সন্ধি স্থাপন ও জিযিয়াহ কর – ওয়াদা, জিম্মী, বিশ্বাসঘাতকতা, চুক্তি
সন্ধি স্থাপন ও জিযিয়াহ কর – ওয়াদা, জিম্মী, বিশ্বাসঘাতকতা, চুক্তি >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৮, জিযিয়াহ কর ও সন্ধি স্থাপন, অধ্যায়ঃ (১-২২)=২২টি
৫৮/১. অধ্যায়ঃ জিম্মীদের নিকট থেকে জিযইয়াহ গ্রহন এবং হারবীদের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি।
৫৮/২. অধ্যায়ঃ মুসলিম রাষ্ট্রের ইমাম কোন জনপদের প্রধানের সঙ্গে সন্ধি করলে, তা কি অবশিষ্ট লোকদের উপরও কার্যকর হইবে?
৫৮/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যাদের অঙ্গীকার আছে তাদের ব্যাপারে ওয়াসিয়্যাত।
৫৮/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) বাহরাইনের জমি হইতে যা বন্দোবস্ত দেন এবং বাহরাইনের সম্পদ ও জিযইয়াহ হইতে যা দেয়ার ওয়াদা করেন। ফায় ও জিযইয়াহ কাদের মধ্যে বন্টন করা হইবে?
৫৮/৫. অধ্যায়ঃ নিরপরাধ জিম্মী হত্যার পাপ।
৫৮/৬. অধ্যায়ঃ আরব উপদ্বীপ হইতে ইয়াহূদীদের বহিষ্করণ।
৫৮/৭. অধ্যায়ঃ মুশরিকরা মুসলিমদের সাথে গাদ্দারী করলে তাদের কি ক্ষমা করা হইবে?
৫৮/৮. অধ্যায়ঃ অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে ইমামের দুআ।
৫৮/৯. অধ্যায়ঃ নারীগণ কর্তৃক নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান।
৫৮/১০ অধ্যায়ঃ মুসলিমদের পক্ষ হইতে নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান একই ব্যাপার। তা সাধারণ মুসলিমদের জন্যও পালনীয়।
৫৮/১১. অধ্যায়ঃ যদি কাফিররা সুন্দরভাবে “আমরা ইসলাম কবুল করেছি” বলিতে না পারায় এবং “আমরা দ্বীন বদল করেছি” বলে।
৫৮/১৩. অধ্যায়ঃ ওয়াদা পূরণ করার ফযীলত
৫৮/১৪. অধ্যায়ঃ কোন জিম্মী যাদু করলে তাকে কি ক্ষমা করা হইবে?
৫৮/১৫. অধ্যায়ঃ বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে সতর্ক করা।
৫৮/১৬. অধ্যায়ঃ চুক্তিতে আবদ্ধ গোত্রের চুক্তি কিভাবে বাতিল করা যাবে?
৫৮/১৭. অধ্যায়ঃ যারা অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে তাদের গুনাহ।
৫৮/১৮. অধ্যায়ঃ
৫৮/১৮. অধ্যায়ঃ
৫৮/১৯. অধ্যায়ঃ তিন দিনের জন্য বা সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সমঝোতা করা।
৫৮/২০. অধ্যায়ঃ সময় সুনির্দিষ্ট না করে সমঝোতা করা।
৫৮/২২. অধ্যায়ঃ নেক বা পাপিষ্ঠ লোকের সঙ্গে কৃত ওয়াদা ভঙ্গে পাপ।
৫৮/১. অধ্যায়ঃ জিম্মীদের নিকট থেকে জিযইয়াহ গ্রহন এবং হারবীদের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি।
আর আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমরা যুদ্ধ করিতে থাক আহলে কিতাবের ঐ লোকদের বিরুদ্ধে, যারা ঈমান আনে না আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল যা হারাম করিয়াছেন তা হারাম বলে মনে করে না, এবং যাদেরকে কিতাব দান করা হয়েছে তাদের মধ্যে যারা অনুসরণ করেনা প্রকৃত সত্য দ্বীন, যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা স্বীকার করে স্বহস্তে জিযইয়াহ প্রদান করে। (আত-তাওবাহ ২৯)
আয়াতে উল্লেখিত —- শব্দের মূল হচ্ছে —— অর্থ হলো অভাবগ্রস্ত ———– এর অর্থ সে অমুক হইতে অধিক অভাবগ্রস্ত। এ শব্দটি —- ধাতু হইতে নিষ্পন্ন নয়। ইয়াহূদী, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজক ও আজমীদের নিকট হইতে জিযইয়াহ গ্রহন।
ইবনু উইয়াইনাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) (আবদুল্লাহ) ইবনু আবু নাজীহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বলেন যে, আমি মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) –এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, এর কারণ কি যে, সিরিয়াবাসীদের উপর চার দীনার এবং ইয়ামান বাসীদের উপর এক দীনার করে জিযইয়াহ গ্রহন করা হয়। তিনি বলিলেন, তা স্বচ্ছলতার প্রেক্ষিতে ধার্য করা হয়েছে। [১]
[১] জিযইয়াহর তাৎপর্যঃ কুফর ও শির্ক হল আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের সাথে বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কিন্তু আল্লাহ নিজের অসীম রাহমাত গুণে শাস্তির এই কঠোরতা হ্রাস করে ঘোষণা করেন যে, তারা যদি ইসলামি রাষ্ট্রের অনুগত প্রজারূপে ইসলামী আইন-কানুনকে মেনে নিয়ে থাকতে চায় তবে তাদের থেকে সামান্য জিযইয়াহ কর নিয়ে মৃত্যুদন্ড থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হইবে এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে তাদের জান মালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হইবে। কেউ হস্তক্ষেপ করিতে পারবে না। শরঈয়াতের পরিভাষায় এটাকে জিযইয়াহ (কর) বলে।
৩১৫৬. আমর (ইবনু দীনার) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু যায়দ ও আমর ইবনু আউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সহ যমযমের সিঁড়ির নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, হিজরী সত্তর সনে যে বছর মুসআব ইবনু যুবায়র (রাদি.) বসরাবাসীদের নিয়ে হাজ্জ আদায় করেছিলেন। তখন বাজালাহ তাদের উভয়কে এ হাদীস বর্ণনা করেন, আমি আহনাফের চাচা জাযই ইবনু মুআবিয়াহ (রাদি.) -এর লেখক ছিলাম। আমাদের নিকট উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)–এর পক্ষ হইতে তাহাঁর মৃত্যুর এক বছর আগে একখানি পত্র আসে যে, যে সব অগ্নিপুজক মাহরামদের
[১] বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ তাদের আলাদা করে দাও। আর উমার (রাদি.) অগ্নিপূজকদের নিকট হইতে জিযইয়াহ গ্রহন করিতেন না।
[১] —- (মাহরাম) যাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ।
৩১৫৭. See previous Hadith. আমর (ইবনু দীনার) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে পর্যন্ত না আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাদি.) এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হাজার এলাকার অগ্নিপূজকদের নিকট হইতে তা গ্রহণ করিয়াছেন।
৩১৫৮. মিস্ওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমর ইবনু আউফ আনসারী (রাদি.) যিনি বনী আমির ইবনু লুয়াইয়ের মিত্র ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি তাঁকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু উবাইদাহ ইবনু জাররাহ (রাদি.)-কে বাহরাইনের জিযইয়াহ আদায় করার জন্য পাঠালেন। আর রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) বাহরাইনবাসীদের সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন এবং আলা ইবনু হাযরামী (রাদি.)-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবু উবাইদাহ (রাদি.) বাহরাইন হইতে অর্থ সম্পদ নিয়ে এলেন। আনসারগণ আবু উবাইদাহর আগমন বার্তা শুনে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ফজরের সলাতে সবাই হাযির হলেন। যখন আল্লাহর রাসুল তাঁদের নিয়ে ফাজ্রের সলাত আদায় করে ফিরলেন, তখন তারা তাহাঁর সামনে হাযির হলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের দেখে মুচকি হাসলেন এবং বলিলেন, আমার মনে হয় তোমরা শুনেছ, আবু উবাইদাহ (রাদি.) কিছু নিয়ে এসেছেন। তারা বলিলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের খুশি করে তাহাঁর আকাঙ্ক্ষা রাখ। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্রের ভয় করি না। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের উপর দুনিয়া এরূপ প্রসারিত হয়ে পড়বে যেমন তোমাদের অগ্রবর্তীদের উপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করিবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে।
৩১৫৯. জুবাইর ইবনু হাইয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমার (রাদি.) মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় শহরের দিকে সৈন্য দল প্রেরণ করিলেন। সে সময় হুরমযান ইসলাম গ্রহণ করে। উমার (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আমি এসব যুদ্ধের ব্যাপারে তোমার পরামর্শ গ্রহণ করিতে চাই। তিনি বলিলেন, ঠিক আছে। এ সকল দেশ এবং দেশে মুসলিমদের দুশমন যে সব লোক বাস করছে, তাদের দৃষ্টান্ত একটি পাখির মত, যার একটি মাথা, দুটি ডানা ও দুটি পা রয়েছে। যদি একটি ডানা ভেঙ্গে দেয়া হয়, তবে সে পাখিটি উভয় পা, একটি ডানা ও মাথার ভরে উঠে দাঁড়াবে। যদি অপর ডানা ভেঙ্গে দেয়া হয়, তবে সে দুটি পা ও মাথার ভরে উঠে দাঁড়াবে। আর যদি মাথা ভেঙ্গে দেয়া হয়, তবে উভয় পা, উভয় ডানা ও মাথা সবই অকেজো হয়ে যাবে। কিসরা শত্রুদের মাথা, কায়সার হল একটি ডানা, আর পারস্য অপর একটি ডানা। কাজেই মুসলিমগণকে এ আদেশ করুন, তারা যেন কিসরার উপর হামলা করে।
বাক্র ও যিয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উভয়ে যুবাইর ইবনু হাইয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর উমার (রাদি.) আমাদের ডাকলেন আর আমাদের উপর নুমান ইবনু মুকাররিনকে আমীর নিযুক্ত করেন। আমরা যখন শত্রু দেশে পৌঁছলাম, কিসরার এক সেনাপতি চল্লিশ হাজার সৈন্য নিয়ে আমাদের মুকাবিলায় আসল। তখন তার পক্ষ হইতে একজন দোভাষী দাঁড়িয়ে বলিল, তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমার সাথে আলোচনা করুক। তখন মুগীরাহ (ইবনু শুবাহ) (রাদি.) বলিলেন, যা ইচ্ছা প্রশ্ন করিতে পার। সে বলিল, তোমরা কারা? তিনি বলিলেন, আমরা আরবের লোক। দীর্ঘ দিন আমরা অতিশয় দুর্ভাগ্য এবং কঠিন বিপদে ছিলাম। ক্ষুধার জ্বালায় আমরা চামড়া ও খেজুর গুটি চুষতাম। চুল ও পশম পরিধান করতাম। বৃক্ষ ও পাথর পূজা করতাম। আমরা যখন এ অবস্থায় পতিত তখন আসমান ও যমীনের প্রতিপালক আমাদের মধ্য হইতে আমাদের নিকট একজন নাবী পাঠালেন। তাহাঁর পিতা-মাতাকে আমরা চিনি। আমাদের নাবী ও আমাদের রবের রাসুল (সাঃআঃ) আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন, যে পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহ তাআলার ইবাদাত কর কিংবা জিযইয়াহ দাও। আর আমাদের নাবী (সাঃআঃ) আমাদের রবের পক্ষ হইতে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, আমাদের মধ্য হইতে যে নিহত হইবে, সে জান্নাতে এমন নিমাত লাভ করিবে, যা কখনও দেখা যায়নি। আর আমাদের মধ্য হইতে যারা জীবিত থাকবে তোমাদের গর্দানের মালিক হইবে।
৩১৬০. See previous Hadith. জুবাইর ইবনু হাইয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
নুমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) (মুগীরাহকে) বলিলেন, আপনাকে আল্লাহ তাআলা এমন যুদ্ধে রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সাথী করিয়াছেন আর তিনি আপনাকে লজ্জিত ও অসম্মানিত করেনি আর আমিও আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে অনেক যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। তাহাঁর নিয়ম এ ছিল যে, যদি দিনের পূর্বাহ্ণে যুদ্ধ শুরু না করিতেন, তবে তিনি বাতাস প্রবাহিত হওয়া এবং সলাতের সময় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করিতেন।
৫৮/২. অধ্যায়ঃ মুসলিম রাষ্ট্রের ইমাম কোন জনপদের প্রধানের সঙ্গে সন্ধি করলে, তা কি অবশিষ্ট লোকদের উপরও কার্যকর হইবে?
৩১৬১. আবু হুমাইদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। তখন আয়লাহর অধিপতি নাবী (সাঃআঃ)-এর জন্য একটি সাদা রঙ এর খচ্চর হাদিয়া দিল আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে চাদর দান করিলেন এবং এলাকা তারই জন্য লিখে দিলেন।
৫৮/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যাদের অঙ্গীকার আছে তাদের ব্যাপারে ওয়াসিয়্যাত।
—- শব্দের অর্থ অঙ্গীকার~প্রতিশ্রুতি, আর —– শব্দের অর্থ আত্মীয়তার সম্পর্ক।
৩১৬২. জুয়াইরিয়াহ ইবনু কুদামাহ তামীমী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-কে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আমাদের কিছু অসীয়্যাত করুন। তিনি বলিলেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর ওয়াদা রক্ষার অসিয়্যাত করছি। কারণ তা হল তোমাদের নাবীর ওয়াদা এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনের জীবিকা।
৫৮/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) বাহরাইনের জমি হইতে যা বন্দোবস্ত দেন এবং বাহরাইনের সম্পদ ও জিযইয়াহ হইতে যা দেয়ার ওয়াদা করেন। ফায় ও জিযইয়াহ কাদের মধ্যে বন্টন করা হইবে?
৩১৬৩. স ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বাহরাইনের ভূমি লিখে দেয়ার জন্য আনসারদের ডাকলেন। তখন তাঁরা বলিলেন, না, আল্লাহর কসম! আমরা সে পর্যন্ত গ্রহণ করব না, যে পর্যন্ত আপনি আমাদের ভাই কুরাইশদের জন্যও একইভাবে লিখে না দেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এ সম্পদ তো তাদের জন্য যতক্ষণ আল্লাহ তাআলা চাইবেন। কিন্তু তারা সে কথাই বলিতে থাকলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার পরে দেখিতে পাবে যে, অন্যদেরকে তোমাদের উপর প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তখন তোমরা আমার সঙ্গে হাওযে মিলিত হওয়া পর্যন্ত সবর করিবে।
৩১৬৪জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বলেছিলেন, যদি আমার নিকট বাহরাইনের মাল আসে তবে আমি তোমাকে এ পরিমাণ, এ পরিমাণ, এ পরিমাণ দিব। পরে যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইন্তিকাল করেন আর বাহরাইনের সম্পদ এসে যায় তখন আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট যে ব্যক্তির কোন ওয়াদা থাকে, সে যেন আমার নিকট আসে। তখন আমি তাহাঁর নিকট গেলাম এবং বললাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বলেছিলাম, যদি আমার নিকট বাহরাইনের সম্পদে আসে, তবে আমি তোমাকে এ পরিমাণ, এ পরিমাণ ও এ পরিমাণ দিব। আবু বকর (রাদি.) আমাকে বলিলেন, তুমি অঞ্জলি ভরে নাও। আমি এক অঞ্জলি উঠালাম। তিনি আমাকে বলিলেন, এগুলো গুণে দেখ। আমি গুণে দেখলাম যে, তাতে পাঁচশ রয়েছে। তখন তিনি আমাকে এক হাজার পাঁচশ দিলেন।
৩১৬৫. See previous Hadith. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বাহরাইনের মাল এলো। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা এগুলো মাসজিদে ঢেলে দাও আর এ মাল এর আগে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট আসা মালের থেকে অনেক অধিক ছিল। এ সময় আব্বাস (রাদি.) এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে দান করুন। আমি আমার এবং আকীলের মুক্তিপণ দিয়েছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আচ্ছা নাও। তিনি তার কাপড়ে অঞ্জলি ভরে নিতে লাগলেন। অতঃপর তা উঠাতে চাইলেন কিন্তু উঠাতে পারলেন না। তখন তিনি বলিলেন, কাউকে আমার উপর এ বোঝা উঠিয়ে দিতে বলুন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, না। তখন তিনি বলিলেন, আচ্ছা আপনিই আমার উপর উঠিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, না। তিনি তা হইতে কিছু কম করিলেন এবং উঠাতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু উঠাতে পারলেন না। অতঃপর বলিলেন, কাউকে আমার উপর বোঝাটি উঠিয়ে দিতে বলুন। তিনি বলিলেন, না। তখন আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, আপনিই একটু আমার উপর উঠিয়ে দিন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, না। অতঃপর তিনি আবার তা হইতে কমালেন, অতঃপর কাঁধে উঠিয়ে রওনা হলেন। তাহাঁর এ আসক্তি দেখে বিস্ময়ের সাথে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকিয়ে থাকলেন, যতক্ষণ না তিনি আমাদের দৃষ্টির আড়াল হলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সে স্থানে একটি দিরহাম থাকা পর্যন্ত সেখান হইতে উঠে দাঁড়াননি।
৫৮/৫. অধ্যায়ঃ নিরপরাধ জিম্মী হত্যার পাপ।
৩১৬৬. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে কতল করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হইতে পাওয়া যাবে।
৫৮/৬. অধ্যায়ঃ আরব উপদ্বীপ হইতে ইয়াহূদীদের বহিষ্করণ।
উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, যতদিন আল্লাহ তাআলা তোমাদের এখানে রাখেন, ততদিন আমি তোমাদের এখানে রাখব।
৩১৬৭. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা মাসজিদে নববীতে উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বের হলেন এবং বলিলেন, তোমরা ইয়াহূদীদের কাছে চল। আমরা চললাম এবং তাদের পাঠকেন্দ্রে পৌঁছলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের উদ্দেশ্যে বলিলেন, তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে নিরাপত্তা পাবে আর জেনে রাখ, পৃথিবী আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রসূলের। আমি ইচ্ছে করেছি, আমি তোমাদের এ দেশ হইতে নির্বাসিত করব। যদি তোমাদের কেউ তাদের মালের বিনিময়ে কিছু পায়, তবে সে যেন তা বিক্রি করে ফেলে। আর জেনে রাখ, পৃথিবী আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রসূলের।
৩১৬৮. সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনেছেনঃ বৃহস্পতিবার! তুমি জান কি বৃহস্পতিবার কেমন দিন? এ বলে তিনি এমনভাবে কাঁদলেন যে, তাহাঁর অশ্রুতে কঙ্কর ভিজে গেল। আমি বললাম, হে ইবনু আব্বাস (রাদি.)! বৃহস্পতিবার দিন কী হয়েছিল? তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর রোগকষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছিলেন, আমার নিকট গর্দানের হাড় নিয়ে এস, আমি তোমাদের জন্য এমন একটি লিপি লিখে দিব অতঃপর তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হইবে না। তখন উপস্থিত সাহাবীগণের বাদানুবাদ হল। অথচ নাবীর সামনে বাদানুবাদ করা শোভনীয় নয়। সাহাবীগন বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর কী হয়েছে? তিনি কি বলিতে ভুলে গেলেন? তোমরা আবার জিজ্ঞেস করে দেখ। তখন তিনি বলিলেন, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি যে অবস্থায় আছি, তা তোমরা আমাকে যেদিকে ডাকছ তার চেয়ে উত্তম। অতঃপর তিনি তাঁদের তিনটি বিষয়ে আদেশ দিলেন। (১) মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ হইতে বের করে দিবে, (২) বহিরাগত প্রতিনিধিদের সেভাবে উপঢৌকন দিবে যেভাবে আমি তাদের দিতাম। তৃতীয়টি উত্তম ছিল হয়ত তিনি সে ব্যাপারে নীরব থেকেছেন, নতুবা তিনি বলেছিলেন, আমি ভুলে গিয়েছি। সুফ্ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এই উক্তিটি বর্ণনাকারী সুলাইমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর।
৫৮/৭. অধ্যায়ঃ মুশরিকরা মুসলিমদের সাথে গাদ্দারী করলে তাদের কি ক্ষমা করা হইবে?
৩১৬৯. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন খায়বার বিজিত হয়, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে একটি (ভুনা) বকরী হাদিয়া দেয়া হয়; যাতে বিষ ছিল। নাবী (সাঃআঃ) আদেশ দিলেন যে, এখানে যত ইয়াহূদী আছে, সকলকে একত্র কর। তাদের সকলকে তাহাঁর সামনে একত্র করা হল। তখন তিনি বলিলেন, আমি তোমাদের একটি প্রশ্ন করব। তোমরা কি আমাকে তার সত্য উত্তর দিবে? তারা বলিল, হ্যাঁ, সত্য উত্তর দিব। নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের পিতা কে? তারা বলিল, অমুক। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা মিথ্যা বলেছ, বরং তোমাদের পিতা অমুক। তারা বলিল, আপনিই ঠিক বলেছেন। তখন তিনি বলিলেন, আমি যদি তোমাদের একটি প্রশ্ন করি, তোমরা কি তার সঠিক উত্তর দিবে? তারা বলিল, হ্যাঁ, দিব, হে আবুল কাসিম! আর যদি আমরা মিথ্যা বলি, তবে আপনি আমাদের মিথ্যা ধরে ফেলবেন, যেমন আমাদের পিতা সম্পর্কে আমাদের মিথ্যা ধরে ফেলেছেন। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করিলেন, কারা জাহান্নামবাসী? তারা বলিল, আমরা তথায় অল্প কিছুদিন অবস্থান করব, অতঃপর আপনারা আমাদের পেছনে সেখানে থেকে যাবেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, দূর হও, তোমরাই সেখানে থাকবে। আল্লাহর কসম! আমরা কখনো তাতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হব না। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি যদি তোমাদের একটি প্রশ্ন করি, তোমরা কি তার সঠিক উত্তর দিবে? তারা বলিল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা কি এ বকরীটিতে বিষ মিশিয়েছ? তারা বলিল, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, কিসে তোমাদের এ কাজে উদ্বুদ্ধ করিল? তারা বলিল, আমরা চেয়েছি আপনি যদি মিথ্যাচারী হন, তবে আমরা আপনার নিকট হইতে স্বস্তি লাভ করব। আর আপনি যদি নাবী হন তবে তা আপনার কোন ক্ষতি করিবে না।
৫৮/৮. অধ্যায়ঃ অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে ইমামের দুআ।
৩১৭০. আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস (রাদি.)-কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক তো বলে যে, আপনি রুকুর পরে বলেছেন। তিনি বলিলেন, সে মিথ্যা বলেছে। অতঃপর তিনি নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক মাস পর্যন্ত রুকুর পরে কুনূত পড়েন। তিনি বানূ সুলাইম গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে দুআ করেছিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) চল্লিশজন কিংবা সত্তর জন ক্বারী কয়েকজন মুশরিকদের কাছে পাঠালেন। তখন বানূ সুলাইমের লোকেরা তাঁদের হামলা করে তাঁদের হত্যা করে। অথচ তাদের এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর মধ্যে সন্ধি ছিল। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে এ ক্বারীদের জন্য যতটা ব্যথিত দেখেছি আর কারো জন্য এতখানি ব্যথিত দেখিনি।
৫৮/৯. অধ্যায়ঃ নারীগণ কর্তৃক নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান।
৩১৭১. উম্মু হানী বিনতে আবু তালিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের বছর আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তাঁকে এমন অবস্থায় পেলাম যে, তিনি গোসল করছিলেন এবং তাহাঁর মেয়ে ফাতিমাহ (রাদি.) তাঁকে পর্দা করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, ইনি কে? আমি বললাম, আমি উম্মু হানী বিনতে আবু তালিব। তখন তিনি বলিলেন, মারহাবা হে উম্মু হানী! যখন তিনি গোসল হইতে ফারেগ হলেন, একখানি কাপড়ে শরীর ঢেকে দাঁড়িয়ে আট রাকআত সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার সহোদর ভাই আলী (রাদি.) হুবাইরার অমুক পুত্রকে হত্যা করার সংকল্প করেছে, আর আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে উম্মু হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছো, আমিও তাকে আশ্রয় দিয়েছি। উম্মু হানী (রাদি.) বলেন, এটা চাশ্তের সময় ছিল।
৫৮/১০ অধ্যায়ঃ মুসলিমদের পক্ষ হইতে নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান একই ব্যাপার। তা সাধারণ মুসলিমদের জন্যও পালনীয়।
৩১৭২. ইবরাহীম তাইমী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আলী (রাদি.) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বলিলেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব ও এই সহীফায় যা আছে, এছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বলেন, এ সহীফায় রয়েছে, যখমের দণ্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ এবং আইর পর্বত থেকে সওর পর্যন্ত মাদীনাহ হারাম হবার বিধান। যে ব্যক্তি এর মধ্যে বিদআত উদ্ভাবণ করে কিংবা বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আল্লাহ তার কোন নফল ও ফরয ইবাদাত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা ব্যতীত অন্যকে মাওলা হিসেবে গ্রহণ করে, তার উপর একই রকম লানত। আর নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মুসলিমগণ একইভাবে দায়িত্বশীল এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও তেমনি অভিসম্পাত।
৫৮/১১. অধ্যায়ঃ যদি কাফিররা সুন্দরভাবে “আমরা ইসলাম কবুল করেছি” বলিতে না পারায় এবং “আমরা দ্বীন বদল করেছি” বলে।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাদি.) সে সব লোকদের কতল করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আয় আল্লাহ! খালিদের একাজে আমি সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি। উমার (রাদি.) বলেন, কেউ যদি বলে, —- (মাতরাস) ভয় করো না, তবে সে তাকে নিরাপত্তা দান করিল। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সকল ভাষা জানেন। উমার (রাদি.) (হারমুযান পারসীকে) বলিলেন, কথা বল, কোন অসুবিধা নেই।
৫৮/১২. অধ্যায়ঃ
মুশরিকদের সঙ্গে দ্রব্য-সামগ্রী প্রভৃতির বদলে সন্ধি সম্পাদন এবং যে ওয়াদা পূরণ করে না তার পাপ।
(আল্লাহ তাআলার বাণীঃ) “আর তারা যদি সন্ধির দিকে আকৃষ্ট হয়, তাহলে আপনিও সেদিকে আগ্রহী হইবেন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করবেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (আনফাল ৬১)
৩১৭৩. সাহল ইবনু আবু হাসমাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ও মুহায়্যিসাহ ইবনু মাসঊদ ইবনু যায়দ (রাদি.) খায়বারের দিকে গেলেন। তখন খায়বারের ইয়াহূদীদের সঙ্গে সন্ধি ছিল। পরে তাঁরা উভয়ে আলাদা হয়ে গেলেন। অতঃপর মুহায়্যিসাহ আবদুল্লাহ ইবনু সাহলের নিকট আসেন এবং বলেন যে, তিনি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তখন মুহাইয়িসাহ তাঁকে দাফন করিলেন। অতঃপর মদিনায় এলেন। আবদুর রহমান ইবনু সাহল ও মাসউদের দুই পুত্র মুহায়্যিসাহ ও হুওয়ায়্যিসাহ নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলেন। আবদুর রহমান (রাদি.) কথা বলার জন্য এগিয়ে এলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, বড়কে আগে বলিতে দাও, বড়কে আগে বলিতে দাও। আর আবদুর রহমান ইব্নু সাহল (রাদি.) ছিলেন বয়সে ছোট। এতে তিনি চুপ রইলেন এবং মুহায়্যিসাহ ও হুওয়ায়্যিসাহ উভয়ে কথা বলিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা কি শপথ করে বলবে এবং তোমাদের হত্যাকারীর অথবা বলেছেন, তোমাদের সঙ্গীর রক্ত পণের অধিকারী হইবে? তারা বলিলেন, আমরা কিভাবে শপথ করব? আমরা তো উপস্থিত ছিলাম না এবং স্বচক্ষে দেখিনি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তবে ইয়াহূদীরা পঞ্চাশটি শপথের মাধ্যমে তোমাদের নিকট হইতে অব্যাহতি লাভ করিবে। তাঁরা বলিলেন, তারা তো কাফির সম্প্রদায়। আমরা কিরূপে তাদের শপথ গ্রহণ করিতে পারি? তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিজের পক্ষ হইতে আবদুর রাহমানকে তাহাঁর ভাইয়ের দীয়াত পরিশোধ করিলেন।
৫৮/১৩. অধ্যায়ঃ ওয়াদা পূরণ করার ফযীলত
৩১৭৪. আবু সুফ্ইয়ান ইবনু হারব ইবনু উমায়্যাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হিরাকল তাঁকে ডেকে পাঠালেন, কুরাইশদের সেই কাফেলাসহ যারা সিরিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। এটা কুরাইশ কাফিরদের সাথে নাবী (সাঃআঃ) এর চুক্তি থাকাকালীন ঘটনা।
৫৮/১৪. অধ্যায়ঃ কোন জিম্মী যাদু করলে তাকে কি ক্ষমা করা হইবে?
ইবনু ওহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন যে, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন জিম্মী যদি যাদু করে, তবে কি তাকে হত্যা করা হইবে? তিনি বলেন, আমার নিকট এ হাদীস পৌঁছেছে যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে যাদু করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি যাদুকরকে হত্যা করেন নি। সে ছিল আহলে কিতাব।
৩১৭৫. আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)-কে যাদু করা হয়েছিল। ফলে তিনি ধারণা করিতেন যে, তিনি এ কাজ করিয়াছেন অথচ তিনি তা করেননি।
৫৮/১৫. অধ্যায়ঃ বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে সতর্ক করা।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তবে তারা যদি আপনাকে ধোঁকা দিতে চায়, তাহলে আপনার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি সেই সত্তা যিনি আপনাকে শক্তি যুগিয়েছেন স্বীয় সাহায্যে ও মুমিনদের মাধ্যমে। (আনফাল ৬২)
৩১৭৬. আউফ ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এলাম। তিনি তখন একটি চামড়ার তৈরী তাঁবুতে ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, ক্বিয়ামাতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ দীনার দেয়ার পরেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করিবে। অতঃপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও বানী আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হইবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করিবে এবং আশিটি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রত্যেক পতাকার নীচে থাকবে বার হাজার সৈন্য।
৫৮/১৬. অধ্যায়ঃ চুক্তিতে আবদ্ধ গোত্রের চুক্তি কিভাবে বাতিল করা যাবে?
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তবে আপনি যদি কোন সম্প্রদায় থেকে চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা করেন তবে আপনিও তাদের চুক্তি তাদের দিকে সমভাবে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। (আনফাল ৫৮)
৩১৭৭. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু বকর (রাদি.) আমাকে সে সকল লোকের সঙ্গে পাঠান যাঁরা মিনায় কুরবানীর দিন এ ঘোষনা দিবেনঃ এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না আর বায়তুল্লাহ শরীফে কোন নগ্ন ব্যক্তি তাওয়াফ করিতে পারবে না আর কুরবানীর দিনই হল হজ্জে আকবারের দিন। একে আকবার এ জন্য বলা হয় যে, লোকেরা (উমরাহকে) হজ্জে আসগার (ছোট) বলে। আবু বকর (রাদি.) সে বছর মুশরিকদের চুক্তি রহিত করে দেন। কাজেই হুজ্জাতুল বিদার বছর যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হাজ্জ করেন, তখন কোন মুশরিক হাজ্জ করেনি।
৫৮/১৭. অধ্যায়ঃ যারা অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে তাদের গুনাহ।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তাদের মধ্য থেকে যাদের সাথে আপনি চুক্তি করিয়াছেন তারা প্রতিবার তাদের কৃত চুক্তি লংঘন করে এবং মোটেও ভয় পায় না।
(সুরা আনফাল ৫৬)
৩১৭৮. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খালিস মুনাফিক বলে গন্য হইবে। যে ব্যক্তি কথা বলার সময় মিথ্যা বলে, আর অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে, প্রতিশ্রুতি দিলে বিশ্বাসঘাতকতা করে, যখন ঝগড়া করে গালাগালি করে। যার মধ্যে এগুলোর কোন একটি স্বভাব পাওয়া যাবে, তার মধ্যে নিফাকের একটি স্বভাব পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।
৩১৭৯. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে কুরআন এবং এ কাগজে যা লিখা আছে তা ছাড়া কোন কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আয়ির পর্বত হইতে এ পর্যন্ত মাদীনাহর হরম এলাকা। যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদআত উদ্ভাবণ করে কিংবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতা ও সকল মানুষের লানত। তার কোন ফরয কিংবা নফল ইবাদাত গৃহীত হইবে না। আর সকল মুসলমানের পক্ষ হইতে নিরাপত্তা একই স্তরের। সাধারন মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে তা রক্ষা করিতে হইবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দেয়া নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত করিবে তার উপর আল্লাহ তাআলার লানত এবং ফেরেশতামণ্ডলী ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরয ইবাদাত গৃহীত হইবে না। আর যে স্বীয় মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি করে, তার উপর আল্লাহ তাআলার লানত এবং ফেরেশতামণ্ডলী ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরয ইবাদত কবূল হইবে না।
৩১৮০. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, অমুসলিমদের নিকট হইতে (জিযইয়াহ স্বরূপ) একটি দীনার বা দিরহামও তোমরা পাবে না, তখন তোমাদের কী অবস্থা হইবে? তাকে বলা হল, হে আবু হুরায়রা্ (রাদি.) আপনি কিভাবে মনে করেন যে, এমন অবস্থা দেখা দিবে, তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, শপথ সে মহান সত্তার যাঁর হাতে আবু হুরায়রা্র প্রাণ, যিনি সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত তাহাঁর উক্তি থেকে আমি বলছি। লোকেরা বলিল, কী কারণে এমন হইবে? তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দেয়া নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করা হইবে। ফলে আল্লাহ তাআলা জিম্মীদের হৃদয়কে কঠিন করে দিবেন; তারা তাদের হাতের সম্পদ দিবে না।
৫৮/১৮. অধ্যায়ঃ ৫৮/১৮. অধ্যায়ঃ
৩১৮১.আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু ওয়াইল (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সিফ্ফীনের যুদ্ধে হাযির ছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি সাহল ইবনু হুনাইফ (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা নিজ মতামতকে বিশুদ্ধ মনে করো না। আমি নিজেকে আবু জান্দালের দিন দেখেছি। আমি যদি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর আদেশ রদ করিতে পারতাম, তবে তা নিশ্চয়ই রদ করতাম। আসলে আমরা যখনই কোন ভয়ানক অবস্থায় আমাদের স্কন্ধে তলোয়ার তুলে নিয়েছি, তখন তা আমাদের জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে এমনভাবে যা আমরা উপলব্ধি করেছি। কিন্তু বর্তমান অবস্থা অন্যরূপ।
৩১৮২. আবু ওয়ায়িল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা সিফ্ফীন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। সে সময় সাহল ইবনু হুনাইফ (রাদি.) দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজ মতামতকে সঠিক মনে করো না। আমরা হুদায়বিয়ার দিন রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। যদি আমরা যুদ্ধ করা সঠিক মনে করতাম, তবে আমরা যুদ্ধ করতাম। পরে উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি হকের উপর নই এবং তারা বাতিলের উপর নয়? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমাদের নিহত ব্যক্তিগণ কি জান্নাতী নন এবং তাদের নিহত ব্যক্তিরা জাহান্নামী নয়? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ, আমাদের নিহতগণ অবশ্যই জান্নাতী। উমার (রাদি.) বলিলেন, তবে কী কারণে আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে হীনতা স্বীকার করব? আমরা কি ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদের ও তাদের মধ্যে কোন ফায়সালা করেননি? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে ইবনু খাত্তাব! আমি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ আমাকে কখনো হেয় করবেন না। অতঃপর উমার (রাদি.) আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট গেলেন এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট যা বলেছিলেন, তা তাহাঁর নিকট বলিলেন। তখন আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, তিনি আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তাআলা কখনও তাঁকে অপদস্থ করবেন না। অতঃপর সুরা ফাতহ নাযিল হয়। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তা শেষ পর্যন্ত উমার (রাদি.) কে পাঠ করে শোনান। উমার (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি বিজয়? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ।
৩১৮৩. আসমা বিনতে আবু বাক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার মা, যিনি মুশরিক ছিলেন, তাহাঁর পিতার সঙ্গে আমার নিকট এলেন, যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কুরাইশরা চুক্তি করেছিল। তখন আসমা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা আমার কাছে এসেছেন। তিনি ইসলামের প্রতি আসক্ত নন। আমি কি তাহাঁর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করব? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ, তাহাঁর সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর।
৫৮/১৯. অধ্যায়ঃ তিন দিনের জন্য বা সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সমঝোতা করা।
৩১৮৪. বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) যখন উমরাহ করার ইচ্ছা করেন, তখন তিনি মক্কায় আগমনের অনুমতি চেয়ে মক্কায় কাফিরদের নিকট লোক পাঠান। তারা শর্ত দেয় যে, তিনি সেখানে তিন রাতের বেশি থাকবেন না এবং অস্ত্রকে কোষে আবদ্ধ না করে প্রবেশ করবেন না। আর মাক্কাহবাসীদের কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিবে না। বারাআ (রাদি.) বলেন, এ সকল শর্ত আলী ইবনু আবু তালিব (রাদি.) লেখা শুরু করিলেন এবং সন্ধিপত্রে লিখলেন, “এটা সে সন্ধিপত্র যার উপর আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ ফায়সালা করিয়াছেন।” তখন কাফিররা বলিল, আমরা যদি এ কথা মেনে নিতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসুল, তবে তো আমরা আপনাকে বাধাই দিতাম না এবং আপনার হাতে বায়আত করে নিতাম। কাজেই এভাবে লিখুন, এটি সেই সন্ধিপত্র যার উপর মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ফায়সালা করিয়াছেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ এবং আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রাসুল। বারাআ (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) লিখতেন না। তাই তিনি আলী (রাদি.)-কে বলিলেন, রাসুলুল্লাহ মুছে ফেল। আলী (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো তা মুছব না। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তবে আমাকে দেখিয়ে দাও। তখন আলী (রাদি.) তাঁকে তা দেখিয়ে দিলেন এবং আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) তা স্বহস্তে মুছে ফেললেন। অতঃপর যখন তিনি মাক্কাহয় প্রবেশ করিলেন এবং সে দিনগুলো অতীত হয়ে গেল, তখন তারা আলী (রাদি.)-এর নিকট এসে বলিল, তোমার সঙ্গীকে বল, যেন তিনি চলে যান। আলী (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে তা বলিলেন। তিনি বলিলেন, ঠিক আছে। অতঃপর তিনি যাত্রা করিলেন।
৫৮/২০. অধ্যায়ঃ সময় সুনির্দিষ্ট না করে সমঝোতা করা।
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর বাণীঃ আমি তোমাদের ততদিন সেখানে থাকতে দিব, যতদিন আল্লাহ তাআলা তোমাদের রাখেন।
৫৮/২১. অধ্যায়ঃ
মুশরিকদের লাশ কূপে নিক্ষেপ করা এবং তাদের থেকে কোন মূল্য গ্রহণ না করা।
৩১৮৫. আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাজদাহরত ছিলেন, তাহাঁর আশে-পাশে কুরাইশ মুশরিকদের কিছু লোক ছিল। এ সময় উকবাহ ইবনু আবু মুআইত উটনীর ভুঁড়ি এনে নাবী (সাঃআঃ)-এর পিঠে ফেলে দেয়। ফলে তিনি তাহাঁর মাথা উঠাতে পারলেন না। অবশেষে ফাতিমাহ (রাদি.) এসে তাহাঁর পিঠ হইতে তা সরিয়ে দেন আর যে ব্যক্তি এ কাজ করেছে তার বিরুদ্ধে বদদুআ করেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহ! কুরাইশদের এ দলের বিচার আপনার উপর ন্যস্ত করলাম। হে আল্লাহ! আপনি শাস্তি দিন আবু জাহল ইবনু হিশাম, উতবাহ ইবনু রাবীআহ, শায়বাহ ইবনু রাবীআহ, উকবাহ ইবনু আবু মুআইত ও উমাইয়াহ ইবনু খালফ (অথবা রাবী বলেছেন), উবাই ইবনু খালফকে। (ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বলেন), আমি দেখেছি, তারা সবাই বদর যুদ্ধে নিহত হয়। তাদের সবাইকে কূপে নিক্ষেপ করা হয়, উমাইয়াহ অথবা উবাই ছাড়া। কেননা, সে ছিল মোটা দেহের। যখন তার লাশ টানা হচ্ছিল, তখন কূপে নিক্ষেপ করার পূর্বেই তার জোড়াগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৫৮/২২. অধ্যায়ঃ নেক বা পাপিষ্ঠ লোকের সঙ্গে কৃত ওয়াদা ভঙ্গে পাপ।
৩১৮৬.আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, প্রত্যেক ওয়াদা ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামতের দিন একটি পতাকা হইবে। একজন রাবী বলেছেন, পতাকাটি স্থাপিত হইবে অপরজন বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রদর্শন করা হইবে এবং তা দিয়ে তার পরিচয় দেয়া হইবে।
৩১৮৭. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, প্রত্যেক ওয়াদা ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামতের দিন একটি পতাকা হইবে। একজন রাবী বলেছেন, পতাকাটি স্থাপিত হইবে অপরজন বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রদর্শন করা হইবে এবং তা দিয়ে তার পরিচয় দেয়া হইবে।
৩১৮৮
ইবনে উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, (কিয়ামতের দিন) ওয়াদা ভঙ্গের নিদর্শন হিসেবে প্রত্যেক ওয়াদা ভঙ্গকারীর জন্য একটি পতাকা স্থাপন করা হইবে।
৩১৮৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মাক্কাহ বিজয়ের দিন বলিলেন, হিজরাত নেই কিন্তু জিহাদ ও নিয়্যাত রয়েছে আর যখন তোমাদের জিহাদে যাবার জন্য আহ্বান করা হইবে তখন তোমরা বেড়িয়ে পড়বে। আর তিনি মাক্কাহ বিজয়ের দিন আরো বলেন, এ নগরীকে আল্লাহ তাআলা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে সম্মানিত করিয়াছেন। কাজেই তা আল্লাহর দেয়া সম্মানের দ্বারা ক্বিয়ামাত অবধি সম্মানিত থাকবে। আমার আগে এখানে যুদ্ধ করা কারও জন্য হালাল ছিল না, আর আমার জন্যও তা দিনের কেবল কিছু সময়ের জন্য হালাল করা হয়েছিল। অতএব, আল্লাহর দেয়া সম্মানের দ্বারা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তা সম্মানিত থাকবে। এখানকার কাঁটা কর্তন করা যাবে না; শিকারকে তাড়ানো যাবে না আর পথে পড়ে থাকা জিনিস কেউ উঠাবে না। তবে সে ব্যক্তি উঠাতে পারবে, যে তা ঘোষণা করিবে। এখানকার ঘাস কাটা যাবে না। তখন আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইযখির ছাড়া। কেননা, তা কর্মকারের ও ঘরের কাজে লাগে। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, ইযখির ছাড়া।
Leave a Reply