‎শিকারের সময় বিস্মিল্লাহ বলা এবং সকল বিঁধান

শিকারের সময় বিস্মিল্লাহ বলা এবং সকল বিঁধান

শিকারের সময় বিস্মিল্লাহ বলা এবং সকল বিঁধান >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৭২, যবেহ ও শিকার করা, অধ্যায়ঃ (১-১২)=১৩টি

৭২/১. অধ্যায়ঃ ‎শিকারের সময় বিস্মিল্লাহ বলা। ‎
৭২/২. অধ্যায়ঃ তীর লব্ধ শিকার।
৭২/৩. অধ্যায়ঃ তীরের ফলকে আঘাতপ্রাপ্ত শিকার
৭২/৪. অধ্যায়ঃ ধনুকের সাহায্যে শিকার করা।
৭২/৫. অধ্যায়ঃ ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করা ও বন্দুক মারা।
৭২/৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি শিকার বা পশু রক্ষার কুকুর ব্যাতীত অন্য কুকুর পালন করে।
৭২/৭. অধ্যায়ঃ শিকারী কুকুর যদি শিকারের কিছুটা খেয়ে ফেলে
৭২/৮. অধ্যায়ঃ শিকার যদি দু বা তিনদিন শিকারী থেকে অদৃশ্য থাকে।
৭২/৯. অধ্যায়ঃ শিকারের সঙ্গে যদি অন্য কুকুর পাওয়া যায়
৭২/১০. অধ্যায়ঃ শিকারে অভ্যস্ত হওয়া সম্পর্কে
৭২/১১. অধ্যায়ঃ পর্বতে শিকার করা
৭২/১২. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর ইরশাদঃ তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার হালাল করা হয়েছে . . .. . . .. . . .. . । (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৯৬)

৭২/১. অধ্যায়ঃ ‎শিকারের সময় বিস্মিল্লাহ বলা। ‎

‎”হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদেরকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করবেন (মুহরিম অবস্থায়) শিকারের ‎ব্যাপারে………যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” পর্যন্ত- (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৯৪) মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের ‎জন্য গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হল- সেগুলো ছাড়া যেগুলোর বিবরণ তোমাদের দেয়া ‎হচ্ছে………কাজেই তাদেরকে ভয় করো না, কেবল আমাকেই ভয় কর।” (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/১-৩)‎

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, (আরবী) অঙ্গীকারসমূহ যা কিছু হালাল করা হয় বা হারাম করা হয়। (আরবী) ‎শূকর। (আরবী) তোমাদেরকে যেন প্ররোচিত করে। (আরবী) শত্রুতা। (আরবী) শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ‎প্রাণী। (আরবী) প্রহারে মৃত প্রাণী। (আরবী) উঁচু স্থান থেকে পতিত হয়ে মারা যাওয়া প্রাণী। (আরবী) শিং ‎এর আঘাতে মারা যাওয়া প্রাণী। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, এর মধ্যে যে জন্তুটির তুমি লেজ বা চোখ ‎নাড়াচাড়া অবস্থায় পাবে। সেটাকে যবহ করিবে এবং আহার করিবে। [১]‎

৫৪৭৫

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) ‎ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে তীরের ফলার আঘাতে প্রাপ্ত শিকারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস ‎করলাম। উত্তরে নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তীরের ধারালো অংশের দ্বারা যেটি নিহত হয়েছে সেটি ‎খাও। আর ফলকের বাঁটের আঘাতে যেটি নিহত হয়েছে সেটি অকীয (অর্থাৎ থেতলে যাওয়া মৃতের মধ্যে গণ্য)। আমি ‎তাঁকে কুকুরের দ্বারা প্রাপ্ত শিকার সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বললেনঃ যে শিকারকে কুকুর তোমার জন্য ধরে ‎রাখে সেটি খাও। কেননা, কুকুরের ঘায়েল করা যবহর হুকুম রাখে। তবে তুমি যদি তোমার কুকুর বা কুকুরগুলোর সঙ্গে ‎অন্য কুকুর পাও এবং তুমি আশঙ্কা কর যে, অন্য কুকুরটিও তোমার কুকুরের শিকার ধরেছে এবং হত্যা করেছে, তা হলে তা ‎খেও না। কারণ, তুমি তো কেবল নিজের কুকুর ছাড়ার সময় বিসমিল্লাহ বলেছ। অন্যের কুকুরের জন্য তা বলনি। ‎(আঃপ্রঃ- ৫০৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৬৭)

‎[১] কুরআনের আয়াতগুলোতে যে সব হারাম খাদ্যের উল্লেখ করা হয়েছে, সে সবের কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিম্নে আলোচনা ‎করা হল।

মৃত প্রাণী হারামঃ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুযায়ী কোন মৃত প্রাণীর মাংস খাদ্য হিসেবে সর্বদা বর্জনীয় যা কুরআন অবিশ্বাসীরাও ‎অনেকাংশে মেনে চলে। এর কারণ এই যে, কী কারণে প্রাণীটির মৃত্যু হয়েছে তা জানার অবকাশ নেই। তাছাড়া এমনও ‎হইতে পারে যে মারাত্মক কোন সংক্রামক ব্যাধি যথা যক্ষা, এনথ্রাকস ইত্যাদি অথবা কোন বিষাক্ত জিনিষের বিষ দ্বারা মৃত্যু ‎ঘটেছে যার প্রভাব সেই মাংস গ্রহণকারী মানুষের উপরই বিস্তার করিতে পারে। অতএব দেখা যায়, প্রায় দেড় হাজার বছর ‎পূর্বে নাযিলকৃত কুরআনের উল্লেখিত আয়াত নিশ্চয়ই বিজ্ঞান সম্মত।

রক্ত হারামঃ পবিত্র কুরআনে রক্ত বলিতে প্রবহমান রক্তকেই বুঝায় যা যবাই করার সময় দেহ থেকে বেগে বহির্গত হয়। ‎দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই রক্তকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে না। প্রবহমান রক্তে নানারূপ বিষাক্ত জিনিষ ও রোগ জীবাণু ‎থাকতে পারে যা বের হয়ে গেলে মাংস অধিক সময় ভাল থাকে। শুনা যায় যে কেবল হিন্দুদের একাংশের এবং ‎স্ক্যান্ডেনেভিয়ান (নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি) দেশবাসীদের মাঝে পশুর রক্ত খাওয়ার প্রচলন আছে।

শূকরের মাংস ও অন্যান্য হারাম খাদ্যঃ শূকরের মাংস হারাম হবার স্বপক্ষে যুক্তি রয়েছে। তিনটি সেমোটিক জাতির অর্থাৎ ‎তিন প্রধান আহলে কিতাবের (ইহূদী, খৃষ্টান ও মুসলমান) মধ্যে একমাত্র খৃষ্টানরাই শূকর ভোজী। শূকর হারাম হবার পিছনে ‎কোন বৈজ্ঞানিক কারণ থাকুক বা না থাকুক এটা আল্লাহর আদেশ তাই মানতেই হইবে। তবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‎শূকর হারাম হবার স্বপক্ষে যে কারঙুলো পাওয়া যায় তা নিম্নে বর্ণনা করা গেল। তা ছাড়া আরও অনেক কারণ থাকতে পারে ‎যা আমরা এখনও জানতে পারিনি। আল্লাহই ভাল জানেন।

শূকরের মাংস খেলে ট্রিচিনিয়াসিস নামক এক প্রকার কৃমি রোগ হয় যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হয়ে থাকে। ট্রিচিনিলা ‎ইসপাইর‍্যালিস নামক এক প্রকার সুতার মত কৃমির শুককীট শূকরের মাংসে অবস্থান করে। যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন ‎করার পরও আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, চীন, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি প্রগতিশীল দেশে আজ পৃথিবীর ‎সবচেয়ে বেশী “ট্রিচিনিয়াসিস” রোগ দেখা যায়। ওয়াশিংটন পোস্ট ১৯৫২ সনের ৩১শে মে সংখ্যার এক নিবন্ধে ডাঃ প্লেন ‎শোফার্ড শূকরের মাংস ভক্ষণের বিপদ সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেছিলেন, “আমেরিকা ও কানাডার প্রতি ষষ্ঠ ব্যাক্তির ‎একজনের মাংস পেশীতে ট্রিচিনিয়াসিস নামক ব্যাধির জীবাণু বিদ্যমান রয়েছে।” টাইমস পত্রিকায় ১৯৪৬ সালের ৩রা ‎ডিসেম্বরের সংখ্যার ৭৭ পৃষ্ঠায় ডাঃ এস পোল্ড বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ২৫ থেকে ৩৫ জন ‎পর্যন্ত লোক তাদের দেহে ট্রিচিনিলা জীবাণু নিয়ে বাস করছে।” শুকরের মাংসের মাধ্যমে টিনিয়া সলিয়াম নামক অন্য এক ‎প্রকার কৃমিও বিস্তার লাভ করে। কয়েক ফুট লম্বা এই ফিতা কৃমি শূকর মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে মানুষের পেটে যায়। এই ‎কৃমির শূককীট শূকরের মাংসে বিদ্যমান থাকে।

বিশ্ববিখ্যাত চীনা মুসলিম চিন্তাবিদ অধ্যাপক ইব্রাহীম টি ওয়াই মা তদ্বীয় রচিত Why Muslims Abstain From Porks ‎নিবন্ধে উল্লেখ করিয়াছেন, শূকরের মাংস পুরাতন ব্যাধিসমূহ জীবন্ত করে তোলে। বাত রোগ ও হাঁপানী রোগ পরিপুষ্ট করে ‎থাকে। শূকরের মাংস ভক্ষণ করলে স্মরণ শক্তি দুর্বল হয় এবং তার ফলে মাথার চুলও পড়ে যায়। সকল প্রাণীর মাংসের ‎মধ্যে শূকরই হচ্ছে সর্বপ্রকার অনিষ্টকর জীবানুর বৃহত্তম আধার। শূকর মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে বিষময় ও বিষাক্ত। ‎শূকরের মাংসের প্রভাব মানুষের চরিত্রে ও ব্যবহারে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। শূকর স্বভাবতই অলস ও তা অশ্লীল রুচির ‎অধিকারী। কুরআন মাজীদে একবার নয় দুবার নয় চারবার শূকরের মাংস ভক্ষণের নিষেধ বাণী বজ্রকন্ঠে ঘোষিত হয়েছে।

আল্লাহর নাম ছাড়া হত্যা করা প্রাণীর মাংস হারামঃ হালাল প্রাণীর মাংস আমাদের জন্য খাদ্য কিন্তু তাই বলে তাকে অনর্থক ‎কষ্ট দিয়ে কিংবা হত্যার বিকৃত আনন্দ লাভের উদ্দেশ্যে হত্যা করা চলবে না। হালাল জীব হত্যা করিতে হলে আল্লাহর নাম ‎স্মরণ করে হত্যা করিতে হইবে। যাতে একথা মনে পড়ে যে, আল্লাহ এই প্রাণীকে আমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন এবং ‎এ মাংস আমাদের শরীর পুষ্টির জন্য প্রয়োজন বিধায় আল্লাহরই শিখানো পদ্ধতিতে যবেহ করা হচ্ছে। আর যবাই করার ‎সময় (আরবী) “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, হে প্রাণী, আমি আল্লাহর হুকুমেই তোমার জীবন শেষ ‎করছি, কারণ মানুষের প্রয়োজনেই তোমার সৃষ্টি। তবে একথাও মনে আছে যে আল্লাহ সবার উচ্চে ও সর্বশক্তিশালী।

শ্বাসরোধ করে হত্যা করা প্রাণীর মাংস হারামঃ শ্বাসরোধ করা হিংস্রতার নমুনা। এটা ইসলাম আদৌ অনুমোদন করে না ‎কেননা এ নিয়মে হত্যা করলে প্রাণীকে অনর্থক বেশী কষ্ট দেয়া হয়। ফলে মৃত প্রাণীর শরীরে অত্যধিক দুষিত রক্ত ও ‎অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস জমা হয় যা মাংসের ক্ষতি সাধন করে। যবাই করলে উক্ত ক্ষতি সাধন হয় না। ‎রক্তক্ষরণের মাধ্যমে দুষিত পদার্থ বেরিয়ে যায়।

কঠিন আঘাতে নিহত জন্তুর মাংস হারামঃ কঠিন আঘাতে নিহত জন্তুর মাংসে অতিরিক্ত ল্যাকটিক এসিড জমা হয় যা ‎মাংসের ক্ষতি সাধন করে। এটা বর্বরতা ও হিংস্রতার নমুনা বটে। হিন্দুদের বলি আর পাশ্চাত্য দেশের বুলেটে নিহত করা ‎বা যন্ত্রে কাটা ইত্যাদি কঠিন আঘাত ব্যাতীত আর কিছুই নয়। হিন্দুরা প্রাণীকে বলি দেয় ঘাড়ের পিছন দিক থেকে কঠিন ‎আঘাত দিয়ে, তাতে হাড়কে বিনা কারণে দ্বিখন্ডিত করা হয়। মেরুদন্ডের মধ্যস্থ স্পাইনাল কর্ডকে হঠাৎ দ্বিখন্ডিত করার ‎ফলে অনেক প্রয়োজনীয় রস মাংসপেশী থেকে বের হয়ে যায়। তাছাড়া বলি দিয়ে হিন্দুরা প্রাণীর গলা চেপে ধরে প্রবাহিত ‎রক্ত বের হইতেও বাধা দেয়। এর তুলনায় যবাই অনেক কম আঘাতে হয় এবং তাতে স্পাইনাল কর্ড কাটা পড়ে না বলে ‎মাংসসমূহ সংকুচিত হয় না এবং এতে মাংস নষ্টও হয় না। শুধু রক্তপাত হয় মৃত্যু ঘটে।

উচ্চস্থান থেকে পতিত হয়ে আঘাত প্রাপ্ত প্রাণীর মাংস হারামঃ কোন উচ্চ স্থান থেকে নিচে পতিত হয়ে আঘাত প্রাপ্ত প্রাণীর ‎মাংসে ল্যাকটিক এসিড বেশী থাকবে। শক (Shock) এর জন্য মৃত্যুর ফলে মাংসসমূহ কুচকিয়ে যায়। ফলে মাংসের ‎গুনগত মান কমে যায়।

পশুর লড়াইয়ে নিহত প্রাণীর মাংস হারামঃ প্রাণীতে প্রাণীতে লড়াই লাগিয়ে শিংয়ের আঘাতে নিহত হালাল প্রাণীর মাংস ‎হারাম। এটা একটি অসভ্য প্রথা ও বর্বরতা। স্পেনে বুল ফাইট নামক এক প্রকার বর্বর খেলা প্রচলিত আছে। এতে ‎ষাঁড়কে বার বার আঘাত করে হত্যা করা হয়। ইসলাম এ গুলো হারাম করে দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছে।

হিংস্র প্রাণীর কামড়ে নিহত জন্তুর মাংস হারামঃ হিংস্র জন্তুর কামড়ে নিহত হালাল প্রাণীর শরীরে কোন বিষাক্ত জিনিস ‎প্রবেশ করিতে পারে। তাই হালাল হওয়া সত্ত্বেও তা ভক্ষণ করা হারাম। যদি জীবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং হিংস্র জন্তুর ‎আঘাত খুব অল্প সময় পূর্বে ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয় বা আঘাত অতি সামান্য হয়েছে এমতাবস্থায় মাংস দূষিত হবার ‎সম্ভাবনা কম। হিংস্র জন্তু হালাল জন্তুর অংশবিশেষ খেয়ে ফেললে জীবন্ত অবস্থায় পাওয়া গেলে তাকে যয়াই করলে খাওয়া ‎হালাল, নয়ত হারাম।

বেদীর উপর বলি দেয়া প্রাণীর মাংস হারামঃ কোন বেদীর উপর হত্যা করার মানে কোন দেবদেবীর নামে বলি দেয়াকে ‎বুঝায় এবং তা শিরক এবং খাওয়া হারাম। অনুরূপভাবে কোন কবর কিংবা মাজার অথবা রওজাতে পীরের নামে যবাই করা ‎পশুর মাংস হারাম।

তীর ছুঁড়ে ভাগ করা মাংস হারামঃ তীর মেরে মাংস ভাগ করা বা লটারীর উদ্দেশ্য হলো জুয়া খেলা এবং লোক ঠকানো। ‎এটা ইসলামে হারাম করা হয়েছে।

শিকারী প্রাণী দ্বারা ধৃত প্রাণী যবাই না করলে মাংস হারামঃ প্রশিক্ষণ দেয়া শিকারী প্রাণী কর্তৃক ধৃত হালাল প্রাণীকে ‎জীবিতাবস্থায় আল্লাহর নামে যবাই করে নিতে হইবে, যদি ধরে নিয়ে আসার পরে জীবিত থাকে। সাধারণতঃ কুকুরকে ‎শিকারী প্রাণী হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এ কুকুর দুভাগে বিভক্তঃ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিকারী কুকুর আর প্রশিক্ষণ না দেয়া ‎কুকুর। যদি প্রশিক্ষণ দেয়া শিকারী কুকুরকে আল্লাহর নাম নিয়ে অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলে শিকারের জন্য প্রেরণ করা হয় ‎তাহলে সে কুকুর যদি শিকারকে হত্যা করে তবুও তা খাওয়া যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তার সাথে প্রশিক্ষণ না দেয়া ‎কুকুর যেন হত্যা করার কাজে অংশ গ্রহণ না করে। যদি তার সাথে অন্য সাধারণ কুকুর অংশ গ্রহণ করে তাহলে তার ‎শিকার করা পশু খাওয়া যাবে না। যদি অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর কোন শিকারী প্রাণী শিকার করে নিয়ে আসে আর শিকারটি ‎যদি জীবিত থাকে তাহলে শুধুমাত্র এ ক্ষেত্রে তাকে যবহ করে খাওয়া যাবে। তবে কুকুর যদি শিকার করা প্রাণীর কিছু অংশ ‎খেয়ে ফেলে তাহলে তা খাওয়া যাবে না। [এ মর্মে বুখারী (৫৪৭৬, ৫৪৭৮, ৫৪৮৮, ৫৪৯৬) ও মুসলিম (১৯২৯, ১৯৩০) ‎সহ দেখুন “সহীহ আবু দাঊদ” (২৮৪৭), “সহীহ নাসাঈ” (৪৩০৫) ও “সহীহ তিরমিযী” (১৪৬৫)]।

৭২/২. অধ্যায়ঃ তীর লব্ধ শিকার।

বন্দুকের গুলিতে শিকার সম্বন্ধে ইবনু উমার (রাদি.) বলেছেনঃ এটি মাওকুযাহ বা থেতলে যাওয়া শিকারের অন্তর্ভুক্ত। সালিম, কাসিম, মুজাহিদ, ইবরাহীম, আত্বা ও হাসান বাসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একে মাকরূহ মনে করেন। হাসানের মতে গ্রাম এলাকা ও শহর এলাকায় বন্দুক দিয়ে শিকার করা মাকরূহ। তবে অন্যত্র শিকার করিতে কোন দোষ নেই।

৫৪৭৬

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তীরের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তীরের ধারালো অংশ দ্বারা আঘাত করে থাক তাহলে খাও, আর যদি ফলার আঘাত লেগে থাকে এবং শিকারটি মারা যায়, তাহলে খেও না। কেননা, সেটি ওয়াকীয বা থেতলে মরার মধ্যে গণ্য। আমি বললামঃ আমি তো শিকারের জন্য কুকুর ছেড়ে দেই। তিনি উত্তর দিলেনঃ যদি তোমার কুকুরকে তুমি বিসমিল্লাহ পড়ে ছেড়ে থাক, তা হলে খাও। আমি আবার বললামঃ যদি কুকুরটা কিছু খেয়ে ফেলে? তিনি বললেনঃ তা হলে খেও না, কারণ সে তা তোমার জন্য ধরে রাখেনি বরং সে ধরেছে নিজের জন্যই। আমি বললামঃ আমি আমার কুকুরকে পাঠিয়ে দেবার জন্য যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুরকেও দেখিতে পাই, তখন? তিনি বললেনঃ তাহলে খেও না। কেননা, তুমি তো কেবল তোমার কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ বলেছ, অন্য কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ বলনি।(আঃপ্রঃ- ৫০৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৬৮)

৭২/৩. অধ্যায়ঃ তীরের ফলকে আঘাতপ্রাপ্ত শিকার

৫৪৭৭

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে শিকারে পাঠিয়ে থাকি। তিনি বললেনঃ কুকুরগুলো তোমার জন্য যেটি ধরে রাখে সেটি খাও। আমি বললামঃ যদি ওরা হত্যা করে ফেলে? তিনি বললেনঃ যদি ওরা হত্যাও করে ফেলে। আমি বললামঃ আমরা তো ফলার দ্বারাও শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ সেটি খাও, যেটি তীরে যখম করেছে; আর যেটি তীরের পার্শ্বের আঘাতে মারা গেছে সেটি খেও না।[১৭৫; মুসলিম ৩৪/১, হাদীস ১৯২৯, আহমাদ ১৯৩৮৯] আঃপ্রঃ- ৫০৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৬৯)

৭২/৪. অধ্যায়ঃ ধনুকের সাহায্যে শিকার করা।

হাসান ও ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি যদি শিকারকে আঘাত করে, ফলে তার হাত কিংবা পা পৃথক হয়ে যায়, তাহলে পৃথক অংশটি খাওয়া যাবে না, অবশিষ্ট অংশটি খাওয়া যাবে। ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ তুমি যদি শিকারের ঘাড়ে কিংবা মধ্যভাগে আঘাত কর, তাহলে তা খাও। যায়েদের সূত্রে আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের গোত্রের একটি গাধা নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল। তখন তিনি আদেশ দিয়েছিলেনঃ তার দেহের যে অংশেই সম্ভব সেখানেই আঘাত কর। তারপর যে অংশটি ছিঁড়ে তা বাদ দিয়ে বাকীটা খাও।

৫৪৭৮

আবু সালাবা আল খুশানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর নাবী! আমরা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস করি। আমরা কি তাদের থালায় খেতে পারি? তাছাড়া আমরা শিকারের অঞ্চলে থাকি। তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দিয়ে শিকার করে থাকি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কোনটা বৈধ হইবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ তুমি যে সকল আহলে কিতাবের কথা উল্লেখ করলে তাতে বিধান হলঃ যদি অন্য পাত্র পাও তাদের পাত্রে খাবে না। আর যদি না পাও, তাহলে তাদের পাত্রগুলো ধুয়ে নিয়ে তাতে আহার কর। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের দ্বারা শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ, সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দ্বারা শিকার করেছ, সেটি যদি যবহ করিতে পার তবে তা খেতে পার। [৫৪৮৮, ৫৪৯৬; মুসলিম ৩৪/১, হাদীস ১৯৩০, আহমাদ ১৭৭৬৭] আঃপ্রঃ- ৫০৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭০)

৭২/৫. অধ্যায়ঃ ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করা ও বন্দুক মারা।

৫৪৭৯

 আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি এক ব্যাক্তিকে দেখলেন, সে ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করছে। তখন তিনি তাকে বললেনঃ পাথর নিক্ষেপ কর না। কেননা, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পাথর ছুঁড়তে নিষেধ করিয়াছেন অথবা রাবী বলেছেনঃ পাথর ছোঁড়াকে তিনি অপছন্দ করিতেন এবং নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ এর দ্বারা কোন প্রাণী শিকার করা হয় না এবং কোন শত্রুকেও ঘায়েল করা হয় না। তবে এটি কারো দাঁত ভেঙ্গে ফেলতে পারে এবং চোখ ফুঁড়ে দিতে পারে। তারপর তিনি আবার তাকে পাথর ছুঁড়তে দেখলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর হাদীস বর্ণনা করেছিলাম যে, তিনি পাথর নিক্ষেপ করিতে নিষেধ করিয়াছেন অথবা তিনি তা অপছন্দ করছেন। তা সত্ত্বেও তুমি পাথর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কথাই বলব না- এতকাল এতকাল পর্যন্ত। [৪৭৪১; মুসলিম ৩৪/১০, হাদীস ১৯৫৪] আঃপ্রঃ- ৫০৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭১)

৭২/৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি শিকার বা পশু রক্ষার কুকুর ব্যাতীত অন্য কুকুর পালন করে।

৫৪৮০

ইবনু উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যে ব্যাক্তি এমন কুকুর পালে যেটি পশু রক্ষার জন্যও নয় কিংবা শিকারের জন্যও নয়; তার আমাল থেকে প্রত্যেহ দু কীরাত পরিমাণ কমে যাবে।(আঃপ্রঃ- ৫০৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭২)

৫৪৮১

 আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

ব্যাক্তি শিকারী কুকুর কিংবা পশু রক্ষাকারী কুকুর ছাড়া অন্য কোন কুকুর পোষে, সে ব্যাক্তির সাওয়াব থেকে প্রতিদিন দু কীরাত পরিমাণ কমে যায়।(আঃপ্রঃ- ৫০৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭৩)

৫৪৮২

 আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি পশু রক্ষাকারী কিংবা শিকারী কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর পালে, তার আমাল থেকে প্রতিদিন দুকীরাত পরিমাণ সাওয়াব কমে যায়।(আঃপ্রঃ- ৫০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭৪)

৭২/৭. অধ্যায়ঃ শিকারী কুকুর যদি শিকারের কিছুটা খেয়ে ফেলে

এবং মহান আল্লাহর বাণীঃ “লোকেরা জিজ্ঞেস করছে তাদের জন্য কী কী হালাল করা হয়েছে . . . . . . .. . . . . . আল্লাহ হিসাব গ্রহনে ত্বরিৎগতি।” পর্যন্ত- (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৪)।

(আরবী) তারা যা উপার্জন করেছে।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেনঃ যদি কুকুর শিকারের কিছুটা খেয়ে ফেলে, তবে সে শিকার নষ্ট করে ফেলল। কেননা, সে তো তখন নিজের জন্য ধরেছে বলে গণ্য হইবে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যেগুলোকে তোমরা শিকার শিক্ষা দিয়েছ যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। কাজেই কুকুরকে প্রহার করিতে হইবে এবং শিক্ষা দিতে হইবে, যাতে সে শিকার খাওয়া ত্যাগ করে।” ইবনু উমার (রাদি.) এটিকে মাকরূহ বলিতেন। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, কুকুর যদি রক্ত পান করে আর গোশ্‌ত না খায় তাহলে (সেই শিকার) খেতে পারে।

৫৪৮৩

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ আমরা এমন সম্প্রদায়, যারা এ সকল কুকুরের দ্বারা শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ তুমি যদি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে বিসমিল্লাহ পড়ে পাঠিয়ে থাক তাহলে ওরা যেগুলো তোমাদের জন্য ধরে রাখে, তা খাও; যদিও শিকারকে কুকুর হত্যা করে ফেলে। তবে যদি কুকুর শিকারের কিছুটা খেয়ে ফেলে (তাহলে খাবে না)। কেননা, তখন আমার আশঙ্কা হয় যে, সে শিকার নিজেরই উদ্দেশ্যে ধরেছে। আর যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুর মিলে যায়, তাহলে খাবে না।(আঃপ্রঃ- ৫০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭৫)

৭২/৮. অধ্যায়ঃ শিকার যদি দু বা তিনদিন শিকারী থেকে অদৃশ্য থাকে।

৫৪৮৪

আদী ইবনু হাতিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ তুমি যদি তোমার কুকুরকে বিসমিল্লাহ পড়ে পাঠাও, এরপর কুকুর শিকার পাকড়াও করে এবং মেরে ফেলে, তবে তুমি তা খেতে পার। আর যদি কুকুর কিছুটা খেয়ে ফেলে, তাহলে খাবে না। কেননা, সে তো নিজের জন্যই ধরেছে। আর যদি এমন কুকুরের সঙ্গে মিশে যায়, যাদের উপর বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি এবং সেগুলো শিকার ধরে মেরে ফেলে, তাহলে তা খাবে না। কেননা, তুমি তো জান না যে, কোন কুকুরটি হত্যা করেছে? আর যদি তুমি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে থাক; এরপর তা একদিন বা দুদিন পর এমন অবস্থায় হাতে পাও যে, তার গায়ে তোমার তীরের আঘাত ব্যাতীত অন্য কিছু নেই, তাহলে খাও। আর যদি তা পানির মধ্যে পড়ে থাকে, তাহলে খাবে না।(আঃপ্রঃ- ৫০৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭৬)

৫৪৮৫

 আবদুল আলা দাঊদ সূত্রে আদী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ যদি কোন ব্যাক্তি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে এবং দু তিন দিন পর্যন্ত সেই শিকারের খোঁজ করার পর মৃত অবস্থায় পায় এবং দেখে যে, তার গায়ে তার তীর লেগে আছে (তখন সে কী করিবে?) নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ইচ্ছা করলে সে খেতে পারে।(আঃপ্রঃ- ৫০৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭৬)

৭২/৯. অধ্যায়ঃ শিকারের সঙ্গে যদি অন্য কুকুর পাওয়া যায়

৫৪৮৬

দী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি বিসমিল্লাহ পড়ে আমার কুকুরকে পাঠিয়ে থাকি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি যদি বিসমিল্লাহ পড়ে তোমার কুকুরটিকে পাঠিয়ে থাক, এরপর সে শিকার ধরে মেরে ফেলে এবং কিছুটা খেয়ে নেয়, তা হলে তুমি খেয়ো না। কেননা, সে তো নিজের জন্যই তা ধরেছে। আমি বললামঃ আমি আমার কুকুরটিকে পাঠালাম, পরে তার সঙ্গে অন্য কুকুরও দেখিতে পেলাম। আমি জানি না উভয়ের কে শিকার ধরেছে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি তা খেয়ো না। কেননা, তুমি তো তোমার কুকুরের উপরই বিসমিল্লাহ পড়েছ, অন্যটির উপর পড়নি। আমি তাঁকে তীরের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তুমি তীরের ধার দিয়ে আঘাত করে থাক, তাহলে খাও। আর যদি পার্শ্বের দ্বারা আঘাত কর আর তাতে তা মারা যায়, তাহলে সেটি ওয়াকীয- থেতলে মারার মধ্যে গণ্য হইবে। কাজেই তা খেয়ো না।(আঃপ্রঃ- ৫০৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭৭)

৭২/১০. অধ্যায়ঃ শিকারে অভ্যস্ত হওয়া সম্পর্কে

৫৪৮৭

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করে বললামঃ আমরা এমন এক সম্প্রদায়, যারা এ সকল কুকুরের দ্বারা শিকার করিতে অভ্যস্ত। তিনি বললেনঃ তুমি যদি আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে (বিসমিল্লাহ বলে) তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে পাঠাও, তাহলে কুকুরগুলো তোমার জন্য যা ধরে রাখবে, তুমি তা খেতে পার। তবে কুকুর যদি কিছুটা খেয়ে ফেলে, তাহলে খেয়ো না। কেননা, আমার আশঙ্কা হয় যে, সে তখন নিজের জন্যই ধরেছে। আর যদি তার সঙ্গে অন্যান্য কুকুর শামিল হয়, তাহলেও খেয়ো না।(আঃপ্রঃ- ৫০৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭৮)

৫৪৮৮

আবু সালাবা খুশানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বাস করি, তাদের পাত্রে আহার করি। আর আমরা শিকারের অঞ্চলে থাকি, শিকার করি তীর ধনুক দিয়ে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এমন কুকুর দিয়েও। অতএব আমাকে বলে দিন, এর মধ্যে আমাদের জন্য কোনটি হালাল? তিনি বললেনঃ তুমি যা উল্লেখ করেছ, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস কর, তাদের পাত্রে খানা খাও। তবে যদি তাদের পাত্র ব্যাতীত অন্য পাত্রে পাও, তাহলে তাদের পাত্রে আহার কর না। আর যদি না পাও, তাহলে ঐগুলো ধুয়ে নিয়ে তাতে আহার করিবে। আর তুমি উল্লেখ করেছ যে তুমি শিকারের অঞ্চলে থাক। তুমি যা তীর ধনুক দ্বারা শিকার কর, তাতে তুমি বিসমিল্লাহ পড়বে এবং তা খাবে। তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে যা শিকার কর, তাতে বিসমিল্লাহ পড়বে এবং তা খাবে। আর তুমি যদি প্রশিক্ষণহীন কুকুর দ্বারা শিকার কর, সেক্ষেত্রে যদি যবহ করা যায়, তাহলে খেতে পার।(আঃপ্রঃ- ৫০৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭৯)

৫৪৮৯

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা মাররুয যাহরান নামক স্থানে একটি খরগোশের পেছনে ধাওয়া করলাম। লোকজন তার পেছনে ছুটল এবং তারা ব্যার্থ হয়। এরপর আমি পেছনে ছুটলাম। অবশেষে সেটি ধরে ফেললাম। তারপর আমি এটিকে আবু ত্বালহার নিকট নিয়ে এলাম। তিনি এটির উভয় রান ও নিতম্ব নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তিনি তা গ্রহণ করেন।(আঃপ্রঃ- ৫০৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৮০)

৫৪৯০

আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন। অবশেষে তিনি মক্কার কোন রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছালে তিনি তাহাঁর কয়েকজন সঙ্গীসহ পেছনে পড়ে গেলেন। তাঁরা ছিলে ইহরাম বাঁধা অবস্থায়। আর তিনি ছিলেন ইহরাম বিহীন। তিনি একটি বন্য গাধা দেখিতে পেয়ে তার ঘোড়ার উপর উঠলেন। তারপর সাথীদেরকে অনুরোধ করিলেন তাহাঁর হাতে তাহাঁর চাবুক তুলে দিতে। তাঁরা অস্বীকার করিলেন। অবশেষে তিনি নিজেই সেটি তুলে নিলেন এবং গাধাটির পিছনে দ্রুত গতিতে ছুটলেন এবং সেটিকে হত্যা করিলেন। নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীদের কেউ কেউ তা খেলেন, আবার কেউ কেউ তা খেতে অস্বীকার করিলেন। পরিশেষে তাঁরা যখন নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে পৌঁছালেন তখন তাঁরা এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বললেনঃ এটি তো এমন খাদ্য যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের খাওয়ার জন্য দিয়েছেন।(আঃপ্রঃ- ৫০৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৮১)

৫৪৯১

আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.)-এর সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

এতে আছে যে, তিনি বললেনঃ তোমাদের সঙ্গে কি তার কিছু গোশ্‌ত আছে?(আঃপ্রঃ- ৫০৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৮২)

৭২/১১. অধ্যায়ঃ পর্বতে শিকার করা

৫৪৯২

আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মাক্কাহ ও মদীনার মধ্যবর্তী সফরে নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। অন্যরা ছিলেন ইহরাম বাঁধা অবস্থায়। আর আমি ছিলাম ইহরাম বিহীন এবং ঘোড়ার উপর সাওয়ার। পর্বত আরোহণে আমি ছিলাম দক্ষ। এমন সময়ে আমি লোকজনকে দেখলাম যে, তারা আগ্রহ নিয়ে কি যেন দেখছে। কাজেই আমিও দেখিতে লাগলাম। হটাৎ দেখি একটি বন্য গাধা। আমি লোকজনকে জিজ্ঞেস করলামঃ এটি কি? তারা উত্তর দিলঃ আমরা জানি না। আমি বললামঃ এটি বন্য গাধা? তারা বললঃ এটি তাই তুমি যা দেখেছ। আমি আমার চাবুকের কথা ভুলে গিয়েছিলাম, তাই তাদের বললামঃ আমাকে আমার চাবুকটি তুলে দাও। তারা বললঃ আমরা তোমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করব না। কাজেই আমি নেমে চাবুকটি তুলে নিলাম। তারপর সেটির পেছনে ছুটলাম। অবশেষে আমি সেটিকে ঘায়েল করলাম এবং তাদের কাছে নিয়ে এসে বললামঃ যাও, এটাকে তুলে নিয়ে এসো। তারা বললঃ আমরা ওটিকে স্পর্শ করব না। তখন আমি নিজেই সেটিকে তুলে তাদের কাছে নিয়ে এলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন তা খেতে অসম্মতি প্রকাশ করিল। আর কয়েকজন তা খেল। আমি বললামঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট থেকে তোমাদের জন্য এ সম্পর্কে জেনে নেব। এরপর আমি তাঁকে পেলাম এবং এ ঘটনা শুনালাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমাদের সঙ্গে সেটির অবশিষ্ট আছে কি? আমি বললামঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ খাও। কারণ, এটি তো এমন খাদ্য যা আল্লাহ তোমাদের খাওয়ার জন্য দিয়েছেন।আঃপ্রঃ- ৫০৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৮৩)

৭২/১২. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর ইরশাদঃ তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার হালাল করা হয়েছে . . .. . . .. . . .. . । (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৯৬)

উমার (রাদি.) বলেছেন, (আরবী) যা শিকার করা হয়, আর (আরবী) সমুদ্র যাকে নিক্ষেপ করে। আবু বাক্‌র (রাদি.) বলেছেনঃ মরে যা ভেসে উঠে তা হালাল।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেনঃ (আরবী) সমুদ্রে প্রাপ্ত মৃত জানোয়ার খাদ্য, তবে তন্মধ্যে যেটি ঘৃণিত সেটি ব্যাতীত। বাইন জাতীয় মাছ ইয়াহূদীরা খায় না, আমরা খাই।

আবু শুরায়হ (রাদি.) যিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবী তিনি বলেছেনঃ সমুদ্রের সব জিনিসই যবাহকৃত বলে গণ্য। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ (সমুদ্রের) পাখি সম্পর্কে আমার মত সেটিকে যবহ করিতে হনে। ইবনু জুরায়জ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে খাল, বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলামঃ এগুলো কি সমুদ্রের শিকারের অন্তর্ভুক্ত? তিনি উত্তর দিলেনঃ হাঁ। তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “একটি সুমিষ্ট, সুস্বাদু, সুপেয়; অন্যটি লবণাক্ত, বিস্বাদ। তথাপি তোমরা সকল (প্রকার পানি) থেকে তাজা গোশত আহার কর।” (সুরা ফাত্বির ৩৫/১২) হাসান ভোঁদড়ের চামড়ায় নির্মিত ঘোড়ার গদির উপর আরোহণ করিয়াছেন। শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ আমার পরিবারের লোকেরা যদি ব্যাঙ খেত, তাহলে আমি তাদের তা খাওয়াতাম। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কচ্ছপ খাওয়াকে দোষের মনে করিতেন না। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ সমুদ্রের সব ধরনের শিকার খেতে পার, যদিও তা কোন ইয়াহূদী কিংবা খৃস্টান কিংবা অগ্নিপূজক শিকার করে থাকে। আবু দারদা (রাদি.) বলেনঃ মাছ ও সূর্যের তাপ শরাবকে পাক করে।

৫৪৯৩

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা জায়শুল খাবত অভিযানে ছিলাম। আমাদের সেনাপতি করা হয়েছিল আবু উবাইদাহ (রাদি.)-কে। এক সময় আমরা অত্যাধিক ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লে, সমুদ্র এমন একটি মৃত মাছ তীরে নিক্ষেপ করিল যে, এত বড় মাছ কখনো দেখা যায়নি। এটকে আম্বর বলা হয়। আমরা অর্ধমাস এটি খেলাম। আবু উবাদাহ (রাদি.) এর একটি হাড় তুলে ধরলেন এবং এর নীচে দিয়ে একজন অশ্বারোহী (অনায়াসে) অতিক্রম করে গেল।(আঃপ্রঃ- ৫০৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৮৪)

৫৪৯৪

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) আমাদের তিনশ সাওয়ার পাঠালেন- আমাদের সেনাপতি ছিলেন আবু উবাদাহ (রাদি.)। উদ্দেশ্য ছিল আমরা যেন কুরাইশদের একটি কাফেলার অপেক্ষা করি। তখন আমাদের অত্যান্ত ক্ষিধে পেল। এমন কি আমরা ………… (গাছের পাতা) খেতে আরম্ভ করলাম। ফলে এ বাহিনীর নামকরণ করা হয় “জায়শুল খাবত”। তখন সমুদ্র আম্বর নামক একটি মাছ পাড়ে নিক্ষেপ করে। আমরা এটি অর্ধমাস আহার করলাম। আমরা এর চর্বি তেল রুপে গায়ে মাখতাম। ফলে আমাদের শরীর সতেজ হইতে উঠে। আবু উবাইদাহ (রাদি.) মাছটির পাঁজরের কাঁটাগুলোর একটি খাড়া করে ধরলেন, তখন একজন আশ্বারোহী তার নিচ দিয়ে অতিক্রম করে গেল। আমাদের মধ্যে (কায়েস ইবনু নাদ) এক ব্যাক্তি ছিলেন, খাদ্যাভাব তখন ভীষণ আকার ধারণ করেছিল। তখন তিনি তিনটি উট যবাহ করেন। তারপর আরো তিনটি যবহ করেন। এরপর আবু উবাইদাহ (রাদি.) তাঁকে নিষেধ করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫০৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৮৫)

Comments

Leave a Reply