আল্লাহর পথে জিহাদ ও শহীদের জন্য জান্নাত অবধারিত

শহীদের জন্য জান্নাত অবধারিত হওয়া

শহীদের জন্য জান্নাত অবধারিত হওয়া >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৪০. অধ্যায়ঃ ওযরগ্রস্ত ব্যক্তিদের থেকে জিহাদের আবশ্যকতা নিষ্পতিত হওয়া।
৪১. অধ্যায়ঃ শহীদের জন্য জান্নাত অবধারিত হওয়া
৪২. অধ্যায়ঃ যে আল্লাহর কালিমা সমুন্নত করার উদ্দেশে যুদ্ধ করে সে আল্লাহর পথের মুজাহিদ
৪৩. অধ্যায়ঃ লোক দেখানো এবং খ্যাতির উদ্দেশে যে যুদ্ধ করে সে জাহান্নামের যোগ্য হয়
৪৪. অধ্যায়ঃ যুদ্ধ করে যারা গনীমাত লাভ করিল ও যারা করেনি তাঁদের সাওয়াবের পরিমাণ সম্পর্কে
৪৫. অধ্যায়ঃ নিয়্যাত অনুসারে আমালের সাওয়াব, জিহাদ প্রভৃতি আমালও এর অন্তর্ভুক্ত
৪৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে শাহাদাত কামনা করা মুস্তাহাব
৪৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে জিহাদ না করে এমন কি জিহাদের আকাঙ্ক্ষা না করে যে মারা যায় তার পরিণাম অশুভ
৪৮. অধ্যায়ঃ অসুস্থতা বা ওযরের কারণে যে জিহাদে যেতে পারলো না, তার সাওয়াব
৪৯. অধ্যায়ঃ সামুদ্রিক জিহাদের মাহাত্ম্য
৫০. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাহে প্রহরায় থাকার ফযীলত
৫১. অধ্যায়ঃ শহীদের বর্ণনা
৫২. অধ্যায়ঃ তিরন্দাযীর ফযীলত এবং এতে উৎসাহ প্রদান এবং তা শিক্ষা করে ভুলে যাওয়ার নিন্দা

৪০. অধ্যায়ঃ ওযরগ্রস্ত ব্যক্তিদের থেকে জিহাদের আবশ্যকতা নিষ্পতিত হওয়া।

৪৮০৫. আবু ইসহাক্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বারা [রাদি.]-কে কুরআন মাজীদের আয়াতঃ

لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ‏

“মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা সমান নয়” সম্পর্কে বলিতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যায়দ [রাদি.]-কে একটি হাড় নিয়ে আসতে আদেশ করিলেন এবং তিনি তাতে তা লিখলেন। তখন ইবনি উম্মু মাকতূম [রাদি.] তাহাঁর [অন্ধত্বের] ওজর সম্পর্কে অনুযোগ করিলেন। এ বিষয়ে নাযিল হলোঃ “মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা সমান নয়।”

শুবাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমার কাছে সাদ ইবনি ইব্‌রাহীম বর্ণনা করিয়াছেন এক ব্যক্তি সূত্রে তিনি যায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ আয়াত সম্পর্কে “যারা বসে থাকে তারা সমান নয়।” বাকী হাদীস বারা [রাদি.]-এর হাদীসের অনুরূপ। ইবনি বাশ্‌শার তাহাঁর বর্ণনায় বলেছেন, সাদ ইবনি ইব্‌রাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা থেকে তিনি এক ব্যক্তি থেকে তিনি যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] থেকে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৫৯]

৪৮০৬. বারা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন [আরবী] আয়াত নাযিল হলো, তখন ইবনি উম্মু মাকতূম [রাদি.] সে ব্যাপারে তাহাঁর [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর] সঙ্গে আলাপ করিলেন। তখন নাযিল হলো [আরবী] অর্থাৎ, যাদের কোন ওজর নেই।

[ই,ফা, ৪৭৫৯, ই,সে, ৪৭৬০]

৪১. অধ্যায়ঃ শহীদের জন্য জান্নাত অবধারিত হওয়া

৪৮০৭. আম্‌র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জাবির [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, এক ব্যক্তি [এসে] বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি যদি [আল্লাহর রাস্তায়] নিহিত হই তবে কোথায় থাকবো। উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, জান্নাতে। লোকটি তখন তার হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলো, অবশেষে শহীদ হলো। সুওয়াইদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় আছে, উহুদ যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]-কে বলিল।

[ই,ফা, ৪৭৬০, ই,সে, ৪৭৬১]

৪৮০৮. বারা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বানূ নবীতের এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এলো। তিনি বলেন, আহ্‌মাদ ইবনি জানাব মিস্‌সীসী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]… বারা [রাদি.] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারদের অন্তর্ভুক্ত একটি কবীলা বানূ নবীতের এক ব্যক্তি আসলো এবং বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আপনি তাহাঁর বান্দা ও রসূল। তারপর সে অগ্রসর হলো এবং যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলো। এমনকি শেষ পর্যন্ত সে শহীদ হলো। তখন নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, সে খুবই সহজ কাজ করলো তবে তাকে প্রচুর সাওয়াব দেয়া হয়েছে।

[ই.ফা ৪৭৬১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৬২]

৪৮০৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বুসায়সা [রাদি.]-কে আবু সুফ্‌ইয়ানের বাণিজ্যিক কাফিলার গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্যে পাঠান। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। তখন আমি ও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছাড়া ঘরে আর কেউই ছিল না। রাবী বলেন, আমি স্মরণ করিতে পারছি না, তিনি [আনাস] নবী [সাঃআঃ]-এর কোন সহধর্মিণীর কথাও বলেছেন কি-না। এরপর তিনি সমুদয় ঘটনা বর্ণনা করিলেন। অতঃপর বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বের হলেন এবং [লোকজনকে লক্ষ্য করে] তিনি বলিলেন, আমি দুশমনের খোঁজে বের হচ্ছি। যার সওয়ারী মওজুদ আছে সে যেন আমাদের সঙ্গে সওয়ার হয়ে যায়। তখন কিছুলোক মাদীনার উপরাঞ্চল থেকে তাদের সওয়ারী নিয়ে আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি বলিলেন, না; কেবল যাদের সওয়ারী প্রস্তুত আছে তারাই যাবে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবীগণ রওনা করিলেন এবং মুশরিকদের পূর্বেই বদরে গিয়ে পৌছলেন। এর পরপরই মুশরিকরা এসে পৌঁছলো। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের কেউ যেন কোন ব্যাপারে আমার অগ্রবর্তী না হয়, যতক্ষন না আমি তার সামনে থাকি। এরপর মুশরিকরা নিকটবর্তী হলো। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। রাবী বলেন, উমায়র ইবনি হুমাম আনসারী [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতের প্রশস্ততা কি আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার ন্যায়? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। উমায়র বলে উঠলেন, বাহ্‌, বাহ্‌, কী চমৎকার! তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, বাহ্‌, বাহ্‌ বলিতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করলো হে? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! বরং আল্লাহ্‌র কসম! আমি তার অধিবাসী হওয়ার আশায়ই এরূপ বলেছি। তখন তিনি বলিলেন, তুমি নিশ্চয়ই তার অধিবাসী [হইবে]। রাবী বলেন, তারপর তিনি তাহাঁর তূণ থেকে কয়েকটি খেজুর বের করিলেন এবং তা খেতে লাগলেন। তারপর বলিলেন, আমি যদি এ খেজুরগুলো খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকি তবে তাও হইবে এক দীর্ঘ জীবন। রাবী বলেন, তারপর তিনি তাহাঁর কাছে রক্ষিত খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন তারপর জিহাদে প্রবৃত্ত হলেন এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হলেন।

[ই,ফা, ৪৭৬২, ই,সে, ৪৭৬৩]

৪৮১০. আবদুল্লাহ ইবনি কায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমি আমার পিতাকে বলিতে শুনেছি- আর তিনি ছিলেন তখন শত্রুর মুখোমুখি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, নিশ্চয়ই জান্নাতের দরজাসমূহ রয়েছে তরবারির ছায়ার নীচে। তখন আলুথালু এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো এবং বলিল, হে আবু মূসা! আপনি কি নিজে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন সে ব্যক্তি তাহাঁর সাথীবর্গের কাছে ফিরে গেলো। তারপর বলিল, আমি তোমাদেরকে [বিদায়ী] সালাম জানাচ্ছি। এরপর সে তার তরবারির কোষ ভেঙ্গে ফেলে তা দূরে নিক্ষেপ করলো। তারপর নিজ তরবারিসহ শত্রুদের কাছে গিয়ে তা দিয়ে যুদ্ধ করিতে করিতে শহীদ হয়ে গেল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৬৪]

৪৮১১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কতিপয় লোক নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক দিন যাঁরা আমাদেরকে কুরআন এবং সুন্নাহ্‌ শিক্ষা দেবেন। তখন তিনি আনসারদের সত্তর ব্যক্তিকে তাদের সাথে পাঠালেন। তাদেরকে কুররা [ক্বারী সমাজ] বলা হতো। এঁদের মধ্যে আমার মামা হারামও ছিলেন। তাঁরা কুরআন তিলওয়াত করিতেন এবং রাত্রে এর অর্থ অনুধাবন ও শিক্ষায় নিমগ্ন থাকতেন, আর দিনের বেলায় জলাশয়ে গিয়ে পানি এনে মাসজিদে রাখতেন এবং কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে বিক্রি লব্ধ অর্থে সুফ্‌ফাবাসীগণ এবং নিঃস্ব ফকীরদের জন্যে আহার্য সামগ্রী ক্রয় করিতেন। এঁদেরকে নবী [সাঃআঃ] তাদের সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন। ওরা তাঁদের উপর আক্রমণ করলো এবং তাঁরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পূর্বেই তাঁদেরকে হত্যা করলো। তখন তাঁরা বলিলেন, হে আল্লাহ ! আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের নবীর নিকট সংবাদ পৌছিয়ে দিন যে, আমরা আপনার সন্নিধানে পৌছে গিয়েছি এবং আপনার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছি। আর আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন। রাবী বলেন, এক লোক আনাস [রাদি.]-এর মামা হারাম [রাদি.]-এর পিছন দিক দিয়ে এসে বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করে হত্যা [শহীদ] করে দিল। হারাম [রাদি.] বলে উঠলেন, কাবার প্রভুর কসম! আমি সাফল্যমন্ডিত হয়েছি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলিলেন, তোমাদের ভাইগন নিহত হয়েছেন। আর [অন্তিম মুহূর্তে] তাঁরা বলেছেন, হে আল্লাহ! আমাদের নবীকে সংবাদ পৌছিয়ে দিন যে, আমরা আপনার সন্নিধানে পৌছে গেছি এ অবস্থায় যে, আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট আর আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৬৫]

৪৮১২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার যে চাচার নামানুসারে আমার নামকরণ করা হয়েছে সে আনাস [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে শরীক হইতে পারেননি। রাবী বলেন, এটা ছিল তাহাঁর জন্যে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি [প্রায়ই] বলিতেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রথম যে যুদ্ধটি করেছিলেন, তাতে আমি শরীক হইতে পারলাম না। এরপর যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে তাহাঁর কোন যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দান করেন তাহলে আমি কী করি তা আল্লাহ দেখবেন। রাবী বলেন, এর বেশী কিছু বলিতে তিনি ভয় পেতেন। তারপর উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। রাবী বলেন, সাদ ইবনি মুআয [রাদি.] যখন অগ্রসর হলেন তখন আনাস [রাদি.] তাঁকে লক্ষ্য করে বলিলেন, হে আবু আম্‌র! কোথায় [যাচ্ছো]? আহা! জান্নাতের ঘ্রাণ আমি উহুদ প্রান্ত থেকে পাচ্ছি। রাবী বলেন, তারপর তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন এমন কি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেলেন। রাবী বলেন, তারপর তাহাঁর মৃত লাশে আশিটিরও অধিক তরবারি, বর্শা ও তীরের চিহ্ন পাওয়া যায়। রাবী আনাস [রাদি.] বলেন, তাহাঁর বোন এবং আমার ফুফু রুবাইয়্যি বিনতু নায্‌র [রাদি.] বলেন, [শহীদের ক্ষত-বিক্ষত দেহের] কেবল তাহাঁর আঙ্গুলের জোড়া দেখেই তাঁকে আমি সনাক্ত করেছি। [অন্য কোন পরিচয়ই অবশিষ্ট ছিল না।] তখন আয়াত নাযিল হলোঃ “এরা হচ্ছে সেসব ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করে দেখিয়েছে। তাদের কেউ অঙ্গীকার ইতোমধ্যেই পূরণ করে ফেলেছে, আর কেউ তার প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা মোটেই পরিবর্তিত হয়নি”-[সুরা আহযাব ৩৩ঃ২৩]। রাবী বলেন, সাহাবীগণ মনে করিতেন যে এ আয়াতটি তাহাঁর এবং তাহাঁর সঙ্গী-সাথীদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৬৬]

৪২. অধ্যায়ঃ যে আল্লাহর কালিমা সমুন্নত করার উদ্দেশে যুদ্ধ করে সে আল্লাহর পথের মুজাহিদ

৪৮১৩. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, জৈনেক বেদুঈন নবী [সাঃআঃ] এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলো, হে আল্লাহর রাসুল [সাঃআঃ]! এক ব্যক্তি গনীমাত লাভের জন্য যুদ্ধ করে, অন্য এক ব্যক্তি স্মরণীয় হওয়ার জন্য, আর এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে নিজের উচ্চমর্যাদা প্রদর্শনের জন্যে। এগুলার মধ্যে কোনটি আল্লাহর পথে বলে গন্য হইবে? তখন রসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা সমুন্নত করার উদ্দেশে যুদ্ধ করে সে ব্যক্তিই আল্লাহর পথে [যুদ্ধ করে]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৬৭]

৪৮১৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রশ্ন করা হলো, যে ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি গোত্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশে যুদ্ধ করে এগুলোর মধ্যে কোনটি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ [বলে গন্য হইবে]? তখন [জবাবে] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যে ব্যক্তি এ উদ্দেশে যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বাণী সমুন্নত হইবে, [কেবল] সে আল্লাহর রাস্তায় [বলে গন্য হইবে]।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৬৮]

৪৮১৫. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]–এর কাছে এলাম এবং আরয করলাম , হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে। তারপর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৮, ইসলামিক সেন্টার-৪৭৬৯]

৪৮১৬. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে আল্লাহর পথে যুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করলো। তখন সে ব্যক্তি বলিল, এক ব্যক্তি ক্রোধের বশে যুদ্ধ করে এবং গোত্রের টানে যুদ্ধ করে। তখন তিনি তার দিকে মাথা তুলে তাকালেন। তাহাঁর এ মাথা তোলা শুধু এজন্যই ছিল যে , সে লোকটি দন্ডায়মান অবস্থায় ছিল। তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি এজন্য যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বানী সমুন্নত হইবে, কেবল সে আল্লাহর রাহে [যুদ্ধ করে]।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৯, ইসলামিক সেন্টার-৪৭৭০ ]

৪৩. অধ্যায়ঃ লোক দেখানো এবং খ্যাতির উদ্দেশে যে যুদ্ধ করে সে জাহান্নামের যোগ্য হয়

৪৮১৭. সুলাইমান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবু হুরায়রা্‌ [রাদি.]-এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, হে শায়খ! আপনি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একখানা হাদীস আমাদেরকে শুনান। তিনি বলেন, হ্যাঁ! [শুনাবো]। আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে বলিতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হইবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ হয়েছিল। তাঁকে উপস্থিত করা হইবে এবং আল্লাহ তাহাঁর নিয়ামাতরাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে [এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করিবে।] তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, এর বিনিময়ে‌ কী আমাল করেছিলে? সে বলবে, আমি তোমারই পথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি বরং এ জন্যেই যুদ্ধ করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে বলে, তুমি বীর। তা বলা হয়েছে, এরপর নির্দেশ দেয়া হইবে। সে মতে তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হইবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হইবে যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হইবে। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর প্রদত্ত নিআমাতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে [এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করিবে।] তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, এত বড় নিআমাত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্যে যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে যাতে লোকে বলে, তুমি একজন ক্বারী। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হইবে, সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হইবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হইবে যাকে আল্লাহ তাআলা সচ্ছলতা এবং সর্ববিধ বিত্ত-বৈভব দান করিয়াছেন। তাকে উপস্থিত করা হইবে এবং তাকে প্রদত্ত নিআমাতসমূহের কথা তাঁকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে [স্বীকারোক্তিও করিবে।] তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, এসব নিআমাতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছো? জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই যাতে সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ কর, আমি সে খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি বরং এ জন্যে তা করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে অভিহিত করে। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হইবে। সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হইবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭১]

৪৮১৮. সুলাইমান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

সুলাইমান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে হাদীসখানা বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি তাহাঁর বর্ণনায় তাফাররাকা-এর স্থলে তাফাররাজা এবং নাতিল আহলিশ শাম-এর স্থলে নাতিলুশ শাম বলে উল্লেখ করিয়াছেন। অবশিষ্ট হাদীস খালিদ ইবনি হারিস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭২]

৪৪. অধ্যায়ঃ যুদ্ধ করে যারা গনীমাত লাভ করিল ও যারা করেনি তাঁদের সাওয়াবের পরিমাণ সম্পর্কে

৪৮১৯. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ যে বাহিনী আল্লাহর পথে জিহাদ করলো এবং তাতে গনীমাত লাভ করলো তারা এ দুনিয়াতেই আখিরাতের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিময় নগদ পেয়ে গেল। তাদের জন্য কেবল এক-তৃতীয়াংশ বিনিময় অবশিষ্ট রইলো। আর যে বাহিনী কোন গনীমাত লাভ করলো না, তাদের পূর্ণ বিনিময়ই পাওনা রয়ে গেল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭৩]

৪৮২০. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ বাহিনী মাত্রই যারা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করলো এবং গনীমাত লাভ করলো, তারপর নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করলো তাঁরা আখিরাতের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিময়ই নগদ পেয়ে গেল। যারা খালি হাতে বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ফিরে আসলো, তাদের পুরো বিনিময়ই পাওনা রয়ে গেল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭৪]

৪৫. অধ্যায়ঃ নিয়্যাত অনুসারে আমালের সাওয়াব, জিহাদ প্রভৃতি আমালও এর অন্তর্ভুক্ত

৪৮২১. উমর ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ প্রত্যেক আমালের ফলাফল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল এবং কোন ব্যক্তি কেবল তাই লাভ করিবে যা সে নিয়্যাত করে। যার হিজরত আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ ও রসূলের উদ্দেশ্য হিজরত বলে গণ্য হইবে, আর যার হিজরত পার্থিব কোন মহিলাকে বিবাহের গ্রহণের উদ্দেশে হইবে তার হিজরত সে উদ্দেশের হিজরত বলেই গণ্য হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭৫]

৪৮২২. সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূ্ত্র হইতে বর্ণীতঃ

আমি উমর ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-কে মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর বরাতে বলিতে শুনেছি …..।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭৬]

৪৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে শাহাদাত কামনা করা মুস্তাহাব

৪৮২৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা করে আল্লাহ তাকে তা [অর্থাৎ, তার সাওয়াব] দিয়ে থাকেন যদিও সে শাহাদাত লাভের সুযোগ না পায়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭৭]

৪৮২৪. সাহ্‌ল ইবনি হুনায়ফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর নিকট শাহাদাত প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তাকে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন যদিও সে আপন শয্যায় ইন্তিকাল করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭৮]

৪৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে জিহাদ না করে এমন কি জিহাদের আকাঙ্ক্ষা না করে যে মারা যায় তার পরিণাম অশুভ

৪৮২৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো, অথচ কখনো জিহাদ করলো না বা জিহাদের কথা তার মনে কোন দিন উদিতও হলো না, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করলো।

আবদুল্লাহ ইবনি মুবারক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাদের মত হলো, এ হুকুম একান্তই রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর যুগের জন্য প্রযোজ্য।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭৯]

৪৮. অধ্যায়ঃ অসুস্থতা বা ওযরের কারণে যে জিহাদে যেতে পারলো না, তার সাওয়াব

৪৮২৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা কোন এক যুদ্ধে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ মাদীনায় এমন কতিপয় লোক রয়েছে যারা তোমাদের প্রতিটি পথ চলায় এবং প্রান্তর অতিক্রম করায় তোমাদেরই সঙ্গে রয়েছে। [সাওয়াব লাভের বেলায়]। রোগ ব্যাধি তাদেরকে আটকে রেখেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৮০]

৪৮২৭. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় আছে “তাঁরা প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রে তোমাদের সঙ্গে শরীক রয়েছেন।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৮১]

৪৯. অধ্যায়ঃ সামুদ্রিক জিহাদের মাহাত্ম্য

৪৮২৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উম্মু হারাম বিনতু মিলহান [রাদি.]-এর ঘরে যেতেন। তিনি তাঁকে আপ্যায়ন করিতেন। উম্মু হারাম [রাদি.] ছিলেন, উবাদাহ্‌ ইবনি সামিত [রাদি.]-এর স্ত্রী। একদা তিনি তাহাঁর ঘরে গেলেন এবং তিনি তাঁকে [চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী] আপ্যায়ন করিলেন। তারপর তিনি তাহাঁর [রসূলুল্লাহর] মাথার উকুন দেখিতে বসলেন এবং এ অবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি যখন জাগ্রত হলেন তখন তিনি হাসছিলেন। উম্মু হারাম [রাদি.] বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার হাসির কারণ কী? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু সংখ্যক লোককে আমার সম্মুখে পেশ করা হলো, যারা আল্লাহর পথের যোদ্ধারূপে রাজা-বাদশাহের ন্যায় সাগর পৃষ্ঠে সিংহাসনে আসীন হইবেন। অথবা বলেছেন, রাজা-বাদশাহ্‌র মতো সিংহাসনে আসীন হইবেন। রাবী সন্দেহ পোষণ করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কোন্‌ বাক্যটি বলেছেন। উম্মু হারাম [রাদি.] বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন! যেন তিনি আমাকেও তাদের সঙ্গে শামিল করেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাঁর জন্যে দুআ করিলেন। এরপর তিনি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। আবার জেগে হাসতে লাগলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের কিছু সংখ্যক লোককে আমার সম্মুখে পেশ করা হয়, আল্লাহর পথের যোদ্ধারূপে….. পূর্বের বাক্যের অনুরূপ। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন! তিনি যেন আমাকেও তাদের সঙ্গে শামিল করেন। তিনি বলিলেন, তুমি হইবে তাদের প্রথম সারির একজন।

তারপর উম্মু হারাম বিনতু মিলহান মুআবিয়াহ্‌ [রাদি.]-এর আমালে [সত্যিসত্যি] সমুদ্রপৃষ্ঠে [সাইপ্রাসের যুদ্ধ উপলক্ষে] আরোহণ করেন এবং সমুদ্র থেকে বের হওয়ার কালে সওয়ারী থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৮২]

৪৮২৯. আনাস [রাদি.]-এর খালা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদের ঘরে এলেন এবং আমাদের এখানেই মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করিলেন। তারপর তিনি যখন জাগলেন তখন তিনি হাসছিলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার হাসবার কারণ কী? আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক! তখন জবাবে তিনি বলিলেন, আমাকে [স্বপ্নে] দেখানো হলো যে, আমার উম্মাতের মধ্যকার একদল লোক রাজা-বাদশাহ্‌দে‌র সিংহাসনে আরোহণের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠে আরোহণ করিবে। তখন আমি আরয করলাম, আপনি আমার জন্য দুআ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের সঙ্গে শামিল করে নেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তুমি তাদের মধ্যে শামিল থাকিবে। তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন এবং পুনরায় জেগে আবারও হাসতে থাকেন। আমি তাঁকে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি পূর্বের মতো উত্তর দিলেন। অতঃপর আমি বললাম, আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাকে তাদের সঙ্গে শামিল রাখেন। তিনি বলিলেন, তুমি হইবে তাদের প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত।

রাবী বলেন, পরবর্তীকালে উবাদাহ্‌ ইবনি সামিত [রাদি.] তাঁকে বিয়ে করেন। তিনি সমুদ্রযুদ্ধে যাত্রা করেন এবং তাঁকেও সঙ্গে নিয়ে যান। যখন তিনি ফিরে আসছিলেন তখন একটি খচ্চর তাহাঁর সামনে আনা হলো। তিনি তাতে আরোহণ করিলেন তখন খচ্চরটি তাঁকে নীচে ফেলে দেয়। তাতে তাহাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়। [এবং এভাবে তিনি শহীদ হন।]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৮৩]

৪৮৩০. আনাস [রাদি.]-এর খালা উন্মু হারাম বিনত মিলহান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা নবী [সাঃআঃ] আমাদের কাছে এলেন এবং মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করিলেন তারপর মুচকি হাসতে হাসতে জাগলেন। তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] আপনার হাসবার কারণ কি? তিনি বলিলেন ; আমার উম্মাতের একদল লোককে আমার সামনে পেশ করা হলো যারা ঐ সবুজ সাগরের বুকে আরোহণ করিবে …..। তারপর হাম্মাদ ইব্‌ন যায়দের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

৪৮৩১. আনাস ইবন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আনাস [রাদি.]-এর খালা বিনত মিলহান [রাদি.]-এর কাছে এলেন এবং তার কাছে বিশ্রাম গ্রহণ করিলেন। তারপর ইসহাক ইব্‌ন আবু তালহা ও মুহাম্মদ ইব্‌ন ইয়াহইয়া ইব্‌ন হাব্বান [রাদি.]-এর হাদীসের অনুরূপ শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।

৫০. অধ্যায়ঃ    আল্লাহর রাহে প্রহরায় থাকার ফযীলত

৪৮৩২. সালমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছি, একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকিবে। এবং তার [শহীদসুলভ] রিযিক অব্যাহত রাখা হইবে এবং সে ব্যক্তি ফিৎনাবাজদের থেকে নিরাপদে থাকিবে।

৪৮৩৩. সালমান আল-খায়র [রাদি.] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে আয়ুব ইব্‌ন মূসা [রাদি.] থেকে লায়সের হাদীসের অনুরূপ অর্থযুক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

৫১. অধ্যায়ঃ শহীদের বর্ণনা

৪৮৩৪. আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একব্যক্তি পথ চলাকালে একটি কাঁটাযুক্ত গাছের ডাল রাস্তায় পেয়ে তা সরিয়ে দিল, তখন আল্লাহ্ তাআলা তার এ কাজের মূল্যায়ন করিলেন এবং [প্রতিদানে] তাকে মার্জনা করে দিলেন। তিনি আরও বললেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকার : ১. প্লেগগ্রস্ত ২. উদরাময়গ্রস্ত ৩. ডুবন্ত [ডুবে মৃত] ৪. কোন কিছু চাপা পড়ে মৃত এবং ৫. মহান মহিয়ান আল্লাহর রাহে [প্রাণদানকারী] শহীদ।

৪৮৩৫. আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বলিলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত হয় সেই তো শহীদ। ” তিনি বললেনঃ তবে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হইবে। তখন তারা বলিলেন, তা হলে তারা কারা ইয়া রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ রাহে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায় সে শহীদ যে ব্যক্তি উদরাময়ে মারা যায় সেও শহীদ। ইব্‌ন মিকসাম [রাদি.] বলেন, আমি তোমার পিতার উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন, এবং পানিতে ডুবে মারা যায় এমন ব্যক্তিও শহীদ।

৪৮৩৬. সুহায়ল [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। সুহায়ল [রাদি.] বলেন, উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন মিকসাম [রাদি.] বলেন, আমি তোমার ভাইয়ের উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি তাতে এতটুকুও অধিক বলেছেন, যে ব্যক্তি পানিতে ডুবে মরলো সেও শহীদ।

৪৮৩৭. মুহাম্মদ ইবন হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মুহাম্মদ ইব্‌ন হাতিম [রাদি.] এ সনদের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতটুকু বর্ধিত বলেছেন, যে ব্যক্তি ডুবে মরলো, সেও শহীদ।

৪৮৩৮. হাফসা বিনত সীরীন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আনাস ইব্‌ন মালিক [রাদি.] আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়াহইয়া ইব্‌ন আবু আমরা কিসে মারা গেলেন? আমি বললাম, প্লেগগ্ৰস্ত হয়ে। তিনি [হাফসা] বলেন, তখন তিনি [আনাস] বলিলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্লেগ হচ্ছে প্রত্যেকটি মুসলিম ব্যক্তির জন্যে শাহাদত স্বরূপ।

৪৮৩৯. আসিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

৫২. অধ্যায়ঃ তিরন্দাযীর ফযীলত এবং এতে উৎসাহ প্রদান এবং তা শিক্ষা করে ভুলে যাওয়ার নিন্দা

৪৮৪০. উকবা ইবন আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে মিম্বারের উপর আসীন অবস্থায় আমি বলিতে শুনেছি, আল্লাহ্ তাআলার বাণী

وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ أَلاَ إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْىُ أَلاَ إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْىُ أَلاَ إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْىُ

“এবং তোমরা তাদের মুকাবিলায় শক্তি সঞ্চয় করে রাখো। ” জেনে রাখো, এ শক্তি হচ্ছে তীরন্দায়ী, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে তীরন্দায়ী, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে তীরন্দায়ী।

৪৮৪১. উকবা ইবন আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে আমি বলিতে শুনেছি, অচিরেই অনেক ভূ-খণ্ড তোমাদের পদানত হইবে। আর শক্রদের মুকবিলায় আল্লাহই তোমাদের জন্যে যথেষ্ট হইবেন। তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন তীর দ্বারা খেলার [তীরন্দায়ীর] অভ্যাস ত্যাগ না করে।

৪৮৪২. উকবা ইবন আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উকবা ইব্‌ন আমির [রাদি.] এর বরাতে নবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

৪৮৪৩. ফুকায়ম লাখমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উকবা ইব্‌ন আমির [রাদি.]-কে বলিলেন, এই দুই লক্ষ্যস্থলের মধ্যে বারবার আনাগোনা করা এই বৃদ্ধ বয়সে নিশ্চয়ই আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে থাকিবে। তিনি বলিলেন, আমি যদি একটি কথা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট থেকে না শুনতাম, তবে এ কষ্ট করতাম না। রাবী হারিছ বলেন, আমি ইব্‌ন শামাসাহ [রাদি.]-কে জিজ্ঞাসা করলাম, সে কথাটি কি? তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি তীর পরিচালনা শিখলো তারপর তার অভ্যাস ছেড়ে দিল সে আমাদের [উম্মতের দলভুক্ত] নয়। অথবা তিনি বলেছেন, সে পাপ করলো।

Comments

Leave a Reply