লিআন হাদীস – বাদীর বিছানা বা শয্যার বিধান

লিআন হাদীস – বাদীর বিছানা বা শয্যার বিধান

লিআন হাদীস – বাদীর বিছানা বা শয্যার বিধান >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ২৭,তালাক, হাদিস (৩৪৬৬-৩৪৯৯)

১.পরিচ্ছেদঃ লিআন-এর সূচনা
২.পরিচ্ছেদঃ গর্ভাবস্থায় [গর্ভ সম্পর্কে অভিযোগের কারণে] লিআন করা
৩.পরিচ্ছেদঃ স্বামীর পক্ষ থেকে কোন নির্দিষ্ট পুরুষকে জড়িত করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে [যিনার] অপবাদের কারণে লিআন
৪.পরিচ্ছেদঃ লিআনের১ নিয়ম
৫.পরিচ্ছেদঃ ইমামের হে আল্লাহ স্পষ্ট করে দিন বলা
৬.পরিচ্ছেদঃ পঞ্চম বার [শপথের] সময় লিআনকারীদের মুখে হাত রাখার আদেশ
৭.পরিচ্ছেদঃ লিআন করানোর সময় ইমামের স্বামী স্ত্রীকে নসিহত করা
৮.পরিচ্ছেদঃ লিআনকারীদের পৃথক করে দেয়া
৯.পরিচ্ছেদঃ লিআনের পর লিআনকারীদের তওবা করিতে বলা
১০.পরিচ্ছেদঃ লিআনকারীদের একত্র হওয়া
১১.পরিচ্ছেদঃ লিআনের কারণে সন্তানকে পিতা থেকে সম্বন্ধচ্যুত করা এবং তাকে তার মায়ের সাথে যুক্ত করা
১২.পরিচ্ছেদঃ সন্তানের কারণে স্ত্রীর প্রতি কটাক্ষপাত করা ইঙ্গিতে যিনার অপবাদ দেয়া এবং সন্তান অস্বীকারের ইচ্ছা করা
১৩.পরিচ্ছেদঃ সন্তান অস্বীকারকারীকে কঠোর সতর্কবাণী
১৪.পরিচ্ছেদঃ শয্যার মালিক [স্বামী] আস্বীকার না করলে সন্তান শয্যার মালিকেরই হইবে
১৫.পরিচ্ছেদঃ বাদীর বিছানা বা শয্যার বিধান
১৬.পরিচ্ছেদঃ সন্তান নিয়ে বিবাদ হলে লটারীর ব্যবস্থা করা এবং যায়দ ইবনি আরকাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত এ বিষয়ের হাদীসে শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় বিরোধ
১৭.পরিচ্ছেদঃ কিয়াফা১ প্রসংগ
১৮.পরিচ্ছেদঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন মুসলমান হলে এবং সন্তানকে ইখতিয়ার প্রদান প্রসংগ
১৯.পরিচ্ছেদঃ খুলাকারিণীর ইদ্দত
২০.পরিচ্ছেদঃ তালাকপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে ইদ্দত হুকুমে যারা ব্রতি

১.পরিচ্ছেদঃ লিআন-এর সূচনা

৩৪৬৬. আসিম ইবনি আদী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আজলান গোত্রের উওয়াইমির আমার নিকট এসে বলিলেনঃ হে আসিম ! এ বল তো, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য এক ব্যক্তিকে দেখলো, [এখন] যদি সে তাকে হত্যা করে, তোমরা তাকে হত্যা করিবে? অথবা সে কি করিবে? অতএব হে আসিম ! তুমি আমার জন্য রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট জিজ্ঞেস কর। আসিম [রাঃআঃ] এ বিষয়ে নাবী [সাঃ]-কে জিজ্ঞেস করলে, রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বেশি প্রশ্ন অপছন্দ করিলেন এবং তাতে দোষারোপ করিলেন। এরপর উওয়াইমির তার নিকট এসে বলিল। হে আসিম! তুমি কি করেছ? তিনি বলিলেনঃ কি আর করবো, তুমি আমার কাছে কল্যাণ নিয়ে আস নি। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] প্রশ্ন করা অপছন্দ করিয়াছেন। উওয়াইমির [রাঃআঃ] বলিলেনঃ আল্লাহর কসম ! আমি তা অবশ্যই রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট জিজ্ঞাসা করবো। তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে, রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেনঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা তোমার ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে [আয়াত] নাযিল করিয়াছেন। অতএব, তাকে [তোমার স্ত্রীকে] ডেকে আনো। সাহ্ল [রাঃআঃ] বলেনঃ এ সময় আমি লোকদের রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম।উওয়াইমির [রাঃআঃ] তাকে [স্ত্রীকে] সংগে নিয়ে আসলো তারা লিআন করিল এবং উওয়াইমির [কসম করে] বলিতে লাগলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! যদি আমি তাকে রেখে দেই তা হলে তো আমি তার নামে মিথ্যাই বললাম। এ বলে তিনি তাকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর বলার পূর্বেই তাকে পৃথক করে দিলেন [তালাক দিয়ে দিলেন]। এটাই পরে দুই লিআনকারীর নিয়মে পরিণত হল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২.পরিচ্ছেদঃ গর্ভাবস্থায় [গর্ভ সম্পর্কে অভিযোগের কারণে] লিআন করা

৩৪৬৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] উওয়াইমির আজলানী এবং তার স্ত্রীর মধ্যে লিআন করান। এ সময় সে [উওয়াইমির আজলানীর স্ত্রী] গর্ভবতী ছিল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩.পরিচ্ছেদঃ স্বামীর পক্ষ থেকে কোন নির্দিষ্ট পুরুষকে জড়িত করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে [যিনার] অপবাদের কারণে লিআন

৩৪৬৮. আবদুল আলা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

হিশামে [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে, যে তার স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করেছে। তখন হিশাম বর্ণনা করিলেন যে, মুহাম্মদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] যে তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ]-কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি, কেননা আমার বিশ্বাস ছিল যে, এই ব্যাপারে তার জানা আছে। তিনি [আনাস ইবনি মালিক রাঃআঃ] বর্ণনা করিলেনঃ হিলাল ইবনি উমাইয়া শরীক ইবনি সাহমা-র নাম উল্লেখ করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করে আর শরীক ইবনি সাহমা বারা ইবনি মালিক [রাঃআঃ]-এর মায়ের দিক থেকে ভাই ছিলেন। [আনাস ইবনি মালিক রাঃআঃ] বলেন], ঐ ব্যক্তিই প্রথম লিআন করেছিল। রাসুলুল্লাহ্ [সাঃ] তাহাদের উভয়ের মধ্যে লিআন করার আদেশ দেন। পরে বলেনঃ তোমরা দেখিতে থাক। যদি সে সাদা রং লটকান চুল এবং ত্রুটিযুক্ত চোখ বিশিষ্ট সন্তা প্রসব করে, তবে তা হইবে হিলাল ইবনি উমাইয়ার। আর যদি সে হালকা পাতলা পা বিশিষ্ট সুরমা রং এর চোখ, আর কোকড়ান চুল বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তবে ঐ সন্তান হইবে শরীক ইবনি সাহমা-এর। আনাস [রাঃআঃ] বলেন, তাকে অবহিত করা হইয়াছে যে, সে সুরমা বর্ণের চোখ, কোকড়ান চুল এবং হাল্কা পা বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করেছিল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪.পরিচ্ছেদঃ লিআনের১ নিয়ম

৩৪৬৯. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ ইসলামে সর্বপ্রথম লিআন ছিল এরূপ যে, হিলাল ইবনি উমাইয়া [রাঃআঃ] পদ্ধতিতে তার স্ত্রীর ব্যাপারে শরীর ইবনি সামহার বিরুদ্ধে [ব্যভিচারের] অপবাদ দেন এবং নাবী [সাঃ]-এর নিকট এসে এ বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি তাকে বলেনঃ চার জন সাক্ষী আনো, তা না হলে তোমার পিঠে হাদ্দ [শাস্তি] প্রয়োগ করা হইবে। তিনি তাকে কয়েকবার এ কথা বলিলেনঃ তখন হিলাল [রাঃআঃ] বলিলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আল্লাহর শপথ, মহান মহিয়ান আল্লাহ জানেন, আমি সত্যবাদী এবং মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা আপনার উপর [এমন কিছু] অবতীর্ণ করবেন যা আমার পিঠকে চাবুক [শাস্তি] হইতে নিষ্কৃতি দিবে।এভাবে কথা চলছিল, এমন সময় লিআনের আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি যিনার অপবাদ আরোপ করে, অথচ নিজেরা ব্যতীত কোন সাক্ষী নেই। তাহাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য এই হইবে যে, সে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবারে সে বলবেঃ যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহর লানত হোক। আর স্ত্রীর উপর থেকে শাস্তি এভাবে রহিত হইবে যে, সে আল্লাহর নামে শপথ করে চারবার এভাবে সাক্ষ্য দিবে যে, তার স্বামী মিথ্যা বলছে এবং পঞ্চমবারে বলবেঃ তার উপর আল্লাহর গযব, যদি সে [তার স্বামী] সত্যবাদী হয়। এরপর রাসুলুল্লাহ [সাঃ] হিলাল [রাঃআঃ] কে ডাকলেন, সে আল্লাহর নামে চার বার শপথ করে বলিল যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী, আর পঞ্চম বার বলিলঃ যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহর লানত। এরপর স্ত্রীকে ডাকা হলো, সেও আল্লাহর নামে শপথ করে চার বার বলিল, ঐ ব্যক্তি নিশ্চয় মিথ্যাবাদী। বর্ণনকারী বলেন, যখন চতুর্থ বার অথবা পঞ্চম বার সাক্ষ্য দেয়া হচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেনঃ তোমরা এই মহিলাকে বিরত রাখ, কেননা, এ সাক্ষ্য অতি কার্যকর [অর্থাৎ আল্লাহর গযব বৃথা যাবে না]। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন ঐ হতচকিত হল, থমকে গেল আমরা দ্বিধান্বিত হলাম [সে বুঝতে পেরেছে এবং] সে এখন দোষ স্বীকার করিবে। কিন্ত সে বলিলঃ আমি আমার সম্প্রদায়কে চিরকালের জন্য কলংকিত করবো না। এই কথা বলে সে কসম সম্পন্ন করলো। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেন এর প্রতি লক্ষ্য রাখ, যদি সে ফর্সা, কোকড়ান চুল ঘোলাটে চোখের সন্তান প্রসব করে, তবে সে হইবে হিলাল ইবনি উমাইয়ার সন্তান। আর যদি সে বাদামী বর্ণের কোকড়ান চুল বিশিষ্ট মধ্যম গড়নের এবং পাতলা পা বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তবে সে হইবে শরীক ইবনি সাহমার সন্তান। রাবী বলেনঃ সে বাদামী বর্ণের সন্তান প্রসব করলো, যে কোঁকড়ান চুল, মধ্যম গড়ন, পাতলা পা বিশিষ্ট ছিল। সে সন্তান প্রসবের পর রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেনঃ যদি তার সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবের আদেশ পূর্বেই প্রদত্ত না হতো, তা হলে তার সাথে আমার একটি বোঝা পড়া হত [তোমরা দেখিতে আমি তার কি অবস্থা করতাম]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫.পরিচ্ছেদঃ ইমামের হে আল্লাহ স্পষ্ট করে দিন বলা

৩৪৭০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর সামনে পরস্পর লিআন করার ব্যাপারে আলোচনা উত্থাপিত হল। তখন আসিম ইবনি আদী [রাঃআঃ] সে সম্পর্কে কিছু বলিলেন এবং পরে প্রস্থান করিলেন। এরপর তার নিকট তার গোত্রের এক ব্যক্তি এসে অভিযোগ উত্থাপন করিল যে, সে তার স্ত্রীর সাথে এক ব্যক্তিকে পেয়েছে। আসিম ইবনি আদী [রাঃআঃ] এ কথা শুনে বলিলেনঃ আমার বলার জন্যই আমার উপর এই মুসীবত এসেছে। এরপর আসিম ইবনি আদী [রাঃআঃ] তাকে রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর খেদমতে নিয়ে গেলেন এবং তার স্ত্রীকে যে অবস্থায় পেয়েছে তা তাঁকে {রাসুলুল্লাহ [সাঃ]} অবহিত করেন। আর ঐ ব্যক্তি ছিল গৌর বর্ণের, হালকা পাতলা গড়ন এবং সোজা চুল বিশিষ্ট। আর যে ব্যক্তির সাথে তার স্ত্রীকে পেয়েছিল, তার গায়ের রং ছিল বাদামী, পায়ের গোছা এবং শরীর ছিল মাংসল। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেনঃ

اللَّهُمَّ بَيِّنْ

[অর্থাৎ হে আল্লাহ ! প্রকাশ করে দিন]। বর্ণনাকারী বলেনঃ পরে সে [স্ত্রী] সে পুরুষের সাদৃশ্যযুক্ত সন্তান প্রসব করিল যাহার সম্পর্কে তার স্বামী বলেছিল যে, সে তাকে সে তাকে তার [স্ত্রীর] কাছে পেয়েছে। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাহাদের উভয়কে লিআন করার আদেশ দেন। [মজলিসে ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] এই হাদীস বর্ণনা করিলেন], সে মজলিসে এক ব্যক্তি বলিলেনঃ এই স্ত্রী লোকটি কি সেই স্ত্রীলোক, যাহার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলেছিলেনঃ যদি আমি কাউকে সাক্ষ্য প্রমাণ ব্যতিত রজম করতাম, তা হলে এ কে করতাম? ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলেনঃ না, সে মেয়েলোকটি ইসলামে এসে প্রকাশ্যে অপকর্ম [ব্যভিচার] করত, [কিন্তু প্রমাণ বা স্বীকারোক্তি ছিল না]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৭১. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রাসুলুল্লাহা [সাঃ] এর খেদমতে লিআনের অলোচনা হলে আসিম ইবনি আদী [রাঃআঃ] সে সম্পর্কে কিছু বলিলেন এবং প্রস্থান করিলেন। তার গোত্রের এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হলে সে বলিলঃ সে তার স্ত্রীর সাথে এক ব্যক্তিকে পেয়েছে। তিনি তাকে রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট নিয়ে গেলেন। সে যে অবস্থায় তার স্ত্রীকে পেয়েছিল, তা তাঁকে অবহিত করিল। আর সে ব্যক্তি ছিল গৌর বর্ণের, হাল্কা-পাতলা গড়নের এবং সোজা চুল বিশিষ্ট। আর সে যাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল এবং যাকে তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছি, তার গায়ের [রং] ছিল বাদামী এবং পায়ের গোছা ছিল মাংসল, আর তার ছিল অতি কোঁকড়ান [ছোট চুল] চুল। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেনঃ আল্লাহ! আপনি প্রকাশ করে দিন। রাবী বলেনঃ [স্ত্রীলোকটি] ঐ লোকের ন্যায় সন্তান প্রসব করলো, যাহার কথা তার স্বামী বলেছিল যে, তাকে তার [স্ত্রীর] কাছে পেয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাহাদের উভয়ের মধ্যে লিআন করান। [ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] যে মজলিসে এই হাদীস বর্ণনা করিলেন], সে মজলিসের এক ব্যক্তি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] জিজ্ঞাসা করিলেনঃ এই কি সেই মেয়েলোক যাহার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলেছিলেন, যদি আমি কাউকে প্রমাণ ব্যতিত রজম করতাম, তা হলে এই মেয়েলোকটিকে রজম করতাম? ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলেনঃ না, সে হচ্ছে এমন একটি মেয়েলোক যে ইসলামে এসে প্রকাশ্যে অপকর্ম করত। [কিন্তু প্রমাণ বা স্বীকারোক্তি ছিল না]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬.পরিচ্ছেদঃ পঞ্চম বার [শপথের] সময় লিআনকারীদের মুখে হাত রাখার আদেশ

৩৪৭২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃ] যখন দুই লিআনকারী লিআন করার আদেশ দেন, তখন এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন যে, যখন সে পঞ্চম বার সাক্ষ্য দিতে থাকিবে, তখন তার মুখের উপর হাত রাখবে। কেননা, তা [পঞ্চম বারের সাক্ষ্য আল্লাহ তাআলার শাস্তিকে] অবধারিত করে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭.পরিচ্ছেদঃ লিআন করানোর সময় ইমামের স্বামী স্ত্রীকে নসিহত করা

৩৪৭৩. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

ঈমাম যুবায়র [রাঃআঃ]-এর শাসনামলে আমাকে লিআনকারীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হল যে, লিআনের পরে ঐ দুইজনকে কি পৃথক করে দেয়া হইবে? ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি কি উত্তর দেব কিছুই বুঝতে পারলাম না। এরপর আমি উঠে ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর বাড়িতে গেলাম এবং আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবু আবদুর রহমান! [লিআনকরার পর] কি দুই লিআনকারী [স্বামী স্ত্রী] কে পৃথক করে দেয়া হইবে। ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলিলেনঃ হ্যাঁ সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি বলিলেনঃ সর্বপ্রথম এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন অমুকের পুত্র অমুক। [ইবনি উমার [রাঃআঃ] তার নাম উল্লেখ করেন নি]। সে বলেছিলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ ! যদি আমাদের কোন ব্যক্তি [কোন ব্যক্তিকে] তার স্ত্রীর সাথে অশ্লীল কাজ করিতে দেখে, যদি সে বলে, তবে তো তা বড় সাংঘাতিক কথা। আর যদি না বলে, তবে এমন গুরুতর বিষয়ে চুপ রইল। তিনি তাকে কোন উত্তর দিলেন না। এরপর সে ব্যক্তি আবার রাসুলুল্লাহ [সাঃ] এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেনঃ যে কথা আমি আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি তাতে আক্রান্ত হইয়াছি। তখন আল্লাহ তাআলা সূরা নূরের এ আয়াত নাযিল করেনঃ

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ أَزْوَاجَهُمْ [النور: 6]

وَالْخَامِسَةَ أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ [النور: 9]

অর্থাৎঃ যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, [অথচ নিজেরা ব্যতিত তাহাদের কোন সাক্ষী নেই, তাহাদের সাক্ষ্য এই হইবে যে, সে আল্লাহর নামে চার বার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী …….. প্রতিপক্ষে পঞ্চমবারে সে [স্ত্রী] বলবেঃ তার স্বামী সত্যবাদী হলে, তার উপর [নেমে আসবে] আল্লাহর গযব। [২৪ঃ ৬-৯] পর্যন্ত। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] ঐ ব্যক্তিকে প্রথমে নসীহত করেন এবং উপদেশ প্রদান করেন এবং বলেনঃ পরকালের শাস্তি অপেক্ষা ইহকালের অতি সহজ। সে [ই ব্যক্তি তাহাঁর নসীহত শ্রবণ করে] বলিতে লাগলেনঃ আল্লাহর তাআলার কসম। যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করিয়াছেন, আমি মিথ্যা বলছি না। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি স্ত্রীলোকটিকে বলিলেনঃ নসীহত করিলেন এবং তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। সে [ঐ স্ত্রীলোকটিও] বলিতে লাগলেন আল্লাহ তাআলার শপথ। যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করিয়াছেন এ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী। তিনি [সাঃ] পুরুষকে দিয়ে লিআন কার্যক্রম আরম্ভ করিলেন। সে আল্লাহর নাম নিয়ে শপথ করে চার বার সাক্ষ্য প্রদান করলো যে সে অবশ্যই সত্যবাদী পঞমবারে সে বললোঃ যদি সে মিথ্যা কথা বলে থাকে, তবে তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। তারপর স্ত্রীলোকটিও আল্লাহর নামে চার বার সাক্ষ্য দিল, নিশ্চয় সে বড় মিথ্যাবাদী। পঞ্চম বারে সে বলিলেনঃ যদি সে [পুরুষ লোকটি] সত্যবাদী হয়, তবে তার স্ত্রীর উপর আল্লাহর গযব [পড়বে]। এরপর রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তাহাদের দুই জনকে পৃথক করে দিলেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮.পরিচ্ছেদঃ লিআনকারীদের পৃথক করে দেয়া

৩৪৭৪. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

মুসআব [রাঃআঃ] লিআনকারীদের পৃথক করে দেননি। সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর নিকট তা বর্ণনা করলে তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বনী আজলানের দুই সদস্যের [স্বামী-স্ত্রীর] পৃথক করে দিয়েছিলেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯.পরিচ্ছেদঃ লিআনের পর লিআনকারীদের তওবা করিতে বলা

৩৪৭৫. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলামঃ যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, তাহলে কি হইবে? তিনি বলিলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বনী আজলানের দুই সদস্য [স্বামী-স্ত্রীকে] পৃথক করে দেন এবং বলেনঃ আল্লাহ তাআলার জানা আছে, তোমাদের মধ্যে কোন মিথ্যাবাদী, যদি তোমাদের মধ্যে কোন একজন তওবা করে, তবে ভাল, তিনি দুজনকেই এ কথা তিন বার বলেন। কিন্তু দুজনই তা করিতে আস্বীকার করলে তিনি তাহাদের পৃথক করে দেন। তিনি বলেন লিআনকারী [পুরুষ ব্যক্তিটি রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-কে] বলিলঃ [ঐ স্ত্রীলোকটির নিকট] আমার মাল [আছে, আমি তা পাব কি না]? তিনি বলিলেনঃ যদি তুমি সত্যবাদী হও, তবে তুমি ঐ স্ত্রীর সংগে নির্জনবাস [সহবাস] করেছ, [কাজেই ঐ মাল তুমি পাবে না]। আর যদি মিথ্যা বলে থাক, তাহলে তা তোমার থেকে অনেক দূর [ঐ মাল নেয়া এবং ফেরত পাওয়া মুশকিল]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০.পরিচ্ছেদঃ লিআনকারীদের একত্র হওয়া

৩৪৭৬. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর নিকট লিআনকারীদের বিষয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] লিআনকারী পুরুষ এবং স্ত্রীকে বলেন, তোমাদের হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে। তোমাদের একজন নিশ্চয় মিথ্যাবাদী। আর তোমার তার [স্ত্রীর] উপর কোন অধিকার নেই। সে [পুরুষ লোকটি] বলিলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ ! [তার কাছে] আমার মাল [রয়েছে]। তিনি বলিলেনঃ [তার কাছে এখন] তুমি কিছুই পাবে না, অর্থাৎ যদি তুমি সত্যবাদী হও, তবে তুমি তো তার লজ্জাস্থান ব্যবহার করেছ, এর বিনিময়ে তোমার মাল নিয়েছ, আর যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তা হলে তা তোমার [অধিকার] থেকে বহু দূরবর্তী।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১.পরিচ্ছেদঃ লিআনের কারণে সন্তানকে পিতা থেকে সম্বন্ধচ্যুত করা এবং তাকে তার মায়ের সাথে যুক্ত করা

৩৪৭৭. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] পুরুষ এবং তার স্ত্রী মধ্যে লিআন করার আদেশ দেন এবং তাহাদের পৃথক করে দেন আর সন্তানকে তার মায়ের সাথে [বংশধারা] যুক্ত করেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২.পরিচ্ছেদঃ সন্তানের কারণে স্ত্রীর প্রতি কটাক্ষপাত করা ইঙ্গিতে যিনার অপবাদ দেয়া এবং সন্তান অস্বীকারের ইচ্ছা করা

৩৪৭৮. ইসহাক ইবনি ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা বলেনঃ ফাযারা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেনঃ আমার স্ত্রী এক কালো সন্তান প্রসব করেছে। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেনঃ তোমার কি উট আছে? সে বলিলঃ হ্যাঁ [আছে]। তিনি বলিলেনঃ সেগুলোর বর্ণ কি? সে বলিলঃ লাল রংয়ের। তিনি বলিলেনঃ সেগুলোর মধ্যে কালচে [ছাই] বর্ণের কোন উট আছে? সে বলিলঃ হ্যাঁ, কালচে বর্ণের ও আছে। তিনি বলিলেনঃ এগুলো কি করে জন্মালো বলে তুমি মনে কর? সে বলিলঃ তা হয়তো কোন পূর্ববর্তী কোন বংশধারার কারণে হইয়াছে। এরপর তিনি বলিলেনঃ এই সন্তানও হয়তো কোন ঊর্ধ্বতন পুরুষের কারণে [কালো] হইয়া থাকিবে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৭৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

ফাযারা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেনঃ আমার স্ত্রী এক কালো সন্তান প্রসব করেছে এবং সে বাচ্চার রং কালো [সন্তানরূপে] তাকে অস্বীকার করিতে চাচ্ছিল। তিনি [সাঃ] বলিলেনঃ তোমার কি উট আছে? সে বলিলঃ হ্যাঁ। তিনি বলিলেনঃ সেগুলোর রং কি? সে বললোঃ [সেগুলো] লাল [রংয়ের]।তিনি বলিলেনঃ দেখ সেগুলোর মধ্যে কালো বর্ণের সাথে অন্য বর্ণ মিশ্রিত রংয়ের উট আছে কি? সে বলিলঃ হ্যাঁ, সেগুলোর মধ্যে কালচে উট আছে। তিনি [সাঃ] বলিলেনঃ তবে তুমি কী বল [মিশ্রিত উট কোথা থেকে আসলো]? সে বলিলঃ তা হয়তো কোন পূর্ব বংশধারার কারণে হইয়া থাকিবে। তিনি বলিলেনঃ এতেও হয়তো কোন ঊর্ধ্বতন পুরুষের কারণে হইয়া থাকিবে। এর দ্বারা তিনি [রাসুলুল্লাহ [সাঃ]] ঐ ব্যক্তিকে সন্তান অস্বীকার করার সুযোগ দিলেন না।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৪৮০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ [একদিন] আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর খিদমতে উপবিষ্ট ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার একটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে, যাহার গায়ের রং কালো। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলিলেন [তার এই কালো রং] কোথা হইতে আসলো? সে বলিলঃ জানি না কোথা হইতে এসেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তোমার উট আছে কি? সে বলিলঃ হ্যাঁ, তিনি বলিলঃ সেগুলোর রং কি? সে বলিলঃ লাল [বর্ণের]।তিনি বলিলেনঃ এগুলোর মধ্যে কালচে [ছাই] বর্ণের [কাল বর্ণের সাথে অন্য বর্ণ মিশ্রিত] আছে কি? সে বলিলঃ তার মধ্যে [কালচে মিশ্রিত রং] এর উটও আছে। তিনি বলিলেনঃ ঐ গুলো [লাল বর্ণের মিশ্রিত উট] কোথা হইতে আসলো? সে বললোঃ বলিতে পারি না, [কোথা হইতে এসেছে,] ইয়া রাসুলাল্লাহ। হয়তো কোন ঊর্ধ্বতন পুরুষের কারণে হইয়া থাকিবে।তিনি [সাঃ] বলিলেন, এটিও [কাল সন্তান] এমন হইতে পারে যে ঊর্ধ্বতন পুরুষ হইতে এসেছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ এইজন্য রাসুলুল্লাহ [সাঃ] আদেশ করিয়াছেন, যে সন্তান তার স্ত্রীর গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে তাকে অস্বীকার করা উচিত নয়। কিন্তু ঐ সময় অস্বীকার করিতে পারবে, যখন সে তাকে অশ্লীল কাজে লিপ্ত দেখে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩.পরিচ্ছেদঃ সন্তান অস্বীকারকারীকে কঠোর সতর্কবাণী

৩৪৮১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-কে লিআনের আয়াত নাযিল হওয়ার পর বলিতে শুনেছেনঃ যে মহিলা এক গোত্রের মধ্যে অন্য গোত্রের পুরুষ [এর বীর্য] মিশ্রিত করে যে সে গোত্রের নয় আল্লাহর নিকট তার কোন মূল্য নেই। আর আল্লাহ তাআলা তাকে তাহাঁর জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ তার সন্তানকে অস্বীকার করে, অথচ সে তার দিকে মমতার দৃষ্টি দিয়ে দেখে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা তাকে তাহাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত করবেন এবং তাকে কিয়ামতের দিন পূর্বাপর সকল লোকের সামনে লাঞ্ছিত করবেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ জইফ হাদীস

১৪.পরিচ্ছেদঃ শয্যার মালিক [স্বামী] আস্বীকার না করলে সন্তান শয্যার মালিকেরই হইবে

৩৪৮২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেনঃ সন্তান শয্যার মালিকেরই [গৃহস্বামীরই], আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর [আঘাতে মৃত্যু অথবা বঞ্চনা] [অর্থাৎ সে সন্তানের মালিক হইবে না। অন্য ব্যাখ্যানুসারে তার হইবে প্রস্তরাঘাতে মৃত্যু]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৮৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সন্তান শয্যার মালিকের [গৃহস্বামীরই] আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৮৪. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] এবং আবদুল্লাহ ইবনি যামআ [রাঃআঃ]-এর মধ্যে একটি সন্তান নিয়ে ঝগড়া হয়। সাদ [রাঃআঃ] বলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ আমার ভাই উতবা ইবনি আবু ওয়াক্কাসের ছেলে। আমাকে আমার ভাই ওসীয়ত করেছিল যে সে তার ছেলে।[যামআর বাঁদীর ছেলে আমার ঔরষের]। তার [শরীরের গঠনের] প্রতি লক্ষ্য করুন। আবদ ইবনি যামআ [রাঃআঃ] বলেনঃ এ আমার ভাই, আমার পিতার দাসীর গর্ভজাত সন্তান। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] লক্ষ্য করে দেখলেন, তার শরীরের গড়ন উতবার সাথে স্পষ্ট মিল রয়েছে। তিনি বলিলেন হে আবদ ইবনি যামআ সে তোমার ভাই। কেননা সন্তান গৃহস্বামীর আর ব্যভিচারীর জন্য পাথর [কিছুই নেই]। আর তিনি [সাঃ] তাহাঁর স্ত্রী সওদা [রাঃআঃ]-কে বলিলেনঃ হে যামআর কন্যা সওদা, এর থেকে পর্দা কর। এরপর তিনি সওদা [রাঃআঃ]-কে কখনও দেখেন নি।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৮৫. আবদুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যামআ [রাঃআঃ]-এর একটি বাঁদী ছিল, যাহার সাথে তিনি সহবাস করিতেন, আর যামআর এরুপ সন্দেহ ছিল যে, এই বাঁদীর সাথে অন্য কেউ যিনা করে। এরপর সে একটি সন্তান প্রসব করলো, ঐ ব্যক্তির মত, যাহার সাথে তিনি তার ব্যভিচার করার সন্দেহ করিতেন। যামআ [রাঃআঃ] ইন্তিকাল করিলেন, ঐ বাঁদী অন্তঃস্বত্বা থাকা অবস্থায়। এ কথা সওদা [রাঃআঃ] রাসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর কাছে বর্ণনা করলে, তিনি বলেনঃ সন্তান বিছানার মালিকেরই। আর হে সওদা, তুমি তার সাথে পর্দা করিবে। কেননা সে তোমার ভাই নয়।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৩৪৮৬. আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেনঃ সন্তান বিছানার মালিকেরই। আর ব্যাভিচারকারীর জন্য পাথর [সন্তানের মালিক হইবে না]। আবু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমার মতে এটি আবদুল্লাহ ইবনি মাউসুদ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত নয়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১৫.পরিচ্ছেদঃ বাদীর বিছানা বা শয্যার বিধান

৩৪৮৭. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] এবং আব্‌দ ইবনি যামআ [রাঃআঃ] যামআর সন্তান নিয়ে বিবাদ করিলেন। সাদ বলেনঃ আমার ভাই উতবা আমাকে ওসীয়ত করেছিলেন যে, যখন তুমি মক্কায় গমন করিবে যামআর বাঁদীর সন্তানকে দেখবে; কেননা সে আমার সন্তান। আর আব্‌দ ইবনি যামআ বলিলেন, সে আমার পিতার বাঁদীর সন্তান, সে আমার পিতার শয্যায় [আধিপত্যে] জন্মলাভ করেছে। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃ] লক্ষ্য করে দেখলেন, উতবা [রাঃআঃ]-এর সাথে তার পরিষ্কার সাদৃশ্য রয়েছে। রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বললেনঃ সন্তান বিছানার [অর্থাৎ তারই জন্য, যাহার জন্য বিছানা]। তিনি আরও বললেনঃ হে সওদা! তুমি তার থেকে পর্দা করিবে।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬.পরিচ্ছেদঃ সন্তান নিয়ে বিবাদ হলে লটারীর ব্যবস্থা করা এবং যায়দ ইবনি আরকাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত এ বিষয়ের হাদীসে শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় বিরোধ

৩৪৮৮. যায়দ ইবূন আরকাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ ইয়ামানে অবস্থানকালে আলী [রাঃআঃ]-এর নিকট তিনজন লোক নিয়ে আসা হল, যারা সকলে এক মহিলার সাথে একই তুহরে১ সহবাস করেছিল। তিনি তাহাদের দুইজনকে পৃথক করে বললেনঃ তোমরা উভয়ে কি এই সন্তানকে তৃতীয় ব্যক্তির সন্তান বলে স্বীকার কর? তারা বললেনঃ না। পরে তিনি অন্য দুইজনকে বললেনঃ তোমরা দুইজন কি এই সন্তানকে তৃতীয় ব্যক্তির সন্তান বলে স্বীকার কর? তারাও বললেনঃ না। এরপর তিনি উক্ত তিন ব্যক্তির নামে লটারী করিলেন। লটারীতে যাহার নাম উটলো, তাকে তিনি সন্তান দিয়ে দিলেন। আর তার উপর দিয়াতের অর্থাৎ মূল্যের দুই-তৃতীয়াংশ সাব্যস্ত করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট এ ঘটনা আমরা বর্ণনা করলে তিনি হাসলেন, যাতে তাহাঁর মাড়ির দাঁত মুবারক দেখা গিয়েছিল।

{১} স্ত্রীলোকের দুই হায়েযের মধ্যবর্তী সময়কে তুহর [বা পবিত্রতার সময়] বলা হয়।তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৮৯. যায়দ ইবুন আরকাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ [একদিন] আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় ইয়ামানের এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া সেখানকার সংবাদ বর্ণনা করিতে লাগলো এবং কথাবার্তা বলিতে আরম্ভ করলো। তখন আলী [রাঃআঃ] সেখানে [ইয়ামানে] ছিলেন। সে বললঃ ইয়া রসূলুল্লাহ ! তিন ব্যক্তি আলী [রাঃআঃ]-এর নিকট এসে এক সন্তানের ব্যাপারে ঝগড়া করছিল, তারা সকলেই এক তুহরে এক মহিলার সাথে সহবাস করার দাবী করেছিল। এভাবে পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৯০. যায়দ আরকাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি নাবী [সাঃ]-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, তখন আলী [রাঃআঃ] ইয়ামানে ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি তাহাঁর [রসূলুল্লাহ [সাঃ]]-এর নিকট এসে বললেনঃ আমি [একদিন] আলী [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, তিন ব্যক্তি তাহাঁর নিকট এসে এক সন্তানের দাবী করলো। যে এক নারীর গর্ভে জন্মায়। তখন আলী [রাঃআঃ] তাহাদের একজনকে বললেনঃ তুমি কি এই সন্তানের দাবী এর জন্য ছেড়ে দেবে? সে অস্বীকার করলো। এরপর তিনি অন্যজনকে বললেনঃ তুমি কি এই সন্তানের দাবী এর জন্য ছেড়ে দেবে? সেও অস্বীকার করলো। এভাবে তৃতীয় ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করায় সেও অস্বীকার করলো। আলী [রাঃআঃ] বললেনঃ তোমার পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত অংশীদার। আমি এখন তোমাদের মধ্যে লটারী করবো। যাহার নাম লটারীতে আসবে সে এই সন্তান পাবে এবং তাকে দিয়াতের [মূল্যের] দুই-তৃতায়াংশ দিতে হইবে। রসূলুল্লাহ [সাঃ] যখন এই ঘটনা শুনলেন, তখন তিনি হাসলেন, এমনকি তাহাঁর মাড়ির দাঁত মুবারক প্রকাশ হইয়া পড়লো।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৯১. যায়দ ইবনি আরকাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] আলী [রাঃআঃ]-কে ইয়ামান পাঠান। একদিন একটি শিশু আনা হলো, যাকে তিন ব্যক্তি পাওয়ার জন্য ঝগড়া করছিল। হাদিসের শেষ পর্যন্ত অনুরূপ বর্ণনা করিলেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৩৪৯২. সালামা ইবনি কুহায়ল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি শাবীকে আবুল খলীল অথবা ইবনি আবুল খলীল হইতে হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। তিন ব্যক্তি একই তুহরে [এক নারীর সাথে সহবাস] শরীক ছিল। এরপর এভাবে হাদীস বর্ণনা করিলেন। কিন্তু তিনি যায়দ ইবনি আরকামের নাম উল্লেখ করেন নি। আর এই হাদীসকে মারফূও করেন নি। আবু আবদুর রহমান [রঃ] বলেন, এ সনদটি সহীহ। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৭.পরিচ্ছেদঃ কিয়াফা১ প্রসংগ

৩৪৯৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] আমার নিকট আনন্দিত অবস্থায় প্রবেশ করিলেন। তখন তাহাঁর চেহারার রেখাগুলো ঝিলমিল করছিল [চেহারায় খুশির চিহ্ন প্রস্ফূটিত ছিল]। তিনি বললেনঃ তুমি কি জান মুজায়যিয [নাম্মী এক ব্যক্তি] যায়দ ইবনি হারিসা এবং উসামা [রাঃআঃ]-কে [চেহারা চাদারাবৃত ও পা খোলা অবস্থায়] দেখে বললোঃ এই পাগুলোর একটি অপরটি হইতে [অর্থাৎ মিলযুক্ত]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৯৪. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] আনন্দিত অবস্থায় আমার নিকট আসলেন [তখন তাহাঁর চেহারায় খুশির চিহ্ন বিদ্যমান ছিল]। তিনি বললেনঃ হে আয়েশা। মুজায়যিয মুদ্‌লিজী [রাঃআঃ] [কিয়াফা অবগত ব্যক্তি] আমার নিকট আসলো। তখন উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] আমার নিকট ছিল। সে উসামা ইবনি যায়দ এবং যায়দ [রাঃআঃ]-কে দেখলো। তাঁদের গায়ে চাদর ছিল এবং তারা মুখ ঢেকে রেখেছিল এবং তাহাদের পা খোলা ছিল। সে বললোঃ এই পাগুলো একটি অপরটি হইতে [দুজনের পায়ের মধ্যে মিল রয়েছে]।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮.পরিচ্ছেদঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন মুসলমান হলে এবং সন্তানকে ইখতিয়ার প্রদান প্রসংগ

৩৪৯৫. আবদুল হামীদ ইবনি সালামা আনসারী [রঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মুসলমান হলে তাহাঁর স্ত্রী মুসলমান হইতে অস্বীকার করলো। তাহাদের এক নাবালেগ সন্তান ছিল। সে আসলে নাবী [সাঃ] তার পিতাকে এখানে আর মাতাকে ওখানে বসিয়ে ছেলেকে ইখতিয়ার দিয়ে দুআ করলেনঃ হে আল্লাহ! একে হিদায়ত [সুবুদ্ধি] দান করুন। তখন সেই ছেলে তাহাঁর পিতার নিকট চলে গেল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৯৬. আবু মায়মূনা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ [একদিন] আমি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-এর নিকট বসা ছিলাম, তখন তিনি বলিলেন যে, এক মহিলা রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বললেনঃ আমার পিতা মাতা আপনার উপর কুরবান হোক। আমার স্বামী আমার নিকট হইতে আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে চায়। অথচ তার দ্বারা আমার অনেক উপকার হইয়া থাকে। সে আবু ইনাবা কূপ থেকে পান এনে আমাকে পান করায়। এমন সময় তার স্বামী সেখানে এসে বললেনঃ আমার ছেলের ব্যাপারে আমার সাথে কে বিবাদ করেছে ? তখন তিনি [নাবী সঃ] বলিলেন, হে ছেলে ! এই তোমার পিতা, আর এই তোমার মাতা, এদের মধ্যে তোমার যাহার ইচ্ছা হাত ধর। তখন ছেলে তার মার হাত ধরলো এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯.পরিচ্ছেদঃ খুলাকারিণীর ইদ্দত

৩৪৯৭. আবদুর রহমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রুবায়্যি বিন্‌ত মুআব্বিয ইবনি আফরা [রাঃআঃ] তাকে অবহিত করিয়াছেন, সাবিত ইবনি কায়স ইবনি শাম্‌মাস [রাঃআঃ] তার স্ত্রীকে মারধর করলো এবং তার হাত ভেঙে দিল। সে ছিল জামিলা বিন্‌ত আবদুল্লাহ্‌ ইবনি উবাই। তার ভাই রসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর নিকট এর অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হলো। তিনি সাবিত [রাঃআঃ]-এর নিকট লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন। সাবিত [রাঃআঃ] উপস্থিত হলে তিনি বললেনঃ তুমি তার নিকট হইতে তোমার মাল নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। সাবিত [রাঃআঃ] বললেনঃ হ্যাঁ, তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃ] ঐ মহিলাকে এক হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করার [ইদ্দত পালন করার] আদেশ দেন। এরপর তাকে তার মাতাপিতার নিকট চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৯৮. রুবায়্যি বিন্‌ত মুআব্বিয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আমার স্বামীর সাথে খুলা করলাম। এরপর উসমান [রাঃআঃ]-এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাস করলামঃ আমাকে কতদিন ইদ্দত পালন করিতে হইবে? উসমান [রাঃআঃ] বললেনঃ তোমার কোন ইদ্দত পালন করিতে হইবে না তবে, যদি তুমি তোমার স্বামীর সংগে কাছাকাছি সময়ে সহাবস্থান করে থাক তাহলে তুমি এক হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করিবে। এরপর তিনি বললেনঃ এ ব্যাপারে আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর অনুসরণ করছি। তিনি মার‍য়াম মাগালিয়ার ব্যাপারে এরূপ সমাধান দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সাবিত ইবনি কায়স ইবনি শাম্‌মাস [রাঃআঃ]-এর স্ত্রী। সেই মহিলা তার সাথে খুলা করেছিল।

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২০.পরিচ্ছেদঃ তালাকপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে ইদ্দত হুকুমে যারা ব্রতি

৩৪৯৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

[অর্থঃ যখন আমি কোন আয়াতের স্থানে অন্য আয়াত দ্বারা পরিবর্তন করি……] সম্পর্কে [অর্থঃ আল্লাহ যা ইচ্ছা করে মুছে দেন এবং [যা ইচ্ছা] স্থির রাখেন; তাহাঁর কাছে আছে মূল গ্রন্থ] বলেনঃ [বর্ণিত হইয়াছে যে,] কুরআনে সর্বপ্রথম যা রহিত হইয়াছে, তা হলো কিবলার হুকুম। আল্লাহর বাণীঃ

[আর-বি] [অর্থঃ তালাকপ্রাপ্তা নারীরা নিজেদের আবদ্ধ করে রাখবে [ইদ্দত পালন করিবে] তিন হায়েয এবং তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা [বয়সের কারণে] হায়েয হইতে নিরাশ হইয়াছে—- যদি তোমরা সন্দিহান হও—- তবে তাহাদের ইদ্দত তিন মাস।] এ হইতে রহিত করা হইয়াছে এবং ইরশাদ করা হইয়াছে [আর-বি] [অর্থঃ যদি তোমরা তাহাদের [স্ত্রীদের] স্পর্শ [সহবাস] করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও তবে তোমাদের স্বার্থে তাহাদের উপরের ইদ্দতের বিধান নেই। যা তারা পালন করিবে……………]।

أَخْبَرَنَا زَكَرِيَّا بْنُ يَحْيَى، قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْحَقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: أَنْبَأَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحُسَيْنِ بْنِ وَاقِدٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي، قَالَ: أَنْبَأَنَا يَزِيدُ النَّحْوِيُّ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ: ” فِي قَوْلِهِ {مَا نَنْسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنْسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِنْهَا أَوْ مِثْلِهَا} [البقرة: 106] وَقَالَ: {وَإِذَا بَدَّلْنَا آيَةً مَكَانَ آيَةٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُنَزِّلُ} [النحل: 101] الْآيَةَ، وَقَالَ: {يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ} [الرعد: 39] فَأَوَّلُ مَا نُسِخَ مِنَ الْقُرْآنِ الْقِبْلَةُ، وَقَالَ: {وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ} [البقرة: 228] وَقَالَ: {وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِنْ نِسَائِكُمْ إِنْ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ} [الطلاق: 4] فَنُسِخَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ تَعَالَى: {وَإِنْ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوهُنَّ} [البقرة: 237] {فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا} [الأحزاب: 49] “

তালাক সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply