. খর ইবনে অদা‘আহ গামেদী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন,
اَللهم بَارِكْ ِلأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার উম্মতের জন্য তাদের সকালে বরকত দাও।’’ আর তিনি যখন সেনার ছোট বাহিনী অথবা বড় বাহিনী পাঠাতেন, তখন তাদেরকে সকালে রওয়ানা করতেন। স্বাখর ব্যবসায়ী ছিলেন। সুতরাং তিনি তাঁর ব্যবসার পণ্য সকালেই প্রেরণ করতেন। ফলে তিনি (এর বরকতে) ধনী হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মাল প্রচুর হয়েছিল। (আবু দাঊদ, তিরমিজী হাসান)
[১] ইবনু মাজাহ ২২৩৬, আবু দাঊদ ২৬০৬, আহমাদ ১৫০১২, ১৫০১৭, ১৫১২৯, ১৫১৩০, দারেমী ২৪৩৫ হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৬৭: সফরের জন্য সাথী খোঁজ করা এবং কোন একজনকে আমীর (দলপতি) নিযুক্ত করে তার আনুগত্য করা শ্রেয়
৯৬৫. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যদি লোকেরা জানত যে, একাকী সফরে কী ক্ষতি রয়েছে ; যা আমি জানি, তাহলে কোন সওয়ার একাকী সফর করত না ।’’(বুখারী)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৯৮, তিরমিজী ১৬৭৩, ইবনু মাজাহ ৩৭৬৮, আহমাদ ৪৭৩৭, ৫২৩০, ৫৫৫৬, ৫৬১৮, দারেমী ২৬৭৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৬৬. আম্র ইবনে শুআইব তাঁর পিতা হইতে এবং তিনি তাঁর দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র) হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একজন (সফরকারী) আরোহী একটি শয়তান এবং দু’জন আরোহী দু’টি শয়তান । আর তিনজন আরোহী একটি কাফেলা ।’’ (আবু দাঊদ, তিরমিজী, নাসাঈ বিশুদ্ধসূত্রে)
(আবু দাঊদ ২৬০৭, তিরমিজী ১৬৭৪, আহমাদ ৬৭০৯, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৩১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৬৭. আবু সাঈদ ও আবু হুরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা) হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যখন তিন ব্যক্তি সফরে বের হবে, তখন তারা যেন তাদের একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়।’’
আবু দাঊদ ২৬০৮ হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৯৬৮.ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘সর্বোত্তম সঙ্গী হল চারজন, সর্বোত্তম ছোট সেনাবাহিনী হল চারশ’ জন, সর্বোত্তম বড় সেনাবাহিনী হল চার হাজার জন । আর বারো হাজার সৈন্য স্বল্পতার কারণে কখনো পরাজিত হবে না ।’’
(আবু দাঊদ ২৬১১, তিরমিজী ১৫৫৫, দারেমী ২৪৩৮) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৬৮: সফরে চলা, বিশ্রাম নিতে অবতরণ করা, রাত কাটানো এবং সফরে ঘুমানোর আদব-কায়দা । রাতে পথচলা মুস্তাহাব, সওয়ারী পশুদের প্রতি নম্রতা প্রদর্শন করা এবং তাদের বিশ্রামের খেয়াল রাখা । যে তাদের অধিকারের ব্যাপারে ত্রুটি করে তাকে তাদের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দেওয়া । সওয়ারী সমর্থ হলে আরোহীর নিজের পিছনে অন্য কাউকে বসানো বৈধ ।
৯৬৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল ঘাসে ভরা যমীনে সফর করিবে, তখন উটকে তার যমীনের অংশ দাও (অর্থাৎ কিছুক্ষণ চরতে দাও) । আর যখন তোমরা ঘাস-পানিবিহীন যমীনে সফর করিবে, তখন তার উপর চড়ে দ্রুত চলো এবং তার শক্তি শেষ হওয়ার পূর্বেই গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যাও । আর যখন তোমরা রাতে বিশ্রামের জন্য কোন স্থানে অবতরণ করিবে, তখন আম রাস্তা থেকে দূরে থাকো । কারণ, তা রাতে (হিংস্র) জন্তুদের রাস্তা এবং (বিষাক্ত) পোকামাকড়ের আশ্রয় স্থল ।’’
(মুসলিম) (মুসলিম ১৯২৬, তিরমিজী ২৮৫৮, আবু দাঊদ ২৫৬৯, আহমাদ ৮২৩৭, ৮৭০০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৭০.আবু ক্বাতাদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
‘রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সফরে থাকতেন এবং রাতে বিশ্রামের জন্য কোথাও অবতরণ করতেন, তখন তিনি ডান পার্শ্বে শয়ন করতেন । আর তিনি ফজরের কিছুক্ষণ পূর্বে বিশ্রাম নিলে তার হাতটা খাড়া করে হাতের চেটোর উপর মাথা রেখে আরাম করতেন ।’
(মুসলিম) (মুসলিম ৬৮৩, আহমাদ ২২০৪০, ২২১২৫) উলামাগণ বলেন, ‘তিনি হাত খাড়া রেখে আরাম করতেন, যাতে গভীর নিদ্রা এসে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত অথবা প্রথম ওয়াক্ত ছুটে না যায় ।’ হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৭১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা রাতে সফর কর । কেননা, রাতে যমীনকে গুটিয়ে দেওয়া হয় ।’’
(আবু দাঊদ, হাসান সূত্রে) (আবু দাঊদ ২৫৭১) (অর্থাৎ রাস্তা কম মনে হয়।) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৯৭২. আবু সা‘লাবা খুশানী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
লোকেরা যখন কোন স্থানে অবতরণ করতেন, তখন তাঁরা গিরিপথ ও উপত্যকায় ছড়িয়ে যেতেন । রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তোমাদের এ সকল গিরিপথে ও উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত হওয়া শয়তানের কাজ ।’’ এরপর তাঁরা যখনই কোন মঞ্জিলে অবতরণ করতেন, তখন একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে থাকতেন ।
(আবু দাঊদ ২৬২৮, আহমাদ ২৭২৮২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৭৩. সাহ্ল ইবনে আম্র রাঃআঃ মতান্তরে সাহ্ল ইবনে রাবী ইবনে আম্র রাঃআঃ আনসারী –যিনি ইবনুল হানযালিয়্যাহ নামে প্রসিদ্ধ এবং ইনি বায়আতে রিযওয়ানে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে একজন হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটা উটের পাশ দিয়ে গেলেন, যার পিঠটা (দুর্বলতার কারণে) পেটের সাথে লেগে গিয়েছিল । (তা দেখে) তিনি বললেন, ‘‘তোমরা এ সব অবলা জন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর । সুতরাং তোমরা তাদের সুস্থ থাকা অবস্থায় আরোহণ কর এবং তাদের সুস্থ থাকা অবস্থায় মাংস খাও ।’’ (আবু দাঊদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)
(আবু দাঊদ ২৫৮৩, ২৫৮৪, তিরমিজী ১৬৯১, নাসাঈ ৫৩৭৪, দারেমী ২৪৫৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৭৪. আবু জা‘ফর আব্দুল্লাহ ইবনে জা‘ফর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
‘একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে সওয়ারীর উপর তাঁর পিছনে বসালেন এবং আমাকে তিনি একটি গোপন কথা বললেন, যা আমি কাউকে বলব না । আর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উঁচু জায়গা (দেওয়াল, ঢিবি ইত্যাদি) অথবা খেজুরের বাগানের আড়ালে মল-মূত্র ত্যাগ করা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন ।’ (ইমাম মুসলিম এটিকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করিয়াছেন)
বারক্বানী এতে মুসলিমের সূত্রে বর্ধিত আকারে ‘খেজুরের বাগান’ শব্দের পর বলেছেন যে, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক আনসারীর বাগানে প্রবেশ ক’রে সেখানে একটা উট দেখতে পেলেন । উটটা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাছে এসে তার কুঁজে এবং কানের পিছনের অংশে হাত ফিরালেন, ফলে সে শান্ত হল । তারপর তিনি বললেন, ‘‘এই উটের মালিক কে ? এই উটটা কার ?’’ অতঃপর আনসারদের এক যুবক এসে বলল, ‘এটা আমার হে আল্লাহর রসূল !’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এই পশুটার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না, আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন ? কারণ, সে আমার নিকট অভিযোগ করছে যে, তুমি তাকে ক্ষুধায় রাখ এবং (বেশি কাজ নিয়ে) ক্লান্ত করে ফেলো !’’
(মুসলিম ৩৪২, ২৪২৯, আবু দাঊদ ২৫৪৯, ইবনু মাজাহ ২৪০, আহমাদ ১৭৪৭, দারেমী ৬৬৩, ৭৫৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৭৫. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
‘আমরা যখন (সফরে) কোন মঞ্জিলে অবতরণ করতাম, তখন সওয়ারীর পালান নামাবার পূর্বে নফল নামায পড়তাম না ।’
(আবু দাঊদ, মুসলিমের শর্তে) (আবু দাঊদ ২৫৫১)
অর্থাৎ আমরা নামাযের প্রতি আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও সওয়ারীর পিঠ থেকে পালান নামিয়ে তাকে আরাম না দেওয়ার আগে নামায পড়তে শুরু করতাম না।
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৬৯: সফরের সঙ্গীকে সাহায্য করা প্রসঙ্গে
৯৭৬. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
একদা আমরা সফরে ছিলাম । ইত্যবসরে এক ব্যক্তি তার সওয়ারীর উপর চড়ে এল । অতঃপর তার দৃষ্টি ডানে ও বামে ফেরাতে লাগল । রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘যার বাড়তি সওয়ারী আছে, সে যেন তা তাকে দেয় যার সওয়ারী নেই এবং যার অতিরিক্ত সফরের সম্বল রয়েছে, সে যেন সম্বলহীন ব্যক্তিকে দেয় ।’’ অতঃপর তিনি আরো কয়েক প্রকার মালের কথা বললেন । এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা ধারণা করলাম যে, বাড়তি মালে আমাদের কারোর কোন অধিকারই নেই । (মুসলিম)
(আবু দাঊদ ১৬৬৩, আহমাদ ১০৯০০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৭৭. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন । অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে মুহাজির ও আনসারের দল ! তোমাদের ভাইদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যাদের কোন মাল নেই, স্বগোত্রীয় লোকও নেই । সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন দুই অথবা তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে নেয় । কারণ, আমাদের কারো এমন কোন সওয়ারী নেই, যা তাদের সাথে পালাক্রমে ছাড়া তাকে বহন করতে পারে ।’’ জাবের রাঃআঃ বলেন, সুতরাং আমি দু’জন অথবা তিনজনকে সাথে নিলাম । অন্যান্যদের মত আমার উটেও তাদের সাথে পালাক্রমে চড়তাম ।
(আহমাদ ১৪৪৪৯, আবু দাঊদ ২৫৩৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৭৮. ৯৭৮। উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফরে (সকলের) পিছনে চলতেন । তিনি দুর্বলকে চলতে সাহায্য করতেন এবং তাকে পিছনে বসিয়ে নিতেন ও তার জন্য দুআ করতেন ।
(আবু দাঊদ হাসান সূত্রে) (আবু দাঊদ ২৬৩৯) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭০: কোন সওয়ারী বা যানবাহনে চড়ার সময় দুআ
৯৭৯. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সফরে বেরিয়ে উটের পিঠে স্থির হয়ে বসতেন, তখন তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এই দুআ পড়তেন,
اَللّهُمَّ إِنَّا نَسأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا البِرَّ وَالتَّقوَى، وَمِنَ العَمَلِ مَا تَرضَى، اَللهم هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ . اَللهم أنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ . اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ المَنْظَرِ، وَسُوءِ المُنْقَلَبِ فِي الماَلِ وَالأَهْلِ وَالوَلَدِ
‘সুবহানাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন । অইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবূন । আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল বির্রা অত্তাক্বওয়া, অমিনাল আমালি মা তারদ্বা । আল্লাহুম্মা হাওবিন আলাইনা সাফারানা হা-যা অত্ববি আন্না বু‘দাহ । আল্লাহুম্মা আন্তাস সা-হিবু ফিস সাফারি অলখালীফাতু ফিল আহল । আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন অ‘সাইস সাফার অকাআবাতিল মানযার, অসূইল মুনক্কালাবি ফিল মা-লি অল আহ্লি অল অলাদ।’, অর্থাৎ পবিত্র ও মহান যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না । অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী । ওগো আল্লাহ ! নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আমাদের এই যাত্রায় পুণ্যকর্ম, সংযমশীলতা এবং তোমার সন্তোষজনক কার্যকলাপ । হে আল্লাহ ! আমাদের এ যাত্রাকে আমাদের জন্য সহজ ক’রে দাও । আমাদের থেকে ওর দূরত্ব গুটিয়ে নাও । হে আল্লাহ ! তুমিই সফরের সঙ্গী । আর পরিবার পরিজনের জন্য (আমাদের) প্রতিনিধি । হে আল্লাহ ! সফরের কষ্ট ও ক্লান্তি থেকে, ভয়ংকর দৃশ্য থেকে এবং বাড়ি ফিরে ধন-সম্পদ, পরিবার ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে কোন অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি ।
আর বাড়ি ফিরার সময় উক্ত দুআর সাথে এগুলিও পড়তেন,
آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ
‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা ‘আ-বিদূনা, লিরাব্বিনা হা-মিদূন।’ (মুসলিম)
(মুসলিম ১৩৪২, তিরমিজী ৩৪৪৭, আবু দাঊদ ২৫৯৯, আহমাদ ৬৩৩৮, দারেমী ২৬৭৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৮০. আব্দুল্লাহ ইবনে সার্জিস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সফর করতেন, তখন তিনি সফরের কষ্ট থেকে, দুশ্চিন্তাজনক পরিস্থিতি থেকে বা অপ্রীতিকর প্রত্যাবর্তন, পূর্ণতার পর হ্রাস থেকে, অত্যাচারিতের বদ্দুআ থেকে, মাল-ধন ও পরিবারের ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন । (মুসলিম)
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৮১. আলী ইবনে রাবীআহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবু ত্বালেব রাঃআঃ-এর নিকট হাজির ছিলাম । যখন তাঁর নিকট আরোহন করার উদ্দেশ্যে বাহন আনা হল এবং যখন তিনি বাহনের পাদানে স্বীয় পা রাখলেন তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বললেন । অতঃপর যখন তার পিঠে স্থির হয়ে সোজাভাবে বসলেন তখন বললেন,
الحَمْدُ ِللهِ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنينَ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ
‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন । অইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবূন ।’
অতঃপর তিনবার
اَلحمْدُ للهِ
‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লেন । অতঃপর তিনবার
اَللهُ أكْبَرُ
‘আল্লাহু আকবার’ পড়লেন । অতঃপর পড়লেন,
سُبْحَانَكَ إنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ
‘সুবহানাকা ইন্নী যালামতু নাফ্সী ফাগফিরলী, ইন্নাহু লা য়্যাগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্ত্।’ অতঃপর তিনি হাসলেন । তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন ! আপনি হাসলেন কেন ?’ তিনি বললেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখলাম, তিনি তাই করলেন, যা আমি করলাম । অতঃপর তিনি হাসলেন । আমি প্রশ্ন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল ! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মহান প্রতিপালক তাঁর সেই বান্দার প্রতি আশ্চর্যান্বিত হন, যখন সে বলে,
اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي
‘ইগফিরলী যুনূবী’ (অর্থাৎ আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও ।) সে জানে যে, আমি (আল্লাহ) ছাড়া পাপরাশি আর কেউ মাফ করতে পারে না ।’’ (আবু দাঊদ, তিরমিজী হাসান, কোন কোন কপিতে আছে, ‘হাসান সহীহ’। আর এ শব্দমালা আবু দাঊদের।)
(আবু দাঊদ ২৬০২, তিরমিজী ৩৪৪৬) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭১: উঁচু জায়গায় চড়ার সময় মুসাফির ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং নীচু জায়গায় নামবার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। ‘তক্বীর’ ইত্যাদি বলার সময় অত্যন্ত উচ্চঃস্বরে বলা নিষেধ
৯৮২. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা (সফরে) যখন উঁচু জায়গায় চড়তাম তখন
اَللهُ أكْبَرُ
‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম এবং নীচু জায়গায় নামতাম, তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম । (বুখারী)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৯৩, ২৯৯৪, আহমাদ ১৪১৫৮, দারেমী ২১৬৫, ২১৬৬, ২৬৭৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৮৩. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সেনা বাহিনী যখন উঁচু জায়গায় চড়তেন তখন
اَللهُ أكْبَرُ
‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন । আর যখন নিচু জায়গায় নামতেন তখন
سُبْحانَ الله
‘সুবহানাল্লাহ’ বলতেন । (আবু দাঊদ, বিশুদ্ধ সানাদে)
(আবু দাঊদ ২৫৯৯, মুসলিম ১৩৪২, তিরমিজী ৩৪৪৭, আহমাদ ৬২৭৫, ৬৩৩৮, দারেমী ২৬৭৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৮৪. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হজ্জ কিংবা উমরাহ সেরে ফিরে আসতেন, যখনই কোন পাহাড়ী উঁচু জায়গায় অথবা ঢিবিতে চড়তেন তখনই তিনবার
اَللهُ أكْبَرُ
‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন । অতঃপর তিনি বলতেন,
اَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، سَاجِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ، صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুল্কু অলাহুল হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর । আ-ইয়বূনা তা-ইবূনা সা-জিদূনা লিরাব্বিনা হা-মিদূন । সাদাক্বাল্লাহু ওয়া’দাহ, অনাসারা আব্দাহ্, অহাযামাল আহযাবা অহদাহ ।’, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই । তাঁরই সার্বভৌম অধিকার, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান । আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতগুযার, সাজদাহকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী । আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য প্রমাণিত করিয়াছেন, তাঁর বান্দাহকে মদদ করিয়াছেন এবং একাই শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করিয়াছেন ।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৭৯৭, ২৯৯৫, ৩০৮৪, ৪১১৬, ৬৩৮৫, মুসলিম ১৩৪৪, তিরমিজী ৯৫০, আবু দাঊদ ২৭৭০, আহমাদ ৪৪৮২, ৪৫৫৫, ৪৬২২, ৪৭০৩, ৪৯৪০, ৫২৭৩, ৫৭৯৬, ৬২৭৫, ৬৩৩৮, মুওয়াত্তা মালিক ৯৬০, দারেমী ২৬৮২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৮৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল ! আমি ইচ্ছা করেছি, সফরে যাব, আমাকে উপদেশ দিন ।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহ-ভীতি অবলম্বন করো এবং প্রত্যেক উঁচু স্থানে নিয়মিত
اَللهُ أكْبَرُ
‘আল্লাহু আকবার’ পড়ো ।’’ যখন লোকটা পিছন ফিরে যেতে লাগল, তখন তিনি (তার জন্য দুআ করে) বললেন,
اَللهم اطْوِ لَهُ البُعْدَ، وَهَوِّنْ عَلَيْهِ السَّفَرَ
‘‘আল্লাহুম্মাত্ববি লাহুল বু‘দা অহাওবিন আলাইহিস সাফার ।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ ! তুমি ওর পথের দূরত্ব গুটিয়ে দিয়ো এবং ওর জন্য সফর আসান ক’রে দিয়ো । (তিরমিজী হাসান)
(তিরমিজী ৩৪৪৫, ইবনু মাজাহ ২৭৭১) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৯৮৬. আবু মূসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সফরে ছিলাম । আমরা যখন কোন উঁচু উপত্যকায় চড়তাম তখন
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলতাম । (একদা) আমাদের শব্দ উঁচু হয়ে গেল । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, ‘‘হে লোক সকল ! তোমরা নিজেদের প্রতি নম্রতা প্রদর্শন কর । কেননা, তোমরা কোন বধির ও অনুপস্থিতকে ডাকছ না । তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন । তিনি সর্বশ্রোতা ও নিকটবর্তী ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৯২, ৬৩৮৪, ৪২০৫, ৬৪০৯, ৬৬১০, ৭৩৮৬, মুসলিম ২৭০৪, তিরমিজী ৩৩৭৪, ৩৪৬১, আবু দাঊদ ১৫২৬, ইবনু মাজাহ ৩৮২৪, আহমাদ ১৯০২৬, ১৯০৭৮, ১৯০৮২, ১৯১০২, ১৯১০৮, ১৯১৫১, ১৯২৪৬, ১৯২৫৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭২: সফরে দুআ করা মুস্তাহাব
৯৮৭. আবু আব্দুল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তিন জনের দুআ সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত হয়ঃ (১) নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ, (২) মুসাফিরের দুআ এবং (৩) ছেলের জন্য মাতা-পিতার বদ্দুয়া।’’ (আবু দাঊদ, তিরমিজী হাসান)
(আবু দাঊদ ১৫৩৬, তিরমিজী ১৯০৫, ৩৪৪৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬২, আহমাদ ৭৪৫৮, ৮৩৭৫, ৯৮৪০, ১০৩৩০, ১০৩৯২) আবু দাউদের বর্ণনায় ‘‘ছেলের জন্য’’ শব্দগুলি নেই। (অর্থাৎ তাতে আছে, ‘‘পিতা-মাতার দুআ।’’) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭৩: মানুষ বা অন্য কিছু থেকে ভয় পেলে কী দুআ পড়বে?
৯৮৮. আবু মূসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোন শত্রুদলকে ভয় করতেন তখন এই দুআ পড়তেন,
اَللهم إنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ
‘‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাজ‘আলুকা ফী নুহূরিহিম অনাঊযু বিকা মিন শুরূরিহিম ।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ ! আমরা তোমাকে ওদের মুখোমুখি করছি এবং ওদের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি ।
(আবু দাঊদ ১৫৩৭, আহমাদ ১৯২২০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭৪: কোন মঞ্জিলে (বিশ্রাম নিতে) অবতরণ করলে সেখানে কী দুআ পড়বে?
৯৮৯. খাওলা বিনতে হাকীম রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যে ব্যক্তি (সফরের) কোন মঞ্জিলে নেমে এই দুআ পড়বে,
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ حَتَّى
‘আঊযু বিকালিমাতিল্লা-হিত্ তা-ম্মাতি মিন শার্রি মা খালাক্ব।’ (অর্থাৎ আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের অসীলায় তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আমি আশ্রয় চাচ্ছি।) তাহলে সে মঞ্জিল থেকে অন্যত্র রওনা হওয়া পর্যন্ত কোন জিনিস তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (মুসলিম)
(মুসলিম ২৭০৮, তিরমিজী ৩৪৩৭, ইবনু মাজাহ ৩৫৩৭, আহমাদ ২৬৫৭৯, ২৬৫৮৪, ২৬৭৬৫, দারেমী ২৬৮০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৯০. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সফর করতেন এবং সফরে রাত্রি হয়ে যেতো, তখন তিনি বলতেনঃ
يَا أَرْضُ ربِّي وَربُّكِ اللهِ، أَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شرِّكِ وشَرِّ ما فِيكِ، وشر ماخُلقَ فيكِ، وشَرِّ ما يدِبُّ عليكِ، وأَعوذ باللهِ مِنْ شَرِّ أَسدٍ وَأَسْودٍ، ومِنَ الحيَّةِ والعقربِ، وَمِنْ سَاكِنِ البلَدِ، ومِنْ والِدٍ وما وَلَد
ইয়া আরযু রাব্বী ও রাব্বুকিল্লাহ, আ‘উযু বিল্লাহি মিন শাররিকি ওয়া শাররি মা ফীকি ওয়া শাররি মা খুলিক্বা ফীকি ওয়া শাররি মা ইয়াদিববু আলাইকি, আ‘উযু বিল্লাহি মিন শাররি আসাদিন ওয়া আসওয়াদিন ওয়া মিনাল হাইয়্যাতি ওয়াল আক্বরাবি ওয়া মিন সাকিনিল বালাদি ওয়া মিন ওয়ালিদিও ওয়ামা ওয়ালাদ (হে মাটি ! তোমার ও আমার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ তা‘আলা । আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি । তোমার অনিষ্ট থেকে, তোমার ভিতরে যা আছে তার অনিষ্ট থেকে তোমার ভিতরে যা সৃষ্টি করা হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে এবং যা কিছু তোমার উপরে বিচরণ করে তার অনিষ্ট থেকে । আর আমি আল্লাহর নিকট বাঘ ও কাল সাপ হইতে এবং সর্ব প্রকারের সাপ, বিচ্ছু হইতে আর শহরবাসীদের অনিষ্টকারিতা হইতে এবং জম্মদানকারী ও জন্মলাভকারীর অনিষ্টকারিতা হইতে আশ্রয় চাই) । (আবু দাঊদ) (আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদে অজ্ঞতা রয়েছে যদিও হাদীসটিকে হাকিম ও যাহাবী সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন আর আসকালানী হাসান আখ্যা দিয়েছেন ।
দেখুন ‘‘য‘ঈফাহ্’’ (৪৮৩৭) । এর সনদটি দুর্বল হওয়ার কারণ হচ্ছে যুবায়ের ইবনুল ওয়ালীদ । কারণ তিনি মাজহূল (অপরিচিত) । হাফিয যাহাবীও ‘‘আলমীযান’’ গ্রন্থে তার মাজহূল হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করিয়াছেন । আবু দাঊদ ২৬০৩ হাদীসটি এককভাবে শুধু আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে।)
হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭৫: প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলে সফর থেকে অতি শীঘ্র বাড়ি ফিরা মুস্তাহাব
৯৯১. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘সফর আযাবের অংশ বিশেষ । সফর তোমাদেরকে পানাহার ও নিদ্রা থেকে বিরত রাখে । সুতরাং যখন তোমাদের কারোর সফরের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে, তখন সে যেন বাড়ি ফিরার জন্য তাড়াতাড়ি করে ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৮০৪, ৩০০১, ৫৪২৯, মুসলিম ১৯২৭, ইবনু মাজাহ ২৮৮২, আহমাদ ৭১৮৪, ৯৪৪৭, ১০০৬৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৩৫, দারেমী ২৬৭০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭৬: সফর শেষে বাড়িতে দিনের বেলায় আসা উত্তম এবং অপ্রয়োজনে রাতের বেলায় ফিরা অনুত্তম
৯৯২. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কারোর বিদেশের অবস্থান দীর্ঘ হবে, তখন সে যেন অবশ্যই রাত্রিকালে নিজ গৃহে না ফিরে ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৮০১, ৪৪৩, ২০৯৭, ২৩০৯, ২৩৮৫, ২৩৯৪, ২৪৭০, ২৬০৩, ২৬০৪, ২৭১৮, ২৮৬১, ২৯৬৭, ৩০৮৭, ৩০৮৯, ৩০৯০, ৪০৫২, ৫০৭৯, ৫০৮০, ৫২৪৩, ৫২৪৪, ৫২৪৫, ৫২৪৬, ৫২৪৭, ৫৩৬৭, ৬৩৮৭, মুসলিম ৭১৫, তিরমিজী ১১০০, নাসাঈ ৪৫৯০, ৪৫৯১, আবু দাঊদ ৪৩৪৭, ৩৫০৫, ৩৭৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬০, আহমাদ ১৩৭১০, ১৩৭৬৪, ১৩৮১৪, ১৩৮২২, ১৩৮৯৪, দারেমী ২২১৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৯৩. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফর শেষে রাত্রিকালে স্বীয় বাড়ি ফিরতেন না । তিনি সকালে কিংবা বিকালে বাড়ি আগমন করতেন ।’
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭৭: সফর থেকে বাড়ি ফিরার সময় এবং নিজ গ্রাম বা শহর দেখার সময় দুআ
৯৯৪. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে সফর থেকে ফিরে এলাম । পরিশেষে যখন মদীনার উপকণ্ঠে এসে উপনীত হলাম, তখন তিনি এই দুআ পড়লেন,
آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ
‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা, ‘আ-বিদূনা, লিরাব্বিনা হা-মিদূন । (অর্থাৎ আমরা সফর থেকে প্রত্যাগমনকারী, তওবাকারী, উপাসনাকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী ।) মদীনায় আগমন না করা পর্যন্ত তিনি এ দুআ অনবরত পড়তে থাকলেন । (মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৭১, ৯৪৭, ১৮৬৭, ১৮৮৫, ২১৩০, ২২২৮, ২২৩৫, ২৮৮৯, ২৮৯৩, ২৮৪৫, ৩০৮৫, ৩০৮৬, ৪১৯৭, ৪১৯৮, ৪২০১, ৫২১১, ৪২১২, ৪২১৩, ৫০৮৫, ৫০৮৬, ৫১৫৯, ৫১৬৯, ৫৩৮৭, ৫৪২৫, ৬৩৬৩, মুসলিম ১৩৪৫, ১৩৬৫, ১৩৬৮, তিরমিজী ১০৯৫, ১১১৫, ১৫৫০, ৩৯২২, নাসাঈ ৫৪৭, ৩৩৪২, ৩৩৪৩, ৩৩৮০, ৩৩৮১, ৩৩৮২, ৪৩৪০, আবু দাঊদ ২০৫৪, ২৯৯৫, ২৯৯৬, ২৯৯৭, ২৯৯৮, ৩০০৯, ৩৭৪৪, ইবনু মাজাহ ১০৯, ১৯০৯, ১৯১৬, ১৯৫৭, ২২৭২, আহমাদ ১১৫৪১, ১১৫৭৭, ১১৬৫৮, ১১৬৭৬, ১১৮০৭, ১২০১৩, ১২১০১, ১২২০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৯০৮, ১০২০, ১১২৪, ১৬৩৬, ১৬৪৫, দারেমী ২২০৯, ২২৪২, ২২৪৩, ২৫৭৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭৮: সফর থেকে বাড়ি ফিরে প্রথমে বাড়ির নিকটবর্তী কোন মসজিদে দু’ রাকআত নফল নামায পড়া মুস্তাহাব
৯৯৫. কা‘ব ইবনে মালেক রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
‘রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সফর থেকে বাড়ি ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে দু’ রাকআত নামায পড়তেন ।’ (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৫৮, ২৯৪৭, ২৯৪৮, ২৯৪৯, ৩০৮৮, ৩৫৫৬, ৩৮৮৯, ৩৮৫১, ৪৪১৮, ৪৬৭৩, ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, ৪৬৭৮, ৬২৫৫, ৬৬৯০, ৭২২৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৭৯: কোনো মহিলার একাকিনী সফর করা হারাম
৯৯৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয় ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১০৮৮, মুসলিম ১৩৩৯, তিরমিজী ১০৭০, দাঊদ ১৭২৩, ইবনু মাজাহ ২৮৯৯, আহমাদ ৭১৮১, ৭৩৬৬, ৮২৮৪, ৮৩৫৯, ৯১৮৫, ৯৩৭৪, ৯৮৪৮, ১০০২৯, ১০১৯৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৩৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৯৭. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে । আর মাহরাম ব্যতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে ।’’
এক ব্যক্তি আবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল ! আমার স্ত্রী হজ্জ পালন করতে বের হয়েছে । আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি ।’ তিনি বললেন, ‘‘যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩০০৬, ১৮৬২, ৩০৬১, ৫২৩৩, মুসলিম ১৩৪১, ইবনু মাজাহ ২৯০০, আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply