লিআন বিষয়ক হাদিস । লুলু অয়াল মারজান

লিআন বিষয়ক হাদিস । লুলু অয়াল মারজান

লিআন বিষয়ক হাদিস । লুলু অয়াল মারজান , এই পর্বের হাদীস =৬ টি (৯৫২-৯৫৭) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-১৯ঃ লিআন

লিআন

৯৫২. সাহ্ল ইবনি সাদ সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উওয়াইমার আজলানী [রাদি.] আসিম ইবনি আদী আনসারী [রাদি.]-এর কাছে এসে বললেনঃ হে আসিম! কী বল, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অপর ব্যক্তিকে [ব্যভিচার-রত অবস্থায়] পায়, তবে সে কি তাকে হত্যা করিবে? আর এতে তোমরাও কি তাকে হত্যা করিবে? [যদি সে হত্যা না করে] তাহলে কী করিবে? হে আসিম! তুমি আমার এ বিষয়টি আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস কর। এরপর আসিম [রাদি.] এ ব্যাপারে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন। আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ অপছন্দ করিলেন এবং অশোভনীয় মনে করিলেন। এমন কি আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] থেকে আসিম [রাদি.] যা শুনলেন, তাতে তার খুব খারাপ লাগল। আসিম [রাদি.] গৃহে প্রত্যাবর্তন করলে উওয়াইমির এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আসিম! আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] তোমাকে কি উত্তর দিলেন? আসিম [রাদি.] উওয়াইমিরকে বললেনঃ তুমি আমার কাছে কোন ভাল কাজ নিয়ে আসনি। আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে অপছন্দ করিয়াছেন, সে সম্বন্ধে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। উওয়াইমির [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস না করে ক্ষান্ত হব না। এরপর উওয়াইমির [রাদি.] আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে তাঁকে লোকদের মাঝে পেলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! কী বলেন, কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীর সাথে অপর ব্যক্তিকে [ব্যভিচার-রত] দেখিতে পায়, সে কি তাকে হত্যা করিবে? আর আপনারাও কি তাকে হত্যার বদলে হত্যা করবেন? অন্যথায় সে কী করিবে? আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যাও তাকে নিয়ে এসো। সাহ্ল [রাদি.] বলেন, তারা উভয়ে লিআন করিল। সে সময় আমি লোকদের সাথে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকটে ছিলাম। উভয়ে লিআন করা সমাপ্ত করলে উওয়াইমির বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! যদি আমি তাকে [স্ত্রী হিসাবে] রাখি, তবে আমি তার উপর মিথ্যারোপ করেছি বলে প্রমাণিত হইবে। এরপর আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] তাকে নির্দেশ দেয়ার পূর্বেই তিনি স্ত্রীকে তিন ত্বলাক্ব দিলেন। ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ উভয়কে পৃথক করে দেয়াই পরবর্তীতে লিআনকারীদ্বয়ের হুকুম হিসাবে পরিগণিত হলো।

[বোখারী পর্ব ৬৮ : /৪, হাঃ ৫৩০৮; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯২] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৯৫৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] লিআনকারী স্বামী-স্ত্রীকে বলেছিলেন, আল্লাহ্‌ই তোমাদের হিসাব গ্রহণ করবেন। তোমাদের একজন মিথ্যুক। তার [মহিলার] উপর তোমার কোন অধিকার নেই। সে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমার মাল? তিনি বললেনঃ তোমার কোন মাল নেই। তুমি যদি সত্যই বলে থাক, তাহলে এ মাল তার লজ্জাস্থানকে হালাল করার বিনিময়ে হইবে। আর যদি মিথ্যা বলে থাক, তবে এটা চাওয়া তোমার জন্য একান্ত অনুচিত।

[বোখারী পর্ব ৬৮ : /৫৩, হাঃ ৫৩৫০; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯৩] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৯৫৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীকে লিআন করালেন এবং সন্তানের পৈতৃক সম্পর্ক ছিন্ন করে উভয়কে পৃথক করে দিলেন। আর সন্তান মহিলাকে দিয়ে দিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৮ : /৩৫, হাঃ ৫৩১৫; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯৩] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৯৫৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নু আদী [রাদি.] এ ব্যাপারে একটি কথা জিজ্ঞেস করে চলে গেলেন। এরপর তাহাঁর গোত্রের এক ব্যক্তি তার কাছে এসে অভিযোগ করিল যে, সে তার স্ত্রীর সাথে অপর এক ব্যক্তিকে পেয়েছে। আসিম [রাদি.] বললেনঃ অযথা জিজ্ঞাসার কারণেই আমি এ ধরনের বিপদে পড়তাম। এরপর তিনি লোকটিকে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলেন এবং অভিযোগকারীর বিষয়টি তাঁকে অবহিত করিলেন। লোকটি ছিল হলদে হালকা দেহ ও সোজা চুল বিশিষ্ট। আর ঐ লোকটি যাকে তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছে বলে সে অভিযুক্ত করে সে ছিল প্রায় কালো, মোটা ধরনের স্থুল দেহের অধিকারী। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আল্লাহ্‌! সমস্যাটি সমাধান করে দিন। এরপর মহিলা ঐ লোকটির আকৃতি বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করিল, যাকে তার স্বামী তার কাছে পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছিল। নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের [স্বামী-স্ত্রী] উভয়কে লিআন করালেন। এক ব্যক্তি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে সে বৈঠকেই জিজ্ঞেস করলঃ এ মহিলা সম্বন্ধেই কি আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] বলেছিলেন, “আমি যদি কাউকে বিনা প্রমাণে রজম করতাম, তবে একেই রজম করতাম”? ইবনি আব্বাস [রাদি.] বললেনঃ না, সে ছিল [অন্য এক] মহিলা, যে মুসলিম সমাজে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকত।

[বোখারী পর্ব ৬৮: /৩১, হাঃ ৫৩১০; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯৭] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৯৫৬. মুগীরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, সাদ ইবনি উবাদাহ [রাদি.] বলিলেন, আমি আমার স্ত্রীর সাথে অন্য কোন পুরুষকে যদি দেখি, তাকে সোজা তরবারি দ্বারা হত্যা করব। এ উক্তি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি সাদের আত্মমর্যাদাবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি তার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। আর আল্লাহ্ আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। আল্লাহ্ আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন হওয়ার কারণে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য [সর্বপ্রকার] অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন। অক্ষমতা প্রকাশকে আল্লাহ্ অপেক্ষা অধিক পছন্দ করেন এমন কেউই নেই। আর এইজন্য তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদ দাতাহাদেরকে পাঠিয়েছেন। আত্মস্তুতি আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক কারো কাছে প্রিয় নয়। তাই তিনি জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৯৭ : /২০, হাঃ ৭৪১৬, মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯৯] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৯৫৭. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমার একটি কালো সন্তান জন্মেছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কিছু উট আছে কি? সে উত্তর করলঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ সেগুলোর রং কেমন? সে বললঃ লাল। তিনি বললেনঃ সেগুলোর মধ্যে কোনটি ছাই বর্ণের আছে কি? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তবে সেটিতে এমন বর্ণ কোত্থেকে এলো। লোকটি বললঃ সম্ভবত পূর্ববর্তী বংশের কারণে এরূপ হয়েছে। তিনি বললেনঃ তাহলে হইতে পারে, তোমার এ সন্তানও বংশগত কারণে এরূপ হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৬৮ : /২৬, হাঃ ৫৩০৫; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৫০০] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “লিআন বিষয়ক হাদিস । লুলু অয়াল মারজান”

Leave a Reply