শত্রু হত্যা , কয়েদীকে বেধেঁ রাখা, মালের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া

শত্রু হত্যা , কয়েদীকে বেধেঁ রাখা, মালের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া

শত্রু হত্যা , কয়েদীকে বেধেঁ রাখা, মালের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ১৫, অনুচ্ছেদঃ ১২৩-১৩৬=১৪টি

অনুচ্ছেদ-১২৩ঃ কেউ তার পশু গনীমতের অর্ধেক বা অংশবিশেষ দেয়ার শর্তে ভাড়া দিলে
অনুচ্ছেদ—১২৪ঃ কয়েদীকে শক্ত করে বেধেঁ রাখা
অনুচ্ছেদ-১২৫ঃ বন্দীদেকে মারধর ও হুমকি দিয়ে তথ্য উদ্ধার করা
অনুচ্ছেদ–১২৬ঃ বন্দীকে ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করা উচিত নয়
অনুচ্ছেদ–১২৭ঃ ইসলামের দাওয়াত না দিয়ে যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করা
অনুচ্ছেদ–১২৮ঃ বন্দীকে হাত পা বেধেঁ হত্যা করা
অনুচ্ছেদ–১২৯ঃ কয়েদীকে বেধেঁ তীর নিক্ষেপে হত্যা করা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-১৩০ঃ মুক্তিপণ না নিয়ে বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ দেখানো
অনুচ্ছেদ–১৩১ঃ মালের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া
অনুচ্ছেদ–১৩২ঃ যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর দুশমনের এলাকায় নেতার অবস্হান নেয়া
অনুচ্ছেদ—১৩৩ঃ বন্দীদের পরস্পর পৃথক করা
অনুচ্ছেদ-১৩৪ঃ প্রাপ্তবয়স্ক বন্দীদের পৃথক করা
অনুচ্ছেদ-১৩৫ঃ যদি কোনো মুসলিমের সম্পদ শত্রুবাহিনীর হস্তগত হওয়ার পর পুনরায় মালিক তা গনীমাত হিসাবে ফিরে পায়
অনুচ্ছেদ-১৩৬ঃ যদি মুশরিকদের কৃতদাস পালিয়ে এসে মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে ইসলাম কবুল করে

অনুচ্ছেদ-১২৩ঃ কেউ তার পশু গনীমতের অর্ধেক বা অংশবিশেষ দেয়ার শর্তে ভাড়া দিলে

২৬৭৬. ওয়াসিলাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাবূকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ঘোষণা দিলেন। ইতোমধ্যে আমি আমার পরিবারের সঙ্গে একত্রে ফিরে আসি। এরই মধ্যে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীদের প্রথম দলটি রওয়ানা হয়ে গেছে। আমি মাদীনাহ্‌র অলিগলিতে ডেকে ডেকে বলিলাম, এমন কেউ আছে কি একজনকে বাহন দিবে, তার জন্য তার গনিমাতের অংশ থাকিবে। এক প্রবীণ আনসারী ডেকে বলিলেন, তার অংশ আমি নিতে চাই। সে আমাদের বাহনের পিছনে চড়বে এবং আমাদের সাথেই খাওয়া-দাওয়া করিবে। আমি বলিলাম, হাঁ, ঠিক আছে। প্রবীণ লোকটি বলেন, তাহলে এসো এবং মহান আল্লাহ্‌র আশু বরকতের উপর ভরসা করে যাত্রা করো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আমার উত্তম সাথীর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে গনিমাত দান করিলেন। আমার ভাগে কিছু উট পড়লো। আমি এগুলো দ্রুত হাকিঁয়ে আমার সেই উত্তম বন্ধুর কাছে নিয়ে আসি। প্রবীণ ব্যক্তি বেরিয়ে এসে তার উটের পালানের উপর বসলেন, তারপর বলিলেন, এগুলোকে আমার দিকে পিঠ করে হাঁকাও। তিনি পুনরায় বলিলেন, এগুলো আমার দিকে মুখ উত্তম মনে হয়। তিনি বলিলেন, এগুলো আপনার সেই মাল যার চুক্তি আমি আপনার সাথে করেছি। তিনি বলিলেন, হে ভাতিজা! তুমি তোমার উটগুলোকে নিয়ে যাও। গনিমাতের অংশ নেয়ার ইচ্ছা আমার নেই।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ—১২৪ঃ কয়েদীকে শক্ত করে বেধেঁ রাখা

২৬৭৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছিঃ আমাদের রব্ব মহান আল্লাহ ঐ লোকদের দেখে বিস্মিত হইবেন, যাদেরকে শৃঙ্খলিত অবস্হায় জান্নাতে প্রবেশ করানো হইবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬৭৮. জুনদুব ইবনি মাকীস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবদুল্লাহ ইবনি গালিব আল-লাইসীকে [রাদি.] একটি অভিযানে পাঠালেন। তাহাদের সাথে আমিও ছিলাম। নাবী [সাঃআঃ] তাহাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, কাদীদের বনূ মালু্হ গোত্রকে কয়েক দিক থেকে আক্রমন করিবে। আমরা রওয়ানা হলাম এবং কাদীদ এলাকায় পৌছে সেখানে আল-আরিস ইবনিল বারসায়া আল–লাইসীর সাক্ষাৎ পেলাম। আমরা তাহাকে গ্রেফতার করলে সে বললো, আমি ইসলাম কবুলের জন্য রাসূললাল্লাহ [সাঃআঃ] নিকট যাওয়ার উদ্দেশ্য বেড়িয়েছি। আমরা বলিলাম, তুমি মুসলিম হলে তোমাকে একদিন ও এক রাত বেধেঁ রাখাতে তোমার কোনো ক্ষতি হইবে না। আর যদি অন্য কিছু হও তাওলে আমরা তোমাকে শক্ত করে বাধঁবো। অতঃপর আমরা তাহাকে শক্ত করে বেধেঁ রাখলাম।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৬৭৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নাজদ এলাকায় অশ্বারোহী কাফেলা পাঠালেন। তারা বনী হানিফা্হ গোত্রের সুমামাহ ইবনি ইসাল নামক এক ব্যাক্তিকে ধরে নিয়ে এলো। সে ইয়ামামাবাসীদের নেতা ছিলো। লোকটিকে মাসজিদে নাববীর একটি খুটিঁতে বেধেঁ রাখা হলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার কাছে এসে বলিলেনঃহে সুমামাহ! তোমার নিকট কি আছে? সে বললো, হে মুহাম্মাদ! আমার কাছে কল্যান আছে। আপনি আমাকে হত্যা করলে এমন এক ব্যাক্তিকে হত্যা করিলেন যার রক্তের প্রতিশোধ নেয়া হইবে। আর আপনি যদি অনুগ্রহ করেন, তাহলে একজন সন্মানি লোককে অনুগ্রহ করিলেন। আপনি সম্পদের আশা করলে যত ইচ্ছে চাইতে পারেন, দেয়া হইবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চলে গেলেন। পরবর্তী সকাল বেলায় তিনি জিজ্ঞেস করিলেনঃ এ সুমামাহ! তুমি তোমার সাথে কেমন আচরনের প্রত্যাশা করো? সে আগের মতই জবাব দিলো। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চলে গেলেন। তৃতীয় দিনের সকাল বেলায় সে একই জবাব দিলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সুমা্মাহকে ছেড়ে দাও। সে মাসজিদের নিকটস্হ খেজুর বাগানে ঢুকে [কুপের পানিতে] গোসল করে মাসজিদে এসে বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি ,আল্লাহ ছারা কনো ইলা্হ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল। বর্ণনাকারী ঈসা বলেন, লাইস [রাদি.] আমাদের জানিয়েছেন, সুমামা্হ বললো, আপনি আমাকে হত্যা করলে একজন অপরাধীকেই হত্যা করিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬৮০. ইয়াহইয়া ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি সাদ ইবনি যুরারাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [ইয়াহইয়া] বলেন, যখন বদরের যুদ্ধের সময় বন্দীদের আনা হয় তখন সাওদা্হ বিনতু যামআহ [রাদি.] আফরা পরিবারের নিকট আফরার ছেলে আওফ ও মুআব্বিজের পাশে উটশালায় ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এটি পর্দার বিধানের পুর্বের ঘটনা। বর্ণনাকারী বলেন, সাওদা্হ [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি তাহাদের কাছে ছিলাম। আমি ফিরে আসলে বলা হলো, এরা সবাই বন্দী। এদেরকে আনা হয়েছে। আমি নিজের ঘরে এলাম। তখন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার ঘরেই ছিলেন। আমাদের ঘরের এক কোনে আবু ইয়াযীদ সুহাইল ইবনি আমরকে দেখিতে পেলাম। তার দুই হাত রশি দিয়ে ঘাড়ের সাথে বাধাঁ। অতঃপর বর্ণনাকারী অবশিষ্ট হাদিস বর্ণনা করেন। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আওফ ইবনি আফরা্হ ও মুআব্বিজ ইবনি আফরা্হ [রাদি.] বদর যুদ্ধে আবু জাহল ইবনি হিশামকে হত্যা করেন। তারা তার বিরুদ্ধে লড়েছেন, আবু জাহল কে তারা চিনতেন না। তারাও বদর যুদ্ধে নিহত হোন।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২৫ঃ বন্দীদেকে মারধর ও হুমকি দিয়ে তথ্য উদ্ধার করা

২৬৮১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবীদের যুদ্ধে অংশ গ্রহনের আ্হবান জানালেন। তারা বদর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। তার হাজ্জাদ গোত্রের এক কালো কৃতদাস কে কুরাইশদের পানি বহনকারী উটের সংঙ্গে পেয়ে গেলেন। সাহাবায়ী কিরাম তাহাকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে লাগলেন। আবু সুফিআন কোথায় বলো? সে বললো, আল্লাহর শপথ! তার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। তবে কুরাইশ বাহিনী আসছে, সঙ্গে আবু জাহল, উতবাহ ও শাইবাহ ইবনি রবীআ্হ এবং উমাইয়াহ ইবনি খালাফ রয়েছে। সে একথা জানালে সাহাবীগণ তাহাকে মারধর করিতে লাগলেন। সে চিৎকার করে বললো, ছাড়ো ছাড়ো! আমি বলছি। তারা তাহাকে ছেরে দিলে সে বললো, আল্লাহর শপথ! আবু সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। তবে এই কোরাইশ বাহিনী আসছে। তখন নাবী [সাঃআঃ] সলাতরত ছিলেন। তিনি কথাগুলা শুনলেন। সলাত শেষ করে তিনি বলেনঃ ঐ সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রান। সে যখন তোমাদের সত্য কথা বলেছে, তোমরা তাহাকে প্রহার করেছো, আর যখন মিথ্যা বলেছে তখন ছেরে দিয়েছো। কোরাইশ বাহিনী আবু সুফিয়ানের [কাফেলা] রক্ষা করিতে এসেছে। আনাস [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃএটা আগামীকাল অমুকের নিহত হওয়ার স্হান, এই বলে তিনি যমিনের উপর হাত রাখলেন। এটা আগামীকাল অমুকের নিহত হওয়ার স্হান, এই বলে তিনি নির্দিষ্ট স্হান এর উপর হাত রাখলেন। আনাস [রাদি.] বলেন, সে সত্তর শপথ যার হাতে প্রান, কাফিরদের কেউই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাত রাখার নির্দিষ্ট স্হান অতিক্রম করেনি [তারা ওই নির্দিষ্ট স্হানে নিহত হয়] অতঃপর রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নির্দেশ মোতাবেক ওদের লাশের পা ধরে টেনে –হেচড়েঁ নিয়ে গিয়ে বদরের একটি অন্ধকার কুপে নিঃক্ষেপ করা হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–১২৬ঃ বন্দীকে ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করা উচিত নয়

২৬৮২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জাহিলী যুগে যদি কোনো মহিলার সন্তান বেচেঁ না থাকতো তাহলে সে এ মর্মে মানত করতো যে, তার সন্তান বাচলেঁ তাহাকে ইয়াহুদী ধর্মে দীক্ষিত করাবে। অতঃপর যখন ইয়াহুদী গোত্র বনী নাযীরকে উচ্ছেদ করা হয়, তখন তাহাদের মধ্যে আনসারদের কতিপয় ঐরুপ সন্তান ছিলো। আনসারগন বলিলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের [ইয়াহুদীদের সাথে] ছেড়ে দিতে পারবো না। তখন মহান আল্লাহর আয়াত অবতীর্ন করিলেন, ”দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। হিদিয়াতের নির্ভূল পথকে ভ্রান্ত পথ হইতে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করা হয়েছে।” [সুরা্হ আল-বাক্বারা্হ, আয়াত ২৫৬]

আবু দাউদ বলেন, যেসব মহিলাদের সন্তান বেচেঁ থাকে না তাহাদেরকে মিক্বলাত বলা হয়। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–১২৭ঃ ইসলামের দাওয়াত না দিয়ে যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করা

২৬৮৩. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাক্কাহ বিজয়ের দিন চারজন পুরুষ ও দুজন মহিলা ছারা অন্য সবাইকে নিরাপত্তার [ক্ষমার] ঘোষনা দিলেন। তিনি তাহাদের নামও উল্লেখ করিলেন। তন্মধ্যে ইবনি আবু সারহও ছিলো। অতঃপর বর্ণনাকারী হাদিসের বাকি অংশ বর্ণনা করেন। সাদ [রাদি.] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি আবু সারহ উসমান ইবনি আফফানের [রাদি.] নিকট আত্নগোপন করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন জনসাধারনকে বায়আত গ্রহনের জন্য আহবান জানালে উসমান [রাদি.] তাহাকে নিয়ে এসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে দাড়ঁ করিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! আবদুল্লাহর বায়আত নিন। তিনি মাথা তুলে তার দিকে পর পর তিনবার তাকালেন, এবং প্রতিবারই অসন্তোষ প্রকাশ করিলেন। তিনবারের পর তিনি আবদুল্লাহর বায়আত গ্রহন করিলেন, অতঃপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কি কোন বুদ্ধিনাম লোক ছিলো না, যখন সে আমাকে দেখলো যে আমি বায়আত নিচ্ছি না, তখন সে তাহাকে কেনো হত্যা করলো না? সাহাবীগণ বলিলেন, এ আল্লাহর রাসূল! আপনার মনের ইচ্ছা আমরা উপলব্ধি করিতে পারনি। আপনি আমাদেরকে চোখ দিয়ে ইশারা করিলেন না কেনো! তিনি বলেনঃ কোনো নাবীর জন্য চোখের খেয়ানাতকারী হওয়া শোভা পায় না। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি আবু সারহ হলো উসমানের [রাদি.] দুধভাই এবং ওয়ালীদ ইবনি উক্ববাহ তার বৈপিত্রেয় ভাই। উসমানের [রাদি.] খিলাফাতের সময় ওয়ালীদ মদ পান করলে তিনি তাহাকে শাস্তি দেন।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬৮৪. সাঈদ ইবনি ইয়ারবূ আল-মাখযূমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাক্কাহ বিজয়ের দিন ঘোষনা করেনঃ চার ব্যাক্তির জন্য হারাম শরীফ অথবা এর বাইরে কোথাও নিরাপত্তার অঙ্গীকার নাই। তিনি তাহাদের নামও বলেন দিলেন। তিনি মাক্বীসের দুই গায়িকা ক্রীতদাসীর নামও উল্লেখ করেন। এদের একজনকে হত্যা দেয়া এবং অপরজন পলায়ন করে। পরবর্তীতে সে ইসলাম গ্রহন করে। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি ইবনিল আলার থেকে এর সনদ উত্তমরুপে বুঝতে পারিনি।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৬৮৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লৌহ শিরস্ত্রান পরিহিত অবস্হায় মাক্কাহইতে প্রবেশ করেন। তিনি যখন শিরস্ত্রান খুলেন, তখন এক ব্যাক্তি এসে বললো, ইবনি খাতাল কাবার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে। তিনি বলেনঃ তোমরা তাহাকে হত্যা করো। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি খাতালের নাম আবদুল্লাহ। আবু বারযাহ আল-আসলামী [রাদি.] তাহাকে হত্যা করেন।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–১২৮ঃ বন্দীকে হাত পা বেধেঁ হত্যা করা

২৬৮৬. ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, দা্হহাক ইবনি ক্বায়িস উমামাহ [রাদি.] মাসরুক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কে কর্মকর্তা নিয়োগ করার ইচ্ছা করিলেন। উমারা্হ ইবনি উক্ববাহ তাহাকে বলিলেন, আপনি কি উসমান [রাদি.] এর হত্যাকারীদের মধ্যে বেচেঁ থাকা একজন কর্মচারী নিয়োগ করবেন? মাসরুক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমাদের মধ্যে নির্ভরযোগ্য হাদিসবক্তা। নাবী [সাঃআঃ] যখন তোমার পিতা [উক্ববা্হ] কে মৃত্যুদন্ড দেয়ার ইচ্ছা করেন, তখন তোমার পিতা বললো, আমার বাচচাদের কি অবস্হা হইবে? তিনি জবাবে বলেনঃ আগুন। মাসরুক বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমার জন্য যা পছন্দ করেছেন, আমিও তোমার জন্য সেটাই পছন্দ করেছি।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ–১২৯ঃ কয়েদীকে বেধেঁ তীর নিক্ষেপে হত্যা করা নিষেধ

২৬৮৭. উবাইদ ইবনি তাগলা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা খালিদ ইবনিল ওয়ালীদের [রাদি.] পুত্র আবদুর রহমানের সাথে এক যুদ্ধে জোগদান করি। শত্রুদের চারজন হ্বষ্টপুস্ট লোককে ধরে আনা হলো। তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিলেন এবং সেই মোতাবেক তাহাদেরকে হাত পা বেধেঁ হত্যা করা হলো। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সাঈদ ছাড়া অন্য সব বর্ণনাকারী হাদিসটি ইবনি ওয়াহব হইতে বর্ণনা করেছেন। “বেধেঁ তীর মেরে হত্যা করা হয়েছে।” এ সংবাদ আবু আইয়ুব আল-আনসারী [রাদি.] নিকট পৌছালে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ কাউকে হাত পা বেধেঁ হত্যা করা নিষেধ। সেই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রান। একটি মুরগীকেও আমি এভাবে বেধেঁ হত্যা করবো না। একথা আবদুর রহমান ইবনি খালিদ ইবনিল ওয়ালীদের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কানে পৌছালে তিনি চারজন গোলামকে আযাদ করে দেন।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩০ঃ মুক্তিপণ না নিয়ে বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ দেখানো

২৬৮৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] ও তাহাঁর সাহাবীদের হত্যার জন্য মাক্কাহর আশি জন মুশরিক ফাজরের সলাতের সময় আত-তানঈম পর্বত থেকে অবতরন করে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে আত্নসমর্পন করিয়ে ধরে ফেলেন। অতঃপর বিনিময় ছাড়াই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে মুক্ত করে দিলেন। মহান আল্লাহ আয়াত অবতীর্ন করিলেনঃ তিনি তো মাক্কাহর উপত্যক্যয় তাহাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাহাদের থেকে বিরত রেখেছিলেন—আয়াতের শেষ পর্যন্ত।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬৮৯. যুবাইর ইবনি মুত্বইম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বদরের যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে বলেনঃ মুত্বইম ইবনি আদী জীবিত থাকলে এবং সে এসব নীচ কয়েদীদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করলে আমি তার কারনে এদেরকে ছেড়ে দিতাম।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–১৩১ঃ মালের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া

২৬৯০. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধর পর নাবী [সাঃআঃ] যুদ্ধবন্দীদের কাছ থেকে মুক্তিপন আদায় করেন।এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আয়াত অবতীর্ন করেনঃ “কোনো নাবীর জন্য শোভনীয় নয়, তার কাছে যুদ্ধবন্দী থাকিবে, যতক্ষন সে পৃথিবীর বুক থেকে শত্রু-বাহিনীকে পুরোপুরি নির্মূল না করিবে —-তোমরা যা গ্রহন করেছো সেই জন্য তোমাদের উপর মহাশাস্তি আসতো” [সুরা্ আল-আনফালঃ ৬৭-৬৮] অতঃপর আল্লাহ তাহাদের মুসলিমদের জন্য গনীমতের মাল হালাল করে দেন।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

২৬৯১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ] বদরের মুশরিক যুদ্ধবন্দীদের জন্য মুক্তিপণ নির্ধারন করেন চারশো [দিরহাম]।

সহিহঃ চারশো কথাটি বাদে। ইরওরা {১২১৮}। শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬৯২. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মাক্কাহবাসীরা যখন তাহাদের বন্দীদের মুক্তিপনের অর্থ পাঠায় তখন যাইনাব [রাদি.] আবুল আসের মুক্তিপন এবং সাথে তার গলার হার পাঠান। মা খাদীজাহ [রাদি.] আবুল আসের সাথে বিয়েতে হারটি তাহাকে উপহার দিয়েছিলেন। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হারটি দেখে খাদিজা্র কথা মনে পরে যায়। তিনি আবেগাপুত হয়ে সাহাবীদের বলিলেনঃযদি তোমরা ভালো মনে করো তাহলে যাইনাবের বন্দীকে ছেরে দাও এবং তার প্রেরিত মুক্তিপণও তাহাকে ফেরত দিয়ে দাও। সাহাবীরা বলিলেন, হ্যাঁ ঠিক আছে। আবুল আসের কাছে থেকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে প্রতিশ্রুতি নিলেন যে, সে যাইনাবকে তার কাছে আসার পথ পরিস্কার করে দিবে। তাহাকে নিয়ে আসার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে যায়িদ ইবনি হারিসাহ [রাদি.] এবং একজন আনসারীকে পাঠান। তিনি তাহাদেরকে বলিলেনঃতোমরা ইয়াজিজ উপত্যক্যয় অবস্হান করিবে। যাইনাব তোমাদের সাথে ঐ স্হানে একত্র হলে তোমরা তাহাকে নিয়ে চলে আসবে।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৬৯৩. মারওয়ান ও আল-মিসওয়ার ইবনি মাখরামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

হাওয়াযিন গোত্রের লোক ইসলাম গ্রহন করে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট এসে তারা তাহাদের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তাহাঁর কাছে আবেদন জানালো। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে বলিলেনঃ আমার সাথে এদেরকে দেখছো? আমার নিকট সত্য কথা অধিক পছন্দনীয়। সুতরাং তোমরা বিবেচনা করো তোমরা কি তোমাদের বন্দীদের ফেরত নিবে, নাকি ধন সম্পদ ফিরত নিবে। তারা বললো, আমরা বন্দীদের ছাড়িয়ে নিতে চাই। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উঠে দাঁড়িয়ে আল্লাহর গুনগান করার পর বলেনঃ তোমাদের এই ভাইয়েরা তাওবা্হ করে তোমাদের নিকট এসেছে। আমি তাহাদের বন্দীদের ফেরত দেয়া সঠিক মনে করি। তোমাদের কেও খুশি মনে বন্দীদের ছাড়তে চাইলে সে যেনো বন্দীকে ছেড়ে দেয়। আর যে ব্যক্তি মুক্তিপন চায়, তাহাকে আল্লাহর পক্ষ্য থেকে গনীমতের পাওয়ার সাথে সাথে তা আদায় করে দিবো, সেও যেনো বন্দীদের ছেড়ে দেয়। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা খুশি মনে মুক্তিপণ ব্যতীতই বন্দীদের মুক্তি দিচ্ছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমাদের কে মুক্তিপনের ছাড়া আর কে মুক্তিপনের নিয়ে বন্দীদের মুক্তি দিতে ইচ্ছুক তা আমি আলাদা জানতে পারিনি। কাজেই তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করো। নেতৃবৃন্দেরা এসে তাহাকে জানালেন, প্রত্যেকেই বন্দীদের স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতে সন্মতি দিয়েছে।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬৯৪. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তার পিতা হইতে তার দাদার সূত্রে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তাহাদের নারী ও শিশুদের তাহাদের কাছে ফিরিয়ে দাও। যে ব্যাক্তি নিজ অংশ বিনিময় ছাড়া ফেরত দিতে রাজি নয়, আমরা বিনিময় হিসাবে তাহাকে ছয়টি উট দিবো। যখন গনিমতের মাল আল্লাহর পক্ষ্য থেকে আমাদের হাতে আসবে তখন তা হইতে এটি পরিশোধ করা হইবে। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] একটি উটের কাছে আসলেন। তিনি তার কুঁজ থেকে কিছু পশম নিয়ে বলিলেনঃ হে লোকেরা! এই “ফাই”—এ আমার কোনো অংশ নেই, এমনকি এই পশম পরিমাণও নয়। তিনি এ বলে পশমসহ আঙ্গুল উচুঁ করে দেখালেন। শুধুমাত্র এক-পঞ্চমাংশ ছাড়া। আবার তাও তোমাদের কল্যানের জন্যই ব্যয় করা হইবে। সুতরাং তোমরা সুইঁ সূতাটা পর্যন্ত জমা করো। এক ব্যক্তি এক টুকরা পশমি সূতা হাতে নিয়ে দাড়িয়েঁ বললো, আমি এই সুঁতাটুকু গদির কম্বলের ছেড়াঁ অংশ মেরামত করার জন্য নিয়েছিলেম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আমার এবং আবদুল মোত্তালিব গোত্রের অংশ আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম। লোকটি বললো, আমি দেখলাম এটুকুও গুনা্হর কারণ হচ্ছে, সেজন্য আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। এই বলে সে সূতাটুকু ছুড়ে ফেলে দেয়।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ–১৩২ঃ যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর দুশমনের এলাকায় নেতার অবস্হান নেয়া

২৬৯৫.আবু ত্বালহা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কোনো জাতির বিরুদ্ধে বিজয়ী হইতেন, তখন সেখানে তিন দিন অবস্হান করিতেন। ইবনিল মুসান্নার বর্ণনায় রয়েছে, যখন তিনি কোনো জাতির বিরুদ্ধে বিজয়ী হইতেন, তখন তাহাদের এলাকায় তিন দিন অবস্হান করা তিনি উত্তম মনে করিতেন। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ হাদিসের দোষারোপ করিতেন। কারন এই হাদিসটি সাঈদ ইবনি আরুবার প্রথম দিকের হাদিস নয়। ৪৫ হিজরীতে তার স্মরনশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। এই হাদিসটি তার শেষ বয়সেই বর্ণিত। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তার স্মরনশক্তির এ পরিবর্তনের যুগেই ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার কাছ থেকে হাদিসটি অর্জন করেন।

শত্রু হত্যা – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ—১৩৩ঃ বন্দীদের পরস্পর পৃথক করা

২৬৯৬. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বাঁদী ও তার সন্তানদের পৃথক করেন। নাবী [সাঃআঃ] তাহাকে এভাবে [আলাদাভাবে] বিক্রয় করিতে নিষেধ করে এ বিক্রয় বাতিল করেন। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, বর্ণনাকারী মাইমূন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আলীর [রাদি.] সাক্ষাৎ পাননি। মাইমূন [রাদি.] আল-জামাজিমের যুদ্ধে ৮৩ হিজরীতে নিহত হোন। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন হাররার ঘটনা ঘটে ৬৩ হিজরী সনে এবং ইবনিয যুবাইর [রাদি.] ৭৬ হিজরীতে শহীদ হোন।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৪ঃ প্রাপ্তবয়স্ক বন্দীদের পৃথক করা

২৬৯৭. ইয়াস ইবনি সালামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [সালামাহ] বলেন, আমরা আবু বাকর [রাদি.] এর সঙ্গে অভিযানে বের হওয়ার সময়, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। আমরা ফাযারাহ গোত্রের বিরুদ্ধে হামলা করে তাহাদেরকে তছনছ করে দেই। অতঃপর আমি কিছু লোক দেখিতে পাই। যাদের সাথে শিশু ও নারী ছিলো। আমি একটি তীর ছুড়ঁলে সেটা তাহাদের এবং পাহাড়ের মাঝখানে যেয়ে পরে। এতে তারা দাঁড়িয়ে যায়। আমি তাহাদেরকে ধরে আবু বাকর এর কাছে নিয়ে আসি। তাহাদের মধ্যে ফাযারাহ গোত্রের এক মহিলা ছিলো। সে শুকনা চামড়া পরা ছিলো। তার কন্যাও তার সাথে ছিলো। ঐ কন্যাটি আরবের অন্যতম সুন্দরী। তার কন্যাকে আবু বাকর [রাদি.] আমাকে [গনীমাত হিসাবে] প্রদান করিলেন। আমি মদীনা্হয় ফিরে গেলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার সাথে সাক্ষাৎ করে আমাকে বলিলেনঃ হে সালামাহ! কন্যাটি আমাকে উপহার হিসাবে দিয়ে দাও। আমি বলিলাম, আল্লাহর শপথ! তার সৌন্দর্য আমাকে হতবাক করেছে। আমি তার পোষাক খুলিনি। তিনি [সাঃআঃ] নিশ্চুপ থাকলেন। পরের দিন সকালে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বাজারে আমার সাথে সাক্ষাৎ করিলেন। তিনি আমাকে বলিলেনঃ হে সালামা্হ! তুমি আল্লাহর ওয়াস্তে কন্যাটি আমাকে দিয়ে দাও। আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমি তার পোশাক খুলিনি। সে আপনার জন্যই। কন্যাটি তিনি মাক্কাহবাসীদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। মাক্কাহবাসীদের হাতে কিছু মুসলিম বন্দী ছিলো। তাহাদের মুক্তির জন্য তিনি মেয়েটিকে বিনিময় হিসাবে মাক্কাহয় ফেরত দিয়ে তাহাদেরকে মুক্ত করেন।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৫ঃ যদি কোনো মুসলিমের সম্পদ শত্রুবাহিনীর হস্তগত হওয়ার পর পুনরায় মালিক তা গনীমাত হিসাবে ফিরে পায়

২৬৯৮.ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন ইবনি উমারের একটি গোলাম পালিয়ে শত্রুবাহিনীতে চলে যায়। মুসলিম সেনাবাহিনী যুদ্ধে বিজয়ী হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে ইবনি উমারের নিকট ফেরত দেন। তাহাকে গনিমাত হিসাবে বন্টন করেননি। আবু দাউদ [রাদি.] বলেন, তিনি ছাড়া অন্য বর্ণনাকারী বলিয়াছেন, খালিদ ইবনিল ওয়ালীদ [রাদি.] গোলামটি তাহাকে ফেরত দেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬৯৯. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তার একটি ঘোড়া ছুটে গেলে তা দুশমনরা ধরে নিয়ে যায়। অতঃপর মুসলিমরা বিজয়ী হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে তা পুনরায় তাহাকে ফেরত দেয়া হয়। [অপর বর্ণনায় রয়েছে] ইবনি উমরের একটি গোলাম পালিয়ে রুম এলাকায় চলে যায়। মুসলিমরা রুমীদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হলে নাবী [সাঃআঃ] এর পর খালিক ইবনিল ওয়ালীদ [রাদি.] গোলামটি পুনরায় তাহাকে ফিরিয়ে দেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৬ঃ যদি মুশরিকদের কৃতদাস পালিয়ে এসে মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে ইসলাম কবুল করে

২৭০০. আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার দিন সন্ধি করার পূর্বে মুশরিকদের কিছু গোলাম রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে পালিয়ে এলে তাহাদের মনিবরা তাহাকে চিঠি লিখে বলিল, হে মুহাম্মাদ, আল্লাহর শপথ! এরা তোমার ধর্মের প্রতি আকৃস্ট হয়ে তোমার নিকট আসেনি। তারা তাহাদের গোলামী থেকে পালিয়ে এসেছে। কতিপয় লোক বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! মনিবরা সত্যেই বলেছে, এদেরকে তাহাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। এতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খুবই নারাজ হলেন এবং বলিলেনঃ হে কুরাইশরা! আমি দেখছি তোমরা অন্যায় হইতে বিরত হইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদের বিরুদ্ধে এমন লোক না পাঠান যারা তোমাদের গর্দান উড়িয়ে দেয়। তিনি তাহাদেরকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করে বলেন; এরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহে স্বাধীন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply