রোজার হাদীস । ইফতার, সাহ্রী, চাঁদ দেখে আরম্ভ ও শেষ করা
রোজার হাদীস । আশুরা সবেকদর ও সবেবরাত এর বর্ণনা এই অধ্যায়ে মোট ১২৭ টি হাদীস (৬৮২-৮০৮) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-৬ঃ কিতাবুল সিয়াম, অনুচ্ছেদঃ (১-২২)=২২টি
১. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসের ফাযীলাত
২. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাস আসার পূর্বক্ষণে রোযা পালন করো না
৩. অনুচ্ছেদঃ সন্দেহযুক্ত দিনে রোযা পালন করা মাকরূহ্
৪. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাস নির্ধারণের উদ্দেশ্যে শাবানের চাঁদের গণনা
৫. অনুচ্ছেদঃ চাঁদ দেখে রোযা আরম্ভ করা এবং চাঁদ দেখে রোযা শেষ করা
৬. অনুচ্ছেদঃ উনত্রিশ দিনেও একমাস পূর্ণ হয়
৭. অনুচ্ছেদঃ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রোযা রাখা
৮. অনুচ্ছেদঃ ঈদের দুই মাস কম হয় না
৯. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক অঞ্চলের লোকদের জন্য তাহাদের চাঁদ দেখাই ধর্তব্য হইবে
১০. অনুচ্ছেদঃ যে সব খাদ্য সামগ্ৰী দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব
১১. অনুচ্ছেদঃ ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আয্হা সম্মিলিতভাবে পালন করা
১২. অনুচ্ছেদঃ যখন রাত আসে এবং দিন চলে যায় তখন রোযাদার ইফতার করিবে
১৩. অনুচ্ছেদঃ বিলম্ব না করে ইফতার করা
১৪. অনুচ্ছেদঃ বিলম্ব করে সাহ্রী খাওয়া
১৫. অনুচ্ছেদঃ ফজরের [সুবহি সাদিকের] বর্ণনা
১৬. অনুচ্ছেদঃ রোযা থাকা অবস্থায় গীবাত করা প্রসঙ্গে কঠোর হুঁশিয়ারি
১৭. অনুচ্ছেদঃ সাহ্রী খাওয়ার ফাযীলাত
১৮. অনুচ্ছেদঃ সফরে থাকাবস্থায় রোযা পালন করা মাকরূহ
১৯. অনুচ্ছেদঃ সফরে রোযা পালনের অনুমতি প্রসঙ্গে
২০. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের রোযা ভেঙে ফেলার অনুমতি আছে
২১. অনুচ্ছেদঃ গর্ভবতী নারী ও দুগ্ধদানকারিণী মায়ের জন্য রোযা ভঙ্গের অনুমতি আছে
২২. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ হইতে রোযা আদায় করা
১. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসের ফাযীলাত
৬৮২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শাইতান ও দুষ্ট জিন্দেরকে রমযান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। [এ মাসে] একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেনঃ হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হইতে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হইতে থাকে।
-সহীহ্ ইবনি মা-জাহ [১৬৪২] আবদুর রাহমান ইবনি আওফ, ইবনি মাসউদ ও সালমান [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশা করে যে লোক রমযান মাসের রোযা পালন করলো এবং [ইবাদাতের উদ্দেশ্যে] রাতে জেগে রইলো, তার পূর্ববর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশা করে যে লোক লাইলাতুল কাদ্রের [ইবাদাতের জন্য] রাতে জেগে থাকে, তার পূর্ববর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
-সহীহ্ ইবনি মা-জাহ [১৩২৬], বুখারী, মুসলিম আবু ঈসা আবু বাক্র ইবনি আইয়াসের সূত্রে আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটিকে গারীব বলেছেন। আমরা আমাশ-আবু সালিহ-এর সূত্রে বর্ণিত আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর হাদীসটিকে শুধুমাত্র আবু বাক্র ইবনি আইয়াসের মাধ্যমেই জেনেছি। আমি এ হাদীস প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, হাসান ইবনির রাবী, আবুল আহওয়াস হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনি মুজাহিদ হইতে তাহাঁর বক্তব্য হিসাবে বর্ণিত রমযান মাসের প্রথম রাতে…… হাদীসের শেষ পর্যন্ত। মুহাম্মাদ বলেন, আমার নিকটে এই সনদটি আবু বাক্র ইবনি আইয়াসের তুলনায় বেশি সহিহ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাস আসার পূর্বক্ষণে রোযা পালন করো না
৬৮৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রমযান মাস আসার একদিন কিংবা দুইদিন পূর্ব থেকে তোমরা [নফল] রোযা পালন করো না। হ্যাঁ, তবে তোমাদের কারো পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী রোযা পালনের দিন পড়ে গেলে সে ঐ দিনের রোযা পালন করিতে পারবে। তোমরা রোযা রাখ চাঁদ দেখে এবং রোযা শেষও কর চাঁদ দেখেই। [২৯ তারিখে] আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ দিন পুরো কর চাঁদ দেখিতে না পেলে], এরপর ইফ্তার কর [রোযা শেষ কর]।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৬৫০ ও ১৬৫৫], বুখারী, মুসলিম রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কিছু সংখ্যক সাহাবী হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করেন। তাহাদের মতে রমযান মাস শুরুর অব্যবহিত পূর্বে রমযানের মর্যাদার লক্ষ্যে রোযা পালন করা মাকরূহ্। তবে কোন নির্ধারিত দিনে রোযা আদায়ের পূর্ব-অভ্যাস কারো থাকলে এবং রমযানের আগের দিন সেই দিন হলে তবে এদিনে তার রোযা পালনে কোন সমস্যা নেই। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা রমযান মাস শুরুর এক দিন বা দুদিন আগে রোযা পালন করো না। হ্যাঁ, তবে যে লোক অভ্যাসমত রোযা পালন করে সে লোক ঐ দিনে রোযা পালন করিতে পারে।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৬৫০], বুখারী, মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩. অনুচ্ছেদঃ সন্দেহযুক্ত দিনে রোযা পালন করা মাকরূহ্
৬৮৬. সিলা ইবনি যুফার [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.]-এর নিকটে আমরা উপস্থিত ছিলাম। একটি ভুনা বক্রী [খাবারের উদ্দেশ্যে] নিয়ে আসা হলে তিনি বলিলেন, তোমরা সকলেই খাও। কিন্তু কোন এক লোক দূরে সরে গিয়ে বলিল, আমি রোযাদার। আম্মার [রাদি.] বলিলেন, সন্দেহযুক্ত দিনে যে লোক রোযা পালন করে সে লোক আবুল কাসিম [সাঃআঃ]-এর নাফারমানী করে।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৪৫] আবু হুরাইরা ও আনাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আম্মার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈদের মধ্যে বেশিরভাগই আমল করিয়াছেন। সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস, আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহ্মাদ ও ইসহাক [রঃ]-এর এরকমই অভিমত। সন্দেহের দিনে রোযা পালন করাকে তারা মাকরূহ বলেছেন। উক্ত দিনে কেউ রোযা পালন করলে আর তা রমযান মাস হলে, তথাপিও বেশিরভাগ আলিমের মত অনুযায়ী সে লোককে এই দিনের স্থলে একটি কাযা রোযা পালন করিতে হইবে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাস নির্ধারণের উদ্দেশ্যে শাবানের চাঁদের গণনা
৬৮৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা রমযানের মাস নির্ধারণের জন্য শাবানের চাঁদেরও হিসাব রাখ।
-হাসান, সহীহা [৫৬৫] আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি গারীব। এ হাদীস আবু মুআবিয়ার সূত্র ব্যতীত আর কোন সূত্রে আমরা জানতে সক্ষম হইনি। সহীহ্ রিওয়ায়াত হলঃ মুহাম্মাদ ইবনি আম্র-আবু সালামা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রমযান মাসকে তোমরা এক দিন বা দুদিন এগিয়ে সামনে নিয়ে আসবে না। ইয়াহইয়া ইবনি কাসীর হইতে তিনি আবু সালামা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে মুহাম্মাদ ইবনি আমর আল-লাইসীর হাদীসের মতই হাদীস বর্ণিত আছে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৫. অনুচ্ছেদঃ চাঁদ দেখে রোযা আরম্ভ করা এবং চাঁদ দেখে রোযা শেষ করা
৬৮৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা রমযানের পূর্বে রোযা রেখ না। তোমরা রমযানের চাঁদ দেখার পর রোযা রাখা আরম্ভ কর এবং চাঁদ দেখার পর তা ভাঙ্গ। মেঘের কারণে চাঁদ দেখা না গেলে তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ কর।
-সহীহ আবু দাঊদ [২০১৬] আবু হুরাইরা, আবু বক্রা ও ইবনি উমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। তাহাঁর নিকট হইতে এটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬. অনুচ্ছেদঃ উনত্রিশ দিনেও একমাস পূর্ণ হয়
৬৮৯. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা যতবার ত্রিশ দিন রোযা পালন করেছি, এর চেয়ে বেশি ঊনত্রিশ দিন রোযা পালন করেছি।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৫৮] উমার, আবু হুরাইরা, আইশা, সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস, ইবনি আব্বাস, ইবনি উমার, আনাস, জা-বির, উম্মু সালামা ও আবু বাক্রা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ উনত্রিশ দিনেও মাস পূর্ণ হয়। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার এক মাসের জন্য তাহাঁর স্ত্রীদের সাথে ঈলা [শপথ] করেন। ঘরের মাচানের একটি কক্ষে তিনি ২৯ দিন থাকেন। লোকেরা বলিল, হে রসুলুল্লাহ! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা [শপথ] করেছিলেন? তিনি বললেনঃ এই মাসটি ঊনত্রিশ দিনের।
-সহীহ, বুখারী। আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭. অনুচ্ছেদঃ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রোযা রাখা
৬৯১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, কোন এক বিদুঈন ব্যক্তি নাবীর [সাঃআঃ] নিকট এসে বলিল, আমি [রামাযানের] নতুন চাঁদ দেখেছি। তিনি বলিলেন তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই? তুমি কি আরো সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহ্ তাআলার রাসূল? সে বলিল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ হে বিলাল! লোকদের মধ্যে ঘোষণা করে দাও তারা যেন আগামীকাল হইতে রোযা রাখে।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৬৫২] অন্য একটি সূত্রেও একই রকম হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসের সনদে মতের অমিল আছে। সুফিয়ান সাওরী প্রমুখ এটিকে সিমাক ইবনি হারব, ইকরিমার সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ আলিম এই হাদীস অনুযায়ী আমল করার কথা বলেছেন। তাঁরা বলেন, রোযার ব্যাপারে এক ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রোযা রাখা যাবে। ইবনিল মুবারক, শাফিঈ, আহ্মাদ ও কূফাবাসীদের এই মত। ইসহাক বলেন, দুই ব্যক্তির সাক্ষ্য ব্যতীত রোযা রাখা যাবে না। তবে রোযা ভেঙে ফেলার ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতের অমিল নেই যে, এই ব্যাপারে দুই ব্যক্তির সাক্ষ্য আবশ্যিক। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৮. অনুচ্ছেদঃ ঈদের দুই মাস কম হয় না
৬৯২. আবু বাক্রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুই ঈদের মাস রমযান ও যুলহিজ্জা [একসঙ্গে] কম হয় না।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৫৯], বুখারী, মুসলিম আবু বাক্রা [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। আবদুর রাহমান ইবনি আবু বাক্রার সূত্রে এ হাদীসটি মুরসাল হিসেবেও বর্ণিত আছে। ঈমাম আহ্মাদ এ হাদীসের তাৎপর্য প্রসঙ্গে বলেনঃ “একসাথে দুই ঈদের মাস কম হয় না। অর্থাৎ একই বৎসর একটি মাস কম হয়ে গেলে [২৯ দিন হলে] অন্যটি পূর্ণ হইবে” [৩০ দিন হইবে]। ইসহাক বলেন, কম হইবে না অর্থ হচ্ছে উনত্রিশ দিনে মাস হলেও পূর্ণ মাস হিসাবে এটি গণ্য হইবে, তাতে কোনরকম অপূর্ণতা নেই। ইসহাক [রঃ]-এর মতানুসারে এই দুই মাস একই বছরে কম [২৯ দিনে] হইতে পারে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক অঞ্চলের লোকদের জন্য তাহাদের চাঁদ দেখাই ধর্তব্য হইবে
৬৯৩. কুরাইব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
মুআবিয়া [রাদি.]-এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে উম্মুল ফাযল বিনতুল হারিস [রাদি.] তাকে শামে [সিরিয়ায়] প্রেরণ করেন। কুরাইব [রঃ] বলেন, সিরিয়ায় পৌঁছার পর আমি উম্মুল ফাযল [রাদি.]-এর কাজটি শেষ করলাম। আমি সিরিয়ায় থাকা অবস্থায়ই রমযান মাসের চাঁদ দেখিতে পাওয়া গেল। আমরা জুমুআর রাতে [বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়] চাঁদ দেখিতে পেলাম। রমযানের শেষের দিকে আমি মাদীনায় ফিরে আসলাম। ইবনি আব্বাস [রাদি.] আমাকে [কুশলাদি] জিজ্ঞাসা করার পর চাঁদ দেখা প্রসঙ্গে উল্লেখ করে বলিলেন, কোন্ দিন তোমরা চাঁদ দেখিতে পেয়েছিলে? আমি বললাম, জুমুআর রাতে চাঁদ দেখিতে পেয়েছি। তিনি বলিলেন, জুমুআর রাতে তুমি কি স্বয়ং চাঁদ দেখিতে পেয়েছ? আমি বললাম, লোকেরা দেখিতে পেয়েছে এবং তারা রোযাও পালন করেছে, মুআবিয়া [রাদি.]-ও রোযা পালন করিয়াছেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, কিন্তু আমরা শনিবার [শুক্রবার দিবাগত] রাত্রে চাঁদ দেখেছি। অতএব ত্রিশ দিন পুরো না হওয়া পর্যন্ত অথবা চাঁদ না দেখা পর্যন্ত আমরা রোযা পালন করিতে থাকব। আমি বললাম, মুআবিয়া [রাদি.]-এর চাঁদ দেখা ও তার রোযা থাকা আপনার জন্য কি যথেষ্ট নয়? তিনি বলেন, না। আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ করিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
– সহীহ, সহীহ আবু দাউদ [১০২১], মুসলিম। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ গারীব বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করার অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। তাহাদের মতে প্রত্যেক অঞ্চলের লোকদের জন্য তাহাদের চাঁদ দেখাই ধর্তব্য হইবে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০. অনুচ্ছেদঃ যে সব খাদ্য সামগ্ৰী দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব
৬৯৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি [ইফ্তারের সময়] খেজুর পায় সে যেন তা দিয়ে ইফ্তর করে। আর যে ব্যক্তি তা না পায় সে যেন পানি দিয়ে ইফ্তার করে। যেহেতু পানি পবিত্র বা পবিত্রকারী।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৬৯৯] এই অনুচ্ছেদে সালমান ইবনি আমির [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি শুবার সূত্রে সাঈদ ইবনি আমির ছাড়া অন্য কেউ এরকম বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। এই হাদীসটি মাহফূয [নির্ভরযোগ্য] নয়। আবদুল আযীয ইবনি সুহাইব-আনাস [রাদি.]সূত্রে বর্ণিত হাদীস হিসাবে এটির কোন ভিত্তি আছে বলে আমাদের জানা নেই। শুবার শাগরিদ্গণ এই হাদীস শুবা হইতে তিনি আসিম আল-আহওয়াল হইতে তিনি হাফসা বিনতি সীরীন হইতে তিনি রাবাব হইতে তিনি সালমান ইবনি আমির হইতে তিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সাঈদ ইবনি আমিরের রিওয়াতের তুলনায় এটি বেশী সহিহ। তারপর তারা শুবা, আসিম, হাফসা বিনতি সীরীন, সালমান ইবনি আমিরের সনদেও এটি বর্ণনা করিয়াছেন। এতে শুবা রাবাব-এর নাম উল্লেখ করেননি। সুফিয়ান সাওরী, ইবনি উআইনা প্রমুখ রাবী আসিম আল-আহওয়াল, হাফসা বিনতি সীরীন, রাবাব, সালমান ইবনি আমির হইতে এই বর্ণনাটিই সহীহ। রাবাব হলেন উম্মুর রায়িহ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৬৯৫. সালমান ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ইফ্তার করে তখন সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। ইবনি উআইনার বর্ণনায় আরো আছেঃ এতে বারকাত রয়েছে। কেউ যদি তা না পায় তবে সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কেননা পানি পবিত্র বা পবিত্রকারী।
এ বর্ণনাটিও যঈফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৬৯৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মাগরিবের] নামাজ আদায়ের পূর্বেই কয়েকটা তাজা খেজুর দ্বারা ইফ্তার করিতেন। তিনি তাজা খেজুর না পেলে কয়েকটা শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করিতেন আর শুকনো খেজুরও না পেলে তবে কয়েক ঢোক পানি পান করিতেন।
-সহীহ্, ইরওয়া [৯২২], সহীহ আবু দাঊদ [২০৪০] এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। অপর বর্ণনায় আছেঃ শীতের সময় শুকনো খেজুর দ্বারা এবং গ্রীষ্মের সময় পানি দ্বারা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইফ্তার করিতেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১. অনুচ্ছেদঃ ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আয্হা সম্মিলিতভাবে পালন করা
৬৯৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যেদিন তোমরা সবাই রোযা পালন কর সে দিন হল রোযা। যেদিন তোমরা সবাই রোযা ভঙ্গ কর সে দিন হল ঈদুল ফিত্র। আর যেদিন তোমরা সবাই কুরবানী কর সে দিন হল ঈদুল আয্হা।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৬০] আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। এই হাদীসটি ব্যাখ্যা করিতে গিয়ে কোন কোন আলিম বলেন, এক সাথে এবং অধিক সংখ্যকের সাথে রোযা ও ঈদ পালন করিতে হইবে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২. অনুচ্ছেদঃ যখন রাত আসে এবং দিন চলে যায় তখন রোযাদার ইফতার করিবে
৬৯৮. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন রাত আসে, দিন চলে যায় এবং সূর্য অস্তমিত হয় তখন তুমি ইফতার কর।
-সহীহ, সহীহ আবু দাঊদ [২০৩৬], ইরওয়া [৯১৬], বুখারী, মুসলিম ইবনি আবু আওফা ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩. অনুচ্ছেদঃ বিলম্ব না করে ইফতার করা
৬৯৯. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যত দিন পর্যন্ত লোকেরা বিলম্ব না করে ইফ্তার করিবে তত দিন পর্যন্ত তারা কল্যাণের মধ্যে থাকিবে।
-সহীহ, ইরওয়া [৯১৭] আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস, আইশা ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। সূর্যাস্তের পরপরই ইফ্তার করাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবীগণ ও অপরাপর আলিম মুস্তাহাব বলে মনে করেন। ঈমাম শাফি, আহ্মাদ ও ইসহাকের এরকমই অভিমত রহিয়াছে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭০০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দাদের মাঝে যারা তাড়াতাড়ি ইফ্তার করে তারাই আমার বেশী প্রিয়।
যঈফ, মিশকাত [১৯৮৯], তালীকুর রাগীব [২/৯৫], তালীকুল জিয়াদ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৭০১. আব্দুল্লাহ ইব্নু আবদুর রহমান হইতে বর্ণীতঃ
আব্দুল্লাহ ইব্নু আবদুর রহমান…… আওযাঈ হইতে উপোরোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন।
যঈফঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৭০২. আবু আতিয়্যা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ও মাস্রূক আইশা [রাদি.]-এর নিকটে গিয়ে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর দুজন সাহাবীর মধ্যে একজন ইফ্তার করেন এবং নামাজ আদায় করেন বিলম্ব না করে আর অন্যজন ইফ্তার করেন এবং নামাজ আদায় করেন বিলম্ব করে। তিনি বলিলেন, তাঁদের মধ্যে কে অবিলম্বে ইফ্তার করেন এবং নামাজ আদায় করেন? আমরা বললাম, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]। তিনি বলিলেন, এভাবেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] করিয়াছেন। অপর সাহাবী ছিলেন আবু মূসা [রাদি.]।
-সহীহ্, সহীহ আবু দাঊদ [২০৩৯], মুসলিম। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। আবু আতিয়্যার নাম মালিক, পিতা আবু আমির হামদানী, মতান্তরে ইবনি আমির এবং এটিই অধিকতর সহিহ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪. অনুচ্ছেদঃ বিলম্ব করে সাহ্রী খাওয়া
৭০৩. যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সাহ্রী খাওয়া শেষ করেই আমরা নামাজ আদায় করিতে দাঁড়ালাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, কি পরিমাণ ব্যবধান ছিল এ দুটির মাঝে তিনি বলিলেন, পঞ্চাশ আয়াতের সমপরিমাণ [তিলাওয়াতের সময়]।
-সহীহ, বুখারী, মুসলিম। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭০৪. হিশাম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
উপরোক্ত হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করিয়াছেন হান্নাদ ওয়াকী হইতে, তিনি হিশাম হইতে। তাতে আছে “পঞ্চাশ আয়াত পাঠের সমপরিমাণ”। হুযাইফা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। এরকম মতই ঈমাম শাফি, আহ্মাদ ও ইসহাকের। বিলম্ব করে সাহ্রী খাওয়াকে তাঁরা মুস্তাহাব বলেছেন।
রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৫. অনুচ্ছেদঃ ফজরের [সুবহি সাদিকের] বর্ণনা
৭০৫. তাল্ক ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা [ভোররাতে] পানাহার করে যাও। তোমাদের যেন উর্ধ্বগামী আলোকরশ্মি খাবার থেকে বিরত না রাখে। তোমরা পানাহার করে যেতে পার লাল দীপ্তিটুকু প্রশস্তভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত।
-হাসান সহীহ, সহীহ আবু দাঊদ [২০৩৩] আদী ইবনি হাতিম, আবু যার ও সামুরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা তাল্ক ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে এই সূত্রে হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীস মোতাবেক আলিমগণ অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন যে, রোযা পালনকারীর জন্য ফজরের লালচে আলো প্রস্থে বিস্তৃত না হওয়া পর্যন্ত পানাহার অবৈধ নয়। এটাই বেশিরভাগ আলিমের মত। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৭০৬. সামুরা ইবনি জুনদাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদেরকে যেন সাহ্রী খাওয়া হইতে বিরত না রাখে বিলালের আযান এবং দিগন্তবৃত্তে প্রকাশিত ভোরের আলো [সুবহে কাযিব], দিগন্তবৃত্তে উদ্ভাসিত বিস্তৃত আলো [সুবহি সাদিক] ব্যতীত।
-সহীহ্, সহীহ্ আবু দাঊদ [২০৩১], মুসলিম আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬. অনুচ্ছেদঃ রোযা থাকা অবস্থায় গীবাত করা প্রসঙ্গে কঠোর হুঁশিয়ারি
৭০৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অন্যায় কথাবার্তা [গীবাত, মিথ্যা, গালিগালাজ, অপবাদ, অভিসম্পাত ইত্যাদি] ও কাজ যে লোক [রোযা থাকা অবস্থায়] ছেড়ে না দেয়, সে লোকের পানাহার ত্যাগে আল্লাহ্ তাআলার কোন প্রয়োজন নেই।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৮৯], বুখারী আনাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭. অনুচ্ছেদঃ সাহ্রী খাওয়ার ফাযীলাত
৭০৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সাহ্রী খাও, কেননা, সাহ্রী খাওয়ার মধ্যে বারকাত আছে।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৯২], বুখারী, মুসলিম আবু হুরাইরা, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ, ইবনি আব্বাস, আমর ইবনিল আস, ইরবায ইবনি সারিয়া, উতবা ইবনি আবদ ও আবু দারদা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। নাবী [সাঃআঃ] হইতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ আমাদের ও আহ্লি কিতাবদের [ইয়াহুদী ও খৃষ্টান] রোযার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সাহ্রী খাওয়া। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭০৯. কুতাইবা হইতে বর্ণীতঃ
উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন কুতাইবা লাইস হইতে, তিনি মূসা ইবনি আলী হইতে, তিনি তার পিতা [আলী] হইতে, তিনি আবু কাইস হইতে, তিনি আমর ইবনিল আস [রাদি.]-এর সূত্রে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে।
-সহীহ, হিজাবুল মারআতিল মুসলিমা [পৃঃ ৮৮], সহীহ আবু দাঊদ [২০২৯], মুসলিম এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেন। এ হাদীসটির বর্ণনাকারী মূসা প্রসঙ্গে মিসরবাসী [মুহাদ্দিসগণ] বলেন, মূসা ইবনি আলী এবং ইরাকবাসী [মুহাদ্দিসগণ] বলেন, মূসা ইবনি উলাই। তিনি হলেন মূসা ইবনি উলাই ইবনি রাবাহ্ আল-লাখ্মী। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮. অনুচ্ছেদঃ সফরে থাকাবস্থায় রোযা পালন করা মাকরূহ
৭১০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মক্কা বিজয়ের বছর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কার উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হন। তিনি রোযা রাখেন এবং লোকেরাও তাহাঁর সাথে রোযা রাখে। কুরাউল গামীমে পৌঁছানোর পর তাঁকে বলা হল, রোযা রাখা লোকদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আপনি কি করেন তারা সেই অপেক্ষায় আছে। আসরের নামাজ আদায়ের পর তিনি এক পেয়ালা পানি চেয়ে আনালেন এবং তা পান করিলেন। তখন লোকেরা তাহাঁর দিকে তাকিয়ে দেখছিল। ফলে তাহাদের মধ্যেকার কিছু লোক রোযা ভাঙ্গলো এবং কিছু লোক রোযা থাকল। তখনও কিছু লোক রোযা অবস্থায় আছে এ কথা তাহাঁর নিকটে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ এরা হচ্ছে অবাধ্য নাফরমান।
-সহীহ, ইরওয়া [৪/৫৭], মুসলিম। কাব ইবনি আসিম, ইবনি আব্বাস ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “সফরের মাঝে রোযা পালন করাটা সাওয়াবের কাজ নয়”।
আলিমদের মধ্যে সফরে থাকাবস্থায় রোযা পালন করা প্রসঙ্গে মতবিরোধ আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্যদের মতানুযায়ী সফরে থাকা অবস্থায় রোযা পালন না করাই উত্তম। এমনকি কারো কারো মতানুযায়ী সফরে থাকাবস্থায় কোন লোক রোযা পালন করলে তাকে আবার সে রোযা কাযা করিতে হইবে। সফরে রোযা না পালনের পক্ষে ঈমাম আহ্মাদ ও ইসহাক অভিমত দিয়েছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অন্য আরেকদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও আলিম বলেছেন শক্তি-সামর্থ্যবান লোকে যদি সফরে রোযা পালন করে তাহলে তা ভাল এবং তাই উত্তম, রোযা আদায় না করলে তাকেও ভাল বলেছেন। সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস ও আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাকের.এই মত। ঈমাম শাফি বলেন, “সফরে থাকাবস্থায় রোযা পালন করা সাওয়াবের কাজ নয়” এবং “এরা নাফরমান” এই কথার তাৎপর্য হচ্ছে, যে লোকের অন্তর আল্লাহ্র দেয়া অবকাশ [রুখসাত] গ্রহণ করিতে প্রস্তুত নয় সে লোকের ক্ষেত্রে ঐ কথা প্রযোজ্য। কিন্তু সফরে রোযা ভেঙ্গে ফেলাকে যে লোক জায়িয মনে করে এবং রোযা রাখার সামর্থ্য থাকায় রোযা পালন করে, তা আমার নিকটে পছন্দনীয়। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯. অনুচ্ছেদঃ সফরে রোযা পালনের অনুমতি প্রসঙ্গে
৭১১। আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আসলাম গোত্রের হামযা ইবনি আমর [রাদি.] সফরে থাকাবস্থায় রোযা পালন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। আর তিনি প্রায়ই রোযা পালন করিতেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ ইচ্ছা করলে তুমি রোযা পালন করিতেও পার আবার ইচ্ছা করলে ভাঙ্গতেও পার।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৬২], বুখারী, মুসলিম । আনাস ইবনি মালিক, আবু সাঈদ, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আবু দারদা ও হামযা ইবনি আমর আসলামী [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হামযা ইবনি আমর নাবী [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করিয়াছেন হাদীসটি হাসান সহিহ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭১২. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমযান মাসেও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা সফরে গিয়েছি। কিন্তু রোযাদারকে সফরে রোযা পালনের কারণে কিংবা রোযা ভঙ্গকারীকে রোযা ভেঙ্গেফেলার কারণে কোনরকম দোষারোপ করিতেন না।
-সহীহা [৩/১৪৩], মুসলিম। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৭১৩. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা সফরে যেতাম। আমাদের মধ্যে রোযাদার এবং রোযা ভঙ্গকারী উভয়েই থাকতেন। রোযাদারের বিরুদ্ধে রোযা ভঙ্গকারী এবং রোযা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে রোযাদার কোনরকম অভিযোগ করেননি। তারা মনে করিতেন, শক্তিশালী লোক রোযা পালন করলে তা ভালই করেছে এবং দুর্বল লোক রোযা পালন না করলে তাও ভাল করেছে।
-সহীহ, মুসলিম। আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন।রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের রোযা ভেঙে ফেলার অনুমতি আছে
৭১৪. সাঈদ ইবনিল মুসায়্যিব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তাকে সফরে রোযা রাখা প্রসঙ্গে প্রম্ন করা হলে তিনি বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলেছেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর সাথে রামাযান মাসে দুটি যুদ্ধ করেছি- বদর ও মক্কা বিজয় যুদ্ধ। এ সময় আমরা রোযা ভেঙ্গে ফেলেছি।
সনদ দুর্বল। এই অনুচ্ছেদে আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, উপোরোক্ত হাদীসটি শুধুমাত্র এই সূত্রেই আমরা জেনেছি। আর আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কোন এক যুদ্ধে রোযা ভেঙে ফেলার হুকুম করেছিলেন। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতেও এরকমই বর্ণিত আছে যে, তিনি শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময় রোযা না রাখার সম্মতি [রুখসাত] দিয়েছেন। কোন কোন আলিমেরও এই মত। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২১. অনুচ্ছেদঃ গর্ভবতী নারী ও দুগ্ধদানকারিণী মায়ের জন্য রোযা ভঙ্গের অনুমতি আছে
৭১৫. আবদুল্লাহ ইবনি কাব গোত্রের আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদের উপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অশ্বারোহী বাহিনী হঠাৎ আক্রমণ করিল। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এলাম। আমি তাঁকে সকালের খাবার খাওয়ারত অবস্থায় পেলাম। তিনি বললেনঃ কাছে আস এবং খাও। আমি বললাম, আমি রোযা আছি। তিনি বললেনঃ সামনে আস, আমি তোমাকে রোযা প্রসঙ্গে কথা বলব। আল্লাহ তাআলা মুসাফির লোকের রোযা ও অর্ধেক নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাদের রোযা মাফ করে দিয়েছেন। আনাস [রাদি.] বলেন, আল্লাহ্র শপথ! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুজনের কিংবা একজনের কথা বলেছেন। আমার আফসোস এই যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমি খাবার খাইনি।
-হাসান সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৬৬৭] আবু উমাইয়্যা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আনাস ইবনি মালিক আল-কাবী [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে এই একটি মাত্র হাদীস ছাড়া তার [আনাস] সূত্রে বর্ণিত অন্য কোন হাদীস আছে বলে আমাদের জানা নেই। এই হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। অন্য একদল আলিম বলেন, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাগণ রোযা ভেঙ্গে ফেলবে, পরে এর কাযা আদায় করিবে এবং [মিসকীনদের] খাওয়াবে। এরকম অভিমতই প্রকাশ করিয়াছেন সুফিয়ান, মালিক, শাফিঈ ও আহ্মাদ [রঃ]। অন্য আরেকদল আলিম বলেন এরা রোযা আদায় করিবে না এবং মিসকীনদের খাবার খাওয়াবে। কাযা রোযা পালন করাটা তাহাদের উপর জরুরী নয়, ইচ্ছা করলে কাযা আদায় করিবে, তাহলে মিসকীন খাওয়াতে হইবে না। এরকম অভিমত ইসহাকেরও। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২২. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ হইতে রোযা আদায় করা
৭১৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট একটি মহিলা এসে বলিল, আমার বোন মারা গেছে, অথচ তার উপর পরস্পর দুমাসের রোযা কাযা অবস্থায় আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ দেখ কোন ঋণ যদি তোমার বোনের উপর থাকত তাহলে কি তুমি সেটা পরিশোধ করিতে? সে বলিল, হ্যাঁ। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাহলে আল্লাহ তাআলার হাক [অধিকার] সবচেয়ে অগ্রগণ্য।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭৫৮], বুখারী, মুসলিম। বুরাইদা, ইবনি উমার ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭১৭. আবু কুরাইব আবু খালিদ আল-আহমার হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আমাশ হইতে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের মতই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। মুহাম্মাদ [বুখারী] বলেন, আবু খালিদ আল-আহ্মার এই হাদীসটি আমাশ হইতে বর্ণনার ক্ষেত্রে উত্তম কাজ করিয়াছেন। তিনি আরও বলেন, আবু খালিদ ব্যতীত আরো অনেকে আমাশ [রঃ] হইতে আবু খালিদের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, আবু মুআবিয়া প্রমুখ এই হাদীসটিকে আমাশ হইতে, তিনি মুসলিম আল-বাতীন হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি জুবাইর হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু এতে তাঁরা বর্ণনাকারী সালামা ইবনি কুহাইল, আতা ও মুজাহিদের নাম উল্লেখ করেননি। আবু খালিদের নাম সুলাইমান ইবনি হাইয়্যান।রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply