শপথের কাফফারা – কসমের ভিতর ইনশাআল্লাহ বলা
শপথের কাফফারা – কসমের ভিতর ইনশাআল্লাহ বলা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৮৪, শপথের কাফফারা, অধ্যায়ঃ (১-১০)=১০টি
৮৪/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এরপর কাফফারা দশজন দরিদ্রকে খাওয়ানো-(সুরা আল-মায়িদা ৫/৮৯)।
৮৪/২. অধ্যায়ঃ আর ধনী ও গরীব কখন কার উপর কাফফারা ওয়াজিব হয়।
৮৪/৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি কাফফারা আদায়ে দরিদ্রকে সাহায্য করে।
৮৪/৪. অধ্যায়ঃ দশজন মিস্কীনকে কাফফারা প্রদান করা; তারা নিকটাত্মীয়ই হোক বা দূরেরই হোক।
৮৪/৫. অধ্যায়ঃ মদীনার সা ও নাবী (সাঃআঃ)-এর মুদ্দ এবং এর বরকত। আর মদীনাবাসী এত্থেকে যুগ যুগ ধরে ওয়ারিশসূত্রে যা লাভ করিয়াছেন
৮৪/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অথবা গোলাম আযাদ করা-(সুরা আল-মায়িদা ৫/৮৯)। এবং কোন্ প্রকারে গোলাম আযাদ করা উত্তম।
৮৪/৭. অধ্যায়ঃ কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে মুদাব্বার, উম্মু ওয়ালাদ, মুকাতাব এবং যিনার সন্তান আযাদ করা। এবং তাউস বলেছেন, (কাফফারায়) উম্মু ওয়ালাদ এবং মুদাব্বার আযাদ করা যাবে।
৮৪/৮. অধ্যায়ঃ যখন কেউ এমন গোলাম আযাদ করে যার উপর তার ও অন্যের মালিকানা আছে অথবা কাফফারার ক্ষেত্রে গোলাম আযাদ করলে উক্ত গোলামের পরিত্যক্ত সম্পদ কে পাবে?
৮৪/৯. অধ্যায়ঃ কসমের ভিতর ইনশাআল্লাহ বলা।
৮৪/১০. অধ্যায়ঃ কসম ভঙ্গ করার পূর্বে এবং পরে কাফফারা আদায় করা। [৮৭]
৮৪/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এরপর কাফফারা দশজন দরিদ্রকে খাওয়ানো-(সুরা আল-মায়িদা ৫/৮৯)।
যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হচ্ছেঃ “ফিদিয়া-এর মধ্যে সওম, সদকা অথবা কুরবানী করা।” (আল-বাকারা ২/১৯৬) ইবনু আব্বাস, আত্বা ও ইকরামা (রাদি.) হইতে বর্ণিত আছে যে, কুরআন মাজীদে যেখানে (আরবী) (অথবা, অথবা) শব্দ আছে কুরআনের অনুসারীদের জন্য সেখানে যে কোন একটি পন্থা গ্রহণের অধিকার রয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) কাব (রাদি.)-কে ফিদিয়া আদায়ের ব্যাপারে যে কোন একটি পন্থা গ্রহণের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।
৬৭০৮
কাব ইবনু উজরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হাযির হলাম। তখন তিনি বললেনঃ কাছে এসো। তখন আমি তাহাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাকে কি তোমার উকুন কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ সওম অথবা সদকা অথবা কুরবানী করে ফিদিয়া আদায় কর। ইবনু আউন আইউব থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, সওম তিন দিন, কুরবানী একটি বক্রী আর মিস্কীনের সংখ্যা হচ্ছে ছয়। [৮৩] (আঃপ্রঃ- ৬২৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫১)
[৮৩] শপথ ভঙ্গের কাফ্ফারা হল দশজন মিস্কিনকে খানা খাওয়ানো অথবা তিন দিন সিয়াম পালন অথবা একটি ছাগল কুরবানী (সাদাক্বাহ) করা। (ফাতহুল বারী)
৮৪/২. অধ্যায়ঃ আর ধনী ও গরীব কখন কার উপর কাফফারা ওয়াজিব হয়।
আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য নিজেদের কসমের বাধ্যবাধকতা থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার ব্যবস্থা করিয়াছেন, আল্লাহ তোমাদের মালিক-মনিব-রক্ষক, আর তিনি সবর্জ্ঞাতা, মহা প্রজ্ঞার অধিকারী-(সুরা আল-বাকারা ৬৬/১-২)
৬৭০৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এক লোক এসে বলিল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? লোকটি বলিল, রমযানে (দিনের বেলা) আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আযাদ করিতে পার? লোকটি বলিল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি কি এক নাগাড়ে দু মাস সওম পালন করিতে পার? সে বলিল, না। তিনি বললেনঃ তা হলে কি তুমি ষাটজন মিস্কীনকে খানা খাওয়াতে পারবে? সে বলিল, না। তিনি বললেনঃ বস। লোকটি বসল। তারপর নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এক আরক আনা হলো যাতে ছিল খেজুর। আর আরক হল মাপ করার জন্য বড় ধরণের পাত্র। তিনি বললেনঃ এটা নিয়ে যাও এবং তা সদকা করে দাও। লোকটি বলিল, আমার চেয়েও অভাবীকে (তা দান করব)? তখন নাবী (সাঃআঃ) হেসে ফেললেনঃ এমন কি তাহাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল। তিনি বললেনঃ এটা তোমার পরিজনকেই খাওয়াও। [৮৪] (আঃপ্রঃ- ৬২৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫২)
[৮৪] ইসলামের পথ যে কত প্রশস্ত, কত উদার ও সংকীর্ণতামুক্ত-অত্র হাদিসটি তার স্পষ্ট প্রমাণ।
৮৪/৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি কাফফারা আদায়ে দরিদ্রকে সাহায্য করে।
৬৭১০
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ সেটা কী? লোকটি বলিল, রমযানে (দিনের বেলা) আমি স্ত্রী সহবাস করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আযাদ করিতে পারবে? সে বলিল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে কি তুমি দুমাস লাগাতার সওম পালন করিতে পারবে? সে বলিল, না। তাহলে কি তুমি ষাটজন মিস্কীনকে খাদ্য খাওয়াতে পারবে? লোকটি বলিল, না। রাবী বলেন, এমন সময় এক আনসার লোক একটি আরক নিয়ে আসল। আর আরক হচ্ছে পরিমাপ পাত্র; তার মাঝে খেজুর ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এটা নিয়ে গিয়ে সদকা করে দাও। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার চেয়ে অভাবী লোককে কি তা দান করব? যিনি আপনাকে হকের সাথে পাঠিয়েছেন সেই সত্ত্বার কসম! মদীনার দুউপত্যকার মাঝে আমার চেয়ে বেশি অভাবী আর কেউ নেই। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ যাও, এগুলো নিয়ে তোমার পরিবারকে খাওয়াও। (আঃপ্রঃ- ৬২৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৩)
৮৪/৪. অধ্যায়ঃ দশজন মিস্কীনকে কাফফারা প্রদান করা; তারা নিকটাত্মীয়ই হোক বা দূরেরই হোক।
৬৭১১
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? লোকটি বলিল, রমযানে (দিনের বেলায়) আমি স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেনঃ একটি গোলাম আযাদ করার মত তুমি কিছু পাবে কি? সে বলিল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি একনাগাড়ে দুমাস সওম পালন করিতে পারবে কি? সে বলিল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি ষাটজন মিস্কীনকে খাওয়াতে পারবে কি? সে বলিল, আমার কাছে কিছুই নেই। এমন সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে একটি আরক আনা হল, যাতে খেজুর ছিল। তখন তিনি বললেনঃ এটা নাও এবং গিয়ে তা সদকা করে দাও। সে বলিল, আমার চেয়ে বেশি অভাবীকে কি দেব? এখানকার দু উপত্যকার মাঝে আমাদের চেয়ে অভাবী তো কেউ নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এটা নিয়ে যাও এবং তোমার পরিবারকে খাওয়াও।(আঃপ্রঃ- ৬২৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৪)
৮৪/৫. অধ্যায়ঃ মদীনার সা ও নাবী (সাঃআঃ)-এর মুদ্দ এবং এর বরকত। আর মদীনাবাসী এত্থেকে যুগ যুগ ধরে ওয়ারিশসূত্রে যা লাভ করিয়াছেন
৬৭১২
সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে সা ছিল তোমাদের এখনকার মুদ্দের এক মুদ্দ ও এক মুদ্দের তৃতীয়াংশ পরিমাণ। অতঃপর উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর যুগে তার পরিমাণ বর্দ্ধিত করা হয়েছে।(আঃপ্রঃ- ৬২৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৫)
৬৭১৩
নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাদি.) রমযানের ফিতরা আদায় করিতেন নাবী (সাঃআঃ)-এর মুদ্দ তথা প্রথম মুদ্দ-এর দ্বারা। আর কসমের কাফ্ফারাতেও তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর মুদ্দ ব্যবহার করিতেন। আবু কুতাইবা বলেন, মালিক (রাদি.) আমাদেরকে বলেছেন যে, আমাদের মুদ্দ তোমাদের মুদ্দের চেয়ে বড়। আর আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর মুদ্দেই ফযীলত দেখিতে পাই। রাবী বলেন, আমাকে মালিক (রাদি.) বলেছেনঃ তোমাদের কাছে কোন শাসক এসে যদি নাবী (সাঃআঃ)-এর মুদ্দ থেকে তোমাদের মুদ্দকে ছোট করে দেন, তাহলে তোমরা কিসের মাধ্যমে (ওজন করে) মানুষদেরকে দিতে? আমি বললাম, নাবী (সাঃআঃ)-এর মুদ্দ দিয়েই দিতাম। তিনি বলিলেন, তোমরা কি দেখছ না যে, সাম্প্রতিককালে লেনদেনের বিষয়টি নাবী (সাঃআঃ)-এর মুদ্দের দিকে ফিরে যাচ্ছে।(আঃপ্রঃ- ৬২৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৬)
৬৭১৪
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দুআ করেছেনঃ হে আল্লাহ! তুমি তাদের পরিমাপে সা-এ এবং মুদ্দে বরকত দান কর। (আঃপ্রঃ- ৬২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৭)
৮৪/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অথবা গোলাম আযাদ করা-(সুরা আল-মায়িদা ৫/৮৯)। এবং কোন্ প্রকারে গোলাম আযাদ করা উত্তম।
৬৭১৫
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ যে লোক একটি মুসলিম গোলাম আযাদ করিবে আল্লাহ সে গোলামের প্রত্যেকটি অঙ্গের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন হইতে তার প্রত্যেকটি অঙ্গকে মুক্ত করবেন। এমন কি গোলামের গুপ্তাঙ্গের বিনিময়ে তার গুপ্তাঙ্গকেও। [৮৫](আঃপ্রঃ- ৬২৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৮)
৮৪/৭. অধ্যায়ঃ কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে মুদাব্বার, উম্মু ওয়ালাদ, মুকাতাব এবং যিনার সন্তান আযাদ করা। এবং তাউস বলেছেন, (কাফফারায়) উম্মু ওয়ালাদ এবং মুদাব্বার আযাদ করা যাবে।
৬৭১৬
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনসার গোত্রের এক লোক তার গোলামকে মুদাব্বির বানালো (মনিবের মৃত্যু হলে গোলাম মুক্ত হয়ে যাবে)। ঐ গোলাম ছাড়া তার আর কোন মাল ছিল না। খবরটি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে পৌঁছল। তিনি বললেনঃ গোলামটিকে আমার নিকট হইতে কে কিনে নেবে? নুআয়ম ইবনু নাহহা (রাদি.) তাকে আটশ দিরহামের বিনিময়ে কিনে নিল। রাবী আমর (রাদি.) বলেন, আমি জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, গোলামটি ছিল কিবতী আর (আযাদ করার) প্রথম বর্ষেই সে মারা গিয়েছিল।(আঃপ্রঃ- ৬২৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৯)
৮৪/৮. অধ্যায়ঃ যখন কেউ এমন গোলাম আযাদ করে যার উপর তার ও অন্যের মালিকানা আছে অথবা কাফফারার ক্ষেত্রে গোলাম আযাদ করলে উক্ত গোলামের পরিত্যক্ত সম্পদ কে পাবে?
৬৭১৭
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বারীরা নামক বাঁদীকে কিনতে চাইলে তার মালিকগণ শর্ত আরোপ করিল যে এর পরিত্যক্ত সম্পদের মালিক তারাই হইবে। আয়েশা (রাদি.) বিষয়টি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তুমি তাকে কিনে নাও। কেননা আযাদকৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের মালিকানা ঐ ব্যক্তির জন্য যে তাকে আযাদ করে।(আঃপ্রঃ- ৬২৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬০)
৮৪/৯. অধ্যায়ঃ কসমের ভিতর ইনশাআল্লাহ বলা।
৬৭১৮
আবু মূসা-আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার কতক আশআরী লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে একটি বাহন চাওয়ার জন্য এলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে বাহন দিতে পারব না। আমার কাছে কিছু নেই যা বাহন হিসাবে তোমাদেরকে দিতে পারি। অতঃপর আল্লাহ যতক্ষণ চাইলেন আমরা অবস্থান করলাম। এমন সময় তাহাঁর কাছে কিছু উট আনা হল। তখন তিনি আমাদেরকে তিনটি উট দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আমরা যখন রওনা দিলাম, তখন আমরা বলাবলি করলাম যে, আল্লাহ বরকত দেবেন না। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য যখন এলাম তখন তিনি আমাদেরকে বাহন দেবেন না বলে শপথ করিলেন। তারপরেও আমাদেরকে বাহন দিলেন। আবু মূসা বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আসলাম এবং বিষয়টি তাহাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাদেরকে বাহন দেইনি; বরং আল্লাহ দিয়েছেন। আল্লাহর শপথ! ইনশাআল্লাহ আমি যখন কোন ব্যাপারে শপথ করি আর তার উল্টোটির মাঝে কল্যাণ দেখিতে পাই তখন কসমের কাফ্ফারা আদায় করি। আর যেটি কল্যাণকর সেটিই করি। (আঃপ্রঃ- ৬২৫১ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬১)
৬৭১৯
হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি আমার কসমের কাফ্ফারা আদায় করি আর যেটি কল্যাণকর সেটি করি। অথবা বলেছেনঃ যেটি কল্যাণকর সেটি করি এবং আর (কসমের) কাফ্ফারা আদায় করি। (আঃপ্রঃ- ৬২৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬২)
৬৭২০
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সুলাইমান (আঃ) একবার বলেছিলেন যে, অবশ্যই আজ রাতে আমি নব্বইজন স্ত্রীর সাথে মিলিত হব। তারা প্রত্যেকেই পুত্র সন্তান দিবে যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করিবে। তখন তার সাথী (রাবী সুফিয়ান সাথী দ্বারা ফেরেশতা বুঝিয়েছেন) তাকে বলিল, আপনি ইনশাআল্লাহ বলুন। কিন্তু তিনি তা ভুলে গেলেন এবং স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হলেন। কিন্ত একজন ছাড়া অন্য কোন স্ত্রীর কোন সন্তান হল না; আর সেটাও ছিল অপূর্ণাঙ্গ। আবু হুরাইরা (রাদি.) এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তিনি কসমের মাঝে ইনশা আল্লাহ বললে তাহাঁর কসমও ভঙ্গ হত না, আর উদ্দেশ্যও পূর্ণ হত। [৮৬] একবার আবু হুরাইরা (রাদি.) এরূপ বর্ণনা করিলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তিনি যদি ইস্তিসনা করিতেন (অর্থাৎ ইনশা আল্লাহ বলিতেন)। আবু যিনাদ আরাজের সূত্রে আবু হুরাইরা (রাদি.) বর্ণিত হাদীসের মত বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬২৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬৩)
[৮৬] আল্লাহর সাহায্য ও অনুমোদন ছাড়া বান্দার কোন কাজ ফলপ্রসূ হয় না।
৮৪/১০. অধ্যায়ঃ কসম ভঙ্গ করার পূর্বে এবং পরে কাফফারা আদায় করা। [৮৭]
[৮৭] শপথ ভঙ্গের পূর্বে ও পরে কাফফারা আদায় সম্পর্কে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। কাফফারা আদায়ের তিনটি অবস্থা (১) শপথের পূর্বে কাফফারা দিলে ইমামদের সর্বসম্মতিক্রমে তা আদায় হইবে না। (২) শপথ করে শপথ ভঙ্গের পরে কাফফারা আদায় করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা আদায় হইবে। (৩) শপথের পরে এবং তা ভঙ্গের পূর্বে কাফ্ফারা আদায় নিয়ে ইমামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে; (ক) জামহুর উলামাদের মত হল, কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে। (খ) আহলুর রায়ের (ইমাম আবু হানীফা) নিকট আদায় হইবে না। ইমাম শাফেয়ীর নিকট সিয়াম পালন ব্যতীত অন্য কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে। তবে মতানৈক্য থাকলেও জামহুরের মতই হাদীসের অনুকূলে। (ফাতহুল বারী)
৬৭২১
যাহদাম জারমী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একবার আবু মূসা আশআরী (রাদি.)-এর নিকট ছিলাম। আমাদের এবং জার্ম সম্প্রদায়ের মাঝে ভ্রাতৃভাব ও সুসম্পর্ক বজায় ছিল। রাবী বলেন, তার জন্য খানা হাজির করা হল, আর তাতে ছিল মুরগীর গোশ্ত। তাদের দলের মাঝে বানী তাইমিল্লাহ সম্প্রদায়ের এক লোক ছিল যার গায়ের রং ছিল লাল যেন দেখিতে গোলাম। রাবী বলেন, লোকটি খানার কাছেও গেল না। আবু মূসা আশআরী তাকে বলিলেন, কাছে এসো (খানা খাও) কেননা, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে এর গোশ্ত খেতে দেখেছি। লোকটি বলিল, আমি একে (মুরগীকে) কিছু খেতে দেখেছি; তাই আমি এটাকে ঘৃণা করি। আর আমি হলফ করেছি যে, আমি এটি কক্ষনো খাব না। আবু মূসা (রাদি.) বলেন, কাছে এসো; আমি তোমাকে এ সম্পর্কে জানাচ্ছি। একবার আমরা আশআরী গো্ত্রের একটি দলের সাথে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য এলাম। তখন তিনি যাকাতের উট বন্টন করছিলেন। আইয়্যুব বলেন, আমার মনে হয় তিনি তখন রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে বাহন দিব না। আমার কাছে কোন বাহন নেই। রাবী বলেন, তখন আমরা চলে গেলাম। এমন সময় তাহাঁর নিকট যুদ্ধে প্রাপ্ত কয়েকটি উট আনা হল। তিনি বললেনঃ ঐ আশআরী লোকগুলো কোথায়? ঐ আশআরী লোকগুলো কোথায়? তখন আমরা ফিরে এলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পাঁচটি মোটা তাজা সুন্দর উট আমাদেরকে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমরা উটগুলো নিয়ে রওনা হলাম। তখন আমি আমার সাথীদের বললাম, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিলাম। আর তিনি আমাদেরকে বাহন দিবেন না বলে কসম করেছিলেন। কিন্ত তারপর আমাদের কাছে লোক পাঠালেন এবং আমাদেরকে বাহন দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর কসম ভূলে গেছেন। আল্লাহর কসম! আমরা যদি রাসুলুল্লাহকে (সাঃআঃ) তাহাঁর কসম সম্পর্কে গাফেল রাখি তাহলে তো আমরা কখনও সফলকাম হব না। চল, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে ফিরে যাই এবং তাহাঁর কসমের কথা স্মরণ করিয়ে দেই। অতঃপর আমরা ফিরে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার কাছে বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিলাম, আপনি আমাদেরকে বাহন দিবেন না বলে কসম করেছিলেন। কিন্তু পরে আবার বাহন দিলেন। এতে আমরা ধারণা করলাম বা বুঝতে পারলাম, আপনি আপনার কসমের কথা ভুলে গেছেন। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা চলে যাও। আল্লাহই তো তোমাদেরকে বাহন দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি যখন আল্লাহর ইচ্ছায় কোন ব্যাপারে কসম করি আর অন্যটির ভিতর কল্যাণ দেখিতে পাই তখন যেটার মাঝে কল্যাণ আছে সেটা করি এবং কসমের কাফ্ফারা আদায় করে দেই। হাম্মাদ ইবনু যায়দ, আইউব, আবু কিলাবা এবং কাসিম ইবনু আসিম কুলায়বী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এ হাদীসে ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীমের অনুসরণ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬২৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬৪)
কুতায়বা সূত্রে যাহদাম (রাদি.) থেকে এ রকমই বর্ণিত আছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬৫)
আবু মামার সূত্রে যাহদাম (রাদি.) থেকেও এরকমই বর্ণিত আছে।(ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬৬)
[*] শপথ ভঙ্গের পূর্বে ও পরে কাফফারা আদায় সম্পর্কে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। কাফফারা আদায়ের তিনটি অবস্থা (১) শপথের পূর্বে কাফফারা দিলে ইমামদের সর্বসম্মতিক্রমে তা আদায় হইবে না। (২) শপথ করে শপথ ভঙ্গের পরে কাফফারা আদায় করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা আদায় হইবে। (৩) শপথের পরে এবং তা ভঙ্গের পূর্বে কাফ্ফারা আদায় নিয়ে ইমামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে : (ক) জামহুর উলামাদের মত হল, কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে। (খ) আহলুর রায়ের (ইমাম আবু হানীফা) নিকট আদায় হইবে না। (সাঃ) ইমাম শাফেয়ীর নিকট সিয়াম পালন ব্যতীত অন্য কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে। তবে মতানৈক্য থাকলেও জামহুরের মতই হাদীসের অনুকূলে। (ফাতহুল বারী)
৬৭২২
আবদুর রাহমান ইবনু সামুরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তুমি নেতৃত্ব চেও না। কেননা, চাওয়া ছাড়া যদি তোমাকে তা দেয়া হয় তাহলে তোমাকে তাতে সাহায্য করা হইবে। আর যদি চাওয়ার পর তা তোমাকে দেয়া হয়, তবে তা তোমার দায়িত্বেই ছেড়ে দেয়া হইবে (অর্থাৎ এর ভাল মন্দের দায়িত্ব তোমারই থাকবে)। তুমি যখন কোন বিষয়ে কসম কর আর অন্যটির মাঝে কল্যাণ দেখিতে পাও, তখন যেটার মাঝে কল্যাণ সেটাই কর। আর তোমার কসমের কাফ্ফারা আদায় করে দাও। (৬৬২২)
আশহাল ইবনু হাতিম, ইবনু আউন থেকে এবং উস্মান ইবনু আমার-এর অনুসরণ করিয়াছেন এবং ইউনুস, সিমাক ইবনু আতিয়্যা, সিমাক ইবনু হারব, হুমায়দ, ক্বাতাদাহ, মানসুর, হিশাম ও রাবী উক্ত বর্ণনায় ইবনু আউন-এর অনুসরণ করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬২৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬৭)
Leave a Reply