শুবার সময় এবং সকাল সন্ধ্যার আমল
শুবার সময় এবং সকাল সন্ধ্যার আমল >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১০, অধ্যায়ঃ ৩
- অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
২৩৬৫. {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার একশটি রহমত রয়েছে, তন্মধ্যে মাত্র একটি রহমত তিনি [দুনিয়ার] জিন্, মানুষ, পশু ও কীট-পতঙ্গের জন্যে অবতীর্ণ করিয়াছেন। এই একটি রহমত দিয়ে তারা পরস্পরকে স্নেহ-মমতা করে, এ রহমাত দিয়ে তারা পরস্পরকে দয়া করে। এর দ্বারাই বন্য প্রাণীরা এদের সন্তান-সন্ততিকে ভালবাসে। আর অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমাত আল্লাহ তাআলা পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দিয়েছেন। যা দিয়ে তিনি কিয়ামাতের দিন তাহাঁর বান্দাদেরকে রহম করিবেন।
[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৭৫২, ইবনি মাজাহ ৪২৯৩, ইবনি হিববান ৬১৪৭, সহীহাহ্ ১৬৩৪, সহীহ আল জামি ২১৭২। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৬৬. য় সালমান ফারসী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা ঐ সকল রহমত দিয়ে তাকে পূর্ণতা দান করিবেন।{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৭৫৩, ইবনি হিববান ৬১৪৬, সহীহাহ্ ১৬৩৪, সহীহ আল জামি ১৭৬৭। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৬৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে কি শাস্তি রয়েছে মুমিন বান্দা যদি তা জানত, তাহলে কেউই তাহাঁর জান্নাতের আশা করত না। আর কাফির যদি জানত আল্লাহর কাছে কি দয়া রয়েছে, তাহলে কেউই তাহাঁর জান্নাত হইতে নিরাশ হত না।
[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৭৫৫, শুআবুল ঈমান ৯৬৯, ইবনি হিববান ৬৫৬, সহীহ ৩৩৭৯, তিরমিজি ৩৫৪২। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৬৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত তোমাদের কারো জন্য জুতার ফিতা হইতেও বেশি কাছে, আর জাহান্নামও ঠিক অনুরূপ। [বোখারী]{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৬৪৮৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫০৪, শুআবুল ঈমান ৯৭৬২, ইবনি হিববান ৬৬১, সহীহাহ্ ৩৬২৪, সহীহ আত তারগীব ৩৩৪৯, সহীহ আল জামি ৩১১৫। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৬৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন এক ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনকে বলিল, কোন সময় সে কোন ভাল কাজ করেনি। আর এক বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি নিজের ওপর অবিচার করেছে। মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে নিজের সন্তান-সন্ততিকে ওয়াসিয়্যাত করিল, যখন সে মারা যাবে তাকে যেন পুড়ে ফেলা হয়। অতঃপর মৃতদেহের ছাইভস্মের অর্ধেক স্থলভাগে, আর অর্ধেক সমুদ্রে ছিটিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহর কসম! যদি তিনি [আল্লাহ] তাকে ধরতে পারেন তাহলে এমন শাস্তি দিবেন, যা দুনিয়ার কাউকেও কক্ষনো দেননি। সে মারা গেলে তার সন্তানেরা তার নির্দেশ মতই কাজ করিল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা সমুদ্রকে হুকুম করিলেন, সমুদ্র তার মধ্যে যা ছাইভস্ম পড়েছিল সব একত্র করে দিলো। ঠিক এভাবে স্থলভাগকে নির্দেশ করিলেন, স্থলভাগ তার মধ্যে যা ছাইভস্ম ছিল সব একত্র করে দিলো। পরিশেষে মহান আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কেন এরূপ কাজ করলে? [উত্তরে বললো] তোমার ভয়ে হে রব! তুমি তো তা জানো। তার এ কথা শুনে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৭৫০৬, মুসলিম ২৭৫৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ৮২২, সহীহাহ্ ৩০৪৮। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৭০. উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু যুদ্ধবন্দী এলো। তখন দেখা গেল, একটি মহিলার বুকের দুধ ঝরে পড়ছে, আর সে শিশু সন্তানের সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ বন্দীদের মধ্যে একটি শিশু দেখিতে পেল। তাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে সে দুধ পান করাল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমাদের কি মনে হয় এ মহিলাটি স্বীয় সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করিতে পারে? উত্তরে আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রসূল! কক্ষনো না। যদি সে নিক্ষেপ না করার সামর্থ্য রাখে। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, অবশ্যই এ মহিলার সন্তানের প্রতি মায়া-মমতার চেয়ে বান্দার ওপর আল্লাহ তাআলার মায়া-মমতা অনেক বেশি।
[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৫৯৯৯, মুসলিম ২৭৫৪, মুজামুল আওসাত ৩০১১, শুআবুল ঈমান ৬৭২৯। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৭১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকেই তার আমাল [ইবাদাত-বন্দেগী] মুক্তি দিতে পারবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকেও না। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আমাকেও নয়। অবশ্য যদি আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে নেন। তবুও তোমরা সঠিকভাবে আমাল করিতে থাকিবে ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করিবে। সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতে কিছু আমাল করিবে। সাবধান! তোমরা [ইবাদাতে] মধ্যমপন্থা অবলম্বন করিবে, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করিবে। তাতে তোমরা তোমাদের মঞ্জীলে মাকসূদে পৌঁছে যাবে।
[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৬৪৬৩, মুসলিম ২৮১৬, আহমাদ ১০২৫৬, সহীহ আল জামি ৫২২৯, ইবনি মাজাহ ৪২০১, মুজামুল আওসাত ৪২৭২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬৩, শুআবুল ঈমান ৯৬৭৪, সহীহ আত তারগীব ৩৫৯৮। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৭২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকেই তার আমাল [ইবাদাত-বন্দেগী] জান্নাতে পৌঁছাতে পারবে না এবং তাকে জাহান্নাম হইতেও মুক্তি দিতে পারবে না, এমনকি আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাকেও নয়।
[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৮১৭, সহীহ আল জামি ৭৬৬৭। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৭৩. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন ইসলাম কবূল করে, তার ইসলাম খাঁটি হয়। [ইসলাম গ্রহণের কারণে] তার প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ আল্লাহ তার পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেন। অতঃপর তার এক একটি নেক কাজের তার দশ গুণ হইতে সাতশ গুণ, বরং অনেক গুণ পর্যন্ত লেখা হয়। আর পাপ কাজের জন্য একগুণ মাত্র। তবে আল্লাহ যাকে [ইচ্ছা] এ পাপ কাজকে ছেড়ে যান।
[বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৪১, সহীহ আল জামি ৩৩৭। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৭৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা সৎ-অসৎ চিহ্নিত করে রেখেছেন। যে ব্যক্তি সৎ কাজের সংকল্প করে, কিন্তু তা করেনি আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি পূর্ণ নেকী লিখে নেন। আর যদি সৎ কাজের সংকল্প করার পর তা বাস্তবায়ন করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে এই একটি সৎ কাজের জন্য দশ গুণ হইতে সাতশ গুণ, বরং বহুগুণ পর্যন্ত সৎ কাজ হিসেবে লিখে রাখেন। আর যে ব্যক্তি অসৎ কাজের সংকল্প করে, কিন্তু বাস্তবে তা না করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একে একটি পূর্ণ নেক কাজ হিসেবে লিখে নেন। আর যদি অসৎ কাজের সংকল্প করার পর তা বাস্তবে করে, তাহলে আল্লাহ এর জন্য তার একটি মাত্র গুনাহ লিখে রাখেন।
[বোখারী, মুসলিম]{১},{১} সহীহ : বোখারী ৬৪৯১, মুসলিম ১৩১, আহমাদ ২৮২৭, শুআবুল ঈমান ৩২৮, সহীহ আত তারগীব ১৭। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৩৭৫. উকবাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অসৎ কাজ করার পর আবার সৎ কাজ করে, তার দৃষ্টান্ত হলো ঐ ব্যক্তির মতো, যার গায়ে সংকীর্ণ বর্ম রয়েছে এবং তা তার গলা কষে ধরেছে। অতঃপর সে কোন সৎ কাজ করিল যাতে তার একটি গিরা খসে পড়ল। অতঃপর আর একটি সৎ কাজ করিল এতে আর একটি গিরা খুলে গেল। পরিশেষে বর্মটি খুলে মাটিতে পড়ে গেল
। [শারহুস্ সুন্নাহ্]{১}, {১} সহীহ : আহমাদ ১৭৩০৭, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭৮৩, শারহুস্ সুন্নাহ ৪১৪৯, সহীহাহ্ ২৮৫৪, সহীহ আত তারগীব ৩১৫৭, সহীহ আল জামি ২১৯২। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৭৬. আবু দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দানকালে বলিতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি [কিয়ামাতের দিন হিসাব দেবার জন্য] নিজের রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য দুটি জান্নাত রয়েছে- [সূরা আর্ রহমান ৫৫ : ৪৬]। বর্ণনাকারী {আবু দারদা [রাদি.]] বলেন, আমি [এ কথা শুনে] জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি সে যিনা করে অথবা চুরি করে, তারপরও কি [সে দুটি জান্নাত পাবে]? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দ্বিতীয়বার বললাম, যে ব্যক্তি [কিয়ামাতের দিন] নিজের রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য দুটি জান্নাত রয়েছে। আমি দ্বিতীয়বার বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি সে যিনা করে অথবা চুরি করে, তারপরও কি? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তৃতীয়বারও বললেন, যে ব্যক্তি [কিয়ামাতের দিন] নিজের রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য দুটি জান্নাত রয়েছে। আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! সে ব্যক্তি যিনা করে অথবা চুরি করে, তারপরও কি? এবারও তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হ্যাঁ, যদি আবু দারদার নাকও কাটা যায়
[ধূলায়িত হয়]। [আহমাদ]{১}, {১} সহীহ : আহমাদ ২৭৫২৭, বায়হাক্বী : আল বাসু ওয়ান্ নুশূর ২৮, শারহুস্ সুন্নাহ ৪১৮৯। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৭৭. আমির্ আর্ রম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি আসলো, যার গায়ে একটি চাদর জাতীয় জিনিস জড়ানো ছিল, আর তার হাতে কোন কিছু ছিল। সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময়ে পাখির বাচ্চার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বাচ্চাগুলোকে আমার চাদরে রাখলাম। হঠাৎ এদের মা এসে আমার মাথার উপর ঘুরতে লাগল। অবস্থাদৃষ্টে আমি তার জন্য বাচ্চাগুলোকে উন্মুক্ত করলাম, এমন সময় মা পাখিটি ওদের মধ্যে এসে মিলে গেল। তখন আমি এদের সকলকে আমার চাদরে জড়িয়ে ফেললাম। এগুলো এখনো আমার সাথে। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, এদেরকে ছেড়ে দাও। আমি সাথে সাথে ছেড়ে দিলাম, কিন্তু তাদের মা বাচ্চাদের ছেড়ে গেল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাচ্চাদের ওপর তাদের মায়ের মমত্ববোধ দেখে তোমরা কী আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ? সেই সত্তার কসম, যিনি আমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, বাচ্চাগুলোর ওপর তাদের মায়ের দয়ার চেয়েও অবশ্যই আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর বেশি দয়াবান। এগুলোকে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকে নিয়ে এসেছ যথাস্থানে তাদের মায়ের সাথে রেখে এসো। তাই সে [বাচ্চাগুলো] নিয়ে গেল।
[আবু দাউদ]{১}. {১} জইফ : আবু দাউদ ৩০৮৯, শুআবুল ঈমান ৬৭২৮। কারণ এর সানাদে তিনজন রাবী মাজহূল রয়েছে। যথা- আবু মানযূর, তার চাচা, তার চাচা আমির আর্ রম। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
অধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৩৭৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি একদল লোকের পাশ দিয়ে গেলেন এবং জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা কোন্ জাতি? তারা উত্তরে বলিল, আমরা মুসলিম। জনৈকা মহিলা তখন তার পাতিলের নীচে আগুন ধরাচ্ছিল, তার সাথে ছিল তারই একটি শিশু সন্তান। হঠাৎ আগুনের একটি ফুলকি উপরের দিকে জ্বলে উঠলে তখনই সে তার সন্তানকে দূরে সরিয়ে দিলো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে মহিলাটি এসে বলিল, আপনিই কী আল্লাহর রসূল? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হ্যাঁ। তখন সে বলিল, আপনার জন্য আমার মাতাপিতা কুরবান হোক। বলুন! আল্লাহ তাআলা কি সবচেয়ে বড় দয়ালু নন? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, অবশ্যই। মহিলাটি বলিল, তবে আল্লাহ তাআলা কি তাহাঁর বান্দাদের ওপর সন্তানের প্রতি মায়ের দয়ার চেয়ে বড় দয়ালু নন? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, অবশ্যই। তখন মহিলাটি বলিল, মা তো কক্ষনো তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে না। মহিলার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীচের দিকে মাথা নুইয়ে কাঁদতে লাগলেন। তারপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মাথা উঠিয়ে মহিলার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের মধ্যে একান্ত অবাধ্য ছাড়া কাউকেও আযাব [শাস্তি] দেন না- যে আল্লাহর সাথে অবাধ্যতা করে ও যারা
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ
লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ [অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই] বলিতেও অস্বীকার করে।
[ইবনি মাজাহ]{১}.{১} মাওযূ : ইবনি মাজাহ ৪২৯৭, জইফ আল জামি ১৬৭৬, যঈফাহ্ ৩১০৯। কারণ এর সানাদে আবদুল্লাহ ইবনি উমার ইবনি হাফস্ একজন দুর্বল রাবী আর ইসমাঈল ইবনি ইয়াহ্ইয়া একজন মিথ্যুক রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস
২৩৭৯. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করিতে চায় আর সাধ্যাতীত চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। তাই আল্লাহ তাআলা জিবরীলকে বলেন, আমার অমুক বান্দা আমাকে সন্তুষ্ট করিতে চায়। জেনে রাখো, তার প্রতি আমার রহমত আছে। তখন জিবরীল বলেন, অমুকের প্রতি আল্লাহর রহমত আছে, এ কথা বলিতে থাকেন আরশ বহনকারী মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] [ফেরেশতাগণ], তাদের আশেপাশের মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা]-ও। অবশেষে সপ্ত আকাশের অধিবাসীগণও অনুরূপ কথা বলেন। অতঃপর তার জন্য রহমত জমিনের দিকে নেমে আসতে থাকে।
[আহমদ]{১}, {১} হাসান : আহমাদ ২২৪০১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
২৩৮০. উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহ তাআলার এ কালাম,
فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِنَفْسِهٖ وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتَ
ফামিনহুম যা-লিমুন লিনাফসিহী, ওয়া মিনহুম মুকতাসিদুন্, ওয়া মিনহুম সা-বিকুন বিল্ খইর-ত [অর্থাৎ- বান্দাদের মধ্যে কেউ নিজের প্রতি যুলম করে, তাদের মধ্যে কেউ ভালো মন্দ উভয়ই করে, আবার কেউ কল্যাণের দিকে অগ্রবর্তী হয়।]- [সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ৩২]। এরা সকলেই জান্নাতে যাবে। [ঈমাম বায়হাক্বী তাহাঁর কিতাবুল বাসি ওয়ান্ নুশূর কিতাবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ৩২২৫, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৪১০, বায়হাক্বী : আল বাসু ওয়ান্ নুশূর ৫৯। সকাল সন্ধ্যার আমল -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply