সতর ঢাকা
সতর ঢাকা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ৮
- অধ্যায়ঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ
৭৫৪. উমার ইবনি আবু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এক কাপড়ে সলাত আদায় করিতে দেখেছি। তিনি উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] এর ঘরে সলাত আদায় করছিলেন। তিনি এ কাপড়টি নিজের শরীরে এভাবে জড়িয়ে নিলেন যে, কাপড়ের দুদিক তাহাঁর কাঁধের উপর ছিল। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৫৬, মুসলিম ৫১৭, নাসায়ী ৭৬৪, ইবনি মাজাহ ১০৪৯, আহমাদ ১৬৩২৯, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ৭৬১, সহীহ ইবনি হিব্বান ২২৯২। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৫৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সলাতে কাপড়ের কোন অংশ কাঁধের উপর না রেখে তোমাদের কেউ যেন এক কাপড়ে সলাত আদায় না করে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৫৯, মুসলিম ৫১৬, নাসায়ী ৭৬৯, দারিমি ১৪১১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩২০৪। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৫৬.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এক কাপড়ে সলাত আদায় করিবে সে যেন কাপড়ের দুকোণ কাঁধের উপর দিয়ে বিপরীত দিক হইতে টেনে এনে জড়িয়ে নেয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৬০, সহীহ আল জামি ৬৩৬১, সহীহ ইবনি হিব্বান ২৩০৪। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৫৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি চাদর পরে সলাত আদায় করিলেন। চাদরটির এক কোণে অন্য রঙের বুটির মত কিছু কাজ করা ছিল। সলাতে এই কারুকার্যের দিকে তিনি একবার তাকালেন। সলাত শেষ করার পর তিনি বললেন, আমার এ চাদরটি [এর দানকারী] আবু জাহমের কাছে নিয়ে যাও। তাকে এটি ফেরত দিয়ে আমার জন্য তার আমবিজানিয়াত নিয়ে আস। কারণ এই চাদরটি আমাকে আমার সলাতে মনোযোগী হইতে বিরত রেখেছে। {৭৭১] বোখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, আমি সলাতে চাদরের কারুকার্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম, তাই আমার ভয় হচ্ছে এই চাদর সলাতে আমার নিবিষ্টতা বিনষ্ট করিতে পারে।{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৭৩, মুসলিম ৫৫৬, আবু দাউদ ৪০৫২, ইরওয়া ৩৭৬, আহমাদ ২৪০৮৭, সহীহ আল জামি ৮৬৪। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৫৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আয়িশাহ্ সিদ্দীকা [রাদি.] এর একটি পর্দার কাপড় ছিল। সেটি দিয়ে তিনি ঘরের একদিকে ঢেকে রেখেছিলেন। নবী [সাঃআঃ] তাকে বললেন, তোমার এ পর্দাখানি এখান থেকে সরিয়ে ফেল। কারণ এর ছবিগুলো সব সময় সলাতে আমার চোখে পড়তে থাকে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৭৪, আহমাদ ১২৫৩১, সহীহ আল জামি ১৪০৫। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৫৯. উক্ববাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে রেশমের একটি কাবা হাদীয়া দেয়া হল। তিনি সেটি পরে সলাত আদায় করিলেন। সলাত শেষে তিনি কাবাটিকে অত্যন্ত অপছন্দনীয়ভাবে শরীর থেকে খুলে ফেললেন। এরপর তিনি বললেন, এ কাবা মুত্তাকীদের পরা ঠিক নয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৭৫, মুসলিম ২০৭৫, নাসায়ী ৭৭০, আহমাদ ১৭৩৪৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ৫৪৩৩, সহীহ আল জামি ৭৭৯৮। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৭৬০. সালামাহ্ ইবনি আক্ওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন শিকারী ব্যক্তি। আমি কি[লুঙ্গি পায়জামা ছাড়া] এক কাপড়ে সলাত আদায় করে নিতে পারি? রাসূল [সাঃআঃ] প্রতিউত্তরে বললেন হ্যাঁ, আদায় করে নিতে পার। তবে একটি কাঁটা দিয়ে হলেও [গলার নীচে কাপড়ের দু দিক] আটকিয়ে নিও। {১} এ হাদিসটি ঠিক এভাবে নাসায়ীও বর্ণনা করিয়াছেন।
{১} হাসান : আবু দাউদ ৬৩২, ইরওয়া ২৬৮।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৭৬১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি[পায়ের গিটের নীচে] ঝুলিয়ে সলাত আদায় করছিল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেন, যাও উযূ করে আস। লোকটি গিয়ে উযূ করে আসল। এ সময় এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি এই লোকটিকে কেন উযূ করিতে বললেন [অথচ তাহাঁর উযূ ছিল]? উত্তরে নবী [সাঃআঃ] বললেন, সে তাহাঁর লুঙ্গি [গিটের নীচে] ঝুলিয়ে রেখে সলাত আদায় করছিল। আর যে ব্যক্তি লুঙ্গি ঝুলিয়ে রেখে সলাত আদায় করে, আল্লাহ তাআলা তাহাঁর সলাত ক্ববূল করেন না। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৬৩৮, জইফ আত তারগীব ১২৪৮। কারণ এর সানাদে আবু জাফার থেকে ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবী কাসীর আল আনসারী আল মাদানী আল মুয়ায্যিন হাদিস বর্ণনা করেছে যাকে যায়দ আল ক্বত্ত্বান অপরিচিত বলেছেন। আর হাফিয ইবনি হাজার তাক্বরীবে হাদিস বর্ণনায় শিথিল হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭৬২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ওড়না ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাদের সলাত কবূল হয় না। {১}
{১} সহীহ : আবু দাঊেদ ৬৪১, তিরমিজি ৩৭৭, ইরওয়া ১৯৬। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৬৩. উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলাম, মহিলাদের কাছে যদি লুঙ্গি পায়জামার কোন কাপড় ভিতরে পরার জন্য না থাকে, শুধু জামা ও ওড়না পরে তারা সলাত আদায় করিতে পারবে কিনা? নবী [সাঃআঃ] বললেন, হ্যাঁ, সলাত হয়ে যাবে। তবে জামা এতটা লম্বা হইতে হবে যাতে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢেকে যায়। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৬৪০। কারণ এটি উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] পর্যন্ত প্রমাণিত রসূল সাঃআঃ পর্যন্ত নয়। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৭৬৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাত আদায় করার সময় সাদল করিতে ও কারও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করিয়াছেন। {১}
{১} হাসান : আবু দাউদ ৬৪৩, তিরমিজি ৩৭৮, সহীহ আল জামি ৬৮৮৩। তবে আত তিরমিজিতে শুধু প্রথম অনুচ্ছেদটি রয়েছে আর তার সানাদেও কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৭৬৫. শাদ্দাদ ইবনি আওস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা জুতা-মোজাসহ সলাত আদায় করে ইয়াহূদীদের বিপরীত কাজ করিবে। কারণ জুতা-মোজা পরে তারা সলাত আদায় করে না। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৬৫২, সহীহ আল জামি ৩২১০। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৬৬. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবীগণেরকে নিয়ে সলাত আদায় করছিলেন। হঠাৎ তিনি পা থেকে জুতা খুলে বাম পাশে রেখে দিলেন। তা দেখে লোকেরাও নিজেদের জুতা খুলে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাত শেষ করে বললেন, তোমরা কেন নিজেদের পায়ের জুতা খুলে ফেললে? তারা উত্তর দিলেন, আপনাকে জুতা খুলে ফেলতে দেখে আমরাও আমাদের জুতা খুলে রেখে দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, জিবরীল এসে আমাকে খবর দিলেন, আমার জুতায় নাপাকী আছে। তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে আসে তখন সে যেন তাহাঁর জুতায় নাপাক আছে কিনা তা দেখে নেয়। যদি তাহাঁর জুতায় নাপাকী দেখে তাহলে সে যেন তা মুছে ফেলে। এরপর জুতা সহকারেই সলাত আদায় করে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৬৫০, ইরওয়া ২৮৪, দারিমী ১৪১৮। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৬৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: তোমাদের কেউ সলাত আদায় করিতে দাঁড়ালে সে যেন তার জুতা তার ডান পাশেও না রাখে, বাম পাশেও না রাখে। কারণ এদিক অন্য কারও ডান দিক হবে। তবে যদি বাম দিকে কেউ না থাকে [তাহলে বামদিকে রেখে দিবে]। অন্যথায় সে যেন জুতা দুপায়ের মধ্যে [সামান্য সামনে] রেখে দেয়। আর এক বর্ণনায় এ শব্দগুলো এসেছে : [যদি জুতা পাক-পবিত্র হয় তা না খুলে] পায়ে রেখেই সলাত আদায় করিবে। {১} ইবনি মাজাহও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৬৫৪, ৬৫৫। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৭৬৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। দেখলাম, তিনি একটি মাদুরের উপর সলাত আদায় করছেন, তার উপরই সাজদাহ্ দিচ্ছেন। আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] বলেন, আমি দেখলাম তিনি এক প্রস্থ কাপড় বিপরীত দিক হইতে কাঁধের উপর পেঁচিয়ে সলাত আদায় করছেন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫১৯, ইবনি মাজাহ ১০৪৮। সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৬৯.,আমর ইবনি শুআয়ব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি তার পিতার মাধ্যমে দাদা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি [আবদুল্লাহ] বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে খালি পায়ে ও জুতা সহকারে উভয় অবস্থায় সলাত আদায় করিতে দেখেছি। {১}
{১} সহীহ হাসান : আবু দাউদ ৬৫৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৭৭০. মুহাম্মাদ ইবনি মুনকাদির [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] আমাদের সাথে এক কাপড়ে সলাত আদায় করিলেন। তিনি তা গিরা লাগিয়ে পিছনে ঘাড়ের উপর বেঁধে রেখেছিলেন। তখন তার অন্যান্য কাপড় খুঁটির উপর রাখা ছিল। একজন তাকে জিজ্ঞেস করিল, আপনি এক লুঙ্গিতেই সলাত আদায় করিলেন [অথচ আপনার আরও কাপড় ছিল]? উত্তরে তিনি বললেন, তোমার মত আহাম্মককে দেখাবার জন্য আমি এ কাজ করেছি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কালে আমাদের কার কাছেই বা দুটি কাপড় ছিল? {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৫২।সতর ঢাকা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৭৭১. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক কাপড়ে সলাত আদায় করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা এভাবে এক কাপড়েই সলাত আদায় করেছি। তাতে আমাদেরকে দোষারোপ করা হয়নি। এ কথার উপর ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] বললেন, যখন আমাদের কাপড়ের অভাব ছিল তখন এক কাপড়ে সলাত পড়া হত। আল্লাহ তাআলা এখন আমাদেরকে প্রাচূর্য ও স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছেন। তাই এখন দুই কাপড়েই সলাত আদায় করা উত্তম। {১}
{১} জইফ : মুসনাদে আহমাদ ২০৭৬৯। কারণ এর সানাদে আবু নাখরাহ্ ইবনি বাক্বিয়্যাহ্ নামে একজন অপরিচিত রাবী রয়েছে। আর হায়সামীর উক্তি অনুযায়ী সে উবাই ইবনি কাব এবং ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] থেকে হাদিস শ্রবণ করেননি। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর নাম আল মুনযির ইবনি মালিক ইবনি কুত্বয়াহ। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply