শরাবের বর্ণনা অধ্যায় – মুয়াত্তা ইমাম মালেক
শরাবের বর্ণনা অধ্যায় – মুয়াত্তা ইমাম মালেক, এই অধ্যায়ে হাদীস =১৫ টি ( ১৫৮৩-১৫৯৭ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৪২ শরাবের বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ১ – মদ্য পানের শাস্তি
পরিচ্ছেদঃ ২ -যে পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করা নিষেধ
পরিচ্ছেদঃ ৩ -যে দুই বস্তু মিলিয়ে নাবীয বানান নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদঃ ৪ -মদ্য পান হারাম হওয়া
পরিচ্ছেদঃ ৫ -মদ হারাম হওয়া সম্পর্কে
পরিচ্ছেদঃ ১ – মদ্য পানের শাস্তি
১৫৪৩ সায়িব ইব্নু ইয়াযীদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে, উমার [রাদি.] তাদের কাছে এসে বলিলেন, আমি অমুকের [উমার-তনয় উবায়দুল্লাহর] মুখ হইতে মদের গন্ধ পেলাম। সে বলে, আমি আঙ্গুরের রস পান করেছি। আমি বললাম, যদি তাতে মাদকতা থাকে তা হলে শাস্তি দিব। অতঃপর উমার ইব্নু খাত্তাব [রাদি.] তাকে পূর্ণ শাস্তি প্রদান করলেন। {১} [ঈমাম বুখারি মুয়াল্লাক সনদে বর্ণনা করেন ৭/১৩৯, এবং আল্লামা হাফেজ ইবনি হাজার আসকালানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
{১} মূলে طملا শব্দ রয়েছে। যদি আঙ্গুরকে এত পাকান হয় যে, তা গাঢ় হয়ে যায়, যেমন দুই-তৃতীয়াংশ শুকিয়ে এক-তৃতীয়াংশ থেকে যায় তখন উহাকে طلا বলে। উবায়দুল্লাহকে আশিটি বেত্রাঘাত মারা হয়েছিল। শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৪৪ সাওর ইবনি যাইদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] মদ্য পানের শাস্তির ব্যাপারে সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। আলী [রাদি.] বলিলেন, আমার মতে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত লাগান যেতে পারে। কেননা মানুষ মদ্য পান করে মাতাল হইবে আর মাতাল হলে অকথ্য কথা বলবে। অতঃপর উমার [রাদি.] মদ্য পানের শাস্তি আশি বেত্রাঘাত নির্ধারিত করলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৫৪৫ বর্ণণাকারী হইতে বর্ণিতঃ
ইব্নু শিহাবকে প্রশ্ন করা হল, যদি কোন দাস মদ্য পান করে, তবে তার শাস্তি কি ? তিনি বলিলেন, আমি জানি মদ্য পানে দাসের শাস্তি স্বাধীন লোকের অর্ধেক। আর উমার ইব্নু খাত্তাব, উসমান ইব্নু আফফান ও আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] মদ্য পানের জন্য নিজেদের দাসদেরকে অর্ধেক শাস্তি দিয়েছিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৫৪৬ ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব বলিতেন, হদ্দ বা নির্ধারিত শাস্তি ব্যতীত এমন কোন গুনাহ নেই যা আল্লাহ্ ক্ষমা করিতে ইচ্ছা করেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের মতে, যে মদের মধ্যে মাদকতা রয়েছে, তা পানকারী মাতাল হোক বা না হোক তার জন্য শাস্তি আবশ্যক।শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২ -যে পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করানিষেধ
১৫৪৭ আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ কোন যুদ্ধে ভাষণ দান করছিলেন। আমিও তা শ্রবণের নিমিত্তে সেই দিকে রওয়ানা হলাম। কিন্তু আমার তথায় উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই তিনি ভাষণ শেষ করে ফেললেন। আমি অন্যান্য লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ কি বলেছেন? তারা বলল, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ লাউয়ের খোল এবং বাহিরে আলকাতরা মাখা পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
[সহীহ, মুসলিম ১৯৯৭, মুলত হাদীসটি বুখারি ও মুসলিম শরীফে রয়েছে]শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৪৮ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ লাউয়ের খোল ও বহিরাংশে আলকাতরা মাখা পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
[বুখারি ৫৫৮৭, মুসলিম ১৯৯২]শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৩ -যে দুই বস্তু মিলিয়ে নাবীয বানান নিষিদ্ধ
১৫৪৯ আতা ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ কাঁচা ও পাকা খেজুর একত্রে ভিজিয়ে রাখতে এবং আঙ্গুর ও খেজুর একত্রে ভিজিয়ে রাখতে নিষেধ করিয়াছেন। কেননা এতে সত্বর মাদকতা আসার সন্দেহ রয়েছে। [বুখারি ৫৬০, মুসলিম ১৯৮৬, জাবের [রাদি.] থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]
শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৫৫০ আবু কাতাদা আনসারী হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ আঙ্গুর ও খেজুর মিলিয়ে নাবীয তৈরি করে পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন এবং কাঁচা ও পাকা খেজুর মিলিয়ে নাবীয তৈরী করে পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
[বুখারি ৫৬০২, মুসলিম ১৯৮৮]মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের এতদঞ্চলের আলিমগণ ইহাকে মাকরূহ্ মনে করেন। কেননা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ ইহা নিষেধ করিয়াছেন।শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৪ -মদ্য পান হারাম হওয়া
১৫৫১ উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট মধু দ্বারা প্রস্তুত নাবীয সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলিলেন, যে পানীয় মাদকতা আনয়ন করে তাই হারাম।
[বুখারি ৫৫৮৬, মুসলিম ২০০১]শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৫২ আতা ইব্নু ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
গুবায়রা [জোয়ার হইতে প্রস্তুত] শরাব সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলিলেন, উহাতে কোন উপকারিতা নেই। তিনি উহা পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৫৫৩ আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি পৃথিবীতে মদ্য পান করিবে, অতঃপর তাওবা না করিবে, সেই ব্যক্তি আখেরাতের শরাব হইতে বঞ্চিত থাকিবে। [বুখারি ৫৫৭৫, মুসলিম ২০০৩]
শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৫ -মদ হারাম হওয়া সম্পর্কে
১৫৫৪ যায়দ ইব্নু আসলাম [রাদি.] ইব্নু ওয়ালা মিসরী হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস [রাদি.]-কে আঙ্গুরের রস সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলেন। ইব্নু আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, এক ব্যক্তি উপটৌকনস্বরূপ এক মুশক মদ্য রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে দান করেছিলেন। তিনি তাকে বলিলেন, তুমি কি জান না, আল্লাহ্ ইহা হারাম করিয়াছেন? সে ব্যক্তি বলল, আমার তো তা জানা ছিল না। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি চুপি চুপি কি যেন তার কানে বলল। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বললে? সে বলল, আমি তাকে উহা বিক্রয় করিতে বললাম। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, যিনি উহা পান করা হারাম করিয়াছেন, তিনি উহা বিক্রয় করাও হারাম করিয়াছেন। এতদশ্রবণে ঐ ব্যক্তি মুশকের মুখ খুলে দিল আর সমস্ত শরাব বয়ে গেল।
[সহীহ, মুসলিম ১৫৪৩]শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৫৫ আনাস ইব্নু মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু উবায়দা ইব্নু জাররাহ, আবু তালহা আনসারী ও উবাই ইব্নু কাবকে তাজা খেজুরের শরাব পান করাতাম। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি এসে বলল, শরাব হারাম হয়ে গিয়েছে। এটা শুনে আবু তালহা বলিলেন, আনাস, উঠে গিয়ে ঐ সমস্ত ঘটি ভেঙ্গে ফেল। আমি উঠে মিহরাস {১} [দ্বারা সমস্ত ঘটি ভেঙ্গে ফেললাম।
[বুখারি ৫৫৮২, মুসলিম ১৯৮০]{১} মিহরাস প্রস্তরখণ্ড যাতে গর্ত থাকে। উহাতে পানি ভরে ওযূ করা হয়।শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৫৬ মাহমুদ ইব্নু লবীদ আনসারী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] যখন শাম দেশে আগমন করলেন, তখন শামের বাসিন্দার মধ্যে কেউ তাঁর নিকট শাম দেশের মহামারী ও আবহাওয়া সম্বন্ধে অভিযোগ করিল এবং বলল, এখানে শরাব পান করা ছাড়া স্বাস্থ্য ঠিক থাকে না। উমার [রাদি.] বলিলেন তোমরা মধু পান কর। তারা বলল, মধুও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারে না। এমন সময় এক ব্যক্তি বলল, আমি আপনার জন্য এমন এমনভাবে শরাব তৈরি করব যাতে মাদকতা থাকিবে না। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর তারা উহাকে এমনভাবে বানাল যে, উহার দুই-তৃতীয়াংশ শুকিয়ে এক-তৃতীয়াংশ বাকী রইল। অতঃপর উহা উমার [রাদি.]-এর কাছে নিয়ে এল। তিনি তাতে আঙ্গুল দিয়ে দেখলেন, উহা চপ চপ করছে! তিনি বলিলেন, এই রস তো উটের রসের মতোই হল। তিনি উহা পান করবার অনুমতি দান করলেন। উবাদাহ ইব্নু সামিত [রাদি.] বলেন, আল্লাহর কসম আপনি তো তা হালাল করে দিলেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, না, আল্লাহ্র কসম! হে আল্লাহ, আমি কখনও ঐ বস্তু হালাল করিনি, যা আপনি হারাম করিয়াছেন, আর না এমন বস্তু হারাম করেছি, যা আপনি হালাল করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৫৫৭ আবদুল্লাহ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর নিকট ইরাকের লোকেরা জিজ্ঞেস করিল, আমরা খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান ক্রয় করে থাকি। আর উহার শরাব বানিয়ে বিক্রয় করে থাকি। আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] বলিলেন, আমি আল্লাহকে ও তাঁর ফিরিশতাগণকে আর যে জিন ও মানুষ শুনছে, তাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তোমাদেরকে উহা বিক্রয় করার, খরিদ করার, প্রস্তুত করার, পান করার ও কাউকে পান করাবার অনুমতি দিচ্ছি না। কেননা শরাব নাপাক ও শয়তানী কাজ। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
শরাবের বর্ণনা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply