শবে কদর ও ইতিকাফ , শীতকালের রোযা, ইফতার করানোর ফাযীলাত
শবে কদর ও ইতিকাফ , শীতকালের রোযা, ইফতার করানোর ফাযীলাত >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৬, অনুচ্ছেদঃ (৭১-৮৩)=১৩টি
৭১. অনুচ্ছেদঃ ইতিকাফের বর্ণনা
৭২. অনুচ্ছেদঃ লাইলাতুল কাদর [কাদরের রাত্রি]
৭৩. অনুচ্ছেদঃ লাইলাতুল কাদ্র সম্পর্কেই
৭৪. অনুচ্ছেদঃ শীতকালের রোযা
৭৫. অনুচ্ছেদঃ “যেসব লোক রোযা আদায়ের সমর্থ হয়েও…” প্রসঙ্গে
৭৬. অনুচ্ছেদঃ খাবারের পর কোন লোক সফরের উদ্দেশ্যে বের হলে
৭৭. অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের জন্য উপহার
৭৮. অনুচ্ছেদঃ কোন সময়ে ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আয্হা হয়
৭৯. অনুচ্ছেদঃ ইতিকাফ ভঙ্গ করার পর পুনরায় ইতিকাফ করা
৮০. অনুচ্ছেদঃ প্রয়োজনবোধে ইতিকাফকারী বের হইতে পারে কি না?
৮১. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসের কিয়াম [রাত্রের ইবাদাত]
৮২. অনুচ্ছেদঃ রোযাদারকে ইফতার করানোর ফাযীলাত
৮৩. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসে [রাত্রের ইবাদাত] দণ্ডায়মান হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা এবং এর ফাযীলাত
৭১. অনুচ্ছেদঃ ইতিকাফের বর্ণনা
৭৯০. আবু হুরাইরা ও আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রমযানের শেষদশকেই নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ইতিকাফ করিতেন।
-সহীহ, ইরওয়া [৯৬৬], সহীহ আবু দাঊদ [২১২৫], বুখারী, মুসলিম উবাই ইবনি কাব, আবু লাইলা, আবু সাঈদ, আনাস ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা ও আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৯১. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফ করার ইচ্ছা করিতেন তখন ফজরের নামাজ আদায় করে ইতিকাফের জায়গায় প্রবেশ করিতেন।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭৭১], বুখারী, মুসলিম । আবু ঈসা বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ-আম্রার সূত্রে এই হাদীসটি মুরসালরূপে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটি ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ হইতে আমরার সূত্রে ঈমাম মালিক [রঃ] এবং একাধিক বর্ণনাকারী মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। আওযাঈ ও সুফিয়ান সাওরী-ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি আমরা হইতে, তিনি আইশা [রাদি.] হইতে এই হাদীসটিকে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস অনুযায়ী কোন কোন আলিমের মতে, কোন ব্যক্তি ইতিকাফ করিতে চাইলে ফজরের নামাজ আদায়ের পর তাকে ইতিকাফের জায়গায় প্রবেশ করিতে হইবে। ঈমাম আহ্মাদ ও ইসহাক ইবনি ইবরাহীমের এই মত। অপর একদল আলিম বলেছেন, যে দিন হইতে কোন ব্যক্তি ইতিকাফ শুরু করিতে চায় সে দিনের পূর্বের রাতের সন্ধ্যায় সূর্য ডুবে যাওয়ার পর যেন সে ব্যক্তি ইতিকাফে বসে। এরকম মতই সুফিয়ান সাওরী ও মালিক ইবনি আনাস [রঃ]-এর। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭২. অনুচ্ছেদঃ লাইলাতুল কাদর [কাদরের রাত্রি]
৭৯২. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমযান মাসের শেষের দশদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে থাকতেন [ইতিকাফ করিতেন]। তিনি বলিতেনঃ রমযান মাসের শেষের দশদিন তোমরা কাদরের রাতকে খোঁজ কর।
-সহীহ্, বুখারী, মুসলিম। উমার, উবাই ইবনি কাব, জাবির ইবনি সামুরা, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ, ইবনি উমার, ফালাতান ইবনি আসিম, আনাস, আবু সাঈদ, আবদুল্লাহ ইবনি উনাইস, আবু বাক্রা, ইবনি আব্বাস, বিলাল ও উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। ইউজাবিরু শব্দের অর্থ তিনি ইতিকাফ করিতেন। এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ হাদীসের শব্দ হচ্ছেঃ শেষ দশদিনের প্রতি বিজোড় রাত্রে তোমরা লাইলাতুল কাদর খোঁজ কর। লাইলাতুল কাদর প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তা হল একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ, ঊনত্রিশ বা রমযানের শেষরাত্র।ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, আমার মতে এর অর্থ হল, আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেভাবেই উত্তর প্রদান করিতেন তাঁকে যেভাবে প্রশ্ন করা হত। তাহাঁর কাছে কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করেছে, অমুক রাত্রে কি আমরা তা খোঁজ করব? উত্তরে তিনি বলেছেন, তোমরা অমুক রাত্রে তা খোঁজ কর। ঈমাম শাফি [রঃ] আরও বলেন, আমার নিকটে একুশ তারিখ সম্পর্কিত রিওয়ায়াতটি হচ্ছে এ বিষয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী। আবু ঈসা বলেন, উবাই ইবনি কাব [রাদি.] শপথ করে বলিতেনঃ তা হল সাতাশ তারিখের রাত্রি। তিনি আরও বলিতেন, এর আলামত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং তা আমরা হিসাব করে রেখেছি এবং স্মরণ রেখেছি।আবু কিলাবা [রাদি.] বলেন, লাইলাতুল কাদর শেষ দশকের মাঝে আবর্তিত হইতে থাকে। আব্দ ইবনি হুমাইদ আবদুর রাযযাক হইতে, তিনি মামার হইতে, তিনি আইয়ূব হইতে, তিনি আবু কিলাবা [রাদি.] হইতে এই বক্তব্যটি বর্ণনা করিয়াছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৯৩. যির [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-কে আমি বললাম, হে আবুল মুনযির! এই যে সাতাশের রাত লাইলাতুল কাদর আপনি সেটা কি করে জানতে পারলেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই, আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, এই রাত্রের পরবর্তী সকালে সূর্য উদিত হয় ক্ষীণ আলো নিয়ে দীপ্তিহীন অবস্থায়। আমরা সেটাকে গুনে এবং স্মরণ করে রেখেছি। আল্লাহ তাআলার শপথ! ইবনি মাসউদ [রাদি.]-ও জানেন যে, সেটা হচ্ছে রমযানের রাত্র এবং সাতাশেরই রাত্র। কিন্তু তোমাদেরকে তিনি তা জানাতে পছন্দ করেননি, তোমরা যদি পরে এটার উপর নির্ভর করে বসে থাক।
-সহীহ্, সহীহ আবু দাঊদ [১২৪৭], মুসলিম অনুরূপ।আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৯৪. আবদুর রাহমান [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, লাইলাতুল কাদর প্রসঙ্গে একবার আবু বাক্রা [রাদি.]-এর কাছে আলোচনা হল। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একটি বাণী শোনার কারণে আমি রমযান মাসের শেষ দশদিন ব্যতীত অন্য কোন রাত্রে লাইলাতুল কাদরকে খোঁজ করি না। আমি তাঁকে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা কাদরের রাত্রে খোঁজ কর রমযানের নয়দিন বাকী থাকতে বা সাতদিন বাকী থাকতে বা পাঁচদিন বাকী থাকতে বা তিন দিন বাকী থাকতে অথবা এর শেষ রাত্রে।
-সহীহ, মিশকাত তাহকীক ছানী [২০৯২]।বর্ণনাকারী বলেন, রমযানের বিশদিন পর্যন্ত আবু বাক্রা [রাদি.] সারা বছরের মতই নামাজ আদায় করিতেন, কিন্তু তিনি শেষ দশদিন আসলে যতটুকু সম্ভব সাধনা করিতেন। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৩. অনুচ্ছেদঃ লাইলাতুল কাদ্র সম্পর্কেই
৭৯৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রমযানের শেষ দশদিন নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে [ইবাদাতে মগ্ন থাকার জন্য] ঘুম থেকে উঠাতেন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭৬৮], বুখারী, মুসলিম।আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৯৬. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমযানের শেষ দশদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [ইবাদাতে] এত বেশি সাধনা করিতেন যে, অন্য কোন সময়ে এরকম সাধনা করিতেন না।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭৬৭]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ গারীব বলেছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৪. অনুচ্ছেদঃ শীতকালের রোযা
৭৯৭. আমির ইবনি মাসউদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, শীতকালের রোযা হচ্ছে বিনা পরিশ্রমে যুদ্ধলব্ধ মালের অনুরূপ।
-সহীহ, সহীহা [১৯২২], আর-রাওয [৬৯]। আবু ঈসা হাদীসটিকে মুরসাল বলেছেন। কারণ, আমির ইবনি মাসউদ [রঃ]-এর সাক্ষাৎ ঘটেনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে। যার সূত্রে শুবা ও সাওরী হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন তিনি হলেন ইবরাহীম ইবনি আমির আল-কুরাশীর পিতা। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৫. অনুচ্ছেদঃ “যেসব লোক রোযা আদায়ের সমর্থ হয়েও…” প্রসঙ্গে
৭৯৮. সালামা ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ “যেসব লোক রোযা আদায়ের ক্ষেত্রে সামর্থবান হয়েও [না রাখবে] সেসব লোক যেন একজন মিসকীনের আহার দেয়” আমাদের মধ্যে তখন যার ইচ্ছা হত সে রোযা পালন না করে তার পরিবর্তে ফিদ্ইয়া আদায় করত। অতঃপর এর পরবর্তী আয়াত
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
“তোমাদের মধ্যে যে লোক রমযান মাস পায় সে লোক যেন রোযা পালন করে” অবতীর্ণ হলে উপরের আয়াতের [সূরাদি. বাকারা- ১৮৪] বিধান বাতিল হয়ে যায়।
-সহীহ্ ইরওয়া [৪/২২], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ গারীব বলেছেন। ইয়াযীদ হলেন, ইবনি আবু উবাইদ সালামা ইবনি আকওয়ার মুক্তদাস। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৬. অনুচ্ছেদঃ খাবারের পর কোন লোক সফরের উদ্দেশ্যে বের হলে
৭৯৯. মুহাম্মাদ ইবনি কাব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমযান মাসে আমি আনাস [রাদি.]-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি সফরের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাহাঁর সফরের উট-টিতে হাওদা বেঁধে দেওয়া হল। তিনি সফরের পোশাক পরলেন এবং খাবার নিয়ে আসতে বলিলেন, তারপর তিনি তা খেলেন। আমি বললাম, এটা কি সুন্নাত? তিনি বলিলেন, সুন্নাত। তারপর তিনি জন্তুযানে আরোহণ করিলেন।
-সহীহ্ [তাসহীহ হাদীসে ইফতারিস সা-য়িমি কাবলা সাফারিহি বাদাল ফাজরি[পৃঃ ১৩-২৮]।রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮০০. মুহাম্মাদ ইবনি কাব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমযান মাসে আমি আনাস [রাদি.]-এর নিকট আসলাম। …… পূর্বোক্ত হাদীসের মতই।
এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। মুহাম্মাদ ইবনি জাফর হলেন ইবনি আবু কাসীর মাদীনী, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। তিনি ইসমাঈল ইবনি জাফরের ভাই। আবদুল্লাহ ইবনি জাফর হলেন ইবনি নাজীহ; তিনি আলী ইবনি আবদুল্লাহ মাদীনীর পিতা। তাঁকে ইয়াহ্ইয়া ইবনি মাঈন দুর্বল বর্ণনাকারী বলেছেন। এ হাদীসটির ভিত্তিতে কোন কোন আলিম বলেন, কোন মুসাফির লোক বাড়ী হইতে সফরের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে রোযা ভঙ্গ করে পানাহার করে নিতে পারবে, কিন্তু নামাজ কসর করিতে পারবে না তার গ্রাম বা নগরপ্রাচীর অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত। এরকম মতই প্রকাশ করিয়াছেন ইসহাক ইবনি ইবরাহীম হানযালী। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৭৭. অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের জন্য উপহার
৮০১. হাসান ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রোযাদারের জন্য তোহফা হল তৈল ও লোবান জাতীয় সুগন্ধি।
মাওযূ, যঈফা [১৬৬০]। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি গারীব, এর সনদ খুব একটা মজবুত নয়। সাদ ইবনি তারীফ ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে এই প্রসঙ্গে আমরা জানি না। সাদকে দুর্বল রাবী বলা হয়েছে। উমাইর ইবনি মামূনকে উমাইর ইবনি মামূমও বলা হয়। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ জাল হাদীস
৭৮. অনুচ্ছেদঃ কোন সময়ে ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আয্হা হয়
৮০২. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ লোকেরা যেদিন রোযা ভেঙ্গে ফেলে সেদিন হল ঈদুল ফিত্র এবং লোকেরা যেদিন কুরবানী করে সেদিন ঈদুল আয্হা।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৬৬০]। আবু ঈসা বলেন, মুহাম্মাদ [বুখারী]-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আইশা [রাদি.]-এর নিকট কি মুহাম্মাদ ইবনি মুনকাদির হাদীস শুনেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তার হাদীসে তিনি বলেন, আইশা [রাদি.]-এর নিকট আমি শুনিয়াছি। এই সূত্রে আবু ঈসা হাদীসটিকে হাসান গারীব সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৯. অনুচ্ছেদঃ ইতিকাফ ভঙ্গ করার পর পুনরায় ইতিকাফ করা
৮০৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমযানের শেষ দশদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফ করিতেন। কিন্তু তিনি এক বছর ইতিকাফ করিতে সক্ষম হননি। তাই তিনি পরের বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন।
-সহীহ, সহীহ আবু দাঊদ [২১২৬]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা আনাস ইবনি মালিকের হাদীস হিসেবে হাসান গারীব সহীহ্ বলেছেন। আলিমগণের মধ্যে নিয়্যাত করার পর পূর্ণ করার আগেই ইতিকাফ ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে মতভেদ রহিয়াছে। একদল আলিম তার কাযা আদায় করাকে ওয়াজিব বলেছেন। নিম্নোক্ত হাদীসটি দ্বারা তারা দলীল গ্রহণ করেনঃ “রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফ ত্যাগ করে বেরিয়ে আসলেন, পরে শাওয়াল মাসের দশদিন ইতিকাফ করেন।” এরকম মত ঈমাম মালিক [রঃ]-এরও। অন্য একদল আলিম বলেন, মানত বা নিজেদের জন্য অবশ্য পালনীয় ইতিকাফ যদি না হয়ে থাকে এবং যদি নফল ইতিকাফ হয়ে থাকে তাহলে এমতাবস্থায় ইতিকাফ ছেড়ে বের হয়ে গেলে তার কাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়। যদি কেউ স্বেচ্ছায় কাযা করে তবে তা করিতে পারে কিন্তু তা তার উপর ওয়াজিব নয়। ঈমাম শাফি [রঃ] এই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমার জন্য যেসব আমল ছেড়ে দেয়া জায়িয তুমি যদি এ ধরণের কোন আমল করিতে শুরু কর এবং তা পূর্ণ না করে ছেড়ে দাও তাহলে তোমার উপর এ ধরণের কোন আমল কাযা করা ওয়াজিব নয় শুধুমাত্র হাজ্জ ও উমরা ব্যতীত। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮০. অনুচ্ছেদঃ প্রয়োজনবোধে ইতিকাফকারী বের হইতে পারে কি না?
৮০৪. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন ইতিকাফে থাকতেন, আমার দিকে তাহাঁর মাথা এগিয়ে দিতেন এবং আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম। মানাবীয় প্রয়োজন [প্রশ্ৰাব-পায়খানা] ব্যতীত তিনি ঘরে আসতেন না। -সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৬৩৩] ও [১৭৭৮]
আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। আইশা [রাদি.]-এর সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী হাদীসটি একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। তবে আইশা [রাদি.] হইতে উরওয়া ও আম্রা [রঃ]-এর সনদটি সহিহ। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮০৫. ইবনি শিহাব হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি শিহাব হইতে উরওয়া ও আম্রা-আইশা [রাদি.]-এর সূত্রে লাইস ইবনি সাদও হাদীসটিকে বর্ণনা করিয়াছেন।
-সহীহ্, দেখুন পূর্বের হাদীস । এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ বলেছেন, মানাবীয় প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফকারী ইতিকাফস্থল হইতে বাইরে বের হইতে পারবে না। তারা সকলেই এই বিষয়ে একমত যে, অবশ্যই সে প্রশ্ৰাব-পায়খানার প্রয়োজন হলে বের হইতে পারবে। তবে ইতিকাফকারী রোগী দেখা, জুমুআ ও জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করিতে পারবে কি না তাহাদের মাঝে এ বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। কোন কোন সাহাবী ও তাবিঈর মতে সে লোক যদি ইতিকাফে বসার সময় এসব প্রয়োজনে বের হওয়ার শর্ত করে থাকে তাহলে সে লোক রোগী দেখিতে, জানাযায় এবং জুমুআর নামাযে উপস্থিত হইতে পারবে। এরকম মতই দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী ও ইবনিল মুবারাক। কোন কোন আলিম বলেন, সে লোক উল্লিখিত উদ্দেশ্যে বাইরে বের হইতে পারবে না। তাহাদের মতে শহরে বসবাসকারী জামে মাসজিদ ব্যতীত আর অন্য কোথাও ইতিকাফ করিবে না। জুমুআর জন্য ইতিকাফের জায়গা ছেড়ে বের হওয়াকেও তারা মাকরূহ্ বলেন, আবার জুমুআ ত্যাগ করাকেও তারা জায়িয মনে করেন না। সুতরাং তারা বলেন, ইতিকাফ শুধু জামে মাসজিদেই আদায় করিবে যেন ইতিকাফস্থল হইতে মানাবীয় প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়ার প্রয়োজন না হয়। মানাবীয় প্রয়োজন ছাড়া বের হলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরকম মত প্রকাশ করেন ঈমাম মালিক ও শাফিঈ।ঈমাম আহ্মাদ বলেন, আইশা [রাদি.]-এর হাদীসের আলোকে সে লোক রোগী দেখিতে ও জানাযায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বের হইতে পারবে না। ঈমাম ইসহাক বলেন, এই বিষয়ে সে লোক যদি পূর্বেই নিজে নিজে শর্ত করে নেয় তবে জানাযায় অংশগ্রহণ ও রোগী দেখার উদ্দেশ্যে বাইরে বের হইতে পারবে। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮১. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসের কিয়াম [রাত্রের ইবাদাত]
৮০৬. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা রোযা পালন করেছি। তিনি আমাদেরকে নিয়ে রমযান মাসে কোন [নফল] নামাজ আদায় করেননি। অবশেষে তিনি রমযানের সাত দিন বাকী থাকতে আমাদেরকে নিয়ে নামাযে দাঁড়ালেন। এতে এক-তৃতীয়াংশ রাত চলে গেল। আমাদেরকে নিয়ে তিনি ষষ্ঠ রাতে নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়াননি। তিনি আবার আমাদের নিয়ে পঞ্চম রাতে নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়ান। এতে অর্ধেক রাত চলে গেল। আমরা তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। যদি আমাদের বাকী রাতটিও নামাজ আদায় করে পার করে দিতেন। তিনি বললেনঃ ইমামের সাথে যদি কোন লোক [ফরয] নামাযে শামিল হয় এবং ইমামের সাথে নামাজ আদায় শেষ করে তাহলে সে লোকের জন্য সারা রাত [নফল] নামাজ আদায়ের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর মাসের তিন রাত বাকী থাকা পর্যন্ত তিনি আর আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেননি। আবার তিনি তৃতীয় [২৭শে] রাত থাকতে আমাদের নিয়ে নামাযের জন্য দাঁড়ালেন। তাহাঁর পরিজন ও স্ত্রীগণকেও তিনি এ রাতে ডেকে তুললেন। এত [দীর্ঘ]-সময় ধরে তিনি নামাজ আদায় করিলেন যে, যার ফলে সাহ্রীর সময় চলে যাওয়ার সংশয় হল আমাদের মনে। বর্ণনাকারী জুবাইর ইবনি নুফাইর বলেন, আবু বকর [রাদি.]-কে আমি বললামঃ ফালাহ্” কি? তিনি বলিলেন, সাহ্রী খাওয়া।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৩২৭]। আবু ঈসা হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। আলিমগণের মধ্যে রমযানের রাতসমূহে [তারাবীহ্ নামাজ ও নফল ইবাদাতের উদ্দেশ্যে] দণ্ডায়মান হওয়া প্রসঙ্গে দ্বিমত আছে। কোন কোন আলিম বলেন, বিতর সহকারে এর রাকআত সংখ্যা একচল্লিশ। মাদীনায় বসবাসকারীদের অভিমত এটাই এবং এরকমই আমল করেন এখানকার লোকেরা। কিন্তু আলী ও উমার [রাদি.] প্রমুখ সাহাবায়ি কিরাম হইতে বর্ণিত রিওয়ায়াত অনুযায়ী বেশিরভাগ আলিমের অভিমত অর্থাৎ [তারাবীহ্] বিশ রাকআত। এই মত সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক ও শাফিঈ [রঃ]-এর। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, আমাদের মক্কা নগরীর লোকদেরকেও বিশ রাকআত আদায় করিতে দেখেছি। আহ্মাদ [রঃ] বলেন, এই বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রকার রিওয়ায়াত বর্ণিত আছে। এই ব্যাপারে তিনি কোন রকম সিদ্ধান্ত দেননি। ইসহাক বলেন, আমরা উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর বর্ণনানুযায়ী একচল্লিশ রাকআত আদায় করাকেই পছন্দ করি। রমযান মাসে ইমামের সাথে তারাবীহ্ আদায় করাকে ইবনিল মুবারাক, আহ্মাদ ও ইসহাক সমর্থন করিয়াছেন। ঈমাম শাফি কুরআনের হাফিয ব্যক্তির জন্য একাকী [তারাবীহ্র] নামাজ আদায় করাকে উত্তম বলেছেন। আইশা, নুমান ইবনি বাশীর ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮২. অনুচ্ছেদঃ রোযাদারকে ইফতার করানোর ফাযীলাত
৮০৭. যাইদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন রোযা পালনকারীকে যে লোক ইফতার করায় সে লোকের জন্যও রোযা পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে রোযা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হইবে না।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭৪৬]। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮৩. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসে [রাত্রের ইবাদাত] দণ্ডায়মান হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা এবং এর ফাযীলাত
৮০৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমযানের [রাত্র জেগে] ইবাদাত-বন্দিগীতে মাশ্গুল থাকতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] উৎসাহিত করিতেন, তবে সেটাকে বাধ্যতামূলক হিসেবে নির্দেশ দেননি। তিনি বলিতেনঃ ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশা করে যে লোক রমযান মাসে [রাতে ইবাদাতে] দন্ডায়মান হইবে সে লোকের পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হইবে। এ নিয়মই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যু পর্যন্ত চালু ছিল। এ বিষয়টি আবু বকর [রাদি.]-এর খিলাফত এবং উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-আর খিলাফতের প্রথম দিকেও এমনই ছিল।
-সহীহ্, সহীহ আবু দাঊদ [১২৪১], নাসা-ঈ, ঈমাম বুখারীর মতে মৃত্যু পর্যন্ত…এই বাক্যাংশটি যুহরী হাদীসে সংযোগ করিয়াছেন। আইশা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। যুহরী-উরওয়া হইতে, তিনি আইশা [রাদি.]-হইতে এই সূত্রেও এই দীসটি বর্ণিত আছে। এই হাদীসিটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। রোজার হাদীস – শবে কদর ও ইতিকাফ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply