তালাক, যিহার, লিআন করা ও লিআনকারীণীর মোহর
তালাক, যিহার, লিআন করা ও লিআনকারীণীর মোহর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৮, তালাক, অধ্যায়ঃ (২৩-৪৫)=২৩টি
৬৮/২৩. অধ্যায়ঃ যিহার [২৮]
৬৮/২৪. অধ্যায়ঃ ইশারার মাধ্যমে ত্বলাক্ব ও অন্যান্য কাজ।
৬৮/২৫. অধ্যায়ঃ লিআন [২৯] (অভিসম্পাত সহকারে শপথ)।
৬৮/২৬. অধ্যায়ঃ ইঙ্গিতে সন্তান অস্বীকার করা।
৬৮/২৭. অধ্যায়ঃ লিআনকারীকে শপথ করানো।
৬৮/২৮. অধ্যায়ঃ পুরুষকে প্রথমে লিআন করানো হইবে।
৬৮/২৯. অধ্যায়ঃ লিআন এবং লিআনের পর ত্বলাক্ব দেয়া।
৬৮/৩০. অধ্যায়ঃ মসজিদে লিআন করা।
৬৮/৩১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)- এর উক্তি আমি যদি সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতীত রজম করতাম।
৬৮/৩২. অধ্যায়ঃ লিআনকারীণীর মোহর।
৬৮/৩৩. অধ্যায়ঃ লিআনকারীদ্বয়কে ইমামের এ কথা বলা যে, নিশ্চয় তোমাদের কোন একজন মিথ্যাচারী, তাই তোমাদের কে তাওবা করিতে প্রস্তুত আছ ?
৬৮/৩৪. অধ্যায়ঃ লিআনকারীদ্বয়কে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।
৬৮/৩৫. অধ্যায়ঃ লিআনকারিণীকে সন্তান অর্পণ করা হইবে।
৬৮/৩৬. অধ্যায়ঃ ইমামের উক্তিঃ হে আল্লাহ! সত্য প্রকাশ করে দিন।
৬৮/৩৭. অধ্যায়ঃ যদি মহিলাকে তিন তালাক দেয় অতঃপর ইদ্দাত শেষে সে অন্য স্বামীর কাছে বিয়ে বসে, কিন্তু সে তাঁকে স্পর্শ (সঙ্গম) করিল না।
৬৮/৩৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের হায়িয বন্ধ হয়ে গেছে………. যদি তোমাদের সন্দেহ দেখা দেয় তাদের ইদ্দাত তিন মাস এবং তাদেরও যাদের এখনও হায়িয আসা আরম্ভ হয়নি।” (সুরা আত্-ত্বলাকঃ ৪)
৬৮/৩৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “গর্ভবতী মহিলাদের ইদ্দত কাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।” (সুরা আত-ত্বলাকঃ ৪)
৬৮/৪০. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ ত্বলাক্বপ্রাপ্তা মহিলারা তিন কুরূ পর্যন্ত অপেক্ষা করিবে। (সুরা আল-বাক্বারা ২/২২৮)
৬৮/৪১. অধ্যায়ঃ ফাতিমা বিনত কায়সের ঘটনা
৬৮/৪২. অধ্যায়ঃ স্বামীর গৃহে অবস্থান করলে যদি ত্বলাক্বপ্রাপ্তা নারী তার স্বামীর পরিবারের লোকজনের গালমন্দ দেয়ার বা তার ঘরে চোর ইত্যাদির প্রবেশ করার ভয় করে।
৬৮/৪৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “তাদের জন্য গোপন করা বৈধ হইবে না যা আল্লাহ তাদের জরায়ুতে সৃষ্টি করিয়াছেন” (সুরা আল-বাক্বরাহ ২:২২৮) হায়িয বা গর্ভসঞ্চার
৬৮/৪৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “ত্বলাক্বপ্রাপ্তাদের স্বামীরা (ইদ্দাতের মধ্যে) তাদের ফিরিয়ে আনার অগ্রাধিকার রাখে।” (সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২২৮)
৬৮/৪৫. অধ্যায়ঃ ঋতুবতীকে ফিরিয়ে নেয়া।
৬৮/২৩. অধ্যায়ঃ যিহার [২৮]
(আল্লাহ বলেছেন): আল্লাহ তার কথা শুনেছেন যে নারী (খাওলাহ বিনত সালাবাহ) তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে, আল্লাহ তোমাদের দুজনের কথা শুনছেন …… আর যে তা করিতে পারবে না, সে ষাট জন মিসকিনকে খাবার খাওয়াবে। পর্যন্ত। (সুরা মুজাদালাহ ৫৮/১-৪)
[বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন]: ইসমাঈল আমাকে বলেছেন, মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর কাছে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি ইবনু শিহাবকে গোলামের যিহার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। উত্তরে তিনি বললেনঃ আযাদ ব্যক্তির মত। মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ গোলাম ব্যক্তি দুমাস সওম পালন করিবে। হাসান ইবনুল হুর্র বলেনঃ আযাদ নারী বা বাঁদীর সঙ্গে আযাদ পুরুষ বা গোলামের যিহার একই রকম। ইকরামাহ বলেনঃ বাঁদীর সঙ্গে যিহার করলে কিছু হইবে না। যিহার তো কেবল মুক্ত নারীর ব্যাপারেই প্রযোজ্য।
আরবীতে ………..“তারা যা উক্তি করেছিল”। ………………………… এর অর্থে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ “তারা যে সম্পর্কে উক্তি করেছিল তা থেকে …..” এবং এরূপই ভাল, কারণ আল্লাহ তাআলা অন্যায় ও ভিত্তিহীন কথার পথ দেখান না।
[২৮] আওস বিন সামিত (রাদি.) তাহাঁর স্ত্রী খাওলা বিনতে সাআলাবা (রাদি.)- কে বলেছিলেন, তুমি আমার মায়ের পিঠের মত। এরূপ বললে কাফফারা পরিশোধের পূর্বে স্ত্রী সহবাস হালাল হইবে না।
এখন খাওলা বিনতে সাআলাবা (রাদি.) আউস বিন সামিতের (রাদি.) স্ত্রী আল্লাহর রসূলের (সাঃআঃ) নিকট এসে চুপে চুপে বলেনঃ আমার স্বামী আমাকে এই কথা বলেছেন। এদিকে আমার জীবন যৌবন তার কাছে শেষ করেছি, আবার ছেলে মেয়েও রয়েছে, এই বুড়ি বয়সে কোথায় যাব কী করবো? তা ভেবে দিশেহারা হয়ে গেছি। আপনি এর সুরাহা কিছু একটা বাতলিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন তুমি চিরদিনের জন্য তোমার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে গেছ। এরূপ বিধান জাহিলিয়াতে প্রচলিত ছিল। মহিলাটি একথা শুনে কাঁদতে লাগলেন এবং আল্লাহর কাছে আবেদন নিবেদন জানাতে লাগলেন। পরক্ষণেই জিবরীল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট হাজির হলেন। সাথে খাওলা বিনতে সাআলাবা ঘর থেকে বের হওয়ার পূর্বেই তার শানে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুরা মুজাদেলার প্রথম হইতে চার আয়াত নাযিল হল। অবতীর্ণ বাণী পেয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ তোমার স্বামীকে বল একটি দাস মুক্ত করিতে। মহিলা বলিলেন সেতো অপারগ। তাহলে পরপর দুমাস রোযা রাখতে বল। খাওলা (রাদি.) বলিলেন পরপর দুমাস রোযা রাখতে পারলে এ ঘটনা ঘটত তা। তাহলে যাও কিছু খেজুর ষাটজন গরীবদের মধ্যে বিতরণ করিতে বল। খাওলা (রাদি.) বলেন তাতেও আমাদের অসুবিধা। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ৩০ কেজির মত খেজুর দিয়ে বলিলেন, যাও এগুলো বিতরণ করে দাও। তাই করলো, এবারে তার স্ত্রী সহবাসের জন্য হালাল হলো।
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলার সমস্ত প্রশংসা ও গুণগান যিনি সকল রকমের শব্দ শুনতে পান। আমি খাওলা বিনতে সাআলাবার কথা শুনতে পাচ্ছিলাম সে আমার নিকট থেকে তার কিছু কিছু কথা গোপন করছিল। সে রাসুলুল্লাহর (সাঃআঃ) নিকট তার স্বামী আওস বিন সামিত (রাদি.) এর বিপক্ষে অভিযোগ উত্থাপন করে বলছিলঃ হে আল্লাহর রাসুল! সে [আওস বিন সামিত (রাদি.)] আমার যৌবন খেয়ে ফেলেছে এবং তার জন্য আমার পেট বহু সন্তান প্রসব করেছে। অতঃপর আমার বয়স যখন বেশী হয়ে গেল এবং আমার সন্তান হওয়াও বন্ধ হয়ে গেল তখন সে আমার সাথে যিহার করিল। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অভিযোগ উত্থাপন করছি। সে ঘর থেকে বের হওয়ার পূর্বেই জিবরীল এ আয়াতগুলো নিয়ে আগমন করিলেন {—————————}। হাদীসটি ইবনু মাজাহ (২০৬৩) ও সংক্ষেপে নাসাঈ (৩৪৬০) বর্ণনা করিয়াছেন, হাদীসটিকে শাইখ আলবানী সহীহ আখ্যা দিয়েছেন]।
৬৮/২৪. অধ্যায়ঃ ইশারার মাধ্যমে তালাক ও অন্যান্য কাজ।
ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ চোখের পানির জন্য শাস্তি দিবেন না; তবে শাস্তি দিবেন এটার জন্য এই বলে তিনি মুখের প্রতি ইশারা করিলেন। কাব ইবনু মালিক (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমার প্রতি ইশারা করে বললেনঃ অর্ধেক লও। আসমা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সূর্যগ্রহণের সলাত আদায় করেন। আয়েশা (রাদি.) সলাত আদায় করছিলেন। এ অবস্থায় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপার কী? তিনি তাহাঁর মাথা দ্বারা সূর্যের দিকে ইশারা করিলেন। আমি বললামঃ কোন নিদর্শন নাকি? তিনি মাথা নেড়ে বললেনঃ জি হাঁ। আনাস (রাদি.) বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ)তাহাঁর হাত দ্বারা আবু বক্র (রাদি.)- এর প্রতি ইশারা করে সামনে যেতে বলিলেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) হাত দ্বারা ইশারা করে বললেনঃ কোন দোষ নেই। আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) মুহরিম- এর (ইহরামকারী) শিকার সম্বন্ধে বলিলেন, তোমাদের কেউ কি তাকে (মুহরিমকে) এ কাজে লিপ্ত হবার আদেশ করেছিল বা শিকারের প্রতি ইঙ্গিত করেছিল? লোকেরা বললঃ না। তিনি বলিলেন, তবে খাও।
৫২৯৩
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর উটে চড়ে তাওয়াফ করিলেন। তিনি যখনই রুকনের কাছে আসতেন, তখনই এর প্রতি ইঙ্গিত করিতেন এবং “আল্লাহু আকবার” বলিতেন। যাইনাব (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “ইয়াজুজ ও মাজূজ” এদের দরজা এভাবে খুলে গেছে; এই বলে তিনি (তাহাঁর আঙ্গুলকে) নব্বই এর মত করিলেন। (অর্থাৎ শাহাদাত আঙ্গুলের মাথা বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়ায় রাখলেন।)(আঃপ্রঃ- ৪৯০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৯)
আওস বিন সামিত রাঃ) তাহাঁর স্ত্রী খাওলা বিনতে সাআলাবা রাযি.)-কে বলেছিলেন, তুমি আমার মায়ের পিঠের মত। এরূপ বললে কাফফারা পরিশোধের পূর্বে স্ত্রী সহবাস হালাল হইবে না।
এখন খাওলা বিনতে সাআলাবা রাঃ) আউস বিন সামিতের রাঃ) স্ত্রী আল্লাহর রসূলের ﷺ নিকট এসে চুপে চুপে বলেনঃ আমার স্বামী আমাকে এই কথা বলেছেন। এদিকে আমার জীবন যৌবন তার কাছে শেষ করেছি, আবার ছেলে মেয়েও রয়েছে, এই বুড়ি বয়সে কোথায় যাব কী করবো? তা ভেবে দিশেহারা হয়ে গেছি। আপনি এর সুরাহা কিছু একটা বাতলিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলিলেন তুমি চিরদিনের জন্য তোমার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে গেছ। এরূপ বিধান জাহিলিয়াতে প্রচলিত ছিল। মহিলাটি একথা শুনে কাঁদতে লাগলেন এবং আল্লাহর কাছে আবেদন নিবেদন জানাতে লাগলেন। পরক্ষণেই জিবরীল আ.) নাবী ﷺ এর নিকট হাজির হলেন। সাথে খাওলা বিনতে সাআলাবা ঘর থেকে বের হওয়ার পূর্বেই তার শানে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুরা মুজাদেলার প্রথম হইতে চার আয়াত নাযিল হল। অবতীর্ণ বাণী পেয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেনঃ তোমার স্বামীকে বল একটি দাস মুক্ত করিতে। মহিলা বলিলেন সেতো অপারগ। তাহলে পরপর দুমাস রোযা রাখতে বল। খাওলা (রাদি.) বলিলেন পরপর দুমাস রোযা রাখতে পারলে এ ঘটনা ঘটত না। তাহলে যাও কিছু খেজুর ষাটজন গরীবদের মধ্যে বিতরণ করিতে বল। খাওলা (রাদি.) বলেন তাতেও আমাদের অসুবিধা। অতঃপর আল্লাহর রাসুল ﷺ ৩০ কেজির মত খেজুর দিয়ে বলিলেন, যাও এগুলো বিতরণ করে দাও। তাই করলো, এবারে তার স্ত্রী সহবাসের জন্য হালাল হলো।
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলার সমস্ত প্রশংসা ও গুণগান যিনি সকল রকমের শব্দ শুনতে পান। আমি খাওলা বিনতে সাআলাবার কথা শুনতে পাচ্ছিলাম সে আমার নিকট থেকে তার কিছু কিছু কথা গোপন করছিল। সে রাসুলুল্লাহর ﷺ নিকট তার স্বামী আওস বিন সামিত রাঃ) এর বিপক্ষে অভিযোগ উত্থাপন করে বলছিলঃ হেআল্লাহর রাসুল! সে [আওস বিন সামিত রাঃ)] আমার যৌবন খেয়ে ফেলেছে এবং তার জন্য আমার পেট বহু সন্তান প্রসব করেছে। অতঃপর আমার বয়স যখন বেশী হয়ে গেল এবং আমার সন্তান হওয়াও বন্ধ হয়ে গেল তখন সে আমার সাথে যিহার করিল। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অভিযোগ উত্থাপন করছি। সে ঘর থেকে বের হওয়ার পূর্বেই জিবরীল এ আয়াতগুলো নিয়ে আগমন করিলেন {قد سمع الله…………}। [হাদীসটি ইবনু মাজাহ ২০৬৩) ও সংক্ষেপে নাসাঈ ৩৪৬০) বর্ণনা করিয়াছেন, হাদীসটিকে শাইখ আলবানী সহীহ আখ্যা দিয়েছেন]।
৫২৯৪
আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবুল কাসিম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জুমুআহর দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যে মুহূর্তে কোন মুসলমান দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে আল্লাহর কাছে যে কোন কল্যাণ চায় আল্লাহ অবশ্যই তা মঞ্জুর করে থাকেন। তিনি নিজ হাত দ্বারা ইশারা করেন এবং তাহাঁর আঙ্গুলগুলো মধ্যমা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলের পেটে রাখেন। আমরা বললামঃ তিনি স্বল্পতা বুঝাতে চাচ্ছেন।
৫২৯৫
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উওয়ায়সী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ ইবরাহীম ইবনু সাদ শুবাহ ইবনু হাজ্জাজ থেকে , তিনি হিশাম ইবনু যায়দ থেকে, তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর যুগে এক ইয়াহূদী একটি বালিকার উপর নির্যাতন করে তার অলঙ্কারাদি ছিনিয়ে নেয়। আর (পাথর দ্বারা) তার মস্তক চূর্ণ করে। সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্তে তার পরিবারের লোকেরা তাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে নিয়ে আসে। তখন সে চুপচাপ ছিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) (এক নির্দোষ ব্যক্তির নাম ধরে) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাকে কি অমুক হত্যা করেছে? সে মাথার ইশারায় বললঃ না। তিনি অন্য এক নিরপরাধ লোকের নাম ধরে বলিলেন, তবে কি অমুক? সে ইশারায় জানাল, না। এবার রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হত্যাকারীর নাম ধরে বললেনঃ তবে অমুক ব্যক্তি মেরেছে কি? সে মাথা হেলিয়ে বললঃ জি, হ্যাঁ। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নির্দেশক্রমে উক্ত ব্যক্তির মাথা দুপাথরের মাঝে রেখে চূর্ণ করা হলো।(আঃপ্রঃ- ৪৯০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০০)
৫২৯৬
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি, ফিতনা (বিপর্যয়) এদিক থেকে আসবে। তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০১)
৫২৯৭
আবব্দুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে ছিলাম। সূর্য অস্তমিত হইতে তিনি এক ব্যক্তি (বিলাল)- কে বললেনঃ নেমে যাও, আমার জন্য ছাতু প্রস্তুত কর। সে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! যদি আপনি সন্ধ্যা নাগাদ অপেক্ষা করিতেন। (তাহলে সওম পূর্ণ হত)। তিনি পুনরায় বললেনঃ নেমে গিয়ে ছাতু মাখ। সে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! যদি সন্ধ্যা হইতে দিতেন! এখনো তো দিন রয়ে গেছে। তিনি আবার বললেনঃ যাও, গিয়ে ছাতু প্রস্তুত কর। তৃতীয়বার আদেশ দেয়ার পর সে নামল এবং তাহাঁর জন্য ছাতু প্রস্তুত করিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তা খেলেন। এরপর তিনি পূর্বদিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ যখন তোমরা ওদিক থেকে রাত্রি নেমে আসতে দেখবে, তখন সওমকারী ইফতার করিবে। (আঃপ্রঃ- ৪৯০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০২)
৫২৯৮
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বিলালের আহবান বা তার আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহরী থেকে বিরত না রাখে। কারণ, সে আযান দেয়, যাতে তোমাদের রাত্রি জাগরণকারীরা কিছু আরাম করিতে পারে। সকাল বা ফজর হয়েছে এটা বুঝানো তার উদ্দেশ্য নয়। ইয়াযীদ তার হাত দুটি সামনে বিস্তার করে দুদিকে ছড়িয়ে দিলেন। (সুবহে সাদিক কিভাবে উদ্ভাসিত হয় তা দেখানোর জন্য)।(আঃপ্রঃ- ৪৯০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৩)
৫২৯৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, জাফর ইবনু রাবীআ, আবদুর রহমান ইবনু হুরমুয থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবু হুরাইরা (রাদি.)- এর কাছে শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বখিল ও দাতা ব্যক্তির উদাহরণ হচ্ছে এমন দুব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে বুক থেকে গলার হাড় পর্যন্ত লৌহ-নির্মিত পোশাক রয়েছে। দানকারী যখনই কিছু দান করে, তখনই তার শরীরের পোশাকটি বড় ও প্রশস্ত হইতে থাকে, এমনকি এটা তার আঙ্গুল ও অন্যান্য অঙ্গগুলোকে ঢেকে ফেলে। অন্যদিকে, বখিল যখনই দান করার ইচ্ছা করে, তখনই তার পোশাকে তার কণ্ঠনালীর প্রতিটি অংশ সংকুচিত হয়ে যায়। সে প্রশস্ত করার চেষ্টা করলেও সেটা প্রশস্ত হয় না। এ কথা বলে তিনি নিজের আঙ্গুল দ্বারা কণ্ঠনালীর প্রতি ইশারা করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৩)
৬৮/২৫. অধ্যায়ঃ লিআন [২৯] (অভিসম্পাত সহকারে শপথ)।
মহান আল্লাহর বাণীঃ “আর যারা নিজেদের স্ত্রীদের উপর অপবাদ দেয়, কিন্তু নিজেদের ছাড়া তাদের অন্য কোন সাক্ষী না থাকে … থেকে- “যদি সে সত্যবাদী হয়” (সুরা আন-নূর ২৪ : ৬-৯) পর্যন্ত !
যদি কোন বোবা লোক লিখিতভাবে বা ইশারায় কিংবা কোন পরিচিত ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকে অপবাদ দেয়, তাহলে তার হুকুম বাকশক্তি সম্পন্ন মানুষের মতই। কেননা নাবী (সাঃআঃ) ফরয বিষয়াবলীতে ইশারা করার অনুমতি দিয়েছেন। এটা হিজাজ ও অন্যান্য স্থানের কিছু সংখ্যক আলিমেরও মত। আল্লাহ বলেছেনঃ “সে (মারইয়াম) সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করলো, লোকেরা বলিল, দোলনার শিশুর সঙ্গে আমরা কীভাবে কথা বলব? (সুরা মারইয়ামঃ ২৯) যাহহাক বলেনঃ (اِلارَمُزً) অর্থ “ইঙ্গিত এবং ইশারার মাধ্যমে।” (সুরা আলু-ইমরানঃ ৪১)
কিছু লোক বলেছেনঃ ইশারার মাধ্যমে কোন হদ (শরঈ দণ্ড) বা লিআন নেই, আবার তাদেরই মত হলো লিখিতভাবে কিংবা কিংবা ইশারা ইঙ্গিতে তালাক দেয়া জায়িয আছে। অথচ তালাক এবং অপবাদের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই। যদি তারা বলেঃ কথা বলা ব্যতীত তো অপবাদ দেয়া সম্ভব নয়। তাবে তাকে বলা হইবে তাহলে তো অনুরূপভাবে কথা বলা ব্যতীত তালাক দেয়াও না জায়িয। অন্যথায় তো তালাক দেয়া, অপবাদ দেয়া এমনিভাবে গোলাম আযাদ করা, কোনটাই ইশারার মাধ্যমে জায়িয হইতে পারে না। অনুরূপভাবে বধির ব্যক্তিও লিআন করিতে পারে। শাবী ও ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ যদি কেউ আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে তার স্ত্রীকে বলে, তুমি ত্বলাক্বপ্রাপ্তা, তাহলে ইশারার দ্বারা স্ত্রী স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইবরাহীম বলেনঃ বোবা ব্যক্তি নিজ হাতে তালাক পত্র লিপিবদ্ধ করলে অবশ্যই তালাক হইবে। হাম্মাদ বলেনঃ বোবা এবং বধির মাথার ইঙ্গিতে বললেও জায়িয হইবে।
[২৯] লিআন অর্থ একে অপরকে অভিশাপ করা। শরীয়াতের পরিভাষায় এর অর্থঃ যে ব্যক্তি আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, কিন্তু এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারছে না।
আল্লাহ তায়ালা সুরা নূরের ৬ নং আয়াত হইতে ৯ নং আয়াতে উক্ত সমস্যার সমাধান উল্লেখ করিয়াছেন। হাদীসে রসূলেও তার বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সুরা নূরের কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে-
(আরবি)
“আর যারা তাদের স্ত্রীদের উপর (যিনার) অপবাদ আরোপ করে এবং তাদের নিকট নিজ (ব্যতীত) অন্য কোন সাক্ষী না থাকে তবে তাদের সাক্ষী এই যে, চারবার আল্লাহর নামে কসম করে বলবে নিশ্চয় আমি সত্যবাদী এবং পঞ্চমবারে বলবে আমার উপর আল্লাহর লানত হোক, আমি যদি মিথ্যাবাদী হই। আর সেই স্ত্রীর শাস্তি রহিত হয়ে যাবে যদি সে আল্লাহর কসম খেয়ে চারবার এ কথা বলে সাক্ষী দেয় যে, তার স্বামী অবশ্যই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবারে বলবে যে, যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয় তাহলে আমার উপর আল্লাহর গযব হোক। (সুরা আন-নূর ২৪ : ৬-৯)
বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ আছে- সাহল বিন সাদ সাঈদী (রাদি.) বলেন, একদিন উমাইমির আজলানী এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কী বলেন, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অপর ব্যক্তিকে পায়, তবে কি সে তাকে হত্যা করিবে? অতঃপর নিহতদের আত্মীয়রা তাকে হত্যা করিবে। অথবা সে কী করিবে? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন তোমার ও তোমার স্ত্রীর (ন্যায় ব্যক্তিদের) ব্যাপারেই সুরা নূরের আয়াত নাযিল হয়েছে। যাও! তোমার স্ত্রীকে নিয়ে আস। সাদ বলেন, তারা মসজিদে এসে লিআন করিল। আমি তখন লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)র নিকট ছিলাম। (রাবী বলেন) যখন তারা লিআন হইতে অবসর গ্রহণ করিল ওয়াইমির বললঃ এরপর যদি আমি তাকে রাখি তাহলে ধরতে হইবে যে, আমি তার উপর মিথ্যা আরোপ করছি। অতঃপর তিনি তার লিআনকৃতা স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে বিদায় করে দিলেন।
উল্লেখ্য এ হাদীসের মধ্যে সহাবী তিন তালাক এ কারণে দিয়েছিলেন যে, তিনি মনে করেছিলেন যে, মনে হয় লিআনের পরেও তার স্ত্রীর উপর তার অধিকার রয়েছে। কিন্তু লিআনের পরে স্বামীর স্ত্রীর উপর আর কোন অধিকার থাকে না। অতঃপর তালাক দেয়ার অধিকারও থাকে না। কারণ হাদীসের মধ্যে রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “তোমার তার উপরে কোন অধিকার নেই।”
লিআন করার পর ত্বলাক্বের প্রয়োজন হয় না। আর কোন দিন তারা একে অপরকে বিবাহ করিতে পারবে না। লিআন করার পর তাদের দুনিয়াতে কোন শাস্তি নেই। লিআনের পর যে প্রকৃত মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হইবে তার জন্য রয়েছে পরকালীন শাস্তি। এমনিভাবে তাকে দুনিয়াতে ব্যভিচারিণী ও তার সন্তানকে জারয বলা হইতে বিরত থাকতে হইবে। বিচারকমণ্ডলী তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিবেন। স্বামীর লিআনের পর আর কিছু করিতে হইবে না। তবে উক্ত স্ত্রীলোক যদি ইদ্দত অতিক্রম করার পর অন্যত্র বিবাহ করিতে চায় তাহলে বিবাহ করিতে পারবে। আল্লাহ আমাদের উক্ত নোংরামি থেকে হিফাযাতে রাখুন !
৫৩০০
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি তোমাদের বলব কি, আনসারদের সব চেয়ে উত্তম গোত্র কোনটি? তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হাঁ বলুন। তিনি বললেনঃ তারা বনূ নাজ্জার। এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী বনূ আবদুল আশ্হাল, এরপর তাদের নিকটবর্তী যারা বনূ হারিস ইবনু খাযরাজ। এরপর তাদের সন্নিকটে বনূ সাঈদা। এরপর তিনি হাত দ্বারা ইশারা করিলেন। হাতের আঙ্গুলগুলোকে সঙ্কুচিত করে আবার তা সম্প্রসারিত করিলেন। যেমন কেউ কিছু হাতের দ্বারা নিক্ষেপ করার সময় করে থাকে। এরপর বলেনঃ আনসারদের প্রতিটি গোত্রেই কল্যাণ নিহিত আছে।(আঃপ্রঃ- ৪৯০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৪)
লিআনঃ
লিআন অর্থ একে অপরকে অভিশাপ করা। শারীয়াতের পরিভাষায় এর অর্থঃ যে ব্যক্তি আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, কিন্তু এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারছে না।
আল্লাহ তাআলা সুরা নূরের ৬নং আয়াত হইতে ৯নং আয়াতে উক্ত সমস্যার সমাধান উল্লেখ করিয়াছেন। হাদীসে রসূলেও তার বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সুরা নূরের কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে-
আর যারা তাদের স্ত্রীদের উপর যিনার) অপবাদ আরোপ করে এবং তাদের নিকট নিজ ব্যতীত) অন্য কোন সাক্ষী না থাকে তবে তাদের সাক্ষী এই যে, চারবার আল্লাহর নামে কসম করে বলবে নিশ্চয় আমি সত্যবাদী এবং পঞ্চমবারে বলবে আমার উপর আল্লাহর লানত হোক, আমি যদি মিথ্যাবাদী হই। আর সেই স্ত্রীর শাস্তি রহিত হয়ে যাবে যদি সে আল্লাহর কসম খেয়ে চারবার এ কথা বলে সাক্ষী দেয় যে, তার স্বামী অবশ্যই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবারে বলবে যে, যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয় তাহলে আমার উপর আল্লাহর গযব হোক।সুরা আন-নূর ২৪ঃ ৬-৯)
বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ আছে- সাহল বিন সাদ সাঈদী রাযি.) বলেন, একদিন উমাইমির আজলানী এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কী বলেন, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অপর ব্যক্তিকে পায়, তবে কি সে তাকে হত্যা করিবে? অতঃপর নিহতদের আত্মীয়রা তাকে হত্যা করিবে। অথবা সে কী করিবে? নাবী ﷺ বলিলেন তোমার ও তোমার স্ত্রীর ন্যায় ব্যক্তিদের) ব্যাপারেই সুরা নূরের আয়াত নাযিল হয়েছে। যাও! তোমার স্ত্রীকে নিয়ে আস। সাদ বলেন, তারা মাসজিদে এসে লিআন করিল। আমি তখন লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ ﷺর নিকট ছিলাম। রাবী বলেন) যখন তারা লিআন হইতে অবসর গ্রহণ করিল ওয়াইমির বললঃ এরপর যদি আমি তাকে রাখি তাহলে ধরতে হইবে যে, আমি তার উপর মিথ্যা আরোপ করেছি। অতঃপর তিনি তার লিআনকৃতা স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে বিদায় করে দিলেন।
উল্লেখ্য এ হাদীসের মধ্যে সহাবী তিন তালাক এ কারণে দিয়েছিলেন যে, তিনি মনে করেছিলেন যে, মনে হয় লিআনের পরেও তার স্ত্রীর উপর তার অধিকার রয়েছে। কিন্তু লিআনের পরে স্বামীর স্ত্রীর উপর আর কোন অধিকার থাকে না। অতঃপর তালাক দেয়ার অধিকারও থাকে না। কারণ হাদীসের মধ্যে রাসুল বলেছেনঃ তোমার তার উপরে কোন অধিকার নেই।
লিআন করার পর তালাকের প্রয়োজন হয় না। আর কোন দিন তারা একে অপরকে বিবাহ করিতে পারবে না। লিআন করার পর তাদের দুনিয়াতে কোন শাস্তি নেই। লিআনের পর যে প্রকৃত মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হইবে তার জন্য রয়েছে পরকালীন শাস্তি। এমনিভাবে তাকে দুনিয়াতে ব্যভিচারিণী ও তার সন্তানকে জারয বলা হইতে বিরত থাকতে হইবে। বিচারকমন্ডলী তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিবেন। স্বামীর লিআনের পর আর কিছু করিতে হইবে না। তবে উক্ত স্ত্রীলোক যদি ইদ্দত অতিক্রম করার পর অন্যত্র বিবাহ করিতে চায় তাহলে বিবাহ করিতে পারবে। আল্লাহ আমাদের উক্ত নোংরামি থেকে হিফাযাতে রাখুন!
৫৩০১
সাহল ইবনু সাদ-সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর সহাবী সাহল ইবনু সাদ-সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার আগমন এবং কিয়ামতের মাঝে দুরত্ব এ আঙ্গুল থেকে এ আঙ্গুলের দুরত্বের মত। কিংবা তিনি বলেনঃ এ দুটির দুরত্বের মত। এই বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল দুটি মিলিত করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৫)
৫৩০২
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মাস এত, এত এবং এত দিনে হয়, অর্থাৎ ত্রিশ দিনে। তিনি আবার বললেনঃ মাস এত, এত ও এত দিনেও হয়। অর্থাৎ ঊনত্রিশ দিনে। তিনি বলিতেনঃ কখনও ত্রিশ দিনে আবার কখনও ঊনত্রিশ দিনে মাস হয়।[১৯০৮; মুসলিম ১৩/২, হাদীস ১০৮০, আহমাদ ৪৬১১] আঃপ্রঃ- ৪৯১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৬)
৫৩০৩
আবু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নিজ হাত দিয়ে ইয়ামানের দিকে ইঙ্গিত করে দুবার বললেনঃ ঈমান ওখানে। জেনে রেখ! অন্তরের কঠোরতা ও কাঠিন্য উট পালনকারীদের মধ্যে (কৃষকদের মাঝে)। যে দিকে শয়তানের দুটি শিং উদিত হইবে তাহলো (কঠোর হৃদয়) রাবীআ গোত্র ও মুযারা গোত্র।(আঃপ্রঃ- ৪৯১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৭)
৫৩০৪
সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনিভাবে নিকটে থাকবে। এই বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল দুটি দ্বারা ইঙ্গিত করিলেন এবং এ দুটির মাঝে কিঞ্চিত ফাঁক রাখলেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৮)
৬৮/২৬. অধ্যায়ঃ ইঙ্গিতে সন্তান অস্বীকার করা।
৫৩০৫
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার একটি কালো সন্তান জন্মেছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কিছু উট আছে কি? সে জবাব দিল হাঁ। তিনি বললেনঃ সেগুলোর রং কেমন? সে বললঃ লাল। তিনি বললেনঃ সেগুলোর মধ্যে কোনটি ছাই বর্ণের আছে কি? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তাহলে সেটিতে এমন রং কোত্থেকে এলো। লোকটি বললঃ সম্ভবত পূর্ববর্তী বংশের কারণে এমন হয়েছে। তিনি বললেনঃ তাহলে হইতে পারে, তোমার এ সন্তানও বংশগত কারণে এমন হয়েছে। [৬৮৪৭, ৭৩১৪; মুসলিম ১৯/হাদীস ১৫০০, আহমাদ ৭২৬৮] আঃপ্রঃ- ৪৯১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৯)
৬৮/২৭. অধ্যায়ঃ লিআনকারীকে শপথ করানো।
৫৩০৬
আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আনসারদের এক তার স্ত্রীকে অপবাদ দিল। নাবী (সাঃআঃ) দুজনকেই শপথ করালেন এবং তাদেরকে পৃথক করেন দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১০)
৬৮/২৮. অধ্যায়ঃ পুরুষকে প্রথমে লিআন করানো হইবে।
৫৩০৭
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, হিলাল ইবনু উমাইয়্যা তার স্ত্রীকে (যিনার) অপবাদ দেয়। তিনি এসে সাক্ষ্য দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিতে লাগলেনঃ আল্লাহ তাআলা অবশ্যই জানেন তোমাদের দুজনের একজন তো মিথ্যাচারী। অতএব কে তোমাদের দুজনের মধ্যে তাওবাহ করিতে প্রস্তুত আছ? এরপর স্ত্রী লোকটি দাঁড়াল এবং (নিজের দোষমুক্তির) সাক্ষ্য দিল।(আঃপ্রঃ- ৪৯১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১১)
৬৮/২৯. অধ্যায়ঃ লিআন এবং লিআনের পর তালাক দেয়া।
৫৩০৮
সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, উওয়াইমির আজলানী (রাদি.) আসিম ইবনু আদী আনসারী (রাদি.)- এর কাছে এসে বললেনঃ হে আসিম! কী বল, যদি কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে অপর লোককে (ব্যভিচার-রত অবস্থায়) পায়, তবে সে কি তাকে হত্যা করিবে? আর এতে তোমরাও কি তাকে হত্যা করিবে? (যদি সে হত্যা না করে) তাহলে কী করিবে? হে আসিম! আমার এ ব্যাপারটি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে জিজ্ঞেস কর। এরপর আসিম (রাদি.) এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে জিজ্ঞেস করিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ অপছন্দ করিলেন এবং অশোভনীয় মনে করিলেন। এমন কি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে আসিম (রাদি.) যা শুনলেন, তাতে তার খুব খারাপ লাগল। আসিম (রাদি.) বাড়ি ফিরলে উওয়াইমির এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আসিম?! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তোমাকে কী উত্তর দিলেন? আসিম (রাদি.) উওয়াইমিরকে বললেনঃ তুমি আমার কাছে কোন ভাল কাজ নিয়ে আসনি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে অপছন্দ করিয়াছেন, সে সম্বন্ধে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। উওয়াইমির (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর শপথ! তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস না করে ক্ষান্ত হব না। এরপর উওয়াইমির (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট এসে তাঁকে লোকদের মাঝে পেলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)! কী বলেন, কেউ যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য লোককে (ব্যভিচার-রত) দেখিতে পায়, সে কি তাকে হত্যা করিবে? আর আপনারাও কি তাকে হত্যার বদলে হত্যা করবেন? না হলে সে কী করিবে? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার ও তোমার স্ত্রীর সম্পর্কে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যাও তাকে নিয়ে এসো। সাহল (রাদি.) বলেন, তারা উভয়ে লিআন করিল। যে সময় আমি লোকদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকটে ছিলাম। উভয়ে লিআন করা শেষ করলে উওয়াইমির বললঃ হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)! যদি আমি তাকে (স্ত্রী হিসাবে) রাখি, তবে আমি তার উপর মিথ্যারোপ করেছি বলে প্রমাণিত হইবে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে নির্দেশ দেয়ার আগেই তিনি স্ত্রীকে তিন তালাক দিলেন। ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দেয়াই পরবর্তীতে লিআনকারীদ্বয়ের সম্পর্কিত বিধান প্রচলিত হয়ে গেল হিসাবে পরিগণিত হলো। (আঃপ্রঃ- ৪৯১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১২)
৬৮/৩০. অধ্যায়ঃ মসজিদে লিআন করা।
৫৩০৯
ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিআন ও তার হুকুম সম্বন্ধে সাদ গোত্রের সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, আনসারদের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কী বলেন, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য লোককে দেখিতে পায়, তবে কি সে তাকে হত্যা করিবে? অথবা কী করিবে? এরপর আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে কুরআনে উল্লেখিত লিআনের বিধান অবতীর্ণ করেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহ তোমার ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে ফয়সালা দিয়েছেন। রাবী বলেনঃ আমি উপস্থিত থাকতেই তারা উভয়ে মসজিদে লিআন করিল। উভয়ের লিআন করা শেষ হলে সে ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি তাকে স্ত্রী হিসাবে রেখে দেই; তবে তার উপর মিথ্যারোপ করেছি বলে গণ্য হইবে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে নির্দেশ দেয়ার আগেই সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর সামনেই সে তার থেকে পৃথক হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ এই সম্পর্কচ্ছেদই প্রত্যেক লিআনকারীদ্বয়ের জন্য বিধান। ইবনু জুরাইজ বলেন, ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ তাদের পর লিআনকারীদ্বয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোর হুকুম চালু হয়। মহিলাটি ছিল গর্ভবতী। তার বাচ্চাকে মায়ের পরিচয়ে ডাকা হত। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর ওয়ারিশের ব্যাপারেও হুকুম জারি হল যে, মহিলা সন্তানের ওয়ারিশ হইবে এবং সন্তানও তার ওয়ারিশ হইবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করিয়াছেন।
ইবনু জুরাইজ, ইবনু শিহাবের সূত্রে সাহল ইবনু সাদ সাঈদী থেকে এ হাদীস সম্পর্কে বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি ঐ স্ত্রীলোকটি ওহরার (এক রকম ছোট প্রাণীর) মতো লাল ও বেঁটে সন্তান জন্ম দেয়, তবে বুঝব মহিলাই সত্য বলেছে, আর লোকটি তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। আর যদি সে কালো চক্ষু বিশিষ্ট বড় নিতম্বযুক্ত সন্তান জন্ম দেয়, তবে বুঝব, লোকটি সত্যই বলেছে। উক্ত মহিলা অপছন্দনীয় আকৃতির বাচ্চা প্রসব করে।(আঃপ্রঃ- ৪৯১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৩)
৬৮/৩১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)- এর উক্তি আমি যদি সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতীত রজম করতাম।
৫৩১০
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে লিআন করার ব্যাপারটি আলোচিত হল। আসিম ইবনু আদী (রাদি.) এ ব্যাপারে একটি কথা জিজ্ঞেস করে চলে গেলেন। এরপর তাহাঁর গোত্রের এক ব্যক্তি তার কাছে এসে অভিযোগ করিল যে, সে তার স্ত্রীর সাথে অন্য এক লোককে পেয়েছে। আসিম (রাদি.) বললেনঃ অযথা জিজ্ঞাসার কারণেই আমি এ ধরনের বিপদে পড়তাম। এরপর তিনি লোকটিকে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে গেলেন এবং অভিযোগকারীর ব্যাপারটি তাঁকে জানালেন। লোকটি ছিল হলদে শীর্ণকায় ও সোজা চুল বিশিষ্ট। আর ঐ লোকটি যাকে তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছে বলে সে অভিযুক্ত করে সে ছিল প্রায় কালো, স্থুল দেহের অধিকারী। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ হে আল্লাহ ! সমস্যাটি সমাধান করে দিন। এরপর মহিলা ঐ লোকটির আকৃতি বিশিষ্ট সন্তান জন্ম দিল, যাকে তার স্বামী তার কাছে পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছিল। নাবী (সাঃআঃ) তাদের (স্বামী-স্ত্রী) উভয়কে লিআন করালেন। এক ব্যক্তি ইবনু আব্বাস (রাদি.)- কে সে মসলিসেই জিজ্ঞেস করলঃ এ মহিলা সম্বন্ধেই কি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছিলেন? “আমি যদি কাউকে বিনা প্রমাণে রজম করতাম, তবে একেই রজম করতাম।” ইবনু আব্বাস (রাদি.) বললেনঃ না, সে ছিল এক মহিলা, যে মুসলিম সমাজে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকত। আবু সলিহ ও আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফের বর্ণনায় خَدِلاَ اَدَمَ শব্দ এসেছে। [৫৩১৬, ৬৮৫৫, ৬৮৫৬, ৭২৩৮; মুসলিম ১৯/হাদীস ১৪৯৭, আহমাদ ৩৩৬০] আঃপ্রঃ- ৪৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৪)
৬৮/৩২. অধ্যায়ঃ লিআনকারীণীর মোহর।
৫৩১১
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু উমারকে জিজ্ঞেস করলাম, এক লোক তার স্ত্রীকে অপবাদ দিল- (তার বিধান কী?) তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) বনূ আজলানের স্বামী-স্ত্রীর দুজনকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেনঃ আল্লাহ তাআলা জানেন তোমাদের একজন অবশ্যই মিথ্যাচারী। কাজেই তোমাদের কেউ তাওবাহ করিতে রাযী আছ কি? তারা দুজনেই অস্বীকার করিল। তিনি পুনরায় বললেনঃ আল্লাহ তাআলা অবহিত আছেন তোমাদের একজন মিথ্যাচারী, সুতরাং কেউ তাওবাহ করিতে প্রস্তুত আছ কি? তারা আবারও অস্বীকার করিল। তিনি পুনরায় বললেনঃ আল্লাহ তাআলা অবহিত আছেন তোমাদের একজন মিথ্যাচারী সুতরাং কেউ তাওবাহ করিতে প্রস্তুত আছ কি? তারা আবারও অস্বীকার করিল। এরপর তিনি তাদেরকে পৃথক করে দেন। আইয়ুব বলেনঃ আমাকে আমর ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, এ হাদীসে আরও কিছু কথা আছে, তোমাকে তা বর্ণনা করিতে দেখছি না কেন? তিনি বলেন, লোকটি বললঃ আমার (দেয়া) মালের কী হইবে? তাকে বলা হল তোমার মাল ফিরে পাবে না। যদি তুমি সত্যবাদী হও, (তবুও পাবে না)। (কেননা) তুমি তার সঙ্গে সহবাস করেছ। আর যদি তুমি মিথ্যাচারী হও, তবে তা পাওয়া তো বহু দূরের ব্যাপার।(আঃপ্রঃ- ৪৯২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৫)
৬৮/৩৩. অধ্যায়ঃ লিআনকারীদ্বয়কে ইমামের এ কথা বলা যে, নিশ্চয় তোমাদের কোন একজন মিথ্যাচারী, তাই তোমাদের কে তাওবা করিতে প্রস্তুত আছ ?
৫৩১২
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি লিআনকারীদ্বয় সম্পর্কে ইবনু উমারকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেনঃ নাবী (সাঃআঃ) লিআনকারীদ্বয়কে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ তোমাদের হিসাব নেয়ার দায়িত্ব আল্লাহরই। তোমাদের একজন অবশ্যই মিথ্যাচারী। স্ত্রীর উপর তোমার কোন অধিকার নেই। লোকটি বললঃ তবে আমার মালের কী হইবে? তিনি বললেনঃ তুমি কোন মাল পাবে না। যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে এর বদলে তুমি তার লজ্জাস্থানকে হালাল করে নিয়েছিলে। আর যদি তার উপর মিথ্যারোপ করে থাক, তবে তা তো বহুদূরের ব্যাপার। সুফ্ইয়ান বলেনঃ আমি এ হাদীস আমর (রাদি.)- এর নিকট হইতে মুখস্থ করেছি। আইয়ুব বলেন, সাঈদ ইবনু যুবায়র-এর কাছে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাদি.)- কে জিজ্ঞেস করলামঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে লিআন করিল (এখন তাদের বিধান কী?) তিনি তাহাঁর দু আঙ্গুল ইশারা করে বলিলেন, সুফ্ইয়ান তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল ফাঁক করে বলিলেন নাবী (সাঃআঃ) বনূ আজলানের এক দম্পত্তির বৈবাহিক সম্পর্ক এভাবে ছিন্ন করে দেন এবং বলেনঃ আল্লাহ তাআলা জানেন যে, তোমাদের একজন অবশ্যই মিথ্যাচারী। সুতরাং কেউ তাওবাহ করিতে প্রস্তুত আছ কি? এভাবে তিনি তিনবার বলিলেন। সুফ্ইয়ান বলেনঃ আমি তোমাকে যেভাবে হাদীসটি শুনাচ্ছি এভাবেই আমি আমর ও আইয়ুব (রাদি.) থেকে মুখস্থ করেছি।(আঃপ্রঃ- ৪৯২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৬)
৬৮/৩৪. অধ্যায়ঃ লিআনকারীদ্বয়কে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।
৫৩১৩
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, জনৈক পুরুষ তার স্ত্রীকে অপবাদ দিলে, নাবী (সাঃ) উভয়কে শপথ করান, এরপর বিচ্ছিন্ন করে দেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৭)
৫৩১৪
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) এক আনসার ও তার স্ত্রীকে লিআন করান এবং তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। (আঃপ্রঃ- ৪৯২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৮)
৬৮/৩৫. অধ্যায়ঃ লিআনকারিণীকে সন্তান অর্পণ করা হইবে।
৫৩১৫
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) এক লোক ও তার স্ত্রীকে লিআন করালেন এবং সন্তানের পৈত্রিক সম্পর্ক ছিন্ন করে উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। আর সন্তান মহিলাকে দিয়ে দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৯)
৬৮/৩৬. অধ্যায়ঃ ইমামের উক্তিঃ হে আল্লাহ! সত্য প্রকাশ করে দিন।
৫৩১৬
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লিআনকারী দম্পতিদ্বয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর সম্মুখে আলোচনা হচ্ছিল। ইতোমধ্যে আসিম ইবনু আদী (রাদি.) এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে গেলেন। এরপর তার গোত্রের এক লোক তার কাছে এসে জানাল যে, সে তার স্ত্রীর সঙ্গে এক লোককে পেয়েছে। আসিম বলিলেন, অযথা জিজ্ঞাসাবাদের দরুনই আমি এ বিপদে পড়লাম। এরপর তিনি তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে গেলেন এবং যে লোকটিকে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে পেয়েছে, তার সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)- কে জানালেন। অভিযোগকারী ছিলেন হলদে শীর্ণকায় ও সোজা চুল বিশিষ্ট। আর তার স্ত্রীর কাছে পাওয়া লোকটি ছিল মোটা ধরনের স্থুলকায় ও খুব কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি সত্য প্রকাশ করে দিন। এরপর মহিলা ঐ লোকটির আকৃতির একটি সন্তান জন্ম দেয়, যাকে তার স্বামী তার সঙ্গে পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উভয়কেই লিআন করালেন। এক ব্যক্তি ইবনু আব্বাস (রাদি.)- কে সেই মজলিসেই জিজ্ঞেস করিল, ঐ মহিলা সম্বন্ধেই কি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছিলেনঃ আমি যদি বিনা প্রমাণে কাউকে রজম করতাম তাহলে একে রজম করতাম? ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ না, সে ছিল অন্য এক মহিলা সে মুসলিম সমাজে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকত।(আঃপ্রঃ- ৪৯২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২০)
৬৮/৩৭. অধ্যায়ঃ যদি মহিলাকে তিন তালাক দেয় অতঃপর ইদ্দাত শেষে সে অন্য স্বামীর কাছে বিয়ে বসে, কিন্তু সে তাঁকে স্পর্শ (সঙ্গম) করিল না।
৫৩১৭
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন। (হাদীসটি নিম্নলিখিত হাদীসের মতই)।
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, রিফাআহ কুরাযী এক স্ত্রীলোককে বিয়ে করে পরে তালাক দেয়। এরপর স্ত্রীলোকটি অন্য স্বামী গ্রহণ করে। পরে সে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে এসে তাঁকে জানালো যে, সে (স্বামী) তার কাছে আসে না, আর তার কাছে কাপড়ের কিনারার মত বস্তু ছাড়া কিছুই নেই। তিনি বললেনঃ তা হইবে না, যে পর্যন্ত তুমি তার কিছু মধু আস্বাদন না করিবে, আর সেও তোমার কিঞ্চিত মধু আস্বাদন না করিবে (ততক্ষণ প্রথম স্বামীর কাছে যাওয়া যাবে না)।(আঃপ্রঃ- ৪৯২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২২)
৬৮/৩৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের হায়িয বন্ধ হয়ে গেছে………. যদি তোমাদের সন্দেহ দেখা দেয় তাদের ইদ্দাত তিন মাস এবং তাদেরও যাদের এখনও হায়িয আসা আরম্ভ হয়নি।” (সুরা আত্-ত্বলাকঃ ৪)
মুজাহিদ বলেনঃ যদিও তোমারা না জান যে, তাদের হায়িয হইবে কিনা। যাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে এবং যাদের এখনো আরম্ভ হয়নি, তাদের ইদ্দাত তিন মাস।
৬৮/৩৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “গর্ভবতী মহিলাদের ইদ্দত কাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।” (সুরা আত-ত্বলাকঃ ৪)
৫৩১৮
সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)- এর সহধর্মিণী সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, আসলাম গোত্রের সুবায়আ নামের এক স্ত্রীলোককে তার স্বামী গর্ভাবস্থায় রেখে মারা যায়। এরপর আবু সানাবিল ইবনু বাকাক (রাদি.) তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মহিলা তাকে বিয়ে করিতে অস্বীকার করে। সে (আবু সানাবিলা) বললঃ আল্লাহর শপথ! দুটি মেয়াদের মধ্যে দীর্ঘতর মেয়াদ অনুসারে ইদ্দাত পালন না করা পর্যন্ত তোমার জন্য অন্যত্র বিয়ে করা জায়িয হইবে না। এর প্রায় দশ দিনের মধ্যেই সে সন্তান প্রসব করে। এরপর সে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে আসলে তিনি বললেনঃ এখন তুমি বিয়ে করিতে পার।(আঃপ্রঃ- ৪৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৩)
কিতাবুল ইদ্দাত [১]
[১] আল্লামা বাদরুদ্দীন আইনী তাহাঁর সহীহুল বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ উমদাতুলকারীতে পাঠকের সুবিধার্থে এ অতিরিক্ত পর্বটি উল্লেখ করিয়াছেন। যেহেতু এটি অতিরিক্ত সেহেতু আমরা এটিকে নম্বরের অন্তর্ভুক্ত করলাম না।
৫৩১৯
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ইবনু আরকামের নিকট একটি পত্র লিখলেন যে, তুমি সুবায়আ আস্লামীয়াকে জিজ্ঞেস কর, নাবী (সাঃআঃ) তাকে কী প্রকারের ফতোয়া দিয়েছিলেন? সে বললঃ তিনি আমাকে সন্তান প্রসব করার পর বিয়ে করার ফতোয়া দিয়েছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৪)
৫৩২০
মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, সুবায়আ আসলামীয়া তার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর সন্তান প্রসব করে। এরপর সে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে এসে বিয়ে করার অনুমতি প্রার্থনা করে, তিনি তাকে অনুমতি দেন। তখন সে বিয়ে করে।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৫)
৬৮/৪০. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তালাকপ্রাপ্তা মহিলারা তিন কুরূ পর্যন্ত অপেক্ষা করিবে। (সুরা আল-বাক্বারা ২/২২৮)
ইবরাহীম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইদ্দাতের মধ্যে বিয়ে করে, এরপর মহিলা তার কাছে হায়িয পর্যন্ত অবস্থান করার পর দ্বিতীয় স্বামীও যদি তাকে তালাক দেয়, তবে সে প্রথম স্বামী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। উক্ত তিন হায়িয তৃতীয় স্বামীর গ্রহণের জন্য যথেষ্ট হইবে না। (বরং তার জন্য নতুনভাবে ইদ্দাত পালন করিতে হইবে।) কিন্তু যুহরী বলেছেনঃ যথেষ্ট হইবে। সুফ্ইয়ান যুহরীর মতকে পছন্দ করিয়াছেন।
মামার বলেন, মহিলা কুরু যুক্ত হয়েছে তখনি বলা হয়, যখন তার হায়িয বা তুহুর আসে। ——————তখন বলা হয়, যখন মহিলা গর্ভে কোন সন্তান ধারণ না করে।” (অর্থাৎ কুরূ অর্থ ধারণ করা বা একত্রিত করাও হয়)
৬৮/৪১. অধ্যায়ঃ ফাতিমা বিনত কায়সের ঘটনা
এবং মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় কর। তাদেরকে তাদের বাসগৃহ থেকে বের করে দিও না, আর তারা নিজেরাও যেন বের হয়ে না যায়, যদি না তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। যে কেউ আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করে, সে নিজের উপরই যুল্ম করে। তোমরা জান না, আল্লাহ হয়তো এরপরও (স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার) কোন উপায় বের করে দিবেন ————(ইদ্দাতকালে) নারীদেরকে সেভাবেই বসবাস করিতে দাও যেভাবে তোমরা বসবাস কর তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী…….. আল্লাহ কষ্টের পর আরাম দিবেন।” (সুরা আত-তালাক ৬৫/১-৭)
৫৩২১
কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ ও সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইবনু আস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুর রহমান ইবনু হাকাম এর কন্যাকে তালাক দিলে আবদুর রহমান তাকে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.)- এর কাছে নিয়ে গেলে, তিনি মাদীনাহর শাসনকর্তা মারওয়ানের কাছে বলে পাঠালেনঃ আল্লাহকে ভয় কর, আর তাকে তার ঘরে ফিরিয়ে দাও। মারওয়ান বলেন, সুলাইমানের বর্ণনায় আবদুর রহমান আমাকে যুক্তিতে হারিয়ে দিয়েছে। কাসিম ইবনু মুহাম্মাদের বর্ণনায় তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনত কায়সের ঘটনা কি আপনার কাছে পৌঁছেনি? তিনি বললেনঃ (আয়েশা) ফাতিমাহ বিনত কায়সের ঘটনা মনে না রাখলে তোমার কোন ক্ষতি হইবে না। মারওয়ান বললেনঃ যদি মনে করেন ফাতিমাহকে বের করার পেছনে তার মন্দ আচরণ কাজ করেছে, তবে বলব, এখানে সে মন্দ আচরণ বিদ্যমান আছে।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৬)
৫৩২২
কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ ও সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইবনু আস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুর রহমান ইবনু হাকাম এর কন্যাকে তালাক দিলে আবদুর রহমান তাকে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.)- এর কাছে নিয়ে গেলে, তিনি মাদীনাহর শাসনকর্তা মারওয়ানের কাছে বলে পাঠালেনঃ আল্লাহকে ভয় কর, আর তাকে তার ঘরে ফিরিয়ে দাও। মারওয়ান বলেন, সুলাইমানের বর্ণনায় আবদুর রহমান আমাকে যুক্তিতে হারিয়ে দিয়েছে। কাসিম ইবনু মুহাম্মাদের বর্ণনায় তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনত কায়সের ঘটনা কি আপনার কাছে পৌঁছেনি? তিনি বললেনঃ (আয়েশা) ফাতিমাহ বিনত কায়সের ঘটনা মনে না রাখলে তোমার কোন ক্ষতি হইবে না। মারওয়ান বললেনঃ যদি মনে করেন ফাতিমাহকে বের করার পেছনে তার মন্দ আচরণ কাজ করেছে, তবে বলব, এখানে সে মন্দ আচরণ বিদ্যমান আছে।( মুসলিম ১৮/৬, হাদীস ১৪৮১] আঃপ্রঃ- ৪৯৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৬)
৫৩২৩
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ফাতিমার কী হল? সে কেন আল্লাহকে ভয় করছে না অর্থাৎ তার এ কথায় যে, ত্বলাকপ্রাপ্তা নারী (তার স্বামীর থেকে) খাদ্য ও বাসস্থান কিছুই পাবে না।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৭)
৫৩২৪
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ফাতিমার কী হল? সে কেন আল্লাহকে ভয় করছে না অর্থাৎ তার এ কথায় যে, ত্বলাকপ্রাপ্তা নারী (তার স্বামীর থেকে) খাদ্য ও বাসস্থান কিছুই পাবে না।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৭)
৫৩২৫
কাসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আয়েশা (রাদি.)- কে জিজ্ঞেস করলঃ আপনি কি জানেন না, হাকামের কন্যা অমুককে তার স্বামী তিন তালাক দিলে, সে (তার পিত্রালয়ে) চলে গিয়েছিল। আয়েশা বললেনঃ সে মন্দ কাজ করেছে। উরওয়াহ বললেনঃ আপনি কি ফাতিমার কথা শোনেননি, তিনি বললেনঃ এ হাদীস বর্ণনায় তার কোন কল্যাণ নেই। ইবনু আবুয্যিনাদ হিশাম সূত্রে তার (হিশামের) পিতা থেকে আরও বর্ণনা করেন যে, আয়েশা (রাদি.) এ কথাকে অত্যন্ত দূষণীয় মনে করেন। তিনি আরও বলেন, ফাতিমা একটা ভীতিকর স্থানে থাকত, তার উপর ভয়ভীতির আশঙ্কা থাকায় নাবী (সাঃআঃ) তাকে (স্থান পরিবর্তনের) রুখসত দেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৮)
৫৩২৬
কাসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আয়েশা (রাদি.)- কে জিজ্ঞেস করলঃ আপনি কি জানেন না, হাকামের কন্যা অমুককে তার স্বামী তিন তালাক দিলে, সে (তার পিত্রালয়ে) চলে গিয়েছিল। আয়েশা বললেনঃ সে মন্দ কাজ করেছে। উরওয়াহ বললেনঃ আপনি কি ফাতিমার কথা শোনেননি, তিনি বললেনঃ এ হাদীস বর্ণনায় তার কোন কল্যাণ নেই। ইবনু আবুয্যিনাদ হিশাম সূত্রে তার (হিশামের) পিতা থেকে আরও বর্ণনা করেন যে, আয়েশা (রাদি.) এ কথাকে অত্যন্ত দূষণীয় মনে করেন। তিনি আরও বলেন, ফাতিমা একটা ভীতিকর স্থানে থাকত, তার উপর ভয়ভীতির আশঙ্কা থাকায় নাবী (সাঃআঃ) তাকে (স্থান পরিবর্তনের) রুখসত দেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৮)
৬৮/৪২. অধ্যায়ঃ স্বামীর গৃহে অবস্থান করলে যদি তালাকপ্রাপ্তা নারী তার স্বামীর পরিবারের লোকজনের গালমন্দ দেয়ার বা তার ঘরে চোর ইত্যাদির প্রবেশ করার ভয় করে।
৫৩২৭
উরওয়াহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আয়েশা (রাদি.) ফাতিমার কথাকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৯)
৫৩২৮
উরওয়াহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আয়েশা (রাদি.) ফাতিমার কথাকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৪৯৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৯)
৬৮/৪৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “তাদের জন্য গোপন করা বৈধ হইবে না যা আল্লাহ তাদের জরায়ুতে সৃষ্টি করিয়াছেন” (সুরা আল-বাক্বরাহ ২:২২৮) হায়িয বা গর্ভসঞ্চার
৫৩২৯
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (হাজ্জ শেষে) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন রওয়ানা হওয়ার ইচ্ছা করিলেন, তখন সফীয়্যাহ (রাদি.) দুঃখিত হয়ে স্বীয় তাঁবুর দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি তাকে বললেনঃ বড় সমস্যায় ভুগছি, তুমি তো আমাদের আটকে রাখবে। আচ্ছা তুমি কি তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করেছ? বললেনঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ তা হলে এখন বেরিয়ে পড়।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৩০)
৬৮/৪৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “তালাকপ্রাপ্তাদের স্বামীরা (ইদ্দাতের মধ্যে) তাদের ফিরিয়ে আনার অগ্রাধিকার রাখে।” (সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২২৮)
এবং এক বা দুত্বলাক্বের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার নিয়ম সম্পর্কিত।
৫৩৩০
হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ মাকাল তার বোনকে বিয়ে দিয়েছিল, অতঃপর তার স্বামী তাকে এক তালাক দেয়।(আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৩১)
৫৩৩১
হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, মাকাল ইবনু ইয়াসারের বোন এক ব্যক্তির বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। সে তাকে তালাক দিল। পুনরায় ফিরিয়ে আনল না, এভাবে তার ইদ্দাত শেষ হয়ে গেলে সে আবার তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিল। মাকাল (রাদি.) এতে রাগান্বিত হলেন, তিনি বলিলেন, সময় মত ফিরিয়ে নিল না, এখন আবার প্রস্তাব দিচ্ছে। তিনি তাদের মাঝে (বিয়ের ব্যাপারে) বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। এরপর আল্লাহ তাআলা এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা তাদের ইদ্দাত পূর্ণ করে, তখন তারা নিজেদের স্বামীদেরকে বিবাহ করিতে চাইলে তোমরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করো না……… (সুরা আল-বাক্বারা ২/২৩২)। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে ডাকলেন এবং তার সম্মুখে আয়াতটি পাঠ করিলেন। তিনি তার অহমিকা পরিত্যাগ করতঃ আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৩২)
৫৩৩২
নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, ইবনু উমার (রাদি.) তাহাঁর স্ত্রীকে ঋতুবতী অবস্থায় এক তালাক দেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে আদেশ দিলেন, তিনি যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনেন এবং মহিলা পবিত্র হয়ে আবার ঋতুবতী হয়ে পরবর্তী পবিত্রা অবস্থা আসা পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রাখেন। পবিত্র অবস্থায় যদি তাকে তালাক দিতে চায় তবে সঙ্গমের পূর্বে ত্বলাক দিতে হইবে। এটাই ইদ্দাত, যে সময় স্ত্রীদেরকে তালাক দেয়ার জন্য আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তাদের বলেনঃ তুমি যদি তাকে তিন তালাক দিয়ে দাও, তবে স্ত্রীলোকটি অন্য স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত তোমার জন্য হারাম হয়ে যাবে। অন্য বর্ণনায় ইবন উমার (রাদি.) বলিতেন, তুমি যদি এক বা দুতালাক দিতে কারণ নাবী (সাঃআঃ) আমাকে এরকমই নির্দেশ দিয়েছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৩৩)
৬৮/৪৫. অধ্যায়ঃ ঋতুবতীকে ফিরিয়ে নেয়া।
৫৩৩৩
ইউনুস ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু উমারকে (হায়িয অবস্থায় তালাক দেয়া সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ ইবনু উমার (রাদি.) তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিলে, উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)- কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দেন। এরপর বলেনঃ ইদ্দাতের সময় আসলে সে তালাক দিতে পারে। রাবী বলেন, আমি বললাম, এ তালাক কি হিসাবে গণ্য করা হইবে? ইবনু উমার বললেনঃ তবে কি মনে করছ, যদি সে অক্ষম হয় বা বোকামি করে। (তাহলে দায়ী কে?)(আঃপ্রঃ- ৪৯৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৩৪)
Leave a Reply