ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (তালবিয়া)
ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (তালবিয়া) >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১১, অধ্যায়ঃ ১
- অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ
২৫৪০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে তাহাঁর ইহরামের জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং ইহরাম খোলার জন্যে [দশ তারিখে] বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার পূর্বে সুগন্ধি লাগাতাম, এমন সুগন্ধি যাতে মিস্ক থাকতো। আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সিঁথিতে এখনো সুগন্ধি দ্রব্যের উজ্জ্বলতা দেখিতে পাচ্ছি অথচ তিনি [সাঃআঃ] ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। [বোখারী ও মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৫৩৯, মুসলিম ১১৮৯-১১৯১, নাসায়ী ২৬৯৩, মুয়াত্ত্বা মালিক ১১৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৯৫২, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৭৬৬, ইরওয়া ১০৪৭। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪১. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে মাথার চুল জড়ানো অবস্থায় তালবিয়াহ্ বলিতে শুনিয়াছি,
لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ
লাব্বায়ক আল্লা-হুম্মা লাব্বায়ক, লাব্বায়কা লা- শারীকা লাক লাব্বায়ক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্ নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা- শারীকা লাকা
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি! আমি তোমার খিদমাতে উপস্থিত হয়েছি। তোমার কোন শারীক নেই। আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। সব প্রশংসা, অনুগ্রহের দান তোমারই এবং সমগ্র রাজত্বও তোমারই, তোমার কোন শারীক নেই।
এ কয়টি কথার বেশি কিছু তিনি বলেননি। [বোখারী ও মুসলিম]{১} {১} সহীহ : বোখারী ৫৯১৫, মুসলিম ১১৮৪, আবু দাউদ ১৮১২, নাসায়ী ২৭৪৮, তিরমিজি ৮২৫, ইবনি মাজাহ ২৯১৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ১১৯২, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১৩৪৬২, আহমাদ ৪৮২১, দারিমী ১৮৪৯, দারাকুত্বনী ২৪৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯০২৬, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৭৯৯। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪২. {আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ [বিদায় হজ্জের সময়] যখন যুলহুলায়ফাহ্ মাসজিদের নিকট নিজের পা রিকাবে রাখার পর উটনী তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন তিনি [সাঃআঃ] তালবিয়াহ্ পাঠ করেছিলেন। [বোখারী ও মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : বোখারী ২৮৫৬, মুসলিম ১১৮৭, আহমাদ ৪৮৪২। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪৩. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে [হজের উদ্দেশে] বের হলাম এবং উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ বলিতে থাকলাম। [মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১২৪৭, আহমাদ ১১০১৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৯৯৭। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একই সওয়ারীতে আবু ত্বলহাহর সাথে পিছনে বসেছিলাম, তখন সাহাবীগণ সম্মিলিতভাবে হজ্জ ও উমরার জন্যে উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করছিলেন।
[বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ২৯৮৬, আহমাদ ১২৬৭৮, মুজামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৮১৪। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে [হজের উদ্দেশে] রওয়ানা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন, আবার কেউ কেউ হজ্জ ও উমরা উভয়ের জন্যে ইহরাম বেঁধেছিলেন, আবার কেউ কেউ শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। অতঃপর যারা শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা [তাওয়াফ ও সাঈর পর] হালাল হয়ে গেলেন [অর্থাৎ- ইহরাম খুলে ফেললেন]। আর যারা শুধু হজ্জ অথবা হজ্জ ও উমরা উভয়ের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা কুরবানীর দিন আসা পর্যন্ত হালাল হননি।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৫৬২, মুসলিম ১২১১, আবু দাউদ ১৭৭৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১২০৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৭৩৫, ইরওয়া ১০০৩। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪৬. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বিদায় হজ্জের সাথে উমরারও উপকারিতা লাভ করেছিলেন। তিনি [সাঃআঃ] এভাবে শুরু করেছিলেন যে, প্রথমে উমরার তালবিয়াহ্ পাঠ করেছিলেন, এরপর হজ্জের তালবিয়াহ্।
[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৯১, মুসলিম ১২২৭, আবু দাউদ ১৮০৫, নাসায়ী ২৭৩২, আহমাদ ৬২৪৭। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৪৭. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী সাঃআঃ-কে ইহরাম বাঁধার উদ্দেশে কাপড় খুলতে ও গোসল করিতে দেখেছেন।
[তিরমিজি ও দারিমী]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ৮৩০, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৫৯৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৯৪৪, ইরওয়া ১৪৯। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪৮. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ আঠালো বস্তু দিয়ে মাথার চুল জড়ো করেছিলেন।
[আবু দাউদ]{১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ১৭৪৮, মুসতাদ্রাক লিল হাকিম ১৬৫০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৯৭৬। কারণ এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক একজন মুদাল্লিস রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৪৯. খল্লাদ ইবনুস্ সায়িব হইতে বর্ণীতঃ
তার পিতা [সায়িব] হইতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ জিবরীল [আঃ] আমার কাছে এসে আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন আমার সাহাবীগণকে উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করিতে আদেশ করি। [মালিক, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ ও দারিমী]{১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৮১৪, তিরমিজি ৮২৯, নাসায়ী ২৭৫৩, ইবনি মাজাহ ২৯২২, মুয়াত্ত্বা মালিক ১১৯৯, সহীহ আল জামি ৬২, সহীহ আত তারগীব ১১৩৫। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৫০. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ কোন মুসলিম যখন তালবিয়াহ্ পাঠ করে, তখন তার সাথে সাথে তার ডান বামে যা কিছু আছে- পাথর, গাছ-গাছড়া কিংবা মাটির ঢেলা তালবিয়াহ্ পাঠ করে থাকে। এমনকি এখান থেকে এদিক ও ওদিকে [পূর্ব ও পশ্চিমের] ভূখগুের শেষ সীমা পর্যন্ত।
[তিরমিজি ও ইবনি মাজাহ]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ৮২৮, ইবনি মাজাহ ২৯২১, সহীহ আল জামি ৫৭৭০, সহীহ আত তারগীব ১১৩৪। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৫১.আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ যুলহুলায়ফায় ইহরাম বাঁধার সময় দুই রাক্আত সালাত আদায় করিয়াছেন। অতঃপর যুলহুলায়ফার মাসজিদের কাছে তাহাঁর উষ্ট্রী তাঁকে নিয়ে দাঁড়ালে তিনি [সাঃআঃ] এ সব শব্দের দ্বারা তালবিয়াহ্ পাঠ করিলেন,
لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِىْ يَدَيْكَ لَبَّيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ
লাব্বায়কা আল্লা-হুম্মা লাব্বায়কা লাব্বায়কা ওয়া সাদায়কা, ওয়াল খয়রু ফী ইয়াদায়কা লাব্বায়কা, ওয়ার্ রগবা-উ ইলায়কা ওয়াল আমালু [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে উপস্থিত, আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। আমি উপস্থিত আছি ও তোমার দরবারের সৌভাগ্য লাভ করেছি, সব কল্যাণ তোমার হাতে নিহীত। আমি উপস্থিত, সকল কামনা-বাসনা তোমারই হাতে, সকল আমাল তোমারই জন্যে।]।
[বোখারী ও মুসলিম; তবে শব্দগুলো মুসলিমের]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১১৮৪, নাসায়ী ২৭৪৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯০২৮, বোখারী ১৫৫৩। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৫২. উমারাহ্ ইবনি খুযায়মাহ্ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি তার পিতা হইতে এবং তিনি নবী সাঃআঃ হইতে বর্ণনা করেন। তিনি [সাঃআঃ] যখন তালবিয়াহ্ শেষ করিলেন, তখন আল্লাহর নিকট তাহাঁর সন্তুষ্টি ও জান্নাত কামনা করিলেন এবং তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর রহমাতের দ্বারা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাইলেন। [শাফিঈ]{১}
{১} জইফ : মুসনাদ আশ্ শাফিঈ ৭৯৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯০৩৮, জইফ আল জামি ৪৪৩৫। কারণ এর সনদে সলিহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি যায়িদাহ্ একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৫৩.b জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ যখন হজ্জ পালনের ইচ্ছা পোষণ করিলেন, তখন মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দিলেন। তাই লোকেরা দলে দলে সমবেত হলো। তিনি বায়দা নামক জায়গায় পৌঁছলে [হজের জন্য] ইহরাম বাঁধলেন।
[বোখারী]{১},{১} সহীহ : তিরমিজি ৮১৭। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৫৪. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুশরিকরা তালবিয়াহ্ পাঠে বলতো,
لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ
লাব্বায়কা লা- শারীকা লাকা [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমরা উপস্থিত।
তোমার কোন শারীক নেই।]। তখন রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলিতেন, তোমাদের সর্বনাশ হোক, থামো থামো [আর অগ্রসর হয়ো না, কিন্তু তারা দ্রুত বেগে চলতো] অবশ্য যে শারীক তোমার আছে, যার মালিক তুমি এবং তারা যে জিনিসের মালিক তারও তুমি মালিক। তারা [মুশরিকরা] এ কথা বলতো আর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতো।
[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১১৮৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১২৮৮। ইহরাম ও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply