শামায়েলে তিরমিজি – রসূলুল্লাহ [সাঃ] এর তরকারীর বর্ণনা
শামায়েলে তিরমিজি – রসূলুল্লাহ [সাঃ] এর তরকারীর বর্ণনা , এই অধ্যায়ে হাদীস ২৪ টি ( ১১৩-১৩৬ পর্যন্ত ) << শামায়েলে তিরমিযী হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-২৬ঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর তরকারীর বর্ণনা
১।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] এর তরকারী
২।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) লাউ পছন্দ করিতেন
৩।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মিষ্টি দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করিতেন
৪।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বকরীর পাঁজরের ভূনা গোশত পছন্দ করিতেন
৫।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) উরুর গোশত পছন্দ করিতেন
৬।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) শুকনা রুটি এবং সিরকা পছন্দ করিতেন
৭।পরিচ্ছদঃ সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা কে ?
৮।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বকরীর কাঁধের গোশতও খেতেন
৯।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) খেজুর ও ছাতু দ্বারা ওলীমা করেছিলেন
১০।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ ও চর্বিযুক্ত খাবারও আহার করিতেন
১১।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হায়স নামক খাবারও খেতেন
১২।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সুফল পছন্দ করিতেন
১।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] এর তরকারী
১১৩.আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, সিরকা কতই না চমৎকার তরকারী।
আব্দুল্লাহ ইবনি আবদূর রাহমান [রহঃ] তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেন, সিরকা কতই না চমৎকার উদুম অথবা ইদাম তথা তরকারী। {১১৫}
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে সিরকার প্রশংসা করা উদ্দেশ্য। সিরকা উত্তম তরকারী হওয়ার কয়েকটি কারণ রহিয়াছে। যেমন সহজে তৈরি করা যায়, এর সাহায্যার্থে অনায়াসে রুটি ভক্ষণ করা যায় এবং সবসময় পাওয়া যায়। এছাড়া সিরকার মাঝে কিছু উপকারিতাও রহিয়াছে। যেমন কফ ও পিত্ত দূর করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। {১১৫}ইবনি মাজাহ, হাদিস নং/৩৩১৬। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৪. সিমাক ইবনি হারব [রহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন, তোমরা কি পানাহারের ব্যাপারে যা ইচ্ছা তা গ্রহণ কর না? [অর্থাৎ নিশ্চয় গ্রহণ করছ]। অথচ আমি দেখেছি তোমাদের নাবী তৃপ্তি সহকারে পেট ভরে সাধারণ খেজুরও খেতে পাননি। {১১৬}
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ওফাতের পর সাহাবী ও তাবিয়ীগণ যখন প্রচুর খাদ্যের অধিকারী হন, তখন তাহাদেরকে সম্বোধন করে নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] একথা বলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর অনুসরণের প্রতি এবং দুনিয়ার উপকরণ সংক্ষিপ্ত রাখার প্রতি উৎসাহিত করা তাহাঁর উদ্দেশ্য ছিল। {১১৬} সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৭৬৫০ ইবনি হিকান, হাদিস নং/৬৩৪০ শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৫. যাহদাম জারমী [রহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা একবার আবু মুসা আশআরী [রাদি.]-এর কাছে গেলাম। তখন তার কাছে ভুনা মুরগীর গোশত আনা হলো। ফলে উপস্থিত লোকদের একজন চলে যেতে উদ্যত হলো। তিনি {আবু মুসা আশআরী [রাদি.]} তাঁকে যাওয়ার কারন জিজ্ঞেস করিলেন। সে বলিল, আমি এক [মুরগীকে] নাপাক খেতে দেখে এ মর্মে কসম করেছি যে, আমি আর কখনো মুরগীর গোশত খাব না। তিনি বলিল, কাছে এসো, [ এবং নির্দ্বিধায় খাও]। কারণ আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে আমি মুরগী খেতে দেখেছি। ১১৭
ব্যাখ্যাঃ উক্ত কথার দ্বারা আবু মুসা আশআরী [রাদি.] এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, কোন হালাল বস্তুকে হারাম করা অনুচিত। {১} সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৪৩৫৪; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হাদিস নং/১৫৮৪; শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং/২৮০৭। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৬. যাহদাম জারমী [রহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা আবু মূসা [রাদি.] এর নিকট ছিলাম। তিনি বলেন, তার নিকট খাবার পরিবেশন করা হলো এবং সে খাবারে মুরগীর গোশত ছিল । সেখানে তায়ামুল্লাহ গোত্রের লাল বর্ণের এক ব্যাক্তি ছিল। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল , সে যেন একজন গোলাম। বর্ণনাকারী বলেন, সে লোকটি খেতে আসলো না। তখন আবু মুসা [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, খেতে এসো – কারণ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে আমি মুরগীঢ় গোশত খেতে দেখেছি । সে বলিল, একে ময়লা কিছু খেতে দেখেছি। সে কারণে আমার ঘৃণা জন্মেছে। তাই আমি কসম করেছি যে, আমি এটা কখনো খাব না।
শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৭. আবু আসীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা যায়তুন {১১৮} তৈল খাও এবং তা মালিশ করো। কারণ, তা বরকতময় বৃক্ষ হতে উৎপন্ন। {১১৯}
শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ব্যাখ্যা
২।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) লাউ পছন্দ করিতেন
১১৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) লাউ খুবই পছন্দ করিতেন। একবার তাহাঁর সম্মুখে খানা পরিবেশন করা হলো অথবা তিনি কোন দাওয়াতে গিয়েছিলেন [রাবীর সন্দেহ]। আমার যেহেতু জানা ছিল যে, তিনি লাউ খুব পছন্দ করেন, তাই [তরকারীর মধ্য হতে] বেছে বেছে তাহাঁর সামনে লাউ পেশ করলাম।{১}
{১} শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং/২৮৬১। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৯. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি নাবী এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, লাউ কেটে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। আমি বললাম, এর দ্বারা কী হইবে? তিনি বলিলেন, এর দ্বারা আমরা আমাদের খানা বৃদ্ধি করব।{১}
{১} শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং/২৮৬২৷ শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার এক দর্জি খানা তৈরি করে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে দাওয়াত দেয়। আনাস [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাথে আমিও ঐ দাওয়াতে গিয়েছিলাম। দর্জি লোকটি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সামনে যবের রুটি ও ঝোল পরিবেশন করিল। সে ঝোলের মধ্যে লাউ ও শুকনা গোশত ছিল। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে তরকারীর বাটির বিভিন্ন দিক থেকে লাউয়ের টুকরো খোঁজ করিতে দেখেছি। আর সে দিন হতে আমি লাউ খুব পছন্দ করে আসছি।{১}
{১} সহিহ বোখারী, হাদিস নং/২০৯২ সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৪৫৫৬ আবু দাউদ, হাদিস নং/৩৭৮৪। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মিষ্টি দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করিতেন
১২১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও মিষ্টি দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করিতেন। {১২৩}
ব্যাখ্যাঃ হালওয়া মিষ্ট বস্তু, মিষ্টি জাতীয় জিনিস, মিষ্টান্ন। সাধারণ মানুষ যেসব মিষ্টি খাবার তৈরি করে তাকেই মূলত হালওয়া বলে। আর মূল অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে এর আওতায় মিষ্টি ফলমূলও পড়ে, তথাপিও প্রচলিত পরিভাষা হিসাবে এটা হালওয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। হালওয়া বলিতে গুড়, চিনি, মধুকেও বুঝায় এবং এর দ্বারা প্রস্তুত মিষ্ট খাদ্যসমূহকেও বুঝিয়ে থাকে। {১২৩} সহিহ বোখারী, হাদিস নং/৫৪৩১; ইবনি মাজাহ, হাদিস নং/৩৩২৩; ইবনি হিব্বান, হাদিস নং/৫২৫৪। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বকরীর পাঁজরের ভূনা গোশত পছন্দ করিতেন
১২২. উম্মে সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি বকরীর পাঁজরের ভূনা গোশত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে পরিবেশন করেন। তিনি তা হতে খেলেন এবং ওযু না করেই সালাতে দাড়িয়ে যান। {১২৪}
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আগুনে তৈরি খাবার খেলেও ওযু ভঙ্গ হয় না। তবে অন্য হাদিস দ্বারা আগুনে পাক করা খাদ্য খেলে ওযু নষ্ট হয়ে যায় বলেও প্রমাণিত রহিয়াছে। কিছু সংখ্যক সাহাবী ও তাবিয়ীর মতামতও এটাই। তবে চার খলীফা এবং অধিকাংশ মুহাদিসগণের মতে আগুনে তৈরি খাবার খেলেও ওযু ভঙ্গ হয় না। তারা বলেন, যে সকল হাদিস থেকে ওযু ওয়াজিব হওয়ার কথা উল্লেখও হয়েছে, সেগুলো রহিত হয়ে গেছে।{১২৪} নাসাঈ, হাদিস নং/১৮৩ মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/২৬৮৬৩৷ শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩. আবদুল্লাহ ইবনি হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও এর সাথে মসজিদে ভূনা গোশত খেয়েছি।
ব্যাখ্যাঃ এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, একা বা জামাআতবদ্ধভাবে মসজিদে পানাহার করা বৈধ, তবে মসজিদের পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করিতে হইবে। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৪. মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে মেহমান হলাম। তখন [আমার সামনে] ছাগলের পাঁজরের ভুনা গোশত পরিবেশন করা হলো।তারপর তিনি ছুরি দ্বারা তা কাটলেন এবং আমাকে দিলেন। এমন সময় বিলাল [রাদি.] তাঁকে সালাতের আহ্বান জানালেন। তিনি ছুরিটি ছুঁড়ে ফেললেন এবং বলিলেন, তাহাঁর কী তাহাঁর উভয় হাত ধূলোয় ধূসরিত হোক। বর্ণনাকারী বলেন, তাহাঁর গোঁফ লম্বা হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি তাঁকে বলিলেন, তোমার গোঁফ আমি মিসওয়াকের উপরে রেখে কেটে দেব।
ব্যাখ্যাঃ তার দুহাত ধূলিময় হোক। শাব্দিক বিবেচনার হিসেবে এটা বদদুআ। অর্থাৎ- সে দরিদ্র ও নিঃস্ব হয়ে যাক। তবে এখানে বদদুআ উদ্দেশ্য নয়। ধমক, তিরস্কার ও আক্ষেপমূলক বাক্য হিসেবে এ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়; এখানে এটাই উদ্দেশ্য। {১২৫} শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং/২৮৪৮ মিশকাত, হাদিস নং/৪২৩৬। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) উরুর গোশত পছন্দ করিতেন
১২৫. আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও এর সামনে বকরীর সামনের উরু পরিবেশন করা হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করিতেন। অতঃপর তিনি তা থেকে দাঁত দিয়ে কেটে খেলেন। {১২৬}
ব্যাখ্যাঃ মানুষের ক্ষেত্রে কুনুই থেকে আঙ্গুলের আগা পর্যন্তকে যিরা বলে। গরু ও বকরীর ক্ষেত্রে বাহু বলিতে রানকে বুঝায়। এখানে বাহু বলিতে রান উদ্দেশ্য। {১} সহিহ বোখারী, হাদিস নং/৪৭১২; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৫০১; ইবনি মাজাহ, হাদিস নং/৩৩০৭। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৬. আবু উবায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার নাবী [সাঃআঃ] এর জন্য এক ডেগ গোশত রান্না করলাম। তিনি বকরীর সামনের উরুর গোশত অধিক পছন্দ করিতেন। তাই আমি তাঁকে সামনের একটি পা দিলাম। তারপর তিনি বলিলেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি তাঁকে সামনের আরেকটি পা দিলাম। তারপর তিনি পুনরায় বলিলেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! বকরীর সামনের পা কয়টি থাকে? তিনি বলিলেন, সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি তুমি চুপ থাকতে তাহলে আমি যতক্ষন সামনের পা চাইতাম, ততক্ষন তুমি দিতে পারতে। ১২৭
{১২৭} মুজামুল কাবীর, হাদিস নং/১৮২৮৬; মুসনাদে বাযযার, হাদিস নং/৮৩৪৫। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) শুকনা রুটি এবং সিরকা পছন্দ করিতেন
১২৭. উম্মু হানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) আমার ঘরে এসে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি ? আমি বললাম, না। আমার নিকট শুকনো রুটি এবং সিরকা ছাড়া কোন কিছুই নেই। তিনি বলিলেন, নিয়ে এসো। তখন তিনি বলেন, যে ঘরে সিরকা আছে সে ঘর তরকারীশূন্য নয়।{১}
{১} শারহে সুন্নাহ, হাদিস নং/২৮৬৯, সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস নং/২২২০; মিশকাত, হাদিস নং/৪২২২। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৮. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমণীদের মধ্যে আয়েশা [রাদি.] মর্যাদা সেরূপ, যেরূপ মর্যাদা যাবতীয় খাদ্যের মধ্যে সারীদের।{১}
{১} সহিহ বোখারী, হাদিস নং/৩৪১১; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৬৪২৫; সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং/৩৯৪৭; ইবনি মাজাহ, হাদিস নং/৩২৮০; মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/১৯৫৪১; সহিহ ইবনি হিব্বান, হাদিস নং/৭১১৪; সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস নং/৩৫৩৫। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭।পরিচ্ছদঃ সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা কে ?
১২৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, রমণীকুলের মধ্যে আয়েশা [রাদি.] মধ্যমণী ও মর্যাদার অধিকারিনী, যেমন সারীদ যাবতীয় খাদ্যের মধ্যমণী।{১}
{১} সহিহ বোখারী, হাদিস নং/৩৪৩৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৬৪৫২; ইবনি মাজাহ, হাদিস নং/৩২৮১; মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/১৩৮১১; দারিমী, হাদিস নং/২১১৩; জামেউস সগীর, হাদিস নং/৩৮৮০; সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস নং/৩৫৩৫। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বকরীর কাঁধের গোশতও খেতেন
১৩০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি একবার রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে পনির খাওয়ার শেষে ওযূ করিতে দেখেছেন। তিনি এও দেখেছেন যে, তিনি একবার বকরীর কাঁধের গোশত আহার করিলেন। অথচ ওযূ না করেই সালাত আদায় করিলেন।{১}
{১} সহিহ ইবনি খুযাইমা, হাদিস নং/৪২; সহিহ ইবনি হিব্বান, হাদিস নং/১১৫১; বায়হাকী, হাদিস নং/৭০১; জামেউল সগীর, হাদিস নং/১৩১১১; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হাদিস নং/৭৫২। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) খেজুর ও ছাতু দ্বারা ওলীমা করেছিলেন
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সাফিয়্যা [রাদি.] এর বিয়েতে খেজুর ও ছাতু দ্বারা ওলীমা সম্পন্ন করেন।{১}
শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৩২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) আমাদের বাড়িতে আসলেন। আমরা তাঁকে [আপ্যায়নের জন্য] একটি বকরী যবেহ করি। তারপর তিনি বলিলেন, মনে হচ্ছে তারা যেন জানে যে, আমি গোশত পছন্দ করি। এ হাদিসের সাথে দীর্ঘ ঘটনা সম্পৃক্ত রহিয়াছে।
শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৩৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক আনসারী মহিলার ঘরে আসলেন। আমি তখন তাহাঁর সাথে ছিলাম। তখন ঐ মহিলাটি তাহাঁর জন্য একটি বকরী যবাই করিলেন। তিনি তা হতে কিছু গোশত আহার করিলেন। এরপর ঐ মহিলাটি তাহাঁর সামনে এক থোকা তাজা খেজুর পেশ করিলেন। তিনি তা হতেও কিছু খেয়ে নিলেন। এরপর তিনি ওযু করে যোহরের সালাত আদায় করিলেন। তারপর তিনি ঐ মহিলাটির নিকটে ফিরে আসলেন। মহিলাটি অবশিষ্ট গোশতের কিছু অংশ তাহাঁর সামনে পরিবেশন করিলেন এবং তিনি তা খেলেন। এরপর ওযু না করেই আসরের সালাত আদায় করিলেন।{১}
{১} শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং/২৮৫০; মুসনাদুত তায়ালুসী, হাদিস নং/১৭৭৫। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ ও চর্বিযুক্ত খাবারও আহার করিতেন
১৩৪. উম্মুল মুনযির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের বাড়িতে আসলেন। তাহাঁর সঙ্গে আলী [রাদি.]ও ছিলেন। আমাদের ঘরে কয়েক ছড়া [কাঁদি] খেজুর ঝুলন্ত ছিল। তিনি বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঐ কাঁদিগুলো হতে খেজুর খেতে থাকলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে আলী [রাদি.]ও খেতে থাকলেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আলী! থাম তুমি খেজুর খেয়ো না। কারণ, তুমি সবে মাত্র রোগ মুক্ত হয়েছ। তিনি বলিলেন, এতে আলী [রাদি.] খাওয়া বন্ধ করিলেন। আর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) খেতে থাকলেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, আমি তাঁদের জন্য চর্বি দিয়ে যব রান্না করলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আলী। তুমি এ থেকে খাও। কারণ, তা তোমার স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপযোগী।{১}
শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হায়স নামক খাবারও খেতেন
১৩৫. উম্মুল মুমিনীন আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ভোরে আমার কাছে এসে বলিতেন, তোমার নিকট নাশতা করার কিছু আছে কি? আমি কখনো কখনো বলতাম, না, কোন খাবার নেই। তখন তিনি বলিতেন, আমি রোযার নিয়ত করলাম। একবার তিনি আমাদের নিকট আসলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য কিছু হাদিয়া এসেছে। তিনি বলিলেন, তা কোন ধরণের খাবার? আমি বললাম, হাইস [খেজুরের তৈরি মিষ্টান্ন বিশেষ]। তিনি বলিলেন, আমি তো রোযাদার অবস্থায় সকাল কাটিয়েছি। আয়েশাহ [রাদি.] বলিলেন, এরপর তিনি খেয়ে নিলেন।{১}
{১} সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/২৭৭০; আবু দাউদ, হাদিস নং/২৪৫৭; নাসাঈ, হাদিস নং/২৩২২; মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/২৪২৬৬; সহিহ ইবনি হিব্বান, হাদিস নং/৩৬২৮; দারা কুতনী, হাদিস নং/২২৩৬; শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং/১৭৪৫; মিশকাত, হাদিস নং/২০৭৬। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সুফল পছন্দ করিতেন
১৩৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সুফল পছন্দ করিতেন। আবদুল্লাহ {ঈমাম তিরমিজি [রহঃ] এর উস্তাদ} বলেন, সুফল হচ্ছে সে জিনিস, যা লোকেরা খাদ্য গ্রহণের পর হাড়ি-পাতিলের তলায় লেগে থাকে।{১}
{১} মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/১৩৩২৩; মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস নং/৭১১৬; জামেউস সগীর, হাদিস নং/৯১১০; মিশকাত, হাদিস নং/৪২১৭। শামায়েলে তিরমিজি হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply