রোজা হাদিস । রমাযান মাসের ফাযীলাত
রোজা হাদিস । রমাযান মাসের ফাযীলাত , এই পর্বের হাদীস =৭৫ টি (৬৫২-৭২৬) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্ব-১৩ঃ সাওম [রোজা]
১৩/১. রমাযান মাসের ফাযীলাত।
১৩/২. চাঁদ দেখে রমাযানের সওম রাখা এবং চাঁদ দেখে ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য এবং যদি প্রথমে বা শেষে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে ত্রিশ দিনে মাস পূর্ণ করিবে।
১৩/৩. রমাযানের একদিন বা দুদিন পূর্বে সওম পালন করিবে না।
১৩/৪. মাস উনত্রিশ দিনেও হয়।
১৩/৭. দু ঈদের মাসই কম হয় না নাবী [স]-এর এ কথা বলার অর্থ।
১৩/৮. ফাজর উদিত হওয়ার সাথে সাথে সওম শুরু হয়, ফাজর উদিত হওয়া পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য কাজ চলবে এবং ফাজরের ব্যাখ্যা যা সওমে প্রবেশের আহকামের সাথে সম্পৃক্ত এবং ফাজর সলাতের শুরু ইত্যাদির বর্ণনা।
১৩/৯. সাহারীর ফাযীলাত এবং তা গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ এবং সাহরী দেরি করে খাওয়া এবং ইফতার জলদি করা মুস্তাহাব।
১৩/১০. সওম ভঙ্গ করার সময় এবং দিবাভাগের অবসান।
১৩/১১. সওমে বিসাল [বিরামহীন রোযা] এর নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে।
১৩/১২. রোযা অবস্থায় [স্ত্রীকে] চুম্বন দেয়া হারাম নয়, যদি কেউ কামাবেগে উত্তেজিত না হয়।
১৩/১৩. যে ব্যক্তি জুনুবী অবস্থায় ফাজর করিল তার সওমের কোন ক্ষতি হইবে না।
১৩/১৪. রমাযান মাসে দিনের বেলায় সওমকারীর সহবাস করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এই ক্ষেত্রে বড় কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার বর্ণনা এবং এটা সচ্ছল ও অসচ্ছলের জন্য আদায় করা অপরিহার্য আর অসচ্ছল ব্যক্তি এটা আদায় না করা পর্যন্ত তার স্কন্ধে এর বোঝা চেপে থাকা।
১৩/১৫. অন্যায় কাজে গমনের উদ্দেশ্য ছাড়া রমাযান মাসে মুসাফিরের জন্য সওম রাখা বা ভঙ্গ করা বৈধ হইবে যদি তার সফরের দূরত্বের পরিমাণ দু মারহালা বা তার অধিক হয়।
১৩/১৬. সফরে যে ব্যক্তি সওম পালন করছে না তার প্রতিদান যদি সে নিজের স্কন্ধে কাজের ভার তুলে নেয়।
১৩/১৭. সফরে সওম পালন করা এবং ভঙ্গ করার ব্যাপারে স্বাধীনতা প্রদান করা সম্পর্কে।
১৩/১৮. আরাফাহর দিনে আরাফাহর মাঠে হাজ্জ পালনকারীর জন্য সওম ভঙ্গ করা মুস্তাহাব।
১৩/১৯. আশুরা বা মহররম মাসের দশ তারিখের সওম।
১৩/২১. যে ব্যক্তি আশুরার দিন খেল, তার উচিত সে দিনের অবশিষ্ট অংশে খাদ্যগ্রহণ না করা।
১৩/২২. ঈদুল ফিতর এবং কুরবানীর দিন সওম পালন নিষিদ্ধ।
১৩/২৪. শুধু জুমুআহ্র দিনে সওম পালন অপছন্দনীয়।
১৩/২৫. আল্লাহ তাআলার ঐ বাণী রহিত করণের বর্ণনা- [সওম পালনে] যাদের কষ্ট হয় তারা ফিদিয়া দিবে- [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২/১৮৪] এ বাণীর দ্বারা যারা রমাযান মাস পাবে তাহাদেরকে এ মাসের সওম পালন করিতে হইবে- [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২/১৮৫]।
১৩/২৬. শাবান মাসে রমাযানের বাকী সওম আদায় করা।
১৩/২৭. মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাযা সওম আদায় করা।
১৩/২৯. সায়িমের জবান হিফাযত করা।
১৩/৩০. সওমের ফাযীলাত
১৩/৩১. যে ব্যক্তি কোন কষ্ট এবং অন্যের হক্ক নষ্ট না করে আল্লাহ্র জন্য সওম পালন করিল তার ফাযীলাত।
১৩/৩৩. ভুল করে খেলে, পানি পান করলে ও স্ত্রী সঙ্গম করলে সওম ভঙ্গ হইবে না।
১৩/৩৪. রমাযান মাস ছাড়া নাবী [স]-এর সওম পালন করা এবং প্রত্যেক মাসে সওম করা মুস্তাহাব।
১৩/৩৫. সওম দাহর [একাধারে এক যুগ] সওম করা ঐ ব্যক্তির জন্য নিষিদ্ধ, যার এর মাধ্যমে ক্ষতি হইবে অথবা এর মাধ্যমে অন্যের হক নষ্ট হইবে অথবা দু ঈদে সওম ভঙ্গ না করা এবং তাশরীকের দিনগুলোতে সওম ভঙ্গ না করা এবং একদিন বিরতি দিয়ে সওম করার ফাযীলাত।
১৩/৩৭. শাবান মাসে আনন্দের সওম করা।
১৩/৪০. লাইলাতুল ক্বাদর এর ফাযীলাত এবং তার অন্বেষণে উৎসাহ দান, তার তারিখ ও স্থানের বর্ণনা, তা অন্বেষণ করার উপযুক্ত সময়।
১৩/১. রমাযান মাসের ফাযীলাত।
৬৫২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিতেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রমাযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শিকলবন্দী করে দেয়া হয়।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৫ হাঃ ১৮৯৯, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/২. চাঁদ দেখে রমাযানের সওম রাখা এবং চাঁদ দেখে ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য এবং যদি প্রথমে বা শেষে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে ত্রিশ দিনে মাস পূর্ণ করিবে।
৬৫৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] রমাযানের কথা আলোচনা করে বললেনঃ চাঁদ না দেখে তোমরা সওম পালন করিবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফ্তার করিবে না। যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় [ত্রিশ দিন] পরিমাণ পূর্ণ করিবে।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /১১ হাঃ ১৯০৬, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৫৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মাস এত, এত এবং এত দিনে হয়, অর্থাৎ ত্রিশ দিনে। তিনি আবার বললেনঃ মাস এত, এত ও এত দিনেও হয়। অর্থাৎ উনত্রিশ দিনে। তিনি বলিতেনঃ কখনও ত্রিশ দিনে আবার কখনও উনত্রিশ দিনে মাস হয়।
[বোখারী পর্ব ৬৮ : /২৫ হাঃ ৫৩০২, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৫৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমরা উম্মী জাতি। আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না। মাস এরূপ অর্থাৎ কখনও উনত্রিশ দিনের আবার কখনো ত্রিশ দিনের হয়ে থাকে।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /১৩ হাঃ ১৯১৩, মুসলিম ১৩/২, হাঃ ১০৮০] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৫৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] অথবা বলেন, আবুল কাসিম [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম আরম্ভ করিবে এবং চাঁদ দেখে ইফ্তার করিবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শাবানের গণনা ত্রিশ দিন পুরা করিবে।
[বোখারী পর্ব ৩০: /১১ হাঃ ১৯০৯, মুসলিম ১৩/২, হাঃ ১০৮১] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৩. রমাযানের একদিন বা দুদিন পূর্বে সওম পালন করিবে না।
৬৫৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কেউ রমাযানের একদিন কিংবা দুদিন আগে হইতে সওম শুরু করিবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সিয়াম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন সওম পালন করিতে পারবে।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /১৪ হাঃ ১৯১৪, মুসলিম হাঃ ১৩/৩, হাঃ ১০৮২] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৪. মাস উনত্রিশ দিনেও হয়।
৬৫৮. উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, নাবী [সাঃআঃ] শপথ গ্রহণ করেন যে, এক মাসের মধ্যে তাহাঁর কতিপয় বিবির নিকট তিনি গমন করবেন না; কিন্তু যখন উনত্রিশ দিন অতিবাহিত হল তখন তিনি সকালে কিংবা বিকালে তাঁদের কাছে গেলেন। কোন একজন তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি শপথ করিয়াছেন এক মাসের মধ্যে কোন বিবির কাছে যাবেন না। তিনি বলিলেন, মাস উনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
[বোখারী পর্ব ৬৭ : /৯২ হাঃ ৫২০২, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৭. দু ঈদের মাসই কম হয় না নাবী [স]-এর এ কথা বলার অর্থ।
৬৫৯.আবদুর রহমান ইবনি আবু বাকরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, দুটি মাস কম হয় না। তা হল ঈদের দুমাস- রমাযানের মাস ও যুলহাজ্জের মাস। আবু আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, আহমাদ ইবনি হাম্বল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, রমাযান ঘাটতি হলে যুলহাজ্জ পূর্ণ হইবে। আর যুলহাজ্জ ঘাটটি হলে রমাযান পূর্ণ হইবে। আবুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইসহাক ইবনি রাহওয়াই [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ফাযীলতের দিক হইতে এ দু মাসে কোন ঘাটতি নেই, মাস উনত্রিশ দিনে হোক বা ত্রিশ দিনে হোক।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /১২ হাঃ ১৯১২, মুসলিম ১৩/৭, হাঃ ১০৮৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৮. ফাজর উদিত হওয়ার সাথে সাথে সওম শুরু হয়, ফাজর উদিত হওয়া পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য কাজ চলবে এবং ফাজরের ব্যাখ্যা যা সওমে প্রবেশের আহকামের সাথে সম্পৃক্ত এবং ফাজর সলাতের শুরু ইত্যাদির বর্ণনা।
৬৬০. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ
حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ
…………..“তোমরা পানাহার কর [রাত্রির] কাল রেখা হইতে [ভোরের] সাদা রেখা যতক্ষণ স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়” তখন আমি একটি কাল এবং একটি সাদা রশি নিলাম এবং উভয়টিকে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। রাতে আমি এগুলোর দিকে বারবার তাকাতে থাকি। কিন্তু আমার নিকট পার্থক্য প্রকাশিত হলো না। তাই সকালেই আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে এ বিষয় বললাম। তিনি বললেনঃ এতো রাতের আঁধার এবং দিনের আলো।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /১৬ হাঃ ১৯১৬, মুসলিম ১৩/৮, হাঃ ১০৯০] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬১. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হলঃ
(وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ
“তোমরা পানাহার কর, যতক্ষণ কাল রেখা হইতে সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়।” কিন্তু তখনো ……….. কথাটি নাযিল হয়নি। তখন সওম পালন করিতে ইচ্ছুক লোকেরা নিজেদের দু পায়ে একটি কাল এবং একটি সাদা সুতলি বেঁধে নিতেন এবং সাদা কাল এ দুটির মধ্যে পার্থক্য না দেখা পর্যন্ত তাঁরা পানাহার করিতে থাকতেন। এরপর আল্লাহ তাআলা …………… শব্দটি নাযিল করলে সকলেই বুঝতে পারলেন যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাত [-এর আঁধার] এবং দিন [-এর আলো]।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /১৬ হাঃ ১৯১৭, মুসলিম ১৩/৮, হাঃ ১০৯১] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬২. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিলাল [রাদি.] রাত থাকতেই আযান দেন। কাজেই ইবনি উম্মু মাকতূম [রাদি.] আযান না দেয়া পর্যন্ত তোমরা [সাহ্রীর] পানাহার করিতে পার।
[বোখারী পর্ব ১০: /১১ হাঃ ৬১৭, মুসলিম ১৩/৮, হাঃ ১০৯২] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিলাল [রাদি.] রাতে আযান দিতেন। তাই আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] ইরশাদ করেনঃ ইবনি উম্মু মাকতূম [রাদি.] আযান না দেয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। কেননা ফাজর না হওয়া পর্যন্ত সে আযান দেয় না।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /১৭ হাঃ ১৯১৮, ১৯১৯, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬৪. আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহরী খাওয়া হইতে বিরত না রাখে। কেননা, সে রাত থাকতে আযান দেয়- যেন তোমাদের মধ্যে যারা তাহাজ্জুদের সলাতে রত তারা ফিরে যায় আর যারা ঘুমন্ত তাহাদেরকে জাগিয়ে দেয়। অতঃপর তিনি বললেনঃ ফাজর বা সুবহে সাদিক বলা যায় না- তিনি একবার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে ইঙ্গিত করে বলিলেনÑ যতক্ষণ না এরূপ হয়ে যায়।
* [বোখারী পর্ব ১০ : /১৩ হাঃ ৬২১, মুসলিম ১৩/৮, হাঃ ১০৯৩] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৯. সাহারীর ফাযীলাত এবং তা গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ এবং সাহরী দেরি করে খাওয়া এবং ইফতার জলদি করা মুস্তাহাব।
৬৬৫. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা সাহারী খাও, কেননা সাহারীতে বারাকাত নিহিত।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /১০ হাঃ ১৯২৩, মুসলিম ১৩/৯ হাঃ ১০৯৫] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬৬. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তাঁরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সাহারী খেয়েছেন, অতঃপর ফাজরের সলাতে দাঁড়িয়েছেন। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ দুয়ের মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিলো? তিনি বলিলেন, পঞ্চাশ বা ষাট আয়াত তিলাওয়াত করা যায়, এরূপ সময়ের ব্যবধান ছিলো।
[বোখারী পর্ব ৯ : /২৭ হাঃ ৫৭৫, মুসলিম ১৩/৯, হাঃ ১০৯৭] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬৭. সাহ্ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ লোকেরা যতদিন শীঘ্র ইফতার করিবে*, ততদিন তারা কল্যাণের উপরে থাকে।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪৫ হাঃ ১৯৫৭, মুসলিম ১৩/৯, হাঃ ১০৯৮] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১০. সওম ভঙ্গ করার সময় এবং দিবাভাগের অবসান।
৬৬৮. উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন রাত্র সে দিক হইতে ঘনিয়ে আসে ও দিন এ দিক হইতে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সায়িম ইফতার করিবে।
[বোখারী পর্ব ৩০: /৪৩ হাঃ ১৯৫৪, মুসলিম ১৩/১০, হাঃ ১১০০] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সওমের অবস্থায়। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেনঃ হে অমুক! উঠ। আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলিল, সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল ! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলিল, দিন তো এখনো রয়ে গেছে। তিনি বললেনঃ তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। অতঃপর সে নামল এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলে আনল। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তা পান করিলেন, অতঃপর বললেনঃ যখন তোমরা দেখবে, রাত একদিক হইতে ঘনিয়ে আসছে, তখন সওম পালনকারী ইফতার করিবে।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৩৩ হাঃ ১৯৫৫, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১১. সওমে বিসাল [বিরামহীন রোযা] এর নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে।
৬৭০. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] সওমে বেসাল হইতে নিষেধ করিলেন। লোকেরা বললো, আপনি যে সওমে বিসাল পালন করেন! তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমাকে পানাহার করানো হয়।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪৮ হাঃ ১৯৬২, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৭১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বিরতিহীন সওম [সওমে বিসাল] পালন করিতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলিল, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি যে বিরতিহীন [সওমে বিসাল] সওম পালন করেন? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে আছে? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সওমে বিসাল করা হইতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাহাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন [লাগাতার] সওমে বিসাল করিতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখিতে পেল তখন তিনি বললেনঃ যদি চাঁদ উঠতে আরো দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরো বেশী দিন সওমি বিসাল করতাম। এ কথা তিনি তাহাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪৯ হাঃ ১৯৬৫, মুসলিম ১৩/১১, হাঃ ১১০৩] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৭২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা সওমে বিসাল পালন করা হইতে বিরত থাক [বাক্যটি তিনি] দুবার বলিলেন। তাঁকে বলা হল, আপনি তো সওমে বিসাল করেন। তিনি বললেনঃ আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমাল করার দায়িত্ব গ্রহণ করো।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪৯ হাঃ ১৯৬৬, মুসলিম ১৩/১১, হাঃ ১১০৩] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৭৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
[একটি] মাসের শেষাংশে নাবী [সাঃআঃ] বিরতিহীন রোযা রাখলেন এবং আরো কতিপয় লোকও বিরতিহীনভাবে রোযা পালন করিতে লাগল। এ সংবাদ নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ যদি আমার এ মাস দীর্ঘায়িত হত, তবুও আমি এভাবে বিরতিহীন রোযা রাখতাম। যাতে অধিক কষ্টকারীরা তাহাদের কষ্ট করা ছেড়ে দেয়। আমি তো তোমাদের মত নই, আমার প্রতিপালক আমাকে আহার করায় এবং পান করায়।
[বোখারী পর্ব ৯৪ : /৯ হাঃ ৭২৪১, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৭৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] লোকদের উপর দয়াপরবশ হয়ে তাহাদেরকে সওমে বিসাল হইতে নিষেধ করলে তারা বলিল, আপনি যে সওমে বিসাল করে থাকেন! তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪৮ হাঃ ১৯৬৪, মুসলিম ১৩/১১, হাঃ ১১০৫] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১২. রোযা অবস্থায় [স্ত্রীকে] চুম্বন দেয়া হারাম নয়, যদি কেউ কামাবেগে উত্তেজিত না হয়।
৬৭৫. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সায়িম অবস্থায় নাবী [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুমু খেতেন। [এ কথা বলে] আয়িশাহ্ [রাদি.] হেসে দিলেন।
[বোখারী পর্ব ৩০: /২৪ হাঃ ১৯২৮, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৭৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওমের অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে তিনি তার প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চেয়ে অধিক সক্ষম ছিলেন।
[বোখারী পর্ব ৩০: /২৩ হাঃ ১৯২৭, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১৩. যে ব্যক্তি জুনুবী অবস্থায় ফাজর করিল তার সওমের কোন ক্ষতি হইবে না।
৬৭৭. আবু বকর ইবনি আবদুর রাহমান [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এবং আমার পিতা আয়িশাহ্ [রাদি.] এবং উম্মে সালামাহ [রাদি.]-এর নিকট গেলাম। [অপর বর্ণনায়] আবুল ইয়ামান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]…মারওয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত যে, আয়িশাহ্ [রাদি.] এবং উম্মু সালামাহ [রাদি.] তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী অবস্থায় আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফাজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করিতেন এবং সওম পালন করিতেন।
মারওয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবদুর রাহমান ইবনি হারিস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিলেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ হাদীস শুনিয়ে তুমি আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-কে শঙ্কিত করে দিবে। এ সময় মারওয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মাদীনার গভর্নর ছিলেন। আবু বকর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মারওয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কথা আবদুর রাহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] পছন্দ করেননি। রাবী বলেন, এরপর ভাগ্যক্রমে আমরা যুল-হুলাইসলামিক ফাউন্ডেশনতে একত্রিত হই। সেখানে আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর একখণ্ড জমি ছিল। আবদুর রাহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-কে বলিলেন, আমি আপনার নিকট একটি কথা বলিতে চাই, মারওয়ান যদি এ বিষয়টি আমাকে কসম দিয়ে না বলিতেন, তা হলে আমি তা আপনার সঙ্গে আলোচনা করতাম না। অতঃপর তিনি আয়িশাহ্ [রাদি.] ও উম্মু সালামাহ [রাদি.]-এর বর্ণিত উক্তিটি উল্লেখ করিলেন। ফায্ল ইবনি আব্বাস [রাদি.] অনুরূপ একটি হাদীস আমাকে শুনিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক অবগত।
[বোখারী পর্ব ৩০ ঃ /২২ হাঃ ১৯২৫-১৯২৬৬, মুসলিম ১৩/১৩, হাঃ ১১০৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১৪. রমাযান মাসে দিনের বেলায় সওমকারীর সহবাস করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এই ক্ষেত্রে বড় কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার বর্ণনা এবং এটা সচ্ছল ও অসচ্ছলের জন্য আদায় করা অপরিহার্য আর অসচ্ছল ব্যক্তি এটা আদায় না করা পর্যন্ত তার স্কন্ধে এর বোঝা চেপে থাকা।
৬৭৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমাযানে। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আযাদ করিতে পারবে? লোকটি বলিল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ক্রমাগত দু মাস সিয়াম পালন করিতে পারবে? লোকটি বলিল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বলিল, না। এমতাবস্থায় নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এক আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ এগুলো তোমার তরফ হইতে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলিল, আমার চাইতেও অধিক অভাবগ্রস্ত কে? অথচ মাদীনার উভয় লাবার অর্থাৎ হাররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চেয়ে অধিক অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তা হলে তুমি স্বীয় পরিবারকেই খাওয়াও।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৩১ হাঃ ১৯৩৭, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৭৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে মাসজিদে আসল। তখন সে বলিল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ তা কার সাথে? সে বলিল, আমি রমাযানের মধ্যে আমার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে ফেলেছি। তখন তিনি তাকে বললেনঃ তুমি সদাকাহ কর। সে বলিল, আমার কাছে কিছুই নেই। সে বসে রইল। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি একটি গাধা হাঁকিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এল। আর তার সাথে ছিল খাদ্যদ্রব্য। আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি অবগত নই যে, নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে কী আসল? অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি কোথায়? সে বলিল, এই তো আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সদাকাহ করে দাও। সে বলিল, আমার চেয়ে অধিক অভাবী লোকদের? আমার পরিবারের কাছে সামান্য আহার্যও নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমরাই খেয়ে নাও।
[বোখারী পর্ব ৮৬ : /২৬ হাঃ ৬৮২২, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১৫. অন্যায় কাজে গমনের উদ্দেশ্য ছাড়া রমাযান মাসে মুসাফিরের জন্য সওম রাখা বা ভঙ্গ করা বৈধ হইবে যদি তার সফরের দূরত্বের পরিমাণ দু মারহালা বা তার অধিক হয়।
৬৮০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] সওমের অবস্থায় কোন এক রমাযানে মাক্কাহর পথে যাত্রা করিলেন। কাদীদ নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি সওম ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই সওম ভঙ্গ করিলেন।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৩৪ হাঃ ১৯৪৪, মুসলিম ১৩/১৫, হাঃ ১১১৩] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞেস করলেনঃ এর কী হয়েছে? লোকেরা বলিল, সে সায়িম [সওম পালনকারী]। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ সফরে সওম পালনে কোন সওয়াব নেই।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৩৬ হাঃ ১৯৪৬, মুসলিম ১৫/১৩, হাঃ ১১১৫] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সফরে যেতাম। সায়িম ব্যক্তি গায়ের সায়িমকে [যে সওম পালন করছে না] এবং গায়ের সায়িম ব্যক্তি সায়িমকে দোষারোপ করত না।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৩৭ হাঃ ১৯৪৭, মুসলিম ১৩/১৫, হাঃ ১১১৮] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১৬. সফরে যে ব্যক্তি সওম পালন করছে না তার প্রতিদান যদি সে নিজের স্কন্ধে কাজের ভার তুলে নেয়।
৬৮৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা এক সফরে আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার চাদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। তাই যারা সিয়াম পালন করছিল তারা কোন কাজই করিতে পারছিল না। যারা সিয়াম রত ছিল না, তারা উটের দেখাশুনা করছিল, খিদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, যারা সওম পালন করে নি তারাই আজ সাওয়াব নিয়ে গেল।
[বোখারী পর্ব ৫৬ : /১৮ হাঃ ২৮৯০, মুসলিম ১৩/১৬ হাঃ ১১১৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১৭. সফরে সওম পালন করা এবং ভঙ্গ করার ব্যাপারে স্বাধীনতা প্রদান করা সম্পর্কে।
৬৮৪. নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
হামযাহ ইবনি আমর আসলামী [রাদি.] অধিক সওম পালনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিলেন, আমি সফরেও কি সওম পালন করিতে পারি? তিনি বললেনঃ ইচ্ছে করলে তুমি সওম পালন করিতে পার, আবার ইচ্ছে করলে নাও করিতে পার।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৩৩ হাঃ ১৯৪৩, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮৫. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সফরে প্রচণ্ড গরমের দিনে আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে যাত্রা করলাম। গরম এত প্রচণ্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই আপন আপন হাত মাথার উপর তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নাবী [সাঃআঃ] এবং ইবনি রাওয়াহা [রাদি.] ব্যতীত আমাদের কেউই সিয়ামরত ছিলেন না।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৩৫ হাঃ ১৯৪৫, মুসলিম ১৩/১৭, হাঃ ১১২২] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১৮. আরাফাহর দিনে আরাফাহর মাঠে হাজ্জ পালনকারীর জন্য সওম ভঙ্গ করা মুস্তাহাব।
৬৮৬. উম্মুল ফাযল বিনত হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
কিছু সংখ্যক লোক আরাফাতের দিনে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সওম পালন সম্পর্কে তাহাঁর কাছে সন্দেহ প্রকাশ করে। তাহাদের কেউ বলিল, তিনি সওম পালন করিয়াছেন। আর কেউ বলিল, না, তিনি করেননি। এতে উম্মুল ফাযল [রাদি.] এক পেয়ালা দুধ আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি তা পান করে নিলেন। এ সময় তিনি উটের পিঠে [আরাফাতে] উকূফ অবস্থায় ছিলেন।
[বোখারী পর্ব ২৫ : /৮৮ হাঃ ১৯৮৮, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮৭. মায়মূনাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
কিছু সংখ্যক লোক আরাফাতের দিনে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সওম পালন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি স্বল্প পরিমাণ দুধ আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট পাঠিয়ে দিলে তিনি তা পান করিলেন ও লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল। তখন তিনি [আরাফাতে] অবস্থান স্থলে ওকূফ করছিলেন।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬৫ হাঃ ১৯৮৯, মুসলিম ১৩/১৮, হাঃ ১১২৪] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/১৯. আশুরা বা মহররম মাসের দশ তারিখের সওম।
৬৮৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
জাহিলী যুগে কুরায়শগণ আশূরাহর দিন সওম পালন করত। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-ও পরে এ সওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমাযানের সিয়াম ফারয হলে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ যার ইচ্ছে আশূরার সিয়াম পালন করিবে এবং যার ইচ্ছে সে সওম পালন করিবে না।
[বোখারী পর্ব ৩০: /১ হাঃ ১৮৯৩, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১২৫] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জাহিলী যুগের লোকেরা আশুরার সওম পালন করত। এরপর যখন রমাযানের সওমের বিধান নাযিল হল, তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, যার ইচ্ছে সে আশুরার সওম পালন করিবে আর যার ইচ্ছে সে তার সওম পালন করিবে না।
[ বোখারী পর্ব ৬৫ : /২৪ হাঃ ৪৫০১, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১২৬] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯০. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর নিকট আশআস [রাদি.] আসেন। এ সময় ইবনি মাসউদ [রাদি.] পানাহার করছিলেন। তখন আশআস [রাদি.] বলিলেন, আজ তো আশুরা। তিনি বলিলেন, রমাযানের [এর সওমের বিধান] নাযিল হওয়ার পূর্বে আশুরার সওম পালন করা হত। যখন রমাযানের [এর সওমের বিধান] নাযিল হল তখন তা পরিত্যাগ করা হয়েছে। এসো, তুমিও খাও।
[বোখারী পর্ব ৬৫ : /২৪ হাঃ ৪৫০৩, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১২৭] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯১. হুমাইদ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
যে বছর মুআবিয়া [রাদি.] হাজ্জ করেন সে বছর আশূরার দিনে [মাসজিদে নাববীর] মিম্বারে তিনি [রাবী] তাঁকে বলিতে শুনেছেন যে, হে মাদীনাহ্বাসীগণ! তোমাদের আলিমগণ কোথায়? আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আজকে আশূরার দিন, আল্লাহ তাআলা এর সওম তোমাদের উপর ফারয করেননি বটে, তবে আমি [আজ] সওম পালন করছি। যার ইচ্ছে সে সওম পালন করুক, যার ইচ্ছে সে পালন না করুক।
[বোখারী পর্ব ৩০ ঃ /৬৯ হাঃ ২০০৩, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১২৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] মাদীনায় আগমন করে দেখিতে পেলেন যে, ইয়াহুদীগণ আশূরার দিনে সওম পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কি ব্যাপার? [তোমরা এ দিনে সওম পালন কর কেন?] তারা বলিল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলকে তাহাদের শত্র“র কবল হইতে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা [আ] সওম পালন করেন। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে সওম পালন করেন এবং সওম পালনের নির্দেশ দেন।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬৯ হাঃ ২০০৪, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১৩০] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯৩. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আশূরার দিনকে ইয়াহূদীগণ ঈদ [উৎসবের দিন] মনে করত। নাবী [সাঃআঃ] [সহাবীগণকে] বললেনঃ তোমরাও এ দিনের সওম পালন কর।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬৯ হাঃ ২০০৫, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১৩১] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে আশূরাহর দিনের সওমের উপরে অন্য কোন দিনের সওমকে প্রাধান্য দিতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমাযান মাস [এর উপরও অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করিতে দেখিনি]।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬৯ হাঃ ২০০৬, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১৩২] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/২১. যে ব্যক্তি আশুরার দিন খেল, তার উচিত সে দিনের অবশিষ্ট অংশে খাদ্যগ্রহণ না করা।
৬৯৫. সালমাহ ইবনি আকওয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আশূরাহর দিন নাবী [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এক ব্যক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেন যে, যে ব্যক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন, সে যেন সওম আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায়নি সে যেন আর না খায়।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /২১ হাঃ ১৯২৪, মুসলিম ১৩/২১, হাঃ ১১৩৫] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯৬. রুবায়ি বিনতু মুআব্বিয [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আশূরার সকালে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেনঃ যে ব্যক্তি সওম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সওম পূর্ণ করে। তিনি [রুবায়্যি] [রাদি.] বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন সওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সওম পালন করাতাম। আমরা তাহাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাহাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪৭ হাঃ ১৯৬০, মুসলিম ১৩/২১, হাঃ ১১৩৬] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/২২. ঈদুল ফিতর এবং কুরবানীর দিন সওম পালন নিষিদ্ধ।
৬৯৭. বনূ আয্হারের আযাদকৃত গোলাম আবু উবাইদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একদা ঈদে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-এর সাথে ছিলাম, তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] এ দু দিনে সওম পালন করিতে নিষেধ করিয়াছেন। [ঈদুল ফিত্রের দিন] যে দিন তোমরা তোমাদের সওম ছেড়ে দাও। আরেক দিন, যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত্ খাও।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬৬ হাঃ ১৯৯০, মুসলিম ১৩/২২, হাঃ ১১৩৭] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯৮. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুটি দিনে সওম পালন নেইঃ [সে দুটি দিন হচ্ছে] ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।
[বোখারী পর্ব ২০ : /৬ হাঃ ১১৯৭, মুসলিম কিতাবুস সিয়াম ৬/৫১, হাঃ ৮২৭] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯৯. যিয়াদ ইবনি জুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এসে [আবদুল্লাহ] ইবনি উমার [রাদি.]-কে বলিল যে, এক ব্যক্তি কোন এক দিনের সওম পালন করার মানৎ করেছে, আমার মনে হয় সে সোমবারের কথা বলেছিল। ঘটনাক্রমে ঐ দিন ঈদের দিন পড়ে যায়। ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ তাআলা মানৎ পুরা করার নির্দেশ দিয়েছেন আর নাবী [সাঃআঃ] এই [ঈদের] দিনে সওম পালন করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬৭ হাঃ ১৯৯৪, মুসলিম ১৩/২২, হাঃ ১১৩৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/২৪. শুধু জুমুআহ্র দিনে সওম পালন অপছন্দনীয়।
৭০০. মুহাম্মাদ ইবনি আব্বাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নাবী [সাঃআঃ] কি জুমুআহ্র দিনে [নফল] সওম পালন করিতে নিষেধ করিয়াছেন? উত্তরে তিনি বলিলেন, হাঁ।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬৩ হাঃ ১৯৮৪, মুসলিম ১৩/২৩, হাঃ ১১৪৩] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭০১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমআর দিনে সওম পালন না করে কিন্তু তার পূর্বে একদিন অথবা পরের দিন [যদি পালন করে তবে জুমুআর দিনে সওম পালন করা যায়]।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬৩ হাঃ ১৯৮৫, মুসলিম ১৩/২৪, হাঃ ১১৪৪] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/২৫. আল্লাহ তাআলার ঐ বাণী রহিত করণের বর্ণনা- [সওম পালনে] যাদের কষ্ট হয় তারা ফিদিয়া দিবে- [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২/১৮৪] এ বাণীর দ্বারা যারা রমাযান মাস পাবে তাহাদেরকে এ মাসের সওম পালন করিতে হইবে- [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২/১৮৫]।
৭০২.সালামাহ ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ এ আয়াত অবতীর্ণ হল- এবং যারা সওম পালনের সামর্থ্য রাখে তারা একজন মিসকীনকে ফিদ্য়াহ স্বরূপ আহার্য দান করিবে- তখন যে ইচ্ছে সওম ভঙ্গ করত এবং তার পরিবর্তে ফিদয়া প্রদান করত। এরপর পরবর্তী আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং পূর্বোক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে দেয়।
[বোখারী পর্ব ৬৫ : /২৬ হাঃ ৪৫০৭, মুসলিম ১৩/২৫, হাঃ ১১৪৫] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/২৬. শাবান মাসে রমাযানের বাকী সওম আদায় করা।
৭০৩. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার উপর রমাযানের যে কাযা হয়ে যেত তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করিতে পারতাম না।
[বোখারী পর্ব ৩০: /৪০ হাঃ ১৯৫০, মুসলিম ১৩/২৬, হাঃ ১১৪৬] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/২৭. মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাযা সওম আদায় করা।
৭০৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হইতে সওম আদায় করিবে।
[বোখারী পর্ব ৩০: /৪২ হাঃ ১৯৫২, মুসলিম ১৩/২৭, হাঃ ১১৪৭] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭০৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমার মা এক মাসের সওম যিম্মায় রেখে মারা গেছেন, আমি কি তাহাঁর পক্ষ হইতে এ সওম কাযা করিতে পারি? তিনি বলেনঃ হাঁ, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হল অধিক যোগ্য।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪২ হাঃ ১৯৫৩, মুসলিম ১৩/২৭, হাঃ ১১৪৮] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/২৯. সায়িমের জবান হিফাযত করা।
৭০৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করিবে না এবং মূর্খের মত কাজ করিবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করিতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুবার বলে, আমি সওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /২ হাঃ ১৮৯৪, মুসলিম ১৩/২৯, হাঃ ১১৫১] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৩০. সওমের ফাযীলাত
৭০৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, সওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যাঁর কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাহাঁর শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিস্কের গন্ধের চেয়েও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দুটি খুশী যা তাকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করিবে, তখন সওমের বিনিময়ে আনন্দিত হইবে।
[বোখারী পর্ব ৬৯ ঃ /১৪ হাঃ ১৯০৪, মুসলিম ১৩/৩০, হাঃ ১১৫১] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭০৮. সাহল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামাতের দিন সওম পালনকারীরাই প্রবেশ করিবে। তাহাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করিতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হইবে, সওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করিবে না। তাহাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হইবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪ হাঃ ১৮৯৬, মুসলিম ১৩/৩, হাঃ ১১৫২] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৩১. যে ব্যক্তি কোন কষ্ট এবং অন্যের হক্ক নষ্ট না করে আল্লাহ্র জন্য সওম পালন করিল তার ফাযীলাত।
৭০৯. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন হইতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।
[বোখারী পর্ব ৫৬ : /৩৬ হাঃ ২৮৪০, মুসলিম ১৩/৩১ হাঃ ১১৫৩],রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৩৩. ভুল করে খেলে, পানি পান করলে ও স্ত্রী সঙ্গম করলে সওম ভঙ্গ হইবে না।
৭১০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সওম পালনকারী ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সওম পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন
[বোখারী পর্ব ৩০ : /২৬ হাঃ ১৯৩৩, মুসলিম ১৩/৩৩, হাঃ ১১৫৫] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৩৪. রমাযান মাস ছাড়া নাবী [স]-এর সওম পালন করা এবং প্রত্যেক মাসে সওম করা মুস্তাহাব।
৭১১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] একাধারে [এত অধিক] সওম পালন করিতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর সওম পরিত্যাগ করবেন না। [আবার কখনো এত বেশি] সওম পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর [নফল] সওম পালন করবেন না। আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে রমাযান ব্যতীত কোন পুরা মাসের সওম পালন করিতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোন মাসে অধিক [নফল] সওম পালন করিতে দেখিনি
। [বোখারী পর্ব ৩০ : /৫২ হাঃ ১৯৬৯, মুসলিম ১৩/৩৩, হাঃ ১১৫৬] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭১২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] শাবান মাসের চেয়ে বেশি [নফল] সওম কোন মাসে পালন করিতেন না। তিনি [প্রায়] পুরা শাবান মাসই সওম রাখতেন এবং তিনি বলিতেনঃ তোমাদের মধ্যে যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকু [নফল] আমল কর, কারণ তোমরা [আমল করিতে করিতে] পরিশ্রান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা [সওয়াব দান] বন্ধ করেন না। নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় সলাত ছিল তাই- যা যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হত, যদিও তা পরিমাণে কম হত এবং তিনি যখন কোন [নফল] সলাত আদায় করিতেন পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখতেন।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৫২ হাঃ ১৯৭০, মুসলিম ১৩/৩৩, হাঃ ১১৫৬] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭১৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] রমাযান ব্যতীত কোন মাসে পুরা মাসের সওম পালন করেননি। তিনি এমনভাবে [নফল] সওম পালন করিতেন যে, কেউ বলিতে চাইলে বলিতে পারতো, আল্লাহর কসম! তিনি আর সওম পালন পরিত্যাগ করবেন না। আবার এমনভাবে [নফল] সওম ছেড়ে দিতেন যে, কেউ বলিতে চাইলে বলিতে পারতো আল্লাহর কসম! তিনি আর সওম পালন করবেন না।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৫৩ হাঃ ১৯৭১, মুসলিম ১৩/৩৩, হাঃ ১১৫৭] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৩৫. সওম দাহর [একাধারে এক যুগ] সওম করা ঐ ব্যক্তির জন্য নিষিদ্ধ, যার এর মাধ্যমে ক্ষতি হইবে অথবা এর মাধ্যমে অন্যের হক নষ্ট হইবে অথবা দু ঈদে সওম ভঙ্গ না করা এবং তাশরীকের দিনগুলোতে সওম ভঙ্গ না করা এবং একদিন বিরতি দিয়ে সওম করার ফাযীলাত।
৭১৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট আমার সম্পর্কে এ কথা পৌঁছে যায় যে, আমি বলেছি, আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সওম পালন করব এবং রাতভর সলাত আদায় করব। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করায় আমি বললাম, আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোন! আমি এ কথা বলেছি। তিনি বললেনঃ তুমি তো এরূপ করিতে সক্ষম হইবে না। বরং তুমি সওম পালন কর ও ছেড়েও দাও, [রাতে] সলাত আদায় কর ও নিদ্রাও যাও। তুমি মাসে তিন দিন করে সওম পালন কর, কারণ নেক কাজের ফল তার দশগুণ; এভাবেই সারা বছরের সওম পালন হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি এর থেকে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে একদিন সওম পালন কর এবং দুদিন ছেড়ে দাও। আমি বললাম, আমি এর হইতে বেশি করার শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে একদিন সওম পালন কর আর একদিন ছেড়ে দাও। এ হল দাউদ [আ.]-এর সওম এবং এ হল সর্বোত্তম [সওম]। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ এর চেয়ে উত্তম সওম [রাখার পদ্ধতি] আর নেই।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৫৬ হাঃ ১৯৭৬, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭১৫. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ হে আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সওম পালন কর এবং সারা রাত সলাত আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক [শুনেছেন] হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেনঃ এরূপ করিবে না [বরং মাঝে মাঝে] সওম পালন কর আবার ছেড়েও দাও। [রাতে] সলাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হাক্ব রয়েছে, তোমার চোখের হাক্ব রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হাক্ব আছে, তোমার মেহমানের হাক্ব আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সওম পালন কর। কেননা নেক আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সওম হয়ে যায়। আমি [বললাম] আমি এর চেয়েও কঠোর আমল করিতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন আমলের অনুমতি দেয়া হল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আরো বেশি শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তবে আল্লাহর নাবী দাউদ [আ.]-এর সওম পালন কর, এর চেয়ে বেশি করিতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নাবী দাউদ [আ.]-এর সওম কেমন? তিনি বললেনঃ অর্ধেক বছর। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ [রাদি.] বৃদ্ধ বয়সে বলিতেন, আহা! আমি যদি নাবী [সাঃআঃ] প্রদত্ত রুখসত [সহজতর বিধান] কবূল করে নিতাম!
[বোখারী পর্ব ৩০: /৫৫ হাঃ ১৯৭৫, মুসলিম ১৩/৩৩৫, হাঃ ১১৫৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭১৬. আবদুল্লাহ্ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, “এক মাসে কুরআন খতম কর।” আমি বললাম, “আমি এর চেয়ে অধিক করার শক্তি রাখি।” তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, “তাহলে প্রতি সাত দিনে একবার খতম করো এবং এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে খতম করো না।”
[বোখারী পর্ব ৬৬: /৩৪ হাঃ ৫০৫৪, মুসলিম হাঃ ১১৫৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭১৭.আবদুল্লাহ্ ইবনি আমর ইবনি আস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ হে আবদুল্লাহ্! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, সে রাত জেগে ইবাদাত করত, পরে রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।
[বোখারী পর্ব ১৯ : /১৯ হাঃ ১১৫২, মুসলিম হাঃ]রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭১৮. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছে যে, আমি একটানা সওম পালন করি এবং রাতভর সলাত আদায় করি। এরপর হয়ত তিনি আমার কাছে লোক পাঠালেন অথবা আমি তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। তিনি বললেনঃ আমি কি এ কথা ঠিক শুনিনি যে, তুমি সওম পালন করিতে থাক আর ছাড় না এবং তুমি [রাতভর] সলাত আদায় করিতে থাক আর ঘুমাও না? [আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন]ঃ তুমি সওম পালন কর এবং মাঝে মাঝে তা ছেড়েও দাও। রাতে সলাত আদায় কর এবং নিদ্রাও যাও। কেননা তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে এবং তোমার নিজের শরীরের ও তোমার পরিবারের হক তোমার উপর আছে। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিলেন, আমি এর চেয়ে বেশি শক্তি রাখি। তিনি {আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]} বললেনঃ তাহলে তুমি দাউদ [আ]-এর সিয়াম পালন কর। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিলেন, তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ দাউদ [আ.] একদিন সওম পালন করিতেন, একদিন ছেড়ে দিতেন এবং তিনি [শত্রুর] সম্মুখীন হলে পলায়ন করিতেন না। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! আমাকে এ শক্তি কে যোগাবে? বর্ণনাকারী আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, [এ হাদীসে] কিভাবে সব সময়ের সিয়ামের প্রসঙ্গ আসে সে কথাটুকু আমার মনে নেই [অবশ্য] এতটুকু মনে আছে যে, নাবী [সাঃআঃ] দুবার এ কথাটি বলেছেন, সব সময়ের সওম কোন সওম নয়।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৫৭ হাঃ ১৯৭৭, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭১৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি সব সময় সওম পালন কর এবং রাতভর সলাত আদায় করে থাক? আমি বললাম, জী হাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি এরূপ করলে চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। যে সারা বছর সওম পালন করে সে যেন সওম পালন করে না। মাসে তিন দিন করে সওম পালন করা সারা বছর সওম পালনের সমতুল্য। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি দাউদী সওম পালন কর, তিনি একদিন সওম পালন করিতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন এবং যখন শত্রুর সম্মুখীন হইতেন তখন পলায়ন করিতেন না
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৫৯ হাঃ ১৯৭৯, মুসলিম হাঃ ১১৫৯ ] ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং রাতের এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি একদিন সিয়াম পালন করিতেন, একদিন করিতেন না। [বোখারী পর্ব ১৯ : /৭ হাঃ ১১৩১, মুসলিম ১৩/৩৫, হাঃ ১১৫৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭২০. আবদুল্লাহ ইব্নু আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল [সাঃ] তাঁকে বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলার নিকট সর্বাধিক প্রিয় সলাত হল দাউদ [আঃ]-এর সলাত। আর আল্লাহ্ তাআলার নিকট সর্বাধিক প্রিয় সিয়াম হল দাউদ [আঃ]-এর সিয়াম। তিনি {দাউদ [আঃ]} অর্ধরাত পর্যন্ত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং রাতের এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি একদিন সিয়াম পালন করিতেন, একদিন করিতেন না।
[বোখারী পর্ব ১৯ : /৭ হাঃ ১১৩১, মুসলিম ১৩/৩৫, হাঃ ১১৫৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭২১. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট আমার সওমের [সওম পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে] আলোচনা করায় তিনি আমার এখানে আগমন করেন। আমি তাহাঁর জন্য খেজুরের গাছের ছালে পরিপূর্ণ চামড়ার বালিশ [হেলান দিয়ে বসার জন্য] উপস্থিত করলাম। তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। বালিশটি তাহাঁর ও আমার মাঝে পড়ে থাকল। তিনি বললেনঃ প্রতি মাসে তুমি তিন দিন সওম পালন করলে হয় না? আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! [আরো করিতে সক্ষম]। তিনি বললেনঃ সাত দিন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! [আরো করিতে সক্ষম]। তিনি বললেনঃ নয় দিন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! [আরো করিতে সক্ষম]। তিনি বললেনঃ এগারো দিন। এরপর নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, দাউদ [আঃ]-এর সওমের চেয়ে উত্তম সওম আর হয় না [তা হচ্ছে] অর্ধেক বছর, একদিন সওম পালন কর ও একদিন ছেড়ে দাও।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৫৯ হাঃ ১৯৮০, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৩৭. শাবান মাসে আনন্দের সওম করা।
৭২২. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে অথবা [রাবী বলেন] অন্য এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন এবং ইমরান [রাদি.] তা শুনছিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ হে অমুকের পিতা!! তুমি কি এ মাসের শেষভাগে সওম পালন করনি? [রাবী] বলেন, আমার মনে হয় [আমার ওস্তাদ] বলেছেন, অর্থাৎ রমাযান। লোকটি উত্তর দিল, হে আল্লাহর রসূল! না। তিনি বললেনঃ যখন সওম পালন শেষ করিবে তখন দুদিন সওম পালন করে নিবে।
[বোখারী পর্ব ৩০ : /৬২ হাঃ ১৯৮৩, মুসলিম ১৩/৩৬, হাঃ ১১৬১] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩/৪০. লাইলাতুল ক্বাদর এর ফাযীলাত এবং তার অন্বেষণে উৎসাহ দান, তার তারিখ ও স্থানের বর্ণনা, তা অন্বেষণ করার উপযুক্ত সময়।
৭২৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ]-এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমাযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বাদর দেখানো হয়। [এ শুনে] আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। [তোমাদের দেখা ও আমার দেখা] শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।
[বোখারী পর্ব ৩২ : /২ হাঃ ২০১৫, মুসলিম ১৩/৪০, হাঃ ১১৬৫] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭২৪. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে রমাযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল ক্বাদর [-এর সঠিক তারিখ] দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখিতে পেয়েছি যে, আমি [ঐ রাতে] কাদা-পানিতে সাজদাহ করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে [মসজিদ হইতে বের হয়ে না যায়]। আমরা সকলে ফিরে আসলাম [থেকে গেলাম]। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খণ্ডও দেখিতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মাসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সলাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে কাদা-পানিতে সাজদাহ করিতে দেখলাম। পরে তাহাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখিতে পাই।
[বোখারী পর্ব ৩২ : /২ হাঃ ২০১৬, মুসলিম হাঃ] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭২৫. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] রমাযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাহাঁর সংগে যাঁরা ইতিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ইতিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাহাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, অতঃপর বলেন যে, আমি এই দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ইতিকাফ করব। যে আমার সংগে ইতিকাফ করেছিল সে যেন তার ইতিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। [আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন]ঃ শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মাসজিদে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সলাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সলাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাহাঁর দিকে তাকিয়ে দেখিতে পাই যে, তাহাঁর মুখমণ্ডল কাদা-পানি মাখা।
[বোখারী পর্ব ৩২ : /৩ হাঃ ২০১৮, মুসলিম ১৩/৪০, হাঃ ১১৬৭] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৭২৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করিতেন এবং বলিতেনঃ তোমরা রমাযানের শেষ দশকে* লাইলাতুল ক্বাদর অনুসন্ধান কর।
[বোখারী পর্ব ৩২ ঃ /৩ হাঃ ২০২০, মুসলিম ১৩/৪০ হাঃ ১১৬৯] রোজা হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply