অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কে । Sunan Abu Dawood Bangla
অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কে । Sunan Abu Dawood Bangla , এই অধ্যায়ে হাদীস ১৪৩ টি (৪৩৫১ – ৪৪৯৩) >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ৪০, অনুচ্ছেদঃ ১-১০=১০টি
অনুচ্ছেদ-১ঃ মুরতাদ সম্পর্কে বিধান
অনুচ্ছেদ-২ঃ যে নাবী [সাঃআঃ] কে গালি দেয় তার সম্পর্কিত বিধান
অনুচ্ছেদ-৩ঃ বিদ্রোহ
অনুচ্ছেদ-৪ঃ শাস্তি মওকুফের জন্য সুপারিশ করা
অনুচ্ছেদ-৫ঃ শাসকের নিকট না পৌঁছা পর্যন্ত হাদ্দের অপরাধ গোপন রাখা
অনুচ্ছেদ-৬ঃ কেউ শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলে যথাসম্ভব তা গোপন রাখা উচিৎ
অনুচ্ছেদ-৭ঃ হাদ্দের অপরাধী উপস্থিত হয়ে স্বীকারোক্তি করলে তার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৮ঃ হাদ্দ থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো কথা বলার পরামর্শ দেয়া
অনুচ্ছেদ-৯ঃ যে ব্যক্তি হাদ্দের অপরাধ স্বীকার করে অথচ অপরাধের নাম বলে না
অনুচ্ছেদ-১০ঃ মারধর করে তথ্য বের করা
অনুচ্ছেদ-১ঃ মুরতাদ সম্পর্কে বিধান
৪৩৫১: ইকরিমাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আলী [রাদি.] কিছু সংখ্যক মুরতাদকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] তা জানতে পেরে বলেন, আমি কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বাণী অনুসরণ করে এদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতাম না। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা কাউকে আল্লাহর শাস্তির উপকরণ দ্বারা শাস্তি দিও না। তবে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বক্তব্য মোতাবেক এদের মৃত্যুদণ্ড দিতাম। কারণ, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ধর্ম [ইসলাম] পরিবর্তন করে তোমরা তাহাকে হত্যা করো। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদিস শুনে আলী [রাদি.] বলেন, আহ! ইবনি আব্বাস [রাদি.] সত্য বলিয়াছেন।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৫২: আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল, তাহাকে হত্যা করা বৈধ নয় যদি না সে তিনটি অপরাধের কোন একটি করে থাকেঃ [১] বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করলে; [২] কেউ কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে হত্যা এবং [৩] সমাজের ঐক্য বিনষ্টকারী মুরতাদ।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৫৩: আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহর রাসূল, তাহাকে হত্যা করা বৈধ নয় তিনটি অপরাধের যে কোন একটিতে লিপ্ত না হলেঃ [১] বিবাহিত লোক ব্যভিচার করলে তাহাকে পাথর মেরে হত্যা করিবে, [২] আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাহাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হইবে অথবা ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হইবে অথবা তাহাকে দেশ হইতে নির্বাসন দেয়া হইবে, [৩] আর কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে কিসাসস্বরূপ তাহাকেও হত্যা কয়া হইবে।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৫৪: আবু বুরদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আবু মূসা আশ্আরী গোত্রের দুজন লোককে সঙ্গে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট যাই। তাহাদের একজন আমার ডানপাশে এবং অপরজন বামপাশে ছিল। তারা উভয়ে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট চাকুরী [সরকারী পদ] চাইলো। তিনি নীরব রইলেন। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ হে আবু মূসা অথবা আবদুল্লাহ ইবনি ক্বাইস! তুমি কি বলো? আমি বলিলাম, সেই সত্ত্বার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন! এরা এদের মনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেনি এবং আমি জানতাম না যে, তারা চাকুরী চাইবে। আবু মুসা বলেন, আমি তাহাঁর ঠোঁটের নীচে মেস্ওয়াকের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তা যেন ফুলে আছে। তিনি বলিলেনঃ যে ব্যক্তি সরকারী পদে নিয়োগের প্রার্থনা করে আমরা তাহাকে কখনো তাতে নিয়োগ করি না। তুমি বরং চলে যাও হে আবু মূসা অথবা আবদুল্লাহ ইবনি ক্বাইস! অতঃপর তিনি তাহাকে ইয়ামানে পাঠিয়ে দেন এবং তারপরে মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.]-কে পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, মুআয [রাদি.] তার নিকট পৌঁছলে তিনি বলিলেন, নেমে আসুন এবং তার জন্য একটি বালিশ পেতে দিলেন। তার নিকট ছিল একটা বাঁধা লোক। তিনি প্রশ্ন করিলেন, লোকটি কে? তিনি বলিলেন, লোকটি ছিল ইয়াহুদী, পরে ইসলাম গ্রহণ করে। পরে আবারো সে তার খারাপ ধর্মে ফিরে যায়। মুআয [রাদি.] বলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের ফায়সালা মোতাবেক তাহাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি বসবো না। তিনি বলেন, হ্যাঁ আপনি বসুন। মুআয [রাদি.] বলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের ফায়সালা মোতাবেক তাহাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমিও বসবো না। একথা তিনি তিনবার বলেন। অতঃপর তার হুকুমে তাহাকে হত্যা করা হলো। পরে তারা দুজন রাত জেগে ইবাদাত করা প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তাহাদের একজন মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] বলেন, আমি তো রাতে ঘুমাই ও জেগে ইবাদাত করি, অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদাত করি, ঘুমাই এবং ইবাদাতের মধ্যে আমি যা কামনা করি, ঘুমের মধ্যেও তাই কামনা করি।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৫৫ঃ আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ইয়ামানে অবস্থানকালে মুআয [রাদি.] আমার নিকট আসলেন। একটি লোক ইয়াহুদী ছিল, সে মুসলিম হয়ে আবার ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়। মুআয [রাদি.] এসে বলেন, একে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি আমার জন্তুযান হইতে নামবো না। অতঃপর তাহাকে হত্যা করা হলো। তাল্হা ও বুরাইদাহ উভয়ের একজন বলেন, হত্যা করার পূর্বে তাহাকে ইসলামে ফিরে আসার আহবান জানানো হয়েছিল।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৫৬ঃ একই ঘটনা প্রসঙ্গে আবু বুরদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ আবু মুসার নিকট ইসলাম ত্যাগী একটি লোককে নিয়ে আসা হলো। তিনি তাহাকে বিশ দিন অথবা এর কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ইসলামে ফিরে আসার আহবান জানান। অতঃপর মুআয [রাদি.] এসেও তাহাকে আহবান জানালেন; কিন্তু সে অস্বীকার করলো। সুতরাং তাহাকে হত্যা করা হলো। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবু বুরদাহ হইতে আবদুল মালিক ইবনি উমাইরের বর্ণিত হাদিসে ইসলামে ফিরে আসার কথা উল্লেখ নেই। আর ইবনি ফুদাইল শাইবানীর সূত্রে সাঈদ ইবনি আবু বুরদাহ হইতে তার পিতা আবু মুসা সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতেও ইসলামে ফিরে আসার জন্য আহবান করার কথা উল্লেখ নেই।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৫৭ঃ ক্বাসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ক্বাসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে অনুরূপ ঘটনা বর্ণিত। তিনি বলেন, তাহাকে হত্যা না করা পর্যন্ত তিনি [মুআয] অবতরণ করেননি। আর তাহাকে ইসলামে ফিরে আসার আহবানও করা হয়নি। {৪৩৫৬}
{৪৩৫৬} এর পূর্বেরটি দেখুন
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৩৫৮
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি সাদ ইবনি আসুস সার্হ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর [ওয়াহী] লেখকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শয়তান তাহাকে পথভ্রষ্ট করে এবং সে কাফিরদের সঙ্গে মিশে যায়। মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে হত্যার আদেশ দিলেন। কিন্তু উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] তার জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪৩৫৯
সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন আবদুল্লাহ ইবনি সাদ ইবনি আবু সার্হ উসমান ইবনি আফফান এর নিকট আত্মগোপন করে। তিনি তাহাকে নিয়ে এসে নাবী [সাঃআঃ] এর সামনে দাঁড় করিয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আবদুল্লাহকে বাইআত করুন। তিনি [সাঃআঃ] মাথা উঠিয়ে তিনবার তার দিকে তাকান এবং প্রতিবারই বাইআত করিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনবারের পর তাহাকে বাইআত করেন। অতঃপর তিনি সাহাবীদের দিকে ফিরে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কি সঠিক নির্দেশ উপলব্ধি করার মত কেউ ছিলনা, যে এর সামনে গিয়ে দাঁড়াত, আর যখন দেখত আমি তার বাইআত গ্রহন না করার জন্য হাত গুটিয়ে নিচ্ছি, তখন সে তাহাকে হত্যা করতো? সাহাবীরা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার মনের ইচ্ছা উপলব্ধি করিতে পারিনি। আপনি কেন আমাদের চোখ দিয়ে ইশারা করিলেন না? তিনি বলিলেনঃ কোন নাবীর পক্ষে চোখের খেয়ানাতকারী হওয়া শোভা পায় না।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৬০
জাবীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ ক্রীতদাস পলায়ন করে যদি মুশরিক হয়ে যায়, তবে তাহাকে হত্যা করা বৈধ। {৪৩৫৯}
দুর্বল, আর সহিহ হলো এ শব্দেঃ [আরবী] নাসায়ী।
{৪৩৫৯} মুসলিম, আহমাদ
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-২ঃ যে নাবী [সাঃআঃ] কে গালি দেয় তার সম্পর্কিত বিধান
৪৩৬১
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জনৈক অন্ধ লোকের একটি উম্মু ওয়ালাদ ক্রীতদাসী ছিলো। সে নাবী [সাঃআঃ] কে গালি দিতো এবং তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। অন্ধ লোকটি তাহাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে বিরত হতো না। সে তাহাকে ভর্ত্সনা করতো; কিন্তু তাতেও সে বিরত হতো না। একরাতে সে যখন নাবী [সাঃআঃ] কে গালি দিতে শুরু করলো এবং তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলিতে লাগলো, সে একটি ধারালো ছোরা নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে তাতে চাপ দিয়ে তাহাকে হত্যা করলো। তার দুপায়ের মাঝখানে একটি শিশু পতিত হয়ে রক্তে রঞ্জিত হলো। ভোরবেলা নাবী [সাঃআঃ] ঘটনাটি অবহিত হয়ে লোকজনকে সমবেত করে বলিলেনঃ আমি আল্লাহর কসম করে বলছিঃ যে ব্যক্তি একাজ করেছে, সে যদি না দাঁড়ায়, তবে তার উপর আমার অধিকার আছে। একথা শুনে অন্ধ লোকটি মানুষের ভিড় ঠেলে কাঁপতে কাঁপতে সামনে অগ্রসর হয়ে নাবী [সাঃআঃ] এর সামনে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেই নিহত দাসীর মনিব। সে আপনাকে গালাগালি করতো এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলতো। আমি নিষেধ করতাম কিন্তু সে বিরত হতো না। আমি তাহাকে ধমক দিতাম; কিন্তু সে তাতেও বিরত হতো না। তার গর্ভজাত মুক্তার মত আমার দুটি ছেলে আছে, আর সে আমার খুব প্রিয়পাত্রী ছিলো। গতরাতে সে আপনাকে গালাগালি শুরু করে এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বললে আমি তখন একটি ধারালো ছুরি নিয়ে তার পেটে স্থাপন করে তাতে চাপ দিয়ে তাহাকে হত্যা করে ফেলি। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা সাক্ষী থাকো, তার রক্ত বৃথা গেলো।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৬২
আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ইয়াহুদী মহিলা নাবী [সাঃআঃ] কে গালাগালি করতো এবং তাহাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। একদা জনৈক ব্যক্তি তাহাকে গলা টিপে হত্যা করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার রক্ত বাতিল বলে ঘোষণা করেন। {৪৩৬১}
সনদ দুর্বলঃ ইরওয়া হা/১২৫১।
{৪৩৬১} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। বায়হাক্বী।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৩৬৩
আবু বারযাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি আবু বকর [রাদি.] এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি একটি লোকের প্রতি খুবই ক্রোধান্বিত হলেন। আমি তাহাকে বলিলাম, হে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর খালিফাহ! আমাকে অনুমতি দিন, তাহাকে হত্যা করি। তিনি বলেন, আমার একথায় তার ক্রোধ দূর হলো। তিনি উঠে বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন। অতঃপর তিনি লোক পাঠিয়ে আমাকে [ডেকে নিয়ে] প্রশ্ন করেন, তুমি এইমাত্র কি বলেছ? আমি বলিলাম, আমাকে অনুমতি দিন, আমি তাহাকে হত্যা করি। তিনি প্রশ্ন করেন, আমি যদি তোমাকে আদেশ করতাম, তুমি কি তাই করিতে? আমি বলিলাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, না, আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এর পরে অন্য কোন মানবের এ অধিকার নেই।
ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এই মূল পাঠ বর্ণনাকারী ইয়াযীদ। আহমাদ ইবনি হাম্বল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ নাবী [সাঃআঃ] যে তিনটি অপরাধের কোনটিতে লিপ্ত ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা বলিয়াছেন, তাহাদের ছাড়া অন্য কাউকে হত্যা করা আবু বাক্রের জন্য বৈধ নয়ঃ কেউ ধর্ম ত্যাগ করলে, বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করলে এবং নিরপরাধ ব্যক্তির হত্যাকারী। তবে নাবী [সাঃআঃ] এর হত্যা করার কর্তৃত্ব ছিল।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩ঃ বিদ্রোহ
৪৩৬৪
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উকল অথবা উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোক রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আসলো। মদিনায় বসবাস তাহাদের পক্ষে অনুপযোগী হওয়ায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে উটের পালের নিকট গিয়ে এগুলর পেশাব ও দুধ পান করিতে আদেশ দেন। অতএব তারা সেখানে চলে গেলো। পরে তারা সুস্থ হয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর রাখালকে হত্যা করে এবং উটের পালকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। দিনের প্রথমভাগে এ খবর নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট পৌঁছে। নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের পিছনে লোক পাঠান। উঠন্ত বেলায় তাহাদের ধরে নিয়ে আসা হয়। তাহাঁর আদেশে তাহাদের হাত পা কাঁটা হয় এবং লৌহ শলাকা তাহাদের চোখে বিদ্ধ করে উত্তপ্ত রদে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি চাইলেও তা দেয়া হয়নি। আবু ক্বিলাবাহ বলেন, এরা এমন একটি গোত্রের, যারা চুরি করেছে, ঈমান আনার পর কুফরী করেছে এবং সর্বোপরি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৬৫
আইয়ুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আইয়ুব [রাদি.] সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, তাহাঁর [সাঃআঃ] আদেশে লৌহ শলাকা উত্তপ্ত করা হয়, তাহাদের চোখে ফুঁড়ে দেয়া হয়, হাত-পা কেটে দেয়া হয়, এবং তাহাদের রক্তপ্রবাহ বন্ধ করেননি।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৬৬
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। তিনি তাতে বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের অনুসন্ধানে পদচিহ্ন বিশারদ একদল লোক পাঠালেন। পরে তাহাদেরকে ধরে নিয়ে আসা হলো। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেনঃ “যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাহাদের শাস্তি হলো, তাহাদের হত্যা করা হইবে অথবা শূলে চড়ানো হইবে অথবা তাহাদের একদিকের হাত এবং অপরদিকের পা কেটে ফেলা হইবে অথবা ভূপৃষ্ঠ হইতে নির্বাসিত [কারাগারে আবদ্ধ] করা হইবে। এটাই তাহাদের ইহকালের অপমান, আর পরকালে তাহাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করিতে হইবে” [সূরাহ আল্-মায়িদাহঃ ৩৩]
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৬৭
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি এ হাদিস প্রসঙ্গে বলেন, বিপরীত দিক হইতে তাহাদের হাত-পা কর্তন করা হয়। হাদিসের প্রথমাংশে তিনি বলেন, তারা উট ছিনতাই করে এবং ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি তাহাদের একজনকে পিপাসার যন্ত্রণায় মুখ দিয়ে মাটি কামড়াতে দেখেছি। অবশেষে তারা মারা যায়।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৬৮
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। এতে আরো আছেঃ অতঃপর তিনি অঙ্গহানি নিষিদ্ধ করেন। এ বর্ণনায় বিপরীত দিক হইতে কথাটুকুর উল্লেখ নেই। আনাস [রাদি.] হইতে অন্যান্য বর্ণনাকারীও এ অংশটুকু উল্লেখ করেননি। আমি হাম্মাদ ইবনি সালামাহর হাদিস ব্যতীত আর কারোর বর্ণনায় বিপরীত দিক হইতে তাহাদের হাত-পা কাটার কথা পাইনি।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৬৯
ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদল লোক নাবী [সাঃআঃ] এর উট লুট করে নিয়ে যায়, ইসলাম ধর্মত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় এবং নাবী [সাঃআঃ] এর একজন ঈমানদার রাখালকে হত্যা করে। অতঃপর তিনি তাহাদের পিছনে লোক পাঠান! তাহাদের ধরে নিয়ে আসা হলে তিনি তাহাদের হাত-পা কেটে দেন এবং চোখ উপড়ে ফেলেন। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, এদের সম্পর্কে মুহারাবার আয়াত [৫ঃ৩৩] নাযিল হয়। হাজ্জাজ যখন আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] কে এদের সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, তখন তিনি এদের সম্পর্কিত হাদিসটি বর্ণনা করেন।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৪৩৭০
আবুয-যিনাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
যারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর উট চুরি করেছিল তিনি তাহাদের হাত-পা কাটলে এবং আগুন দিয়ে তাহাদের চোখ উৎপাটন করলে আল্লাহ তাহাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেন এবং আয়াত নাযিল করেনঃ “ যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ধবংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় তাহাদের শাস্তি এই যে, তাহাদের হত্যা করা হইবে অথবা শূলীবিদ্ধ করা হইবে….” [সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৩৩]। {৪৩৬৯}
{৪৩৬৯} নাসায়ী, বায়হাক্বী।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৩৭১
মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আনাস [রাদি.] বর্ণিত হাদিসের ঘটনাটি ঘটেছিল আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে। {৪৩৭০}
{৪৩৭০} বায়হাক্বী।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ
৪৩৭২
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাহাদের শাস্তি হলোঃ তাহাদের হত্যা করা হইবে অথবা শূলে চড়ানো হইবে অথবা তাহাদের একদিকের হাত ও অপরদিকের পা কেটে ফেলা হইবে অথবা যমীন হইতে নির্বাসিত করা হইবে, …..নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়” [সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৩৩-৩৪] আয়াত দুটি মুশরিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তবে তাহাদের মধ্যে কেউ যদি তাওবাহ করে ফিরে আসে তাহাকে নিয়ন্ত্রনে আনার পূর্বে তার উপর নির্ধারিত শাস্তি বাস্তবায়নে কোন বাধা থাকিবে না।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪ঃ শাস্তি মওকুফের জন্য সুপারিশ করা
৪৩৭৩
আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জনৈকা মাখযূমী মহিলার চুরি সংক্রান্ত অপরাধ কুরাইশদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুললে তারা বললো, এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সঙ্গে কে আলোচনা করিবে? তারা বললো, নাবী [সাঃআঃ] এর প্রিয়পাত্র উসামাহ ইবনি যায়িদ-ই এ প্রসঙ্গে কথা বলিতে সাহস করিতে পারে। অতঃপর উসামাহ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট একথা বলাতে তিনি [সাঃআঃ] বলেনঃ হে উসামাহ! তুমি কি মহান আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি মওকুফের সুপারিশ করছো? অতঃপর তিনি ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিরা এজন্য ধবংস হয়েছে যে, তাহাদের মধ্যকার মর্যাদাশীল কেউ চুরি করলে তারা তাহাকে ছেড়ে দিতো, আর তাহাদের দুর্বল কেউ চুরি করলে তার উপর শাস্তি বাস্তবায়িত করতো। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি! মুহাম্মাদের কন্যা ফাত্বিমাহও যদি চুরি করতো, তাহলে অবশ্যই আমি তার হাত কাটতাম।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৭৪
আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক মাখযুমী মহিলা জিনিসপত্র ধার নিয়ে পরে তা অস্বীকার করতো। নাবী [সাঃআঃ] তার হাত কাটার আদেশ দিলেন। অতঃপর লাইস বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] তার হাত কেটে দেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি ওয়াহব এ হাদিস ইউনুসের সূত্রে যুহরী হইতে বর্ণনা করে বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] এর মাক্কাহ বিজয়কালে জনৈক মহিলা চুরি করে। লাইস ইউনুসের সূত্রে এবং ইবনি শিহাব সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করে বলেন, জনৈক মহিলা ধার নিতো। মাসউদ ইবনিল আস্ওয়াদ নিজস্ব সানাদে নাবী [সাঃআঃ] হইতে এর সমার্থক হাদিস বর্ণনা করে বলেনঃ মহিলাটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ঘর হইতে একটি মখমলের চাদর চুরি করে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবুয যুবাইর [রাদি.] এবং জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন যে, জনৈক নারী চুরি করে। অতঃপর সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কন্যা যাইনাব [রাদি.] এর মাধ্যমে মুক্তি চায়। হাদিসের বাকি অংশে ধার নেয়া অথবা চুরি করার কথা উল্লেখ আছে।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৭৫
আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা উত্তম গুণাবলীর অধিকারী লোকদের পদস্খলন [ছোটখাট ত্রুটি] এড়িয়ে যাও, হদ্দের অপরাধ ব্যতীত।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫ঃ শাসকের নিকট না পৌঁছা পর্যন্ত হাদ্দের অপরাধ গোপন রাখা
৪৩৭৬
আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা আপসে তোমাদের মধ্যে সংঘটিত হদ্দ সংশ্লিষ্ট অপরাধ গোপন রাখো। অন্যথায় তা আমার নিকট পৌঁছালে তার শাস্তি বাস্তবায়িত হইবেই।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬ঃ কেউ শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলে যথাসম্ভব তা গোপন রাখা উচিৎ
৪৩৭৭
ইয়াযীদ ইবনি সুআইম [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
মাঈয নামক জনৈক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে চারবার [যেনার কথা] স্বীকার করে। সুতরাং তিনি তাহাকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দেন। আর তিনি হাযযালকে বলেন, তুমি যদি এটা তোমার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে, তাহলে তোমার কল্যাণ হতো। {৪৩৭৬}
{৪৩৭৬} আহমাদ, বায়হাক্বী।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৩৭৮
ইবনিল মুনকাদির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
হাযযাল মাঈযকে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে [তার অপরাধের কথা] তাঁকে অবহিত করিতে আদেশ দেন। {৪৩৭৭}
{৪৩৭৭} বায়হাক্বী।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মুরসাল
অনুচ্ছেদ-৭ঃ হাদ্দের অপরাধী উপস্থিত হয়ে স্বীকারোক্তি করলে তার সম্পর্কে
৪৩৭৯
আলক্বামাহ ইবনি ওয়াইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] এর যুগে জনৈকা মহিলা সলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে এক ব্যক্তি তাহাকে নাগালে পেয়ে তার উপর চেপে বসে তাহাকে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার দিলে লোকটি সরে পড়ে। এ সময় অপর এক ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে [ভুলবশত] বললো, এ লোকটি আমার সঙ্গে এরূপ করেছে। এ সময় মুহাজিরদের একটি দল এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্ত্রীলোকটি বললো, এ লোকটি আমার সঙ্গে এরূপ করেছে। অতএব যার সম্পর্কে মহিলাটি অভিযোগ করেছে তারা দ্রুত এগিয়ে লোকটিকে ধরলো। অতঃপর তারা তাহাকে তার নিকট নিয়ে আসলে সে বললো, হ্যাঁ, এ সেই ব্যক্তি। তারা তাহাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি তার সম্পর্কে ফায়সালা করিতেই আসল অপরাধী দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমিই অপরাধী। তিনি ধর্ষিতা মহিলাটিকে বলিলেনঃ তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন আর নির্দোষ ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম কথা বলিলেন। যে ধর্ষণের অপরাধী তার ব্যাপারে তিনি বলিলেনঃ তোমরা একে পাথর মারো। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ সে এমন তাওবাহ করেছে যে, মাদীনাহবাসী যদি এরূপ তাওবাহ করে, তবে তাহাদের পক্ষ হইতে তা অবশ্যই কবুল হইবে। {৪৩৭৮}
হাসান, এ কথাটি বাদেঃ “তোমরা একে পাথর মারো।” অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, তাহাকে পাথর মারা হয়নি।
{৪৩৭৮} তিরমিজি, আহমাদ। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ এই হাদিসটি হাসান, গরীব ও সহিহ।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮ঃ হাদ্দ থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো কথা বলার পরামর্শ দেয়া
৪৩৮০
আবু উমাইয়্যাহ আল-মাখযূমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট একটি চোর ধরে আনা হলো। সে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে কিন্তু তার নিকট কোন মাল পাওয়া যায়নি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আমার মনে হয় তুমি চুরি করোনি। সে বললো, হ্যাঁ, আমি চুরি করেছি। তিনি দুবার অথবা তিনবার তার নিকট একথার পুনরাবৃত্তি করিলেন, কিন্তু সে বরাবর একই উত্তর দিলো। অতঃপর তিনি আদেশ করলে তার হাত কেটে আনা হলে তিনি বলিলেনঃ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তাহাঁর নিকট তাওবাহ করো। সে বললো, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাওবাহ করছি। অতঃপর তিনি তিনবার বলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি তাহাঁর তাওবাহ কবুল করো। {৪৩৭৯}
{৪৩৭৯} নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, দারিমী। সানাদে আবু যারের মুক্ত দাস রয়েছে। ঈমাম যাহাবী বলেনঃ তাহাকে চেনা যায়নি।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৯ঃ যে ব্যক্তি হাদ্দের অপরাধ স্বীকার করে অথচ অপরাধের নাম বলে না
৪৩৮১
আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দযোগ্য অপরাধ করেছি। কাজেই আমাকে শাস্তি দিন। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি আসার সময় উযু করেছো কি? সে বললো, হাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ আমরা সলাত আদায়ের সময় তুমি কি আমাদের সঙ্গে সলাত আদায় করেছো? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বলিলেনঃ চলে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার অপরাধ ক্ষমা করেছেন।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১০ঃ মারধর করে তথ্য বের করা
৪৩৮২
আযহাব ইবনি আবদুল্লাহ আল-হারাযী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
কিলাআ এলাকার কিছু লোকের মাল চুরি হলে তারা একদল তাঁতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো। অতঃপর তারা নাবী [সাঃআঃ] এর সাহাবী নুমান ইবনি বশীরের নিকট [ঐ অভিযুক্তদের] নিয়ে এলো। তিনি তাহাদের কয়েক দিন আটকে রাখার পর ছেড়ে দেন। অভিযোগকারীরা এসে নুমান [রাদি.] কে বললো, মারধর ও তদন্ত ছাড়াই আপনি তাহাদের ছেড়ে দিলেন? নুমান [রাদি.] বলিলেন, তোমরা কী চাও? তোমরা যদি চাও আমি তাহাদেরকে মারধর করি। আর তাতে যদি তোমাদের মাল উদ্ধার হয় তবে তো ভালো। অন্যথায় আমি তাহাদের পিঠে যেরূপ আঘাত করবো, সেরূপ আঘাত তোমাদের পিঠেও করবো। তারা বললো, এটা কি আপনার ফায়সালা? তিনি বলিলেন, এটা আল্লাহ ও রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] ফায়সালা। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ কথার দ্বারা তিনি তাহাদেরকে সতর্ক করেছেন। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় স্বীকার করার পরই প্রহার করা যেতে পারে।
অপরাধ ও তার শাস্তি সম্পর্কে – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
Leave a Reply